Advertisement

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

আইনস্টাইন ক্রস বুঝতে হলে মহাকর্ষ বক্রতা সম্পর্কে জানা চাই। ভারী বস্তু এর আশেপাশের স্থানকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে বস্তুটা আচরণ করে লেন্সের মতো। বস্তুর পেছন থাকা জিনিসের আলোও বাঁক খেয়ে পর্যবেক্ষকের চোখে আসতে পারে৷ 


হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চোখে আইনস্টাইন ক্রস


মহাকর্ষ কীভাবে আলো বাঁকায়?


অনেকসময় তো একই বস্তুর ছবি ভারী বস্তুর চারদিক দিয়েই বেঁকে চারটি আলাদা বিম্ব (ছবি) তৈরি করতে পারে। এমন এক বিখ্যাত ছবির নামই আইনস্টান ক্রস। জিনিসটা আসলে একটি কোয়াসারের ছবি। পৃথিবী থেকে দেখতে হুকরা'স লেন্স ছায়াপথের পেছনে এর অবস্থান। ভারী ছায়াপথটা কোয়াসারটার আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে চারপাশে এর চারটা ছবি পাওয়া যায়। কেন্দ্রেও ঝাপসা একটি ছবি আছে৷ দেখে মনে হবে, চারটা আলাদা বস্তুর ছবি। অথচ আসলে একটাই জিনিস৷ 

১৯৮৫ সালে জন হুকরা এটা আবিষ্কার করেন। অবশ্য সেসময় চারটি ছবির অস্তিত্ব বোঝা যায়নি। শুধু ছায়াপথের পেছনের কোয়াসার থাকার কথা জানা গিয়েছিল৷ কোয়াসারটার নাম খটমটে৷ কিউ২২৩৭+০৩০।আইনস্টাইন ক্রস বলতে সাধারণত এই বস্তুটাকেই বোঝানো হয়।  তবে একই রকমের আরও ছবিও পরে আবিষ্কৃত হয়েছে৷ অনেকসময় আবার ক্রসের বদলে তৈরি হয় বলয়। এর নাম আইনস্টাইন বলয়। 


কোয়াসারটা পৃথিবী থেকে ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত৷ লেন্সিং ছায়াপথের দূরত্ব ৪০ কোটি আলোকবর্ষপেগাসাস তারামণ্ডলে এর অবস্থান৷ 

Category: articles

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অনুসন্ধানে দেখা হয় পানির অস্তিত্ব। পাশাপাশি জটিল জৈব অণু। প্রাণের বিকাশের জন্য যা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে এক দল গবেষক পৃথিবী থেকে ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথে খুঁজে পেয়েছেন এমন অণু৷ এত দূরে এর আগে এ উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়নি৷


এসপিটি০৪১৮-৪৭ ছায়াপথে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ খুঁজে পেয়েছে জৈব অণু। 

এ সঙ্কেতের একটি অংশ হলো ছায়াপথের ধূলিকণা৷ তবে ভূমিকা আছে হাইড্রোকার্বন অণুরও৷ এমনিতে ধূলিকণার কারণে দূরের সঙ্কেত পৃথিবী থেকে দেখতে অসুবিধা হয়। তবে কক্ষপথের ওয়েব টেলিস্কোপ সুবিধা পেয়েছে মহাকর্ষ বক্রতা থেকে। এ প্রক্রিয়ায় সামনে থাকা কোনো ছায়াপথ বা অন্য বস্তু পেছনের বস্তুর জন্য লেন্স হিসেবে কাজ করে। ঢাকা থাকার বদলে বেঁকে এসে ধরা দেয় চোখে।

মহাকর্ষ বক্রতার গল্প

ছায়াপথের নামটা খুব খটমটে৷ এসপিটি০৪১৮-৪৭৷ ২০১৩ সালে প্রথম একে দেখা গিয়েছিল। ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এ ছায়াপথ দেখা মানে খুব অল্প বয়সের মহাবিশ্বকে দেখা৷ যখন বয়স ছিল মাত্র ১৫০কোটি বছর।




Category: articles

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

ধরুন, সামনে তাকিয়ে একটা বিল্ডিং বা পাহাড় দেখলাম। যখন দেখলাম তখনও সেটা সে অবস্থায়ই আছে। এমন না যে আমরা দেখতে দেখতে বিল্ডিংয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটে গেছে। তবে পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের দূরের বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়।




চাঁদের কথাই ধরুন। চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে আছে। আলোর বেগ অনেক বেশি। সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তাও এত দূর থেকে আলো আসতে ১.৩ সেকেন্ড সময় তো লাগেই। মানে এই মূহুর্তে আমরা চাঁদের যে আলো দেখছি তা ১.৩ সেকেন্ড আগের প্রতিফলিত আলো

চাঁদ কত দূরে আছে?


 চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 

সূর্য তো আরও দূরে। আছে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। আলো আসতে সময় লাগে গড়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। তারমানে সূর্যকে আমরা ৮ মিনিট আগের অবস্থায় দেখি। এখন সূর্য গায়েব হয়ে গেলে আরও ৮ মিনিট পরে তা আমরা জানতে পারব।

সূর্য কত দূরে আছে?

সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় চার আলোকবর্ষ। তার মানে নক্ষত্রটার চার বছর আগের দৃশ্য দেখি আমরা। আমাদের অন্যতম কাছের ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা। দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। একবার ভাবুন। উত্তর আকাশে যে অ্যান্ড্রোমিডাকে আমরা দেখি তা আসলে ২৫ লাখ বছর আগের অ্যান্ড্রোমিডা!

এক আলোকবর্ষ কত বড়?

অ্যানড্রোমিডা কীভাবে দেখব?

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেন ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের কথা। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের আবিষ্কৃত নক্ষত্র। স্বাভাবিকভাবেই যত দূরে আমরা কোনো নক্ষত্র দেখব, সেটা হবে ততই প্রাচীন বা পুরনো। ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের অবস্থান পৃথিবী থেকে ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ। ভাবুন! নক্ষত্রের ২৮০ কোটি বছরেরপুরনো দৃশ্যও মানুষ দেখেছে।

২০২২ সাল পর্যন্ত পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের দেখা ছায়াপথের নাম এইচডি১। দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। তাহলে তার চেয়ে আগে ছায়াপথ কোথা থেকে আসল? আসলে দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ হলেও ছায়াপথটি আমরা ৩৩২৯ বছর আগে অবস্থায় দেখছি না। মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে বস্তুদের লোহিত সরণ ঘটে। এর ফলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ১৩৮০ কোটির বদলে প্রায় ৪৬৫০ কোটি।

মহাবিশ্ব কত বড়?

তার মানে, আমরা পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের যত দূরে তাকাব, তত প্রাচীন দৃশ্য দেখব। 

আর আকাশযান শনাক্ত ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে রেডার ব্যবহার করা হয় সেটাও কিন্তু এই বুদ্ধি দিয়েই কাজ করে। রেডার থেকে বিমান বা জাহাজে সঙ্কেত পাঠানো হয়। সেটা যানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। যাওয়া-আসার সময়টুকু হিসাব করেই বের করা দূরত্ব।


পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরের বস্তুগুলোর একটি তালিকা দেখতে পারবেন উইকিপিডিয়ায়। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২

পৃথিবী থেকে এত দূরের একটা জিনিস খালি চোখেই দেখা যায়! কী অসাধারণ ও অকল্পনীয় ব্যাপার। ভাবতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ নেমে যায়। তাই তো অ্যানড্রোমিডা হয়ে ওঠেছে গল্প-কবিতার উপদান।


বলা হয়ে থাকে, খালি চোখে দেখা সম্ভব সবচেয়ে দূরের বস্তু এই অ্যানড্রোমিডা। যদিও আকাশ ও দৃষ্টি ভাল থাকলে ট্রায়াংগুলাম গ্যালাক্সিও দেখা যায়। অ্যানড্রোমিডার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। আর ট্রায়াংগুলামের ২৭ লাখ।

প্রতিবেশী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা

চলুন দেখে নেই, রাতের আকাশে কখন কীভাবে খুঁজে পাব অ্যানড্রোমিডাকে

দেখার জন্যে প্রথমেই লাগবে একটি অন্ধকার আকাশ। কৃত্রিম আলোর ঝলক যেখানে থাকবে না। দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। এ সময় উত্তর গোলার্ধের সন্ধ্যার পূর্ব আকাশেই দেখা দেয় ছায়াপথটা। মধ্যরাতের দিকে প্রায় মাথার উপরের দিকে চলে আসে।
 
ছায়াপথটা খুঁজে পাওয়ার দুটি পথ আছে। একটি হলো ক্যাসিওপিয়ার মাধ্যমে। আরেকটি পেগাসাস বা পঙখীরাজ তারানকশার মাধ্যমে।

অক্টোবর মাসের দিকে উত্তর আকাশে ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ (W) আকৃতির ক্যাসিওপিয়া খুব সহজেই দেখা যায়। এটা একটা তারামণ্ডল। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার নাম শেডার। এই তারাটিই আপনাকে অ্যানড্রোমিডার দিকে নিয়ে যাবে। ছায়াপথটা আছে একই নামের তারামণ্ডলের মধ্যেই।

পেতে অসুবিধা হলে শেডার নক্ষত্রের সাথে পাশের দুটি নক্ষত্র নিয়ে একটা ত্রিভুজ বানান। এবার শেডার ত্রিভুজের যে শীর্ষে আছে সেদিকে ত্রিভুজের দৈর্ঘ্যের তিনগুণ যান।


ক্যাসিওপিয়া থেকে অ্যানড্রোমিডা
তারা পরিচিতি: শেডার

অ্যানড্রোমিডাকে আরেকভাবেও খুঁজে নেওয়া যায়। এজন্য আপনাকে বের করতে পেগাসাস ঘোড়ার বিশাল বর্গচিত্রটি। এর আলফেরাজ তারাটি পেগাসাসের সাথে অ্যানড্রোমিডাকে যুক্ত করেছে। এবার খুঁজে নিন মাইরাক ও মিউ অ্যানড্রোমিডা তারা দুটি। মাইরাক থেকে মিউর দিকে দাগ টেনে এদের দূরত্বের সমান গেলেই পেয়ে যাবেন অ্যানড্রোমিডা


পেগাসাস থেকে অ্যানড্রোমিডা

Category: articles

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি ইতোপূর্বে ব্যাপন ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।]

অ্যানড্রোমিডার বিস্ময়কর কিছু কথা জানব। তবে, আগে সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

আপনারা কি আকাশে কখনো  ছায়াপথ (Galaxy) দেখেছেন? হয়ত বা দেখে থাকলেও থাকতে পারেন! রাতের আকাশে যে শুধু তারকাই দেখা যায় না, তার আরেক উদাহরণ হল অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। আমাদের মিলিওয়েতে গ্যালাক্সি যেমন সূর্যসহ অসংখ্য নক্ষত্রের বাস, তেমনি বহু নক্ষত্রে গড়া (নেবুলাসহ আরো বিভিন্ন পদার্থের পাশাপাশি) আরেকটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ হল অ্যানড্রোমিডা। 

অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি

অ্যানড্রোমিডা একটি সর্পিলাকার ছায়াপথ (spiral galaxy)। অবস্থান অ্যানড্রোমিডা তারামণ্ডলে। অপর নাম মেসিয়ার ৩১ বা এম৩১ (M31), জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে এর নাম অনুসারে। একে আবার অনেক সময় গ্রেট নেবুলাও বলা হত। বড় ছায়াপথদের মধ্যে অ্যানড্রোমিডা হল আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে নিকটবর্তী ছায়াপথ। নাম রাখা হয়েছিল পৌরাণিক রাজকুমারী অ্যানড্রোমিডার নাম অনুসারে। লোকাল গ্রুপ নামের প্রায় ৫৪টি গ্যালাক্সির একটি গুচ্ছের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। আমাদের মিল্কিওয়ে হল লোকাল গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য। 

প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি) নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এই ছায়াপথটি আমাদের থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ব্যাস প্রায় ২২০,০০০আলোকবর্ষ, যেখানে আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ের ব্যাস ১০০,০০০ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ এর সাইজ আমাদের মিল্কিওয়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের মিল্কিওয়ের ভর অনেক বেশি।

আরও পড়ুনঃ

সাতটি সর্পিল বাহু বিশিষ্ট এই ছায়াপথটির নিউক্লিয়াসের সাথে সংযুক্ত আছে দুটি বাহু । বাকী পাঁচটি সর্পিল বাহু অধিকার করে আছে অসংখ্য সৌরমন্ডলকে। এর নিউক্লিয়াস তৈরী হয়েছে এক কোটি গোল নক্ষত্রগুচ্ছের (Globular Cluster) সমন্বয়ে। ছায়াপথটির ভেতরের অংশের পূর্ণ ঘূর্ণন সমাপ্ত হতে সময় লাগে ১১ মিলিয়ন বছর আর বাইরের অংশটুকু সমাপ্ত করে ৯০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছরে (১ মিলিয়ন সমান ১০ লাখ)।

কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমাদের মহাবিশ্বে ছায়াপথের আসল সংখ্যা কত সেটা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না। কারণ, জ্যোতির্বিদরা যতই মহাবিশ্বের দিকে তাকাচ্ছেন, ততই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন ছায়াপথ। মহাবিশ্বের এখনও অনেক জায়গা আছে, যেটা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। কিছু কিছু জায়গা আছে, যা টেলিস্কোপ দিয়েও দেখা যায় না। তবু জ্যোতির্বিদদের হিসাব অনুসারে মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি)। 


অ্যানড্রোমিডা সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কথা জেনে নেওয়া যাকঃ 

১। মিল্কিওয়ে বনাম অ্যানড্রোমিডাঃ

লোকাল গ্রুপের গ্যালাক্সিদের মধ্যে সম্ভবত মিল্কিওয়ের ভর-ই সবচেয়ে বেশি। তবুও আনড্রোমিডা ছায়াপথেই নক্ষত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, এতে নক্ষত্রের সংখ্যা মিল্কিওয়ের প্রায় দ্বিগুণ। সাইজেও এটিই বড়।


২। এক সময় আনড্রোমিডাকে নীহারিকা ভাবা হতঃ

যখন মহাবিশ্বের প্রকৃত পরিধি কেউ জানত না, তখন ধারণা করা হত, আমাদের মিল্কিওয়ে গালাক্সি-ই মহাবিশ্বের সব কিছু। অ্যানড্রোমিডা গালাক্সিকে এর ভেতরেই অবস্থিত বলে মনে করা হত, যাকে শুধুমাত্র একটা অস্পষ্ট দাগের মতো দেখা যেত। কিন্তু বিংশ শতকে অত্যন্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে জানা গেল, এটি নিজেই আরেকটি গ্যালাক্সি। তার আগের টেলিস্কোপগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুসারে এটি ছিল মহাজগতিক ধূলোর মেঘ এবং শুধুমাত্র নক্ষত্র গঠনের উপাদানসমূহ এতে বিদ্যামান। এর মাধ্যমে তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল, বিশাল অ্যানড্রোমিডা একটা নীহারিকা মাত্র। নতুন তারকা তৈরির অঞ্চলকে বলা হয় নীহারিকা। 

৩। অ্যানড্রোমিডায় ব্ল্যাক হোল!

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, অ্যানড্রোমিডার শুধু কেন্দ্রেই ২৬ টির মতো ব্ল্যাক হোল আছে। এছাড়াও চন্দ্র এ-ক্সরে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাহায্যে আরো অনেকগুলো ব্ল্যাক হোল খুঁজে পাওয়া গেছে। আমাদের ছায়াপথের মতোই অ্যানড্রোমিডার কেন্দ্রে একটি বিশাল ব্লাকহোল আছে। আরও দুটি যুগল ব্ল্যাক হোল একে অপরকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এদের ভর সূর্যের প্রায় ১৪ কোটি গুণ।

আরো পড়ুনঃ
ব্ল্যাক হোলের পরিচয়

৪। ইতিহাসঃ

এই গ্যালাক্সিটি আবিস্কার করেছিলেন পারস্যের এক মুসলমান জ্যোতির্বিদ আব্দুর রহমান আস-সুফি। ৯৬৪ সালে তিনি গ্যালাক্সিটি পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু সেই সময়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে মানুষের ধারণা না থাকায় তিনি `তার "Book of Fixed Stars" গ্রন্থে এর নাম দেন 'Small Cloud' বা 'ক্ষুদ্র মেঘ'। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, মিল্কিওয়ে-ই হল মহাবিশ্বের একমাত্র ছায়াপথ। অ্যানড্রোমিডাকে গ্যালাক্সিকে তখন মনে করা হত নীহারিকা। কিন্তু এডউইন হাবলের সম্প্রসারণ তত্ত্ব
পাওয়ার পর জানা গেল, মিল্কিওয়ে আসলে মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র। অ্যানড্রোমিডাকে মেসিয়ার -৩১ নামকরণ করেন বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ে, ১৭৬৪ সালে। তবে তিনি এর আবিস্কারের কৃতিত্ব দিতে চেয়েছিল জার্মান জ্যোতির্বিদ সাইমন মারিয়াসকে। বর্তমানে অবশ্য আব্দুর রহমান আস-সুফিকে এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। 

৫। মিল্কিওয়ের সাথে সংঘর্ষঃ

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, কয়েকশ কোটি বছরের মধ্যেই এটি আমাদের গ্যালাক্সির উপর এসে পড়বে। দুটো মিলে বড় একটি উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সিতে পরিণত হবে। যদিও মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবে প্রসারিত হচ্ছে, তবুও কাছাকাছি অবস্থিত এই দুটি গ্যালাক্সি মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়াতে পারছে না। এরা প্রতি সেকেন্ডে ৭৫ মাইল বেগে একে অপরের দিকে ধেয়ে আসছে।
ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।  তত দিন আমরা থাকব না। আর আসলে ঐ সংঘর্ষে নক্ষত্রদের মতো ছোট জায়গায়ও বড় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

আনড্রোমিডা সম্পর্কে  একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল, এটি আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি। এটি হল, বামন ক্যানিস ম্যাজর
আরো পড়ুনঃ
☛ আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সি কোনটি? 


সূত্রঃ
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Andromeda_Galaxy
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way
Category: articles

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

এনজিসি ৫২৬৪ গ্যালাক্সি। ছবিঃ হাবল স্পেস টেলিস্কোপ 

এটি একটি বামন গ্যালাক্সি। পৃথিবী থেকে ১৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আকাশের হাইড্রা তারামণ্ডলীতে এর অবস্থান। এতে তারার সংখ্যা ১০০ কোটি। বলতে হবে যে ছায়াপথটি খুব গরীব, কারণ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এর একশ গুণ তারা আছে। অধিকাংশ ছায়াপথের আকার সর্পিল বা উপবৃত্তাকার হলেও এর আকার হচ্ছে অনিয়মিত (irregular)। জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস, এর আশেপাশে অন্যনায় গ্যালাক্সির উপস্থিতির কারণে এর আকৃতি এমন হয় গেছে।

আরো পড়ুনঃ
☛ আজকের ছবিঃ আর্কাইভ

সূত্রঃ
১। https://www.spacetelescope.org/images/potw1634a/
Category: articles

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬


ছবিতে MACS J0717 গ্যালাক্সি ক্লাস্টার দেখা যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে ৫.৪ বিলিয়ন (৫৪০ কোটি) আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত স্থানটি চারটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষের হোস্ট হয়েছে।
এক একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে শত শত বা হাজার হাজার গ্যালাক্সি থাকে। এছাড়াও থাকে ডার্ক ম্যাটারের ঘন মেঘে সন্নিবেশিত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস।
এই ছবিটি নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি (নীল অংশ) ও হাবল স্পেইস টেলিস্কোপের (লাল, সবুজ ও নীল) সমন্বয়ে তৈরি।

সূত্রঃ
[১] Earth Sky
Category: articles

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আমরা জানি, বাসযোগ্য (Habitable) হতে হলে একটি গ্রহকে সংশ্লিষ্ট নক্ষত্র (যেমন আমাদের ক্ষেত্রে সূর্য) থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত হতে হয়। নক্ষত্র থেকে দূরের এই অঞ্চলটিকে হতে হয় একদম পারফেক্ট- খুব উষ্ণও নয় আবার খুব শীতলও নয়।  প্রশ্ন হতে পারে খোদ গ্যালাক্সির ক্ষেত্রেও কি এমন কোন শর্ত আছে?

গ্রহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাসযোগ্যতার যে শর্ত তা প্রযোজ্য হতে পারে গ্যালাক্সির ক্ষেত্রেও। অর্থ্যাৎ, গ্যালক্সিদের ক্ষেত্রেও এমন একটি অঞ্চল থাকবে যেখান গ্রহরা বেড়ে উঠতে পারবে। কেপলার স্পেইস টেলিস্কোপসহ কিছু মিশন সৌরজগতের বাইরে হাজার হাজার গ্রহের সন্ধান পাচ্ছে। এই বহির্গ্রহদের সংখ্যা এবং অবস্থান চোখে পড়ার মত।
তবে গ্যালাক্সিদের ক্ষেত্রে বাসযোগ্য গ্রহের অঞ্চল থাকার বিষয়টি এখনো বিতর্কের উর্ধ্বে উঠতে পারেনি। জ্যোতির্পদার্থবিদ গুইলিয়েরমো গনজালেজ এর মতে, একটি গ্রহকে ছায়াপথ কেন্দ্র (Galactic center) থেকে এত দূরে থাকতে হবে যাতে এটি ক্ষতিকারক বিকিরণ এড়াতে পারে। আবার এর অবস্থান এত বেশি দূরেও হওয়া চলবে না যাতে এতে যথেষ্ট পরিমাণ ভারী মৌল তৈরি হতে সমস্যা হয়। ফলে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে ৬ হাজার আলোকবর্ষব্যাপী একটি অঞ্চল বাসযোগ্যতার আওতায় পড়ে। এর অবস্থান হয় কেন্দ্র ও প্রান্তের প্রায় মাঝামাঝিতে।
তবে, গ্যালাক্সিতে বাসযোগ্য গ্রহের অবস্থানের নিখুঁৎ সীমানা চিহ্নিত করার মত যথেষ্ট গ্রহ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। অবশ্য, দিন দিন এ সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও তথ্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে।

সূত্রঃ
[১] স্পেইস আনসার
[২] গুলিয়েরমো গনজালেজ
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...