পরমাণুর মাঝে যে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব আছে, তা আমরা জানতে পারি বিশ শতকের শুরুর দিকে। এই নিউক্লিয়াস কী দিয়ে গঠিত? কোন কোন কণা আছে এর মাঝে? কণাগুলো কীভাবে এর মাঝে আছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে বিশ শতকের প্রায় অর্ধেকটাই পার হয়ে যায়। অবশেষে যা জানা যায় তা হলো, নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন নামক দুই ধরণের কণা একত্রে আবদ্ধ থাকে। একটি নিউক্লিয়াসে যত সংখ্যক প্রোটনই থাকুক না কেন, তারা যদি একত্রে থাকে তবে সেটা অবশ্যই কোনো না কোনো বলের কারণেই একত্রে আছে।
এই কণাগুলো যে বলের সাহায্যে আবদ্ধ থাকে, সেই বলকে বলা হয় সবল নিউক্লীয় বল। এই বল স্বল্প পাল্লার, অত্যাধিক শক্তিশালী ও আকর্ষণধর্মী। কেননা কুলম্ব সাহেবের স্থির বৈদ্যুতিক সমধর্মী চার্জের পরস্পর বিকর্ষণ করার সূত্র হতে আমরা জানি দুটো প্রোটন খুব নিকটে থাকলে প্রচণ্ড বিকর্ষণ করার কথা। কিন্তু তারা সেটা না করে বরং প্রচণ্ড আকর্ষণের সহিত নিউক্লিয়াসের মাঝে থাকে। আর এই আকর্ষণধর্মী বলটির নামই হলো সবল নিউক্লীয় বল।
সবল নিউক্লীয় বলের সাথে সাথে আরও আছে দুর্বল নিউক্লীয় বল। এই বল আবার কোনো আকর্ষণ-বিকর্ষণে জড়িত থাকে না। এর কাজ হল নিউক্লিয়াসের তেজস্ক্রিয় ভাঙন ঘটানো তথা নিউক্লিয়াস থেকে বিটা রশ্মি ক্ষয় করা। দূর্বল নিউক্লীয় বলকে তাই বল না বলে দুর্বল নিউক্লীয় মিথষ্ক্রিয়া বলাটা বেশি উত্তম। এই দুর্বল নিউক্লীয় মিথস্ক্রিয়া পদার্থবিদ্যার CP-প্রতিসাম্য লঙ্ঘন করে। প্রতিসাম্য হলো পদার্থবিদ্যার একটা কারসাজি। CP-প্রতিসাম্য হলো চার্জ ও প্যারিটি নামক দুই প্রতিসাম্যর মিশ্র প্রতিসাম্য। এর বক্তব্য হলো, একটি কণাকে এর প্রতিকণার সাথে অদল-বদল করলেও পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলোর কোনো নড়চড় হবে না। এ অংশের নাম সি প্রতিসাম্য (C symmetry)। আর পি প্রতিসাম্যে মানে, কণাকে এর দর্পণ রূপের সাথে অদল-বদল করলেও সূত্র একই রকম থাকবে।
প্রতিসাম্য বিশ্লেষণ করে কণিকা-প্রতিকণিকা সম্পর্ক, প্রকৃতির নিয়ম ইত্যাদি স্পষ্ট হওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো দুর্বল নিউক্লীয় বল CP-প্রতিসাম্যকে লঙ্ঘন করলেও সবল নিউক্লিয় বল CP-প্রতিসাম্যকে তেমন একটা লঙ্ঘন করে না। তত্ত্বীয়ভাবে এটা খুবই ব্যতিক্রমী ও ব্যাখ্যাহীন একটা ঘটনা। কণা-পদার্থবিদ্যার ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় সবল CP সমস্যা।
এই সবল CP সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিছু বিজ্ঞানী ধারণা করেছেন, অ্যাক্সিয়ন নামক একটি ক্ষেত্র আছে। সবল নিউক্লিয় বলের ক্ষেত্রে CP-প্রতিসাম্য লঙ্ঘনের জন্য দায়ী প্রভাবকগুলোকে এই অ্যাক্সিয়ন ক্ষেত্র নিস্ক্রিয় করে ফেলে। ফলে সবল নিউক্লিয় বল CP-প্রতিসাম্যকে লঙ্ঘন করতে পারে না। ১৯৭৭ সালে বিজ্ঞানী রবার্তো দানিয়েল ও হেলেন কুইন গাণিতিকভাবে দেখান, এই অ্যাক্সিয়ন ক্ষেত্র কীভাবে সবল CP সমস্যা সমাধান করতে পারে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী ওয়াইনবার্গ দেখান যে, এই কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের অস্তিত্ব থাকলে একটি কোয়ান্টা তথা ক্ষেত্রকণাও থাকবে, যার নাম তিনি দেন অ্যাক্সিয়ন কণা। ভবিষ্যদ্বাণীর পর থেকেই গত ৪০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিভিন্নিভাবে এই কণার অনুসন্ধান করছেন। তবুও এখন পর্যন্ত এই কণার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এই কণার একটি ধর্ম হলো - তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাঝে অ্যাক্সিয়ন কণা মুহূর্তের মাঝে ভেঙে গিয়ে ফোটন কণার জন্ম দিবে। এই কণাটির ভর অনেক অনেক কম। দশমিকের পর ৪০ টি শূন্য দিয়ে একটি ১ বসালে যত কেজি হয়, একটি কণার ভর প্রায় তত। কণাটির কোনো চার্জ নেই। তাই একে শনাক্ত করাও দুরূহ কাজ বটে।
জ্যোতিপদার্থবিদ্যার অন্যতম রহস্য ডার্ক ম্যাটারের সম্ভাব্য কারণ হিসেবেও অ্যাক্সিয়নকে দায়ী করা হয়। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে ডার্ক ম্যাটারের কারণ হবে WIMP (Weakly Interacting Massive Particle বা দুর্বল মিথষ্ক্রিয়ায় অংশ নেওয়া ভারী কণা) জাতীয় কোনো কণা, অ্যাক্সিয়ন নয়।
অ্যাক্সিয়ন শণাক্তকরণ অনেক কঠিন হলেও শক্তিশালী তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রে নিয়ে এসে ফোটন কণায় পরিণত করে এই কণার খোঁজ করার জন্য কাজ চলছে। ইউরোপের নিউক্লীয় গবেষণা সংস্থা সার্নও ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে।
অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ল্যাবে এই কণাকে নিয়ে গবেষণা হলেও গত বছরের শুরুতে এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) একদল গবেষক শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা নতুন এক পদ্ধতিতে অ্যাক্সিয়ন কণার অনুসন্ধান শুরু করছেন। বেশ কয়েকটি গবেষণা দাবী করেছে ইতোমধ্যেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে এই কণা। যদিও এখনও তা সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
যদি অ্যাক্সিয়ন কণা পাওয়া সম্ভব হয়, তবে কণা-পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির একটি তথা সবল CP সমস্যা অতি দ্রুতই সমাধান করা যাবে। তাই যতদিন অ্যাক্সিয়ন কণা ধরা না দেয়, ততদিন কণা-পদার্থবিদরা না হয় আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষনকেন্দ্র ও এমআইটি-র সেই গবেষক দলের দিকেই তাকিয়ে থাকুক।
১। সি,পি ও টি প্রতিসাম্য - ম্যাট স্ট্রসলার।
২। আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ওয়েবসাইট।
১। উইকিপিডিয়াঃ Axion, CP violation এবং Weakly interacting massive particles
এই কণাগুলো যে বলের সাহায্যে আবদ্ধ থাকে, সেই বলকে বলা হয় সবল নিউক্লীয় বল। এই বল স্বল্প পাল্লার, অত্যাধিক শক্তিশালী ও আকর্ষণধর্মী। কেননা কুলম্ব সাহেবের স্থির বৈদ্যুতিক সমধর্মী চার্জের পরস্পর বিকর্ষণ করার সূত্র হতে আমরা জানি দুটো প্রোটন খুব নিকটে থাকলে প্রচণ্ড বিকর্ষণ করার কথা। কিন্তু তারা সেটা না করে বরং প্রচণ্ড আকর্ষণের সহিত নিউক্লিয়াসের মাঝে থাকে। আর এই আকর্ষণধর্মী বলটির নামই হলো সবল নিউক্লীয় বল।
সবল নিউক্লীয় বলের সাথে সাথে আরও আছে দুর্বল নিউক্লীয় বল। এই বল আবার কোনো আকর্ষণ-বিকর্ষণে জড়িত থাকে না। এর কাজ হল নিউক্লিয়াসের তেজস্ক্রিয় ভাঙন ঘটানো তথা নিউক্লিয়াস থেকে বিটা রশ্মি ক্ষয় করা। দূর্বল নিউক্লীয় বলকে তাই বল না বলে দুর্বল নিউক্লীয় মিথষ্ক্রিয়া বলাটা বেশি উত্তম। এই দুর্বল নিউক্লীয় মিথস্ক্রিয়া পদার্থবিদ্যার CP-প্রতিসাম্য লঙ্ঘন করে। প্রতিসাম্য হলো পদার্থবিদ্যার একটা কারসাজি। CP-প্রতিসাম্য হলো চার্জ ও প্যারিটি নামক দুই প্রতিসাম্যর মিশ্র প্রতিসাম্য। এর বক্তব্য হলো, একটি কণাকে এর প্রতিকণার সাথে অদল-বদল করলেও পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলোর কোনো নড়চড় হবে না। এ অংশের নাম সি প্রতিসাম্য (C symmetry)। আর পি প্রতিসাম্যে মানে, কণাকে এর দর্পণ রূপের সাথে অদল-বদল করলেও সূত্র একই রকম থাকবে।
প্রতিসাম্য বিশ্লেষণ করে কণিকা-প্রতিকণিকা সম্পর্ক, প্রকৃতির নিয়ম ইত্যাদি স্পষ্ট হওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো দুর্বল নিউক্লীয় বল CP-প্রতিসাম্যকে লঙ্ঘন করলেও সবল নিউক্লিয় বল CP-প্রতিসাম্যকে তেমন একটা লঙ্ঘন করে না। তত্ত্বীয়ভাবে এটা খুবই ব্যতিক্রমী ও ব্যাখ্যাহীন একটা ঘটনা। কণা-পদার্থবিদ্যার ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় সবল CP সমস্যা।
এই সবল CP সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিছু বিজ্ঞানী ধারণা করেছেন, অ্যাক্সিয়ন নামক একটি ক্ষেত্র আছে। সবল নিউক্লিয় বলের ক্ষেত্রে CP-প্রতিসাম্য লঙ্ঘনের জন্য দায়ী প্রভাবকগুলোকে এই অ্যাক্সিয়ন ক্ষেত্র নিস্ক্রিয় করে ফেলে। ফলে সবল নিউক্লিয় বল CP-প্রতিসাম্যকে লঙ্ঘন করতে পারে না। ১৯৭৭ সালে বিজ্ঞানী রবার্তো দানিয়েল ও হেলেন কুইন গাণিতিকভাবে দেখান, এই অ্যাক্সিয়ন ক্ষেত্র কীভাবে সবল CP সমস্যা সমাধান করতে পারে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী ওয়াইনবার্গ দেখান যে, এই কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের অস্তিত্ব থাকলে একটি কোয়ান্টা তথা ক্ষেত্রকণাও থাকবে, যার নাম তিনি দেন অ্যাক্সিয়ন কণা। ভবিষ্যদ্বাণীর পর থেকেই গত ৪০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিভিন্নিভাবে এই কণার অনুসন্ধান করছেন। তবুও এখন পর্যন্ত এই কণার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এই কণার একটি ধর্ম হলো - তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাঝে অ্যাক্সিয়ন কণা মুহূর্তের মাঝে ভেঙে গিয়ে ফোটন কণার জন্ম দিবে। এই কণাটির ভর অনেক অনেক কম। দশমিকের পর ৪০ টি শূন্য দিয়ে একটি ১ বসালে যত কেজি হয়, একটি কণার ভর প্রায় তত। কণাটির কোনো চার্জ নেই। তাই একে শনাক্ত করাও দুরূহ কাজ বটে।
তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে (নীচের যুগ্ম পুরু রেখা) অ্যাক্সিয়ন কণা থেকে (উপরের বামপাশের ভাঙা ভাঙা রেখা) ফোটন কণা উৎপত্তির (উপরের ডানপাশের বক্ররেখা) ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম। |
জ্যোতিপদার্থবিদ্যার অন্যতম রহস্য ডার্ক ম্যাটারের সম্ভাব্য কারণ হিসেবেও অ্যাক্সিয়নকে দায়ী করা হয়। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে ডার্ক ম্যাটারের কারণ হবে WIMP (Weakly Interacting Massive Particle বা দুর্বল মিথষ্ক্রিয়ায় অংশ নেওয়া ভারী কণা) জাতীয় কোনো কণা, অ্যাক্সিয়ন নয়।
অ্যাক্সিয়ন শণাক্তকরণ অনেক কঠিন হলেও শক্তিশালী তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রে নিয়ে এসে ফোটন কণায় পরিণত করে এই কণার খোঁজ করার জন্য কাজ চলছে। ইউরোপের নিউক্লীয় গবেষণা সংস্থা সার্নও ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের প্রস্তাবিত রূপ। |
অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ল্যাবে এই কণাকে নিয়ে গবেষণা হলেও গত বছরের শুরুতে এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) একদল গবেষক শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা নতুন এক পদ্ধতিতে অ্যাক্সিয়ন কণার অনুসন্ধান শুরু করছেন। বেশ কয়েকটি গবেষণা দাবী করেছে ইতোমধ্যেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে এই কণা। যদিও এখনও তা সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
যদি অ্যাক্সিয়ন কণা পাওয়া সম্ভব হয়, তবে কণা-পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির একটি তথা সবল CP সমস্যা অতি দ্রুতই সমাধান করা যাবে। তাই যতদিন অ্যাক্সিয়ন কণা ধরা না দেয়, ততদিন কণা-পদার্থবিদরা না হয় আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষনকেন্দ্র ও এমআইটি-র সেই গবেষক দলের দিকেই তাকিয়ে থাকুক।
১। সি,পি ও টি প্রতিসাম্য - ম্যাট স্ট্রসলার।
২। আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ওয়েবসাইট।
১। উইকিপিডিয়াঃ Axion, CP violation এবং Weakly interacting massive particles