Advertisement

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য-পিপাসুরা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। কিন্তু খালি চোখে আমরা ঠিক কতগুলো তারা দেখতে পাই? প্রশ্নটির উত্তর এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব নয়। এটা নির্ভর করে আপনার বয়স, চোখের ক্ষমতা, এলাকা, ঋতু, আবহাওয়া, চাঁদ থাকা না থাকা ইত্যাদিসহ অনেকগুলো বিষয়ের উপর। কিন্তু তবুও একটা উত্তর যদি শুনতেই হই তবে সংখ্যাটা হবে কয়েক হাজার। গল্প- উপন্যাসের বইতে যে লাখ লাখ তারার কথা থাকে তা নিছকই বাড়াবাড়ি।
আমেরিকার টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের কাছে আকাশের দৃশ্য
আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।
চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি।

মহাবিশ্বে মোট কত তারা আছে জানেন? তা কেউ জানে না। কারণ সত্যিকারের মহাবিশ্ব কত বড়ো তাই আমরা জানি না। তবে আমরা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কথা বলতে পারি, অর্থ্যাৎ মহাবিশ্বের প্রায় চৌদ্দশো কোটি বছরের প্রসারণে এর যত দূর পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা। আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা অন্তত ১০ হাজার কোটি গ্যালাক্সি দেখতে পাই। প্রতি গ্যালাক্সিতেই গড়ে আবার ১০ হাজার কোটি তারকা থাকে। তাহলে শুধু আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যেই কত কত তারা ভাবুনতো একবার! ১ এর পরে অন্তত ২২টা শূন্য দিলে যা হয় ততগুলো!
এর মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই আছে প্রায় চারশো বিলিয়ন বা চল্লিশ হাজার কোটি তারা। আমরা খালি চোখে যাদেরকে দেখি তারা সব এখানকারই তারকা।
যেসব তারার আপাত উজ্জ্বলতা (+৬) অথবা (+৬.৫) এর নিচে আমরা শুধু তাদেরকেই খালি চোখে দেখি। আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হওয়া তারার কম উজ্জ্বলতা বোঝায়।
সর্বোচ্চ (+৬.৫) মাত্রার তারা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই
আরও পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরা সবাই হয় উত্তর নয়ত দক্ষিণ গোলার্ধে বাস করি। বাংলাদেশে থাকায় আমরা আছি উত্তর গোলার্ধে। এখন উভয় গোলার্ধ থেকে দেখা তারার সংখ্যা কিন্তু সমান হবে না। এমনকি একই গোলার্ধেও অক্ষাংশের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যাবে আকাশের তারার সংখ্যা। অন্য দিকে, আপনি যখন রাতে আকাশের দিকে তাকালেন তখনওতো প্রায় অর্ধেক তারা রয়ে গেছে পৃথিবীর উল্টো পাশের আকাশে। আর সূর্য সব সময় কিছু না কিছু তারাকে ঢেকে রাখে। এরাই হল রাশিচক্রের তারা। এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে এদেরকে দেখা যায় না। তাই তারা গুনতে হলে কয়েক মাস এ জন্যেও অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রাশিচক্র কাকে বলে?

তাহলে আসলে কত তারা দেখা যায়। ঠিক আছে, আপনি যদি মাসের পর মাস সময় নিয়ে দুই গোলার্ধ ঘুরে এসে চাঁদহীন আকাশের তারাগুলো গুনতে পারেন, তবে সব মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার তারা খালি চোখে দেখবেন। আগেই বলেছি, আমরা খালি চোখে সর্বোচ্চ ৬.৫ মাত্রার নক্ষত্র দেখতে পাই। ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ডরিট হফলেইট এই সীমা পর্যন্ত তারগুলো গুনে ফেলেছেন। সংখ্যাটি হয়েছে ৯০৯৬।
এটা হচ্ছে সর্বমোট সংখ্যা। এবার দুই গোলার্ধ ভাগ করে দিলে ভাগে পড়বে গড়ে ৪৫৪৮টি তারা। সব সময় আবার আকাশের এক অংশ আমাদের উল্টো পাশে থাকে। তাই আবার দুই দিয়ে ভাগ দিলে পাব ২২৭৪ টি তারা। এ জন্যেই আমরা বলি খালি চোখে আমরা একবারে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই।
আরও পড়ুনঃ উজ্জ্বল তারাদের গল্প
এখানে প্রধান ২০টি তারকা খুঁজে বের করার উপায় ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বলা আছে।

কিন্তু সাথে একখানা দুরবিন রাখুন। এই সংখ্যা লাফ দিয়ে উঠে যাবে ২ লাখে! আপনি দেখবেন ৯ মাত্রার তারাগুলোও। ১৩ মাত্রার তারা দেখাতে সক্ষম এমন টেলিস্কোপ হাতে পেলে আপনি দেড় কোটি পর্যন্ত তারা দেখতে পাবেন। দারুণ, তাই না!

সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/102630/how-many-stars-are-there-in-the-universe/
২। http://www.skyandtelescope.com/astronomy-resources/how-many-stars-night-sky-09172014/
Category: articles

সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬

রাতের আকাশে চোখ নিক্ষেপ করলেই হাজার হাজার তারার আলো আমাদের চোখে ধরা দেয়। হাজার হাজার বলা অবশ্য ভুল। মেঘহীন পরিষ্কার রাতের আকাশে বড়জোর ২ থেকে আড়াই হাজার তারা দেখা যায়। আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।

চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি। যাই হোক, আমরা দেখতে চাই নক্ষত্রদের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল।


আমরা নিশ্চয়ই জানি, রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হল লুব্ধক। এরপরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে সুহাইল, আলফা সেন্টোরি, স্বাতী, ভেগা ইত্যাদি। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে প্রাথমিক কিছু বিষয় জেনে রাখলে সুবিধা হবে।

তারা ও গ্রহের পার্থক্য কী?
সাধারণত রাতের আকাশে আমরা যা দেখি চাঁদ ছাড়া তাদের বাকী সবাইকে আমরা তারা বলি। কিন্তু এসব বস্তুদের মধ্যে ‘তারা’ যেমন আছে, তার পাশাপাশি আছে গ্রহ, বিভিন্ন সময় থাকতে পারে ধূমকেতু বা উল্কা। আবার থাকতে পারে কৃত্রিম জিনিসও। বিমানের কথা না হয় বাদই দিলাম। রাতের আকাশে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকেই কিছু দিন পরপর আন্তার্জাতিক মহাকাশ স্টেশন দেখা যায়।

তাহলে তারা কারা? তারার পরিচয় সঠিকভাবে দিতে হলে বলতে হবে তারকা বা নক্ষত্র। পৃথিবী বা অন্য গ্রহদের মত তারকাদের কিন্তু কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না। এদের জীবনের প্রাথমিক ভাগে অভ্যন্তরভাগে তাপ নিউক্লিয় সংযোজন (ফিউশন) বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরামভাবে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে আমাদের সূর্যসহ অন্যান্য তারকারা আলো ও তাপ উৎপন্ন করে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই রয়েছে ১০০ বিলিয়ন থেকে ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। এদের সবার আবার  আমাদের সূর্যের মত গ্রহব্যাবস্থা নেই অবশ্য। মহাবিশ্বের প্রায় ৫০% নক্ষত্রই বাইনারি স্টার সিস্টেমের সদস্য। এক্ষেত্রে দুটি নক্ষত্র একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তাহলে বলা যায় এরা একে অপরের গ্রহ?

না। অন্য কারো চারদিকে ঘুরলেই গ্রহ হয়ে যায় না। গ্রহদের নিজস্ব আলো তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এরা কোন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। আমরা রাতের আকাশে খালি চোখে পাঁচটি গ্রহ দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি এরা সবাই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধকের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল।

আমাদেরকে আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে- সেটা হচ্ছে রাতের আকাশের বস্তুদের আপাত উজ্জ্বলতা বা অ্যাপারেন্ট ম্যাগনিটিউড (Apparent magnitude)। একটি বস্তুকে পৃথিবী থেকে দেখতে কতটা উজ্জ্বল লাগে সেটাই হচ্ছে তার আপাত উজ্জ্বলতার পরিমাপ। এটা বস্তুর প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি থেকে আলাদা জিনিস। কারণ, বাস্তবে বেশি দীপ্তিমান হলে দূরত্বসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবী কোন তারকাকে অন্য তারকার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল মনে হতেই পারে। যেমন রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক কিন্তু সবেচেয়ে বেশি দীপ্তিমান ৫০টি তারকার মধ্যেও নেই। তারকার উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা হয় লগারিদম স্কেলে। উজ্জ্বলতার মান যত বেশি হয় তার উজ্জ্বলতা হয় তত কম।

আরও পড়ুন
» আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

আরেকটি বিষয় জেনে রাখি। আকাশের বুকে তারকাদের ঠিকানা। আপনারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা সম্পর্কে জানেন। পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষ বা বিষুব রেখা (Equator)। এখন আকাশকে মাথার উপরে একটি গম্বুজের মত কল্পনা করুন। যদিও আসলে তারাগুলো পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত তবু রাতের আকাশে এদেরকে এরকম কোন কল্পিত গবম্বুজে ছাঁটানো লাইটের মতই মনে হয়। এটা ধরে নিলে তারাদেরকে অবস্থান নির্ঢারণ করাও সহজ হয়ে যায়। তাহলে আকাশকে গম্বুজ কল্পনা করলেন। আমরা বোঝার জন্যে যাকে গম্বুজ কল্পনা করলাম তার সঠিক নাম খ-গোলক (Celestial Spehere)। এবার বিষুব রেখার উপরে খ-গোলকের মধ্যে একটি রেখা কল্পনা করুন। একে বলা হয় খ-বিষুব।

খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তারাদের অবস্থান অনেকটা পৃথিবীর অক্ষাংশের মতই বের করা হয়। তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা উত্তর ও দক্ষিণের জন্যে মানের আগে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ কথাটা যোগ করি। যেমন বাংলাদেশে অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। কিন্তু খ-গোলকের ক্ষেত্রে উত্তরে হলে এর আগে + চিহ্ন এবং দক্ষিণে মাইনাস চিহ্ন (-) বসানো হয়। আর এর আনুষ্ঠানিক নাম ডেক্লাইনেশন (Declination) বা বাংলায় বিষুব লম্ব।

অন্য দিকে পূর্ব পশ্চিমের অবস্থান নির্ণয়ের জন্যে দ্রাঘিমার মত একটি বিষয় আছে। এর নাম বিষবাংশ (Right ascension)। তবে এতে একটু ঝামেলা আছে এবং বোঝা একটু কষ্টকর। এর কারণ পৃথিবী নিজের অক্ষের সাপেক্ষে আবর্তন করার কারণে আমাদের সাপেক্ষে দ্রাঘিমা অপরিবর্তিত থাকলে খ-গোলক কিন্তু এই আবর্তনের জন্যেই আমাদের সাপেক্ষে ঘুরতে থাকে। তাই এই বিষয়টি আপাতত আলোচনা করলাম না। তাতে আমাদের আপাতত খুব বেশি অসুবিধাও হবে না, যদি আমরা আর একটি কনসেপ্ট বুঝে নেই।

আরো পড়ুন
» বিষুব লম্ব কাকে বলে?

এটি হল তারামণ্ডলী। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ আকাশের কাছাকাছি অবস্থানের কিছু তারকাদের একত্রে কোন প্রাণী বা কাল্পনিক চরিত্রের কথা কল্পনা করত। ১৯৩০ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি এই চিহ্নিত অঞ্চলগুলোকে কিছুটা পরিমার্জন ও পরিববর্ধন করে পুরো খ-গোলককে মোট ৮৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেকটি তারাই এই ৮৮টির কোনটিতে পড়েছে। বিখ্যাত কিছু তারামণ্ডলী (Constellation) হল আদম সুরত বা কালপুরুষ, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, বকমণ্ডলী ইত্যাদি।

তারামণ্ডলী অ তারাভুজের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। তারামণ্ডলী ছারাও অনেক সময় কিছু তারাকে একত্র করে কিছু প্রাণী বা জ্যামিতি চিত্র কল্পনা করা হয়। এরা হল তারাভুজ। যথাস্থানে আমরা এর প্রয়োগ দেখবো।
কোন তারা কোন তারামণ্ডলীতে অবস্থিত এর অবস্থান বের করা আর কঠিন হয় না এবং পাশাপাশি এর বিষুব লম্ব জানলে আরো নিখুঁততভাবে এর অবস্থান জানা যায়। পুরোটা নিখুঁৎ হতে হলে বিষবাংশ না জানলেও হয়। জানলে সুবিধা হয় অবশ্যই।

বিরক্তি এসে যাচ্ছে, না! , তারাদের গল্প শোনানোর লোভ দেখিয়ে এসব কী প্যাঁচাল পাতানো হচ্ছে। ঠিক আছে, এবার আমরা এক এক করে দেখছি-

থুক্কু! আরো দুয়েকটি লাইন না বললেই নয়। বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। ফলে, আমাদের মাথার উপরে খ-গোলকের +২৩ বিষুব লম্ব অবস্থিত। তাহলে আমরা যেসব তারাকে ঠিক মাথার উপরে দেখবো বুঝতে হবে এরা খ-বিষুব থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। আর খ-বিষুব পুরো খ-গোলককে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ- এই দুই অংশ বিভক্ত করেছে।

পুরো আকাশ গোলক ৩৬০ ডিগ্রি। আমরা একসাথে আকাশের অর্ধেক তথা ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পারি। ফলে দুই খ-মেরুর মাঝখানে কৌণিক দূরত্ব ১৮০ দূরত্ব। আমরা উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত হলেও বিষুব রেখার ২৩ ডিগ্রি উত্তরে থাকায় আমরা উত্তর মেরুর দক্ষিণেও ২৩ ডিগ্রি দক্ষিণের তারাও দেখবো। আর দক্ষিণে দেখবো ৯০-২৩ বা প্রায় ৬৭ ডিগ্রির মত। তবে দিগন্তের কাছাকাছি অবস্থানের তারারা নানা কারণে আমাদের চোখে আসতে বাধা পায়। এর মূল কারণ ঘর-বাড়ি বা দূরবর্তী শহরের আলো। অর্থ্যাৎ বলতে চাইছি, আমরা উত্তর গোলার্ধে আছি বলে আমাদের দেখা সব তারকা উত্তর গোলার্ধেই অবস্থিত- এমনটি ভাবা ঠিক হবে না।
এবার সত্যি বলছি,  উজ্জ্বল তারাদের আলো আর পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখবো না।

১। লুব্ধক (Sirius):
নীল এই নক্ষত্রটিই রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল। এটি মূলত দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে থাকলেও সহজেই বাংলাদেশের দক্ষিণ আকাশে দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস একে দেখার সেরা সময়। বিখ্যাত তারামণ্ডলী কালপুরুষ বা আদম সুরতের সাথে থাকে বলে একে খুঁজে বের করাও দারুণ সহজ। একে খুঁজে পেতে হলে আদম সুরতের (Orion) কোমরের দিকে অবস্থিত তিনটি তারকায় গঠিত ওরিনয়ন’স বেল্ট থেকে বরাবর পেছেনে যেতে হবে। সামনে পড়া উজ্জ্বল তারাটিই নির্ঘাত লুব্ধক। এর অবস্থান ক্যানিস ম্যাজর (Canis Major) তারামণ্ডলীতে।
আদম সুরত ও লুব্ধক

আপাত উজ্জ্বলতাঃ  -১.৪৬
বিষুব লম্বঃ – ১৭ ডিগ্রি (এই পরিমাপের ক্ষেত্রে ডিগ্রির ভগ্নাংশকে বাদ দিয়েছি)
দূরত্বঃ ৮.৬৯ আলোকবর্ষ (আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব। নিচের সব ক্ষেত্রেই দূরত্বের এই এককটি ব্যবহার করবো আমরা)

২। সুহাইল (Canopus):
এর অপর নাম অগস্ত্য বা ক্যানোপাস। তারাটির অবস্থান খুব বেশি দক্ষিণে (বিষুব লম্ব মাইনাস ৫২) হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে একে দেখা সহজ। শহর থেকে অবশ্য একটু কঠিন। তবে গ্রামের পরিষ্কার আকাশে একে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। একে খুঁজে পাবার উপায় হল আদম সুরতে রাইজেল ও লুব্ধক তারা দুটিকে যোগ করে লুব্ধক থেকে নিচের দিকে একটি লম্ব আঁকতে হবে। লুব্ধক থেকে রিগেলের প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব পাওয়া যাবে ক্যানোপাসকে।
২য় উজ্জ্বল নক্ষত্র সুহাইল

আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.৬২
বিষুব লম্বঃ -৫২ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩০৯ আলোকবর্ষ

৩। আলফা সেন্টোরিঃ
এটিও দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। আলফা সেন্টোরি সিস্টেমের নক্ষত্রটি এর সঙ্গী প্রক্সিমা সেন্টোরির চেয়ে উজ্জ্বল। অথচ প্রক্সিমা সেন্টোরি সূর্যের (এবং সেই কারণে পৃথিবীরও) নিকটতম নক্ষত্র হওয়া সত্ত্বেও খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। এই নক্ষত্রকে শহর থেকে (বাংলাদেশের) দেখা প্রায় অসম্ভব। গ্রামে গেলে দেখা সম্ভব যদি নির্বিঘ্ন দিগন্ত থাকে, যেহেতু বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ দিকে সর্বোচ্চ মাইনাস ৬৭ বিষুব লম্বের তারা দেখা সম্ভব (থিওরিটিক্যালি) এবং এর বিষুব লম্ব মাইনাস ৬০ ডিগ্রি। কিন্তু দেখা যাবে খুবই সামান্য সময়ের জন্যে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.২৮
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪.৩২

৪। স্বাতী (Arcturus):
উজ্জ্বল তারাদের মধ্যেই এটিই প্রথম যার অবস্থান আকাশের উত্তর গোলার্ধে। লাল দেখতে তারাটি খালী চোখে দৃশ্যমান লোহিত দানবদের মধ্যে অন্যতম । একে খুব সহজেই পাওয়া যায় সপ্তর্ষীমন্ডলীর সাহায্যে। সপ্তর্ষীর চামচ বা পেয়ালার আকৃতির অংশের লেজকে পেছন দিকে বাড়িয়ে এগোতে থাকলে প্রাপ্ত লাল বস্তুটিই স্বাতী। আরো সামনে গেলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা (Spica) যার রোল নং হচ্ছে ১৫।
সপ্তর্ষীমোণ্ডলীর মাধ্যমে স্বাতী ও চিত্রা নক্ষত্র খুঁজে পাবার উপায়

আপাত উজ্জ্বলতাঃ মাইনাস ০.০৫
বিষুব লম্বঃ +১৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৬.৭২

৫। অভিজিৎ (Vega):
৫ম উজ্জ্বল নক্ষত্রটিরও অবস্থান উত্তর গোলার্ধে। ফলে বাংলাদেশ থেকে একেও দেখা খুবই সহজ। অন্য দিকে এটি আবার বিখ্যাত তারাভুজ (Asterism) সামার ট্রায়াঙ্গেল এরও উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। এই তারাভুজের অপর দুটি নক্ষত্র হচ্ছে শ্রবণা (Altair) ও পুচ্ছ (Deneb)। গ্রীষ্মকাল শুরু হলেই এই তারাগুলো রাতের আকাশে হাজিরা দেওয়া শুরু করে। এমনকি শীতের শুরুতেও এদেরকে দেখা যায়। তবে এ সময় এরা থাকে পশ্চিমাকাশে- ডুবু ডুবু।



এর আপাত উজ্জজ্বলতা ০.৩।
দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫.০৪ আলোকবর্ষ। অবস্থান খ-গোলকের +৩৮ ডিগ্রিতে।

৬। ক্যাপেলা (Capella):
রাতের আকাশের সবচেয়ে বিখ্যাত তারাভুজ উইন্টার সার্কেল বা উইন্টার হেক্সগনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হওয়ায় একে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। উইন্টার সার্কেল হচ্ছে আকাশের ৬টি খুব উজ্জ্বল তারাদের নিয়ে তৈরি একটি তারাভুজ। এর তারাগুলো হল যথাক্রমে লুব্ধক, প্রভাস, ক্যাপেলা, পোলাক্স, আলডেবারান ও রাইজেল। উজ্জ্বলতায় এদের ক্রম যথাক্রমে ১, ৮, ৬, ১৭, ১৪ ও ৭।

উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনে ক্যাপেলাসহ অন্যান্য নক্ষত্ররা 

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.০৮
বিষুব লম্বঃ +৪৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪২.৮

৭। রাইজেল (Rigel):
আদম সুরতের বাম পায়ে এর অবস্থান। চিনে নিতে অসুবিধা হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। অন্য দিকে ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি, এটি উইন্টার সার্কেলেরও অন্যতম নক্ষত্র। আদম সুরত বা কালপুরুষের (Orion) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। উপরের ছবিতে খেয়াল করুন, ওরিয়ন’স বেল্টের এক পাশে রাইজেল এবং আরেক পাশে বিটলজুস অবস্থিত। তবে এটি খ-বিষুবের দক্ষিণে অবস্থিত। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ থেকে দেখতে বিন্দুমাত্রও অসুবিধা নেই।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.১৮
বিষুব লম্বঃ -৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৮৬৩

৮। প্রভাস (Procyon)
এর অপর নাম সরমা। এটিও উইন্টার সার্কেলের অন্যতম নক্ষত্র। শখের জ্যোতির্বিদদের আরেকটি সহজ শিকার। লুব্ধক ও রাইজেলকে উইন্টার সার্কেলের বৃত্তচাপের অংশ মনে করে লুব্ধক থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে গেলেই দেখা মিলবে প্রভাসের। [উপরের চিত্র দেখুন]
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪০
বিষুব লম্বঃ +৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১১.৪৬

৯। আর্দ্রা (Betelgeuse):
আদম সুরতের মধ্যে থাকা একটি লাল নক্ষত্র।  রাতের আকাশে চোখে পড় অন্যতম লোহিত দানব (Red giant)। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খুব প্রিয় তারকা। কারণ, এটি যে কোন মুহূর্তে আতশবাজির মত ফেটে উঠবে। কারণ রেড জায়ান্ট দশায় থাকা তারকারা সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে সমগ্র গ্যালাক্সিকে উজ্জ্বল করে তোলে। চিনে নিতে উপরের ছবি দেখুন। আগেই বলেছি ওরিয়নের বেল্ট থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে থাকে বিটলজুস। তবে এটি একটি বিষম তারা। এর মানে হল, এটি সময় সময় উজ্জ্বলতার পরিবর্তন করে। তাই অনেক সময় এর রোল নং ৯ এর বদলে ১০ হয়ে যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ +৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪৯৮

১০। আখেরনার (Acherner):
এটি খুব বেশি দক্ষিণে অবস্থিত। তবু বাংলাদেশ থেকে দেখা অসম্ভব নয়। কিন্তু শহর থেকে দেখা একটু কঠিন। আদম সুরতের ডান পাশ থেকে নদীর মত দেখতে ইরিডেনাস বা যামীমন্ডলীর যাত্রা শুরু। এর একেবারে প্রান্তে আখেরনারের অবস্থান।
 



আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ -৫৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৩৯

১১। হেডার (Hadar):
আমাদের উত্তর গোলার্ধের জন্যে এটি দেখা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এটি সেন্টোরাস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। আর এই তারামণ্ডলীটি সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। আমরা ২৩ ডিগ্রিতে থাকায় বুঝতেই পারছেন একে দেখার জন্যে কেমন বেকায়দায় আছি আমরা। একে দেখার মত নির্বিঘ্ন দিগন্ত পাওয়া হবে সোনার হরিণ পাবার মত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৬১
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৯২

১২। শ্রবণা (Altair):
আগেই বলেছি  সামার ট্রায়াঙ্গেলের অন্যতম নক্ষত্র এটি। ফলে শীত কাল আসতে থাকলে এটি আস্তে আস্তে পশ্চিমে যেতে থাকে। এক সময় আর রাতের আকাশে একে দেখা যায় না। আবার দেখায় যায় গ্রীষ্মের শুরুতে। তবে যাদের ভোরে ওঠার অভ্যাস আছে তারা এপ্রিলেই ভোরের পূব আকাশে একে দেখতে পারেন। একে খুঁজে নিন পূর্বের অভিজিতের মত সামার ট্রায়াঙ্গেলে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৬
বিষুব লম্বঃ +৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৬.৭৩

১৩। অ্যাক্রাক্স (Acrux):
বাংলাদেশ থেকে একে দেখার আশা করা অনুচিত। এটি ক্রাক্স তারামণ্ডলীতে অবস্থিত যেটি ২০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের উত্তরে দেখা যায় না। তাই একে নিয়ে আপাতর বেশি মাথা ঘামাতে চাই না।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৭
বিষুব লম্বঃ -৬৩ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩২২

১৪। আলডেবারান (Aldebaran):
আরেকটি বিখ্যাত লোহিত দানব। আদম সুরতের মাধ্যমে একেও খুব সহজেই খুঁকে নেওয়া যায়। আদমের বেল্ট থেকে প্রায় সোজা ডানে গেলেই একে পাওয়া যাবে। আর বাঁইয়ে গেলে? লুব্ধক। আগেই দেখেছি আমরা। এটিও উইন্টার সার্কেলের সদস্য। এটি বৃষমণ্ডলীর উজ্জ্বলতম তারা।
আদম সুরতের মাধ্যমে আলডেবারান নক্ষত্র খুঁজে পাওয়া যায়
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৮৭
বিষুব লম্বঃ +১৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৬৬.৬৪

১৫। চিত্রা (Spica):
সপ্তর্ষীর চামচ থেকে লেজ বরাবর বৃত্তচাপ এঁকে প্রথমে স্বাতী (রোল নং ৪) এবং আরো সামনে গিয়ে পাওয়া যাবে চিত্রাকে। এটি আবার রাশিচক্রের সদস্য কন্যামণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে কক্ষপথে ঘোরার সময় ১২ মাসের বিভিন্ন সময় আকাশে বিভিন্ন তারা দেখা যায়। আর পৃথিবীর এই গতির কারণে খ-গোলকে সূর্যের একটি কাল্পনিক চলন পথ তৈরি হয় যাকে ইক্লিপ্টিক বা সূর্যপথ বলে। এই অঞ্চলে থাকা তারামণ্ডলীগুলোকে রাশিচক্র বলে। তাই বলে কিন্তু আমরা জ্যোতির্বিদ্যা ছেড়ে জ্যোতিষবিদ্যায় চলে যাইনি। ওদের করা রাশিচক্রে হিসাব সম্পূর্ণ ভুল ও অবৈজ্ঞানিক। তাদের মতে রাশিচক্রের তারামণ্ডলী ১২ টি, কিন্তু এর আসল সংখ্যা হবে ১৩।

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৯৮
বিষুব লম্বঃ -১১ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫০

১৬। জ্যোষ্ঠা (Antares):
কাঁকড়াবিছার মত দেখতে তারামণ্ডলী বৃশ্চিকের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। এই তারামণ্ডলীটি সব সময় আদম সুরতের উল্টো দিকে থাকে। আদম সুরত ডুবলে এর উদয় ঘটে। বৃশ্চিকের বুক বরাবর তারাটির অবস্থান। এটি কিছুটা দক্ষিণে হলেও সহজেই বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান।
বৃশ্চিক মণ্ডলী 
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.০৫
বিষুব লম্বঃ -২৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৫৫৪

১৭। পুনর্বসু (Pollux):
মিথুন মণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনের (শীতের ষড়ভুজ) একটি শীর্ষে এটি বসে আছে বলে একে চেনাও দারুণ সহজ কাজ। তবে এর সাথেই এর জমজ তারা ক্যাস্টরও বসে আছে। আগের উইন্টার সার্কীলের ছবিটি দেখুন। যে তারাটির অবস্থান প্রভাসের দিকে সেটি হচ্ছে পোলাক্স, আর যেটি ক্যাপেলার দিকে আছে  সেটি হচ্ছে ক্যাস্টর। ‘ক্যা-ক্যা’ দিয়ে মনে রাখা যেতে পারে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ +২৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৩.৭৮

১৮। মৎস্যমুখ (Fomalhaut):
একে বলা হয় নিঃসঙ্গ তারা। এর কারণ এর আশেপাশে কোন উজ্জ্বল তারা নেই। বছরের শেষের মাসগুলোতে দক্ষিণ আকাশে একে দেখা যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ -২৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫.১৩

১৯। পুচ্ছ (Deneb):
এর আগেও এর কথা বলেছি। অভিজিৎ ও শ্রবণার সাথে মিলে এটি গড়ে তুলেছে সামার ট্রায়াঙ্গেল। এটি আবার বিখ্যাত তারামণ্ডলী বকমণ্ডলীতে অবস্থিত। প্রথম আবিষ্কৃত ব্ল্যাক হোল সিগ্নাস এক্স-১ এই বকমণ্ডলীর দিকে অবস্থিত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ +৪৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৪১২

২০। মিমোসা (Mimosa):
এটিও দক্ষিণে অবস্থিত। ফলে বাংলাদেশের জন্য এটি সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এটি আবার বিষম তারা। এর গড় উজ্জ্বলতা ১.২৫ হলেও এটি ১.২৩ থেকে ১.৩১ এর মধ্যে উঠা-নামা করে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৭৯
রাতের আকাশের অসংখ্যা উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে মাত্র ২০টি নিয়ে আমরা আলাপ করলাম। অন্য কোম সময় বাকি তারাদের গল্প করার সুযোগের আশা রেখে আজকে বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।

সূত্রঃ
[১] https://en.wikipedia.org/wiki/Apparent_magnitude
[২] http://www.ianridpath.com/brightest.htm
[৩] এই লিঙ্কে ৩০০টি সেরা উজ্জ্বল নক্ষত্রের তালিকা পাওয়া যাবে 
Category: articles

বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

স্বাতী (Arcturs) আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র। বর্তমান মে মাসটি একে খুঁজে পাবার অন্যতম সেরা সময়। সন্ধ্যার একটু পরেই পূর্ব আকাশে হাজির হচ্ছে এখন। বাংলাদশের অবস্থান থেকে দেখতে রাতের আকাশে এটি উদিত হয় প্রায় সোজা পূর্ব দিকে। তার অর্থ, উদিত হবার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর উঠে আসে প্রায় ঠিক মাথার উপর।

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারানকশা সপ্তর্ষীর হাতল স্বাতীকে চিনিয়ে দেয়


 

স্বাতী চেনার উপায়
আকাশের অন্যতম সহজলব্ধ একটি তারামণ্ডলী হল সপ্তর্ষীমণ্ডলী। এর সাতটি তারায় গঠিত তারানকশা সপ্তর্ষী দেখতে চামচের মত। চামচের হাতলের দিকের তারাগুলোকে বৃত্তচাপের মত করে বাইরের দিকে প্রসারিত করে দিলেই পাওয়া যায় উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী। চাপকে আরেকটু প্রসারিত করলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা।

বিশাল এই নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে ৩৬.৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আপাত উজ্জ্বলতা মাইনাস ০.০৫। 

বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন

Category: articles

শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

মাইজার ও অ্যালকর আকাশের অন্যতম বিখ্যাত ডাবল স্টার। দুটোর মধ্যে মাইজারকে খুব সহজেই দেখা যায়, এমনকি শহর থেকেও। এর পাশেই অবস্থান অ্যালকরের। তবে একে খুঁজে পেতে চোখের একটু পরিশ্রম হবে।

মাইজার ও অ্যালকর 

এরা দুজনেই সপ্তর্ষীমণ্ডলীর সদস্য। তবে মাইজার  আবার সাতটি তারায় গঠিত চামচের মত দেখতে সপ্তর্ষী নামক তারাভুজের অংশ। প্রাচীন কাল থেকেই চোখ পরীক্ষার জন্যে অ্যালকর তারাটি ব্যবহৃত হত। অবশ্য স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য খারাপ চোখ দিয়ে অ্যালকরকে দেখা সম্ভব। তবু, আগেকার যুগে সেনাবাহিনীতে সৈন্য নিয়োগের সময় এই তারাটির মাধ্যমে চোখের পরীক্ষা নেওয়া হত। শহরের আলো বা ঝাপসা আকাশের কারণে খালি চোখে অনেক সময় একে দেখা না গেলেও দুরবিনে এটি ঠিকই দর্শনীয় হয়ে ওঠে।


মাইজার সম্ভবত সপ্তর্ষীর সবচেয়ে বিখ্যাত তারা। অ্যালকরকে বাদ দিলেও মাইজার নিজেও একটি ডাবল স্টার। এটা যে আসলে একটি ডাবল স্টার তা ১৬৫০ সালেই জানা গিয়েছিল। উপরন্তু টেলিস্কোপে দেখা ডাবল স্টারদের মধ্যে এটিই প্রথম।


আগে মনে করা হত নিজেরা অনেক দূরে অবস্থিত থেকেও শুধু আকাশের একই দিকে অবস্তিত হওয়াই শুধু ডাবল স্টার হবার কারণ হতে পারে। এদের নিজেদের মধ্যে সম্ভবত কোন আকর্ষণ কাজ করে না। কিন্তু ১৮৮৯ সালে এই ধারণা পাল্টে গেল। স্পেক্ট্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা গেল, মাইজার দুটো নক্ষত্রের মধ্যে টেলিস্কোপে দেখা উজ্জ্বলতর সদস্যটি আসলে নিজেও আবার দুটো নক্ষত্রের সমন্বয়। মাইজার এই বাইনারি সিস্টেমও স্পেক্ট্রোস্কোপির মাধ্যমে আবিষ্কৃত প্রথম বাইনারি স্টার।


পরে দেখা গেল, অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল নক্ষত্রটিও আসলে বাইনারি স্টার। ফলে, সব মিলিয়ে শুধু মাইজারই দুইয়ে দুইয়ে চারটি নক্ষত্র হল। এরকম ক্ষেত্রে তারাদের বলা হয় কোয়াড্রুপল স্টার। এর আগে আমরা দেখেছিলাম আলম্যাকও একটি কোয়াড্রুপল স্টার।

মাইজার  ও অ্যালকর

এবার আসি অ্যালকরের কথায়। আগে মনে করা হত সাথে মাইজারের কোন মহাকর্ষীয় টান নেই। আরো মনে করা হত, অ্যালকর কোন বাইনারি জগতের সদস্য নয়। কিন্তু এ ধারণাও পাল্টে গেল ২০০৯ সালে। স্বতন্ত্রভাবে দুই দল জ্যোতির্বিদ দেখালেন যে অ্যালকর আসলে অ্যালকর  এ ও বি দুটো তারায় গঠিত। এখন মনে করা হয় অ্যালকরের এই বাইনারি জগৎ মাইজারের কোয়াড্রুপল জগতের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আবদ্ধ। ফলে সব মিলিয়ে ছয়টি তারকার সমাবেশ!


মাইজার ও অ্যালকর শুধু আমাদের চোখের পরীক্ষাই নিচ্ছে না, নিচ্ছে আমাদের প্রযুক্তির উন্নতির পরীক্ষাও!

আরবি  المئزر শব্দ থেকে মাইজার নামটি এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ কোমরবন্ধ বা বেল্ট।
Category: articles

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

অধিকাংশ অন্যান্য গ্যালাক্সির মতই এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বাস করছে একটি বিশাল ভরযুক্ত ব্ল্যাক হোল। জ্যোতির্বিদদের ধারনা, এটি নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।
শত শত গ্যালাক্সির ভীড়ে এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির ছবি। এরই কেন্দ্রে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে আছে একটি ব্ল্যাক হোল। 
উপরের ছবির সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং বড় গ্যালাক্সিটিই এনজিসি ৪৮৮৯। ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে কোমা গ্যলাক্সি ক্লাস্টারে এর অবস্থান। এর কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটি আগের অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এর ভর সূর্যের ২১ বিলিয়ন (বা ২ হাজার ১০০ কোটি) গুণ।
অন্য দিকে এর ঘটনা দিগন্তের ব্যাস ১৩ হাজার কোটি কিলোমিটার। এই পাল্লাটি সূর্য থেকে নেপচুনের কক্ষপথের দূরত্বের ১৫ গুণ।  ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে একটি ব্ল্যাক হোলের বাইরে সেই অঞ্চল যেখান থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে এর ভেতরের কিছু দেখা সম্ভব হয় না। অন্য দিকে, আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে থাকা সম্ভাব্য ব্ল্যাক হোলখানির ভর সূর্যের ৪০ লাখ গুণ। এর ঘটনা দিগন্তের পাল্লা বুধের কক্ষপথের এক পঞ্চমাংশ মাত্র।
কিন্তু আলোচ্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের রাক্ষুসে আচরণের সমাপ্তি ঘটেছে। এনজিসি ৪৮৮৯ এর খাবার কক্ষে এটি এখন বিশ্রামরত। বর্তমানে এর আশেপাশে নতুন জন্মানো তারকারা শান্তিতে বেড়ে উঠছে এবং একে প্রদক্ষিণও করছে। 
অন্য ব্ল্যাক হোলের মতই এটি বিভিন্ন গ্যালাকটিক বস্তু যেমন গ্যাস, ধূলিকণা ও অন্যান্য ধ্বংশাবশেষ সাবাড় করে করে একটি আক্রেশন ডিস্ক (Accretion disk) গঠন করে। গ্যাস-ধূলিকণার ঘুর্ণায়মান এই চাকতিকে ব্ল্যাক হোলটি তীব্র অভিকর্ষীয় ত্বরণে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। পরিণামে চাকতির তাপমাত্রা উঠে যায় লক্ষ ডিগ্রি পর্যন্ত। এই উত্তপ্ত বস্তু কতৃক নির্গত হয় দানবীয় এবং শক্তিশালী জেট বা ফোয়ারা । 
সক্রিয় থাকায় সময় জ্যোতির্বিদরা ব্ল্যাক হোলটিকে কোয়াসার শ্রেণিতে নাম তালিকাবদ্ধ করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিস্ক মিল্কিওয়ের চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তি নির্গত করত। ডিস্কটি ব্ল্যাক হোলের খাবারের যোগান দিয়ে দিতে দিতে এক পর্যায়ে আশেপাশের সব গ্যালাকটিক বস্তু নিঃশেষ করে ফেলে। ফলে, এটি এখন সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তবু, রহস্যময় কোয়াসাররা মহাবিশ্বের শৈশবকালে কিভাবে গঠিত হয়েছিল তা জানতে ব্ল্যাক হোলটি জ্যোতির্বিদদের গবেষণার কাজে আসবে। 
আলো বেরিয়ে আসতে পারে না বলে ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা না গেলেও পরোক্ষ উপায়ে এর ভর বের করা যায়। এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির চারদিকে প্রদক্ষিণরত নক্ষত্রদের বেগ পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে। এই বেগ থেকেই জানা গেছে ব্ল্যাক হোলটির বিশাল ভরের তথ্য।  


Category: articles

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

লুব্ধক (Sirius) রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু লুব্ধককে কীভাবে খুঁজে পাব? লুব্ধক আকাশের কোন দিকে থাকে? কোন মাসে বা ঋতুতে একে ভালো দেখা যায়?
লুব্ধককে খুঁজে পেতে হলে তার আগে খুঁজে নিতে হবে আদম সুরত বা কালপুরুষ তারামণ্ডলীটিকে। খুশির খবর হচ্ছে, আদম সুরত হচ্ছে সেই সব তারামণ্ডলীর মধ্যে অন্যতম যাদেরকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।

 তারামণ্ডলীর পরিচয়

বছরের বিভিন্ন মাসের মধ্যে মে, জুন, জুলাই- এই তিন মাস আদম সুরত ও লুব্ধক সূর্যের কাছাকাছি সময়ে অস্ত যায় বলে এ মাসগুলোতে এদেরকে দেখা যায় না। আগস্টের দিকে ভোরের পূর্ব আকাশে এরা পুনরায় দেখা দিতে শুরু করে। প্রতি দিন প্রায় চার মিনিট আগে আগে এরা উদিত হয়। ফলে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে এদেরকে সন্ধ্যার আকাশেই খুব সহজে চোখে পড়ে। এপ্রিল মাসে সন্ধ্যায় এরা থাকে পশ্চিম আকাশে। তার একটু পরেই ডুবে যায়।

আদমসুরত ও লুব্ধক

তবে লুব্ধক খুঁজে পাবার সেরা সময় হিসেবে আপনি ফেব্রুয়ারি মাসকে বাছাই করতে পারেন। এ সময় রাত নয়টার দিকে এটি সোজা দক্ষিণ আকাশে থাকবে, মাথার খাড়া উপর থেকে কিছুটা নিচে।
কতটা নিচে?

এটা বুঝতে হলে আপনাকে বিষুবলম্ব বুঝতে হবে। এটা না বুঝেও বের করা সম্ভব। তাই বেশি গভীরে যেতে না চাইলে বাকি অংশ না পড়লেও চলবে। লুব্ধকের বিষুব লম্ব হচ্ছে প্রায় (-১৭) ডিগ্রি। অর্থ্যাৎ, বাংলাদেশ থেকে দেখতে হলে মাথার খাড়া উপর থেকে (২৩+১৭) = ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণে যেতে হবে।

উজ্জ্বল তারাদের গল্প

এছাড়াও বিভিন্ন গ্রহ ও নক্ষত্রদের খুঁজে পাবার ব্যাপারে নিয়মিত আপডেট পেতে এই দুটি লিঙ্ক ফলো করুন
Category: articles

রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬





শীতের আকাশে উজ্জ্বল তারাদের আধিপত্য একটু বেশিই থাকে। রাতের আকাশের অন্যতম সহজে খুঁজে পাওয়া তারামণ্ডলী আদম সুরত। এর ইংরেজি নাম Orion এবং আরেকটি বাংলা নাম কালপুরুষ। এতেই আছে দুটি টপ টেনের মধ্যে থাকা উজ্জ্বল নক্ষত্র। একটি হচ্ছে উজ্জ্বলতার দৌড়ে সপ্তম রিগেল এবং অপরটি নবম স্থানে থাকা বিটলজুস (Betelgeuse) বা বাংলায় আর্দ্রা।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই আদম সুরতই আপনাকে অন্য উজ্জ্বল তারকাগুলো চিনিয়ে দেবে।
আদমের কোমরের তিনটি তারাকে যোগ করে দক্ষিণে যেতে থাকলে পেয়ে যাবেন রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক (Sirius)।

অন্য দিকে তিনটি তারা যোগ করে উল্টো দিকে মানে উত্তরে গেলে পাবেন বৃষরাশির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র আলডেবারান।

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬

ম্যাগনেটারকি কোন ধরনের চুম্বকীয় নক্ষত্র? দেখা যাক!
হ্যাঁ, অদ্ভুত জিনিস ম্যাগনেটার আসলে এক ধরনের নিউট্রন নক্ষত্র। এর শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র থেকে  উচ্চ শক্তিসম্পন্ন এক্স-রে ও গামা রশ্মি নির্গত হয়। মহাবিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম নক্ষত্রদের জীবনের অন্তিম সময়ে নিউট্রন স্টার জন্ম লাভ করে। নক্ষত্রদের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এর নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে এটি নিজেই গুটিয়ে ছোট হয়ে যায়। ঘনত্ব বেড়ে হয়ে যায় অনেক বেশি।
ম্যাগনেটার এর ছবি। এরা হচ্ছে নিউট্রন নক্ষত্রের একটি জাত। 
শক্তিশালী অভিকর্ষের কারণে নিউট্রন স্টার এবং একই কারণে ম্যাগনেটাররা মহাবিশ্বের অন্যতম উচ্চ-ঘনত্ব বিশিষ্ট বস্তু। সত্যি বলতে, এরা এতটাই ঘন যে এদের এক চায়ের কাপ পরিমাণ পদার্থ মিশরের ৯০০ পিরামিডের ভরের সমান হয়ে যাবে।
সূত্রঃ
১। স্পেইস আনসার
Category: articles

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৬

সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি 

সূর্যের নিকটতম নক্ষত্রের কি গ্রহ আছে? কেউ জানে না। তবে খোঁজ চলছে পুরোদমে। আপনি চাইলে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (ESO) এই অনুসন্ধানের নিয়মিত খোঁজ রাখতে পারেন। আলফা সেন্টোরি গ্রুপের নক্ষত্রদের মধ্যে প্রক্সিমা সেন্টোরি আমাদের সবচেয়ে কাছাকাছি। এই নক্ষত্র থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে মাত্র ৪.২৪ বছর লাগে। 

ছোট্ট এই লাল তারকাটি অনেক অনুজ্জ্বল৷ আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র ১৯১৫ সালে৷ তাও খালি চোখে নয়,  টেলিস্কোপের চোখে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে থাকা আরও বহু দূরের তারকাও খালি চোখে দেখা যায়। একই গ্রুপের নক্ষত্র আলফা সেন্টোরি কিন্তু রাতের আকাশের ৩য় উজ্জ্বল তারকা। এর সাথে সূর্যের ভালো মিলও আছে বটে। এই বছরের শুরু থেকে ইএসও এই নক্ষত্রে গ্রহের সন্ধান করছে। দেখা যাক!

সূত্র
১। নাসা: আজকের মহাকাশ ছবি
Category: articles

শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫


খালি চোখে একটি এবং টেলিস্কোপে রঙিন ডাবল স্টার মনে হলেও এখন জানা গেছে আলম্যাক আসলে ৪টি তারকার মিলিত আলো  
এটা ঠিক যে অ্যান্ড্রোমিডা তারামণ্ডলীতে অবস্থিত একই নামের গ্যালাক্সিটিই আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। তবে, এই অ্যান্ড্রোমিডা তারামণ্ডলীতেই রয়েছে সমগ্র আকাশের অন্যতম দারুণ একটি ডাবল স্টার আলম্যাক। এর আনুষ্ঠানিক নাম গামা এ্যান্ড্রোমিডি (Gamma Andromedae)। এর দুটি অংশের একটিকে টেলিস্কোপে সোনালী এবং অপর অংশকে নীল আসমানী দেখায় (উপরের ছবি দেখুন)। গবেষণার আরেকটু গভীরে গিয়ে শেষমেশ জানা গেল এই তারার আলোর উৎসের মূলে রয়েছে আসলে চারটি তারা! একের ভেতর চার!



খুঁজে পাবার উপায়ঃ


অ্যান্ড্রোমিডা তারামণ্ডলী রূপকথায় একটি মেয়ের নাম। আর মেয়েটির বাম পায়ের তারাটিই হচ্ছে আলম্যাক। পেগাসাস বর্গের আলফেরাজ তারকা থেকে দুটি লাইন চলে গেছে পেগাসাস নামক উড়ুক্কু ঘোড়ার পেছনের দিকে। এই লাইনদ্বয় অ্যান্ড্রোমিডা তারামণ্ডলীর সম্পত্তির সম্পত্তি।
আলফেরাজ তারকা থেকে শুরু করে নিচের লাইন বরাবর চতুর্থ তারকাটি হচ্ছে আমাদের আজকের আলোচ্য তারা। দ্বিতীয় ক্রমের উজ্জ্বল তারকাটি সপ্তর্ষীমণ্ডলীর প্রদান সাতটি তারকার কাছাকাছি উজ্জ্বল।



এই তারাটি, আসলে বলা উচিত তারাব্যবস্থাটি (Star system) ৩৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

একের ভেতর চারঃ
একে খালি চোখে একটি তারাই মনে হবে। কিন্তু টেলিস্কোপে দেখে বোঝা যাবে আসলে এখানে দুটি তারা আছে। বড়টি দেখতে সোনালী, আর ছোটখানা নীল। এই রঙিন জোড়ের সৌন্দর্য্য প্রত্যক্ষ করতে ৭৫ এক্স বিবর্ধনের টেলিস্কোপ প্রয়োজন। কোন কোন বিশেষজ্ঞের মত হচ্ছে, আলম্যাকের রঙের বৈচিত্র্য বকমণ্ডলীর তারকা আলবিয়েরোকেও (বকমুখ) হার মানায়। সাধারণত মনে করা হয়, আলবিয়েরো হল আকাশের সবচেয়ে সুন্দর ডাবল স্টার। শরত ও শীতের শুরুতে দুটো তারাই আকাশে থাকে। আপনি নিজেই বিচার করুন, কোনটা বেশি সুন্দর!

ইতিহাসঃ
১৭৭৮ সালে জোহান টবিয়েস মায়ের প্রাথমিক যুগের একখানা টেলিস্কোপ দিয়ে প্রথম আবিষ্কার করেন যে এটি আসলে ডাবল স্টার। এখন আমরা জানি, ছোট নীল তারাটি আসলে একটি ট্রিপল স্টার সিস্টেম। ফলে, সব মিলিয়ে আলম্যাক আসলে চার তারার মিলিত আলো।

পারসিয়াস তারামণ্ডলীর বিষম তারা এ্যালগলের কাছেই আলম্যাকের অবস্থান। এ্যালগল সর্বোচ্চ দীপ্তি প্রদর্শনের সময় আলম্যাকের সাথে সেয়ানে সেয়ানে আলো বিকিরণ করে।


সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল
নামঃ গামা অ্যান্ড্রোমিডি (Gamma (γ) Andromedae)
তারামণ্ডলীঃ  অ্যান্ড্রোমিডা
অবস্থানঃ ২ ঘণ্টা ২২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড, +৪২° ১৯′
নামের উৎসঃ العناق الأرض
নামের অর্থঃ মরু বিড়াল (desert lynx)
দূরত্বঃ ৩৫০ আলোকবর্ষ
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ২.২৬
তুলনামূলক উজ্জ্বলতাঃ অ্যান্ড্রোমিডা তারামণ্ডলীতে তৃতীয়


তথ্যসূত্রঃ
১। আর্থ স্কাই
২। ইউটিউবঃ ইংরেজি Almach এর উচ্চারণ আলম্যাক।
৩। উইকিপিডিয়াঃ Almach 
Category: articles

রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫

নিজস্ব অভিকর্ষের বন্ধনে আবদ্ধ আলোকোজ্জ্বল গোলাকার প্লাজমাকে নক্ষত্র বলা হয়। উল্লেখ্য, কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের বাইরে পদার্থের আরেকটি অবস্থা হচ্ছে এই প্লাজমা। নক্ষত্রকে বাংলায় তারকা বা তারাও বলা হয়। তবে, আমরা রাতের আকাশে চাঁদ ছাড়া যা কিছু তাদের দেখি সবাইকেও আবার অনেক সময় তারা বলে সম্বোধন করি। যদিও রাতের আকাশে তারা পাশাপাশি সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচটি গ্রহসহ অন্যান্য বস্তুও থাকতে পারে। পৃথিবীর নিকটতম এবং দিনের আকাশের একমাত্র নক্ষত্র সূর্য। অন্যান্য নক্ষত্ররা অনেক দূরে থাকায় দিনে সূর্যের আলোর সাথে টেক্কা দিতে না পেরে রাতের আকাশে হাজির হয়।
নক্ষত্রের জন্ম নেবুলা তথা গ্যাসীয় মেঘ ও ধূলিকণা থেকে। নেবুলার এই সকল উপাদান নিজস্ব উপাদানের চাপে সঙ্কুচিত হয়ে তৈরি করে প্রোটো স্টার বা ভ্রুণ তারা। ধীরে ধীরে এর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তাপমাত্রা এক কোটি কেলভিনে পৌঁছলে এতে শুরু হয় নিউক্লিয় ফিউশান বিক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে নক্ষত্রে হাইড্রোজেন শেষ হবার আগ পর্যন্ত। এর পরবর্তীতে এটি জায়ান্ট বা সুপারজায়ান্ট ধাপে প্রবেশ করে। পরিশেষে শ্বেত বামন, নিউট্রন স্টার বা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবার মধ্য দিয়ে এর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ছবিটি বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন। 
অনেকগুলো তারকা মিলিতভাবে কোন নক্ষত্রস্তবক বা গ্যালাক্সি তৈরি করতে পারে। সাধারণত, একেকটি গ্যালাক্সিতে কয়েক হাজার থেকে শুরু করে লক্ষ কোটি পর্যন্ত তারকা থাকতে পারে। রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক। অন্য দিকে পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে।
সূত্রঃ
১। ইংরেজি উকিপিডিয়াঃ প্লাজমা
২। ইংরেজি উকিপিডিয়াঃ প্রক্সিমা সেন্টোরি
৩। ব্যাপন ম্যাগাজিনঃ ব্ল্যাক হোলের জন্মগ্রহণ
৪। স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপঃ তারকা কাকে বলে? 
Category: articles

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

রাতের আকাশে তারা দেখে পথ নির্ণয় করতে পারার মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে। এই আনন্দের ভাগীদার হতে চাইলে আপনাকে চিনতে সপ্তর্ষীমণ্ডলী। আপনি হয়তো মনে করছেন, সন্ধ্যাতারা তথা শুক্রগ্রহকেতো চিনিই। ওটা যেহেতু পশ্চিম দিকে থাকে তাই আর কিছু জানার কী দরকার?
কিন্তু ভাই! সন্ধ্যাতারা সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টার পরই আপনাকে হতাশ করে দিয়ে দিগন্তের ওপারে হারিয়ে যাবে। তখন? এমন কাউকে দরকার যে তখনও আকাশে থাকবে। তাহলে, আপনার আশা পূরণ করতে পারে সপ্তর্ষীমণ্ডল। কারণ এর মাধ্যমে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন সব সময় উত্তর দিকে মুখ করে রাখা ধ্রুব তারা।  এটি হচ্ছে একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। তারামণ্ডলী হচ্ছে আকাশের একেকটি এলাকা যেখানে অনেকগুলো তারকা মিলে বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর আকৃতি তৈরি করেছে। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে একেকটি তারামণ্ডলীর বিভিন্ন অবস্থান পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে।
যাই হোক, আর্সা ম্যাজর বা সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারকাগুলোর মিলিত চিত্র দেখতে একটি ভালুকের মত। এতে মোট তারকা আছে অন্তত ৭২০টি। এদের মধ্যে গ্রহ আছে ২১টি তারকার। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার নাম এলিওথ (Alioth) বা এপসাইলন আরসি ম্যাজোরিস। ভয় নেই, আমাদের এতগুলো তারকা কাজে লাগবে না।
কাজে লাগবে সাতটি তারকা। এগুলো বেশ উজ্জ্বল। আকৃতি হচ্ছে পেয়ালার মত। এজন্যেই এদেরকে আমেরিকায় বলা হয় বিগ ডিপার (Big Dipper) বা বড় পেয়ালা। দেখতে আবার অনেকটা লাঙলের মতোও হওয়ায় ইউরোপে একে বলা হয় লাঙল (Plough)। আর, সাতটি তারকা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এবং এর মূল তারামণ্ডলীতে এগুলো অপেক্ষাকৃত সহজে দৃশ্যমান ও উজ্জ্বল হবার কারণে বাংলায় মণ্ডলীটির নামই হয়েছে এই সাতটি তারকার নামে-সপ্তর্ষীমণ্ডলী। শুনে মনে হয় এই তারামণ্ডলীতে যেন তারকাই আছে ৭টি। নিচে দেখুন সম্পূর্ণ তারামণ্ডলী।
ভালুকের লেজসহ পেছন দিকে ৭টি তারকার উপর ফোকাস করুন। এরাই হলো বিগ ডিপার।

এই সাতটি তারকা খুঁজে পেলেই আপনি পেয়ে যাবেন ধ্রুবতারাকে। বিগ ডিপার ও এর মাধ্যমে ধ্রুব তারাকে খুঁজে পাবার প্রাথমিক উপায় বলেছিলাম আগের পোস্টে।  কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় এক জায়গায়। ওখানে বিগ ডিপারের ছবি যেমন দেওয়া আছে, এটা সব সময় এরকম থাকে না। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে তারকাগুলো অবস্থান পরিবর্তন করে।
চার ভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। গ্রীষ্মকাল (Summer) তথা উন, জুলাই ও আগস্ট মাসে এটি থাকে উত্তর-পশ্চিম দিগন্তে। পরের ঋতু তথা শরৎকালের (Autumn বা Fall) তিনটি মাস তথা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে এটি নেমে আসে উত্তর দিগন্তের নিম্নাংশে। শীতকালের পরের তিন মাসের জন্যে এটি অবস্থান করে উত্তর-পূর্ব দিগন্তে। বসন্তকালের তিন মাস তথা মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এর অবস্থান উত্তর দিগন্তের উচ্চাংশে। শরৎকালে যেখানে ছিল তার বিপরীতে উপরের দিকে। নিচে বিভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান দেখানো হল।
জুন, জুলাই, আগস্ট (গ্রীষ্মাকালে) সপ্তর্ষীমণ্ডলী 
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে সপ্তর্ষীমণ্ডলী  
ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সপ্তর্ষীমণ্ডল
মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে 

বলাই বাহুল্য, প্রত্যেক ঋতুর শেষ দিকে এর আকৃতি চিত্রের চেয়ে একটি ভিন্ন হবে। কিন্তু আকৃতি যেমনই থাকুক, এর চামচ বা পেয়ালার একেবারে সাম্নের দুটি তারকাকে যোগ করে বর্ধিত করে ৬গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যাবে ধ্রুবতারা। তারামণ্ডলীটির অবস্থান সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায় -
আকাশের তারাদের বর্তমানে আমরা যে আকৃতি দেখি, সময়ের সাথে সাথে বদলে যাবে সেই চিত্র। যেমন দেখুন ১ লাখ বছর আগে বিগ ডিপারের চিত্র কেমন ছিল এবনহ ১ লাখ বছর পরে কেমন হবে।

সূত্রঃ
[১] আর্সা ম্যাজর- উইকিপিডিয়া
[২] আর্থ স্কাই 
Category: articles
প্রথমে দেখি সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারবে কিনা।
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, আলো তো কোন কণা নয়, তাহলে এটা অভিকর্ষের কাছে ধরা খায় কী করে? অভিকর্ষ তো শুধু ভরের সাথে জড়িত। আলোক কণিকা ফোটনের তো ভরই নেই? ক্যামনে কী?
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ! 
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা 
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি 
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো 
Category: articles

শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ইতোপূর্বে আমরা বিভিন্ন ধরণের তারকার পরিচয় জেনেছিলাম। এতে অন্যতম শ্রেণী ছিল বাদামী বামন (Brown Dwarf)। এদেরকে বলা হয় ব্যর্থ তারকাকেন এরা ব্যর্থ? বাদামী বামনদের সাথে বড় বড় গ্রহের পার্থক্য কী? এদেরকে গ্রহ বলা হয় না কেন? এসব প্রশ্নের জবাব নিয়ে আজকের পোস্ট।
গ্যাস ও ধূলিকণার বিশাল পুঞ্জ সংকুচিত হয়ে জন্ম হয় একেকটি তারকার। তারকার প্রধান লক্ষণই হচ্ছে এর কেন্দ্রের নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে আলো, তাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু বাদামী বামন তারকাদের ভর (Mass) এত বেশি নয় যে অভিকর্ষীয় চাপ নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া সংঘটিত করতে পারবে। আর এই ব্যর্থতাই তাদের কপালে ব্যর্থ তারকার তিলক পরিয়ে দিয়েছে।
অন্যান্য প্রধান ক্রমের তারকাদের মতই জীবন শুরু হয় বাদামী এই তারাদের। প্রধান ক্রমের তথা Main Sequence নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে অভিকর্ষীয় চাপে বস্তুপিণ্ডটি ভেতরের দিকে সংকুচিত হতে থাকে যতক্ষণ না এটি হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরির কারখানায় পরিণত হয়। কিন্তু বাদামী বামনের কখোনই সেই ধাপে পৌঁছতে পারে না। হাইড্রোজেন ফিউশন শুরু হবার আগেই সে পৌঁছে যায় স্থিতিশীল অবস্থায়।

বিভিন্ন ভর ও তাপমাত্রার বাদামী বামনদের দেখা মেলে। এদের ভর বৃহস্পতির ১৩ থেকে ৯০ গুণ বা সূর্যের প্রায় এক দশমাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আমরা জানি তারকাদেরকে তাদের বর্ণালীর ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। M জাতের তারকারা হল সফল তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে শীতল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ। বেশিরভাগ এম তারকারাই লোহিত বামন হলেও কিছু আছে বাদামী বামন।
পরিচিত বামনদের মধ্যে Y dwarfs হচ্ছে সবচেয়ে শীতল। এদের কোনটার তাপমাত্রা বাসার উনুনের সমান, কোনটা আবার মানবদেহের সমান উষ্ণ। ফলে, এরা সামান্য আলো ও শক্তি বিকিরণ করে। ফলে, এদেরকে শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণেই ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত এদের আলোচনা শুধু বই পুস্তকেই সীমিত ছিল, দেখা যায়নি চাক্ষুষ। সম্ভবত, এ কারণেই এদেরকে আগে কালো বামন (Black Dwarfs) বলে ডাকা হত। কিন্তু, এখন এই নামে ডাকা হয় শ্বেত বামনদের চূড়ান্ত দশাকে যখন তারা সবটুকু তাপ বিকিরিত করে ফেলে।

এতই যখন সমালোচনা, তখন বেচারারদের কেন গ্রহ বলা হয় না?
এদের এত অল্প ভরের কারণের এদের পরিচয়কে গ্রহের সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সুযোগ আছে। উপরন্তু, দিন দিন গ্যাসীয় দৈত্য জাতের গ্রহদের সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে এই তারকাগুলোতে ফিউশনের অভাবের ফলে, অনেকে তাদেরকে গ্রহ বলার সাহস দেখাতে পারেন।
গ্রহদের সাথে অন্যতম পার্থক্যটি হচ্ছে নিজস্ব আলো থাকা। গ্রহদের কিন্তু নিজের আলো নেই। তাহলে, সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা বা ভোরে শুকতারাসহ কত গ্রহই তো আলো দেয়? আরে ভাই! ওগুলোতো চাঁদের মতই সূর্যের আলোই প্রতিফলিত করে। বাদামী বামনের অতিরিক্ত শীতল হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত লাল এবং অবলোহিত আলো (Infrared ) বিকিরণ করে। শীতল হয়ে গেলে দেয় এক্সরে এবং অবলোহিত আলো।
এরপরেও, গ্রহ এবং বাদামী বামনদের মাঝখানের সীমানা রেখা খুবই চিকন। কিছু বাদামী বামন ঠাণ্ডা হয়ে গ্যাস দানব গ্রহদের মত বায়ুমণ্ডল তৈরি করেছে। বাদামী বামনদের চারদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ থাকতে পারে, আর গ্রহদের থাকে উপগ্রহ। এখন পর্যন্ত জানা বৃহত্তম গ্রহ ওয়াসপ-১৭বি (WASP-17b) হচ্ছে। এর আকার বৃহস্পিতির দ্বিগুণ হলেও ভর প্রায় অর্ধেক। অন্য দিকে, সবচেয়ে ভারী গ্রহ হচ্ছে ডেনিস পি (DENIS-P )। এর ভর বৃহস্পতির ২৮ গুণেরও বেশি। ফলে, এই গ্রহ হয়ে পড়েছে বিতর্কিত। অনেকে একে দাবী করছেন বাদামী বামন বলে।  তাহলে, গ্রহ এবং বাদামী বামন নক্ষত্রদের উপযুক্ত সীমারেখা কী?


মহাকাশের বস্তুপিণ্ডদের সংজ্ঞা দেবার দায়িত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (International Astronomical Union)। তাদের মতে যে বস্তুপিণ্ড ডিউটেরিয়াম (হাইড্রোজেনের ২ ভর বিশিষ্ট আইসোটপ) জ্বালাতে পারে, তাকে তারকা বলা যাবে। আর বৃহস্পতি গ্রহের ১৩ গুণ পর্যন্ত ভর বিশিষ্ট বস্তুকে বলা হবে গ্রহ (এটা গ্রহের সংজ্ঞা নয়, সীমানা)।
সূত্রঃ
[১] space.com
[২] উইকিপিডিয়া 
Category: articles

শনিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৫

তারকাদের শ্রেণীবিভাগ জানার আগে জেনে নিই, তারকা কারা? 
সহজ ভাষায় যেসব মহাজাগতিক বস্তুপিণ্ড এর কেন্দ্রস্থলে (সাধারণত) তাপ নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিপুল পরিমাণ আলো, তাপ ও বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে তাকে মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় তারকা বা নক্ষত্র (Star) বলে। গ্রহদের (Planet) এর পার্থক্য হল, গ্রহদের নিজস্ব আলো থাকে না। বড় বড় গ্রহদের আকার তো প্রায় বামন তারকাদের কাছাকাছি। সেক্ষেত্রে বাউন্ডারিটা এখানেই। নচেৎ, গ্রহদের উপগ্রহদেরকে গ্রহ বানিয়ে গ্রহকে কেন্দ্র করে একটি গ্রহমণ্ডল বা আরেকটি সৌরজগত গড়ে উঠত।
কিন্তু নিজস্ব আলো না থাকায় গ্রহরা সেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিতে ব্যর্থ হয়। যেমন আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির কথাই ধরা যাক। অল্পের জন্যে বেচারা তারকা হতে পারেনি। কাছাকাছি কিন্তু গিয়েছে। সে কিন্তু এখনও একটি গ্যাস দানব। আর সব তারকাই কিন্তু গ্যাসীয় প্লাজমায় গঠিত। অন্তত জীবনের প্রথম দিকে একটি উল্লেখযোগ্য সময় জুড়ে তাই থাকে।
কি বলতে বলতে কোথায় চলে এলাম!
এখানে আমরা ভর বিবেচনায় রেখে উল্লেখযোগ্য কিছু তারকার পরিচয় জানবো।
তারকাদের শ্রেণির কথা আসলে প্রথমেই আসবে প্রধান ক্রম বা মেইন সিকুয়েন্স (Main Sequence Star) দের কথা।
এরা হল, একেবারে যুবক তারকা। আমরা সাধারণত জানি যে, তারকারা অবিরাম হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি করে আলো, তাপ ও অন্যান্য বিকিরণ নির্গত করে। আসলে কথাটি প্রযোজ্য এই মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের জন্য। বর্তমানে মহাবিশ্বে এই যুবকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারকাদের ৯০ ভাগ। এদেরকে যুবক বললাম কারণ, এটাই তারকাদের বয়সের যুবক কাল। এর পর আস্তে আস্তে এরা জীবনের সম্পাতির দিকে পৌঁছে যাবে। অর্থ্যাৎ, মারা যাবে। মারা গেলে কী হবে? এই প্রশ্ন থাকুক আপাতত হিমাগারে।
সূর্য হলো একটি প্রধান ক্রমের নক্ষত্র

এই তারকারা যত বেশি উষ্ণ হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এই লেখা পড়তে পড়তে মনে হতেই পারে, আমাদের সূর্য মামা কোন ধরণের তারকা। হ্যাঁ, সেই এই দলে। তার মানে আমরা মহাবিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের সদস্য। অবশ্য আকারের দিক থেকে সূর্য মাঝারি মানের তারকা।
মেইন সিকুয়েন্স তারকারা সাধারণত বামনাকৃতির হয়।[১] এদের ভর সূর্যের ২০ গুণ পর্যন্ত হতে পারে এবং উজ্জ্বলতা হতে পারে ২০ হাজার গুণ পর্যন্ত।
এই বামনেরা আবার কয়েক প্রকার হতে পারে।
প্রথম বলা যাক হলুদ বামনদের (Yellow Dwarf) কথা। এরা আকারে ছোট। আমাদের সূর্য পড়ে এই দলেই। এদের ভর সূর্যের খুবই কাছাকাছি (০.৮ গুণ থেকে ১.২ গুণ এর মধ্যে) থাকে। আর তাপমাত্রা থাকে ৫৩০০ থেকে ৬ হাজার কেলভিন এর মধ্যে। এদের অপর নাম জি-টাইপ মেইন সিকুয়েন্স স্টার বা সংক্ষেপে G dwarf star। এই নামের উৎস এদের বর্ণালী।
আরেক ধরণের প্রধান ক্রমের তারকারা হল লোহিত বামন (Red Dwarf)। এরা আরো ক্ষুদ্র, সত্যি বলতে ক্ষুদ্রতম। এদের ভর টেনেটুনে সূর্যের প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি এরা আবার দুর্বল ও ঠাণ্ডা নক্ষত্রও বটে, এদের পৃষ্ঠতাপমাত্রা থাকে ৪ হাজার কেলভিন এর নিচে। অন্য দিকে সূর্যের পৃষ্ঠতাপমাত্রা কিন্তু ৬ হাজার কেলভিনের কাছাকাছি, ৫৭৭৮ কেলভিন। তবে, এই তারকাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয়। প্রায় ৭৭ ভাগ তারকার পরিচয়পত্রেই লোহিত দানব লেখা।  এমনকি, সূর্যের নিকটতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টৌরিও একটি লোহিত বামন।
প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে এছাড়াও কমলা, সাদা ও নীল তারকাদের দেখা মেলে। এদের মধ্যে কমলাদের সংখ্যা মোটামুটি ভালো থাকলেও সাদা ও নীলের সংখ্যা যথাক্রমে স্বল্পতর।
তারকাদের ৯০ ভাগ সম্পর্কে এখন আমরা জানি। বাহ!
এরা তো সবাই ছিল বামন তারকা। এবার আসা যাক দানবদের (Giant Star) জগতে। এদের ব্যাসার্ধ সূর্যের কয়েকশো গুণ পর্যন্ত হতে পারে।  মূলত, মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে তখন এদের মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে, কিন্তু বহিঃস্থ অংশ তখনও প্রসারিত হতে থাকে। এতে করেই এর ব্যাসার্ধ বেড়ে যায়। জীবনের এই সময়েই এদের নাম হয় দানব তারা। এখন থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য এই রকম দানব হয়ে যাবে। তখন, সূর্য বুধ, শুক্র এবং (সম্ভবত) পৃথিবীর কক্ষপথকেও গিলে খাবে। আমার মনে হয়, বলাটা অপ্রাসংগিক হবে না, যে সম্ভবত তখনই কিয়ামত হবে। কারণ, কুর;আন বলছে, এক সময় চন্দ্র ও সূর্য মিশে যাবে। এছাড়াও, হাশরের দিন সূর্য মাথার খুবই নিকটে থাকবে। যাই হোক, আমি ধর্মে অতটা বিশেষজ্ঞ নই।
দানব (Giant Star) নক্ষত্রদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচত হল লোহিত বামন তারকা (Red Giant)। এরা হয় অপেক্ষাকৃত শীতল। ভর হতে পারে সূর্যের আট গুণ পর্যন্ত।। এদের বয়সও কিছুটা বেশি।  পৃথিবী থেকে ৮৮ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গামা ক্রুসিস (Gamma Crucis) হচ্ছে আমাদের নিকটতম লোহিত দানব।

দানব নক্ষরদের মধ্যে এছাড়াও সাবজায়ান্ট, হলুদ দানব ও নীল দানব নক্ষত্রদের দেখা মেলে। নীল দানবেরা প্রধান ক্রম শেষ করে হিলিয়াম পোড়াতে থাকে।  দানব নক্ষত্ররা খুব দ্রুত এই ধাপ পেরিয়ে যায়।
এবার আসি আরো ভারী তারকা সুপারজায়ান্টদের (Supergiant) জগতে। এদের ভর হতে পারে সূর্যের ৮ থেকে ১২ গুণ। আর, ব্যাসার্ধ হয় সূর্যের ৩০ থেকে ১০০০ গুণ অবধি। এরাই তারকাদের জগতে সবচেয়ে ভারী ও বড়। বড় ভাই আর কি। এদের কেউ কেউ এত বড় যে সে একাই আমাদের সমগ্র সৌর জগতের সমান। পৃথিবী থেকে ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বিটলজুস (Betelgeuse) নক্ষত্রটি একটি সুপারজায়ান্ট। এর নামটি এসেছে يد الجوزاء আরবী কথা থেকে যার অর্থ কালপুরুষের হাত (The hand of Orion)। ভুলক্রমে, আরবি অক্ষর ইয়াকে ইংরেজি B এর প্রতিনিধি মনে করায় এর নাম এমন হয়ে গেছে। 
বিটলজুস নক্ষত্রের অবলোহিত ছবি
 এছাড়াও অ্যান্টারিস, রিজেল নক্ষত্ররা হল সুপারজায়ান্ট তারকার উদাহরণ। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল, এই তারকাদেরই পরবর্তী দশা হল, আমাদের সকলের প্রিয় টপিক ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। কেউ কেউ অবশ্য সুপারনোভা দশায়ও থেকে যেতে পারে। সুপারজায়ান্টরা লাল, নীল বা হলুদ হতে পারে।  যেসব সুপারজায়ান্টরা অত্যাধিক হারে ভর হারাতে থাকে, তাদেরকে আবার ডাকা হয় হাইপারজায়ান্ট বলে।

এবার আবার একটু বামনদের জগতে ফিরে যাই। প্রথমে আসি শ্বেত বামনদের (White Dwarf) কথায়। এদের আকার অনেক ক্ষুদ্র, এমনকি প্রায় পৃথিবীর সমান! ভাবা যায়! একটি তারকা একটি গ্রহের সমান। তবে না, ওকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ ওর ঘনত্ব অত্যাধিক বলে ভর কিন্তু অনেক বেশি। প্রধানত কার্বন দ্বারা গঠিত এই তারকাদের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। 

যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই সৌর ভরের কম থাকে তারা  ধাপের শেষের দিকে যখন বহিঃস্থ আবরণ ছুড়ে দেয় তখনই পরিণত হয় শ্বেত বামনে। ভর আরো বেশি হলে এরা সুপারনোভা বা নিউট্রন স্টার হতে পারতো। ধীরে ধীরে এরা তাপমাত্রা হারিয়ে কালো বামনে পরিণত হয়। আমাদের সূর্যের এক দিন এই দশা হবে। রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম তারকা লুব্ধক ( Sirius ) ইতোমধ্যেই শ্বেত বামন হয়ে বসে আছে। 

এবার বলবো এক ব্যর্থ তারকার কথা। ব্যর্থ হলে তাকে আবার তারকা বলা হয় কেন? 
ব্যর্থ বলার কারণ হচ্ছে, বেচারাদের ভর এত কম যে নিজস্ব অভিকর্ষের প্রভাবে ধসে গিয়ে যে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া শুরু করবে, সেই ক্ষমতা পায়নি। এদের ভর হয় বৃহত্তম গ্রহদের ভর থেকে সবচেয়ে কম ভরের প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে। তবে, নিজস্ব উজ্জ্বলতা কিছুটা আছে বৈকি। তাই, আবার গ্রহের খাতায়ও নাম লেখাতে পারেনি। এদের নাম হচ্ছে বাদামী বামন (Brown Dwarf)। সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির ১৩ গুণ ভরযুক্ত বাদামী বামনরা ডিউটেরিয়াম জ্বালিয়ে এবং ৬৫ গুণ ভরবিশিষ্ট বাদামী বামনরা লিথিয়াম জ্বালিয়ে কিছু আলো উৎপাদন করে। এ কারণেই গ্রহদের শ্রেণিশিক্ষক খাতায় এদের নাম তোলেনি। 
বাদামী বামনের তুলনা


এবার বলবো নিউট্রন স্টারদের কথা। এদেরকে এই নামে ডাকার কারণ, সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর এদের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত অত্যাধিক হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে। যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকে, তারাই এই পরিণতি লাভ করে। এদের ঘনত্ব হয় অনেক বেশি।  মজার কথা হলো, এদের ব্যাস হয় মাত্র ৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার, কিন্তু ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টি মিটারে প্রায় ১ টেরা কেজি (১ টেরা কেজি = ১০০০,০০০,০০০,০০০ কেজি)। চমকে গেলেন? স্বাভাবিক। আমিও নিজেও তাই।  এদের হাইড্রোজেন নির্মিত একটি হালকা বায়ুমণ্ডলও থাকে।

এবার যাই পালসারের কাছে। না, আর বলতে না পেরে মোটর সাইকেলে চেপে রণে ভঙ্গ দিচ্ছি না। নিউট্রন নক্ষত্রের সাথে জড়িত থাকে অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্র। তাই, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এটি বেতার স্পন্দন (Radio Pulse) নির্গমণ করে। আর, তখন একে বলে পালসার। 

যাবার আগে আরেক ধরণের তারার কথা বলে যাই। এরা হল, ডাবল স্টার। অনেক সময় দুটো তারকা পৃথিবী থেকে প্রায় একই রেখা বরাবর অবস্থিত হলে এ রকম মনে হয়। আবার অনেক সময় এরা প্রকৃতই একে অপরের সাথে আবদ্ধ। এদেরকে বলা হয় দ্বিমিক তারকা (Binary Star)। এরা উভয়ের ভরকন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। মনে করা হয়, মহাবিশ্বের অর্ধেক তারকাই এমন আচরণ করে থাকে। বর্তমানে ধ্রুব তারা (North Star) একটি বাইনারি স্টার জগতের অংশ। 
বাইনারি স্টার জগত

অনুমতি নিয়ে আরেক ধরণের তারকার কথা বললে, তালিকাটা কিছুটা পূর্ণতা লাভ করতো। তাই জোর করে অনুমতি নিলাম। বলবো, চলক তারকার (Variable Star) কথা। এরা দুই ধরণের। Cepheid variable হচ্ছে সেই সব অস্থিতিশীল তারকা যারা ঘন ঘন নিয়মত ভিত্তিতে আকার ও উজ্জ্বলতা পরিবর্তন করে। আকার বাড়লে উজ্জ্বলতা কমে।
অন্য দিকে, Mira variable হলো, সেই সব তারকা যাদের আকার ও দীপ্তী পাল্টাতে অনেক মাস লেগে যায়। ১৫৯৬ সালে প্রথম আবিষ্কৃত এই ধরণের নক্ষত্র মিরার নামে এদের নামকরণ। 
 

[১] উইকিপিডিয়া 
[২]  EnchantedLearning
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...