একটা সময় পৃথিবীর অবস্থা এমন ছিল যে, সবাই মনে করত কোনো পদার্থকে চিরকাল ধরে টুকরা করা যাবে। টুকরা করতে করতে এমন কোনো ক্ষুদ্রতম টুকরা পাওয়া যাবে না, যাকে আরও বেশি ভাঙা অসম্ভব হবে। কিন্তু, ডেমোক্রিটাস বললেন বিপরীত কথা। পরমাণু বলে এমন কিছু আছে যা অবিভাজ্য। তারপর ডালটন সাহেবও তার সাথে সুর মেলালেন। কিন্তু বিজ্ঞানী থমসন, বোর, রাদারফোর্ড প্রমুখরা দেখালেন যে, পরমাণু মাঝে নিউক্লিয়াস আছে। তাতে আবার প্রোটন, নিউট্রন আছে। নিউক্লিয়াসের চারপাশে সদা সর্বদা ইলেকট্রনও ঘুর্ণায়মান আছে। এই প্রোটন, নিউট্রনের ভর নির্ণয় করতেও বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছিলেন। কিন্তু, অনেকে প্রশ্ন করল যে, প্রোটন আর নিউট্রন ভরই বা পেল কোথায়? চার্জই বা কীভাবে পেল?
এই রকম আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করলেন বিজ্ঞানী মারি গেল ম্যান। তিনি বললেন, প্রোটন আর নিউট্রনের মাঝে আছে কোয়ার্ক, যা ফার্মিয়ন শ্রেণির কণা। হরেক রকমের কোয়ার্ক কণা দ্বারা এই সকল পারমাণবিক কণারা গঠিত। তার মানে কোয়ার্করা হল অতি-পারমাণবিক (subatomic particle) কণা। তিনি বললেন, কোয়ার্করা প্রচন্ড বেগে প্রোটনের মাঝে চলাচল করছে। তাদের গতির কারণে আপেক্ষিক ভরের সৃষ্টি হয়। এভাবে প্রোটন, নিউট্রনের ভরের সৃষ্টি হয়। তিনি দেখালেন, একটা প্রোটন দুইটা আপ ও একটা ডাউন কোয়ার্ক- মোট ৩টা কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি। তেমনি একটা নিউট্রন দুইটা ডাউন ও একটা আপ কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি।
প্রোটন ও নিউট্রন তৈরি আপ ও ডাউন কোয়ার্কের মিশ্রণে। |
তাহলে মনে আবার প্রশ্ন জাগতে পারে, কোয়ার্ক কি তাহলে দুই প্রকার? আপ এবং ডাউন? না, কোয়ার্ক হল ৬ প্রকার। আপ ও ডাউন কোয়ার্ক ছাড়াও আছে চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ ও বটম কোয়ার্ক। তবে প্রোটন ও নিউট্রনে শুধু আপ ও ডাউন কোয়ার্কই থাকে। এই আপ কোয়ার্কের চার্জ হল +$\frac{২}{৩}$ এবং ডাউন কোয়ার্কের চার্জ হল -$\frac{১}{৩}$. একটু হিসাব নিকাশ করলে দেখা যায় প্রোটনে যেহেতু ২টা আপ ও ১টা ডাউন কোয়ার্ক আছে, তাই এর চার্জ +১ আবার নিউট্রনে যেহেতু ২টা ডাউন ও ১টা আপ কোয়ার্ক আছে, তাই এর চার্জ শূন্য। কত সুন্দর করে চার্জের হিসাব মিলে গেল। তাই না!! তবে চার্জের হিসাব মিললেও ভরজনিত কিছু সমস্যা থেকেই গেল।
প্রোটন ও নিউট্রনের চার্জের হিসাব |
সেই সমস্যায় একটু পরে আসছি। আপাতত পারমাণবিক কণারা যে কোয়ার্ক থেকে ভর পেয়ে আসছে সেটা জানা গেল। সাধারণত, এই তথ্য পেয়ে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। মনে করে নেয় যে, ভরের সবটুকুই কোয়ার্ক থেকে আসছে। আসলে কিন্তু তা নয়। কোয়ার্ক শুধুমাত্র স্থিতিভর(নিশ্চল ভর) প্রদান করে। কণা-পদার্থবিদ্যায় ভর বলতে স্থিতিভরকেই বুঝানো হয়। যেমন: মানবদেহের স্থিতিভর প্রায় এক কেজির মত। অবশিষ্ট যে ভর পাওয়া যায় তা হল কোয়ার্কের গতিজনিত ভর বা আপেক্ষিক ভর। কোয়ার্কসহ সকল ফার্মিয়নরা কোয়ান্টাম জগতে আলোর কাছাকাছি বেগে মিথস্ক্রিয়া দেখায়। তাই এক্ষেত্রে ভরবৃদ্ধি ঘটে। সুতরাং, ভরের ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখা প্রয়োজন, তা নাহলে কণা-পদার্থবিদ্যার সমীকরণে গরমিল হয়ে যেতে পারে।
সমস্যাটিতে ফিরে আসি। প্রোটন, নিউট্রন তো ভর পেল। কিন্তু, প্রশ্নকারীরা বলল, কোয়ার্কের ভরই বা কীভাবে এল? এবার বিজ্ঞানীরা খুব ভাল একটা উত্তর দিলেন। তারা বললেন, হিগস নামের একটা ক্ষেত্র আছে, যেই ক্ষেত্রে কোনো কোয়ার্ক কণা প্রবেশ করলেই তার ভর তৈরি হয়ে যায়। বলা যায়, হিগস ক্ষেত্রে চলাচলকারী কণাদের ভর হিগস ক্ষেত্র প্রদান করে। এই হিগস ক্ষেত্র ও কণাদের অস্তিত্বও বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন। ২০১২ সালে। সুতরাং ভর নিয়ে আর কোনো সমস্যা রইলনা। অনেকে হয়ত প্রশ্ন করবে, হিগস ক্ষেত্র ভর কীভাবে দেয়? হিগস ক্ষেত্রের ভরই কোথা থেকে এল? এটা অন্য একটা আলোচনার বিষয় হলেও সংক্ষেপে বলছি।
হিগস ক্ষেত্রের একটি কোয়ান্টা আছে। যার নাম হিগস কণা। এই বোসন কণা অন্য কণাদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে বাঁধা প্রদান করে। হিগস ক্ষেত্রে চলাচলকারী কণাদের এই বাঁধাকেই আমরা ভর হিসেবে দেখি। পুরো মহাবিশ্ব হিগস কণা দিয়ে পূর্ণ। সৃষ্টিলগ্নের পর মহাবিশ্ব যখন স্থিতাবস্থায় আসতে থাকে, তখন হিগস কণা জমতে(condensed) থাকে। এই জমার প্রক্রিয়াতেই হিগস কণা নিজে ভর পায়। মজার বিষয় হল হিগস ক্ষেত্রের উৎপত্তি যে ক্ষেত্র থেকে তা কাল্পনিক ক্ষেত্র। এই কাল্পনিক ক্ষেত্র কীভাবে বাস্তব ভর দেয়, তাও সমাধান করতে বিজ্ঞানীরা সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত লিখব শীঘ্রই।
সমস্যাটিতে ফিরে আসি। প্রোটন, নিউট্রন তো ভর পেল। কিন্তু, প্রশ্নকারীরা বলল, কোয়ার্কের ভরই বা কীভাবে এল? এবার বিজ্ঞানীরা খুব ভাল একটা উত্তর দিলেন। তারা বললেন, হিগস নামের একটা ক্ষেত্র আছে, যেই ক্ষেত্রে কোনো কোয়ার্ক কণা প্রবেশ করলেই তার ভর তৈরি হয়ে যায়। বলা যায়, হিগস ক্ষেত্রে চলাচলকারী কণাদের ভর হিগস ক্ষেত্র প্রদান করে। এই হিগস ক্ষেত্র ও কণাদের অস্তিত্বও বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন। ২০১২ সালে। সুতরাং ভর নিয়ে আর কোনো সমস্যা রইলনা। অনেকে হয়ত প্রশ্ন করবে, হিগস ক্ষেত্র ভর কীভাবে দেয়? হিগস ক্ষেত্রের ভরই কোথা থেকে এল? এটা অন্য একটা আলোচনার বিষয় হলেও সংক্ষেপে বলছি।
হিগস ক্ষেত্রের একটি কোয়ান্টা আছে। যার নাম হিগস কণা। এই বোসন কণা অন্য কণাদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে বাঁধা প্রদান করে। হিগস ক্ষেত্রে চলাচলকারী কণাদের এই বাঁধাকেই আমরা ভর হিসেবে দেখি। পুরো মহাবিশ্ব হিগস কণা দিয়ে পূর্ণ। সৃষ্টিলগ্নের পর মহাবিশ্ব যখন স্থিতাবস্থায় আসতে থাকে, তখন হিগস কণা জমতে(condensed) থাকে। এই জমার প্রক্রিয়াতেই হিগস কণা নিজে ভর পায়। মজার বিষয় হল হিগস ক্ষেত্রের উৎপত্তি যে ক্ষেত্র থেকে তা কাল্পনিক ক্ষেত্র। এই কাল্পনিক ক্ষেত্র কীভাবে বাস্তব ভর দেয়, তাও সমাধান করতে বিজ্ঞানীরা সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত লিখব শীঘ্রই।
উল্লেখ্য যে, ইলেকট্রন কিন্তু কোনো আপ বা ডাউন কোয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত নয়। ইলেকট্রন একেবারেই মৌলিক কণা। একে আর টুকরা করা যায় না। কোয়ার্ক থাকে প্রোটন আর নিউট্রনের মাঝে। এর ভিতর অনেক কথা আছে। যেমন, আপ ও ডাউন কোয়ার্ক কীভাবে প্রোটন অথবা নিউট্রনের ভিতরে একত্রে আছে? এরা মূলত গ্লুয়ন নামক (আঠা বা গ্লু থেকে নাম করা হয়েছে) এক প্রকার কণা দ্বারা একত্রে যুক্ত থাকে। গ্লুয়নের গল্পের রাজ্য কোয়ার্কের চেয়েও বিশাল। সেই গল্প আপাতত তোলা থাক।
এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ
সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Murray_Gell-Mann
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Higgs_boson
1 comments:
Write commentsআজ পর্যন্ত পদার্থের লিলা খেলায় বুঝতে পারলাম না।
Reply