Advertisement

রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

রাতের আকাশের পঞ্চম উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে দ্বিতীয় উজ্জ্বল। স্বাতীর পরেই সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷ লাইরা বা বীণামণ্ডলে এর অবস্থান। স্বাভাবিকভাবেই মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাও এটিই৷ সূর্য থেকে দূরত্ব মাত্র ২৫ আলোকবর্ষ। 

রাতের আকাশে অভিজিৎ নক্ষত্র। আগস্ট মাসে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। রাত নয়টার দিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় মাথার ওপর। 

জ্যোতির্বিদরা অভিজিৎ নক্ষত্র নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন৷ এ কারণে সূর্যের পর একে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারাও বলেন অনেকে৷ সূর্যের পরে বর্ণালীর ছবি তোলা তারাও অভিজিৎ৷ প্যারালাক্স বা লম্বন পদ্ধতিতে দূরত্ব মাপা অন্যতম প্রথম তারাও এটি৷ খৃষ্টপূর্ব ১২,০০০ সালে তারাটি ছিল মেরু বা ধ্রুবতারা৷ আবারও হবে ১৩,৭২৭ বছর পরে৷ কারণ আর কিছুই নয়। পৃথিবীর মেরুরু আবর্তন৷ ঘুরন্ত লাটিমের মতো পৃথিবীও ঘুরতে ঘুরতে অক্ষ পাল্টায়৷ 





অভিজিৎ নক্ষত্রের বয়স সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ মজার ব্যাপার হলো এর জীবনকাল বাকিও আছে সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ এর কারণ অভিজিৎ সূর্যের ২.১ গুণ ভারী৷ ভারী নক্ষত্রদের জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এ কারণেই সূর্যের চেয়ে আগে প্রধান ক্রম দশা পার করবে অভিজিৎ৷ সবমিলিয়ে প্রধান ক্রম দশা প্রায় একশ কোটি বছর৷  তারাটা সেকেন্ডে ২৩৬ কিলোমিটার বেগে নিজের অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। ১২.৫ ঘণ্টায় একবার পুরোটা সম্পূর্ণ ঘোরা হয়ে যায়৷ এ কারণে  স্বাভাবিকভাবেই বিষুব অঞ্চল অনেকটা ফোলা। অভিজিৎ বিষম তারা। মানে উজ্জ্বলতা সবসময় এক থাকে না। 

সামার ট্রায়াঙ্গল তারানকশার অন্যতম তারা অভিজিৎ


বৈজ্ঞানিক নাম আলফা লাইরি৷ সাধারণত মণ্ডলের উজ্জ্বলতম তারার নাম হয় আলফা। সে হিসেবেই এই নাম৷ ইংরেজি নাম ভেগা (Vega)। শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ ওয়াকি থেকে৷ যার অর্থ পড়ন্ত বা অবতরণকারী (ঈগল)৷ ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি তারাটার নাম ভেগা রাখে৷ বাংলা নামটি এসেছে ভগবত পুরাণ থেকে। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, নক্ষত্রদের মধ্যে তিনি হলেন অভিজিৎ৷ 


উত্তর গোলার্ধের আকাশে সহজেই দেখা যায়। দেখার সবচেয়ে ভাল সময় জুলাই-আগস্ট। আগস্টে রাত নয়টার দিকে প্রায় ঠিক মাথার ওপর থাকে তারাটা৷ সুপরিচিত তারানকশা সামার ট্রায়াঙ্গলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা অভিজিৎ৷ তিন তারা মিলে তৈরি করেছে একটি সমকোণ৷ আর সমকোণের শীর্ষেই আছে অভিজিৎ৷ পশ্চিম-উত্তর দিকে একটু গেলেই পাওয়া যাবে সপ্তর্ষি৷ একটু চেষ্টাতেই তাই অভিজিৎকে চিনে নেওয়া যাবে৷ আবার সপ্তর্ষি দিয়েও সহজেই একে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ অভিজিতের বিষুব লম্ব +৩৮.৭৮। ফলে বাংলাদেশ থেকে দেখলে মাথার সোজা উপর থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রি উত্তর দিয়ে তারাটা রাতের আকাশে পশ্চিমে যেতে থাকে। দক্ষিণে সর্বোচ্চ ৫১ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা সম্ভব। তার দক্ষিণে গেলে আর দেখা যাবে না একে। অ্যান্টার্কটিকা বা এমনকি চিলি থেকেও তারাটা দেখা যাবে না। 



সপ্তর্ষি ও ধ্রুবতারা দিয়ে অভিজিৎ খুঁজে নিতে পারেন

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

আইনস্টাইন ক্রস বুঝতে হলে মহাকর্ষ বক্রতা সম্পর্কে জানা চাই। ভারী বস্তু এর আশেপাশের স্থানকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে বস্তুটা আচরণ করে লেন্সের মতো। বস্তুর পেছন থাকা জিনিসের আলোও বাঁক খেয়ে পর্যবেক্ষকের চোখে আসতে পারে৷ 


হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চোখে আইনস্টাইন ক্রস


মহাকর্ষ কীভাবে আলো বাঁকায়?


অনেকসময় তো একই বস্তুর ছবি ভারী বস্তুর চারদিক দিয়েই বেঁকে চারটি আলাদা বিম্ব (ছবি) তৈরি করতে পারে। এমন এক বিখ্যাত ছবির নামই আইনস্টান ক্রস। জিনিসটা আসলে একটি কোয়াসারের ছবি। পৃথিবী থেকে দেখতে হুকরা'স লেন্স ছায়াপথের পেছনে এর অবস্থান। ভারী ছায়াপথটা কোয়াসারটার আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে চারপাশে এর চারটা ছবি পাওয়া যায়। কেন্দ্রেও ঝাপসা একটি ছবি আছে৷ দেখে মনে হবে, চারটা আলাদা বস্তুর ছবি। অথচ আসলে একটাই জিনিস৷ 

১৯৮৫ সালে জন হুকরা এটা আবিষ্কার করেন। অবশ্য সেসময় চারটি ছবির অস্তিত্ব বোঝা যায়নি। শুধু ছায়াপথের পেছনের কোয়াসার থাকার কথা জানা গিয়েছিল৷ কোয়াসারটার নাম খটমটে৷ কিউ২২৩৭+০৩০।আইনস্টাইন ক্রস বলতে সাধারণত এই বস্তুটাকেই বোঝানো হয়।  তবে একই রকমের আরও ছবিও পরে আবিষ্কৃত হয়েছে৷ অনেকসময় আবার ক্রসের বদলে তৈরি হয় বলয়। এর নাম আইনস্টাইন বলয়। 


কোয়াসারটা পৃথিবী থেকে ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত৷ লেন্সিং ছায়াপথের দূরত্ব ৪০ কোটি আলোকবর্ষপেগাসাস তারামণ্ডলে এর অবস্থান৷ 

Category: articles

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। আমরা এমনটাই বলি। বলি বৃহস্পতি, শনিদের ক্ষেত্রেও। তবে আসলে কথাটায় খানিক ঘাপলা আছে। কী সেই ঘাপলা? চলুন, জেনে নেই। 


কাছাকাছির ভরের দুই বস্তুর প্রদক্ষিণ। দুটি বস্তুই + চিহ্নিত জায়গাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।


পৃথিবী হলো গ্রহ। আর সূর্য নক্ষত্র। গ্রহ ঘোরে নক্ষত্রের চারপাশে। সেজন্যেই তো আমরা বলি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। আসলে দুজনেই প্রদক্ষিণ করে তাদের যৌথ ভরকেন্দ্রকে। জায়গাটার গালভরা নাম ব্যারিসেন্টার। মজার ব্যাপার হলো, ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের বাইরের গ্রহ খোঁজার ব্যাপারেও দারুণ কাজে লাগে! 


তো, এই ব্যারিকেন্দ্র বা ভরকেন্দ্র আসলে কী? প্রত্যেক বস্তুর ভরের একটা কেন্দ্র আছে। এটা হলো বস্তুটার উপাদান পদার্থের একদম নিখুঁত কেন্দ্র। ভরকেন্দ্র বিন্দুতে বস্তুটাকে সঠিকভাবে ব্যালেন্স করে (ভারসাম্যে) রাখা যায়। অনেকসময় ভরকেন্দ্র থাকে বস্তুর ঠিক কেন্দ্রে। যেমন ধরুন একটা রুলার। এর মাঝ বরাবর এখানে-ওখানে কয়েকবার আঙ্গুল রেখে ধরে রাখার চেষ্টা করুন। পেয়ে যাবেন সে জায়গা, যেখানে আঙ্গুল রাখলে রুলার পড়ে যাবে না। এটাই রুলারের ভরকেন্দ্র। অপর নাম অভিকর্ষ কেন্দ্র। 


অনেকসময় ভরকেন্দ্র আর বস্তুর কেন্দ্র একই জায়গায় হয় না। কেন? ধরুন ২ ও ৪ দুটি সংখ্যা। এদের গড় ৩। যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে বা কেন্দ্রে আছে। কিন্তু ২, ৪, ৪ সংখ্যা তিনটির গড়? ৩.৩৩, যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে নয়। সংখ্যার অসম বিন্যাসে পাল্টে গেছে কেন্দ্র। ৪ এর সংখ্যা ২ এর চেয়ে বেশি হওয়ায় গড় ৪ এর দিকে সরে এসেছে। ভরের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে। ভর একেকদিকে একেক রকম হলে সরে যায় কেন্দ্র। যেমন ধরুন হাতুড়ি। এর প্রায় সবটুকু ভর এক প্রান্তে আছে। ফলে ভরকেন্দ্রও ভারী প্রান্তটির কাছাকাছি। বস্তুর সবচেয়ে বেশি ভর যেদিকটায় থাকে, ভরকেন্দ্রও তার কাছাকাছি থাকে। 


এক নজরে সূর্য


সূর্য ও পৃথিবীরও একটি ভরকেন্দ্র বা ব্যারিসেন্টার আছে। তবে সূর্যের ভর পৃথিবীর তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সৌরজগতের ৯৯.৮৬ ভাগ। সূর্য তাই হাতুড়ির ভারী মাথার মতো বা তার চেয়ে প্রভাবশালী। এর ফলে সূর্য ও পৃথিবীর ব্যারিসেন্টার সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি। তাও ভেতরেই। বৃহস্পতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড়। ভর ৩১৮ গুন। ফলে সূর্য ও বৃহস্পতির ব্যারিকেন্দ্র সূর্যের ভেতরে নয়। কিছুটা বাইরে। ফলে শুধু এই দুটি বস্তুকে আলাদা করে দেখলে ব্যাপারটাকে বাইনারি স্টার বা জোড়াতারার মতো মনে হবে। মানে বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না। দুজনেই দুজনকে কেন্দ্র করে ঘুরছে! 


বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে না!


পুরো সৌরজগতেরও একটি ব্যারিকেন্দ্র আছে। সূর্য, পৃথিবী ও সৌরজগতের গ্রহ ও অন্যসব বস্তু সেই ব্যারিকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। এই ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের সবগুলো বস্তুর সমন্বিত ভর ধারণ করে আছে৷ তবে এই ভরকেন্দ্র হাতুড়ির মতো নয়। নয় স্থির কোনো জায়গায়। ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ সব বস্তু এখানে গতিশীল। ব্যারিকেন্দ্র হতে পারে সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছে। আবার হতে পারে সৌরপৃষ্ঠেরও বাইরে৷ 


ব্যারিকেন্দ্র কীভাবে গ্রহ খুঁজে পেতে কাজে আসে তা এখন বোঝা যাচ্ছে। নক্ষত্রের কোনো গ্রহ থাকলে এর ব্যারিকেন্দ্র দোল খেতে থাকে এদিক-সেদিক। মাতাল মানুষ যেমন এদিক-সেদিক ঢুলতে থাকে। সৌরজগতের বাইরের গ্রহদেরকে দেখে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। নক্ষত্রের আলোর ঝলকে এদের মৃদু প্রতিফলিত আলো হারিয়ে যায়। তবে নক্ষত্রের দোল খাওয়া দেখে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আর এভাবে প্রচুর বহির্গ্রহ আবিষ্কার করাও হয়েছে। সংখ্যাটাও কম নয়, সব মিলিয়ে ১০৩৬। আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সফল কৌশল এটি। সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরা গ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমন।

অতিক্রমন দেখে পাওয়া গেছে প্রায় চার হাজার গ্রহ। সে গল্প বিস্তারিত আরেকদিন শোনাব ইনশাআল্লাহ। 


সূত্র: নাসা স্পেসপ্লেস 


* লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরআলো ম্যাগাজিনে প্রকাশিত। 


Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩

নোভা। ল্যাটিন এই কথাটার অর্থ নতুন তারা। শুনলে মনে হবে নতুন জন্ম নেওয়া নক্ষত্রের নাম নোভা। অথচ আসলে তা নয়। ভুল নাম থেকে যে জ্যোতির্বিজ্ঞানও মুক্ত নয়, তার আরেক উদাহরণ এই নোভা। ব্ল্যাকহোলের কথাই ধরুন। জিনিসটা না ব্ল্যাক না হোল। কালোও না। নেই কোনো গর্তও। তাও নাম ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর৷


নোভা নক্ষত্রের ছবি


এ তো গেল অর্থ। সংজ্ঞায়ও আছে গড়বড়৷ বলা হয় নোভা এমন নক্ষত্র যার উজ্জ্বলতা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়৷ তার মানে নোভা নক্ষত্র খুব অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷ বাস্তবে নোভার গল্পটা আরেকটু জটিল৷ অনেকগুলো ব্যাপার ঠিকঠাক কাজ করলে তবেই পাওয়া যায় নোভা৷

আধুনিক যন্ত্রপাতি আসার আগে দূর আকাশে কথা জানা ছিল জ্যোতির্বিদদের৷ তখন থেকেই নতুন তারাকে তাঁরা নোভা বলেন৷ মানে নতুন বা নবতারা৷ নামটা খানিক ভুল। এই তারাগুলো মোটেও নতুন নয়। ছিল সেখানে আগে থেকেই৷ হ্যাঁ, দেখার মতো যথেষ্ট উজ্জ্বল ছিল না এই যা।

নোভা পাওয়ার জন্য একটা তারা হলে হবে না। লাগবে দুটি তারা। হতে হবে সূর্যের মতো। সূর্যের মতো থাকবে প্রধান ক্রম দশায়। মানে হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাবে৷ এ দুই তারা হবে বাইনারি বা জোড়াতারা। একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরবে। বলা ভাল মিলিত ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরবে।

কয়েকশো কোটি বছর পরের কথা৷ একটি নক্ষত্রের কোর বা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে৷ বাইরের অংশ বড় হয়ে নক্ষত্রটা হবে লোহিত দানব৷ পরে ভেতরের অংশ মহাকর্ষের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ছোট হয়ে হবে শ্বেত বামন। কিছু সময় পরে আরেকটা নক্ষত্রও লোহিত দানব হবে৷

এবার আমাদের দুটি তারার একটি লোহিত দানব। আরেকটি শ্বেত বামন৷ ঘুরছে একে অপরকে ঘিরে৷ শ্বেত বামন তারাটা দেখবে আয়তনে বড় পাশের তারাটার বাইরের দিকে এখনও হাইড্রোজেন আছে৷ এটি মহাকর্ষ দিয়ে ছোঁ মেরে লোহিত দানব থেকে জ্বালানি ও পদার্থ ছিনতাই করবে৷ বিশেষ করে হাইড্রোজেন৷ লোহিত দানবের হাইড্রোজেন এবার জমা হতে থাকবে শ্বেত বামনের চারপাশে৷ আমদানিকৃত পদার্থে ঢেকে যাবে বামন নক্ষত্রটা৷

পদার্থ জমা হতে হতে ও বেড়ে সঙ্কুচিত হয়ে তাপমাত্রা বাড়বে৷ তাপমাত্রা প্রায় ২০ হাজার কেলভিন হলে এখানেও শুরু হবে ফিউশন। প্রধান ক্রম অবস্থায় নক্ষত্রের কোরে যেমন হত। হাইড্রোজেনরা মিলিত হয়ে হিলিয়াম হবে৷ বাইরের দিকের এ পদার্থ জ্বলে জ্বলে নিজেকেই বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়৷ এ সময়ই তৈরি হয় উজ্জ্বল আলো৷এরই নাম নোভা। এ ঘটনা ঘটতে মাত্র কয়েক মাস সময় লাগে৷


সঙ্গী তারা থেকে জ্বালানি নিচ্ছে নোভা তারা



আগে যে তারাকে দেখতে টেলিস্কোপ লাগত, এখন তাকে দেখা যায় খালি চোখেই৷ কিছু কিছু তারাটা কাজটা করে নিয়মিত৷ একশো বছরের মধ্যে কয়েকবার উজ্জ্বল ও মলিন হয়৷ অন্যদের আরও বেশি সময় লাগে। তবে আধুনিক যন্ত্র আসার পরে একবারের বেশি দেখা এখনও সম্ভব হয়নি৷ জ্যোতির্বিদদের অনুমান বলছে, আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথে বছরে প্রায় ৪০ নোভা হয়৷ দেখা যায় অন্য ছায়াপথেও৷

১৫৭২ সালে টাইকো ব্রাহে নোভা শব্দটা প্রথম ব্যবহার করেন৷ঐ বছর তিনি আসলে টেলিস্কোপে দেখেছিলেন একটা সুপারনোভা৷ এখন যার নাম এসএন ১৫৭২৷ এসএন মানে সুপারনোভা৷ এটা দেখা গিয়েছিল উত্তর আকাশের ক্যাসিওপিয়া মণ্ডলে৷ সূর্যের প্রায় দশ গুণ ভরের তারকারা জীবনের শেষ ভাগে সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়ে নক্ষত্র ঠাণ্ডা হয়। নক্ষত্রের বহির্মুখী চাপ কমে। এতদিন যে চাপ মহাকর্ষকে ধরে রেখেছিল। চাপ নেই বলে এবার মহাকর্ষ জয়ী হয়। নক্ষত্র যায় গুটিয়ে। পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় ভারী জিনিসের আকার হয়ে যায় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। কাজটা হতে সময় লাগে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মতো। এই দ্রুত ঘটনাই একটি শক ওয়েভ তৈরি করে। বিস্ফোরিত হয় নক্ষত্রের বাইরের অঞ্চল। এ ধরনের বিস্ফোরণের নাম টাইপ টু সুপারনোভা।

টাইকো ব্রাহে ১৫৭২ সালে এমন বিস্ফোরণ দেখে ভাবলেন এ মনে হয় এক নতুন তারা। নাম দিলেন নোভা স্টেলা। বাংলায় যার অর্থ নবতারা। নামটা জ্যোতির্বিদদের মনে ধরে। আকাশে উজ্জ্বল কিছু দেখা গেলেই অনেকে নাম দিচ্ছিলেন নোভা।

নোভা বিস্ফোরণের শ্বেত বামনে জড় হওয়া মাত্র পাঁচ ভাগ পদার্থ ফিউশনে খরচ হয়। কিছু নিক্ষিপ্ত হয় মহাশূন্যে। ফিউশনের উপজাত হিসেবে কিছু আবার জমা হয় পৃষ্ঠে। কয়েক লক্ষ বছরে শ্বেত বামন প্রচুর পদার্থ জমা করে ফেলে। শুরু হয় কার্বন ফিউশন। শ্বেত বামনটার ভর সূর্যের ১.৪৪ গুণ হলে নক্ষত্রটা ঢেকে যায় ফিউশনের চাদরে। জমা হয় প্রচুর শক্তি। সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘটে যায় বিস্ফোরণ। একে তখন আর নোভা বলে না। বলে সুপারনোভা। বিশেষ নাম টাইপ ওয়ান-এ সুপারনোভা।

তাহলে নোভা হলো মৃত তারার সঙ্গী তারা থেকে চুরি করা পদার্থ নিয়ে ফিউশন ঘটানোর ফলে সৃষ্ট বিস্ফোরণ। আর প্রচুর ভর জমা হয়ে শেষের বড় বিস্ফোরণটার নাম টাইপ ওয়ান-এ সুপারনোভা।
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩

১৬৩৯ সালের এক মেঘলা বিকেল। সে বিকেলে যুগান্তকারী এক কাজ করে ফেললেন ইংরেজ জ্যোতির্বিদ জেরেমায়া হরকস। কী সেই কাজ? আর এই মানুষটা-ই বা কে? নামটা অপরিচিত লাগছে। না চেনার একটা কারণ আমরা সোনার তরীর ফসল নিয়ে মেতে থাকি। ভুলে যাই সোনার ফসলের চাষীকে। 


 জেরেমায়া হরকস:  জ্যোতির্বিদ্যার অচেনা নায়ক 

সেদিন বিকেলে এই মানুষটি নির্ভুলভাবে পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব বের করেন। এছাড়াও পূর্বাভাস প্রদান করেন শুক্রগ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমন। আমরা জানি, চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে চলে এলে পৃথিবী থেকে সূর্যকে দেখা যায় না। সূর্য ঢাকা পড়ে যায় চন্দ্রের পেছনে। এটাই সূর্যগ্রহণ। একইভাবে শুক্র গ্রহ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে এলে হয় শুক্রের অতিক্রমন। পৃথিবী থেকে চাঁদের তুলনায় শুক্র অনেক দূরে। ফলে আসলে বড় হলেও শুক্রকে আকাশে দেখা যায় ছোট। তাই শুক্র সূর্যকে চাঁদের মতো ঢেকে দিতে পারে না। তবে সূর্যের আলোকে বাধাগ্রস্থ একটু করেই। সেটাই সূর্যের গায়ে কালো দাগ হিসেবে দেখা যায়। এটাই শুক্রের অতিক্রমন বা ট্রানজিট। ব্যাপারটা ঘটে অন্য গ্রহের বেলায়ও।


চাঁদ কত দূরে আছে? 


শুক্র গ্রহের গল্প 


এমন একটি সূক্ষ্ম ব্যাপার সঠিকভাবে অনুমান করেন হরকস। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়। ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে। আর এরই মাধ্যমে নির্মাণ হয় পরবর্তীতে নিউটনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর। 


মহাবিশ্বের কেন্দ্র কোথায়?


হরকসের আগে মহাবিশ্বের পরিধি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। শুক্র গ্রহের অতিক্রমন নিয়ে হরকসের প্রবন্ধ অল্পের জন্যে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। গৃহযুদ্ধ ও লন্ডনের মহাঅগ্নি থেকে বেঁচে যায় শুধু ল্যাটিন ভাষায় লিখিত একটি পাণ্ডুলিপি। 


এ প্রবন্ধ ২০ বছর ধরে জ্যোতির্বিদদের হাত ঘুরছিল। পরে ১৬৬২ সালে এক পোলিশ জ্যোতির্বিদের বইয়ের পরিশিষ্টে প্রকাশিত হয়। কিন্তু নিউটনের হাতে আসার আগে কেউ এই প্রবন্ধের গুরুত্ব অনুভব করতে পারেনি। 


১৬৩৯ সালে হোরকসের বয়স ছিল মাত্র কুড়ি বছর। এ অল্প বয়সেই তিনি এক বড় গাণিতিক সাফল্য অর্জন করেন। জোহানেস কেপলারের মতো জ্যোতির্বিদের হিসাবের ভুল বের করেন। করেন সংশোধনও। কেপলার বলেছিলেন ১৬৩৯ সালে অল্পের জন্য অতিক্রমন হবে না। 


হরকসের সংশোধনী থেকে দেখা যায়, শুক্র গ্রহের পরবর্তী অতিক্রমন কয়েক দিনের মধ্যেই হতে যাচ্ছে। আর পরের অতিক্রমন ১৭৬১ সালের আগে হবে না। হরকস ছাড়া আর কেউ এটা বলতে পারেনি। তাঁর এক বন্ধু ছিল শখের জ্যোতির্বিদ ও কাপড়ের ব্যবসায়ী। হরকস ছুটে যান তার কাছে। ম্যানচেস্টারের এ ভদ্রলোকের নাম উইলিয়াম ক্র‍্যাবট্রি। 


শুক্রের অতিক্রমন দেখতে দুজনে দুই জায়গায় ছুটে যান। দুই আলাদা স্থান থেকে পর্যবেক্ষণ করেন সূর্যের গায়ে শুক্রের ছায়ার চিহ্ন। এর মাধ্যমে জ্যোতির্বিদ্যার এমন কিছু পরিমাপ সম্ভব হয়ে ওঠে, যা অন্যদের নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছিল। আগে সূর্যের দূরত্ব বের করতে হলে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে একটি বস্তুকে স্থির ধরে ত্রিভুজ বানানো লাগত। 


এ সময় হরকস একটি সরল হেলিওস্কোপ যন্ত্র বানান। এটা দিয়ে সূর্যের আলোকে টেলিস্কোপের ভেতর দিয়ে ফোকাস (মিলিত) করে সমতল পৃষ্ঠে দেখা যেত। এতে করে সূর্যের বিম্ব নিরাপদে দেখা যেত। পর্যবেক্ষণ থেকে হরকস শুক্রের আকারও ভালভাবে অনুমান করেন৷ আগে শুক্রকে পৃথিবীর চেয়ে বড় অ আরও কাছে ভাবা হত। তিনি পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব বের করেছিলেন ৯ কোটি ৫০ লক্ষ কিলোমিটার। সঠিক দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার হলেও সে সময়ের তুলনায় সেটা ছিল অনেক ভাল হিসাব। 


প্রায় ১৪-১৫ বছর বয়সে তিনি ল্যাংকাশায়ার থেকে ক্যামব্রিজে আসতেন পায়ে হেঁটে। শুধুই নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের জন্য। বাবা ঘড়ির কাজ করতেন। আর হরকস ক্যামব্রিজে পড়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের কিছু কাজ করতেন। সহপাঠীদের কক্ষ পরিস্কার করাসহ বিভিন্ন কাজ করে দিতেন বেতনের টাকা যোগাড় করতে। ক্যামব্রিজের বিভিন্ন কলেজ থেকে বই ধার নিতেন। শেষ পর্যন্ত ডিগ্রি না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। সম্ভবত পড়ার মতো বই শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্যামব্রিজে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। 


পরিবারের লোকেরা ঘড়ির কাজ করত বলে জ্যোতির্বিদ্যার প্রাথমিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে পরিবারের অন্যদের সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি। দিনে পরিবারকে ঘড়ির কাজে সাহায্য করতেন। রাতে বাবা ও চাচারা তাঁকে যন্ত্র বানাতে সহায়তা করতেন। তরুণা বয়সেই তিনি তার সময়ে প্রাপ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের সব জ্ঞান অর্জন করেন। সেগুলোর ভুলও বের করেন। সতের বছর বয়স থেকেই নতুন গবেষণার জন্ম দিতে থাকেন। 


অল্প বয়সেই তিনি গভীর গাণিতিক জ্ঞান অর্জন করেন। সাধারণ টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণের সাথে কাজে লাগান গাণিতিক বিদ্যা। এরপর আসেন এমন উপসংহারে যা প্রচলিত বৈজ্ঞানিক ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে গিয়ে মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে পৃথিবীকে তুলে নেওয়া সহজ কাজ ছিল না। 


হরকসই প্রথম দেখাবন, চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে। তিনি এ থেকে অনুমান করেন, ধূমকেতুও একই পথে চলবে। চাঁদের কক্ষপথ তৈরিতে চাঁদ ও পৃথিবীর ভূমিকার কথা তিনি তুলে আনেন। নিউটন প্রিন্সিপিয়ায় বলেছিলেনও, তাঁর চাঁদের গতিপথ নির্ণয়ে হরকসের অবদান আছে৷ শেষ জীবনে হরকস জোয়ার-ভাটায় চাঁদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করার কাজ করছিলেন। 


হরকস খ্যাতি ও স্বীকৃতি না পাবার অন্যতম কারণ অল্প বয়সে মৃত্যু। এর ফলে তিনি নিজের গবেষণা প্রকাশ ও প্রচার করার সুযোগ পাননি। ফলে অন্য জ্যোতির্বিদরা তাঁর গবেষণার কথা জানতেই পারেনি। আর সে কারণেই তিনি কেপলার ও গ্যালিলিওর মতো সাধারণ মানুষের প্রশংসা পাননি। যদিও তিনি কোপার্নিকাস, টাইকো ব্রাহে, গ্যালিলিও ও কেপলারদের সাথে নিউটনের সেতুবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। 


তবে জ্যোতির্বিদ্যায় হরকস এখন অচেনা এক নাম। জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর অবদানের কথাও জানেন অল্পসংখ্যক মানুষ। আগে এর জন্য আমি আমাদের নিজেদের দুষলেও এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল তাঁর স্বল্পায়ু। ভদ্রলোক বেঁচেছিলেন মাত্র ২২ বছর। জীবদ্দশায় তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়নি। তাঁর অসামান্য গাণিতিক অবদান তাই পায়নি বহুল পরিচিতি ও স্বীকৃতি। ১৬৮৭ সালে নিউটন প্রিন্সিপিয়ায় হরকসের পর্যবেক্ষণের অবদানের কথা স্বীকার করেন। হরকসের পর্যবেক্ষণ ছাড়া নিউটনের পক্ষে মহাকর্ষের কাজ শেষ করা ছিল অসম্ভব। 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

লেখাটি ইতোপূর্বে বিজ্ঞানচিন্তার মে, ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত। 

Category: articles

রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

আকাশের এলাকায় দুই ধরনের নকশা খুব দর্শনীয়। এক হলো তারামণ্ডল৷ যা পুরো আকাশকে ৮৮টি অঞ্চলে ভাগ করেছে। সব তারা, ছায়াপথ বা দূর আকাশে জিনিস কোনো না কোনো মণ্ডলে থাকবে।


দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড তারানকশা 



আরেকটি মজার জিনিস হলো তারানকশা। বিভিন্ন তারার সংমিশ্রণে তৈরি তারার সুন্দর নকশা। এমনই একটি নকশার নাম দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড। ডায়ামন্ড বা হীরার মতোই এর চারটি কোণা। বলাই বাহুল্য, চার কোণায় আছে চারটি উজ্জ্বল তারা৷

তারামণ্ডলের পরিচয়


তারানকশা কী?


এই নকশাটা মে-জুন মাস ও এর আগে পরে ভাল দেখা যায়। ডায়ামণ্ডের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা স্বাতী। রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের এক নম্বর উজ্জ্বল। জুনের শুরুতে রাত নয়টার দিকে ঠিক মাথার উপর থাকে। আরেকটি তারা চিত্রা (spica)। উজ্জ্বলতায় ক্রম ১৫। কন্যারাশির সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷

অপর দুই তারার একটি ডেনেবোলা। সিংহরাশির দ্বিতীয় নম্বর উজ্জ্বল তারা। অবস্থান কল্পিত সিংহের লেজে। আর চতুর্থ তারার নাম কর ক্যারোলি। সারমেয়যুগল মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা।

খুঁজে পাওয়া একদম সোজা। স্বাতী ও চিত্রাকে পাওয়া যাবে সপ্তর্ষীকে কাজে লাগিয়ে। 



গ্রেট ডায়ামন্ড আকারে সপ্তর্ষির চেয়ে বড়। এর দক্ষিণের তিন তারা আবার আলাদা আরেকটি নকশা তৈরি করেছে। নাম বসন্ত ত্রিভুজ। মানে স্বাতী, চিত্রা ও ডেনেবোলা। ডেনেবোলার জায়গায় অনেকসময় সিংহমণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা রেগুলাসকে বসানো হয়।
Category: articles

আমরা জানি, সূর্যের আলোই পৃথিবীর আকাশকে আলোকিত করে। সূর্যের আলো ৭টি আলোর সমন্বয়ে তৈরি। বেগুনি নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এক কথায় বেনীআসহকলা। কিন্তু সব রঙ ছাড়িয়ে আমরা আকাশ দেখি নীল। কারণ হিসেবে বলা হয়, নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম। তাই বায়ুকণায় ধাক্কা লেগে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে।  আলোর এ বিক্ষেপণের কারণে সবদিকে নীল দেখি আমরা। 


সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে আকাশের দৃশ্য 

এখন, কথা হলো দৃশ্যমান সাত আলোর বর্ণালীতে সবচেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বেগুনি। নীল নয়। আমাদের না দেখা অনেক আলো আছে। এই যেমন গামা, অবলোহিত ইত্যাদি। তবে বেগুনি আলো তো আমাদের চোখে দৃশ্যমান। আর এর বিক্ষেপণ বা বিচ্ছুরণ সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা। নীল আলোর চেয়েও বেশি। তাহলে তো আকাশের সবদিক বেগুনি আলোয় ভরপুর হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু কেন বেগুনি না হয়ে নীল হলো?


চিত্র ১: দৃশ্যমান বর্ণালী

ব্যাপারটা কয়েকটি কারণে হয়। প্রথমত, সূর্য থেকে নীলের সাথে বেগুনি আলোও বের হয় তা ঠিক। তবে সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর নির্গমন একই হারে হয় না। সূর্য থেকে আসা আলোকশক্তির খুব সামান্য একটি অংশই বেগুনি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের। আরেকটি কারণ হলো, বায়ুমণ্ডল বেগুনি আলোকে শোষণ করে নেয়। এই কারণেই আমরা সূর্যের অদৃশ্য ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও রক্ষা পাই। আর বেগুনি আলো দেখিও কম। 


তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়। রংধনুতে আমরা কিন্তু নীল বা আসমানীর পাশাপাশি বেগুনি রংও দেখি। 


আকাশকে বেগুনি না দেখানোর আছে জীববৈজ্ঞানিক কারণও। আমাদের চোখ বেগুনি আলোর প্রতি অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল। আমাদের চোখের রেটিনায় তিন ধরনের কালার রিসেপ্টর বা বর্ণগ্রাহক আছে। এগুলোকে বলে কোন। জ্যামিতির কোণ নয়। আকৃতি কোন বা শঙ্কুর মতো। কলার মোচার নিচেরটা দেখতে যেমন। 


তিন ধরনের কোন কোষের নাম লাল, নীল ও সবুজ। এ নাম দেওয়ার কারণ কোষগুলো এই আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সাড়া দেয়। আমরা কী রং দেখব তা নির্ভর করে এই কোষগুলোর উদ্দীপনার ওপর। 



ছবি ২: তিন ধরনের আলোর প্রতিক্রিয়া

লাল কোন কোষ আকাশের লাল আলো দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়। পাশাপাশি একটু কম মাত্রায় উদ্দীপ্ত হয় কমলা ও হলুদ রং দ্বারাও। সবুজ কোন কোষ হলুদ আলোর প্রতিও সাড়া দেয়। আরেকটু বেশি মাত্রায় উদ্দীপ্ত হয় সবুজ ও নীল-সবুজ আলো দিয়ে। নীল কোন কোষ মূলত নীল ও এর আশেপাশের কিছু রংয়ের আলোর প্রতি সাড়া দেয়। এ আলোগুলো খুব বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। বর্ণালীতে গাঢ় নীল ও বেগুনি না থাকলে আকাশ নীলের সাথে হালকা সবুজ হত। 


গাঢ় নীল ও বেগুনি রং সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। এ দুই রং লাল কোন কোষের পাশাপাশি নীল কোনকেও উদ্দীপ্ত করে। এ কারণেই এদেরকে নীল ও সাথে মৃদু লাল আভা দেখা যায়। সার কথা হলো, সবুজ ও লাল কোন কোষ আকাশের আলোয় প্রায় সমান সাড়া দেয়। তবে নীল কোন সাড়া দেয় এদের চেয়ে অনেক বেশি তীব্রভাবে। এ কারণেই আকাশকে মলিন নীল দেখায়। বেগুনি দেখায় না। 


আর কোন কোষের এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই ক্যামেরা কিন্তু আকাশকে আমাদের চেয়ে ভিন্ন দেখে। ডিজিটাল ক্যামেরায় আকাশকে কিছুটা রক্তবর্ণের বা গাঢ় নীল দেখা যায়৷ পাহাড় বা বিমান থেকে তোলা ছবিতে ব্যাপারটা আরও বেশি স্পষ্ট। ক্যামেরার চোখ বেগুনি আলোর প্রতি মানুষের চোখের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। এ কারণে ক্যামেরায় ইউভি বা অতিবেগুনি ফিল্টার থাকে। 


** নীল ও আকাশী রং নিয়ে বাংলা ভাষায় কিছু বিভ্রান্তি  আছে৷ আমরা সাধারণত যাকে নীল বলি সেটা আসলে আসমানী। যেমন আকাশ আসলে নীল নয়, আসমানী। নীল রংয়ের প্রকৃত কিছু উদাহরণ হলো ব্লুবেরি, কালো আঙ্গুর বা বেগুন। ইংরেজি blue এর বাংলা আসমানী। আর নীলের ইংরেজি indigo। আকাশের রং হলো ব্লু বা আসমানী। ইন্ডিগো বা নীল নয়। তবে লেখায় বোঝার সুবিদার্থে আসমানীকে নীল লিখেছি। মানে আকাশকে আসমানী না বলে নীল ধরে নিয়েছি। আর নীলকে লিখেছি গাঢ় নীল। 


লেখাটি ইতোপূর্বে দৈনিক বাংলা পত্রিকার বিজ্ঞান পাতা ইউরেকায় প্রকাশিত। 

সূত্র

  1. http://www.atmo.arizona.edu/students/courselinks/fall14/atmo170a1s2/lecture_notes/scattering/why_not_violet.html
  2. https://math.ucr.edu/home/baez/physics/General/BlueSky/blue_sky.html
  3. https://www.quora.com/Why-isnt-the-sky-violet-since-violet-light-has-an-even-shorter-wavelength

Category: articles

শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩

উদয় বা অস্তের কাছাকাছি সময়ে চাঁদকে বড় দেখায়। তখন কি চাঁদ তাহলে পৃথিবীর কাছে চলে আসে? চাঁদ পৃথিবীকে ঘুরে আসতে প্রায় ২৯ দিন লাগে। পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। গোলাকার নয়। ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব বাড়ে-কমে। ২৯ দিনে চাঁদ মাত্র একবার করে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে ও দূরে যায়। কিন্তু অথচ উদয়-অস্ত তো প্রায় প্রতি ২৪ ঘন্টায় একবার হয়। তার মানে দিগন্তের চাঁদ বড় হওয়ার জন্যে দূরত্ব দায়ী নয়।  




পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত?


চাঁদ কত বড়?


একাধিক উপায়ে প্রমাণ করা যায়, দিগন্তের উপরের চাঁদ আর মাথার উপরের চাঁদ আসলে একই সমান। ব্যাপারটা খুব সহজেই প্রমাণ করা যায়। পূর্ণিমার সময় হাতকে লম্বা করে প্রসারিত করে তর্জনীকে চাঁদ বরাবর রাখুন। দেখবেন আঙ্গুলের মাথা চাঁদকে পুরোপুরি ঢেকে দিচ্ছে। কাজটা করুন দুইবার। একবার চাঁদ দিগন্তের কাছে থাকতে। আবার মাথার উপর৷ দেখবেন চাঁদের আকার একই আছে। দুইবারই আঙ্গুলের মাথা চাঁদকে ঢেকে দিচ্ছে। আবার ছবি তুলেও ব্যাপারটা বোঝা যায়। ক্যামেরার জুম একই রেখে দুই অবস্থানের চাঁদে ছবি তুললেই ব্যাপারটা দেখা যায়। তাহলে দিগন্তে বড় দেখানোর ব্যাখ্যা কী?


পূর্ণিমা কীভাবে হয়?


আসলে সঠিক ব্যাখ্যা আজো জানি না আমরা। যদিও প্রচলিত কিছু ব্যাখ্যা আছে। তবে কোনোটাই অকাট্য নয়।

আমাদের ব্রেন কি ব্যাপারটা বুঝতে ভুল করে? আরও অনেক ব্যাপারেই ব্রেন এমন ভুল করে। তা ঠিক আছে। আমাদের ব্রেন দূরের ও কাছের জিনিসকে আলাদাভাবে দেখে। দিগন্তের কাছের বস্তু আসলে কত দূরে থাকা উচিত সেটা ব্রেন নিজের মতো করে ভেবে নেয়। সম্ভবত, আমাদের ব্রেন জানে না, দিগন্তের কাছে থাকলে চাঁদের দূরত্ব কমে যায় না।


আমাদের ব্রেনের ভুল করার কিছু জীববৈজ্ঞানিক কারণও আছে। বহু লক্ষ বছর ধরে মানবমস্তিষ্ক ক্রমেই উন্নত হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা দলবদ্ধ হয়ে থাকত ও শিকার করত। এ করতে গিয়ে মাথায় জমা হয়েছে কিছু সহজাত ধারণা। মাঝেমধ্যে আমাদের ব্রেইন খুব বেশি না ভেবেই দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে চলে আসে। এভাবে ব্রেন হঠাৎ আসা বিপদ থেকে আমাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। আমরা গল্প করতে ভালবাসি। ভালবাসী নাটকীয় কাহিনি। সে যুগে এগুলোই ছিল ফলপ্রসূ তথ্য ও খবরের একমাত্র মাধ্যম। চিনি ও ফ্যাট বা চর্বি আমাদের মজা লাগে। এগুলো ছিল খাদ্যস্বল্পতার সময়ে জীবনরক্ষকারী শক্তির উৎস। আমাদের এমন কিছু সহজাত বৈশিষ্ট্য আছে যা হাজার হাজার বছর আগে খুব দরকারী ছিল। কিন্তু এখন আমরা বাস করি ভিন্ন যুগে। ব্রেন কিন্তু আগের ধারণা ও বৈশিষ্ট্যগুলো স্মৃতিতে রেখে দিয়েছে। 


চাঁদ দিগন্তের কাছে থাকলে চাঁদের সামনে পাহাড়, বিল্ডিং বা গাছপালা দেখা যায়। এ থেকে ব্রেন হয়তোবা চাঁদকে আসল আকারের চেয়ে বড় বা কাছে মনে করে। এমন একটি বিভ্রম প্রায় একশ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়। নাম পনজো ইল্যুশন। 


ইল্যুশনটি এরকম: রেল লাইন দূরে যেতে যেতে যেন দুই পাশ একে অপরের কাছে চলে এসেছে। (চিত্র ২) এখন রেল লাইনে আমাদের কাছে আর দূরে দুটি লাইন টানা হলো। দূরের লাইনকে বড় মনে হবে। যদিও দুটোই সমান। আলাদা মনে হবার কারণ, ব্রেন মনে করে দূরের দাগটা তো দূরে আছে। তাই বাস্তবে ওটা আসলে বড় হবে। 


চিত্র ২: পনজো ইল্যুশন 

তবে এগুলোর কোনোটাই অকাট্য ব্যাখ্যা নয়। নাসার নভোচারীরা মহাশূন্যেও দিগন্তের চাঁদকে বড় দেখেন। যেখানে চাঁদের সামনে পাহাড় বা গাছপালা নেই। তার মানে, দিগন্তের চাঁদ বড় দেখানোর সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। 


দিগন্তের চাঁদ আসলে বড় না হলেও কিছুটা হলুদ বা কমলা আসলেই হয়। এর কারণ দিগন্তের কাছে থাকলে চাঁদের আলো বায়ুমন্ডল দিয়ে বেশি পথ পাড়ি দেয়। দীর্ঘ পথে আসার সময় ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নীল আলো বিক্ষিপ্ত হয়ে হারিয়ে যায়। বড় দৈর্ঘ্যের লালাভ আলো থেকে যায়। বায়ুদূষণ বা বায়ুতে ধুলিকণার উপস্থিতি লাল রঙকে আরও ঘন করে। একই কারণে সূর্যও অস্ত বা উদয়ের সময় লাল হয়। 


সুপারমুনের গল্প


চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?


সূত্র: নাসা, টাইম অ্যান্ড ডেইট ডট কম

লেখাটি ইতোপূর্বে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত। 

Category: articles

মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

রাতের আকাশে কত শত-সহস্র তারকা দেখা যায়। হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরের তারা তো খালি চোখে প্রচুর দেখা যায়ই। এমনকি মিল্কিওয়ে থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরের ত্রিকোণ ছায়াপথও দেখা যায় খালি চোখে। কিন্তু দেখা যায় না সূর্যের সবচেয়ে কাছের তারাটাকে।


আলফা সেন্টোরি এ ও বি নক্ষত্র। লাল বৃত্তের জায়গায় প্রক্সিমা সেন্টোরি। 

খালি চোখে কত তারা দেখা যায়?

হ্যাঁ, বলছি প্রক্সিমা সেন্টোরির কথা। তারাটার দূরত্ব পৃথিবী থেকে মাত্র ৪.২৫ আলোকবর্ষ। তাও খালি চোখে একে আপনি কখনোই দেখবেন না। কারণ আর কিছুই নয়, তারাটির অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি (luminosity) অনেক কম৷ সূর্যের এক ভাগও না। মাত্র ০.১৬ ভাগ। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় তিন হাজার কেলভিন৷ সূর্যের প্রায় অর্ধেক।

আবিষ্কৃত হয় ১৯১৫ সালে। এটি একটি লোহিত বামন তারা। সূর্যের মতো প্রধান ক্রমের তারাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও কম উষ্ণ হলো লোহিত বামন। তবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। কম দীপ্তির কারণে এদের কাউকেই পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ৬০ তারার মধ্যে ৫০টাই লোহিত বামন।

সূর্য কীভাবে জ্বলে?

তারাটির ভর সূর্যের মাত্র ১২.৫ ভাগ। ঘনত্ব ৩৩ ভাগ। চওড়া সূর্যের ১৪ ভাগ। তবে তারাটার চৌম্বক সক্রিয়তার কারণে মাঝেমধ্যে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়৷ চৌম্বক অঞ্চল তৈরি হয় পরিচলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে৷ ভর কমের কারণে এতে জ্বালানি পোড়ে খুব ধীরে। আবার পরিচলনের মাধ্যমে জ্বালানি পুরো নক্ষত্রে ছড়িয়ে যাওয়ায় এর আয়ু অনেক লম্বা। নক্ষত্রটা আরও ৪ ট্রিলিয়ন (৪ লক্ষ কোটি) বছর হাইড্রোজেন পুড়িয়ে যেতে থাকবে। যেখানে সূর্য এ কাজটা করবে আর মাত্র পাঁচশো কোটি বছর।

সূর্যের তুলনায় প্রক্সিমার সেন্টোরির আকার। 

জানা গ্রহ আছে দুটি। প্রক্সিমা সেন্টোরি বি ও ডি। সি নামে আরেকটা প্রস্তাবিত গ্রহ আছে। বি গ্রহটার অবস্থান নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলে। ভর পৃথিবীর ১.০৭ গুণ। ১১ দিনে নক্ষত্রকে ঘুরে আসে। ডি গ্রহটা কাজটা করে ৫ দিনেই।

১৯১ সালে স্কটিশ জ্যোতির্বিদ রবার ইনেস তারাটি আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রক্সিমা সেন্টোরি নামটা প্রস্তাব করেন৷

পাশেই কত উজ্জ্বল এক তারা। আলফা সেন্টোরি। রাতের আকাশের তৃতীয় উজ্জ্বল। আলফা সেন্টোরি এ ও বি প্রক্সিমা সেন্টোরিসহ একটি ত্রিতারা জগতের অংশ। তিনজনই তাদের মিলিত ভরকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে৷



তারাটা খালি চোখে দেখা গেলেও বাংলাদেশ থেকে দেখা কঠিন হত। কারণ বিষুব লম্ব (-৬২)। সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি উত্তর উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত একে দেখা সম্ভব।
Category: articles

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

বিটলজুস নিক্ষত্র এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেকোনো সময় এটি সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। ঠিক কখন সেটা আমরা জানি না। আমরা নক্ষত্রটা থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে আছি৷ তাই বিস্ফোরণে ক্ষতি হবে না। দেখব শুধু সুপারনোভার অসাধারণ রূপ!


বিটলজুস



সম্প্রতি লোহিত অতিদানব নক্ষত্রটার উজ্জ্বলতা ৫০% গুণ বেড়েছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা৷

বিটলজুস একইসাথে একটি লোহিত অতিদানব ও অর্ধনিয়মিত বিষম ও স্পন্দনশীল তারা। মানে এর উজ্জ্বলতার পরিবর্তন কিছু নিয়ম মেনে চলে। উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের আছে বেশ কিছু চক্র৷ মূল চক্রটি ৪০০ দিনের। তবে ১২৫ ও ২৩০ দিনের দুটি ছোট চক্রও আছে। আছে আবার ২২০০ দিনের একটি বড় চক্র৷ এসব কারণে বিটলজুসের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন জ্যোতির্বিদদের কাছে এক মহাধাঁধা৷

কয়েক বছর আগে এর উজ্জ্বলতা কমে আসে। সবাই এর কারণ নিয়ে ভাবতে থাকল। পরে দেখা গেল, উজ্জ্বলতা আসলে কমেনি। নক্ষত্রটার পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষিপ্ত পদার্থ ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হয়৷ আর তাতে বাধাগ্রস্ত হয় আলো৷

এখন আবার উজ্জ্বল হচ্ছে বিটলজুস৷ এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা সম্ভবত প্রত্যাশার চেয়ে আগেই সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হবে৷ মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মিল্কিওয়ের পরবর্তী সুপারনোভা হবে বিটলজুসই৷

বিটলজুস বর্তমানে লোহিত অতিদানব তারা। পেছনে ফেলে এসেছে প্রধান ক্রম দশা। যে সময় এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাত৷ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বছর ধরে কাজটি করে এসেছে নক্ষত্রটা৷ ভর হারিয়ে তারারা ফিউশন বিক্রিয়ার বহির্মুখী চাপকে আর ধরে রাখতে পারে না। নক্ষত্রের বাইরের দিক ফুলে ফেঁপে ওঠে৷ ভর কমলেও আকার যায় বেড়ে৷

তবে ফিউশন তখনও চলে। শুরু হয় কার্বন পোড়া। তৈরি হয় আরও কিছু ভারী মৌল। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিটলজুস এ ধাপের শেষের দিকে আছে। কার্বন পোড়ার ধাপ আছে কয়েকটি৷ বিটলজুস স্পন্দিত হয়, পদার্থ ছুঁড়ে মারে, আবর্তন করে। আবার ছুটে চলে মহাশূন্য ধরে। কার্বন পোড়ারনোর কোন ধাপে নক্ষত্রটা আছে তা না জানা গেলে সঠিক করে বলা যাবে না কবে নক্ষত্র সুপারনোভা হবে৷ জ্যোতির্বিদরা দেখেন নক্ষত্রের বাইরে অংশ৷ ভেতরের খবর সঠিক করে বলা সম্ভব হয় না।

তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণা বলছে বিস্ফোরণটা হতে পারে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে৷ ২০০ পারসেক দূরের এ বিস্ফোরিত পৃথিবীর আকাশে অন্যতম সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণাই করবে। ছুঁড়ে দেওয়া ক্ষতিকর এক্সরে বা গামা রশ্মি থেকে আমরা নিরাপদ।



বিটলজুস রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা। আদমসুরত বা কালপুরুষ মণ্ডলে এর অবস্থান। শীতের আকাশে সহজেই উজ্জ্বল এ তারার দেখা পাবেন। মে মাসের দিকে পশ্চিম দিগন্তে হারিয়ে যাবে। আগস্টের শেষের দিকে আবার দেখা যায় ভোরের পূবাকাশে। নিচের লিঙ্কে বিটলজুস ও অন্যান্য উজ্জ্বল তারা কীভাবে খুঁজে পাবেন দেখানো আছে। 

আদমসুরত তারামণ্ডল। উপরে বামপাশের তারাটাই বিটলজুস। 

Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...