প্রথমে দেখি সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারবে কিনা।
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, আলো তো কোন কণা নয়, তাহলে এটা অভিকর্ষের কাছে ধরা খায় কী করে? অভিকর্ষ তো শুধু ভরের সাথে জড়িত। আলোক কণিকা ফোটনের তো ভরই নেই? ক্যামনে কী?
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ!
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ!
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো