Advertisement

রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

একটি নক্ষত্র মৃত্যুমুখে পতিত হবার পরের একটি দশা হল রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব (Red giant) অবস্থা। আরও কয়েকশো কোটি বছর পর আমাদের সূর্যও এই দশায় পৌঁছবে। এ সময় এটি প্রসারিত হয়ে কয়েকটি গ্রহকে গিলে ফেলবে। পৃথিবী এর সেই থাবা থেকে বাঁচবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে না বাঁচলেও সেটা যেহেতু কয়েকশো কোটি বছর পরের ঘটনা, তাই আপাতত দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

প্রসারণশীল লোহিত দানব তারকারা নিকটে অবস্থিত বেশি কিছু গ্রহকে (যদি থাকে) গিলে খেতে পারে। সূর্যও গিলে ফেলবে বুধ ও শুক্র গ্রহকে। পৃথিবীর পরিণতি অনিশ্চিত। 
আরো পড়ুন
☛ নক্ষত্রের পরিচয়

লোহিত দানব তৈরিঃ

বর্তমানে মহাবিশ্বের অধিকাংশ নক্ষত্র প্রধান ধারা (main sequence stars) দশায় আছে। এরা নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি করছে। এদের ভর হতে পারে সূর্যের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে আট গুন পর্যন্ত। এই দশায় থাকা অবস্থায় এতে দুটো বিপরীতধর্মী চাপ কাজ করে। একটি হল মহাকর্ষের চাপ, যেটা কাজ করে ভেতরের দিকে ও নক্ষত্রকে গুটিয়ে ফেলতে চায়। আরেকটি হল ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে বাইরের দিকে ক্রিয়াশীল চাপ। প্রধান তারার নক্ষত্রে এই দুই চাপ একে অপরকে ঠেকিয়ে রাখে। কিন্তু হাইড্রোজেন ফুরিয়ে গেলে ফিউশন যায় শেষ হয়ে। এ সময় নক্ষত্রটি গুটিয়ে ঠিকই ছোট হয়ে যেতে থাকে।

গুটিয়ে সঙ্কুচিত হবার ফলে এর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এক সময় হিলিয়ামের ফিউশন ঘটে তৈরি হয় কার্বন। হিলিয়ামের ফিউশন ক্রমানুসারেও ঘটতে পারে, আবার সেটা ঘটতে পারে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমেও। এই ফিউশনের সময় প্রস্তুত শক্তির প্রভাবে নক্ষত্রটি এর প্রাথমিক আকার থেকে বহু গুন পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে যায়।

লোহিত দানব তারাদের ব্যাস (এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব) দশ থেকে একশো কোটি পর্যন্ত হতে পারে (মাইলের হিসাবে এই পরিমাণ হল ৬.২ কোটি থেকে প্রায় ৬২ কোটি)। এ সময় এরা সূর্যের বর্তমান আকারের একশো থেকে এক হাজার গুন পর্যন্ত বড় হতে পারে। এর শক্তি অনেক বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে থাকে বলে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে যায়। নেমে আসে ২, ২০০ থেকে ৩, ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বর্তমানে সূর্যের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা এর দ্বিগুণের চেয়ে খানিকটা বেশি। তাপমাত্রার এই পরিবর্তনের ফলে নক্ষত্রটির আলোর বিকিরণ বর্ণালীর লাল অংশে চলে আসে। এর ফলেই এদের নাম হয়েছে লোহিত দানব। আকার বড় হয়ে যায় বলেই দানব বিশেষণ পাওয়া। অবশ্য নামে লোহিত হলেও অনেক সময় এদের মধ্যে কিছুটা কমলা রঙের ছটা থাকে।

অপূর্ব সুন্দর এই নেবুলার অবস্থান বিটলজুস নক্ষত্রের  চারপাশে। 


আরো পড়ুন
☛ সূর্যের তাপমাত্রা কত? 

রেড জায়ান্ট অবস্থায় তারকারা টিকে থাকে কয়েক হাজার থেকে একশো কোটি বছর পর্যন্ত। এক সময় এর কেন্দ্রের হিলিয়াম যায় ফুরিয়ে। ফলে ফিউশনও যায় থেমে। এটি আবারও সঙ্কুচিত হতে থাকে। হিলিয়ামের নতুন খোলস কেন্দ্রে পৌঁছা পর্যন্ত এই সঙ্কোচন চলতে থাকে। হিলিয়াম জ্বলে উঠলে নক্ষত্রের বাইরের স্তর বিস্ফোরিত হয়ে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও ধূলির মেঘ তৈরি হয়।

কেন্দ্র আরও বেশি গুটিয়ে যেতে থাকে। সূর্যের মতো ছোট নক্ষত্রদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে শ্বেত বামন (white dwarf) হিসেবে। আরো বেশি ভরের নক্ষত্রদের সঙ্কোচন চলতেই থাকে। এক সময় এরা সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাইরের অংশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

সূত্র
১।http://www.space.com/22471-red-giant-stars.html
Category: articles

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

গ্রহদের সম্পর্কে মৌলিক কিছু কথা জেনে নিই এ মাসে।  আমাদের সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আট হলেও আমরা খালি চোখে দেখতে পাই পাঁচটিকে। এরা হল বুধ, শুক্র (একেই আমরা আদর করে শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা বলে ডাকি অনেক সময়), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সব সময় এদের পাঁচজনকে একত্রে দেখা যায় না। গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ এদের সবাইকে এক সাথে (একই রাতে) দেখা গিয়েছিল।

Photo Credit:  Predrag Agatonovic


শুক্র গ্রহঃ

এ মাসে গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে শুক্র (সন্ধ্যাতারা), মঙ্গল ও শনিকে। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই এটি হাজির হয়ে যাবে পশ্চিম আকাশে, সোজা পশ্চিম থেকে সামান্য দক্ষিণে। দৃষ্টিশক্তি খুব ভালো হলে একে সূর্য পুরোপুরি ডোবার আগেই দেখবে। মাসের শুরুতে এটি সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টা দিগন্তের উপরে থাকবে। সুখবর হল, দিন গড়াতে গড়াতে এ সময়ের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তার মানে তখন একে দেখতে পাবেন বেশি সময় ধরে।

আজকের আকাশঃ চাঁদ ও শুক্র গ্রহ
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোলা ছবি। ক্রেডিটঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ।
 
 
মঙ্গল ও শনি গ্রহঃ

শুক্র থেকে সামান্য বাঁয়ে ঘুরুন। দক্ষিণ- পশ্চিম আকাশে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে আরো দুটি উজ্জ্বল গ্রহ। এরা হল মঙ্গল ও শনি। মাসের ছয় তারিখে চাঁদ থাকবে শনির একটু উপরে। পরের দিন চাঁদ চলে আসবে শনি ও মঙ্গলের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে। মাসের শুরুতে শনি অস্ত যাবে সূর্যের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে। মাস পেরোতে পেরোতে এ সময় দ্রুত কমতে থাকবে। মাসের শেষে এটি সন্ধ্যার পরে দিগন্তের উপরে থাকবে এক ঘণ্টারও কম সময়।
তবে মঙ্গলকে দেখতে পাবেন আরো বেশি সময় ধরে। এটি প্রায় পুরো মাস জুড়েই সন্ধ্যার পরে চার ঘণ্টার মতো সময় পর্যন্ত আকাশে থাকবে। আগেই বলেছি, দূরবর্তী তারাদের সাপেক্ষে গ্রহরা কখনও পশ্চিমে আবার কখনোবা পূর্ব দিকে চলে। কয়েক রাত ধরে মঙ্গলের উপর চোখ রাখলেই বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবেন। এই মঙ্গলের ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি সবচেয়ে সহজে চোখে পড়ে। এমনকি মূলত মঙ্গলের চলাচল লক্ষ্য করেই জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহে যে উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন তার ভিত্তিতেই জোহানেস কেপলার গ্রহদের গতি সূত্র বানিয়েছিলেন।


D:\articles\biggan chinta\sky-this-month\Oct 16\planets-oct-16-2.PNG
অক্টোবর মাসের চার গ্রহ এক সাথে


বুধ ও বৃহস্পতিঃ
অপর দুই গ্রহ বুধ ও বৃহস্পতির জন্যে এ মাসে তেমন কোনো সুখবর নেই। বুধকে মাসের শুরুতে ভোরের পূর্ব আকাশে কিছুক্ষণের জন্যে দেখা গেলেও দ্রুত সেটি সূর্যের আভার কাছে হারিয়ে যাবে। শেষ দিকে আর দেখাই যাবে না। বৃহস্পতিকে মাসের শুরুতে দেখাই যাবে না। তবে মাসের শেষের দিকে এটি সূর্যের এক ঘণ্টারও বেশি আগেই পূর্ব দিগন্তে হাজির হবে। ক্রমশ এ সময় বাড়তেই থাকবে। শুক্রের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু হল বৃহস্পতি। উজ্জ্বল গ্রহদের মধ্যে একেই একটানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেখা যায়। আগামী মাসগুলোতে এটি ক্রমশ দ্রুত উদিত হতে থাকবে। নভেম্বরের শুরুতেই এটি সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা আগে উঠবে। ফলে আপাতত অনুজ্জ্বল হলেও বৃহস্পতির ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।

Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ৪ অক্টোবর
১৯৫৯ সালের এই দিনে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মহাশূন্যে পাঠায় স্পুটনিক ১ নামের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। অনেক মহাকাশ ইতিহাসবিদের মতে প্রকৃতপক্ষে এই দিনেই সূচনা ঘটে মহাশূন্য যুগের।

 
জাদুঘরে রক্ষিত স্পুটনিক ১ এর একটি নকল

এটি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার (১৮ হাজার মাইল) বেগে। অর্থ্যাৎ, পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগত প্রায় ৯৬ মিনিট। এটি ২১ দিন পর্যন্ত সঙ্কেত পাঠানো অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত ২৬ অক্টোবর তারিখে এর ব্যাটারির শক্তি ফুরিয়ে গেলে শেষ হয় সঙ্কেত পাঠানোর কাজ। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি কক্ষপথ থেকে ছিটকে গিয়ে প্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। কক্ষপথে তিন মাস থাকার সময় এটি ৭ কোটি কিলোমিটার পথ চলাচল করেছিল।

ধাতুর প্রলেপ দেওয়া গোলকীয় যানটির ব্যাস ছিল ২৩ ইঞ্চি বা ৫৮ সেন্টিমিটার। ভর ছিল ৮৩.৬ কেজি। বেতার সঙ্কেত পাঠানোর জন্যে এতে ছিল চারটি রেডিও অ্যান্টেনা। এই সঙ্কেত পৃথিবী থেকে ধরা যেত। খালি চোখে একে দেখা যেতে পুরো পৃথিবী থেকে। একে প্রেরণের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমেরিকার শুরু হয় স্পেস রেস বা মহাশূ্ন্য প্রতিযোগিতা। দুই দেশের ঠাণ্ডা যুদ্ধের অন্যতম অংশ জুড়ে ছিল এই রেসও।

তবে উপগ্রহটি যে শুধু ইতিহাসই সৃষ্টি করেছে তা কিন্তু নয়, এটি বিজ্ঞানীদেরকে অনেক গুরুত্বপুর্ণ তথ্যও সরবরাহ করে।  কক্ষপথে এর চলাচলের পথের প্রকৃতি থেকে উর্ধ্বস্থ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব জানা সম্ভব হয়। পাওয়া যায় আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কেও তথ্য।

স্পুটনিকের জবাবে মার্কিনিরা পৃথিবীকে কিছু করে দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সাফল্য পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। পরের বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিন তারাও এক্সপ্লোরার ১ নামক তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নিক্ষেপ করে মহাশূন্যে।

তবে রুশরা তার আগেই- স্পুটনিক ১ এর ৩২ দিন পরেই স্পুটনিক ২ কেও পাঠিয়ে দেয় মহাশূন্যে। এবং এতে একটি ছিল প্রাণীও! এটিই ছিল লাইকা নামের সেই কুকুরটি।

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/this-date-in-science-launch-of-sputnik-october-4-1957
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_2
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_1
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Explorer_1
৫। http://history.nasa.gov/sputnik/
Category: articles

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বৃহস্পতিকে আরেকটু হলেই গ্রহ না বলে নক্ষত্র বলা যেত। কেননা একটি নক্ষত্রের জীবন চক্রের অধিকাংশ সময় ধরেই মূল উপাদান হিসেবে থাকে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। আমাদের সূর্যের  কথাই ধরুন। এতে হাইড্রোজেনের পরিমাণ ৭৫ ভাগ এবং হিলিয়াম আছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর এদিকে সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো গ্রহ, গ্রহ রাজ বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান কিন্তু এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামই।

এর ফলে একে কেউ ছোটখাটো নক্ষত্র বলে ভেবে ভুল করে বসলে মাফ করে দেওয়াই উচিত। তবে গ্রহদের মধ্যে এর ভর সবচেয়ে বেশি হলেও সেটা নক্ষত্রের মতো আচরণ করার মতো যথেষ্ট নয়। ফলে, এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানিয়ে নিজস্ব আলো তৈরি করতে পারছে না।

আর পড়ুনঃ 
☛ নক্ষত্রের পরিচয়
☛ গ্রহ কাকে বলে? 


বৃহস্পতির পৃষ্ঠঃ
বৃহস্পতি (Jupiter) হল সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে অন্যতম গ্যাস জায়ান্ট। এটা বলে এতটুকু ভুলও করা হয় না আসলে। আপনি যদি প্যারাশ্যুটে ভর করে বৃহস্পতির পৃষ্ঠে অবতরণ করার ধান্দায় থাকেন, তবে সে আশা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। গ্রহটিতে কোনো শক্ত পৃষ্ট নেই। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ৯০ ভাগ হল হাইড্রোজেন। বাকি দশ ভাগের প্রায় পুরোটাই হিলিয়াম দিয়ে ভর্তি। পাশাপাশি অন্য কিছু গ্যাসও আছে এতে।

এই গ্যাসগুলো ক্রমানুসারে একটির উপর একটি স্তর স্তরে সজ্জিত আছে। গ্রহটিতে শক্ত পৃষ্ঠ নেই বলে এর যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর চাপের সমান সেই অঞ্চলকে পৃষ্ঠ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই বিন্দুতে গ্রহটির অভিকর্ষ পৃথিবীর প্রায় আড়াই গুণ।

এই পৃষ্ঠে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করা একেবারেই অবাস্তব। কেননা এই অঞ্চলও আসলে গ্যাসেরই আরেকটি স্তর। কোনো যান বা নভোচারী এতে অবতরণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে গ্যাসের মেঘ পাড়ি দিয়ে শেষ পরিণতি হবে গ্রহটির একেবারে কেন্দ্রমণ্ডলে।

বৃহস্পতির কেন্দ্রেঃ
বৃহস্পতির কেন্দ্র সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। বিজ্ঞানীদের ধারণা ঘন কেন্দ্রমণ্ডলের চারপাশে হয়তবা ধাতব হাইড্রোজেন থাকতে পারে। এর উপরের থাকতে পারে আণবিক হাইড্রোজেনের আরেকটি স্তর। গ্রহটির কেন্দ্রমণ্ডল কতটা শক্ত সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। কেন্দ্রভাগের আনুমানিক তাপমাত্রা ৩৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১৯৯০ এর দশকের আগে বৃহস্পতির কেন্দ্রমণ্ডল নিয়ে আলোচনাই শুরু হয়নি। সেই সময় মহাকর্ষীয় চলাচল থেকে দেখা যায় গ্রহটির কেন্দ্রের ভর পৃথিবীর ভরের ১২ থেকে ৪৫ গুণ হতে পারে। তবে আবার অতীতে এর শক্ত কেন্দ্রমণ্ডল ছিল- এ কথা থেকে কিন্তু প্রমাণ হয় না যে এখনো তা টিকে আছে। সম্প্রতি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এর কেন্দ্রমণ্ডল খুব সম্ভব গলে যাচ্ছে।

বৃহস্পতির উপাদান 

নক্ষত্রের মতো হলেও ঠিক নক্ষত্র নয়ঃ
সূর্যের মতোই বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান হল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। কিন্তু এতে এই উপাদানগুলোর ঘাটতি থাকায় সূর্যের মতো ফিউশান বিক্রিয়া শুরু হতে পারেনি। তা হতে হলে একে বর্তমানের তুলনায় আরো ৭৫ থেকে ৮০ গুণ বেশি ভারী হতে হত। সৌরজগতের বাকি সবগুলোর ভরও যদি একে দিয়ে দেওয়া হয়, তবু এর ঘাটতি পূরণ হবে না। কিন্তু তবু বাকি সবগুলো গ্রহের ভর যোগ করলেও বৃহস্পতির একার ভর হবে তার আড়াই গুণ।

আরো পড়ুনঃ
এক নজরে সূর্য 
এক নজরে বৃহস্পতি

সূত্রঃ
১। http://www.space.com/18388-what-is-jupiter-made-of.html
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sun#Composition
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর। ১৯০১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইতালীয় পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি।

তিনি তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যা- এই দুটোতেই সমানে অবদান রেখে গেছেন। বর্তমান যুগে যেখানে একের অধিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা কঠিন, তাতে তাঁর এই অবদান তাঁকে একটু বিশেষভাবে নজরে আনার জন্যে যথেষ্ট। নিউক্লীয় চুল্লির (nuclear reactor) উন্নতি সাধনের জন্যে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এছাড়াও তিনি মাথা কাজে খাটিয়েছেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, কণা পদার্থবিদ্যা ও পরিসংখ্যান বলবিদ্যায়ও। ১৯৩৮ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি 

১৯০১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি ইতালির রোম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলবার্তো ফার্মি ছিলেন দেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিদর্শক। ছোট বেলায় যোগ দেন স্থানীয় গ্রামার স্কুলে। অল্প বয়স থেকেই গণিতের প্রতি অনুভব করতেন তীব্র ভালোবাসা। এতে ঘি ঢেলে দেন তাঁর পিতার এক সহকর্মী। ১৯১৮ সালেই ইতালির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এসএনএস থেকে ফেলোশিপ লাভ করেন। এটি বর্তমানেও ইতালির এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২২ সালে এখান থেকে পদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে বের হন।

এর অল্প কয় দিন পরেই, ১৯২৩ সালে ইতালীয় সরকারের পক্ষ থেকে বৃত্তি অর্জন করেন। কয়েক মাস সময় কাটান আরেক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ম্যাক্স বর্ন এর সাথে। ১৯২৪ সালে রকফেলার ফেলোশিপ নিয়ে চলে আসে লেইডেন (হল্যান্ড)। কাজ করেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল এহরেনফেস্ট এর সঙ্গে। সে বছরই আবার ফিরে আসেন ইতালিতে, যোগ দেন ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক পদার্থবিদ্যা ও বলবিদ্যার প্রভাষক হিসেবে।

১৯২৬ সালে তিনি পরিসংখ্যানের একটি সূত্র আবিষ্কার করেন, যা বর্তমানে 'ফার্মি পরিসংখ্যান' নামে পরিচিত। যেসব কণিকা পাউলির বর্জন নীতি (Pauli's exclusion principle) মেনে চলে তাদের জন্যে প্রযোজ্য তাঁর এই সূত্র। তাঁর নাম থেকেই বর্তমানে এই কণিকাদের নাম হয়েছে ফার্মিয়ন। এরা হল বোসন কণিকাদের বিপরীত, যারা মেনে চলে বোস- আইনস্টাইন পরিসংখ্যান।

পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯২৭ সালে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক মনোনীত হন। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই পদটি ধরে রাখেন তিনি। সে বছরই নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন, আর ইতালির একনায়ক মুসোলিনির হাত থেকে বাঁচতে রোম ছেড়ে চলে আসেন আমেরিকা।

রোমে থাকার সময় তড়িৎগতিবিদ্যার বিভিন্ন সমস্যা ও বর্ণালী বিষয়ক তাত্ত্বিক গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বহিঃস্থ ইলেকট্রনদের ছেড়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নজর দিয়েই পেয়ে গেলেন বিশেষ কিছু। ১৯৩৪ সালে বিটা ক্ষয় তত্ত্বের উন্নতি সাধন করলেন। এর মাধ্যমে পূর্বের বিকিরণ তত্ত্বের সাথে পাউলির নিউট্রিনোর ধারণার সেতুবন্ধন ঘটল। ১৯৩৪ সালে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পর তিনি দেখান যে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করে যে কোনো নিউক্লিয়াসকে অন্য নিউক্লিয়াসে রূপান্তরিত করা যায়। এই ধারণার উপর ভর করেই একই বছর আবিষ্কৃত হয় ধীর নিউট্রন, যার ফলে পরে আবিষ্কৃত হয় নিউক্লিয়ার ফিসান বা ভাঙন (যেখানে একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে দুই বা তার অধিক নিউক্লিয়াস তৈরি হয়)। সে সময় পর্যন্ত পর্যায় সারণিতে যে মৌলগুলো ছিল তার বাইরেও মৌল তৈরি সম্ভব হয় এর ফলেই।

১৯৩৮ সালের দিকে তিনিই ছিলেন নিউট্রন সম্পর্কে সবচেয়ে বড় বিশেষজ্ঞ। আমেরিকা ফিরে এসেও তিনি এই বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। এখানে এসে যোগ দেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে।

১৯৩৯ সালে হান ও স্ট্রাসম্যান ফিসান প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। এটা থেকে তাঁর মাথায় আসে কীভাবে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চেইন বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া পরিচালনা করা যায়। পরমাণু বোমা তৈরির সময় বিভিন্ন সমস্যা সমধানেও তিনি কাজ করেন। তিনি ছিলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টের এক দল পদার্থবিদের অন্যতম নেতা, যেখানে নিউক্লীয় শক্তি ও পরমাণু বোমা নিয়ে কাজ হচ্ছিল। এসব অবদানের জন্যে তাঁকে নিউক্লীয় যুগ ও পরমাণু বোমার স্থপতি বলা হয়।

১৯৪৪ সালে তিনি আমেরিকার নাগরকিত্ব লাভ করেন। যুদ্ধের পর (১৯৪৬ সালে) শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। ১৯৫৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এখানেই থাকেন। এখানে তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল উচ্চ- শক্তির পদার্থবিদ্যা। এছাড়াও তিনি পাইওন- নিউক্লিয়ন গবেষণায়ও নেতৃত্ব প্রদান করেন।

জীবনের শেষের দিনগুলো ব্যয় করেন মহাজাগতিক রশ্মির রহস্যময় উৎস নিয়ে। প্রস্তুত করেন একটি তত্ত্ব।

সব মিলিয়ে তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যার উপর অনেকগুলো গবেষণাপত্র লেখেন তিনি। প্রভাষক হিসেবে তাঁর চাহিদা সব সময়ই ছিল বেশি। মিশিগান, স্ট্যানফোর্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি বিভিন্ন কোর্স নিতেন।

১৯২৮ সালে তিনি লরাকে বিয়ে করেন। তাঁদের গিওলিও নামে একটি ছেলে ও নেলা নাম্নী একটি মেয়ে ছিল। হাঁটাহাঁটি, পাহাড়ে চড়া ও শীতকালের বিভিন খেলাধুলা ছিল তাঁর অবসরের প্রিয় কাজের মধ্যে অন্যতম।
১৯৫৪ সালের ২৮ নভেম্বর তারিখে তিনি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান পরপারের উদ্দেশ্যে।

তথ্য সূত্রঃ
১। http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1938/fermi-bio.html
২। http://www.famousscientists.org/enrico-fermi/

Category: articles

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এ পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদের বুকে হেঁটেছেন। আপনিও যদি তাদের মতো চাঁদে যেতে চান, তবে শীতের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা রাতে চাঁদের তাপমাত্রা নেমে আসে হিমাংকের ১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। কিন্তু শুধু শীত থেকে বাঁচলেই চলবে না, গরম থেকে বাঁচারও প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা দিনের বেলায় চাঁদের তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ১০৭ ডিগ্রি (আরেকটি তথ্য মতে ১২৩ ডিগ্রি) পর্যন্ত।

চাঁদের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা 

চাঁদের তাপমাত্রা এত বেশি উঠা- নামা করে কেন? এর কারণ হল, চাঁদে পৃথিবীর মতো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল কম্বলের মতো আচরণ করে। ধরে রাখে ভেতরে প্রবেশ করা উত্তাপ। সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভেতরে এসে ভূমিকে উত্তপ্ত করে। পৃথিবী সেই তাপ শক্তিকে অবলোহিত বিকিরণ (infrared radiation) আকারে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিকিরণ সহজে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত থাকে।

অবলোহিত বিকিরণ বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না কেন? এর কারণ হল আমরা খালি চোখে যেসব আলো দেখি তার মধ্যে লাল রঙ এর আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। আর অবলোহিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর চেয়ে একটু বেশি। তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হবার কারণে এর পক্ষে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

চাঁদের সমস্যা আছে আরেকটিও। চাঁদ নিজের অক্ষের সাপেক্ষে একবার ঘুরতে ২৭ দিন সময় নেয়। ফলে চাঁদের কোনো জায়গা ১৩ দিনের কাছাকাছি সময় সূর্যের আলো পায়, বাকি সময়টা থাকে অন্ধকারে। সূর্যের আলো থাকার সময় চাঁদে যে তাপমাত্রা থাকে, তাতে সহজেই পানি বাষ্প হয়ে যাবে। আর সূর্য দিগন্তের নিচে তলিয়ে যাবার পর সাঁই করে তাপমাত্রা কমে যাবে ২৫০ ডিগ্রি।

আরো পড়ুনঃ
আবর্তন বনাম প্রদক্ষিণ
☛ চাঁদ কি আসলে আবর্তন করে?

ফলে চাঁদে যেতে হলে এমন পোশাক দরকার যাতে একই সাথে উত্তাপ তৈরির এবং শীতলীকরণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কাছে কিছু খাদ আছে যারা অবিরাম ছায়ার মধ্যে থাকে, কখনো সূর্যের
মুখ দেখে না। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা সব সময় মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রিই থাকে। আবার এর আশেপাশেই এমন কিছু পাহাড় চূড়া আছে যারা অবিরাম সূর্যের আলো পেতেই থাকে।

রাতের আকাশে চাঁদকে কত নিরীহ দেখায়, অথচ এর তাপমাত্রা যে এত ভয়ানক হতে পারে তা কে ভেবছিল। 

আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?
☛ পূর্ণিমা হয় কীভাবে?

সূত্রঃ
1. http://www.space.com/18175-moon-temperature.html
2. http://www.universetoday.com/19623/temperature-of-the-moon/
3. http://www.livescience.com/50260-infrared-radiation.html
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আলডেরামিন নক্ষত্রটি সিফিয়াস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। এই তারামণ্ডলীটি খুব বেশি উজ্জ্বল নয়। তারামণ্ডলীটির অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল একমাত্র নক্ষত্র হল আলডেরামিন। এর অপর নাম হল আলফা সিফিয়াই। নক্ষত্রটি অনেক দ্রুত বেগে আবর্তন করে।

জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদরা অপটিক্যাল ইনটারফেরোমিটার ব্যবহার করে নক্ষত্রটির নতি, মেরু ও বিষুব ব্যাসার্ধ এবং তাপমাত্রা বের করেন। 

সিফিয়াস তারামণ্ডলির দেখতে ঘরের মতো, আমরা ছোটবেলায় দোচালা ঘরের যেরকম চিত্র আঁকতাম ঠিক তেমন।  আকাশের এক কোণে এর অনেকগুলো ম্লান তারকার মধ্যে আলডেরামিন একমাত্র ব্যতিক্রম। ফলে এই তারাটিকে চিনে নেওয়া খুব সহজ কাজ। এর তীব্র আবর্তন বেগের কারণেও এটি খুব পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ 
নক্ষত্র কাকে বলে?
তারামণ্ডলীর পরিচয়
আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

আলডেরামিনকে খুঁজে পাবার উপায়ঃ
তারাটির অবস্থান উত্তর আকাশে। একে খুঁজে পেতে কাজে আসবে ইংরেজি W বা M অক্ষরের মতো (অবস্থানের উপর ভিত্তি করে দুই রকমের যে কোনো রকম হতে পারে) দেখতে আরেকটি তারামণ্ডলী ক্যাসিওপিয়া।

ঋতুভেদে ক্যাসিওপিয়াকে কখনো উত্তর-পূর্ব দিকে, কখনো বা উত্তর- পশ্চিম দিকে, আবার কখনো মাথার উপর থেকে একটু উত্তরের অবস্থানে সোজা উত্তর দিকে থাকবে।  নভেম্বর মাসের রাত নয়টার দিকে ক্যাসিওপিয়াকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। এ সময় এটি থাকে উত্তর দিগন্ত থেকে সোজা উপরের দিকে। তারামণ্ডলীটির প্রধান অংশ (ডাব্লিউ বা এম আকৃতি) (+৬৫) থেকে (+৫৫) ডিগ্রি  বিষুব লম্ব জুড়ে অবস্থিত।  সব মিলিয়ে বছরের শেষ অর্ধেকের দিনগুলো একে খুঁজে পেতে বেশি সহায়ক। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসেও সন্ধ্যা নামার পরেই এটি উত্তর- পূর্ব দিগন্ত দিয়ে উঁকি দিতে শুরু করে। 

ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ আকৃতির ক্যাসিওপিয়া ও সিফিয়াস মণ্ডলী ।
সহজে বোঝার জন্যে ছবিটিকে রোটেট করা হয়েছে। 

ক্যাসিওপিয়াকে আমরা সহজেই পেয়ে যাব। এবার কাজ হল একে কাজে লাগিয়ে সিফিয়াস ও আলডেরামিনকে বের করা। দেখুন, ক্যাসিওপিয়ার সবচেয়ে উজ্জ্বল উপরের তিনটি তারাকে দেখতে ইংরেজি ভি (V) অক্ষরের মত মনে হয়। এদের মধ্যে উপরের দুটি কাফ ও শেডার। শেডারকে কাফের সাথে যোগ করে সামনে চলে গেলেই পাওয়া যাবে আলডেরামিন। ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, পুরো সিফিয়াসকেও খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।


আলডেরামিনের বৈশিষ্ট্যঃ 
এটি একটি সাদা নক্ষত্র। একে এ শ্রেণীর (Class A) তারা মনে করা হয়। বর্তমানে এটি প্রধান ধারা থেকে সাবজায়ান্ট ধাপে রূপ নিচ্ছে। প্রধান ধারার (main sequence) নক্ষত্ররা হাইড্রোজেনের ফিউসান ঘটিয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন করতে থাকে। আমাদের সূর্য একটি প্রধান ধারার নক্ষত্র। মনে করা হচ্ছে, আলডেরামিনের হাইড্রোজেন জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিণত হবে।

নক্ষত্র বিশেষজ্ঞ জিম কেলারের মতে আলডেরামিনের দীপ্তি সূর্যের ১৮ গুণ। অন্য দিকে এটি আবার খুব জোরে ঘুরছে। এটি ১২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে একবার নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে ফেলে, যেখানে কাজটি করতে আমাদের সূর্যের সময় লাগে প্রায় এক মাস।

আরো পড়ুনঃ 
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

জিম কেলার বলেন,
নক্ষত্রটির কাজের সাথে এই ঘূর্ণনের সম্পর্ক থাকতে পারে। আমাদের সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র খুব সক্রিয়। তবে 'এ শ্রেণী'র নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু আলডেরামিন সূর্যের প্রায় সমপরিমাণ এক্সরে বিকিরণ নির্গত করছে। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকেও বোঝা যাচ্ছে এতে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র উপস্থিত। এর কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। 

তবে সিফিয়াসের আরো দুটি দানব নক্ষত্রের তুলনায় আলডেরামিন কিছুই নয়। এরা হল মিউ সিফিয়াই এবং ভিভি সিফিয়াই। এরা দুজনেই সুপারজায়ান্ট- মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বৃহত্তম এবং উজ্জ্বলতম গ্যালাক্সিদের দলের সদস্য। হাজার হাজার সূর্যকে মিলিত করলেও এদের উজ্জ্বলতার কাছে তা ম্লান হয়ে যাবে। অবশ্যই এখানে আমরা নক্ষত্রের প্রকৃত উজ্জ্বলতা দা দীপ্তির কথা বলছি। দূরে অবস্থিত বলেই এরা পৃথিবীর আকাশে সূর্যের কাছে হেরে যাচ্ছে।


এদের কোনো একটিকে যদি সূর্যের জায়গায় বসানো হয়, তবে এরা বৃহস্পতির কক্ষপথ পর্যন্ত জায়গা দখল করে ফেলবে। এরা এত দীপ্তিমান হয়েও রাতের আকাশে তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হবার কারণ হচ্ছে এরা পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে তুলনামূলকভাবে আলডেরামিন খুব কাছে অবস্থিত- মাত্র ৪৯ আলোকবর্ষ।

আরো পড়ুনঃ
☛ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 


ইতিহাসে আলডেরামিনঃ
অতীতে এক সময় এটি ধ্রুব তারা ছিল। অর্থ্যাৎ, তখন এর অবস্থান ছিল আমাদের বর্তমান ধ্রুবতারা পোলারিসের জায়গায়, প্রায় উত্তর দিক বরাবর। সর্বশেষ এ অবস্থা ছিল ১৮, ০০০ খৃষ্টপূর্ব সালে। আরো ৫,৫০০ বছর পরে এটি আবার ধ্রুবতারার স্থান দখল করবে। ৭৫০০ সালের দিকে এটি প্রকৃত উত্তর দিক থেকে তিন ডিগ্রি দূরে থাকবে। এর অর্থ, আমাদের পোলারিস এর চেয়ে ভালো ধ্রুবতারা।  পোলারিস প্রায় বরাবর উত্তর দিকেই থাকে। এর বিষুব লম্ব (+৮৯) ডিগ্রির বেশি দেখেই সেটা অনুমান করা যায়।  ২১০০ সালে পোলারিস প্রকৃত উত্তর থেকে মাত্র ০.৪৫ ডিগ্রি দূরে থাকবে।

নামকরণঃ
আলডেরামিন শব্দটি এসেছে আরবি আযযিরা আল ইয়ামিন (الذ راع اليمين) থেকে। এর অর্থ হল 'ডান বাহু'। সিফিয়াস মণ্ডলীর নাম রূপকথার একজন রাজার নামে দেওয়া। ডান বাহু বলতে সেই রাজার ডান বাহু বোঝানো হচ্ছে।


সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলঃ 
আপাত উজ্জ্বলতাঃ + ২.৫
দূরত্বঃ ৪৯ আলোকবর্ষ
বিষুব লম্বঃ +৬২.৫ ডিগ্রি
নামঃ আলফা সিফিয়াই


সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/brightest-stars/alderamin-the-kings-brightest-star
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Alpha_Cephei
Category: articles

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

আজকের তারিখ ২৪ আগস্ট। ১০ বছর আগের এই দিনে গ্রহের খাতা থেকে বাদ পড়ে যায় তৎকালীন নবম গ্রহ প্লুটো। তোলপাড় ওঠে পুরো পৃথিবীতে। অনেকেই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি, এমনকি অনেক জ্যোতির্বিদও।

গ্রহের খাতা থেকে বাদ দেবার সময় বোঝা যায়, মানুষের কাছে প্লুটো বেশ জনপ্রিয় বস্তু। প্রথমবারের মতো নিউ হরাইজনস যান যখন তাই প্লুটো অভিযানে গিয়ে এতে হার্টের আকৃতি আবিষ্কার করে, ব্যাপারটি তখন পরিহাস হয়ে দাঁড়ায়। ছবিটি গ্রহের ৪৫০,০০ ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা।   

২০০৬ সালের এই দিনে নেপচুন হয়ে গেল সৌরজগতের সর্বেশেষ গ্রহ। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির (IAU) দেওয়া গ্রহের নতুন সংজ্ঞা অনুসারে এল এ সিদ্ধান্ত। ২০০৬ সালের আগে কোনো বস্তুকে ভর বা আকারের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করবার কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়নি। কিন্তু সৌরজগতের বাইরের অঞ্চলের দিকে হাউমেয়া ও মাকিমাকির মতো বস্তুরা আবিষ্কৃত হতে শুরু করলে এর প্রয়োজন অনুভব হওয়া শুরু হয়। ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত এরিসের ভর আবার প্লুটোর চেয়ে বেশি। অতএব, প্লুটো গ্রহ হলে এরিস কেন হবে না?

এই প্রশ্নটিই আইএইউর মাথায় এল। এই প্রশ্নের সমধান করতে গিয়েই প্ল্যানেট ডেফিনিশান কমিটি বানানো হয়, যার ফলাফল- প্লুটোর অবনতি।

এই কমিটির সিদ্ধান্তেই বাদ পড়ে প্লুটো। সিদ্ধান্তটা অবশ্যই পরিস্থিতির দাবিই ছিল। 

কমিটির সামনে কয়েকটি রাস্তা ছিল। একটি রাস্তা ছিল ভর বা সাইজের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক্ষেত্রে প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে মেনে নিলে এরিস এবং সেরেসও (গ্রহাণু বেষ্টনির সবচেয়ে বড়ো বস্তু) তাহলে গ্রহ হয়। কিছু সময়ের জন্যে মনে হয়েছিল যে এই সিদ্ধান্তই হয়ত হবে।

আরেকটি উপায় ছিল যে নির্দিষ্ট কোন যুক্তি দিয়ে গ্রহের সংজ্ঞা দেওয়া হবে না। পৃথিবী একটি গ্রহ, প্লুটোও আরেকটি গ্রহ। এরিস গ্রহ নয়, কারণ আমাদের ইচ্ছা হয়নি তাই।

২০০৬ এর ২৪ আগস্ট তারিখে আইএইউ ফলাফল জানিয়ে দিল। ঠিক হল, গ্রহের জন্যে নতুন একটি সংজ্ঞা থাকবে। তিনটি শর্ত নিয়ে এই সংজ্ঞা তৈরি:
১। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে হবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথ থেকে অন্য বস্তুদের সরিয়ে দেবে।

আরো দেখুনঃ
গ্রহের পরিচয়
প্রদক্ষিণ বনাম আবর্তন

তিন নম্বর শর্তটিই প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে উৎখাত করেছে। কোনো বস্তুকে গ্রহ হতে হলে একে এর নিজস্ব কক্ষপথের আধিপত্য ধরে রাখতে হবে। অন্য বস্তুদেরকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে, নয়ত নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে হবে।

প্লুটো এর কক্ষপথ অঞ্চলের মোট ভরের মাত্র ০.০৭ ভাগ নিজের করে রাখতে পেরেছে। অথচ পৃথিবীর কাছে রয়েছে নিজের কক্ষপথ অঞ্চলের অন্যান্য বস্তুর ভরের ১৭ লক্ষ গুণ ভর।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাইয়ে প্লুটোর নিকটতম অবস্থানে পৌঁছার মাত্র ১৫ মিনিট পরে ছবিটি তোলে নিউ হরাইজনস। ১৮, ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে ১২৫০ কিমি. এলাকা। 

ঐ একই দিনে প্লুটোকে বামন গ্রহ পদবীতে ভূষিত করা হল। বামন গ্রহের জন্যেও একটি সংজ্ঞা ঠিক করা হল:
১। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথের একচ্ছত্র মালিক হবে না
৪। কোনো উপগ্রহ হবে না

আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমতির মতে এখন পর্যন্ত বামন গ্রহ আছে পাঁচটি। এরা হল, প্লুটো, সেরেস, এরিস, হোমিয়া ও মাকিমাকি। তবে ষষ্ঠ বামন গ্রহ হিসেবে 2007 OR10 ছাড়াও আরো অনেক অনেক দাবিদার রয়েছে।

বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, বহিঃস্থ সৌরজগতের কাইপার বেল্ট অঞ্চলে শত শত অনাবিষ্কৃত বামন গ্রহ রয়েছে।

প্লুটোকে খোঁজা শুরু হয়েছিল কেন সেও এক মজার কাহিনী। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখছিলেন, কিছু একটা নেপচুনের কক্ষপথে বিকৃতি ঘটাচ্ছে। ১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত না হয়ে যদি আরো এক দশক পরে এটি আবিষ্কৃত হত তাহলে কাইপার বেল্ট থাকার কারণে প্লুটো আর গ্রহ খ্যাতিই পেত না।

প্লুটোপ্রেমীরা হতাশ হলেও তাদের জন্যেও একটি সান্ত্বনা পুরস্কার রয়েছে। প্লুটো এ জন্যে বিখ্যাত যে একে কেন্দ্র করেই সৌরজগতের বস্তুরা একটি সংজ্ঞা পেয়েছে।

আরো পড়ুনঃ
প্লুটোর গ্রহত্ব হারানোর কাহিনী
Category: articles

শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬

আজকে আমরা দেখবো ব্ল্যাকহোল ভ্রমণ করতে গেলে আমাদের ভাগ্যে কী হবে? আমরা চাঁদে যেতে পারি, মঙ্গলে যেতে পারি। হয়ত কোন দিন সৌরজগৎ পেরিয়ে কোন ভিনগ্রহেও পাড়ি জমাতে পারি। আমরা না গেলেও নাসার মহাকাশযান ভয়েজার ১ এবং ২ তো ইতোমধ্যেই সৌরজগৎ পেরিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে বিচরণ করছে। এটা হতে পারে আমাদের দূর মহাকাশে যাবার একটি নিশানা।

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, সূর্যের চেয়ে অনেক বিশাল- সাধারণত সুপারজায়ান্ট জাতীয় নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের মাধ্যমে বহিরাবরণ ছুঁড়ে ফেলার পর বাকী অংশ গুটিয়ে গিয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। আর ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে তৈরি হয় সিঙ্গুলারিটি। এটি হচ্ছে ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে অবস্থিত অতিশয় ক্ষুদ্র একটি বিন্দু।  এর দিকে আমরা যতই এগোবো, ততই মহাকর্ষের শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে অসীমের দিকে যেতে থাকবে এবং স্থান-কালের (Space-time) বক্রতাও ক্রমশ অসীমের দিকে ছুটবে। আর, ঠিক সিঙ্গুলারিটিতে স্থান-কাল আমাদের পরিচিত উপায়ে আর কাজ করবে না। তাহলে আমরা এতে গেলে কী ঘটবে?

একটি সরল ব্ল্যাক হোল নিয়ে চিন্তা করা যাক। ধরলাম, বিপুল পরিমাণ ভর থাকলেও এর কোন বৈদ্যুতিক আধান (Electric charge) বা ঘূর্ণন প্রবণতা নেই।

ব্ল্যাক হোলের বিভিন্ন অঞ্চল

ছবিতে ব্ল্যাক হোলের বিভিন্ন স্তর দেখা যাচ্ছে। সবুজ রঙ চিহ্নিত অঞ্চলটি হচ্ছে নিরাপদ অঞ্চল। এখানে আমাদের মহাকাশযান নিরাপদে এবং ভারসাম্য বজায় রেখে কক্ষপথে অবস্থান করতে পারবো। চাইলে আমরা ফিরেও আসতে পারবো।  হলুদ অঞ্চলটি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে একটু গড়বড় হয়ে গেলেই আমরা ব্ল্যাক হোলের শিকার হয়ে যেতে পারি। তাই, এখানে মহাকাশযানে পাইলটকে অতিমাত্রায় দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। সেক্ষেত্রে, এখানেও মহাকাশযানের জন্যে একটি কক্ষপথের ব্যাবস্থা করা সম্ভব যদিও সেটা হবে অস্থিতিশীল (Unstable)।

কমলা রঙের অঞ্চল বিপদ সঙ্কেত প্রদান করছে। এখানে স্থিতিশীল বা অস্থিতিশীল- কোন রকম কক্ষপথই পাওয়া যাবে না। এখানে অবস্থান ধরে রাখতে হলে আমাদেরকে অবিরত জ্বালানী খরচ করে ব্ল্যাক হোলের বাইরের দিকে যানের ধাক্কা বজায় রাখতে হবে। এ অঞ্চলে আমরা যতই ভেতরের দিকে যাবো, ততোই রকেটের পরিশ্রম বাড়াতে হবে। লাল অঞ্চল ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত (Event horizon)। এখান থেকে ফিরে আসার কোন উপায় নেই।

ব্ল্যাক হোলের দিকে যাত্রা

উপরের ছবিতে একটি ঘড়ি দেখা যাচ্ছে। আমাদের সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছার সময় মাপছে ঘড়িখানা- আমাদের প্রচলিত সময়ের হিসাব অনুযায়ী। কিন্তু আমরা যতই ভেতরে যাবো, সময় ধীরে চলার কারণে ঘড়ির কাঁটার গতি কমে যাবে।

এখন ধরা যাক এবার আমরা সবুজ অঞ্চল থেকে ভেতরে পা বাড়ালাম। সাথে সাথে আমাদের চোখে পড়বে ব্ল্যাক হোল বাইরের নক্ষত্রের আলোকে এর সীমানায় এনে বৃত্তাকার কক্ষপথে স্থান দিয়েছে। এটা আসলে গ্র্যাভেটেশনাল লেন্সিং এর প্রতিক্রিয়া।  ব্ল্যাক হোল স্থান-কালকে বাঁকিয়ে ফেলায় আমরা একই সাথে এর সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিক দেখতে পাবো। যেমন, ছবিতে ব্ল্যাক হোলের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু একই সাথে দেখা যাচ্ছে। লাল ফেব্রিক চিহ্নিত এই অঞ্চলই ব্ল্যাক হোলের সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ।
সোয়ার্জাসাইল্ড ব্যাসার্ধই হল ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্তের সীমানা, যার ভেতর থেকে কোনো কিছু বের হতে পারে না, কোন কিছু দেখা যায় না।

আরো পড়ুন
গ্র্যাভেটেশনাল লেন্সিং কীভাবে ঘটে?
ব্ল্যাক হোল কত বড়ো হয়? (এখানে সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে)

৩ সোয়ার্জসাইল্ড দূরত্বে আমাদের কক্ষপথ সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখানে যতক্ষণ আছি- আমরা নিরাপদ। চাইলে আবার ফিরে আসতে পারবো। যখন এটা পাড়ি দিয়ে ২ সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধে পৌঁছবো, এবার অবস্থান হয়ে যাবে ভারসাম্যহীন। এখানে যানের জ্বালানি খরচে একটু এদিক-ওদিক হয়ে গেলেই আমার হয় সোজা ব্ল্যাক হোলের দিকে চলে যাবো অথবা উল্টোদিকে- বাইরের দুনিয়ায় ধেয়ে আসবো।


এই অঞ্চলেই ফোটন স্ফিয়ার তথা আলোকমণ্ডলের (Photon sphere) অবস্থান। এখানে স্বয়ং আলো অবিরত কক্ষপথে ঘুরপাক খেতে থাকে। এটাই ছিল আমাদের প্রথম পর্বের প্রশ্ন। আশা করি, উত্তর পেয়ে গেছেন। এটাই ব্ল্যাক হোলের নিকটতম দূরত্ব যেখানে কোনো কিছু কক্ষপথ পেতে পারে। আমরা যদি এখানে (ফোটন স্ফিয়ারে) আমাদের যানকে ধরে রাখতে চাই তাহলে অসীম জ্বালানি খরচ করতে হবে।
এবার আমরা প্রবেশ করবো ১ সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ পাড়ি দিয়ে দিগন্তের দিকে।



এখানেই ঘটবে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। লাল ঘটনা দিগন্ত দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে- দিগন্ত এবং প্রতি দিগন্ত (Horizon, anti-horizon)। আমরা দিগন্ত ভেদ করলে আসল দিগন্ত আমাদের চোখে দৃশ্যমান হবে। অন্য দিকে, প্রতি-দিগন্ত আমাদের সামনেই থেকে যাবে। একে আমরা কখোনই অতিক্রম করে যেতে পারবো না। আচ্ছা, ব্ল্যাক হোলের ভেতরে চলে গেলে কি আমরা অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাবো? এটা ভুল ধারণা। আমরা যতই ভেতরে যাবো, বাইরের বিশ্ব ততোই উজ্জ্বল মনে হবে।

ব্ল্যাক হোলের ভেতরে অন্ধকার নয়, বরং অনেক অনেক আলোকিত দেখাবে

এরপর আমরা আরো ভেতরে গেলাম। কী হবে- একটু পর বলছি। কিন্তু আমরা কখোনই সিঙ্গুলারিটিত দেখতে পারবো না। কেননা, কোন আলোই এর থেকে বাইরের দিকে আসতে পারে না। সব চলে যায় এর পেটের ভেতর।

আমরা কখোনই আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য তথা সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছবো না। কেন? আচ্ছা, বিস্তারিত বলছি।
মনে করুন আপনি নভোযানে চড়ে একে আমাদের মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলটির দিকে চালিয়ে দিলেন। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলেন ব্ল্যাক হোলের তীরে । এবার যান বন্ধ করে দিলেন। কী ঘটবে?
প্রথমে এর মহাকর্ষ একেবারেই অনুভব করবেন না। যেহেতু আপনি মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর মত করে বিনা বাধায় পড়ছেন, আপনার দেহের প্রত্যেকটি অংশ এবং তোমার নভোযান- সব কিছুই একইভাবে ব্ল্যাক হোলের দিকে ধাবিত হবে। অনুভব হবে ওজোনহীনতা। পৃথিবীর চারদিকে কৃত্রিম উপগ্রহে বসবাসরত নভোচারীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। যদিও পৃথিবীর অভিকর্ষ নভোচারী এবং স্পেইস শাটল- দুটোকেই টানছে, তবু এরা কোন অভিকর্ষ বল অনুভব করে না, কারণ সব কিছু ঠিক একইভাবে টান অনুভব করছে।

ব্ল্যাক হোলের যতই কাছাকাছি হবেন, আস্তে আস্তে এর মহাকর্ষজনিত শক্তিমত্তা অনুভূত হতে থাকবে। মনে করুন, আপনার পা আপনার মাথার চেয়ে ব্ল্যাকহোলের নিকটবর্তী। ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্র থেকে কোন বস্তু যত বেশি কাছে থাকবে, তার উপর এর আকর্ষণও তত প্রকট হবে। এবার ভাবুন, আপনার পা কিন্তু মাথার চেয়ে দানবের মুখের বেশি কাছে। ফলে, ব্ল্যাক হোল আপনাকে টেনে লম্বা বানিয়ে দেবে।

ব্ল্যাক হোলের কাছে গেলে মাথা ও পায়ের প্রতি মহাকর্ষীয় আকর্ষের তারতম্যের কারণে এক অংশ লমাব হয়ে এমন সেমাইয়ের মতো হয়ে যাবে। 

যতই কাছে যাবেন, পা ও মাথার প্রতি ব্ল্যাক হোলের অসম আকর্ষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।
কেমন হবে, যদি আপনার পায়ের দৈর্ঘ্য হয়ে যায় ১০ ফুট বা ১০০ ফুট। আরো মারাত্মক কথা হলো, পাতো শুধু লম্বাই হবে না, এক সময় দেহ থেকে আলাদাই হয়ে যাবে। ভয় লাগছে?

তবে, উপরোক্ত বিপদ কাটানোর একটি উপায় আছে বটে! বলছি পরে। আপনার ব্ল্যাক হোল অভিযানের স্বপ্নের কিন্তু সমাপ্তি ঘটে যায়নি। হতাশ হবেন না!

আপনি যদি অভিযানের জন্যে একটি বড় ব্ল্যাক হোল বেছে নেন, তাহলে এর কেন্দ্র থেকে ৬ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বের না যাওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যণীয় প্রভাব অনুভূত হবে না। এটা হলো এর ঘটনা দিগন্তের সীমানা। কিন্তু আপনি যদি একটি ছোট, মনে করুন সূর্যের কাছাকাছি ভরের, একটি ব্ল্যাক হোল বাছাই করেন, তাহলে আপনি এর কেন্দ্রের ৬ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছতেই কাছে অসহনীয় অবস্থা অনুভূত হবে। এই ক্ষেত্রে, ঘটনা দিগন্তে পৌঁছার আগেই আপনি টুকরো টুকরো হয়ে যাবেন। এই জন্যেই ব্ল্যাক হোল অভিযানে যেতে চাইলে বড়োসড়ো কোন ব্ল্যাক হোল বাছাই করাই নিরাপদ। ভেতরে গিয়ে অন্তত পৌঁছতে না পারলেতো অভিযান শুরুই হলো না!

ব্ল্যাক হোলে পতনের সময় আপনি কী দেখবেন?

মজার ব্যাপার হলো, আপনি যে বিশেষ মজার কিছু দেখে ফেলবেন- এমন কিন্তু না। আপনি যদি দূরের কোন দৃশ্য দেখতে যান, তবেই লাগবে বেখাপ্পা। বস্তুর চেহারা বিকৃত দেখাবে, কারণ ব্ল্যাক হোল এর অভিকর্ষের প্রভাবে আলোকে বাঁকিয়ে এনে আপনার চোখে ফেলবে। কাঁচের পানির গ্লাসের ভেতর দিয়ে কখনো বিপরীত দিকে তাকিয়েছেন নিশ্চয়ই? কেমন দেখায়? এবড়োথেবড়ো বিম্ব, তাই না? একই প্রভাব পরিলক্ষিত হবে এখানেও। কিন্তু ঐটুকুই। ঘটনা দিগন্ত অতিক্রম করার সময় আর বিশেষ কিছু ঘটবে না।

ঘটনা দিগন্ত ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করার পরেও আপনি বাইরের দৃশ্য দেখতে পাবেন। কারণ, তখনো বাইরের আলো আপনার কাছে পৌঁছতে পারবে। তবে, এখন বাইরের কেউ আপনাকে দেখতে পাবে না। কারণ, আপনার দেহ থেকে আসা আলো ঘটনা দিগন্তকে ভেদ করতে পারছে না।

এই সব কিছু ঘটতে কতক্ষণ লাগবে? ব্যাপারটা নির্ভর করে আপনার যাত্রা শুরুর অবস্থানের ওপর। মনে করুন, আপনি এমন জায়গা থেকে যাত্রা শুরু করলেন, যা ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রবিন্দু থেকে এর সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের ১০ গুণ দূরে অবস্থিত। তাহলে, প্রায় ১০ লাখ সৌর ভরের সমান ভরযুক্ত ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত অতিক্রম করতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৮ মিনিট। এই সীমানা পার হবার পরে, কেন্দ্রে পৌঁছতে আপনার আর মাত্র ৭ সেকেন্ড সময় লাগবে। ব্ল্যাক হোলের আকার বড়ো- ছোট হবার সাথে সাথে এই সময়ও কম বেশি হবে।

ঘটনা দিগন্ত পার হবার পরবর্তী ৭ সেকেন্ডে আপনার ভয় লাগা শুরু হতে পারে। আপনি হয়তো ভয় পেয়ে আপনার নভোযানকে পেছনে ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা চালাবে, যাতে কেন্দ্রে যেতে না হয়। কিন্তু হায়! বৃথা চেষ্টা। কেন্দ্রে পৌঁছা ছাড়া যে উপায় নেই। কী আর করা, এই শেষ সময়টুকু উপভোগ করে নেওয়াই ভালো।
এতো গেল আপনার কথা। মনে করুন, আপনার এক প্রিয় বন্ধু (নাম দিলাম জায়েদ) আপানকে বিদায় জানাবার জন্যে ঘটনা দিগন্তের ওপারে অপেক্ষা করছিল। ও কী দেখবে? আসলে, ও আপনার চেয়ে সম্পুর্ণ ভিন্ন দৃশ্য দেখবে। আপনি দিগন্তের যত কাছাকাছি হবেন, ততই ওর কাছে মনে হবে, আপনার গতিবেগ কমে যাচ্ছে। ও যদি কেয়ামত পর্যন্তও অপেক্ষা করতে থাকে, তবু আপনাকে কোনো দিনই ঘটনা দিগন্ত পাড়ি দিতে দেখবে না ।

সত্যি বলতে, প্রথমে ব্ল্যাক হোল যে পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছিল তার সম্পর্কে কম বেশি- একই কথা বলা চলে। একটি সংকোচনশীল (Collapsing) নক্ষত্র থেকে সৃষ্ট ব্ল্যাক হোলের কথা ধরা যাক। ব্ল্যাক হোল গঠিত হবার জন্যে যখন এর উপাদানগুলো সঙ্কুচিত হতে থাকবে, জায়েদ একে ক্রমেই ছোট হয়ে যেতে দেখবে। ওর চোখে এর ব্যাসার্ধ আস্তে আস্তে স্কোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের নিকটবর্তী হতে থাকবে, কিন্তু কখনো এর সমান হবে না। এই কারণেই আগে ব্ল্যাক হোলকে হিমায়িত নক্ষত্র (Frozen star) বলা হতো। কারণ, এরা স্কোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের কিছুটা বড়ো ব্যাসার্ধ্যে এসে জমে যায়।

ও এমন দেখবে কেন? আসলে এটা একটি আলোকীয় দৃষ্টিভ্রম (Optical illusion)। ব্ল্যাক হোল গঠিত হবার জন্যে যেমন অসীম সময়ের দরকার হয় না, তেমনি ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত ভেদ করতেও এত সময় লাগে না। আপনি দিগন্তের যত কাছাকাছি হবেন, আপনার কাছ থেকে আসা আলো জায়েদের কাছে পৌঁছতে ক্রমেই বেশি সময় লাগতে থাকবে। অন্য দিকে, আপনি দিগন্ত পাড়ি দিয়ে ভেতরে যাবার সময়ে নিঃসৃত আলোটুকু কখনোই ওর কাছে যাবে না, এটা চিরকাল ভেসে থাকবে দিগন্তেই। এর ফলে, আপনি চির দিনের জন্যে ব্ল্যাক হোলে হারিয়ে গেছেন, আর কোন দিন ফিরেও আসবেন না- এই খবরটুকুও জায়েদ জানতে পারবে না। ওর কাছে মনে হবে, কোন কারণে আপনার ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ করতে দেরি হচ্ছে।

পুরো প্রক্রিয়াটি আরেকভাবে চিন্তা করা যায়। দূরবর্তী অঞ্চলের চেয়ে ঘটনা দিগন্তের কাছে সময় অনেকটা ধীরে প্রবাহিত হয়। ধরুন, আপনি নভোযানে চড়ে ঘটনা দিগন্তের বাইরের একটি জায়গায় ভেসে থাকলেন (পতন থেকে রক্ষা পেতে বিপুল জ্বালানি পুড়িয়ে)। এবার আপনি যদি জায়েদের সাথে গিয়ে দেখা করুন, দেখা যাবে ওর বয়স আপনার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। কারণ, ব্ল্যাক হোলের কারণে ওর তুলনায় আপনার সময়ের গতি ছিল ধীর।

আচ্ছা, দুইটির ব্যাখ্যার কোনটি আসলে সঠিক? ব্যাপারটা নির্ভর করে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কিত আপনার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার ওপর। সোয়ার্জসাইল্ড স্থানাঙ্ক নামে পরিচিত প্রচলিত স্থানাঙ্ক বিবেচনা করলে, আপনি দিগন্তে পাড়ি দিবেন স্থানাঙ্কের মানে সময় (t) যখন অসীম হবে। ফলে, স্থানাঙ্কের এই হিসেব অনুসারে, দিগন্ত পার হতে আপনার অসীম সময়ই লাগবে। এর কারণ হচ্ছে, সোয়ার্জসাইল্ড স্থানাঙ্ক ঘটনা দিগন্তের নিকটবর্তী অঞ্চলের বিকৃত দৃশ্য প্রদান করে। আর ঠিক দিগন্তের ওপরে স্থানাঙ্ক নিরতিশয় (Infinitely) বিকৃত হবে।

আপনি যদি স্থানাঙ্ককে এরূপ বিকৃতির হাত থেকে বাঁচাতে চান, তবে বিকল্প উপায়ে হিসাব করলে ,আপনার দিগন্ত ভেদ করতে প্রয়োজনীয় সময়ের (t) সসীম একটি মান পাবেন। কিন্তু, জায়েদ যে সময় আপনাকে তা করতে দেখবে সেই সময়টি আবার অসীম। ওর কাছে আসলে আপনার খবর পৌঁছতে অসীম সময় লাগবে। আপনি যে কোনো স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারেন বটে, ফলাফল একই পাবেন। এ জন্যে আসলে দুটো ব্যাখ্যাই সঠিক এবং একই কথার দ্বিরূপ মাত্র।

বাস্তবে আসলে খুব বেশি সময় গড়াবার আগেই আপনি জায়েদের নজর থেকে উধাও হয়ে যাবেন। ব্ল্যাক হোল থেকে দূরে ধাবিত আলো লাল সরণ (Red shift) প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। আপনি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কোন দৃশ্যমান আলো নির্গত করলে জায়েদের কাছে যেতে যেতে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘতর হয়ে পড়বে। আপনি দিগন্তের কাছাকছি হতে থাকলে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়েই চলবে। একটা সময় তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান পাল্লাকে ছাড়িয়ে যাবে। এটা হয়ে যাবে অবলোহিত বিকিরণ এবং পরে বেতার বেতার তরঙ্গে পরিণত হবে। এক সময় তরঙ্গদৈর্ঘ্যে এত দীর্ঘ হবে যে জায়েদের চোখে এটি আর ধরা পড়বে না।

অন্য দিকে, আলো নির্গত হয় ফোটন নামক স্বতন্ত্র গুচ্ছ আকারে। ধরুন, আপনি দিগন্ত ত্যাগ করার সময় শেষ আলোকবিন্দু নির্গত করলেন। এই আলো জায়েদের কাছে কোন সসীম সময়েই পৌঁছবে। উপরোক্ত লক্ষ সূর্যের সমান ভরের ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে এতে সময় লাগবে ঘণ্টাখানেকেরও কম। এর পর? ও আর কিছুই দেখবে না। আপনি ভেতরে ডুব দিয়ে আর যে আলোই নিক্ষেপ করবেন, তা আপনার প্রিয় বন্ধুর সান্নিধ্যে আর কখনো পৌঁছাবে না। আপনি চিরতরে হারিয়ে গেলেন ব্ল্যাক হোলের গভীরে। এর পর তোমার কী হবে? এটা পরের কোনো পর্বে দেখবো। ব্ল্যাক হোলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে পড়ে নিয়েন। আর আসলে সেটাতো আপনিই আমাদের চেয়ে ভালো জানবেন, তাই না?

তবে, ব্ল্যাক হোলে গেলেই সব শেষ- ব্যাপারটি পুরোপুরি এমনও নয় কিন্তু। আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বেরই একটি সমাধান অনুসারে ব্ল্যাক হোলের অভ্যন্তরে তৈরি হয় ওয়ার্মহোল। ওয়ার্মহোল হচ্ছে স্থান-কালের এক পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্টে পৌঁছে যাবার শর্টকাট পথ। এটা হতে পারে কোন স্থান বা সময় থেকে অন্য কোন সময় –অতীত বা বর্তমানে বা অন্য কোন সময়েরই মহাবিশ্বের অন্য কোন স্থান (যেমন অন্য কোন গ্যালাক্সি) এমনকি হতে পারে অন্য কোন মহাবিশ্বেও! আগামী কোনো পর্বে আমরা ওয়ার্মহোল ও টাইম ট্র্যাভেল নিয়ে বিস্তারিত জানবো।

গত পর্বে প্রশ্ন ছিল, স্টেলার ব্ল্যাক হোলরা কেন জীবনের অন্তিম সময়েই ব্ল্যাক হোল হয়? এ সময়তো তাদের ভর অনেক কমে যায়। জীবনের শুরুতেই কেন হয় না, যখন ওদের ভর থাকে তুলনামূলক বেশি?

উত্তরঃ জীবনের শুরুতে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটি নক্ষত্রে দুইটি বল কাজ করে। একটি এর নিজস্ব অভিকর্ষজনিত অন্তর্মুখী চাপ এবং অপরটি ফিউশন বিক্রিয়াজনিত বহির্মুখী চাপ। এই দুটি বলে একে অপরকে নাকচ করে দিয়ে নক্ষত্রকে স্থিতিশীল রাখে। কিন্তু জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি যখন মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন অভিকর্ষকে ঠেকানোর মত আর কোন কার্যকরী বল থাকে না। এই কথা অবশ্য যথেষ্ট ভরযুক্ত নক্ষত্রের জন্যে প্রযোজ্য। কম ভরের ক্ষেত্রে আবার সংকোচনশীল বস্তুর নিজদের সাথে সংঘর্ষজনিত ডিজেনারেসি প্রেসার অভিকর্ষকে কিছুটা প্রতিহত করে।

[লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরদের উপযোগী করে ব্যাপন ম্যগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।]

অন্যান্য পর্ব



Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...