Advertisement

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এ পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদের বুকে হেঁটেছেন। আপনিও যদি তাদের মতো চাঁদে যেতে চান, তবে শীতের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা রাতে চাঁদের তাপমাত্রা নেমে আসে হিমাংকের ১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। কিন্তু শুধু শীত থেকে বাঁচলেই চলবে না, গরম থেকে বাঁচারও প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা দিনের বেলায় চাঁদের তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ১০৭ ডিগ্রি (আরেকটি তথ্য মতে ১২৩ ডিগ্রি) পর্যন্ত।

চাঁদের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা 

চাঁদের তাপমাত্রা এত বেশি উঠা- নামা করে কেন? এর কারণ হল, চাঁদে পৃথিবীর মতো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল কম্বলের মতো আচরণ করে। ধরে রাখে ভেতরে প্রবেশ করা উত্তাপ। সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভেতরে এসে ভূমিকে উত্তপ্ত করে। পৃথিবী সেই তাপ শক্তিকে অবলোহিত বিকিরণ (infrared radiation) আকারে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিকিরণ সহজে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত থাকে।

অবলোহিত বিকিরণ বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না কেন? এর কারণ হল আমরা খালি চোখে যেসব আলো দেখি তার মধ্যে লাল রঙ এর আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। আর অবলোহিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর চেয়ে একটু বেশি। তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হবার কারণে এর পক্ষে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

চাঁদের সমস্যা আছে আরেকটিও। চাঁদ নিজের অক্ষের সাপেক্ষে একবার ঘুরতে ২৭ দিন সময় নেয়। ফলে চাঁদের কোনো জায়গা ১৩ দিনের কাছাকাছি সময় সূর্যের আলো পায়, বাকি সময়টা থাকে অন্ধকারে। সূর্যের আলো থাকার সময় চাঁদে যে তাপমাত্রা থাকে, তাতে সহজেই পানি বাষ্প হয়ে যাবে। আর সূর্য দিগন্তের নিচে তলিয়ে যাবার পর সাঁই করে তাপমাত্রা কমে যাবে ২৫০ ডিগ্রি।

আরো পড়ুনঃ
আবর্তন বনাম প্রদক্ষিণ
☛ চাঁদ কি আসলে আবর্তন করে?

ফলে চাঁদে যেতে হলে এমন পোশাক দরকার যাতে একই সাথে উত্তাপ তৈরির এবং শীতলীকরণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কাছে কিছু খাদ আছে যারা অবিরাম ছায়ার মধ্যে থাকে, কখনো সূর্যের
মুখ দেখে না। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা সব সময় মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রিই থাকে। আবার এর আশেপাশেই এমন কিছু পাহাড় চূড়া আছে যারা অবিরাম সূর্যের আলো পেতেই থাকে।

রাতের আকাশে চাঁদকে কত নিরীহ দেখায়, অথচ এর তাপমাত্রা যে এত ভয়ানক হতে পারে তা কে ভেবছিল। 

আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?
☛ পূর্ণিমা হয় কীভাবে?

সূত্রঃ
1. http://www.space.com/18175-moon-temperature.html
2. http://www.universetoday.com/19623/temperature-of-the-moon/
3. http://www.livescience.com/50260-infrared-radiation.html
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আলডেরামিন নক্ষত্রটি সিফিয়াস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। এই তারামণ্ডলীটি খুব বেশি উজ্জ্বল নয়। তারামণ্ডলীটির অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল একমাত্র নক্ষত্র হল আলডেরামিন। এর অপর নাম হল আলফা সিফিয়াই। নক্ষত্রটি অনেক দ্রুত বেগে আবর্তন করে।

জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদরা অপটিক্যাল ইনটারফেরোমিটার ব্যবহার করে নক্ষত্রটির নতি, মেরু ও বিষুব ব্যাসার্ধ এবং তাপমাত্রা বের করেন। 

সিফিয়াস তারামণ্ডলির দেখতে ঘরের মতো, আমরা ছোটবেলায় দোচালা ঘরের যেরকম চিত্র আঁকতাম ঠিক তেমন।  আকাশের এক কোণে এর অনেকগুলো ম্লান তারকার মধ্যে আলডেরামিন একমাত্র ব্যতিক্রম। ফলে এই তারাটিকে চিনে নেওয়া খুব সহজ কাজ। এর তীব্র আবর্তন বেগের কারণেও এটি খুব পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ 
নক্ষত্র কাকে বলে?
তারামণ্ডলীর পরিচয়
আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

আলডেরামিনকে খুঁজে পাবার উপায়ঃ
তারাটির অবস্থান উত্তর আকাশে। একে খুঁজে পেতে কাজে আসবে ইংরেজি W বা M অক্ষরের মতো (অবস্থানের উপর ভিত্তি করে দুই রকমের যে কোনো রকম হতে পারে) দেখতে আরেকটি তারামণ্ডলী ক্যাসিওপিয়া।

ঋতুভেদে ক্যাসিওপিয়াকে কখনো উত্তর-পূর্ব দিকে, কখনো বা উত্তর- পশ্চিম দিকে, আবার কখনো মাথার উপর থেকে একটু উত্তরের অবস্থানে সোজা উত্তর দিকে থাকবে।  নভেম্বর মাসের রাত নয়টার দিকে ক্যাসিওপিয়াকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। এ সময় এটি থাকে উত্তর দিগন্ত থেকে সোজা উপরের দিকে। তারামণ্ডলীটির প্রধান অংশ (ডাব্লিউ বা এম আকৃতি) (+৬৫) থেকে (+৫৫) ডিগ্রি  বিষুব লম্ব জুড়ে অবস্থিত।  সব মিলিয়ে বছরের শেষ অর্ধেকের দিনগুলো একে খুঁজে পেতে বেশি সহায়ক। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসেও সন্ধ্যা নামার পরেই এটি উত্তর- পূর্ব দিগন্ত দিয়ে উঁকি দিতে শুরু করে। 

ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ আকৃতির ক্যাসিওপিয়া ও সিফিয়াস মণ্ডলী ।
সহজে বোঝার জন্যে ছবিটিকে রোটেট করা হয়েছে। 

ক্যাসিওপিয়াকে আমরা সহজেই পেয়ে যাব। এবার কাজ হল একে কাজে লাগিয়ে সিফিয়াস ও আলডেরামিনকে বের করা। দেখুন, ক্যাসিওপিয়ার সবচেয়ে উজ্জ্বল উপরের তিনটি তারাকে দেখতে ইংরেজি ভি (V) অক্ষরের মত মনে হয়। এদের মধ্যে উপরের দুটি কাফ ও শেডার। শেডারকে কাফের সাথে যোগ করে সামনে চলে গেলেই পাওয়া যাবে আলডেরামিন। ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, পুরো সিফিয়াসকেও খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।


আলডেরামিনের বৈশিষ্ট্যঃ 
এটি একটি সাদা নক্ষত্র। একে এ শ্রেণীর (Class A) তারা মনে করা হয়। বর্তমানে এটি প্রধান ধারা থেকে সাবজায়ান্ট ধাপে রূপ নিচ্ছে। প্রধান ধারার (main sequence) নক্ষত্ররা হাইড্রোজেনের ফিউসান ঘটিয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন করতে থাকে। আমাদের সূর্য একটি প্রধান ধারার নক্ষত্র। মনে করা হচ্ছে, আলডেরামিনের হাইড্রোজেন জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিণত হবে।

নক্ষত্র বিশেষজ্ঞ জিম কেলারের মতে আলডেরামিনের দীপ্তি সূর্যের ১৮ গুণ। অন্য দিকে এটি আবার খুব জোরে ঘুরছে। এটি ১২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে একবার নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে ফেলে, যেখানে কাজটি করতে আমাদের সূর্যের সময় লাগে প্রায় এক মাস।

আরো পড়ুনঃ 
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

জিম কেলার বলেন,
নক্ষত্রটির কাজের সাথে এই ঘূর্ণনের সম্পর্ক থাকতে পারে। আমাদের সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র খুব সক্রিয়। তবে 'এ শ্রেণী'র নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু আলডেরামিন সূর্যের প্রায় সমপরিমাণ এক্সরে বিকিরণ নির্গত করছে। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকেও বোঝা যাচ্ছে এতে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র উপস্থিত। এর কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। 

তবে সিফিয়াসের আরো দুটি দানব নক্ষত্রের তুলনায় আলডেরামিন কিছুই নয়। এরা হল মিউ সিফিয়াই এবং ভিভি সিফিয়াই। এরা দুজনেই সুপারজায়ান্ট- মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বৃহত্তম এবং উজ্জ্বলতম গ্যালাক্সিদের দলের সদস্য। হাজার হাজার সূর্যকে মিলিত করলেও এদের উজ্জ্বলতার কাছে তা ম্লান হয়ে যাবে। অবশ্যই এখানে আমরা নক্ষত্রের প্রকৃত উজ্জ্বলতা দা দীপ্তির কথা বলছি। দূরে অবস্থিত বলেই এরা পৃথিবীর আকাশে সূর্যের কাছে হেরে যাচ্ছে।


এদের কোনো একটিকে যদি সূর্যের জায়গায় বসানো হয়, তবে এরা বৃহস্পতির কক্ষপথ পর্যন্ত জায়গা দখল করে ফেলবে। এরা এত দীপ্তিমান হয়েও রাতের আকাশে তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হবার কারণ হচ্ছে এরা পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে তুলনামূলকভাবে আলডেরামিন খুব কাছে অবস্থিত- মাত্র ৪৯ আলোকবর্ষ।

আরো পড়ুনঃ
☛ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 


ইতিহাসে আলডেরামিনঃ
অতীতে এক সময় এটি ধ্রুব তারা ছিল। অর্থ্যাৎ, তখন এর অবস্থান ছিল আমাদের বর্তমান ধ্রুবতারা পোলারিসের জায়গায়, প্রায় উত্তর দিক বরাবর। সর্বশেষ এ অবস্থা ছিল ১৮, ০০০ খৃষ্টপূর্ব সালে। আরো ৫,৫০০ বছর পরে এটি আবার ধ্রুবতারার স্থান দখল করবে। ৭৫০০ সালের দিকে এটি প্রকৃত উত্তর দিক থেকে তিন ডিগ্রি দূরে থাকবে। এর অর্থ, আমাদের পোলারিস এর চেয়ে ভালো ধ্রুবতারা।  পোলারিস প্রায় বরাবর উত্তর দিকেই থাকে। এর বিষুব লম্ব (+৮৯) ডিগ্রির বেশি দেখেই সেটা অনুমান করা যায়।  ২১০০ সালে পোলারিস প্রকৃত উত্তর থেকে মাত্র ০.৪৫ ডিগ্রি দূরে থাকবে।

নামকরণঃ
আলডেরামিন শব্দটি এসেছে আরবি আযযিরা আল ইয়ামিন (الذ راع اليمين) থেকে। এর অর্থ হল 'ডান বাহু'। সিফিয়াস মণ্ডলীর নাম রূপকথার একজন রাজার নামে দেওয়া। ডান বাহু বলতে সেই রাজার ডান বাহু বোঝানো হচ্ছে।


সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলঃ 
আপাত উজ্জ্বলতাঃ + ২.৫
দূরত্বঃ ৪৯ আলোকবর্ষ
বিষুব লম্বঃ +৬২.৫ ডিগ্রি
নামঃ আলফা সিফিয়াই


সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/brightest-stars/alderamin-the-kings-brightest-star
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Alpha_Cephei
Category: articles

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

আজকের তারিখ ২৪ আগস্ট। ১০ বছর আগের এই দিনে গ্রহের খাতা থেকে বাদ পড়ে যায় তৎকালীন নবম গ্রহ প্লুটো। তোলপাড় ওঠে পুরো পৃথিবীতে। অনেকেই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি, এমনকি অনেক জ্যোতির্বিদও।

গ্রহের খাতা থেকে বাদ দেবার সময় বোঝা যায়, মানুষের কাছে প্লুটো বেশ জনপ্রিয় বস্তু। প্রথমবারের মতো নিউ হরাইজনস যান যখন তাই প্লুটো অভিযানে গিয়ে এতে হার্টের আকৃতি আবিষ্কার করে, ব্যাপারটি তখন পরিহাস হয়ে দাঁড়ায়। ছবিটি গ্রহের ৪৫০,০০ ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা।   

২০০৬ সালের এই দিনে নেপচুন হয়ে গেল সৌরজগতের সর্বেশেষ গ্রহ। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির (IAU) দেওয়া গ্রহের নতুন সংজ্ঞা অনুসারে এল এ সিদ্ধান্ত। ২০০৬ সালের আগে কোনো বস্তুকে ভর বা আকারের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করবার কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়নি। কিন্তু সৌরজগতের বাইরের অঞ্চলের দিকে হাউমেয়া ও মাকিমাকির মতো বস্তুরা আবিষ্কৃত হতে শুরু করলে এর প্রয়োজন অনুভব হওয়া শুরু হয়। ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত এরিসের ভর আবার প্লুটোর চেয়ে বেশি। অতএব, প্লুটো গ্রহ হলে এরিস কেন হবে না?

এই প্রশ্নটিই আইএইউর মাথায় এল। এই প্রশ্নের সমধান করতে গিয়েই প্ল্যানেট ডেফিনিশান কমিটি বানানো হয়, যার ফলাফল- প্লুটোর অবনতি।

এই কমিটির সিদ্ধান্তেই বাদ পড়ে প্লুটো। সিদ্ধান্তটা অবশ্যই পরিস্থিতির দাবিই ছিল। 

কমিটির সামনে কয়েকটি রাস্তা ছিল। একটি রাস্তা ছিল ভর বা সাইজের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক্ষেত্রে প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে মেনে নিলে এরিস এবং সেরেসও (গ্রহাণু বেষ্টনির সবচেয়ে বড়ো বস্তু) তাহলে গ্রহ হয়। কিছু সময়ের জন্যে মনে হয়েছিল যে এই সিদ্ধান্তই হয়ত হবে।

আরেকটি উপায় ছিল যে নির্দিষ্ট কোন যুক্তি দিয়ে গ্রহের সংজ্ঞা দেওয়া হবে না। পৃথিবী একটি গ্রহ, প্লুটোও আরেকটি গ্রহ। এরিস গ্রহ নয়, কারণ আমাদের ইচ্ছা হয়নি তাই।

২০০৬ এর ২৪ আগস্ট তারিখে আইএইউ ফলাফল জানিয়ে দিল। ঠিক হল, গ্রহের জন্যে নতুন একটি সংজ্ঞা থাকবে। তিনটি শর্ত নিয়ে এই সংজ্ঞা তৈরি:
১। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে হবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথ থেকে অন্য বস্তুদের সরিয়ে দেবে।

আরো দেখুনঃ
গ্রহের পরিচয়
প্রদক্ষিণ বনাম আবর্তন

তিন নম্বর শর্তটিই প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে উৎখাত করেছে। কোনো বস্তুকে গ্রহ হতে হলে একে এর নিজস্ব কক্ষপথের আধিপত্য ধরে রাখতে হবে। অন্য বস্তুদেরকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে, নয়ত নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে হবে।

প্লুটো এর কক্ষপথ অঞ্চলের মোট ভরের মাত্র ০.০৭ ভাগ নিজের করে রাখতে পেরেছে। অথচ পৃথিবীর কাছে রয়েছে নিজের কক্ষপথ অঞ্চলের অন্যান্য বস্তুর ভরের ১৭ লক্ষ গুণ ভর।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাইয়ে প্লুটোর নিকটতম অবস্থানে পৌঁছার মাত্র ১৫ মিনিট পরে ছবিটি তোলে নিউ হরাইজনস। ১৮, ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে ১২৫০ কিমি. এলাকা। 

ঐ একই দিনে প্লুটোকে বামন গ্রহ পদবীতে ভূষিত করা হল। বামন গ্রহের জন্যেও একটি সংজ্ঞা ঠিক করা হল:
১। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথের একচ্ছত্র মালিক হবে না
৪। কোনো উপগ্রহ হবে না

আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমতির মতে এখন পর্যন্ত বামন গ্রহ আছে পাঁচটি। এরা হল, প্লুটো, সেরেস, এরিস, হোমিয়া ও মাকিমাকি। তবে ষষ্ঠ বামন গ্রহ হিসেবে 2007 OR10 ছাড়াও আরো অনেক অনেক দাবিদার রয়েছে।

বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, বহিঃস্থ সৌরজগতের কাইপার বেল্ট অঞ্চলে শত শত অনাবিষ্কৃত বামন গ্রহ রয়েছে।

প্লুটোকে খোঁজা শুরু হয়েছিল কেন সেও এক মজার কাহিনী। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখছিলেন, কিছু একটা নেপচুনের কক্ষপথে বিকৃতি ঘটাচ্ছে। ১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত না হয়ে যদি আরো এক দশক পরে এটি আবিষ্কৃত হত তাহলে কাইপার বেল্ট থাকার কারণে প্লুটো আর গ্রহ খ্যাতিই পেত না।

প্লুটোপ্রেমীরা হতাশ হলেও তাদের জন্যেও একটি সান্ত্বনা পুরস্কার রয়েছে। প্লুটো এ জন্যে বিখ্যাত যে একে কেন্দ্র করেই সৌরজগতের বস্তুরা একটি সংজ্ঞা পেয়েছে।

আরো পড়ুনঃ
প্লুটোর গ্রহত্ব হারানোর কাহিনী
Category: articles

শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬

আজকে আমরা দেখবো ব্ল্যাকহোল ভ্রমণ করতে গেলে আমাদের ভাগ্যে কী হবে? আমরা চাঁদে যেতে পারি, মঙ্গলে যেতে পারি। হয়ত কোন দিন সৌরজগৎ পেরিয়ে কোন ভিনগ্রহেও পাড়ি জমাতে পারি। আমরা না গেলেও নাসার মহাকাশযান ভয়েজার ১ এবং ২ তো ইতোমধ্যেই সৌরজগৎ পেরিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে বিচরণ করছে। এটা হতে পারে আমাদের দূর মহাকাশে যাবার একটি নিশানা।

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, সূর্যের চেয়ে অনেক বিশাল- সাধারণত সুপারজায়ান্ট জাতীয় নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের মাধ্যমে বহিরাবরণ ছুঁড়ে ফেলার পর বাকী অংশ গুটিয়ে গিয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। আর ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে তৈরি হয় সিঙ্গুলারিটি। এটি হচ্ছে ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে অবস্থিত অতিশয় ক্ষুদ্র একটি বিন্দু।  এর দিকে আমরা যতই এগোবো, ততই মহাকর্ষের শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে অসীমের দিকে যেতে থাকবে এবং স্থান-কালের (Space-time) বক্রতাও ক্রমশ অসীমের দিকে ছুটবে। আর, ঠিক সিঙ্গুলারিটিতে স্থান-কাল আমাদের পরিচিত উপায়ে আর কাজ করবে না। তাহলে আমরা এতে গেলে কী ঘটবে?

একটি সরল ব্ল্যাক হোল নিয়ে চিন্তা করা যাক। ধরলাম, বিপুল পরিমাণ ভর থাকলেও এর কোন বৈদ্যুতিক আধান (Electric charge) বা ঘূর্ণন প্রবণতা নেই।

ব্ল্যাক হোলের বিভিন্ন অঞ্চল

ছবিতে ব্ল্যাক হোলের বিভিন্ন স্তর দেখা যাচ্ছে। সবুজ রঙ চিহ্নিত অঞ্চলটি হচ্ছে নিরাপদ অঞ্চল। এখানে আমাদের মহাকাশযান নিরাপদে এবং ভারসাম্য বজায় রেখে কক্ষপথে অবস্থান করতে পারবো। চাইলে আমরা ফিরেও আসতে পারবো।  হলুদ অঞ্চলটি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে একটু গড়বড় হয়ে গেলেই আমরা ব্ল্যাক হোলের শিকার হয়ে যেতে পারি। তাই, এখানে মহাকাশযানে পাইলটকে অতিমাত্রায় দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। সেক্ষেত্রে, এখানেও মহাকাশযানের জন্যে একটি কক্ষপথের ব্যাবস্থা করা সম্ভব যদিও সেটা হবে অস্থিতিশীল (Unstable)।

কমলা রঙের অঞ্চল বিপদ সঙ্কেত প্রদান করছে। এখানে স্থিতিশীল বা অস্থিতিশীল- কোন রকম কক্ষপথই পাওয়া যাবে না। এখানে অবস্থান ধরে রাখতে হলে আমাদেরকে অবিরত জ্বালানী খরচ করে ব্ল্যাক হোলের বাইরের দিকে যানের ধাক্কা বজায় রাখতে হবে। এ অঞ্চলে আমরা যতই ভেতরের দিকে যাবো, ততোই রকেটের পরিশ্রম বাড়াতে হবে। লাল অঞ্চল ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত (Event horizon)। এখান থেকে ফিরে আসার কোন উপায় নেই।

ব্ল্যাক হোলের দিকে যাত্রা

উপরের ছবিতে একটি ঘড়ি দেখা যাচ্ছে। আমাদের সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছার সময় মাপছে ঘড়িখানা- আমাদের প্রচলিত সময়ের হিসাব অনুযায়ী। কিন্তু আমরা যতই ভেতরে যাবো, সময় ধীরে চলার কারণে ঘড়ির কাঁটার গতি কমে যাবে।

এখন ধরা যাক এবার আমরা সবুজ অঞ্চল থেকে ভেতরে পা বাড়ালাম। সাথে সাথে আমাদের চোখে পড়বে ব্ল্যাক হোল বাইরের নক্ষত্রের আলোকে এর সীমানায় এনে বৃত্তাকার কক্ষপথে স্থান দিয়েছে। এটা আসলে গ্র্যাভেটেশনাল লেন্সিং এর প্রতিক্রিয়া।  ব্ল্যাক হোল স্থান-কালকে বাঁকিয়ে ফেলায় আমরা একই সাথে এর সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিক দেখতে পাবো। যেমন, ছবিতে ব্ল্যাক হোলের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু একই সাথে দেখা যাচ্ছে। লাল ফেব্রিক চিহ্নিত এই অঞ্চলই ব্ল্যাক হোলের সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ।
সোয়ার্জাসাইল্ড ব্যাসার্ধই হল ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্তের সীমানা, যার ভেতর থেকে কোনো কিছু বের হতে পারে না, কোন কিছু দেখা যায় না।

আরো পড়ুন
গ্র্যাভেটেশনাল লেন্সিং কীভাবে ঘটে?
ব্ল্যাক হোল কত বড়ো হয়? (এখানে সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে)

৩ সোয়ার্জসাইল্ড দূরত্বে আমাদের কক্ষপথ সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখানে যতক্ষণ আছি- আমরা নিরাপদ। চাইলে আবার ফিরে আসতে পারবো। যখন এটা পাড়ি দিয়ে ২ সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধে পৌঁছবো, এবার অবস্থান হয়ে যাবে ভারসাম্যহীন। এখানে যানের জ্বালানি খরচে একটু এদিক-ওদিক হয়ে গেলেই আমার হয় সোজা ব্ল্যাক হোলের দিকে চলে যাবো অথবা উল্টোদিকে- বাইরের দুনিয়ায় ধেয়ে আসবো।


এই অঞ্চলেই ফোটন স্ফিয়ার তথা আলোকমণ্ডলের (Photon sphere) অবস্থান। এখানে স্বয়ং আলো অবিরত কক্ষপথে ঘুরপাক খেতে থাকে। এটাই ছিল আমাদের প্রথম পর্বের প্রশ্ন। আশা করি, উত্তর পেয়ে গেছেন। এটাই ব্ল্যাক হোলের নিকটতম দূরত্ব যেখানে কোনো কিছু কক্ষপথ পেতে পারে। আমরা যদি এখানে (ফোটন স্ফিয়ারে) আমাদের যানকে ধরে রাখতে চাই তাহলে অসীম জ্বালানি খরচ করতে হবে।
এবার আমরা প্রবেশ করবো ১ সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ পাড়ি দিয়ে দিগন্তের দিকে।



এখানেই ঘটবে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। লাল ঘটনা দিগন্ত দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে- দিগন্ত এবং প্রতি দিগন্ত (Horizon, anti-horizon)। আমরা দিগন্ত ভেদ করলে আসল দিগন্ত আমাদের চোখে দৃশ্যমান হবে। অন্য দিকে, প্রতি-দিগন্ত আমাদের সামনেই থেকে যাবে। একে আমরা কখোনই অতিক্রম করে যেতে পারবো না। আচ্ছা, ব্ল্যাক হোলের ভেতরে চলে গেলে কি আমরা অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাবো? এটা ভুল ধারণা। আমরা যতই ভেতরে যাবো, বাইরের বিশ্ব ততোই উজ্জ্বল মনে হবে।

ব্ল্যাক হোলের ভেতরে অন্ধকার নয়, বরং অনেক অনেক আলোকিত দেখাবে

এরপর আমরা আরো ভেতরে গেলাম। কী হবে- একটু পর বলছি। কিন্তু আমরা কখোনই সিঙ্গুলারিটিত দেখতে পারবো না। কেননা, কোন আলোই এর থেকে বাইরের দিকে আসতে পারে না। সব চলে যায় এর পেটের ভেতর।

আমরা কখোনই আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য তথা সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছবো না। কেন? আচ্ছা, বিস্তারিত বলছি।
মনে করুন আপনি নভোযানে চড়ে একে আমাদের মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলটির দিকে চালিয়ে দিলেন। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলেন ব্ল্যাক হোলের তীরে । এবার যান বন্ধ করে দিলেন। কী ঘটবে?
প্রথমে এর মহাকর্ষ একেবারেই অনুভব করবেন না। যেহেতু আপনি মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর মত করে বিনা বাধায় পড়ছেন, আপনার দেহের প্রত্যেকটি অংশ এবং তোমার নভোযান- সব কিছুই একইভাবে ব্ল্যাক হোলের দিকে ধাবিত হবে। অনুভব হবে ওজোনহীনতা। পৃথিবীর চারদিকে কৃত্রিম উপগ্রহে বসবাসরত নভোচারীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। যদিও পৃথিবীর অভিকর্ষ নভোচারী এবং স্পেইস শাটল- দুটোকেই টানছে, তবু এরা কোন অভিকর্ষ বল অনুভব করে না, কারণ সব কিছু ঠিক একইভাবে টান অনুভব করছে।

ব্ল্যাক হোলের যতই কাছাকাছি হবেন, আস্তে আস্তে এর মহাকর্ষজনিত শক্তিমত্তা অনুভূত হতে থাকবে। মনে করুন, আপনার পা আপনার মাথার চেয়ে ব্ল্যাকহোলের নিকটবর্তী। ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্র থেকে কোন বস্তু যত বেশি কাছে থাকবে, তার উপর এর আকর্ষণও তত প্রকট হবে। এবার ভাবুন, আপনার পা কিন্তু মাথার চেয়ে দানবের মুখের বেশি কাছে। ফলে, ব্ল্যাক হোল আপনাকে টেনে লম্বা বানিয়ে দেবে।

ব্ল্যাক হোলের কাছে গেলে মাথা ও পায়ের প্রতি মহাকর্ষীয় আকর্ষের তারতম্যের কারণে এক অংশ লমাব হয়ে এমন সেমাইয়ের মতো হয়ে যাবে। 

যতই কাছে যাবেন, পা ও মাথার প্রতি ব্ল্যাক হোলের অসম আকর্ষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।
কেমন হবে, যদি আপনার পায়ের দৈর্ঘ্য হয়ে যায় ১০ ফুট বা ১০০ ফুট। আরো মারাত্মক কথা হলো, পাতো শুধু লম্বাই হবে না, এক সময় দেহ থেকে আলাদাই হয়ে যাবে। ভয় লাগছে?

তবে, উপরোক্ত বিপদ কাটানোর একটি উপায় আছে বটে! বলছি পরে। আপনার ব্ল্যাক হোল অভিযানের স্বপ্নের কিন্তু সমাপ্তি ঘটে যায়নি। হতাশ হবেন না!

আপনি যদি অভিযানের জন্যে একটি বড় ব্ল্যাক হোল বেছে নেন, তাহলে এর কেন্দ্র থেকে ৬ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বের না যাওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যণীয় প্রভাব অনুভূত হবে না। এটা হলো এর ঘটনা দিগন্তের সীমানা। কিন্তু আপনি যদি একটি ছোট, মনে করুন সূর্যের কাছাকাছি ভরের, একটি ব্ল্যাক হোল বাছাই করেন, তাহলে আপনি এর কেন্দ্রের ৬ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছতেই কাছে অসহনীয় অবস্থা অনুভূত হবে। এই ক্ষেত্রে, ঘটনা দিগন্তে পৌঁছার আগেই আপনি টুকরো টুকরো হয়ে যাবেন। এই জন্যেই ব্ল্যাক হোল অভিযানে যেতে চাইলে বড়োসড়ো কোন ব্ল্যাক হোল বাছাই করাই নিরাপদ। ভেতরে গিয়ে অন্তত পৌঁছতে না পারলেতো অভিযান শুরুই হলো না!

ব্ল্যাক হোলে পতনের সময় আপনি কী দেখবেন?

মজার ব্যাপার হলো, আপনি যে বিশেষ মজার কিছু দেখে ফেলবেন- এমন কিন্তু না। আপনি যদি দূরের কোন দৃশ্য দেখতে যান, তবেই লাগবে বেখাপ্পা। বস্তুর চেহারা বিকৃত দেখাবে, কারণ ব্ল্যাক হোল এর অভিকর্ষের প্রভাবে আলোকে বাঁকিয়ে এনে আপনার চোখে ফেলবে। কাঁচের পানির গ্লাসের ভেতর দিয়ে কখনো বিপরীত দিকে তাকিয়েছেন নিশ্চয়ই? কেমন দেখায়? এবড়োথেবড়ো বিম্ব, তাই না? একই প্রভাব পরিলক্ষিত হবে এখানেও। কিন্তু ঐটুকুই। ঘটনা দিগন্ত অতিক্রম করার সময় আর বিশেষ কিছু ঘটবে না।

ঘটনা দিগন্ত ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করার পরেও আপনি বাইরের দৃশ্য দেখতে পাবেন। কারণ, তখনো বাইরের আলো আপনার কাছে পৌঁছতে পারবে। তবে, এখন বাইরের কেউ আপনাকে দেখতে পাবে না। কারণ, আপনার দেহ থেকে আসা আলো ঘটনা দিগন্তকে ভেদ করতে পারছে না।

এই সব কিছু ঘটতে কতক্ষণ লাগবে? ব্যাপারটা নির্ভর করে আপনার যাত্রা শুরুর অবস্থানের ওপর। মনে করুন, আপনি এমন জায়গা থেকে যাত্রা শুরু করলেন, যা ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রবিন্দু থেকে এর সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের ১০ গুণ দূরে অবস্থিত। তাহলে, প্রায় ১০ লাখ সৌর ভরের সমান ভরযুক্ত ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত অতিক্রম করতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৮ মিনিট। এই সীমানা পার হবার পরে, কেন্দ্রে পৌঁছতে আপনার আর মাত্র ৭ সেকেন্ড সময় লাগবে। ব্ল্যাক হোলের আকার বড়ো- ছোট হবার সাথে সাথে এই সময়ও কম বেশি হবে।

ঘটনা দিগন্ত পার হবার পরবর্তী ৭ সেকেন্ডে আপনার ভয় লাগা শুরু হতে পারে। আপনি হয়তো ভয় পেয়ে আপনার নভোযানকে পেছনে ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা চালাবে, যাতে কেন্দ্রে যেতে না হয়। কিন্তু হায়! বৃথা চেষ্টা। কেন্দ্রে পৌঁছা ছাড়া যে উপায় নেই। কী আর করা, এই শেষ সময়টুকু উপভোগ করে নেওয়াই ভালো।
এতো গেল আপনার কথা। মনে করুন, আপনার এক প্রিয় বন্ধু (নাম দিলাম জায়েদ) আপানকে বিদায় জানাবার জন্যে ঘটনা দিগন্তের ওপারে অপেক্ষা করছিল। ও কী দেখবে? আসলে, ও আপনার চেয়ে সম্পুর্ণ ভিন্ন দৃশ্য দেখবে। আপনি দিগন্তের যত কাছাকাছি হবেন, ততই ওর কাছে মনে হবে, আপনার গতিবেগ কমে যাচ্ছে। ও যদি কেয়ামত পর্যন্তও অপেক্ষা করতে থাকে, তবু আপনাকে কোনো দিনই ঘটনা দিগন্ত পাড়ি দিতে দেখবে না ।

সত্যি বলতে, প্রথমে ব্ল্যাক হোল যে পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছিল তার সম্পর্কে কম বেশি- একই কথা বলা চলে। একটি সংকোচনশীল (Collapsing) নক্ষত্র থেকে সৃষ্ট ব্ল্যাক হোলের কথা ধরা যাক। ব্ল্যাক হোল গঠিত হবার জন্যে যখন এর উপাদানগুলো সঙ্কুচিত হতে থাকবে, জায়েদ একে ক্রমেই ছোট হয়ে যেতে দেখবে। ওর চোখে এর ব্যাসার্ধ আস্তে আস্তে স্কোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের নিকটবর্তী হতে থাকবে, কিন্তু কখনো এর সমান হবে না। এই কারণেই আগে ব্ল্যাক হোলকে হিমায়িত নক্ষত্র (Frozen star) বলা হতো। কারণ, এরা স্কোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের কিছুটা বড়ো ব্যাসার্ধ্যে এসে জমে যায়।

ও এমন দেখবে কেন? আসলে এটা একটি আলোকীয় দৃষ্টিভ্রম (Optical illusion)। ব্ল্যাক হোল গঠিত হবার জন্যে যেমন অসীম সময়ের দরকার হয় না, তেমনি ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত ভেদ করতেও এত সময় লাগে না। আপনি দিগন্তের যত কাছাকাছি হবেন, আপনার কাছ থেকে আসা আলো জায়েদের কাছে পৌঁছতে ক্রমেই বেশি সময় লাগতে থাকবে। অন্য দিকে, আপনি দিগন্ত পাড়ি দিয়ে ভেতরে যাবার সময়ে নিঃসৃত আলোটুকু কখনোই ওর কাছে যাবে না, এটা চিরকাল ভেসে থাকবে দিগন্তেই। এর ফলে, আপনি চির দিনের জন্যে ব্ল্যাক হোলে হারিয়ে গেছেন, আর কোন দিন ফিরেও আসবেন না- এই খবরটুকুও জায়েদ জানতে পারবে না। ওর কাছে মনে হবে, কোন কারণে আপনার ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ করতে দেরি হচ্ছে।

পুরো প্রক্রিয়াটি আরেকভাবে চিন্তা করা যায়। দূরবর্তী অঞ্চলের চেয়ে ঘটনা দিগন্তের কাছে সময় অনেকটা ধীরে প্রবাহিত হয়। ধরুন, আপনি নভোযানে চড়ে ঘটনা দিগন্তের বাইরের একটি জায়গায় ভেসে থাকলেন (পতন থেকে রক্ষা পেতে বিপুল জ্বালানি পুড়িয়ে)। এবার আপনি যদি জায়েদের সাথে গিয়ে দেখা করুন, দেখা যাবে ওর বয়স আপনার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। কারণ, ব্ল্যাক হোলের কারণে ওর তুলনায় আপনার সময়ের গতি ছিল ধীর।

আচ্ছা, দুইটির ব্যাখ্যার কোনটি আসলে সঠিক? ব্যাপারটা নির্ভর করে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কিত আপনার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার ওপর। সোয়ার্জসাইল্ড স্থানাঙ্ক নামে পরিচিত প্রচলিত স্থানাঙ্ক বিবেচনা করলে, আপনি দিগন্তে পাড়ি দিবেন স্থানাঙ্কের মানে সময় (t) যখন অসীম হবে। ফলে, স্থানাঙ্কের এই হিসেব অনুসারে, দিগন্ত পার হতে আপনার অসীম সময়ই লাগবে। এর কারণ হচ্ছে, সোয়ার্জসাইল্ড স্থানাঙ্ক ঘটনা দিগন্তের নিকটবর্তী অঞ্চলের বিকৃত দৃশ্য প্রদান করে। আর ঠিক দিগন্তের ওপরে স্থানাঙ্ক নিরতিশয় (Infinitely) বিকৃত হবে।

আপনি যদি স্থানাঙ্ককে এরূপ বিকৃতির হাত থেকে বাঁচাতে চান, তবে বিকল্প উপায়ে হিসাব করলে ,আপনার দিগন্ত ভেদ করতে প্রয়োজনীয় সময়ের (t) সসীম একটি মান পাবেন। কিন্তু, জায়েদ যে সময় আপনাকে তা করতে দেখবে সেই সময়টি আবার অসীম। ওর কাছে আসলে আপনার খবর পৌঁছতে অসীম সময় লাগবে। আপনি যে কোনো স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারেন বটে, ফলাফল একই পাবেন। এ জন্যে আসলে দুটো ব্যাখ্যাই সঠিক এবং একই কথার দ্বিরূপ মাত্র।

বাস্তবে আসলে খুব বেশি সময় গড়াবার আগেই আপনি জায়েদের নজর থেকে উধাও হয়ে যাবেন। ব্ল্যাক হোল থেকে দূরে ধাবিত আলো লাল সরণ (Red shift) প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। আপনি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কোন দৃশ্যমান আলো নির্গত করলে জায়েদের কাছে যেতে যেতে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘতর হয়ে পড়বে। আপনি দিগন্তের কাছাকছি হতে থাকলে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়েই চলবে। একটা সময় তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান পাল্লাকে ছাড়িয়ে যাবে। এটা হয়ে যাবে অবলোহিত বিকিরণ এবং পরে বেতার বেতার তরঙ্গে পরিণত হবে। এক সময় তরঙ্গদৈর্ঘ্যে এত দীর্ঘ হবে যে জায়েদের চোখে এটি আর ধরা পড়বে না।

অন্য দিকে, আলো নির্গত হয় ফোটন নামক স্বতন্ত্র গুচ্ছ আকারে। ধরুন, আপনি দিগন্ত ত্যাগ করার সময় শেষ আলোকবিন্দু নির্গত করলেন। এই আলো জায়েদের কাছে কোন সসীম সময়েই পৌঁছবে। উপরোক্ত লক্ষ সূর্যের সমান ভরের ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে এতে সময় লাগবে ঘণ্টাখানেকেরও কম। এর পর? ও আর কিছুই দেখবে না। আপনি ভেতরে ডুব দিয়ে আর যে আলোই নিক্ষেপ করবেন, তা আপনার প্রিয় বন্ধুর সান্নিধ্যে আর কখনো পৌঁছাবে না। আপনি চিরতরে হারিয়ে গেলেন ব্ল্যাক হোলের গভীরে। এর পর তোমার কী হবে? এটা পরের কোনো পর্বে দেখবো। ব্ল্যাক হোলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে পড়ে নিয়েন। আর আসলে সেটাতো আপনিই আমাদের চেয়ে ভালো জানবেন, তাই না?

তবে, ব্ল্যাক হোলে গেলেই সব শেষ- ব্যাপারটি পুরোপুরি এমনও নয় কিন্তু। আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বেরই একটি সমাধান অনুসারে ব্ল্যাক হোলের অভ্যন্তরে তৈরি হয় ওয়ার্মহোল। ওয়ার্মহোল হচ্ছে স্থান-কালের এক পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্টে পৌঁছে যাবার শর্টকাট পথ। এটা হতে পারে কোন স্থান বা সময় থেকে অন্য কোন সময় –অতীত বা বর্তমানে বা অন্য কোন সময়েরই মহাবিশ্বের অন্য কোন স্থান (যেমন অন্য কোন গ্যালাক্সি) এমনকি হতে পারে অন্য কোন মহাবিশ্বেও! আগামী কোনো পর্বে আমরা ওয়ার্মহোল ও টাইম ট্র্যাভেল নিয়ে বিস্তারিত জানবো।

গত পর্বে প্রশ্ন ছিল, স্টেলার ব্ল্যাক হোলরা কেন জীবনের অন্তিম সময়েই ব্ল্যাক হোল হয়? এ সময়তো তাদের ভর অনেক কমে যায়। জীবনের শুরুতেই কেন হয় না, যখন ওদের ভর থাকে তুলনামূলক বেশি?

উত্তরঃ জীবনের শুরুতে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটি নক্ষত্রে দুইটি বল কাজ করে। একটি এর নিজস্ব অভিকর্ষজনিত অন্তর্মুখী চাপ এবং অপরটি ফিউশন বিক্রিয়াজনিত বহির্মুখী চাপ। এই দুটি বলে একে অপরকে নাকচ করে দিয়ে নক্ষত্রকে স্থিতিশীল রাখে। কিন্তু জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি যখন মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন অভিকর্ষকে ঠেকানোর মত আর কোন কার্যকরী বল থাকে না। এই কথা অবশ্য যথেষ্ট ভরযুক্ত নক্ষত্রের জন্যে প্রযোজ্য। কম ভরের ক্ষেত্রে আবার সংকোচনশীল বস্তুর নিজদের সাথে সংঘর্ষজনিত ডিজেনারেসি প্রেসার অভিকর্ষকে কিছুটা প্রতিহত করে।

[লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরদের উপযোগী করে ব্যাপন ম্যগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।]

অন্যান্য পর্ব



Category: articles

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬

রাতের আকাশ পর্বের আগের অংশে আমরা আলোচনা করেছিলাম পৃথিবীর আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের নিয়ে। এবারে উঁকি দিচ্ছি পৃথিবীর বাইরে। পৃথিবীর আকাশ কেমন হবে তার উপর এর বায়ুমণ্ডলের প্রভাব আছে। অন্য গ্রহ-উপগ্রহদের ক্ষেত্রে তাই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য চোখে পড়ে।

- আচ্ছা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ কেমন হত?
- পৃথিবীতে আসা সূর্যের আলো আসলে ৭টি রঙে গঠিত। এই আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে বায়ুকণার সাথে ধাক্কা লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে নীল রঙ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে  আমাদের পৃথিবীর আকাশ নীল দেখায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ হত কালো। একদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে থাকত। এর আলো পুরো আকাশ দখলে রাখত না। দিনেও তারা দেখা যেত।
- তাহলে কি চাঁদের আকাশ দেখতে কালো? ওখানেতো বায়ুমন্ডল নেই। অন্য গ্রহ বা উপগ্রহের আকাশ দেখতে কেমন? চাঁদ বা অন্য গ্রহের রাতের আকাশ কি পৃথিবীর আকাশের মত এত সুন্দর? অন্যান্য গ্রহকে যেমন পৃথিবী থেকে দেখা যায়, তেমনি পৃথিবীকে কি সেই গ্রহগুলো থেকে দেখা যায়?
এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে আজকের আয়োজন।

আগে সংক্ষেপে পৃথিবীর আকাশ সম্পর্কে একটু বলে নিই। পৃথিবীর রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু  চাঁদ। তবে এরপরের অবস্থানে কিন্তু লুব্ধক নয়। লুব্ধক সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিন্তু গ্রহদের চেয়ে পিছিয়ে। খালি চোখে সৌরজগতের মোট পাঁচটি গ্রহ আমরা দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি সবাই লুব্ধকের চেয়েও উজ্জ্বল। তবে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিকভাবে দেখা যায় শনি ও বৃহস্পতিকে। বুধ ও শুক্র সব ঋতুতে থাকে না, থাকলেও কয়েক ঘণ্টার বেশির জন্যে নয়।
আচ্ছা, এবার তাহলে পৃথিবির বাইরে উঁকি দেই।
পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদের আকাশকেই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা ও ছবি তোলা গেছে। অন্য কোথাও মানুষের পা পড়েনি বলে আকাশ দেখতে কেমন হবে তা জানার জন্যে নির্ভর করতে হয় পরোক্ষ উপায়ের উপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপায় হচ্ছে বিভিন্ন মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য। যেমন মঙ্গল গ্রহ, শুক্র এবং শনির উপগ্রহ টাইটানের আকাশের তথ্য এভাবে পাওয়া গেছে। আকাশের চিত্র কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বায়ুমণ্ডল আছে কি নেই, থাকলে তার উপাদান কী, মেঘ আছে কি না ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যে আকাশগুলো সরাসরি দেখা যায়নি এসব তথ্যের মাধ্যমে তাদের আকাশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

বুধ গ্রহের আকাশঃ
বুধ গ্রহের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে সূর্যের আলোকে বিক্ষিপ্ত করার মতও কেউ নেই। দিনের বেলায়ও তাই কালো মহাকাশ চোখে পড়বে। সাথে থাকবে কিছু বিন্দু বিন্দু তারার আলো। তবে সূর্যের উপস্থিতির কারণে একটি বিন্দু হবে বেশ বড়। পৃথিবী থেকে দেখার তুলনায় সূর্যের আকার হয় গড়ে আড়াই গুণ এবং উজ্জ্বলতা হয় ৬ গুণ পর্যন্ত।
পৃথিবীর রাতের আকাশের মত বুধের রাতের আকাশকে কোন চাঁদ জ্যোৎস্নাপ্লাবিত করতে পারে না। কারণ বুধের কোন উপগ্রহই নেই। এখানে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু শুক্র। পৃথিবীর চেয়ে বুধের আকাশে শুক্রকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। বুধ গ্রহে এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭.৭ বা মাইনাস ৭.৭) যেখানে পৃথিবীতে এই মান (-৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতার মান যত কম হয়, বস্তু তত উজ্জ্বল হয়। যেমন চাঁদের আপাত উজ্জ্বলতা (-১২.৭) এবং সূর্যের (-২৭)।
বুধ থেকে আমাদের পৃথিবী এবং চাঁদও ভালো মত চোখে পড়ে। আপাত উজ্জ্বলতা যথাক্রমে (-৫) ও (-১.২)। পৃথিবীতে যেমন দেখা যায়, তেমনি বুধ থেকে বাকি গ্রহদেরও দেখায় যায়, তবে অনেকটা অনুজ্জ্বল।

আরো পড়ুনঃ
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

পৃথিবীর উত্তর মেরু বরাবর যেমন ধ্রুবতারার অবস্থান তেমনি বুধ গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে একটি ধ্রুব তারা আছে। এর নাম আলফা পিকটোরিস। কখনও কখনও বুধ গ্রহে একই দিনে দুইবার সূর্যোদয় দেখা যায়। কেন তা আমরা অন্য কোন সময় ব্যাখ্যা করব।

শুক্র গ্রহের আকাশঃ 
পৃথিবীর আকাশে শুক্র (শুকতারা) খুবই জনপ্রিয় বস্তু। কিন্তু এর নিজের আকাশ খুবই নিষ্প্রভ। দিনের বেলায়ও সূর্য দেখা যায় না। রাতেও তারারা মিটিমিটি করে না। এর কারণ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডের উপস্থিতি। সোভিয়েত মহাকাশযান ভেনেরার মতে শুক্র গ্রহের আকাশ দেখতে কমলা রঙের। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে আবর্তন করে বলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূবে। এটিই আবার সেই অদ্ভুত গ্রহ যাতে বছরের চেয়ে দিন বড়।
আরো পড়ুনঃ 
অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্রহটির বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে উপরে উঠলে চাঁদ, পৃথিবী এবং বুধ গ্রহকে বেশ ভালো উজ্জ্বল দেখা যায়।

চাঁদের আকাশঃ
চিত্রঃ ১৯৬৮ সালে চাঁদের কক্ষপথ থেকে তোলা পৃথিবীর ঐতিহাসিক ছবি

চাঁদেরও কোন বায়ুমণ্ডল নেই। তাই এর আকাশ দেখতে কালো। তবে দিনের বেলায় সূর্য খুব উজ্জ্বল থাকার কারণে তারাদেরকে দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে সূর্যের আলোর দিককে কোনভাবে ঢেকে রাখলে তারা দেখা সম্ভব। এর কারণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। আমরা জানি, আলোর উৎসের আশাপাশের বস্তু আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে আলোকে হাত দিয়ে আড়াল করে রাখলে আলোক উৎসের পাশের বস্তু সহজেই দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে সূর্যের দিককে হাত দিয়ে ঢেকে রাখলেও তারা দেখা যাবে না। কারণ বায়ুমণ্ডলের কারসাজিতে আলো সব দিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সূর্যকে দেখতে যেমন লাগে, চাঁদ থেকেও তেমনই লাগে। কিছুটা বেশি উজ্জ্বল এবং সাদা রঙের- যেহেতু বায়ুমণ্ডল অনুপস্থিত।

চাঁদ থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে? খুশির খবর হচ্ছে, চাঁদের আকাশের সবচেয়ে দর্শনীয় বস্তু কিন্তু পৃথিবীই। পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় লাগে, চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তার চার গুণ মনে হয়। পৃথিবীর আকাশে যেমন চাঁদ বড় ছোট হয়, তেমনি চাঁদ থেকে দেখতে পৃথিবীও বড় ছোট হয়। কারণ দুজনেই সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। তবে পৃথিবীতে যখন চাঁদের পূর্ণিমা, চাঁদে তখন পৃথিবীর অমাবশ্যা। একইভাবে চাঁদের অমাবশ্যার সময় পৃথিবী চাঁদকে দেয় জ্যোৎস্না শোভিত রাত। তার মানে জ্যোৎস্না চাঁদের একক সম্পত্তি নয়। সুযোগ দিলেও পৃথিবীও তার দান ফিরিয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 
পূর্ণিমা হয় কখন, কীভাবে?
চিত্রঃ চাঁদে পৃথিবির উদয় ঘটছে। একে আমরা নাম দিতে পারি ‘ভূদোয়’। ইংরেজিতে বলে আর্থরাইজ

আমরা জানি, চাঁদ নিজের অক্ষের চারদিকে এক বার ঘুরতে যে সময় নেয় তাতে পৃথিবীকে এক বার ঘুরে আসে। ফলে আমরা পৃথিবী থেকে সব সময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই দেখতে পাই। সর্বোচ্চ অবশ্য ৫৮% পর্যন্ত দেখা যায়। এর অনিবার্য কারণ হিসেবে চাঁদেরও শুধু পৃথিবীর নিকট পৃষ্ঠ থেকেই পৃথিবীকে দেখা যায়। অন্য পাশ থেকে দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদকি আবর্তন করে?

পৃথিবীতে বসে আমরা চন্দ্রগ্রহণ দেখি, যখন সূর্যের আলোতে তৈরি পৃথিবীর ছায়া চাঁদের গায়ে গিয়ে পড়ে। এই সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে। এই সময় চাঁদে ঠিক কী ঘটে? একটু ভাবলেই বোঝা যায়, এই সময় চাঁদ থেকে কেউ পৃথিবীর কারণে সূর্যকে দেখতে পাবে না। তার মানে চাঁদে তখন হবে সূর্যগ্রহণ। মজার ব্যাপার, তাই না! চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তুলনামূলক অনেক বড় দেখায় বলে সূর্যগ্রহণের সময়ের দৈর্ঘ্যও হবে লম্বা।

চিত্রঃ পৃথিবীতে চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে।

পৃথিবীতে যখন সূর্যগ্রহণ হবে তখন তাহলে চাঁদে কেমন দেখাবে? এটা তেমন দারুণ কিছু হবে না। কারণ পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ থাকে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে। ফলে এ সময় চাঁদ সূর্যের আলোকে বাধা দিয়ে পৃথিবীর উপর ছায়া ফেলতে চেষ্টা করবে। এ কারণে পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণ হবে ঠিকই। কিন্তু চাঁদের আকাশ থেকে দেখলে পৃথিবী যেহেতু চার গুণ বড় তাই চাঁদের আকাশের পৃথিবী খুব একটা ঢাকা পড়বে না। একটি গলফ বল ১৫ ফুট দূরে সূর্যের আলোর যেমন ছায়া ফেলবে, তেমন প্রতিক্রিয়াই শুধু চাঁদ তৈরি করতে পারবে। তবু এক কথায় বলা চলে, যখনি পৃথিবীতে কোন ধরনের গ্রহণ (Eclipse) ঘটে, তখন চাঁদেও একটি গ্রহণ হয়ে থাকে।
চিত্রঃ নাসার অ্যাপলো ১৭ মিশন কমান্ডার ইউজিন সারনান চাঁদকে পেছনে রেখে পোজ দিচ্ছেন। চাঁদে যাওয়া মোট ১২ ব্যক্তির মধ্যে তিনি সবার শেষে ফিরেছেন। 


মঙ্গল গ্রহের আকাশঃ
মঙ্গল গ্রহের একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল আছে, তবে তা প্রচুর ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। এতে করে আলো অনেক বেশি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। দিনের বেলায় আকাশ খুব উজ্জ্বল থাকে। কোন তারা দেখায় যায় না। মঙ্গলের আকাশের সঠিক রঙ জানা একটু কষ্টকর। তবে আগে যতটা মনে হত, মঙ্গলের আকাশ ততটা গোলাপী নয়। এর রঙ কমলা থেকে লালের কাছাকাছি। মঙ্গলের আকাশে সূর্যকে পৃথিবীর আকাশের তুলনায় ছোট দেখা যায়। এটাইতো হওয়া উচিত, তাই না? কারণ মঙ্গলতো পৃথিবী থেকেও সূর্যের দূরে।
মঙ্গলের দুটো ছোট্ট চাঁদ (উপগ্রহ) আছে- ফোবোস ও ডিমোস। ফোবোসকে সূর্যের অর্ধেকের চেয়ে ছোট দেখায়। আর ডিমোসকে লাগে একেবারে প্রায় বিন্দুর মত। সত্যিকারের সূর্যগ্রহণ বলতে যা বোঝায় তা এই চাঁদরা মঙ্গলের আকাশে তৈরি করতে পারে না। বরং সূর্য ও মঙ্গলের সাথে একই রেখায় এলে এদেরকে সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে গ্রহণ না বলে বলা হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)।
মঙ্গল থেকে পৃথিবীকে দেখতে ডাবল স্টারের মত লাগে। এর কারণ পৃথিবীর সাথে চাঁদের উপস্থিতি। পৃথিবী ও চাঁদের সর্বোচ্চ আপাত উজ্জ্বলতা হয় যথাক্রমে (-২.৫) ও (+০.৯)। তবে শুক্র গ্রহকে আরেকটু উজ্জ্বল দেখায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হয় (-৩.২) পর্যন্ত। মনে আছে নিশ্চয়ই, আপাত উজ্জ্বলতার মান কম হলে বস্তু হয় অপেক্ষাকৃত বেশি উজ্জ্বল। আর আগে মাইনাস চিহ্ন দিয়ে দিলে বড় সংখ্যার মান হয়ে যায় ছোট। তবে মঙ্গলের চাঁদগুলো থেকে মঙ্গলকে বিশাল বড় দেখায়। পূর্ণিমার চাঁদের সময় চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি ফোবোস ও ডিমোস থেকে মঙ্গলকে যথাক্রমে তার ৬৪০০ ও ১০০০ গুণ বড় দেখায়!

মঙ্গলের পরে সৌরজগতে আছে গ্রহাণুপুঞ্জ। আপাতত এদের নিয়ে বলার মত বিশেষ কিছু নেই। তাই আমরা চলে যাচ্ছি বৃহস্পতি গ্রহে। তবে এতক্ষণ যাদের কথা বললাম- চাঁদ অথবা মঙ্গল বা অন্য গ্রহরা; এদের উপর আমরা অবতরণ করতে পারব (শুক্রের ভয়াবহ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে মারা পড়ব যদিও)। কিন্তু বাকি গ্রহরা হল গ্যাস দানব (Gas giant) অথবা তুষার দানব (ice giant)। সাধারণত এদের কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না যেখানে আমরা কখনও অবতরণের চিন্তা করতে পারি।

বৃহস্পতির আকাশঃ
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের ভেতর থেকে কখনও কোনভাবে ছবি তোলা হয়নি। তবে মনে করা হয় এর আকাশও পৃথিবীর আকাশের মতই নীল, তবে বেশ অনুজ্জ্বল। এতে সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা ২৭ গুণ কম। আমরা এখন জানি, শনি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গ্রহের বলয় আছে, তা খুবই সরু অবশ্য। বৃহস্পতির এই বলয় এর বিষুব অঞ্চল থেকে দেখা সম্ভব। বায়ুমণ্ডলের আরও নিচের দিকের এলাকা বিভিন্ন মেঘ ও রঙের কুয়াশায় পরিপূর্ণ। ফলে এদিকে সূর্যের আলো আসতে বাধা পায়। পৃথিবীর তুলনায় এখানে সূর্যকে চারভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট দেখায়।
সূর্যের পরে বৃহস্পতির আকাশে উজ্জ্বল বস্তুরা হল এর প্রধান চারটি চাঁদ। এরা হল আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো। গ্যালিলিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে এদের নাম গ্যালিলীয় চাঁদ। এর মধ্যে আয়ো আমাদের চাঁদের চেয়ে বড় দেখায়। তবে কিছুটা কম উজ্জ্বল। কিন্তু আবার কোন মাতৃ গ্রহ থেকে দেখা এর চাঁদদের মধ্যে আয়োকেই সবচেয়ে বড় দেখায়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড। এটি আয়ো ও ইউরোপার কাছাকাছি মানের উজ্জ্বল। তবে দেখতে আয়োর চেয়ে ছোট- অর্ধেক। তবে ইউরোপার চেয়ে অবশ্য দ্বিগুণ দেখায়। ক্যালিস্টো এদের মধ্যে সবচেয়ে দূরে। ফলে এটি দেখতে আয়োর চারভাগের এক ভাগের মত। আমাদের চাঁদের মত এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বৈশিষ্ট্য (যেমন এবড়োথেবড়ো পৃষ্ঠ) চোখে পড়ে না।
চিত্রঃ বৃহস্পতির আকাশে আয়ো এবং ইউরোপা

এরা আমাদের চাঁদের মতই সূর্যগ্রহণ ঘটাতে সক্ষম। বরং আমাদের চাঁদের চেয়ে এরা এই কাজটি বেশিই করে। এর কারণ হচ্ছে বৃহস্পতির কক্ষীয় নতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক অল্প।
অ্যামালথিয়া ছাড়া এর ভেতরের দিকের বাকি উপগ্রহদেরকে দেখতে তারার মত দেখায়। অ্যামালথিয়া মাঝে মাঝে বড় হয়ে প্রায় ক্যালিস্টোর সমান হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতির আকাশে এরা সবাই যে কোনো তারার চেয়েও উজ্জ্বল থাকে। আরও দূরের উপগ্রহদের মধ্যে হিমালিয়া ছাড়া কাউকে দেখা যায় না।
এবার আসি বৃহস্পতির উপগ্রহদের আকাশে। এদের সংখ্যা আপাতত ৬৭। কারোই বলার মত বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে আকাশ হয় কালো। এদের আকাশে বৃহস্পতিকে অসাধারণ দেখায়। অভ্যন্তরীণ উপগ্রহদের এর সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ আয়োতে বৃহস্পতিকে আমরা চাঁদকে যেমন দেখি তার ৩৮ গুণ বড় দেখায়!  সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ মেটিস। এখানে বৃহস্পতিকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের ১৩০ গুণ! মেটিসে বৃহস্পতি সূর্যের আলোর ৪% পর্যন্ত উজ্জ্বলতা প্রতিফলিত করতে পারে। বলে রাখা ভাল, আমাদের চাঁদ পৃথিবীর আকাশে সূর্যের চেয়ে ৪০০ গুণ অনুজ্জ্বল।

শনি গ্রহের আকাশঃ 
আগেই বলেছি শনি গ্রহেরও কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই। এর বায়ুমণ্ডলের উপুরের দিকে থেকে আকাশ সম্ভবত নীল দেখাবে। তবে আরও নিচের দিকে আকাশের রঙ দেখাবে হলুদাভ। শুধুমাত্র অনুসূর (সূর্যের নিকটতম) অবস্থানে থাকার সময় এর উত্তর গোলার্ধ সূর্যকে দেখার সুযোগ পায়। এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ থেকে এর বলয় দেখা যায় ভালোভাবেই।
অনুসূর বনাম অপসূর

শনির উপগ্রহরা রাতের আকাশকে খুব বেশি সুন্দর করে তুলতে পারে না, যদিও এখন পর্যন্ত এর ৬২ টি উপগ্রহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান। এটি শনির আকাশে আমাদের চাঁদের অর্ধেকের মত লাগে। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭)। তবে দূরত্ব বেশি হবার কারণে টাইটান শনির সবচেয়ে অনুজ্জ্বল চাঁদ। এর চেয়েও উজ্জ্বল দেখায় মাইমাস, এনচেলাডাস, টেথিস, ডায়োনে ও রিয়া। বাইরের দিকের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র ফোবেকে দেখা যায়।
আমাদের চাঁদের মতই শনির ভেতরের দিকের চাঁদেরাও শনিকে একবার ঘুরে আসতে যে সময় নেয় ততক্ষণে শনি নিজের অক্ষের উপর আবর্তন শেষ করে। ফলে এদের এক পৃষ্ঠ থেকেই শুধু শনিকে দেখা সম্ভব। তবে ভেতরের দিকের চাঁদ্গুলোতে শনি একটি দেখার মত জিনিস বটে! শনির উপগ্রহ প্যানে শনিকে আমাদের চাঁদে চেয়ে ১০৪ গুণ বড় দেখায়। তবে শনির উপগ্রহগুলো থেকে এর বলয় খুব ভালোভাবে দেখা যায় না। এর কারণ এরা শনির বলয়ের সাথে একই সমতলে অবস্থান করছে। অন্য দিকে বলয়ের পুরুত্বও কিন্তু খুব বেশি না।
সৌরজগতের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র শনির উপগ্রহ টাইটানেরই পুরু বায়ুমণ্ডল আছে। এর পৃষ্ঠ থেকে আকাশকে দেখতে বাদামী বা গাঢ় কমলা রঙের দেখায়। টাইটান সূর্যের আলো পায় পৃথিবীর ৩০০০ ভাগের এক অংশ। ফলে দিনের বেলায় এর আকাশ দেখায় পৃথিবীর গোধূলির মত। পৃথিবী ছাড়া পুরো মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত জানা মতে শুধু টাইটানেই রংধনু তৈরি হতে পারে। শনিকে দেখা যায় শুধু বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের দিকেই।
অন্য দিকে এনসেলাডাস উপগ্রহে শনিকে তুলনামূলক অনেক অনেক ভালো দেখা যায়। আমাদের চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি তার তুলনায় এখান থেকে শনিকে ৬০ গুণ বড় দেখা যায়। তবে আমাদের চাঁদের মতই এর মাত্র এক পৃষ্ঠ থেকেই শনিকে দেখা সম্ভব। এর আকাশে শনিকে বড়- ছোট হতেও দেখা যায়। এখান থেকে শনির আরও কিছু উপগ্রহকেও দেখা যায়। এর মধ্যে মাইমাসকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের সমান।
চিত্রঃ শিল্পির হাতের তুলিতে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের আকাশ

শনির দক্ষিণ মেরু বরাবর আকাশে আমাদের ধ্রুবতারার মত একটি তারা আছে। এর নাম ডেল্টা অক্টানটিস।

ইউরেনাস গ্রহের আকাশঃ
এই গ্রহটির আকাশ খুব সম্ভব হালকা নীল। এর হালকা বলয় পৃষ্ঠ থেকে দেখা যাওয়ার কথা নয়। ইউরেনাসের দক্ষিণ ও উত্তর দুই মেরুতেই একটি করে মেরু তারা (Pole star) বা ধ্রুবতারা আছে। এরা হল যথাক্রমে ১৫ ওরাইওনিস ও সাবিক। দুটোই আমাদের উত্তর মেরুর ধ্রুবতারার চেয়ে অনুজ্জ্বল।
এর পৃষ্ঠ থেকে কোন উপগ্রহকেই আমাদের চাঁদের মত বড় দেখা যায় না, যদিও এখন পর্যন্ত এরা সংখ্যায় ২৭। তবে এরা সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় দারুণ একটি দৃশ্য ঠিকই তৈরি হয়।

নেপচুনের আকাশঃ
নেপচুন সৌরজগতের সর্বশেষ গ্রহ। অনেকটা ইউরেনাসের মত এর আকাশ। তবে এটি হালকার বদলে উজ্জ্বল নীল। এরও বলয় আছে। তবে তা খুবই সরু হওয়াতে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে দেখা যায় না। সূর্যের পরে এর আকাশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু উপগ্রহ ট্রাইটন। একে আমাদের চাঁদের চেয়ে সামান্য ছোট দেখায়। আরেকটি চাঁদ প্রোটিয়াস দেখতে আমাদের চাঁদের অর্ধেক। নেপচুনের সবচেয়ে বড় চাঁদ হল ট্রাইটন। এর হালকা বায়ুমণ্ডল আছে। তবু আকাশ কালোই দেখায়। এর আকাশে নেপচুনকে এক জায়গায় স্থির দেখায়। কেন অনুমান করেনতো? এতক্ষণের আলোচনা থেকেই বুঝে ফেলার কথা।

প্লুটোর আকাশঃ
চিত্রঃ প্লুটোর আকাশে সূর্য (উপরে ডানে) ও উপগ্রহ শ্যারন

প্লুটো এখন আর গ্রহ নয় বরং বামন গ্রহ (Dwarf planet)। প্লুটো সূর্য থেকে পৃথিবীর তুলনায় ১৩০ গুণ দূরে। তবু এখানে সূর্য মোটামুটি ভালোই উজ্জ্বল। এখানে আমাদের চাঁদের চেয়ে সূর্যের উজ্জ্বলতা ১৫০ থেকে ৪৫০ গুণ। এর বায়ুমণ্ডলে আছে নাইট্রোজেন, মিথেন ও কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস। প্লুটো এর বৃহত্তম উপগ্রহ শ্যারনের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আটক। এ কারণে এরা সব সময়ে একে অপরের দিকে মুখ করে থাকে।

সৌরজগতের বাইরের আকাশঃ 
বহির্গ্রহ মানে সৌরজগতের বাইরের গ্রহ। ৬৫ থেকে ৮০ আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যন্ত সূর্যকে খালি চোখে দেখা যাবে। মাত্র ২৭ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত একটি নক্ষত্রে নাম বিটা কোমি বেরানেসিজ। আমাদের আকাশে এটি খুব অনুজ্জ্বল। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র জগৎ আলফা সেন্টোরি (প্রক্সিমা সেন্টোরি নক্ষত্রও একই বাইনারি জগতের অংশ)। এই অঞ্চল থেকে সূর্যকে দেখা যাবে ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলীতে। উজ্জ্বলতা হয় আমাদের রাতের আকাশের ৬ষ্ঠ উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্যাপেলার মত।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Extraterrestrial_skies#Mercury
২। https://www.quora.com/The-sky-is-blue-on-earth-What-color-is-the-sky-on-other-planets-in-our-solar-system
৩। http://www.answers.com/Q/What_color_is_the_sky_on_the_planet_Mercury
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_nearest_stars_and_brown_dwarfs
Category: articles

শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

বুধ সৌরজগতের নিকটতম এবং সবচেয়ে ছোট গ্রহ। সূর্যের কাছাকাছি থাকার কারণে একে পৃথিবী থেকে দেখা একটু কঠিন, ব্যতিক্রম শুধু গোধূলির কিছু সময়। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে আসতে এটি নিজের অক্ষের উপর তিনি বার পাক খায়। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মনে করা হত যে বুধের শুধু এক পাশই সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। প্রতি শতাব্দীতে একে পৃথিবীর আকাশে প্রায় ১৩ বার সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনার নাম ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে এর অতিক্রমণ ঘটে।
পৃথিবীর তুলনায় বুধ
এক নজরেঃ
ভরঃ পৃথিবীর ০.০৬ গুণ
ব্যাসঃ ৪, ৮৭৯ কিমি.
উপগ্রহঃ নেই
কক্ষপথের গড় দূরত্বঃ ০.৩৯ এইউ (১ এইউ = পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব)
এক বছরের দৈর্ঘ্যঃ ৮৮ দিন (পৃথিবীর হিসাবে)
পৃষ্ট তাপমাত্রাঃ -১৭৩ থেকে ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

আরো পড়ুনঃ 
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

বুধ গ্রহের তথ্য ঝুড়িঃ

১. সব গ্রহের মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে চাপা। অর্থ্যাৎ, বৃত্তাকার আকৃতি থেকে এর কক্ষপথের বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি। সূর্য থেকে এর দূরত্ব বিভিন্ন সময় ৪৬ থেকে ৭০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লাখ) কিমি. পর্যন্ত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ 

২. গ্রহদের মধ্যে বুধ সবচেয়ে ছোট। খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচ গ্রহের অন্যতম এই গ্রহটির বিষুব রেখা বরাবর ব্যাস ৪, ৮৭৯ কিমি., যেখানে পৃথিবীর ব্যাস ১২, ৭৪২ কিমি.। 

৩. গ্রহদের মধ্যে ঘনত্বের দিক দিয়ে বুধের অবস্থান দ্বিতীয়। আকারে ছোট্ট হলেও এর ঘনত্ব অনেক বেশি। এর প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ৫.৪ গ্রাম করে পদার্থ আছে। এর চেয়ে বেশি ঘনত্ব রয়েছে শুধু পৃথিবীর। এর এই বড়ো ঘনত্বের কারণ হল, গ্রহটি মূলত ভারী ধাতু ও পাথর দ্বারা গঠিত। 

৪. বুধের পৃষ্ট এবড়োথেবড়ো। কোথাও কোথাও এর পৃষ্ঠের ভাঁজ একশো মাইল পর্যন্ত উঁচু ও কয়েকশো মাইল লম্বা হয়ে থাকে। 

৫. এর কেন্দ্রভাগ গলিত হতে পারে। সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অবস্থা গলিত হতে পারে। সাধারণত ছোট গ্রহদের কেন্দ্র খুব দ্রুত শীতল হয়ে যায়। কিন্তু এর কেন্দ্রে কঠিন বস্তুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। হিসাব করে দেখা গেছে এর মোট আয়তনের ৪২ ভাগই কেন্দ্রভাগ নিয়ে গঠিত, যেখানে পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই মানটি মাত্র ১১ ভাগ। 

৬. তাপমাত্রার দিকে দিয়ে বুধের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে দ্বিতীয়। এর চেয়ে দূরে থেকেও শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা আরো বেশি। এর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও রাতের বেলায় তা আবার নেমে আসে মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রিতেও। গ্রহটির কোনো বায়ুমণ্ডল নেই বলে এ রকমটি ঘটে। 
আরো পড়ুনঃ

৭. বুধের পৃষ্ঠ প্রচুর খানাখন্দে ভরপুর। গ্রহাণু ও ধূমকেতুর সংঘর্ষে এর পৃষ্ঠে এসব খাদ তৈরি হয়েছে। অন্য গ্রহদের মতো এটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় এসব খাদ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেনি। ২৫০ কিমি. এর চেয়ে বেশি ব্যাসের খাদকে বলা হয় বেসিন। 

৮. এ পর্যন্ত দুটি মহাকাশযান বুধ সফরে গেছে। সূর্যের খুব কাছে হবার কারণে বুধ গ্রহে যাওয়া কঠিন। ১৯৭৪ থেকে '৭৫ এর মধ্যে মেরিনার ১০ এর কাছ দিয়ে তিনবার উড়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে এর পৃষ্ঠের অর্ধেকটার মতো ছবি তোলা গেছে। এরপর ২০০৪ সালে পাঠানো হয় মেসেনজার প্রোব। 

৯. বুধের সঠিক আবিষ্কার কাল জানা যায় না। খৃষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে সুমেরীয়রা একে দেখেছে বলে জানা যায়।   

১০. বুধেরও আছে বায়ুমণ্ডল! বুধের অভিকর্ষ পৃথিবীর ৩৮ শতাংশ মাত্র। সৌরবায়ুর খপ্পরে পড়ে এত অল্প অভিকর্ষ দিয়ে বায়ুমণ্ডল টিকিয়ে রাখা কঠিন। তবে এই সৌরবায়ু ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কারণেই এর বায়ুমণ্ডল কিছুটা অস্তিত্ব ফিরে পায় সময় সময়। 
 
সূত্রঃ
১। http://solarsystem.nasa.gov/planets/mercury
২। http://nineplanets.org/mercury.html
৩। http://space-facts.com/mercury/
Category: articles

বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬

আজ ২০ জুলাই। শিরোনামে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেও আসলে এই দিনে মহাকাশের ইতিহাসে দুটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছিল। একটিতো সবার জানা। এই দিনেই নিল আর্মস্ট্রং সবার আগে চাঁদের বুকে পা ফেলেন। সালটি ছিল ১৯৬৯। এ সময় তিনি আবেগে বলেছিলেন,
একজন মানুষ হিসেবে চিন্তা করলে আমিতো মাত্র এক কদম এগিয়েছি, কিন্তু পুরো মানব্জাতির কথা চিন্তা করলে এই এক কদম এক বিশাল লাফের সমান।  
মানবজাতির এই বিশাল লাফের আজকে ৪৭তম বার্ষিকী।
আর্মস্ট্রং এর পরেই চাঁদে নামেন বাজ অলড্রিন। দুজনে মিলে ২১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় চাঁদে কাটান। পৃথিবীতে নিয়ে আসেন চাঁদের সাড়ে ২১ কেজি পাথর।
অ্যাপোলো-১১ যানে করে আর্মস্ট্রং, অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স ১৬ জুলাই তারিখে চাঁদের দিকে যাত্রা করেন। 
অ্যাপোলো-১১ এর যাত্রা শুরু হয় স্যাটার্ন ভি রকেটের মাধ্যমে। এই রকেটের দৈর্ঘ্য ছিল ৩৬ তলা বিল্ডিং এর সমান। 
চাঁদের দিকে যাবার পথে অ্যাপোলো-১১ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি
এই হচ্ছে অ্যাপোলো-১১ লুনার মডিউলের ছবি। ঈগল নামের এই যানটিই অলড্রিন ও আর্মস্ট্রংকে চাঁদের বুকে নামিয়ে দেয়। কলিন্স পেছনে থেকে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। 
চাঁদের বুকে প্রথম হাঁটার পরে নিল আর্মস্ট্রং। 


আরেকটি ঘটনাঃ মঙ্গলে প্রথম কোনো মহাকাশযানের অবতরণ।
এই অর্জনটি হয় ১৯৭৬ সালে। কাজটি সম্পন্ন করে ভাইকিং ওয়ান ল্যান্ডার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা পেয়ে যাই মঙ্গলের প্রথম রঙিন ছবি। 
লাল গ্রহ মঙ্গলের প্রথম রঙিন ছবি
একে পাঠানো হয়েছিল ১৯৭৫ সালের আগস্টের ২০ তারিখে। প্রায় এক বছর পর এটি মঙ্গলে পৌঁছে। এর এক মাস পরেই পৌঁছে যায় আরেকটি যান ভাইকিং টু। 
Category: articles

শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬

শুক্র গ্রহের সাথে আমাদের পৃথিবীর অনেক মিল রয়েছে সত্য। এর ভর, অভিকর্ষ, সাইজ- সবই পৃথিবীর কাছাকাছি। কিন্তু এতে বাস করার চিন্তা করা আদৌ ঠিক হবে না।
ছবিতে শুক্র গ্রহ 

এর প্রধান কারণ ৩টিঃ
১। এর পৃষ্ঠে তাপমাত্রা প্রায় ৪৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৮৫৪ ফারেনহাইট। এ তাপমাত্রায় টিন ও সিসার মতো বস্তুও গলে যায়।
২। এর পৃষ্ঠচাপ পৃথিবীর সমুদ্র লেভেলের চাপের ৯০ গুণ।
এই তীব্র তাপমাত্রায় একদিকে গলে যেতে হবে, আবার অন্য দিকে চাপের প্রভাবে হতে হবে ভর্তা। মহাকাশযান থেকে একবার নামলেই হল, আবার যানে ফিরতে ফিরতে চ্যাপ্টা না হয়ে উপায় নেই।
৩। এর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড আছে ৯৬ পারসেন্ট।
শুক্রের বায়ুমণ্ডল 

সায়েন্স ফিকশনপ্রেমীসহ কেউ কেউ কল্পনা করেন চেষ্টা করলে শুক্রকে বাসযোগ্য গ্রহে রূপান্তর করা সম্ভব। ধাপে ধাপে অনেকগুলো কৌশল অবলম্বন করে বসবাসের জন্য অযোগ্য কোন গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলার পদ্ধতিকে ইদানিং টেরাফর্মিং বলা হয়। কারো কারো মতে, শুক্র গহের বায়ুমণ্ডলে ব্যাকটেরিয়া ফেলে এর কার্বন ডাই অক্সাইড ও সালফিউরিক এসিডকে অক্সিজেন ও অন্যান্য উপকারী উপজাতে পরিণত করা যেতে পারে। কিন্তু এই চিন্তাটা খুব বেশি যৌক্তিক নয়।
তবে শুক্র গ্রহে বসবাস করতে না পারলেও পৃথিবীতে বসে রাতের আকাশে শুক্র গ্রহের সৌন্দর্য উপভোগ করতে কোনো মানা নেই। চাঁদের পরে রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু কিন্তু শুক্রই।

আরো পড়ুনঃ
শুকতারার পরিচয়
দিক নির্ণয়ে শুক্র গ্রহ
অদ্ভুত এক গ্রহ 

সূত্রঃ
১। http://www.astronomycafe.net/qadir/q1002.html
২। http://www.space.com/28357-how-to-live-on-venus.html
Category: articles

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬

মহাজাগতিক সভ্যতার প্রকারভেদ 

আমরাতো বর্তমানে যুগে নিজেদেরকে অনেক উন্নত মনে করি। কিন্তু মহাজাগতিক স্কেলে আসলে আমরা কতটুকু উন্নত? মহাজাগতিক স্কেলে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর সম্প্রদায়ের সভ্যতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এটা হল টাইপ ১, টাইপ ২ এবং টাইপ ৩ সভ্যতা।
টাইপ ১ সভ্যতাকে গ্রহ সভ্যতাও (Planetary civilization) বলা হয়। এই সভ্যতায় প্রাণীরা তাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে গ্রহে আসা সম্পূর্ণ শক্তি ধরে রাখতে ও ব্যবহার করতে পারে।
টাইপ ২ সভ্যতার প্রাণী সম্পূর্ণ নক্ষত্রের শক্তি ব্যবহারে সক্ষম। কল্পনা করা হয় যে এরা নক্ষত্রের চারপাশে একটি ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করে। পুরো নক্ষত্রকে বেষ্টনকারী এই গোলক নক্ষত্রের সব শক্তি শোষণ করে, যা প্রাণীরা কাজে লাগায়।
অন্য দিকে টাইপ ৩ সভ্যতার প্রাণীরা পুরো গ্যালাক্সিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম।
এই তিনটিই হল মূল শ্রেণিবিভাগ। আরো কিছু বাড়তি প্রকারভেদও আছে। তবে সেটা 'আজকের ছবি' বিভাগে প্রকাশের যোগ্য নয়।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Kardashev_scale
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, নিউটন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা- সব ক্ষেত্রেই শুধু নিউটনের এই ফর্মুলা, সেই ফর্মুলা। ফিজিক্সে ও ম্যাথে সমানে গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন। দেখিয়েছেন পায়ের নিচে যে সূত্র (অভিকর্ষ) কাজ করে, আকাশেও তা (মহাকর্ষ) একইভাবে কাজ করে। আবিষ্কার করেছেন ক্যালকুলাস, যা ছাড়া আধুনিক পদার্থবিদ্যা পুরোপুরি অচল। আর কিছু আপাতত নাই বা বললাম।
কিন্তু মানুষটার ব্যক্তি জীবন ছিল আলাদা। নিউটন সাহবে খুব একটা সুবিধার মানুষ ছিলেন না। অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তিদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুব খারাপ। জীবনের শেষের দিকে তার বেশির ভাগ সময় কেটেছে উত্তপ্ত বিতর্কের মধ্য দিয়ে। নিঃসন্দেহে তাঁর প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা ফিজিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী বই। এটি প্রকাশের পরপরই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তাঁকে রয়েল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। তিনিই বিজ্ঞানী হিসেবে প্রথম নাইট হবার সুযোগ পান।

অল্প দিনের মধ্যেই তিনি রাজকীয় জ্যোতির্বিদ (প্রচলিত নাম অ্যাস্ট্রোনোমার রয়েল) জন ফ্ল্যামস্টিডের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। অথচ ইনিই নিউটনকে প্রিন্সিপিয়া প্রকাশের জন্যে প্রয়োজনীয় তথ্য- উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। তবে এবার নিউটনের সহযোগিতার রাস্তা বন্ধ হল। নিউটনও ছেড়ে কথা বললেন না। তিনি রয়েল অবজারভেটরির পরিচালনা পর্ষদে স্থান করে নিতে সক্ষম হলেন। এবার দ্রুত উপাত্তগুলো প্রকাশনার চেষ্টা করলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ফ্ল্যামস্টিডের গবেষণাকর্ম জব্দ করে ফেললেন। উপরন্তু এগুলো ফ্ল্যামস্টিডের জানের শত্রু এডমন্ড হ্যালিকে দিয়ে প্রকাশ করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। কিন্তু ফ্ল্যামস্টিড চলে গেলেন আদালত পর্যন্ত। ঠিক সময় মতোই তাঁর চুরি হওয়া গবেষণার প্রকাশনা বন্ধ করতে আদালতের আদেশ অর্জন করে নিতে পারলেন। নিউটনের মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে তাঁর প্রিন্সিপিয়ার পরবর্তী সংস্করণগুলো থেকে ফ্ল্যামস্টিডের সব রেফারেন্স ধীরে ধীরে উঠিয়ে নিলেন।
আরো ভয়াবহ বিবাদে লিপ্ত হন জার্মান দার্শনিক গটফ্রিড লিবনিজের সাথে। নিউটন ও লিবনিজ দুজনেই গণিতের ক্যালকুলাস নামে একটি শাখা তৈরি করেন। আধুনিক পদার্থবিদ্যার অন্যতম ভিত্তি এই ক্যালকুলাস। এখন আমরা জানি যে নিউটন লিবনিজের অনেক বছর আগেই ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন। তবে তিনি তা প্রকাশ করেন অনেক দেরি করে। কে আগে আবিষ্কার করেছেন তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠল। দুই পক্ষেই কিছু বিজ্ঞানী শক্ত অবস্থান নিলেন। তবে মজার ব্যাপার হল, নিউটনের পক্ষে লেখা বেশির ভাগ রচনাই নিউটন নিজে লিখে বন্ধুদের নাম দিয়ে প্রকাশ করেন।

বিতর্ক চরমে উঠলে লিবনিজ একটি ভুল করে বসলেন। তিনি রয়েল সোসাইটিকে এই বিতর্ক সমাধান করে দিতে প্রস্তাব দিলেন। এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউটন অনুসন্ধান চালানোর জন্যে একটি 'নিরপেক্ষ' কমিটি করে দিলেন। মজার ব্যাপার হল, এই কমিটির সদস্যরা সবাই ছিল নিউটনেরই বন্ধু। কিন্তু এটাই শেষ নয়। নিউটন পরে নিজেই কমিটির রিপোর্ট লিখেন। রয়েল সোসাইটি রিপোর্ট প্রকাশও করল। এতে বলা হল, লিবনিজ গবেষণাকর্ম চুরি করেছেন। এতেও নিউটন শান্তি পাননি। তিনি রয়েল সোসালিটির নিজস্ব সাময়িকীতে রিপোর্টটি সম্পর্কে বেনামে একটি রিভিউ লিখেন। জানা যায়, লিবনিজের মৃত্যুর পরে নিউটন বলেন যে তিনি 'লিবনিজের বুক ভাঙতে পেরে' চরম তৃপ্তি পেয়েছেন।

এই দুই বিতর্কের সময়কালের মধ্যেই নিউটন ক্যামব্রিজ ও একাডেমিক জগত ছেড়ে চলে আসেন। তিনি ক্যামব্রিজে ক্যাথলিক বিরোধীতায় এবং পরবর্তীতে পার্লামেন্টের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। শেষ পর্যন্ত রয়েল মিন্ট এর ওয়ার্ডেনের মতো লোভনীয় পদ অর্জন করেন। এখানে এসে তিনি এবার সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে তাঁর বুদ্ধি খরচ করতে থাকেন উগ্র অপকৌশলের পেছনে। অবশ্য এখানে তিনি নকলবাজির বিরুদ্ধেও তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদণ্ডও দেন।

সূত্রঃ
[স্টিফেন হকিং এর বই 'A Briefer History of Time' থেকে অনূদিত। বইটির অনুবাদ সম্পন্ন করেছি।
সব কিছু ঠিক থাকলে বইটি আগামী বই মেলায় আলোর মুখ দেখবে। এটা Brief নয়, Briefer History of Time, বইটি আগের বইটির আপডেট ভার্সন] 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...