Advertisement

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

আপনি যদি নতুন তারা দেখা শুরু করেন অথবা তারা দেখতে দেখতে বুড়োও হয়ে যান (অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে!)- দুই ক্ষেত্রেই আপনার সেরা বন্ধু হবে একখান দুরবিন বা বাইনোকুলার। আসুন, জেনে নিই দুরবিন সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় এবং রাতের আকাশে আপনি এটা দিয়ে কী কী দেখতে পাবেন।

১. তারা দেখা শুরু করতে টেলিস্কোপের চেয়ে বেশি ভালো কাজে আসে এই দুরবিন
প্রকৃতপক্ষে টেলিস্কোপ কিনতে আগ্রহী অধিকাংশ তারাপ্রেমীরই উচিত টেলিস্কোপ কেনার আগে প্রায় ১ বছর ধরে দুরবিন দিয়ে কাজ চালানো। কারণ, প্রথম বার টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে গিয়ে পড়তে হয় বিপত্তিতে। কারণ, একই সাথে জটিল একটি যন্ত্রের পরিচালনা এবং রাতের আকাশের সাথে প্রাথমিক পরিচয়-কাজ দুটো একসাথে করতে মানিয়ে নেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
বাজারে প্রাপ্ত একটি মোটামুটি মানের দুরবিনই রাতের আকাশের প্রত্যাশিত দৃশ্য তুলে ধরতে সক্ষম হবে। যন্ত্রের বিবর্ধন (Magnification) ও আলোক সমাবেশ ক্ষমতার (Light-gathering power) সমন্বয়ে আকাশ হয়ে ওঠে কয়েকগুণ বেশি জ্বলমলে। একটি ৭ × ৫০ বাইনোকুলারও খালি চোখের চেয়ে ৭ গুণ বেশি বস্তু চোখের সামনে সামনে হাজির করতে পারবে। মাসের বা বছরের কোন সময় কী দেখবেন তার খোঁজখবর রাখতে নিয়মিত পড়ুন আমাদের রাতের আকাশ সেকশন। এ কাজে প্লেনিস্ফিয়ারও ভালো কাজে আসতে পারে।
২. ছোট এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য দুরবিন দিয়ে শুরু করুন
শুরুতেই বিশাল সাইজের দুরবিন কিনলে বিপত্তিতে পড়তে হবে যদি না আপনি ট্রাইপডও কেনার ইচ্ছা করেন। অন্যথায় দুরবিনখানি আপনার হাতে থেকে আপনার কথা শোনার চেয়ে অভিকর্ষের কথা শোনার দিকে বেশি মনযোগ দেবে যার পরিণাম, কাঁপাকাঁপি আর অস্থির আকাশ। নতুনদের জন্য ৭ × ৫০ আকারের দুরবিনই যথেষ্ট যা দেখাবেও অনেক কিছু, হাতেও বসে থাকবে ভদ্রভাবে। চাইলে পাখি দেখাসহ অন্য কাজেও সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন আলোকযন্ত্রটি।
৩. দুরবিন দিয়ে চাঁদ দেখুন
দুরবিন কেনার শুরুর দিনগুলোতে আপনি চাঁদের বিভিন্ন দশা (Phase) যেমন পূর্ণচাঁদ তথা পূর্ণিমা, ক্রিসেন্ট বা অর্ধচন্দ্র (Crescent) ইত্যাদি দেখা শুরু করে দিতে পারেন। অবশ্য আপনি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যলাক্সি বা তারও বাইরে অন্য কোন গ্যালাক্সির দূর আকাশের বস্তুগুলো (deep-sky objects) দেখতে চাইলে স্বভাবতই চাঁদকে এড়িয়ে যেতে চাইবেন। কিন্তু চাঁদ নিজেই একটি দর্শনীয় বস্তু। মনে রাখতে হবে, দুরবিন দিয়ে চাঁদ দেখার সেরা সময় হচ্ছে গোধূলীর (Twilight)। এই সময় এর আলোর তীব্রতা থাকবে কম এবং দেখা যাবে অনেকটা বিস্তারিত। দেখতে পারেন চন্দ্রসাগর (Maria) নামে পরিচিত অগ্ন্যুৎপাতের ফলে চাঁদে সৃষ্ট কালো সমতল অঞ্চলও।
৪. চলুন, এবার গ্রহ দেখি
আমাদের রাতের আকাশ সেকশনে আপনি নিয়মিত গ্রহদেরও খোঁজখবর পাবেন। আমরা জানি, সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে খালি চোখে দেখা যায় শুধু ৫টি- বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। ইউরেনাস ও নেপচুন খালি চোখে ধরা দেয় না। অবশ্য ভুল বলা হলো, আরেকটিও খালি চোখে দেখা যায়- আমাদের প্রিয় নীল গ্রহটি যাতে আমরা বাস করি!
চলুন দেখে নিই উপরোক্ত ৫টি গ্রহ দুরবিনে কেমন দেখাবে।
বুধ ও শুক্রঃ
এরা দুজনেই অভ্যন্তরীণ তথা ভেতরের দিকের (Inner) গ্রহ। এদের ক্ষেত্রে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার কক্ষপথ পৃথিবীর চেয়ে ক্ষুদ্র। এ কারণেই অনেক সময় গ্রহ দুটি চাঁদের মত বিভিন্ন দশা প্রদর্শন করে থাকে। ঘটনাটি ঘটে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝপথ পাড়ি দেবার সময়। দুরবিন আপনাকে এদের দশা ফাঁস করে দিতে সহায়তা করবে।
মঙ্গলঃ
লাল এই গ্রহটি আসলেই দেখতে লাল। আর দুরবিন এর তীব্রতা আরো বাড়িয়ে তুলবে। আকাশের তারাদের তুলনায় (যারা সত্যিই তারা, গ্রহ নয়) মঙ্গলের গতি অনেকটা বেশি। এ সময় আপনি দুরবিনের সাথে আপনার বন্ধুত্বকে রাঙিয়ে নিতে পারেন।
বৃহস্পতিঃ
এবার শুরু আসল খেলা! নতুনদের জন্যেও বৃহস্পতি একটি দারুণ শিকার। দুরবিন স্থিরভাবে ধরে রাখতে পারলে বৃহস্পতি আপনার সামনে তার চারটি উপগ্রহও প্রকাশ করে দেবে। এগুলো সর্বপ্রথম গ্যালিলিও তাঁর স্ব-আবিষ্কৃত প্রতিসারক টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। এ জন্যে এদেরকে বলা হয় গ্যালিলীয় উপগ্রহ। দুরবিন দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে বিভিন্ন রাতে গ্রহটির উপগ্রহগুলোর অবস্থান থাকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়।
শনিঃ
যদিও শনির বলয় (Ring) দেখতে হলে টেলিস্কোপ ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু দুরবিন আপনাকে এর সোনালী রঙ অন্তত দেখাবে। অভিজ্ঞ দর্শকরা অবশ্য শনির বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটানও (Titan) দেখতে পান। একটু শক্তিশালী দুরবিন ব্যবহার করলে আপনি দেখবেন যে শনি আসলে পুরোপুরি গোলাকার (Round) নয়, কিছুটা উপবৃত্তাকার (Elliptical)।
ইউরেনাস ও নেপচুনঃ
খালি চোখে ধরা না পড়লেও দুরবিনের চোখে ধরা পড়ে যায় সৌরজগতের সর্ববহিস্থ গ্রহ দুটি। ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস থাকায় একে দেখাবে সবুজাভ। বছরে একবার ইউরেনাস খালি চোখে ধরা পড়ার মত উজ্জ্বল হয়। আরেকটু দূরবর্তী নেপচুনকে অবশ্য দেখা যাবে তারকার মতো যদিও এরও বায়ুমণ্ডল ইউরেনাসের মতই।
অনান্যঃ
গ্রহদের বাইরেও সৌরজগতের আরো কিছু বস্তু দেখতে আপনাকে সহায়তা করবে দুরবিন। খোঁজ রাখতে পারেন অনিয়মিত ধূমকেতুদের (Comet)। দুরবিনে ১২ টি পর্যন্ত গ্রহাণুও (Asteroid) দেখা যায়। আমরা যথাসম্ভব এদের আপডেট খবর ওয়েবসাইটে জানানোর চেষ্টা করবো।
৫. আমাদের হোম গ্যলাক্সি মিল্কিওয়ে দেখতে দুরবিন
পৃথিবীর নিকটবর্তী স্টার ক্লাস্টার (Star Cluster) তারাস্তবক দেখতে দুরবিন বেশ কাজে আসবে। এখানে মনে রাখার বিষয়, রাতের আকাশে আমরা যত তারা দেখি তার সবই মিল্কিওয়ের গ্যালাক্সির সম্পত্তি। তাই কিছু তারা নিয়ে গঠিত তারাস্তবক সমর্কেও একই কথা বলা চলে। বেশি দূরের ক্লাস্টার দেখতেও অবশ্য চাই টেলিস্কোপ। শীতকালের আকাশে আপনি দেখতে পাবেন কৃত্তিকা মণ্ডল (Pleiades) নামক ৭টি তারার জালি। খালি চোখে অনেকেই এখানে মাত্র ৬টি তারকা দেখলেও বাইনোকুলার আপনাকে আরো অনেকগুলো দেখিয়ে দেবে। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ
আরেকটি দারুণ জিনিস আপনি দেখতে পাবেন আদম সুরত তথা কালপুরুষ (Orion) তারামণ্ডলীতে। এটিও ভালো দেখা যাবে শীতকালে। এর নাম ওরিওন নেবুলা। অন্য দিকে গ্রীষ্মকালে দেখতে পাবেন ধনুমণ্ডলীতে (Sagittarius) অবস্থিত লেগুন নেবুলা। মিল্কিওয়ে নিজেই একটি দর্শনীয় বস্তু। চোখে পড়বে অনেক বেশি তারকা এবং আরো আরো নানান কিছু।
৬. মিল্কিওয়ে ছাড়িয়ে
পৃথিবীর কাছাকাছি গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্যালাক্সি এ্যান্ড্রোমিডা। খালি চোখে এটি দেখা গেলেও বাইনোকুলার এর সৌন্দর্য্য তুলে ধরবে আরো বেশি করে। পাশাপাশি দেখার মতো আরো আছে বড় ও ছোট ম্যাজেলানিক ক্লাউড।
মোটকথা আপনি নতুন তারা দেখা শুরু করলে দুরবিনই আপনার জন্যে টেলিস্কোপের চেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৫

দিক নির্ণয়ের এই কৌশলটি আমার মতে সবচেয়ে সহজ। কারণ, বাস্তবে করতে গিয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই সুফল পেয়েছি।

প্রয়োজনীয় পরিবেশ: উন্মুক্ত সূর্যালোক

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
১। একটি খুঁটি, লাঠি বা ছড়ি (১ ফুট লম্বা হলেই যথেষ্ট)
২। (আবশ্যিক নয়) ৩-৪টি ছোট ছড়ির টুকরো (৬ ইঞ্চি উচ্চতার)

কার্যপ্রণালী
১। একটি মসৃণ  ও সমতল স্থানে যান। ঐ স্থানে সূর্যের আলোর উপস্থিতি থাকতে হবে। এমন জায়গা বাছাই করতে হবে যেন অন্তত ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে জায়গাটি ছায়ার দখলে না যায়
২। ভূমির সাথে খাড়াভাবে বড় খুঁটিখানা পুঁতে দিন।
৩। খুঁটির ছায়ার একেবারে প্রান্তে একটি দাগ দিয়ে রাখুন। অথবা, ছোট একখানা খুঁটি বসিয়ে দিন।
৪। ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। দেখবেন, ছায়ার প্রান্তভাগ আগের জায়গা থেকে সরে গেছে।
৫। ৩ ও ৪ নং ধাপ অন্তত ৩-৪ বার করুন।


৬। এবারে খেয়াল করুন, সবগুলো খুঁটি বা দাগ একটি সরল রেখা তৈরি করেছে। এই রেখাটিই পূর্ব-পশ্চিম দিক নির্দেশ করছে। তাহলে, পশ্চিম দিক হচ্ছে যেদিকে প্রথম দাগ বা ছোট খুঁটিটি ছিল। আর, যেদিকে শেষ খুটি বসিয়েছেন সেদিকেই পূর্ব দিক।

এবার যদি আপনি পূর্ব দিকে মুখ কর দাঁড়ান, তার অর্থ হবে আপনার বাঁয়ে উত্তর দিক এবং ডানে দক্ষিণ।


এর আগে আমরা দেখেছিলাম, কিভাবে ধ্রুবতারা (North Star বা Polaris) দিয়ে উত্তর বের করা যায়। তবে, ঐ কৌশল কাজ করবে মেঘমুক্ত রাতের আকাশে। আর এখনকার কৌশল কাজ করবে দিনে। তাহলে রাত দিন ২৪ ঘণ্টাই আমরা খুব সহজেই দিক নির্ণয় করতে পারবো। শর্ত একটিই, মেঘমুক্ত আকাশ।

এটা কীভাবে কাজ করে?

আমরা জানি পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের উপর আবর্তিত হচ্ছে। এ কারণেই সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাচ্ছে বলে মনে হয়। এই জন্যে সূর্য যতই পশ্চিম দিকে যেতে থাকে তার ছায়া ততোই পূর্ব দিকে সরতে থাকে। এখানে এ তথ্যটিই কাজে লাগানো হচ্ছে। অবশ্য আমরা জানি, সূর্য সব সময় ঠিক পূর্ব দিক থেকে উদিত হয় না বা ঠিক পশ্চিম দিকে অস্তও যায় না। বছরজুড়ে নিরক্ষরেখা থেকে দক্ষিণে বা উত্তরে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের ঘটনা ঘটে।

তবুও এ কৌশল কাজ করে, কারণ সূর্যের গতিপথ যেদিকেই থাকুক, ছায়া পূর্ব-পশ্চিম বরাবরই থাকে। 
Category: articles

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

আমরা আগেই জেনেছি, সৌরজগতের খালি চোখে দৃশ্যমান ৫টি গ্রহের মধ্যে শনিই সবচেয়ে অস্পষ্ট। কিন্তু কিছু দিন ধরেই রাতের আকাশে চলছে এই নিয়মের ব্যতিক্রম। এই ব্যত্যয় চলবে এ মাসেও। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই মাসেও উত্তর গো্লার্ধের আকাশে বুধ (Mercury) সন্ধ্যার গোধূলীর আভায় লুকিয়ে থাকবে। অন্য তিনটি দৃশ্যমান গ্রহও তথা শুক্র (Venus), বৃহস্পতি (Jupiter) ও মঙ্গল (Mars) সূর্যাস্তের আগে দেখা দেবে পূর্ব দিগন্তে। বিস্তারিত জানা যাক একে একে।
বুধঃ
আমরা জানি, বুধ সৌরজগতের সবচেয়ে ভেতরের (Innermost) গ্রহ এবং তাই এর অবস্থান থাকে সব সময় সূর্যের কাছাকছি। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে গ্রহটি ভোরের আকাশ থেকে সন্ধ্যার আকাশে পাড়ি দিয়েছিল। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত এটি সন্ধ্যার আকাশেই থাকবে। তবে, গত কয়েক মাসের মতোই উত্তর গোলার্ধের আকাশপ্রেমীদের এই গ্রহটি দেখার ব্যাপারে কিছুটা হতাশ হতে হবে। উল্টো দিকে দক্ষিণ গোলার্ধে কিন্তু বছরের সবেচেয়ে ভালো সাজে দেখা যাবে গ্রহটিকে।
দক্ষিণ ও ক্রান্তীয় উত্তর অঞ্চলে (কর্কটক্রান্তি রেখা) গ্রহটি সূর্যের ২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত দিগন্তের উপরে থাকবে। মধ্য-উত্তর গোলার্ধে সূর্যাস্তের  ১ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যেই বুধও অস্ত যাবে। আরো উত্তরে দুরবিন দিয়েও একে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। মাস শেষে গ্রহটি সন্ধ্যার আকাশ থেকে লাফ দিয়ে চলে যাবে ভোরের আকাশে। অক্টোবরে অবশ্য উত্তর গোলার্ধে একে ভালোই চোখে পড়বে।

শনিঃ
পুরো সেপ্টেম্বর মাসেই মেঘমুক্ত আকাশে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শনি গ্রহ দৃষ্টির সামনে চলে আসবে। উত্তর অক্ষাংশ অঞ্চলে সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত শনি দিগন্তের উপরে হাজির থাকবে। তবে, দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে গ্রহটি আরো বেশি সময় এমনকি মধ্য রাত পর্যন্ত জ্বলজ্বল করবে।
কিভাবে চেনে যাবে গ্রহটিকে? অনেক দিন ধরেই এটি দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশের কাঁকড়াবিছার মতো আকৃতির তারামণ্ডলী বৃশ্চিকের সামনে অবস্থান করছে। দেখতে সোনালী রঙ এর গ্রহটি স্থির আলো প্রতিফলিত করে। অর্থ্যাৎ, এটি নক্ষত্রের মত মিটমিট করে জ্বলে না। এ মাসে একে চাঁদের পাশে দেখা যাবে। তারিখটি হচ্ছে ১৮ সেপ্টেম্বর। দুরবিন ছাড়া কখোনই এর উপগ্রহগুলো চোখে পড়ে না।

শুক্রঃ
সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ জুড়ে শুকতারা শুক্র এই মাসে নিজের সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো প্রতিফলিত করবে। দৃশ্যমান অবস্থায় একে চিনতে কখোনোই ভুল হয় না। কারণ, এটি পৃথিবীর আকাশের ৩য় উজ্জ্বলতম বস্তু যেখানে ১ম ও ২য় বস্তুদ্বয় এর সাথে তুলনীয়ই নয়। কারণ, এরা হলো যথাক্রমে সূর্য ও চন্দ্র।
তবে গ্রহটিকে দেখে মুগ্ধ হবার জন্যে ২১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোন মানে নেই। কারণ, পুরো মাসেই পূবাকাশে ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই গ্রহটি উজ্জ্বলভাবে চোখে ধরা দেবে। পাশাপাশি অনুজ্জ্বল গ্রহ মঙ্গলকে খুঁজে পেতেও কাজে আসবে গ্রহটি। সেপ্টেম্বরের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে অপসৃয়মান ক্রিসেন্ট মুনের (অর্ধ-চন্দ্র) সাহায্যে  শুক্র (Venus), বৃহস্পতি (Jupiter), ও মঙ্গলকে খুঁজে পাওয়া যাবে।


মঙ্গলঃ 
জুনের মাঝামাঝিতে মঙ্গল ভোরের আকাশে পাড়ি দিয়েছিল। সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ও মঙ্গলের কক্ষীয় গতি প্রায় সমান। পৃথিবীর ক্ষেত্রে বেগটি যেখানে সেকেন্ডে ১৮ মাইল, মঙ্গলের ক্ষেত্রে তা ১৫। ফলে সূর্যোদয়ের আভা থেকে গ্রহটি রেহাই পেতে সময় লেগে যায়। তবে একবার রেহাই পেলে তা কিছু দিন বলবৎ থাকে। এটিই ঘটছে দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে গত কয়েক মাস ধরে।
এই মাসে শুক্রের ভোরের আকাশে উপস্থিতি মঙ্গলকে খুঁজে পেতে সুবিধা করে দিয়েছে। তারিখ যতোই এগোতে থাকবে, গ্রহটি সূর্যোদয়ের ততোই আগে দেখা যেতে থাকবে এবং দেখাও যাবে ক্রমান্বয়ে দিগন্ত থেকে বেশি উপরের দিকে। পুরো মাস জুড়ে মঙ্গলের কাছাকাছি অবস্থান করে শুক্র গ্রহটিকে খুঁজে পাবার ক্ষেত্রে লাইটহাউসের ভূমিকা পালন করবে।

বৃহস্পতিঃ
পৃথিবীর আকাশে অন্য যে কোন নক্ষত্রের চেয়েও সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহটি বেশি উজ্জ্বল দেখায়। শুক্রের পরেই উজ্জ্বলতায় এর অবস্থান। এ বছরের আগস্টে শুক্রের সাথে সাথে এটিও চলে আসে ভোরের আকাশে। তবে, এ মাসে মঙ্গল বা শুক্রের চেয়ে এর অবস্থান সূর্যের আভার বেশি কাছে। তবে তারিখ গড়াবার সাথে সাথে গ্রহখানা উল্লেখিত গ্রহ দুটির দিকে এগোতে থাকবে। অক্টোবরের ১৭ তারিখে এটি মঙ্গলকে ধরে ফেলবে এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিকটতম অবস্থানের রেকর্ড ধরে রাখবে।

অক্টোবরের ২৬ তারিখে এটি ধরে ফেলবে শুক্রকে এবং বছরের তৃতীয় ও শেষ মিলন ঘটাবে। একই তারিখে মঙ্গলকে সাথে নিয়ে এই তিন গ্রহ একটি চমৎকার প্রদর্শনী দেখাবে যার আবার দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২১ সাল পর্যন্ত।


তথ্যসূত্রঃ Earthsky
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫


২০১৫ সালের জুলাই মাস দুটি পূর্ণিমা (full moon) পাচ্ছে। এই ঘটনা কিন্তু অহরহ ঘটে না। অধিকাংশ ইংরেজি মাসই একটিই মাত্র পূর্ণিমা পায়। সত্যি বলতে, প্রতি দুইকি তিন বছরের মধ্যে একবার এই ঘটনা ঘটে। আর এই ক্ষেত্রে  ২য় পূর্ণিমাটিকে বলা হয় ব্লু মুন (Blue Moon)।
এই মাসের প্রথম পূর্ণিমাটি ঘটতে যাচ্ছে ২ তারিখ। বাংলাদেশ সময় ৮টা বেজে ২০ মিনিটে।
এই মাসে আরেকটি পূর্ণিমা হবে জুলাইয়ের ৩১ তারিখে। তার মানে সেটিই হচ্ছে ব্লু মুন, অন্তত নামের দিক দিয়ে, সে দেখতে যেমনই হোক না কেন।

একই মাসে আবার দুটি পূর্ণিমা পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। ঐ বছর ফেব্রুয়ারিতে কোন পূর্ণিমাই হবে না। মার্চেই আবার হবে দুটো।

কারণ, ফেব্রুয়ারি বাদ দিলে অন্য সব মাসই ৩০ বা ৩১ দিনের। আর দুটি পূর্ণ চন্দ্র তথা পূর্ণিমার মাঝখানে ব্যাবধান থাকে ২৯.৩ দিন থেকে ২৯.৮ দিনের। ফলে, কোন মাসের একটি পূর্ণিমা যদি মাসের একেবারে শুরুতেই ঘটে যায়, তাহলেই ব্লু মুন পাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়।

ফলে, ফেব্রুয়ারিই একমাত্র মাস যাতে কোনোভাবেই দুটি পুর্ণিমার সুযোগ তৈরি হবে না। আবার, এটাই একমাত্র মাস যাতে অনেক সময় একটি পূর্ণিমাও নাও হতে পারে। যেমন দেখুন ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে একটিও পূর্ণ চন্দ্র নেই। একই ঘটনা ঘটবে আবার ২০৩৭ সালে। তার অর্থ ঐ দুটি বছর দুটি করে ব্লু মুন পাওয়া যাবে। মানে একই বছরে এমন দুটি মাস পাওয়া যাবে যাতে দুটি করে পূর্ণিমা সংঘটিত হবে।
জানতে চান পূর্ণিমা কিভাবে ঘটে?
সূত্রঃ Earth Sky
Category: articles

বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

গত মাসের মত এ মাসেও চলুন জেনে নিই কোন গ্রহের কী খবর। এ মাসে কোন গ্রহ কোথায় চোখে পড়বে এবং ধীরে ধীরে ওরা কোন দিকে যাবে এবং কিছু দিন পর ওদেরকে কোথায় পাওয়া যাবে, এসব জানাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।
বৃহস্পতি ও শনিঃ
এই মাসে যেহেতু এই দুই উজ্জ্বল গ্রহ সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে এসেছে, তাই একত্রেই উল্লেখ করলাম। পৃথিবীর রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু এবং সার্বিকভাবে ৩য় উজ্জ্বল বস্তু (সূর্য ও চন্দ্রের পরে) গ্রহ শুক্রের অবস্থান জুনের শেষ ও জুলাইয়ের শুরুর দিনগুলোতে বৃহস্পতির একেবারে কাছাকাছি। তবে সবচেয়ে নিকটে অবস্থান জুনের ৩০ ও জুলাইয়ের ১ তারিখে। এই দুইটি দিনে এরা এতই কাছাকাছি থাকে যে পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের ব্যাস যতটুকু মনে হয় এদের আপাত দূরত্ব তার চেয়ে কম। ২০১৬ সালের ২৭ আগস্টের আগে এরা আর এতটা নিকটবর্তী হবে না।
কিন্তু পশ্চিম আকাশের সৌন্দর্য্য জুলাইয়ের ১ তারিখেই শেষ হচ্ছে না। বছরের এই সময়গুলোতে শুক্র এমনিতেই বেশি উজ্জ্বল। কিন্তু এই মাসের ৯-১০ তারিখের দিকে এটি এর সর্বোচ্চ ঔজ্জ্বল্য প্রদর্শন করবে।
মাসের শুরুর দিকে মধ্য-উত্তর অক্ষাংশে সন্ধ্যার পর শুক্র আকাশে থাকবে ৩ ঘণ্টার কাছাকাছি। মাসের শেষের দিকে এই সময়টি হয়ে যাবে মাত্র ১ ঘণ্টা। আগস্টের মাঝামাঝিতে এটি আমাদের সন্ধ্যার আকাশকে বিদায় জানাবে।
শুক্রের মতো বৃহস্পতিও আগস্টে চলে যাবে ভোরের আকাশে। ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবরে এরা ভোরের আকাশে আবার খুবই নিকটাবস্থানে আসবে। ঐ একই দিনে আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। এই দুই গ্রহের সাথে যোগ দিবে মঙ্গল। ২০২১ সালের আগে এই তিন গ্রহ আর এত কাছে আসবে না।

মাসের ১৭-১৮ তারিখে গ্রহ দুইটি চাঁদ এবং সিংহ মণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র রেগুলাসের সাথে জড়সড় হয়ে থাকবে। ফলে ঐ দিনের পশ্চিম আকাশ অল্প একটু জায়গায় অনেকগুলো উজ্জ্বল বস্তু পেয়ে ধন্য হবে।

বৃহস্পতি গ্রহ হওয়ায় এর নিজস্ব আলো না থাকলেও এটি রাতের আকাশে যতক্ষণ থাকে উজ্জ্বলতায় হার মানিয়ে দেয় নক্ষত্রদেরও।

মঙ্গলঃ
জুনের ১৪ তারিখে মঙ্গল পাড়ি দিয়েছিল ভোরের আকাশে। আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের আগে গ্রহটিকে চোখের লেন্স দিয়ে দিয়ে ধরতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

শনিঃ
বছরের এই সময়টি আসলে সত্যি বলতে এই গ্রহটির রাজত্বই চলে রাতের আকাশে। বৃশ্চিক মণ্ডলীর (Scorpius) মাথার সামনে এটি উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠে সন্ধ্যার পরপরই। থাকেও প্রায় সারা রাত। জুলাইয়ের ২৪, ২৫ ও ২৬ তারিখে গ্রহটি বৃশ্চিকের উজ্জ্বলতম ও রাতের আকাশের ১৬ তম উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্যেষ্ঠা (Antares) এবং চাঁদের সাথে মিলেমিশে থাকবে।

বুধঃ
বুধ সূর্যের নিকটতম গ্রহ। গত মাসের মত এ মাসেও গ্রহটি উত্তর গোলার্ধের মানুষের খালি চোখে দেখা যাবে না। জুলাইয়ের ২৩ তারিখ পর্যন্ত এটি ভোরের আকাশে অতঃপর পাড়ি দেবে সন্ধ্যার আকাশে।
Category: articles

শনিবার, ২০ জুন, ২০১৫

পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। তবে এই দূরত্ব সব সময় একই থাকে না। থাকত যদি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে বৃত্তাকার পথে। কিন্তু সব গ্রহই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে উপবৃত্তাকার পথে। কেপলারের গ্রহের প্রথম সূত্র অনুসারে।



সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলে অনুসূর। আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানের নাম অপসূর। পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে জানুয়ারি মাসে। আর সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাই মাসে। মজার ব্যাপার হলো, আমরা অনেকেই মনে করি, শীত কালে সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে। অথচ জানুয়ারির তীব্র শীতের সময়ই কিন্তু আমরা সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকি। এই ধারণা ভুল হওয়ার আরও সহজ প্রমাণ হলো, ঐ জানুয়ারি মাসেই কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে তীব্র গরম। আসল কথা হলো শীত বা গরম পৃথিবী-সূর্যের দূরত্বের কারণে হয় না। হয় পৃথিবীর কক্ষ তল হেলে থাকার কারণে।

আরও পড়ুন
☛ অনুসূর বনাম অপসূর

অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী সূর্য থেকে ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকে। আর জুলাই মাসে অপসূর অবস্থানে এলে এই দূরত্ব বেড়ে হয় ১৫.২ কোটি কিলোমিটার।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 

জ্যোতির্বিদ্যায় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের দূরত্বের হিসাব করতে কাজে লাগে এ দূরত্বটি। এই দূরত্বের গড়কে বলা হয়
এক অ্যাস্ট্রোনমিকেল ইউনিট (এইউ) । মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্বের পরিমাপে আলোকবর্ষের মতো এই এককটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই দূরত্ব বলা ও বোঝা দুই ক্ষেত্রেই এইউ একক্টি সুবিধাজনক।

আরও পড়ুন
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

প্লুটো আমাদের থেকে ৫৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে আছে। এটাকে এভাবে বললে আরও সহজ হয়: ৩৯ এইউ। একইভাবে সূর্য থেকে বৃহস্পতি গ্রহের দূরত্ব হয় ৫ দশমিক ২। নেপচুনের দূরত্ব প্রায় ৩০ এইউ। ধূমকেতুর উৎসস্থল বলে অনুমিত সৌরজগতের একেবারে প্রান্তের দিকে অবস্থিত উর্ট মেঘের দূরত্ব সূর্য থেকে ১ লক্ষ এইউ।

অন্য দিকে, সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টৌরির (Proxima centauri) দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই লাখ এইউ। কিন্তু এই দূরত্বটি এতই বেশি যে একে আলোকবর্ষ এককে মাপাই বেশি সুবিধাজনক। সেই হিসেবে এর দূরত্ব ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ।

কে মেপেছেন এই দূরত্ব?
খৃষ্টের জন্মের ২৫০ বছর আগেই অ্যারিসটারকাস দূরত্বটি মাপেন। সাম্প্রতিক সময় ১৬৫৩ সালে ক্রিষ্টিয়ান হাইগেনও মাপেন এই দূরত্ব। ১৬৭২ সালে আবার মাপেন গিওভানি ক্যাসিনি। তার পদ্ধতি ছিল লম্বন পদ্ধতি।

সূত্র
১। ইউনিভার্স টুডে: হাউ ফার ইজ আর্থ ফ্রম দ্য সান
২। উইকিপিডিয়া: পেরিহেলিয়ন ও অ্যাপহেলিয়ন
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

 রাতের আকাশে যখন পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের পুরোটাকে আলোকিত মনে হয় তাকেই আমরা বলি পূর্ণিমা, পূর্ণ চন্দ্র বা ফুল মুন (full moon)। কিন্তু কিভাবে ঘটে পূর্ণিমা?

পৃথিবীর আবর্তনের জন্যে চন্দ্র, সূর্য ও রাতের নক্ষত্রদের পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে দেখা যায়। চাঁদের ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে এটি আবার পৃথিবীকে কেন্দ্র করেও ঘুরছে। ফলে অন্য গ্রহ নক্ষত্রদের চেয়ে প্রতি দিনের রাতের এর অবস্থান পরিবর্তন হয় তুলনামূলক অনেক বেশি। 
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে করতে একটা সময় চন্দ্র, পৃথিবী ও সূর্যের সাথে একই রেখায় আসে। আর এই কল্পিত রেখার মাঝখানে যখন পৃথিবী থাকে, তখনই পশ্চিম দিক থেকে আসা সূর্যের আলো সোজাভাবে পূর্ব দিকে থাকা চাঁদের উপর গিয়ে পড়ে। ফলে, পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের পুরোভাগ আলোকিত হয়ে থালার মতো দেখা যায়।
এ সময় চাঁদ দিগন্তের খানিকটা মাত্র উপরে থাকে। সূর্য যখন দিগন্ত থেকে আরো বেশি নিচে নেমে যায়, তখন পূর্ব দিকে চাঁদও দিগন্তের আরো  উপরে উঠে আসে। এভাবে সারা রাত চলে ভোরের যখন সূর্যোদয় ঘটে চাঁদ তখন পশ্চিম দিগন্ত দিয়ে অস্ত যায়।

সহজ ভাষায় এটাই হলো পূর্ণিমা হবার কারণ। কিন্তু প্রশ্ন করা যায়, সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময়ওতো চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই রেখায় থাকে। তাহলে প্রতিটা পূর্ণিমাতেই কেন চন্দ্রগ্রহণ হয় না?
এটা ঠিক যে, চন্দ্রগ্রহণ একমাত্র পূর্ণিমার সময়েই ঘটতে পারে। আবার সূর্যগ্রহণও হতে পারে যখন এই তিন বস্তু একই রেখায় থাকে। তখন অবশ্য তিনজনের মধ্যে মাঝখানে থাকতে হবে চাঁদকে।

প্রতি  পূর্ণিমাতেই চন্দ্রগ্রহণ না হবার কারণ হচ্ছে, পৃথিবী থেকে দেখতে দিগন্তের উপরে-নিচে হিসেব করলে আমরা চাঁদ ও সূর্যকে পৃথিবীর সাথে একই রেখায় দেখবো। কিন্তু চাঁদ ঐ সময়টিতে তথা পূর্ণিমার সময় একটু উত্তরে বা দক্ষিণে থাকতে পারে। এটাই ঘটে অধিকাংশ সময়।
কিন্তু যখনই উত্তর-দক্ষিণে না থেকে বরাবরে অবস্থান করে তখনই পূর্ণিমা পরিণত হয় চন্দ্রগ্রহণে।

অনেক সময় একই মাসে দুটি পূর্ণিমা ঘটে যেতে পারে। বিস্তারিত জানতে দেখুন এই পোস্ট।
Category: articles

বুধবার, ৩ জুন, ২০১৫

উল্লেখ্য, সৌরজগতের আটটি গ্রহের মাত্র ৫ টি খালি চোখেই ভালো দেখা যায়। বাকি ২টি দেখা যায় না। আরেকটি? আরে, আরেকটিতো পৃথিবীই। এর মধ্যে শুক্র, বৃহস্পতি ও শনিকে বেশ সহজেই দেখা যায়।
আচ্ছা, একে একেই দেখি।
শুক্রঃ শুক্রকে প্রতি সন্ধ্যায়ই চোখে পড়ে পশ্চিমাকাশে। তবে বছরের এ সময় সন্ধ্যার পর প্রায় ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত দিগন্তের উপরে থাকে। সূর্য ও চন্দ্রের পরেই কিন্তু আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। এটা অবশ্য বলা হচ্ছে পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রকৃত উজ্জ্বলতা অবশ্যই ভিন্ন।
জুনের ৬ তারিখে এই গ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। ঐ দিন পশ্চিমাকাশে পৃথিবী, শুক্র ও সূর্যের অন্তর্গত কোণ তথা দ্রাঘণ  (elongation) হবে সর্বোচ্চ। পুরো জুন জুড়েই সন্ধ্যার পরে সন্ধ্যাতারাটি লাইটহাউসের মতো সূর্যের আলো প্রতিফলন করতে থাকবে। জুনের ১৮ ও ১৯ তারিখের আগে ও পরে কয়েকদিন রমজানের নতুন চাঁদকে দেখা যাবে শুক্র গ্রহের আশেপাশেই।

বৃহস্পতিঃ
সন্ধ্যার পর ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত রাতের আকাশের উজ্জ্বলতায় শুক্রের একক রাজত্বের পতনের পর উত্তরাধিকার লাভ করবে বৃহস্পতি। গ্রহরাজ এতখানিই উজ্জ্বল যে একে ভুলক্রমে শুক্র ছাড়া অন্য কিছু মনে করে ফেলার কোন কারণই নেই।
বছরের শুরুতে বৃহস্পতি আকাশে শুক্রের বিপরীত প্রান্তে থাকলেও জুনে এসে এটি সন্ধ্যার পরে অবস্থান করে শুক্রের মতোই পশ্চিমাকাশে, শুক্রের একটু উপরে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জুনের শেষ দিক থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এই দুই উজ্জ্বল গ্রহ থাকবে নিকটতম দূরত্বে।
পৃথিবীর আকাশে বৃহস্পতির উজ্জ্বলতা যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও বেশি। তবে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতার রাজত্বের সময়কাল কমে গেছে গ্রহটির। কিছু দিন আগে রাতের অনেকাংশ ধরে সূর্যালোক প্রতিফলিত করলেও এই মাসের শুরুর দিকে এটি দিগন্তের উপরে থাকবে শুক্র ডুবে যাবার পর ১ থেকে ২ ঘণ্টা। জুনের শেষ দিকে দুই গ্রহ এতই কাছাকাছি থাকবে যে অস্ত যাবে প্রায় একই সময়ে।
মধ্যে-উত্তর গোলার্ধে মাসের প্রথম দিকে গ্রহটি আকাশে থাকবে সাড়ে ৩ ঘণ্টা আর মাসের শেষের দিকে থাকবে আড়াই ঘণ্টা।
খালি চোখে বৃহস্পতির কোন উপগ্রহ চোখে পড়বে না। তবে দুরবিনের সহায়তায় চারটি উপগ্রহ- আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টোকে চোখে পড়বে। এই চারটি গ্রহকে আবিষ্কারের বদৌলতে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর নাম অনুসারে গ্যালিলিয়ান উপগ্রহ বলা হয়।
জুনের বিশ তারিখে চাঁদ বৃহস্পতিকে অতিক্রম করে আরো পূবে চলে আসবে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি ঠিক তার পরদিনই পেরিয়ে আসবে সিংহরাশির (Leo Constellation) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র রেগুলাসকে।
শনিঃ
রাত নামার পরই সোনালী গ্রহ শনির রাজত্ব শুরু হবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে। থাকে প্রায় ভোর পর্যন্ত। সারা রাত পশ্চিমে ঘোড়া দৌড়িয়ে ভোরের দিকে হাজির হয় দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে। জুনের ১ ও ২ তারিখে গ্রহটি পূর্ণ চাঁদ ও জ্যেষ্ঠা (Antares) তারকার খুবই কাছাকাছি ছিল।
শনির কোন উপগ্রহই বাইনুকুলার দিয়েও চোখে পড়ে না, প্রয়োজন হবে ছোট্ট একখান টেলিস্কোপের। কারণ! শনিতো বৃহস্পতির চেয়ে দূরে থাকে।

মঙ্গলঃ
অনেক দিন ধরেই মঙ্গল গ্রহটি নিজেকে গোধূলির আলোয় লুকিয়ে রাখছে। ফলে, প্রতি মাসে দুই এক দিন ছাড়া একে দেখা সম্ভব ছিল না। জুনের ১৪ তারিখে এটি হাজির হবে ভোরের আকাশে। এ মাসেও লাল গ্রহটি দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বুধঃ
সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহটি উত্তর-গোলার্ধ থেকে ভালো চোখে পড়বে না। তবে, দক্ষিণ গোলার্ধের লোকেরা জুনের ১০ তারিখের দিকে একে ভোরের আকাশে দেখবেন। মধ্য-উত্তর গোলার্ধ থেকে গ্রহটিকে জুনের ২২ বা ২৩ তারিখে দেখা যাবে। যাদের বাইনোকুলার আছে, পূবাকশে একটু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে পারেন।
জুলাইর ২৩ তারিখ নাগাদ বুধ ভোরের আকাশেই থাকবে। এর পরে এটি হাজির হবে সন্ধ্যার আকাশে।

উল্লেখ্য, রাতের আকাশে যাই দেখি তাদেরকেই আমরা 'তারা' বললেও এই পাঁচখান কিন্তু গ্রহ। এদের নিজস্ব আলো নেই। এরা চাঁদের মতোই সূর্যের আলোকেই আমাদের দিকে ফিরিয়ে দেয়।
 সূত্রঃ
১। earthsky
Category: articles

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

রাতের আকাশে তারা দেখে পথ নির্ণয় করতে পারার মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে। এই আনন্দের ভাগীদার হতে চাইলে আপনাকে চিনতে সপ্তর্ষীমণ্ডলী। আপনি হয়তো মনে করছেন, সন্ধ্যাতারা তথা শুক্রগ্রহকেতো চিনিই। ওটা যেহেতু পশ্চিম দিকে থাকে তাই আর কিছু জানার কী দরকার?
কিন্তু ভাই! সন্ধ্যাতারা সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টার পরই আপনাকে হতাশ করে দিয়ে দিগন্তের ওপারে হারিয়ে যাবে। তখন? এমন কাউকে দরকার যে তখনও আকাশে থাকবে। তাহলে, আপনার আশা পূরণ করতে পারে সপ্তর্ষীমণ্ডল। কারণ এর মাধ্যমে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন সব সময় উত্তর দিকে মুখ করে রাখা ধ্রুব তারা।  এটি হচ্ছে একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। তারামণ্ডলী হচ্ছে আকাশের একেকটি এলাকা যেখানে অনেকগুলো তারকা মিলে বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর আকৃতি তৈরি করেছে। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে একেকটি তারামণ্ডলীর বিভিন্ন অবস্থান পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে।
যাই হোক, আর্সা ম্যাজর বা সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারকাগুলোর মিলিত চিত্র দেখতে একটি ভালুকের মত। এতে মোট তারকা আছে অন্তত ৭২০টি। এদের মধ্যে গ্রহ আছে ২১টি তারকার। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার নাম এলিওথ (Alioth) বা এপসাইলন আরসি ম্যাজোরিস। ভয় নেই, আমাদের এতগুলো তারকা কাজে লাগবে না।
কাজে লাগবে সাতটি তারকা। এগুলো বেশ উজ্জ্বল। আকৃতি হচ্ছে পেয়ালার মত। এজন্যেই এদেরকে আমেরিকায় বলা হয় বিগ ডিপার (Big Dipper) বা বড় পেয়ালা। দেখতে আবার অনেকটা লাঙলের মতোও হওয়ায় ইউরোপে একে বলা হয় লাঙল (Plough)। আর, সাতটি তারকা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এবং এর মূল তারামণ্ডলীতে এগুলো অপেক্ষাকৃত সহজে দৃশ্যমান ও উজ্জ্বল হবার কারণে বাংলায় মণ্ডলীটির নামই হয়েছে এই সাতটি তারকার নামে-সপ্তর্ষীমণ্ডলী। শুনে মনে হয় এই তারামণ্ডলীতে যেন তারকাই আছে ৭টি। নিচে দেখুন সম্পূর্ণ তারামণ্ডলী।
ভালুকের লেজসহ পেছন দিকে ৭টি তারকার উপর ফোকাস করুন। এরাই হলো বিগ ডিপার।

এই সাতটি তারকা খুঁজে পেলেই আপনি পেয়ে যাবেন ধ্রুবতারাকে। বিগ ডিপার ও এর মাধ্যমে ধ্রুব তারাকে খুঁজে পাবার প্রাথমিক উপায় বলেছিলাম আগের পোস্টে।  কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় এক জায়গায়। ওখানে বিগ ডিপারের ছবি যেমন দেওয়া আছে, এটা সব সময় এরকম থাকে না। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে তারকাগুলো অবস্থান পরিবর্তন করে।
চার ভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। গ্রীষ্মকাল (Summer) তথা উন, জুলাই ও আগস্ট মাসে এটি থাকে উত্তর-পশ্চিম দিগন্তে। পরের ঋতু তথা শরৎকালের (Autumn বা Fall) তিনটি মাস তথা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে এটি নেমে আসে উত্তর দিগন্তের নিম্নাংশে। শীতকালের পরের তিন মাসের জন্যে এটি অবস্থান করে উত্তর-পূর্ব দিগন্তে। বসন্তকালের তিন মাস তথা মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এর অবস্থান উত্তর দিগন্তের উচ্চাংশে। শরৎকালে যেখানে ছিল তার বিপরীতে উপরের দিকে। নিচে বিভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান দেখানো হল।
জুন, জুলাই, আগস্ট (গ্রীষ্মাকালে) সপ্তর্ষীমণ্ডলী 
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে সপ্তর্ষীমণ্ডলী  
ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সপ্তর্ষীমণ্ডল
মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে 

বলাই বাহুল্য, প্রত্যেক ঋতুর শেষ দিকে এর আকৃতি চিত্রের চেয়ে একটি ভিন্ন হবে। কিন্তু আকৃতি যেমনই থাকুক, এর চামচ বা পেয়ালার একেবারে সাম্নের দুটি তারকাকে যোগ করে বর্ধিত করে ৬গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যাবে ধ্রুবতারা। তারামণ্ডলীটির অবস্থান সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায় -
আকাশের তারাদের বর্তমানে আমরা যে আকৃতি দেখি, সময়ের সাথে সাথে বদলে যাবে সেই চিত্র। যেমন দেখুন ১ লাখ বছর আগে বিগ ডিপারের চিত্র কেমন ছিল এবনহ ১ লাখ বছর পরে কেমন হবে।

সূত্রঃ
[১] আর্সা ম্যাজর- উইকিপিডিয়া
[২] আর্থ স্কাই 
Category: articles
প্রথমে দেখি সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারবে কিনা।
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, আলো তো কোন কণা নয়, তাহলে এটা অভিকর্ষের কাছে ধরা খায় কী করে? অভিকর্ষ তো শুধু ভরের সাথে জড়িত। আলোক কণিকা ফোটনের তো ভরই নেই? ক্যামনে কী?
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ! 
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা 
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি 
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো 
Category: articles

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলেই আমরা অনেক সময় দিক হারিয়ে ফেলি। যে দিককে পশ্চিম মনে হচ্ছিল, একটু পরই দেখা যায় তার উল্টো দিকে কোন মসজিদের মুখ। কিন্তু যদি আশেপাশে যদি মসজিদ না থাকে? নেই কম্পাসও! কম্পাস থাকলেও কম্পাসের উপর চোখ বুঁজে ভরসা করা যায় না। কম্পাস দ্বারা একেবারে নিখুঁত উত্তর জানতে হলে কম্পাসের কাঁটা দেখে আরো কিছু হিসাব নিকাশ করতে হয়।
তাহলে দিক নির্ণয় করবেন কীভাবে? আকাশে তারকা আছে না? প্রাচীন কালের মানুষ দূরের পথ কিংবা সাগর যাত্রায় অনায়াসে দিক নির্ণয় করতেন তারকা দেখে।
সন্ধ্যার পরপরই আকাশে দেখা যায় তারাদের আধিপত্য। এদের সবাই অবশ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় 'তারকা' তথা নক্ষত্র (Star) নয়। রাতের আকাশের প্রধান দুটি উজ্জ্বল তারা- যথাক্রমে শুক্র ও বৃহস্পতি তো আমাদের সৌরজগতেরই গ্রহ। যাই হোক, সন্ধ্যায় উদিত হবার পর, প্রায় সব তারাই পশ্চিম দিকে চলতে থাকে। এরা যদিও মূলত পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে না, তবু পৃথিবীর আবর্তনের (rotation) কারণে এ রকম মনে হয়।
খেয়াল করুন, বলেছি 'প্রায় সব তারকাই পশ্চিমে যেতে থাকে'। কিন্তু একটি তারকা আছে যে সর্বদা উত্তর মেরুর উপর বসে থাকে, নড়ে চড়ে না। বরং দেখে মনে হয়, আকাশের সব তারকাই যেন ওকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এই তারকার নাম ধ্রুবতারা। ইংরেজিতে বলে পোলারিস (Polaris) বা মেরু তারা (Pole Star)। উত্তরে থাকে বলে একে আবার নর্থ স্টার (North Star) ও বলে।

সময় বাঁচাতে চাইলে শর্টকাটে পড়ে নিনঃ
» তারার সন্ধানেঃ ধ্রুবতারা 

এই তারকা যেহেতু ঠিক উত্তর দিকে থাকে, তাই একে বের করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে! এর দিকে তাকিয়ে থাকা মানে আপনার ডানে পূর্ব, বাঁয়ে পশ্চিম আর পেছনে দক্ষিণ। যদি মনে হয়ে থাকে, ধ্রুবতারা চিনে নেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ, তবে ভুল ধারণায় আছেন। চলুন, দেখে নেই।
ধাপ-১: সপ্তর্ষিমণ্ডলী খুঁজে বের করুন 
সপ্তর্ষীমণ্ডলী (Ursa Major) মূলত একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। এর মধ্যে প্রধান সাতটি তারকা একটি চামচের মত আকৃতি তৈরি করেছে। এই সাতটি তারকাকে উত্তর আমেরিকায় বলে বিগ ডিপার (The Big Dipper) আর ইউরোপে বলে লাঙল (Plough)। এই সাতটি তারকা খুঁজে পাওয়া মোটামুটি বেশ সহজ। সাতটি তারকার ৩টি মিলে চামচের বাঁট আর বাকি চারটি তৈরি করেছে মাথা। ছবিতে দেখুন।। প্রথম ছবিতে খুঁজে নেবার চেষ্টা করে ২য় ছবি থেকে মিলিয়ে নিন।

আরো পড়ুনঃ
» সপ্তর্ষীমণ্ডলী খুজে পাবার উপায়



ধাপ-২: ধ্রুবতারার দিকে একটি রেখা টানুন
বিগ ডিপারের একেবারে সামনের দুটি তারকাকে মনে মনে যোগ করে বর্ধিত করুন। রেখাটিকে টেনে লম্বা করে নাক বরাবর সোজা প্রথম যে উজ্জ্বল তারকা পাবেন- সেটিই হলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত ধ্রুবতারা। বিগ ডিপারের সামনের দুই  তারকা মিলে যে দৈর্ঘ্য হয় (লাল দাগ টেনে দেখানো হল), ধ্রুব তারার দূরত্ব তার ছয় গুণ।


আরো দেখুনঃ দিক নির্ণয়ে হাত ঘড়ি

ধাপ-৩: মিলিয়ে নিন
সন্দেহ লাগছে? আকাশে এত তারার মাঝে সন্দেহ দানা বাঁধতেই পারে- আসলেই এটা ধ্রুবতারা কিনা। আসলে ধ্রুবতারাকে আমরা বড় চামচ বিগ ডিপার দিয়ে চিনলেও এটা কিন্তু বিগ ডিপারের অংশ নয়। চামচ আছে আরেকটি। তার নাম ছোটি চামচ বা আসল নাম লিটল ডিপার (Little Dipper)। এটি অবস্থিত অন্য আরেকটি তারামণ্ডলী লঘুসপ্তর্ষী তে। বড় চামচের মত ছোত চামচও সাতটি তারায় গঠিত। অবস্থান বড় ভাইয়ের মাথার উপরে। এর বাঁটের একেবারে প্রান্তভাগের তারকাটিই হচ্ছে ধ্রুবতারা।

সূত্রঃ
[১] জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা- উইকিপিডিয়া
[২] How to find 'Polaris' - the North Star
[৩] ভিডিও 
 [৪] ভিডিও
Category: articles

শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ইতোপূর্বে আমরা বিভিন্ন ধরণের তারকার পরিচয় জেনেছিলাম। এতে অন্যতম শ্রেণী ছিল বাদামী বামন (Brown Dwarf)। এদেরকে বলা হয় ব্যর্থ তারকাকেন এরা ব্যর্থ? বাদামী বামনদের সাথে বড় বড় গ্রহের পার্থক্য কী? এদেরকে গ্রহ বলা হয় না কেন? এসব প্রশ্নের জবাব নিয়ে আজকের পোস্ট।
গ্যাস ও ধূলিকণার বিশাল পুঞ্জ সংকুচিত হয়ে জন্ম হয় একেকটি তারকার। তারকার প্রধান লক্ষণই হচ্ছে এর কেন্দ্রের নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে আলো, তাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু বাদামী বামন তারকাদের ভর (Mass) এত বেশি নয় যে অভিকর্ষীয় চাপ নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া সংঘটিত করতে পারবে। আর এই ব্যর্থতাই তাদের কপালে ব্যর্থ তারকার তিলক পরিয়ে দিয়েছে।
অন্যান্য প্রধান ক্রমের তারকাদের মতই জীবন শুরু হয় বাদামী এই তারাদের। প্রধান ক্রমের তথা Main Sequence নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে অভিকর্ষীয় চাপে বস্তুপিণ্ডটি ভেতরের দিকে সংকুচিত হতে থাকে যতক্ষণ না এটি হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরির কারখানায় পরিণত হয়। কিন্তু বাদামী বামনের কখোনই সেই ধাপে পৌঁছতে পারে না। হাইড্রোজেন ফিউশন শুরু হবার আগেই সে পৌঁছে যায় স্থিতিশীল অবস্থায়।

বিভিন্ন ভর ও তাপমাত্রার বাদামী বামনদের দেখা মেলে। এদের ভর বৃহস্পতির ১৩ থেকে ৯০ গুণ বা সূর্যের প্রায় এক দশমাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আমরা জানি তারকাদেরকে তাদের বর্ণালীর ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। M জাতের তারকারা হল সফল তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে শীতল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ। বেশিরভাগ এম তারকারাই লোহিত বামন হলেও কিছু আছে বাদামী বামন।
পরিচিত বামনদের মধ্যে Y dwarfs হচ্ছে সবচেয়ে শীতল। এদের কোনটার তাপমাত্রা বাসার উনুনের সমান, কোনটা আবার মানবদেহের সমান উষ্ণ। ফলে, এরা সামান্য আলো ও শক্তি বিকিরণ করে। ফলে, এদেরকে শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণেই ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত এদের আলোচনা শুধু বই পুস্তকেই সীমিত ছিল, দেখা যায়নি চাক্ষুষ। সম্ভবত, এ কারণেই এদেরকে আগে কালো বামন (Black Dwarfs) বলে ডাকা হত। কিন্তু, এখন এই নামে ডাকা হয় শ্বেত বামনদের চূড়ান্ত দশাকে যখন তারা সবটুকু তাপ বিকিরিত করে ফেলে।

এতই যখন সমালোচনা, তখন বেচারারদের কেন গ্রহ বলা হয় না?
এদের এত অল্প ভরের কারণের এদের পরিচয়কে গ্রহের সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সুযোগ আছে। উপরন্তু, দিন দিন গ্যাসীয় দৈত্য জাতের গ্রহদের সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে এই তারকাগুলোতে ফিউশনের অভাবের ফলে, অনেকে তাদেরকে গ্রহ বলার সাহস দেখাতে পারেন।
গ্রহদের সাথে অন্যতম পার্থক্যটি হচ্ছে নিজস্ব আলো থাকা। গ্রহদের কিন্তু নিজের আলো নেই। তাহলে, সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা বা ভোরে শুকতারাসহ কত গ্রহই তো আলো দেয়? আরে ভাই! ওগুলোতো চাঁদের মতই সূর্যের আলোই প্রতিফলিত করে। বাদামী বামনের অতিরিক্ত শীতল হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত লাল এবং অবলোহিত আলো (Infrared ) বিকিরণ করে। শীতল হয়ে গেলে দেয় এক্সরে এবং অবলোহিত আলো।
এরপরেও, গ্রহ এবং বাদামী বামনদের মাঝখানের সীমানা রেখা খুবই চিকন। কিছু বাদামী বামন ঠাণ্ডা হয়ে গ্যাস দানব গ্রহদের মত বায়ুমণ্ডল তৈরি করেছে। বাদামী বামনদের চারদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ থাকতে পারে, আর গ্রহদের থাকে উপগ্রহ। এখন পর্যন্ত জানা বৃহত্তম গ্রহ ওয়াসপ-১৭বি (WASP-17b) হচ্ছে। এর আকার বৃহস্পিতির দ্বিগুণ হলেও ভর প্রায় অর্ধেক। অন্য দিকে, সবচেয়ে ভারী গ্রহ হচ্ছে ডেনিস পি (DENIS-P )। এর ভর বৃহস্পতির ২৮ গুণেরও বেশি। ফলে, এই গ্রহ হয়ে পড়েছে বিতর্কিত। অনেকে একে দাবী করছেন বাদামী বামন বলে।  তাহলে, গ্রহ এবং বাদামী বামন নক্ষত্রদের উপযুক্ত সীমারেখা কী?


মহাকাশের বস্তুপিণ্ডদের সংজ্ঞা দেবার দায়িত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (International Astronomical Union)। তাদের মতে যে বস্তুপিণ্ড ডিউটেরিয়াম (হাইড্রোজেনের ২ ভর বিশিষ্ট আইসোটপ) জ্বালাতে পারে, তাকে তারকা বলা যাবে। আর বৃহস্পতি গ্রহের ১৩ গুণ পর্যন্ত ভর বিশিষ্ট বস্তুকে বলা হবে গ্রহ (এটা গ্রহের সংজ্ঞা নয়, সীমানা)।
সূত্রঃ
[১] space.com
[২] উইকিপিডিয়া 
Category: articles

সোমবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫


মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কত? ৮ হাজার ৮ শো ৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। একে কি কেউ টেক্কা দিতে পারে?
হ্যাঁ, পারে। তবে, উঁকি দিতে হবে পৃথিবী থেকে প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলের দিকে। তাহলেই পাওয়া যাবে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির খোঁজ। নাম অলিম্পাস মনস (Olympus Mons)। এর উচ্চতা প্রায় ২২ কিলোমিটার বা ১৪ মাইল। হ্যাঁ, অদ্ভুত লাগলেও শুনছেন ঠিকই। এটাই সৌরজগতের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি।
অর্থ্যাৎ সমুদ্র সীমা থেকে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা যত, এই দানবীয় পর্বত তার প্রায় তিন গুণ বড়।
অবশ্য, এটি মঙ্গল গ্রহের নবীনতম আগ্নেয়গিরি। এর উদ্ভব ঘটেছে মঙ্গলের আমাজনিয়ান যুগে। ঊনবিংশ শতক থেকেই জ্যোতির্বিদদের সাথে এর পরিচয় ছিল। শুরুর দিকে একে ডাকা হতো Nix Olympica নামে, ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ অলিম্পিক তুষার। আর, ল্যাটিন ভাষায় মনস অর্থ হলো 'পর্বত'।
আগ্নেয়গিরিটি মঙ্গলের পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত।এর ব্যাস ৬২৪ কিলোমিটার বা ৩৭৪ মাইল যা আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের প্রায় সমান। অন্য দিকে, আগে পৃথিবীর বৃহত্তম অগ্নিগিরি (Volcano) ছিল মাউনা লোয়া। অবশ্য, ২০১৩ সালে সাগরতলে আবিষ্কৃত আরেকটি বিশাল আগ্নেয়গিরি টামু ম্যাসিফ। এই আগ্নেয়গিরিটির আয়তন প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ১ লাখ ১৯ হাজার বর্গমাইল।  টামু ম্যাসিফ সাগর সমতল থেকে ২ কিলোমিটার পানির নিচে অবস্থিত। জাপান থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে পানির নিচে অবস্থিত শাটস্কি রাইজ নামে পরিচিত একটি ভৌগোলিক প্লেট বা মালভূমিতে অবস্থিত।

টামু ম্যাসিফের আকার অলিম্পাস মন্সের সাথে তুলনীয় হলেও মঙ্গোলের অগ্নিগিরিটি আয়তনে মাউনা লোয়ার চেয়ে  ১০০ গুণ বড়। শুধু অলিম্পাস মন্সই নয়, মঙ্গল গ্রহে মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে উঁচু আরো অনেকগুলো পাহাড় রয়েছে যেমন Ascraeus Mons, ইলিসিয়াম মনস, আরসিয়াম মনস ইত্যাদি । এগুলোর প্রতিটিই উচ্চতায় ১২ কিলোমিটারের উপরে। সত্যি বলতে, মঙ্গোলে এমন প্রায় ডজনখানেক আগ্নেয়গিরি আছে যারা পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলোর দশ থেকে ১০০ গুণ বড়।

কিন্তু মঙ্গোলের পাহাড় ও অগ্নিগিরিগুলো এত উঁচু বা বিশাল কেন?
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রহটিতে সক্রিয় প্লেট টেকটোনিকস নেই। ফলে, এর ক্রাস্ট তথা উপরিভাগ অবস্থান পরিবর্তন করে না যেমনটা হয় পৃথিবীতে। এর ফলে, আগেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে নিক্ষিপ্ত ম্যাগমা একই স্থানে স্তূপীকৃত হয়ে গড়ে ওঠে বিশাল আগ্নেয়গিরি। বিজ্ঞানীদের মতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মঙ্গোলের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অভিকর্ষ। অভিকর্ষ তথা কোন বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণের ক্ষমতা কম বলেই উচ্চতা বেশি পেরেছে।
বর্তমানে মঙ্গোলের অন্তর্ভাগ বা কোর শীতল হয়ে যাবার কারণে অলিম্পাস মনসসহ অন্যান্য আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে না।

তথ্যসূত্রঃ
[১] নাসা 
[২] যুগান্তর
[৩] উইকিপিডিয়া 
[৪] বিবিসি 
[৫] স্পেইস ডট কম
টামু ম্যাসিফ সাগর সমতল থেকে ২ কিলোমিটার পানির নিচে অবস্থিত। জাপান থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে পানির নিচে অবস্থিত শাটস্কি রাইজ নামে পরিচিত একটি ভৌগোলিক প্লেট বা মালভূমিতে অবস্থিত। - See more at: http://www.jugantor.com/ten-horizon/2013/09/18/28999#sthash.scyXrldG.dpuf
Category: articles

শনিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৫

তারকাদের শ্রেণীবিভাগ জানার আগে জেনে নিই, তারকা কারা? 
সহজ ভাষায় যেসব মহাজাগতিক বস্তুপিণ্ড এর কেন্দ্রস্থলে (সাধারণত) তাপ নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিপুল পরিমাণ আলো, তাপ ও বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে তাকে মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় তারকা বা নক্ষত্র (Star) বলে। গ্রহদের (Planet) এর পার্থক্য হল, গ্রহদের নিজস্ব আলো থাকে না। বড় বড় গ্রহদের আকার তো প্রায় বামন তারকাদের কাছাকাছি। সেক্ষেত্রে বাউন্ডারিটা এখানেই। নচেৎ, গ্রহদের উপগ্রহদেরকে গ্রহ বানিয়ে গ্রহকে কেন্দ্র করে একটি গ্রহমণ্ডল বা আরেকটি সৌরজগত গড়ে উঠত।
কিন্তু নিজস্ব আলো না থাকায় গ্রহরা সেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিতে ব্যর্থ হয়। যেমন আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির কথাই ধরা যাক। অল্পের জন্যে বেচারা তারকা হতে পারেনি। কাছাকাছি কিন্তু গিয়েছে। সে কিন্তু এখনও একটি গ্যাস দানব। আর সব তারকাই কিন্তু গ্যাসীয় প্লাজমায় গঠিত। অন্তত জীবনের প্রথম দিকে একটি উল্লেখযোগ্য সময় জুড়ে তাই থাকে।
কি বলতে বলতে কোথায় চলে এলাম!
এখানে আমরা ভর বিবেচনায় রেখে উল্লেখযোগ্য কিছু তারকার পরিচয় জানবো।
তারকাদের শ্রেণির কথা আসলে প্রথমেই আসবে প্রধান ক্রম বা মেইন সিকুয়েন্স (Main Sequence Star) দের কথা।
এরা হল, একেবারে যুবক তারকা। আমরা সাধারণত জানি যে, তারকারা অবিরাম হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি করে আলো, তাপ ও অন্যান্য বিকিরণ নির্গত করে। আসলে কথাটি প্রযোজ্য এই মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের জন্য। বর্তমানে মহাবিশ্বে এই যুবকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারকাদের ৯০ ভাগ। এদেরকে যুবক বললাম কারণ, এটাই তারকাদের বয়সের যুবক কাল। এর পর আস্তে আস্তে এরা জীবনের সম্পাতির দিকে পৌঁছে যাবে। অর্থ্যাৎ, মারা যাবে। মারা গেলে কী হবে? এই প্রশ্ন থাকুক আপাতত হিমাগারে।
সূর্য হলো একটি প্রধান ক্রমের নক্ষত্র

এই তারকারা যত বেশি উষ্ণ হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এই লেখা পড়তে পড়তে মনে হতেই পারে, আমাদের সূর্য মামা কোন ধরণের তারকা। হ্যাঁ, সেই এই দলে। তার মানে আমরা মহাবিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের সদস্য। অবশ্য আকারের দিক থেকে সূর্য মাঝারি মানের তারকা।
মেইন সিকুয়েন্স তারকারা সাধারণত বামনাকৃতির হয়।[১] এদের ভর সূর্যের ২০ গুণ পর্যন্ত হতে পারে এবং উজ্জ্বলতা হতে পারে ২০ হাজার গুণ পর্যন্ত।
এই বামনেরা আবার কয়েক প্রকার হতে পারে।
প্রথম বলা যাক হলুদ বামনদের (Yellow Dwarf) কথা। এরা আকারে ছোট। আমাদের সূর্য পড়ে এই দলেই। এদের ভর সূর্যের খুবই কাছাকাছি (০.৮ গুণ থেকে ১.২ গুণ এর মধ্যে) থাকে। আর তাপমাত্রা থাকে ৫৩০০ থেকে ৬ হাজার কেলভিন এর মধ্যে। এদের অপর নাম জি-টাইপ মেইন সিকুয়েন্স স্টার বা সংক্ষেপে G dwarf star। এই নামের উৎস এদের বর্ণালী।
আরেক ধরণের প্রধান ক্রমের তারকারা হল লোহিত বামন (Red Dwarf)। এরা আরো ক্ষুদ্র, সত্যি বলতে ক্ষুদ্রতম। এদের ভর টেনেটুনে সূর্যের প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি এরা আবার দুর্বল ও ঠাণ্ডা নক্ষত্রও বটে, এদের পৃষ্ঠতাপমাত্রা থাকে ৪ হাজার কেলভিন এর নিচে। অন্য দিকে সূর্যের পৃষ্ঠতাপমাত্রা কিন্তু ৬ হাজার কেলভিনের কাছাকাছি, ৫৭৭৮ কেলভিন। তবে, এই তারকাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয়। প্রায় ৭৭ ভাগ তারকার পরিচয়পত্রেই লোহিত দানব লেখা।  এমনকি, সূর্যের নিকটতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টৌরিও একটি লোহিত বামন।
প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে এছাড়াও কমলা, সাদা ও নীল তারকাদের দেখা মেলে। এদের মধ্যে কমলাদের সংখ্যা মোটামুটি ভালো থাকলেও সাদা ও নীলের সংখ্যা যথাক্রমে স্বল্পতর।
তারকাদের ৯০ ভাগ সম্পর্কে এখন আমরা জানি। বাহ!
এরা তো সবাই ছিল বামন তারকা। এবার আসা যাক দানবদের (Giant Star) জগতে। এদের ব্যাসার্ধ সূর্যের কয়েকশো গুণ পর্যন্ত হতে পারে।  মূলত, মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে তখন এদের মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে, কিন্তু বহিঃস্থ অংশ তখনও প্রসারিত হতে থাকে। এতে করেই এর ব্যাসার্ধ বেড়ে যায়। জীবনের এই সময়েই এদের নাম হয় দানব তারা। এখন থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য এই রকম দানব হয়ে যাবে। তখন, সূর্য বুধ, শুক্র এবং (সম্ভবত) পৃথিবীর কক্ষপথকেও গিলে খাবে। আমার মনে হয়, বলাটা অপ্রাসংগিক হবে না, যে সম্ভবত তখনই কিয়ামত হবে। কারণ, কুর;আন বলছে, এক সময় চন্দ্র ও সূর্য মিশে যাবে। এছাড়াও, হাশরের দিন সূর্য মাথার খুবই নিকটে থাকবে। যাই হোক, আমি ধর্মে অতটা বিশেষজ্ঞ নই।
দানব (Giant Star) নক্ষত্রদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচত হল লোহিত বামন তারকা (Red Giant)। এরা হয় অপেক্ষাকৃত শীতল। ভর হতে পারে সূর্যের আট গুণ পর্যন্ত।। এদের বয়সও কিছুটা বেশি।  পৃথিবী থেকে ৮৮ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গামা ক্রুসিস (Gamma Crucis) হচ্ছে আমাদের নিকটতম লোহিত দানব।

দানব নক্ষরদের মধ্যে এছাড়াও সাবজায়ান্ট, হলুদ দানব ও নীল দানব নক্ষত্রদের দেখা মেলে। নীল দানবেরা প্রধান ক্রম শেষ করে হিলিয়াম পোড়াতে থাকে।  দানব নক্ষত্ররা খুব দ্রুত এই ধাপ পেরিয়ে যায়।
এবার আসি আরো ভারী তারকা সুপারজায়ান্টদের (Supergiant) জগতে। এদের ভর হতে পারে সূর্যের ৮ থেকে ১২ গুণ। আর, ব্যাসার্ধ হয় সূর্যের ৩০ থেকে ১০০০ গুণ অবধি। এরাই তারকাদের জগতে সবচেয়ে ভারী ও বড়। বড় ভাই আর কি। এদের কেউ কেউ এত বড় যে সে একাই আমাদের সমগ্র সৌর জগতের সমান। পৃথিবী থেকে ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বিটলজুস (Betelgeuse) নক্ষত্রটি একটি সুপারজায়ান্ট। এর নামটি এসেছে يد الجوزاء আরবী কথা থেকে যার অর্থ কালপুরুষের হাত (The hand of Orion)। ভুলক্রমে, আরবি অক্ষর ইয়াকে ইংরেজি B এর প্রতিনিধি মনে করায় এর নাম এমন হয়ে গেছে। 
বিটলজুস নক্ষত্রের অবলোহিত ছবি
 এছাড়াও অ্যান্টারিস, রিজেল নক্ষত্ররা হল সুপারজায়ান্ট তারকার উদাহরণ। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল, এই তারকাদেরই পরবর্তী দশা হল, আমাদের সকলের প্রিয় টপিক ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। কেউ কেউ অবশ্য সুপারনোভা দশায়ও থেকে যেতে পারে। সুপারজায়ান্টরা লাল, নীল বা হলুদ হতে পারে।  যেসব সুপারজায়ান্টরা অত্যাধিক হারে ভর হারাতে থাকে, তাদেরকে আবার ডাকা হয় হাইপারজায়ান্ট বলে।

এবার আবার একটু বামনদের জগতে ফিরে যাই। প্রথমে আসি শ্বেত বামনদের (White Dwarf) কথায়। এদের আকার অনেক ক্ষুদ্র, এমনকি প্রায় পৃথিবীর সমান! ভাবা যায়! একটি তারকা একটি গ্রহের সমান। তবে না, ওকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ ওর ঘনত্ব অত্যাধিক বলে ভর কিন্তু অনেক বেশি। প্রধানত কার্বন দ্বারা গঠিত এই তারকাদের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। 

যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই সৌর ভরের কম থাকে তারা  ধাপের শেষের দিকে যখন বহিঃস্থ আবরণ ছুড়ে দেয় তখনই পরিণত হয় শ্বেত বামনে। ভর আরো বেশি হলে এরা সুপারনোভা বা নিউট্রন স্টার হতে পারতো। ধীরে ধীরে এরা তাপমাত্রা হারিয়ে কালো বামনে পরিণত হয়। আমাদের সূর্যের এক দিন এই দশা হবে। রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম তারকা লুব্ধক ( Sirius ) ইতোমধ্যেই শ্বেত বামন হয়ে বসে আছে। 

এবার বলবো এক ব্যর্থ তারকার কথা। ব্যর্থ হলে তাকে আবার তারকা বলা হয় কেন? 
ব্যর্থ বলার কারণ হচ্ছে, বেচারাদের ভর এত কম যে নিজস্ব অভিকর্ষের প্রভাবে ধসে গিয়ে যে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া শুরু করবে, সেই ক্ষমতা পায়নি। এদের ভর হয় বৃহত্তম গ্রহদের ভর থেকে সবচেয়ে কম ভরের প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে। তবে, নিজস্ব উজ্জ্বলতা কিছুটা আছে বৈকি। তাই, আবার গ্রহের খাতায়ও নাম লেখাতে পারেনি। এদের নাম হচ্ছে বাদামী বামন (Brown Dwarf)। সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির ১৩ গুণ ভরযুক্ত বাদামী বামনরা ডিউটেরিয়াম জ্বালিয়ে এবং ৬৫ গুণ ভরবিশিষ্ট বাদামী বামনরা লিথিয়াম জ্বালিয়ে কিছু আলো উৎপাদন করে। এ কারণেই গ্রহদের শ্রেণিশিক্ষক খাতায় এদের নাম তোলেনি। 
বাদামী বামনের তুলনা


এবার বলবো নিউট্রন স্টারদের কথা। এদেরকে এই নামে ডাকার কারণ, সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর এদের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত অত্যাধিক হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে। যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকে, তারাই এই পরিণতি লাভ করে। এদের ঘনত্ব হয় অনেক বেশি।  মজার কথা হলো, এদের ব্যাস হয় মাত্র ৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার, কিন্তু ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টি মিটারে প্রায় ১ টেরা কেজি (১ টেরা কেজি = ১০০০,০০০,০০০,০০০ কেজি)। চমকে গেলেন? স্বাভাবিক। আমিও নিজেও তাই।  এদের হাইড্রোজেন নির্মিত একটি হালকা বায়ুমণ্ডলও থাকে।

এবার যাই পালসারের কাছে। না, আর বলতে না পেরে মোটর সাইকেলে চেপে রণে ভঙ্গ দিচ্ছি না। নিউট্রন নক্ষত্রের সাথে জড়িত থাকে অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্র। তাই, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এটি বেতার স্পন্দন (Radio Pulse) নির্গমণ করে। আর, তখন একে বলে পালসার। 

যাবার আগে আরেক ধরণের তারার কথা বলে যাই। এরা হল, ডাবল স্টার। অনেক সময় দুটো তারকা পৃথিবী থেকে প্রায় একই রেখা বরাবর অবস্থিত হলে এ রকম মনে হয়। আবার অনেক সময় এরা প্রকৃতই একে অপরের সাথে আবদ্ধ। এদেরকে বলা হয় দ্বিমিক তারকা (Binary Star)। এরা উভয়ের ভরকন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। মনে করা হয়, মহাবিশ্বের অর্ধেক তারকাই এমন আচরণ করে থাকে। বর্তমানে ধ্রুব তারা (North Star) একটি বাইনারি স্টার জগতের অংশ। 
বাইনারি স্টার জগত

অনুমতি নিয়ে আরেক ধরণের তারকার কথা বললে, তালিকাটা কিছুটা পূর্ণতা লাভ করতো। তাই জোর করে অনুমতি নিলাম। বলবো, চলক তারকার (Variable Star) কথা। এরা দুই ধরণের। Cepheid variable হচ্ছে সেই সব অস্থিতিশীল তারকা যারা ঘন ঘন নিয়মত ভিত্তিতে আকার ও উজ্জ্বলতা পরিবর্তন করে। আকার বাড়লে উজ্জ্বলতা কমে।
অন্য দিকে, Mira variable হলো, সেই সব তারকা যাদের আকার ও দীপ্তী পাল্টাতে অনেক মাস লেগে যায়। ১৫৯৬ সালে প্রথম আবিষ্কৃত এই ধরণের নক্ষত্র মিরার নামে এদের নামকরণ। 
 

[১] উইকিপিডিয়া 
[২]  EnchantedLearning
Category: articles

শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রশ্নঃ গ্রহ, উপগ্রহের তো লেজ থাকে না। তাহলে,  ধূমকেতু লেজ পায় কোথায়?
উত্তরঃ  ধূমকেতুর লেজের উৎপত্তি এর গাঠনিক কারণে। ধূমকেতু হচ্ছে হিমায়িত বরফ, গ্যাস ও ধূলিকণা নিয়ে গঠিত। একটি ধূমকেতু যখন সূর্যের কাছাকাছি আসে, তখন এটি উত্তপ্ত হতে থাকে। এতে অবস্থিত বরফ তখন বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। ফলে, আগে বরফের ফাঁকে ফাঁকে যে ধূলিকণা আটকে ছিল, সেগুলোও মুক্তহয়ে যায়।
বাষ্পীভূত এই পদার্থসমূহকে সূর্যালোক ও সৌর ঝড়ের চার্জিত কণিকার ধারা ধূমকেতুর পেছন দিকে ঠেলে দেয়। এতেই তৈরি হয় এর লেজ। ধূমকেতু কী কী পদার্থে গঠিত তার উপর নির্ভর করে তার লেজের আকৃতি।
ধূমকেতুর লেজ হয় দুই ধরণের- ধূলিকণা ও গ্যাস আয়ন। ধূলিকণার লেজে থাকে সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রাপ্ত আকারের সমান ছোট্ট ও কঠিন কণিকা।
ধূমকেতুর লেজ

অন্য দিকে, গ্যাস পরমাণু থেকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ইলেক্ট্রনকে আলাদা করে দিয়ে আয়নিত করে ফেললে গ্যাস আয়ন লেজ গঠিত হয়। সৌর বায়ুর কারণেই এই লেজের অবস্থান হয় সূর্যের উলটো দিকে। দুই ধরণের লেজই দৈর্ঘ্যে লক্ষাধিক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ধূমকেতু (Comet) সূর্য থেকে দূরে চলে গেলে এর লেজ ও কোমা (বায়ুমন্ডল) বিলুপ্ত হয়। তখন, এর কেন্দ্রে অবস্থিত পদার্থসমূহ ঘনীভূত হয়ে শক্ত পাথুরে পদার্থে পরিণত হয়।
সূত্রঃ হাবলসাইট
Category: articles

শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৫

মহাবিশ্বের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স দুইটি আলাদা ধারণা তুলে ধরে। অনেক পদার্থবিদেরই বিশ্বাস, এমন কোন তত্ত্ব নিশ্চয়ই আছে যা এই দুই মতবাদকে একই সুতোয় গাঁথবে। এমন মতবাদেরই একজন দাবিদার হল সুপারস্ট্রিং থিওরি বা সংক্ষেপে স্ট্রিং থিওরি (String Theory)। স্ট্রিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল দড়ি, সুতা, আঁশ, তন্তু বা মালা।
স্ট্রিং থিওরি অনুসারে কণিকারা আসলে স্ট্রিং এর স্পন্দন



কোন কণা নয়, একটি সুতা মাত্রঃ মাধ্যমিক স্তরের  শিক্ষার্থীরা ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রনসহ মৌলিক কিছু অতিপারমাণবিক কণিকা (Subatomic Particles) সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের জানা মতে, বস্তুর গঠনের পেছনে দায়ী এরাই। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কীভাবে এই কণিকাগুলো চলাচল করে ও একে অপরের সাথে আচরণ করে। কিন্তু এই আচরণ বের করতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে একাধিক প্রশ্নের।
স্ট্রিং এর অবস্থান 

স্ট্রিং থিওরির মতে, এইসব অতিপারমাণবিক কণিকার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। এই তত্ত্ব তাদের বদলে হাজির করছে স্পন্দনশীল (Vibrating) সুতা যা অতি ছোট হওয়ায় বর্তমান যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যেকটি স্ট্রিং বা সুতা একটি লুপ বা ফাঁসে আবদ্ধ থাকতে পারে, আবার মুক্তও থাকতে পারে। স্ট্রিং এর কম্পনকেই আমরা বিভিন্ন কণিকা মনে করি এবং এই কম্পন থেকেই আমরা নানা কণিকার আকার ও ভর ধারণা করি।
বিন্দু-সদৃশ কণিকাকে স্ট্রিং কী করে প্রতিস্থাপন করতে পারে? অতিপারমাণবিক জগতে কোন কিছুর স্পন্দনের কম্পাঙ্ক (frequency) ও তার শক্তির (Energy) মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। অন্য দিকে, আবার আইন্সটাইনের বিখ্যাত E=mc2 সূত্র আমাদের বলে যে, ভর (Mass) ও শক্তিও পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তা বজায় রাখে। তাহলে, কোন বস্তুর কম্পনের হার তথা কম্পাঙ্ক ও ভরেরও একটি সম্পর্ক থাকবে। বন্ধুর বন্ধু যেভাবে বন্ধু হয় অনেকটা সেই রকম আর কি!
স্ট্রিং থিওরির মূলে আছে ঠিক এই সম্পর্কটাই।

মহাবিশ্বের মাত্রা কয়টিঃআইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মহাবিশ্বের জন্য অনেকগুলো মাত্রার দরজা খুলে দিল। আপেক্ষিকতা চার মাত্রায় যেমন খাটে তেমনি খাটতে পারে চল্লিশ মাত্রায়ও। কিন্তু স্ট্রিং থিওরি কাজ করে শুধু দশ বা এগার মাত্রায় (Dimension)। স্ট্রিং তত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলে, মহাবিশ্বে মাত্রার সংখ্যা সীমিত হয়ে যাবে।
আমরা শুধু চারটি মাত্রার সাথেই পরিচিত। স্ট্রিং থিওরির বাকি মাত্রাগুলো কোথায়? বিজ্ঞানীদের ধারণা, এগুলো একটি সংকীর্ণ স্থানে বেঁকে আছে। স্থান ক্ষুদ্র হলে, স্ট্রিং এর মাপকাঠিতে (10-33 সে.মি.) আমরা তা দেখতে পাব না।  অথবা, অন্য মাত্রাগুলো এত বড়ও হতে পারে যে তা পরিমাপ করা আমদের সাধ্যাতীত।


প্রমাণের সন্ধানেঃ
১৯৯৬ সালে, সান্তা বারবারার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এন্ড্রু স্ট্রমিঙ্গার এবং হার্ভাডের কামরান ভাফা একটি ব্ল্যাক হোলের সিমুলেশন করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিজর্ডার বা এনট্রপি ছিল মাত্রাতিরিক্ত। বিজ্ঞানী জ্যাকব বেকেন্সটাইন ও স্টিফেন হকিং ও দুই দশক আগে এমন একটি সিমুলেশন করেছিলেন। তখন কেউ বুঝতে পারেনি, একটা ব্ল্যাক হোলে কী করে এত এনট্রপি থাকতে পারে।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রাপ্ত ব্ল্যাক হোলদের মত করে প্রচলিত পদ্ধতিতে স্ট্রমিঙ্গার ও ভাফা ব্ল্যাক হোল তৈরি করেননি। তাঁরা এটা বানান (সিমুলেশন করেন) স্ট্রিং থিওরি দিয়ে।  ফলে অভিকর্ষের মৌলিক বল যা ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য দায়ী ও জটিল তত্ত্বের মধ্যে লিঙ্ক তৈরি হয়। প্রথাগত কণার ধারণার বদলে স্ট্রিং তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তাঁরা সম্ভাব্য একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের (সব মৌলিক বল একই উৎস থেকে আসা) বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পেরেছেন।
স্ট্রিং থিওরিই 'থিওরি অভ এবরিথিং' কিনা এটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু, মহাবিশ্বের অভ্যন্তরীণ জগত ব্যখ্যার অন্যতম দাবিদার এই তত্ত্ব।

আরো পড়ুন নিয়মিত বিভাগঃ ব্ল্যাক হোলের গভীরে

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ String theory
Category: articles

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

সূর্য হল আমাদের সৌরজগতের শক্তি সরবরাহ কেন্দ্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এটি হল একটি সাধারণ নক্ষত্র। কিন্তু সাধারণ এই নক্ষত্রই প্রতি সেকেন্ডে উৎপন্ন করে বিপুল পরিমাণ শক্তি, প্রধানত আলো ও তাপ বিকিরণের মাধ্যমে।  প্রতি সেকেন্ডে সূর্যে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ হল 5 x 1023  অশ্বশক্তির সমপরিমাণ। ধারণা পেতে চান এই পরিমাণ শক্তি কতটা বেশি? মনে করুন, পৃথিবী থেকে সূর্য  অবধি একটা বরফের সেতু নির্মাণ করা হল, যা ১ মাইল পুরু ও দুই মাইল চওড়া। এই সেটুটাকে এক সেকেন্ডে উড়িয়ে দিতে সমান পরিমাণ শক্তি লাগবে!
চলুন, জেনেই নিই সূর্যের বয়স কত।

সূর্যের বয়স জানার সরাসরি কোন উপায় নেই। পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন প্রস্তরখণ্ড ও উল্কাপিণ্ডের বয়স হচ্ছে ৪৬০ কোটি বছর। যদি ধরে নেওয়া হয়, পুরো সৌরজগত একই সাথে সৃষ্টি হয়েছিল, তবে সূর্যের বয়সও হয় এটাই। অবশ্য, এই অনুমান ভুল হবার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। অর্থ্যাৎ সূর্যের বয়স প্রায় ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি বছর।
সবচেয়ে প্রাচীন পাথরের তেজস্ক্রিয় ভাঙ্গন সূত্র কাজে লাগিয়ে এর বয়স বের করা হয়।
সূত্রঃ
নাসা হেলিওস
Category: articles

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীর বাইরে প্রাণ তথা এলিয়েনের প্রসঙ্গ আসলেই ঘুরে ফিরে আসে মঙ্গল গ্রহের কথা। এর আগেও বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছে এই লাল গ্রহটি। এবার এতে পাওয়া গেল মিথেন গ্যাস। তাতে কী? প্রাণের অস্তিত্ত্বের সাথে তো সম্পর্ক পানির। মিথেনের তাতে কাজ কি? হ্যাঁ, সম্পর্ক আছে। আর সেজন্যই তো আবারো শিরোনাম হল পৃথিবীর ২য় নিকটতম প্রতিবেশী।
নাসার মঙ্গল যান কিওরিওসিটি রোভার

এবার নাসার মহাকাশযান কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পেরেছে। এ থেকে ধারণা করা যায় বর্তমানে বা অন্তত অতীতে হলেও মঙ্গলে প্রাণ ছিল। গ্রহটিতে মিথেনের উপস্থিতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য। কারণ, পৃথিবীর মিথেনের ৯৫ শতাংশই আসে অণুজীবদের থেকে। এ থেকেই গবেষকরা আশা করছেন, মঙ্গলে প্রাণ থাকতেও পারে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবের গবেষক ড. ক্রিস ওয়েবস্টার বলেন, "হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৫ হাজার টন মিথেন আছে। একে যদি আপনি পৃথিবীর সাথে তুলনা করেন, তবে পৃথিবীতে আছে ৫০ কোটি টন। পৃথিবীতে এই গ্যাসের ঘনত্ব হচ্ছে ১৮০০ পিপিবিভি (Parts per billion by volume) যেখানে মঙ্গলে ০.৭ পিপিবিভি।"  
কিউরিওসিটির দল গ্রহটিতে মিথেনের উৎসের সন্ধান না পেলেও মনে করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ স্টোরই এর উৎসস্থল। এই গ্যাসের উৎস কোন জীব নাকি নিছকই ভৌগলিক ব্যাপার তা জানতে সহায়তা করতে পারে গ্যসে উপস্থিত কার্বনের আইসোটোপের প্রকৃতি। পৃথিবীতে ১২ ভরের কার্বন (C-12) জীবনের ক্ষেত্রে কার্বন-১৩ এর চেয়ে বেশি সহায়ক।
C-13 এর তুলনায় C-12 এর অধিক উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ অন্তত ৪ বিলিয়ন বছর আগেও ছিল বলে অনুমান করছেন। তবে, মঙ্গলের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি ভালো মত পরীক্ষা করবার যথেষ্ট গ্যাস নেই বলেই আপাতত সমস্যা।
এখানে উল্লেখ্য, মিথেন হল একটি জৈব (Organic) যৌগ। আর জৈব যৌগের প্রধান উপাদান হল কার্বন।
নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি যানটি ২০১২ সালের আগস্টে মঙ্গলে অবতরণ করে এর এর বায়ু ও উপাদান নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। 
সূত্রঃ
বিবিসি নিউজ, উইকিপিডিয়া
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

যাঁকে আধুনিক কসমোলজির জনক বলে প্রায়শই অভিহিত করা হয়, সেই বিজ্ঞানী এডুইন হাবল এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধ্যানধারণা আমূল পাল্টে দেয়।
বিজ্ঞানী এডুইন হাবল
জন্ম ১৮৮৯ সালে। পেশাগত জীবন শুরু আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু যার মন পড়ে রয়েছে মহাকাশের দূর সীমানায়, তার কি আর আইনের ধারায় মন বসে?  কয়েক বছর পরেই নিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় ডক্টরেট । গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে (Observatory) কাজ করার দাওয়াত পেলেন। কিন্তু তিনি আবার ১ম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকও যে! তাই কাজে যোগ দিতে কিছু দিন দেরি হয়ে গেল। তবে, ফিরে এসেই লেগে গেলেন। এখানেই তিনি বিশ্বের বৃহত্তম দুটি আকাশবীক্ষণ যন্ত্র (Telescope) নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলেন। এগুলো হল যথাক্রমে ৬০ ও ১০০ ইঞ্চির হুকার টেলিস্কোপ।

সৈনিক জীবন বুঝি বড্ড ভালো লেগেছিল!  ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা শুরু হয়ে গেলে ১৯৪২ সালে আবারো মানমন্দির ছেড়ে গেলেন।  পেলেন বীরত্বের প্রতিকও।

মিল্কিওয়ের বাইরে উঁকিঃ
১৯২০ এর দশকেও আকাশে ছড়ানো ছিটানো ছোপ ছোপ আলোকে মনে করা হত নীহারিকা (Nebula)। মনে করা হত এগুলোর অবস্থানও মিল্কিওয়েতেই। আলাদা আলাদা করে NGC 6822, M33 ও এনড্রোমিডা গ্যালাক্সির ছবি নিরীক্ষা করার সময় হাবল এগুলোর প্রতিটির ভেতরে একটি সেফেইড ভেরিয়েবল নামক স্পন্দনশীল (Pulsating) নক্ষত্র (Star) দেখতে পেলেন। হাবল সাহেব হিসেব কষে বের করলেন নক্ষত্রগুলো কত দূরত্বে আছে। এতে করে বের হল নীহারিকাদের  দূরত্বও। দেখা গেল, মিল্কিওয়ে থেকে তাদের দূরত্ব অনেক বেশি দূরে।

মহাকাশবিদরাও বুঝলেন, এই নীহারিকাগুলোও আসলে মিল্কিওয়ের মতই ছায়াপথ (Galaxy)। প্রতিটি ছায়াপথে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন তারকা। আগে যেখানে মিল্কিওয়েকেই 'মহাবিশ্বের সব' মনে করা হত, সেখানে এবার মহাকাশবিজ্ঞানীদের চোখ আরো অনেক দূর প্রসারিত হয়ে গেল। 
প্রায় একই সময়ে হাবল গ্যলাক্সিদের শ্রেণিবিভক্ত করার একটি স্টান্ডার্ড উপায়ও বার করলেন। তিনিই প্রথম পরিষ্কার করে গ্যালাক্সিগুলোকে ৪টি শ্রেণিতে ফেললেন। এগুলো হল, ডিম্বাকৃতির (Elliptical), প্যাঁচানো তথা সর্পিলাকার (Spiral) , Barred Spiral ও অনিয়াতাকার (Irregular) গ্যালাক্সি। হাবল শুরুতে ধারণা করেছিলেন সর্পিল গ্যালাক্সিরা  ডিম্বাকৃতিরগুলো থেকে বিকশিত হয়। এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা জানেন সব গ্যলাক্সিদের আকৃতিই এদের জীবনের শুরুতেই নির্ধারিত হয়।

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বঃ
গ্যালাক্সিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হাবল দেখলেন, ওগুলো স্থির হয়ে বসে নেই। উপরন্তু এরা প্রায় সবাই পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবশ্য এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের সাথে পারস্পরিক মহাকর্ষীয় টানে কাছে আসছে এবং আরো ৫০০ কোটি বছর পরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে।

ফলে জানা গেল, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার বের করা হয় তাকে বলে হাবলের নীতি (Huble's Law)। অবশ্য জর্জ লেমিটরও এর আগে ১৯২৭ সালে এই নীতি প্রস্তাব করেছিলেন। হিসেব করে পাওয়া গেল, মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট হারে প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীর সম্মানে এই হারটিকে বলা হয় হাবল ধ্রুবক (Huble Constant)।

হাবলের এক দশক আগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও সাধারণ আপেক্ষিকতার নীতির মাধ্যমে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ সময়ে তার কোন প্রমাণ না পাওয়া যাওয়াতে তিনি সেই প্রস্তাবের সমীকরণগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু হাবল সেই ধারণা প্রমাণিত করবার পরে আইনস্টাইন মাউন্ট উইলসনে গিয়ে বলেন, ঐ সমীকরণগুলো প্রত্যাহার ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল

অন্যান্য অবদানঃ
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যার জগতেই হাবলের রয়েছে আরো অবদান। পেয়েছেন অসংখ্যা পুরস্কার। কিন্তু মহাবিশ্বের পরিচয় উন্মোচিত করার পরেও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। তাঁর জীবদ্দশায় নোবেল প্রাইজের জন্য  মহাকাশবিদ্যাকে পদার্থবিদ্যার একটি ফিল্ড মনে করা হত। তিনি আজীবন চেষ্টা করে গেছেন যাতে এই ধারণা চেঞ্জ হয়ে জ্যোতির্বিদরাও নোবেলের সুযোগ পান। সুযোগটি তৈরি হল ১৯৫৩ সালে। কিন্তু একই বছর মারা গেলেন তিনিও । যেহেতু নোবেলের ক্ষেত্রে মরণোত্তর (Posthumous) পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা নেই, তাই নোবেলের তালিকায় হাবল আর স্থান পেলেন না।

১৯৫৩ সালে, ৬৩ বছর  বয়সে মারা যান মহাবিশ্বের নব দিগন্ত উন্মোচনকারী এই জ্যোতির্বিদ। মৃত্যুর আগে তিনি পালোমার পর্বতে ২০০ ইঞ্চির হ্যালি টেলিস্কোপের নির্মাণ দেখে গিয়েছিলেনীর১৯৭৬ সালে রুশ BTA-6 টেলিস্কোপ তৈরি আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বৃহত্তম টেলিস্কোপ।

হাবলের জন্মের ১০১ বছর পর ১৯০০ সালে নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে হাবল স্পেইস টেলিস্কোপ বসাল। এই আকাশবীক্ষণ যন্ত্র মহাবিশ্বের হাজার হাজার ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। পৃথিবীর নিখুঁত বয়স নির্ণয়, গ্যালাক্সিদের ক্রমবিকাশ ও মহাবিশ্বকে প্রসারণের জন্য দায়ী ডার্ক এনার্জির আবিষ্কারের ক্ষেত্র প্রভূত  অবদান রয়েছে এই টেলিস্কোপ্টির।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Edwin Hubble

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

মহাকাশে ১৫০০ দিনের মত ঘোরাঘুরি করে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির আকাশযান প্ল্যাঙ্কের পাঠানো ছায়াপথের আলোর গতিপথের চিত্র থেকে আমাদের সৌরজগতের আবাস মিল্কিওয়ে ছায়াপথের চৌম্বক ছবি বানানো হয়েছে।  সংস্থাটির দাবী, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চৌম্বক ক্ষেত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এই ছবিগুলোই অগ্রগামী। বিগ ব্যাঙ তথা মহাবিশ্বের জন্মের পর একে দেখতে ঠিক কেমন লেগেছিল - তা এই নকশা থেকে জানা যেতেও পারে।
প্ল্যাঙ্ক মহাকাশযানের পাঠানো আলোর সমাবর্তন (Polarisation) তথ্য ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে চিত্রগুলো। আলোকরশ্মি তার গতিপথে কী কী প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছিল, সমাবর্তন থেকে তার অনেকগুলো তথ্য পাওয়া যায়।
সমাবর্তনের পরিমাণ থেকে মহাকাশবিদরা আঁচ করতে পারেন, চুম্বকত্বসহ কোন ভৌত কারণে সমাবর্তন ঘটেছে।
প্ল্যাঙ্ক মহাকাশযানটিকে ১৪ মে, ২০০৯ সালে প্রেরণ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল বিগ ব্যাঙ পরবর্তী কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (CMB) নিয়ে তথ্য আহরণ করা।
সূত্রঃ
ডেইলিমেইল
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...