Advertisement

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

আমরা জানি, শনি গ্রহের বলয় আছে। তা ঠিক আছে। তবে বলয় আছে অন্য গ্রহেরও। সব মিলিয়ে সৌরজগতের চারটি গ্রহের বলয় আছে। এরা হলো চার বিশাল গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। বলয় শুধু একটাই নয়। আছে অনেকগুলো৷

শনির বলয় থাকার কথা বহু আগে থেকেই জানা। বলয় সবচেয়ে বিশালও এই গ্রহটির। তবে অন্য গ্রহদের বলয় খুঁজে পাওয়া যেতে থাকে ১৯৭০ এর দশক থেকে। বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের বলয় অনেক হালকা, অন্ধকার ও ছোট।


বৃহস্পতি গ্রহের বলয়। ছবিসূত্র: স্পেস ডট কম 

বৃহস্পতির বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৯ সালে। ভয়েজার ১ মহাকাশযান এর কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ব্যাপারটা জানা যায়। নব্বইয়ের দশকে গ্যালিলিও অরবিটার আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালায়। বলয়ের প্রধান উপাদান ধূলিকণা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবীর শক্তিশালী টেলিস্কোপে এ বলয় দেখা যায়।

শনির বলয় ১৬১০ সালেই গ্যালিলিও দেখতে পান। তবে শক্তিশালী টেলিস্কোপের অভাবে বলয় সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেননি। ১৬৬৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স প্রথম জানান, জিনিসটা আসলে চাকতির মতো বলয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে জানা যায়, বলয় আসলে ছোট ছোট অনেক অংশ নিয়ে গঠিত। সব মিলিয়ে বলয় আছে ১২টি।

ইউরেনাসের বলয় একটু নতুন। গ্রহটির আগের চাঁদদের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে বলয়গুলো। ১৯৭৭ সালে আবিষ্কৃত নয়টি বলয়। পরবর্তীতে ভয়েজার ২ মহাকাশযান ২টি বলয় আবিষ্কার করে। আরও ২টি খুঁজে পায় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সব মিলিয়ে বলয় আছে অন্তত ১৩টি। উইলিয়াম হার্শেল ১৭৮৯ সালে এ বলয় দেখার কথা বলেছিলেন। তবে আসলেই দেখতে পেরেছিলেন সেটা নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ বলয়গুলো খুব হালকা।


নেপচুনের বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৯ সালে। ভয়েজার ২ যান কাছ দিয়ে উড়ে যাবার সময়। বলয় পাওয়া গেছে ৬টি। সবগুলোই হালকা। নেপচুনের চারটি চাঁদই বলয়ের ভেতর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।

☛ ভয়েজার মহাকাশযানের দুর্দান্ত অভিযাত্রা (লেখা আসছে...)
☛ সব্বচেয়ে দূরের মহাকাশযান (লেখা আসছে...)

শুধু গ্রহের নয়, বলয় আছে উপগ্রহেরও। ২০০৮ সালের এক রিপোর্টে শনির চাঁদ রিয়ায় বলয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। আর কোনো উপগ্রহের বলয় থাকার কথা জানা যায়নি। বামন গ্রহ প্লুটোর বলয়ের কথা একবার প্রস্তাব করা হলেও নিউ হরাইজনস অভিযানের চিত্র সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সালে দেখা যায়, বামন গ্রহ হাউমেয়াও বলয়ের মালিক৷

বহির্গ্রহেদের অনেকের ক্ষেত্রেই বলয় থাকার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই সে প্রস্তাব বাতিল হয়েছে বিভিন্ন কারণে। তবে একটি বহির্গ্রহ এ রেকর্ড ধরে রেখেছে। নাম এইচআইপি ৭১৩৭৮ এফ।


সূত্র: ক্যালটেক, ইউনিভার্স টুডে

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

সৌরজগতের পাঁচ বামন গ্রহের একটি মাকিমাকি। প্লুটো, এরিস, হাউমেয়ার মতো এর অবস্থানও কাইপার বেল্ট অঞ্চলে। এলাকাটা নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে। বরফ দিয়ে গড়া।


বামন গ্রহ মাকিমাকি। ছবিসূত্র: ইউনিভার্স টুডে 

মাকিমাকি সূর্যকে পুরো একবার ঘুরে আসতে ৩০৫ দিন সময় লাগে। আকারে প্লুটোর চেয়ে ছোট। পৃথিবী থেকে দেখতে কাইপার বেল্টের দ্বিতীয় উজ্জ্বল বস্তু মাকিমাকি। সবচেয়ে উজ্জ্বল কে জানেন? প্লুটো ছাড়া আর কেউ না। আকারের দিক থেকেও এটি কাইপার বেল্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম।

উজ্জ্বলতার পরিমাপ
☛ একদিন কত বড়? (লেখা আসছে...)

জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাসে মাকিমাকি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। একই রকম গুরুত্ব আছে আরেক বামন গ্রহ এরিসের। এই দুই বস্তু আবিষ্কারের ফলেই আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি গ্রহের সংজ্ঞা পাল্টানোর ব্যাপারে ভাবতে থাকে। তৈরি হয় বামন গ্রহ নামে নতুন এক ধারণা।

প্লুটো যেভাবে গ্রহত্ব হারাল

মাকিমাকি প্রথম জ্যোতির্বিদদের চোখে ধরা পড়ে ২০০৫ সালে। পালোমার মানমন্দিরের তিন বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন, চ্যাড ট্রুজিলো ও ডেভিড র‍্যাবিনোউইটয একে দেখেন। ২০১৬ সালে নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ বামন গ্রহটির একটি চাঁদ খুঁজে পায়। এখনও অবশ্য স্বীকৃতি পায়নি চাঁদটি।

মাকিমাকির ব্যাসার্ধ ৭১৫ কিলোমিটার। পৃথিবীর নয় ভাগের এক ভাগ। সূর্য থেকে দূরত্ব ৪৫.৭ এইউ। সূর্য থেকে আলো পৌঁছতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিট। সূর্য থেকে অনেক দূরত্বের কারণে বস্তুটির পৃষ্ঠ অনেক শীতল। ফলে এতে জীবনের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
পৃথিবীতে সূর্যের আলো পৌঁছতে কত সময় লাগে? (লেখা আসছে...)

এর গঠন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই। নেই শনি, ইউরেনাসদের মতো বলয়। কাইপার বেল্টে এর আশেপাশে প্রচুর বরফের বস্তু আছে। এরা তৈরি হয়েছিল সৌরজগতের একেবারে শুরুর যুগে। আজ থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে। এদেকে কাইপার বেল্ট্ব্র বস্তু, ট্রান্সনেপচুনিয়ান বা প্লুটোয়েড বলে ডাকা হয়।


বস্তুটার পৃষ্ঠ ঠিক কেমন তা এতদূর থেকে বোঝা যায় না। তবে যতটুকু বোঝা যায় তাতে প্লুটোর লাল-বাদামী মনে হয়। পৃষ্ঠে মিথেন ও ইথেনের অস্তিত্ব মিলেছে। খুব হালকা বায়ুমন্ডল আছে। এতে মূলত আছে নাইট্রোজেন।

সূত্র: নাস সোলার সিস্টেম পোর্টাল 
Category: articles

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

মহাকাশ নিয়ে আমাদের আকর্ষনের কোন কমতি নেই সেই প্রাচীনকাল থেকেই। কখনো খালি চোখে, কখনো দুরবিন, কখনও বা টেলিস্কোপ দিয়ে নানান তথ্য উদঘাটনে মহাকাশকে তন্নতন্ন খুঁজে ফিরেছে নামজাদা বিজ্ঞানীসহ অনেক সাধারণ মানুষও। এখন এতো এতো গবেষণার তথ্য উপাত্তের ভীড়ে আমাদের মনে হুট করে প্রশ্ন জাগতে পারে, পৃথিবী তো ৭১ শতাংশ পানিতে নিমজ্জিত, তাহলে কি মহাকাশে কোন পানি নেই? থাকলেই বা তা কতটুকু? কোথায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি পানি? এই প্রশ্নগুলো গুছিয়ে দিতে এসো আজ দেখে নেয়া যাক- মহাকাশে পানির পরিমাণ কতটুকু এবং কোথায় বা সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে?


আমরা সকলেই জানি যে, প্রাচুর্যতায় ভরপুর আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া বিশ্বজগতের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব এখন অবধি প্রমাণিত হয়নি। কোথায় প্রাণের বিকাশের পূর্বশর্ত হিসেবে সেখানে পানির উপস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। যার স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের এই পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন,পৃথিবীর চেয়েও বহুগুণ পানি রয়েছে আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ এবং উপগ্রহে! এখন মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উদয় হতে পারে, পানি যেহেতু আছে, প্রাণ থাকবে না কেন? কিম্ভুতকিমাকার চেহারার সায়েন্স ফিকশনের সবুজ ঘড়িওয়ালা এলিয়েন থাকবে না কেন?

পানি মানেই কিন্তু যে স্বচ্ছ শীতল নির্মল পানি হতে হবে এমন নয়। অন্যান্য গ্রহের নানান প্রকার গ্যাস, গলিত পদার্থ, চাক চাক বরফকে আমরা সাধারণভাবে পানি বললেও- তা আসলে বহু যৌগ পদার্থের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া রাসায়নিক তরল। যেমন, বিজ্ঞানীদের ধারণা ইউরেনাসের হাইড্রোজেন-মিথেন এর পিছনে রয়েছে উত্তপ্ত এক সমুদ্র। এই সমুদ্রে পানির সাথে দ্রবীভূত আছে অ্যামোনিয়া।

মূল কথায় আসা যাক। এখন প্রথমত প্রশ্ন আসতে পারে- সৌরজগতের কোথায় সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে এবং তার পরিমাণ কতটুকু? মহাকাশ সংস্থা নাসার দেয়া পরিসংখ্যান দেখে নেয়ে যাক। নড়েচড়ে বসুন কিন্তু। কারণ বিজ্ঞানের তথ্যগুলো সাদা দৃষ্টিতে নয়, অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হয় ধীরেসুস্থে।

পৃথিবীতে তরল পানির পরিমাণ হলো ১.৩৩৫ জেটালিটার (Zettalitres ZL)। এক জেটালিটার মানে, একশ কোটি ঘন কিলোলিটার! সংখ্যায় লিখলে যা হবে, 1000000000000000000000 ঘন কিলোলিটার! কি, মাথায় চক্কর কাটছে?

আমাদের প্রিয়তম পৃথিবীর আয়তন হলো ১০৮৩.২১ জেটালিটার (পৃথিবী কঠিন পদার্থ হলেও তুলনার সুবিধার্থে আয়তনকে লিটারে প্রকাশ করা হয়েছে)। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় পৃথিবীতে পানির পরিমাণ হলো মাত্র 0.12 শতাংশ! যা মূলত পৃথিবীর উপরিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সমুদ্রতলের সবচেয়ে গভীরতম খাদ ম্যারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা প্রায় ১১ কিলোমিটার। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠস্থ সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্টের চেয়েও ৩ কিলোমিটারের মতো গভীর! স্বাভাবিকভাবে মাটি খুঁড়তে থাকলে তিন কিলোমিটারের পরে আর পানি পাওয়া যাবে না। তারপর থেকে পৃথিবী আস্ত এক গমগমে আগুনের গোল্লা। যাকে ভিতরে রেখে আমাদের বসবাসের জন্যে পৃথিবীপৃষ্ঠ অনেকটা শীতলপাটির মতো বিছিয়ে আছে।

পৃথিবীর গঠন। প্রায় তিন কিলোমিটার গভীরে গেলেই কিন্তু পানির দেখা পাওয়া যাবে না। 

অন্যদিকে সৌরজগতের অন্যতম অধিবাসী ট্রিটনে তরল পানির আয়তন হলো, 0.03 জেটালিটার। আর তার আয়তন হলো 10.35 জেটালিটার। ট্রিটনের আয়তন অনুযায়ী তার মধ্যে পানি আছে ৬৫ শতাংশ! যেখানে পৃথিবীর আয়তন অনুযায়ী তাতে পানির পরিমাণ মাত্র ০.১২ শতাংশ।

সুতরাং, সহজেই বুঝে নেয়া যায় যে, আয়তনের পাল্লায় ট্রিটনের পানির পরিমাণ বহুগুণ বেশি! এটাই শেষ নয়, উদাহরণ এখনো বাকি আছে যে। বরং একগ্লাস পানি খেয়ে নিন। আর ভাবতে থাকুন, এই একগ্লাস পানি, ভূপৃষ্ঠের ০.১২ শতাংশ পানির কত শত জেটালিটার ক্ষুদ্র অংশ?

তারপর, চমৎকার সুন্দর গ্যাসীয় বলয় থাকা বামন গ্রহ প্লুটোর আয়তন হলো ৭.০১ জেটালিটার। আর প্লুটোতে পানির পরিমাণ হলো ১ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬২ শতাংশ। বৃহস্পতিগ্রহের অন্যতম উপগ্রহ ইউরোপার আয়তন ১৬.০৬ জেটালিটার। আর তার অভ্যন্তরস্থ পানির পরিমাণ, ২.৬ জেটালিটার। যা আয়তনের ১৮ শতাংশ। শনির উপগ্রহ এনসেলেডাসের ৬৮% ই পানি দিয়ে পরিপূর্ণ।

শনির উপগ্রহ এনসেলেডাস

১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর আবিষ্কার করা বৃহস্পতিগ্রহের ৬৭টি উপগ্রহের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সৌরজগত পরিবারের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ ক্যালিস্টর আয়তন হলো ৫৮.৬৩ জেটালিটার। যার অভ্যন্তরে তরল পানির পরিমাণ, ৫.৩ জেটালিটার। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি।

১৬৫৫ সালের ২৫ মার্চ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস- এর আবিষ্কার করা শনিগ্রহের বৃহত্তম এবং ঘন বায়ুমণ্ডল বিশিষ্ট একমাত্র উপগ্রহ টাইটানের আয়তন ৭১.৬০ জেটালিটার। আর তার মধ্যে তরল পানির অস্ত্বিত্ব রয়েছে ১৮.৬ জেটালিটার। টাইটানের মোট আয়তনের ৪৪ শতাংশ।

বৃহস্পতির সর্ববৃহৎ উপগ্রহ গ্যানিমিড সৌরজগতেরও সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। আকারে যা বুধগ্রহের চেয়েও বড়। গ্যানিমিড ৬ লাখ ২১ হাজার মাইল দূর দিয়ে বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করে। আয়তন হলো, ৭৬.২৯ জেটালিটার। আর তরল পানির আয়তন ৩৫.৪ জেটালিটার। যার প্রেক্ষিতে আয়তনের তুলনায় পানি হলো, ৬৯ শতাংশ।

বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে পানির পরিসংখ্যান।
বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।  

সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে বৃহত্তম উপগ্রহ গ্যানিমিডে। যাতে তরল পানির উপস্থিতি রয়েছে ৩৫.৪ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬৯ শতাংশ। খেয়াল করেছেন কি পানির উপস্থিতিতে শীর্ষের দিকে থাকা ইউরোপা, ক্যালিস্টো, গ্যানিমিডের অবস্থান পৃথিবীর তুলনায় দশগুণ বিশাল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিতে। এখন তাহলে কি আমরা বলতে পারি না গ্রহের অন্তর্ভূক্ত পরিবার হিসেবে বৃহস্পতিগ্রহে সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে। বোধহয় পারি!

গ্যানিমিডসহ বৃহস্পতির প্রধান ৪টি উপগ্রহ।
Category: articles

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮

চাঁদ। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পুরো সৌরজগতের পঞ্চম বৃহৎ উপগ্রহ। পৃথিবীর রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। দিনের আকাশে সূর্যকে আমরা যতটা বড় দেখি, রাতের বেলায় পূর্ণ চাঁদকেও প্রায় ততটাই বড় দেখি। দুজনের সাইজের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ থাকলেও দূরত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। অথচ সূর্য যেখানে পৃথিবী থেকে গড়ে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে আছে, সেখানে চাঁদের দূরত্ব মাত্র ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪ শ কিলোমিটার।

পৃথিবী ও কক্ষপথে চাঁদ 

আরও পড়ুন:

☛ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
☛ চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?
☛ অপসূর বনাম অনুসূর 

তাহলে চাঁদ আসলে ঠিক কত বড়? 

জ্যোতির্বিদ্যায় বড়ত্বের হিসাব হয় অনেকভাবে। ভর, আয়তন, ব্যাসার্ধ বা ব্যাস। তবে আমাদের আজকের আলোচনার সাথে সবচেয়ে প্রাসংগিক হলো সাইজ। এটা আয়তন, ব্যাসার্ধ বা ব্যাস যেকোনোটা দিয়েই চিন্তা করা যায়।

চাঁদের আকার পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ থেকে সামান্য বেশি মাত্র। ২৭ ভাগ। মূল কথায় আসি। গোল চাঁদের গড় ব্যাসার্ধ হলো ১০৮০ মাইল। মানে ১৭৩৮ কিলোমিটার। তার মানে এটি এর দুই গুণ মানে ২১৬০ মাইল (৩৪৭৫ কিমি.) চওড়া। পৃথিবীর এর তিন গুণের চেয়ে বেশি চওড়া। বিষুব অঞ্চলে চাঁদের পরিধি হলো ৬৮৮৪ মাইল বা ১০৯১৭ কিমি.।

পৃথিবী ও অন্যান্য বস্তুর তুলনায় চাঁদের আকার 

চাঁদ ও পৃথিবীর তুলনামূলক সাইজ নিয়ে নাসা সুন্দর একটি উপমা দিয়েছে।
পৃথিবী যদি একটি পয়সার মতো হয়, তবে চাঁদের আকার হবে কফির দানার সমান। 
চাঁদের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল ১ কোটি ৪৬ লক্ষ বর্গ মাইল বা ৩ কোটি ৮০ লক্ষ বর্গ কিমি.। এটা আমাদের এশিয়া মহাদেশের ক্ষেত্রফলের চেয়েও অল্প। জেনে রাখলে ক্ষতি কী, এশিয়ার ক্ষেত্রফল হলো ১ কোটি ৭২ লক্ষ বর্গ মাইল বা ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ বর্গ কিমি.।

আরও কিছু বিষয় নিয়ে তুলনাটা হয়েই যাক না। চাঁদের ঘনত্ব ও ভর দুটোই পৃথিবীর চেয়ে কম। ভর পৃথিবীর মাত্র ১.২ ভাগ। মানে পৃথিবীর ভর চাঁদের ৮১ গুণ। চাঁদের প্রতি ঘন সেন্টিমিটার আয়তন জায়গার গড় ভর ৩.৩৪ গ্রাম। পৃথিবীর ক্ষেত্রে যেটা গড়ে ৫.৫১৪ গ্রাম।

চাঁদের মহাকর্ষ পৃথিবীর মাত্র ১৬.৬ ভাগ। কেউ পৃথিবীতে লাফ দিয়ে ১০ ফুট উঠতে পারলে চাঁদে গিয়ে এক লাফে উঠতে পারবেন ৬০ ফুট। বাহ! কী মজার ব্যাপার।

আরও পড়ুন:
☛ অন্য গ্রহে লাফালাফি

সূত্র:
১। নাসা: স্পেসপ্লেস
২। নাসা: মুন পোর্টাল
৩। উইকিপিডিয়া: Moon
৪। স্পেস ডট কম: How big is moon?
Category: articles

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

সৌরজগতে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন। ভরের দিক দিয়ে অবস্থান তিন-এ। আকার বড় হলেও দূরত্ব বেশি হবার কারণেই একে খুঁজে পেতে দেরি হয়েছিল। খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। সেজন্যেই এটিই সবার শেষে আবিষ্কৃত গ্রহ। ১৮৪৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একে খুঁজে পাওয়া যায়। আবিষ্কার নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে ঘটে যায় কিছু বিতর্ক। সে আরেক কাহিনি।

আরও পড়ুনঃ 
☛ নেপচুন আবিষ্কারের গল্প 

যাই হোক, গ্রহ নক্ষত্ররা কত বড়- তার হিসাব হয় অন্তত দুইভাবে। এক, এরা আয়তনে কত বড়। ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বলা আর আয়তন বলার মধ্যে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। যার ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বেশি হবে, আয়তন তো তারই বেশি হবে। আরেকটি তুলনীয় বিষয় হলো কার ভর কতটা বেশি।

ব্যাসের দিক দিয়ে নেপচুনের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে চার নম্বরে। অর্থ্যাৎ, সৌর জগতের চারটি গ্যাস জায়ান্টের মধ্যে এটি সবচেয়ে ছোট। অপর তিনটি গ্যাস জায়ান্ট হলো বৃহস্পতি, শনি ও ইউরেনাস। তবে ইউরেনাস সামান্যই বড়। গ্যাস দানবদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও অন্য চার গ্রহের তুলনায় একে দানব বলাই ভাল। আয়তন পৃথিবীর প্রায় ৫৮ গুণ। তার মানে, নেপচুনের ভেতরটা ফাঁপা করা হলে এর ভেতরে ৫৮টা পৃথিবী রেখে দেওয়া যাবে।

নেপচুন ও পৃথিবীর তুলনামূলক আকার 

গড় ব্যাসার্ধ হলো ১৫, ২৯৯ মাইল (২৪, ৬২২ কিমি.)। পৃথিবীর প্রায় চার গুণ। মানে চারটি পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে নেপচুনের এক পাশ থেকে অপর পাশের প্রায় সমান হবে।

অন্যান্য বস্তুর মতোই আবর্তনের কারণে বিষুব অঞ্চলে এটি কিছুটা স্ফীত হয়ে আছে। এ আকৃতিকে বলা হয় অবলেট স্ফেরয়েড বা চাপা উপগোলক।

বিভিন্ন গ্রহের তুলনামূলক সাইজ
 বিষুব রেখা বরাবর পুরোটা ঘুরে আসতে হলে পাড়ি দিতে হবে ৯৬ হাজার ১২৯ মাইল পথ। তবে পায়ে হেঁটে কাজটি করা সম্ভব নয়। অন্য গ্যাস দানবদের মতোই এর কোনো কঠিন পৃষ্ঠদেশ নেই। ঢাকা বরফ দিয়ে।

আকারে পিছিয়ে থাকলে নেপচুন ইউরেনাসকে ভরের দিক দিয়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ভরের দিক থেকে তাই নেপচুনের অবস্থান তিন নম্বরে। পৃথিবীর ১৭ গুণেরও বেশি ভর এর।  ওপরে আছে শুধু বৃহস্পতিশনি

পৃথিবীর তুলনায় বিভিন্ন গ্রহের ভর 

ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১.৬৩৬ গ্রাম। ইউরেনাসের মতোই এতেও শনি ও বৃহস্পতির চেয়ে বেশি পরিমাণ বরফ আছে। এ কারণেই এ দুটো গ্রহকে আইসি জায়ান্ট বা বরফ দানবও বলা হয়।

আরও পড়ুন
☛ কোন গ্রহের ভর কত
☛ অদ্ভুদ এক গ্রহ

সূত্রঃ 
১। স্পেস ডট কমঃ হাউ বিগ ইজ নেপটুন
২। ইউনিভার্স টুডেঃ সাইজ অব নেপটুন
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

গ্রহ-নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে ঘূর্ণন আছে দুই রকম। একটি হলো নিজের অক্ষের সাপেক্ষে। এর কেতাবি নাম আবর্তন (rotation)। যেমন পৃথিবীর নিজ অক্ষের সাপেক্ষে একবার ঘূর্ণনে এক দিন হয়। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই ঘূর্ণনকে তাই আহ্নিক গতিও (Diurnal motion) বলে। আর অন্য কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে যে ঘূর্ণন তার নাম প্রদক্ষিণ (revolution)। যেমন পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এক বার ঘুরে এলে হয় এক দিন।

আরও পড়ুন
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

আমরা এর আগে বলেছিলাম, সূর্য আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে। বেগ ঘণ্টায় ৮ লক্ষ কিলোমিটার বা ৫ লক্ষ মাইল। এত বড় বেগেও পুরো ছায়াপথকে ঘুরে আসতে সূর্যের সময় লাগে প্রায় ২৫ কোটি বছর।

আরও পড়ুন
☛ মিল্কিওয়েকে ঘিরে সূর্যের গতি

তাহলে বোঝা গেল, সূর্য প্রদক্ষিণ করছে। তাহলে আবর্তনও কি করছে? আসলে বলতে গেলে সব মহাজাগতিক বস্তুই আবর্তিত হচ্ছে। তবে সূর্যের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু গোলমেলে। কেন? পৃথিবীর কথা একটু চিন্তা করুন। প্রায় ২৪ ঘণ্টায় পুরো পৃথিবী ১ বার নিজ অক্ষেরে চারপাশে ঘুরে আসে। চাই সেটা মেরু অঞ্চল হোক বা বা উত্তর ও দক্ষিণ দুই মেরুর মাঝামাঝিতে থাকা বিষুব অঞ্চলই হোক। সবখানেই ২৪ ঘণ্টায় হয় একটি ঘুর্ণন। একটি বল হাতে নিয়েও যদি একবার ঘুরিয়ে নেন, এর যে কোনো জায়গাই পূর্ণ একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করবে একই সাথে।

সমস্যা হলো সূর্য পৃথিবী বা বলের মতো কঠিন পদার্থ নয়। গঠিত উত্তপ্ত আয়নিত গ্যাসীয় প্লাজমা পদার্থ দিয়ে। ফলে বিষুব অঞ্চলে একটি পূর্ণ আবর্তন হয় ২৪.৪৭ দিনে। কিন্তু বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকলে এই বেগ কমে আসে। মেরু এলাকায় সময় লাগে ৩৮ দিন। সব মিলিয়ে গড় আবর্তন সময় ২৭ দিন।

সৌরজগতের বৃহস্পতি ও শনি গ্রহও অনেকটা সূর্যের মতো। এরা হলো গ্যাস দানব। ফলে এদের ঘূর্ণনেও দেখা যায় সূর্যের মতো একই রকম বিভিন্নতা।

বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যের আবর্তন বেগ 

আরও পড়ুনঃ
☛ বৃহস্পতি কেন নক্ষত্র নয়? 

এই ঘূর্ণের খবর আমরা কীভাবে জানলাম? উত্তর হলো সৌরদাগ (sun spot)। দেখা গেছে, সূর্যের বিশেষ বিশেষ দাগগুলো উল্লেখিত সময় পর একই অবস্থানে ফিরে আসে। ঘূর্ণন নিয়ে আরেকটি মজার ঘটনাও আছে। পৃষ্ঠের ওপরে যেমন ঘূর্ণনের বিভেদ আছে, তেমনি ঘূর্ণনের বিভেদ আছে সূর্যের ভেতরের অঞ্চলেও।

সূর্যের পৃষ্ঠের ঠিক ভেতরের এলাকা, কোর বা কেন্দ্রমণ্ডল ও বিকিরণ অঞ্চল একত্রে একটি কঠিন বস্তুর মতো ঘোরে। অন্য দিকে বাইরের স্তর, পরিচলন অঞ্চল ও আলোকমণ্ডল (photosphere) ঘোরে আবার ভিন্ন বেগে।
সূর্যের বিভিন্ন অঞ্চল।
বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন। 
সূত্রঃ
২। উইকিপিডিয়া 
Category: articles

রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

দুই উপগ্রহসহ হাউমেয়া 
সৌরজগতের পাঁচ বামন গ্রহের অন্যতম হাউমেয়া। কক্ষপথ সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুনেরও বাইরে। ২০০৪ সালে জ্যোতির্বিদ মাইক ব্রাউনের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধানী দল হাউমেয়াকে খুঁজে বের করেন। তবে এটি বামন গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ভর প্লুটোর তিন ভাগের এক ভাগ ও পৃথিবীর ১৪০০ ভাগের এক ভাগ। সূর্যকে ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ২৮৪ বছর। এখন পর্যন্ত এর দুটো উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। বামন গ্রহটিতে এক দিন হয় মাত্র চার ঘণ্টায় । কারণ হলো দ্রুত আবর্তন। ১০০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি চওড়া সৌরজগতের অন্য যে কোনো বস্তুর চেয়ে এটি দ্রুত ঘুরে।

সূত্রঃ নাসা সোলার সিস্টেম 
Category: articles

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এ পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদের বুকে হেঁটেছেন। আপনিও যদি তাদের মতো চাঁদে যেতে চান, তবে শীতের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা রাতে চাঁদের তাপমাত্রা নেমে আসে হিমাংকের ১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। কিন্তু শুধু শীত থেকে বাঁচলেই চলবে না, গরম থেকে বাঁচারও প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা দিনের বেলায় চাঁদের তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ১০৭ ডিগ্রি (আরেকটি তথ্য মতে ১২৩ ডিগ্রি) পর্যন্ত।

চাঁদের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা 

চাঁদের তাপমাত্রা এত বেশি উঠা- নামা করে কেন? এর কারণ হল, চাঁদে পৃথিবীর মতো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল কম্বলের মতো আচরণ করে। ধরে রাখে ভেতরে প্রবেশ করা উত্তাপ। সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভেতরে এসে ভূমিকে উত্তপ্ত করে। পৃথিবী সেই তাপ শক্তিকে অবলোহিত বিকিরণ (infrared radiation) আকারে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিকিরণ সহজে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত থাকে।

অবলোহিত বিকিরণ বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না কেন? এর কারণ হল আমরা খালি চোখে যেসব আলো দেখি তার মধ্যে লাল রঙ এর আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। আর অবলোহিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর চেয়ে একটু বেশি। তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হবার কারণে এর পক্ষে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

চাঁদের সমস্যা আছে আরেকটিও। চাঁদ নিজের অক্ষের সাপেক্ষে একবার ঘুরতে ২৭ দিন সময় নেয়। ফলে চাঁদের কোনো জায়গা ১৩ দিনের কাছাকাছি সময় সূর্যের আলো পায়, বাকি সময়টা থাকে অন্ধকারে। সূর্যের আলো থাকার সময় চাঁদে যে তাপমাত্রা থাকে, তাতে সহজেই পানি বাষ্প হয়ে যাবে। আর সূর্য দিগন্তের নিচে তলিয়ে যাবার পর সাঁই করে তাপমাত্রা কমে যাবে ২৫০ ডিগ্রি।

আরো পড়ুনঃ
আবর্তন বনাম প্রদক্ষিণ
☛ চাঁদ কি আসলে আবর্তন করে?

ফলে চাঁদে যেতে হলে এমন পোশাক দরকার যাতে একই সাথে উত্তাপ তৈরির এবং শীতলীকরণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কাছে কিছু খাদ আছে যারা অবিরাম ছায়ার মধ্যে থাকে, কখনো সূর্যের
মুখ দেখে না। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা সব সময় মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রিই থাকে। আবার এর আশেপাশেই এমন কিছু পাহাড় চূড়া আছে যারা অবিরাম সূর্যের আলো পেতেই থাকে।

রাতের আকাশে চাঁদকে কত নিরীহ দেখায়, অথচ এর তাপমাত্রা যে এত ভয়ানক হতে পারে তা কে ভেবছিল। 

আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?
☛ পূর্ণিমা হয় কীভাবে?

সূত্রঃ
1. http://www.space.com/18175-moon-temperature.html
2. http://www.universetoday.com/19623/temperature-of-the-moon/
3. http://www.livescience.com/50260-infrared-radiation.html
Category: articles

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬

রাতের আকাশ পর্বের আগের অংশে আমরা আলোচনা করেছিলাম পৃথিবীর আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের নিয়ে। এবারে উঁকি দিচ্ছি পৃথিবীর বাইরে। পৃথিবীর আকাশ কেমন হবে তার উপর এর বায়ুমণ্ডলের প্রভাব আছে। অন্য গ্রহ-উপগ্রহদের ক্ষেত্রে তাই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য চোখে পড়ে।

- আচ্ছা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ কেমন হত?
- পৃথিবীতে আসা সূর্যের আলো আসলে ৭টি রঙে গঠিত। এই আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে বায়ুকণার সাথে ধাক্কা লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে নীল রঙ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে  আমাদের পৃথিবীর আকাশ নীল দেখায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ হত কালো। একদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে থাকত। এর আলো পুরো আকাশ দখলে রাখত না। দিনেও তারা দেখা যেত।
- তাহলে কি চাঁদের আকাশ দেখতে কালো? ওখানেতো বায়ুমন্ডল নেই। অন্য গ্রহ বা উপগ্রহের আকাশ দেখতে কেমন? চাঁদ বা অন্য গ্রহের রাতের আকাশ কি পৃথিবীর আকাশের মত এত সুন্দর? অন্যান্য গ্রহকে যেমন পৃথিবী থেকে দেখা যায়, তেমনি পৃথিবীকে কি সেই গ্রহগুলো থেকে দেখা যায়?
এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে আজকের আয়োজন।

আগে সংক্ষেপে পৃথিবীর আকাশ সম্পর্কে একটু বলে নিই। পৃথিবীর রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু  চাঁদ। তবে এরপরের অবস্থানে কিন্তু লুব্ধক নয়। লুব্ধক সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিন্তু গ্রহদের চেয়ে পিছিয়ে। খালি চোখে সৌরজগতের মোট পাঁচটি গ্রহ আমরা দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি সবাই লুব্ধকের চেয়েও উজ্জ্বল। তবে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিকভাবে দেখা যায় শনি ও বৃহস্পতিকে। বুধ ও শুক্র সব ঋতুতে থাকে না, থাকলেও কয়েক ঘণ্টার বেশির জন্যে নয়।
আচ্ছা, এবার তাহলে পৃথিবির বাইরে উঁকি দেই।
পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদের আকাশকেই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা ও ছবি তোলা গেছে। অন্য কোথাও মানুষের পা পড়েনি বলে আকাশ দেখতে কেমন হবে তা জানার জন্যে নির্ভর করতে হয় পরোক্ষ উপায়ের উপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপায় হচ্ছে বিভিন্ন মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য। যেমন মঙ্গল গ্রহ, শুক্র এবং শনির উপগ্রহ টাইটানের আকাশের তথ্য এভাবে পাওয়া গেছে। আকাশের চিত্র কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বায়ুমণ্ডল আছে কি নেই, থাকলে তার উপাদান কী, মেঘ আছে কি না ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যে আকাশগুলো সরাসরি দেখা যায়নি এসব তথ্যের মাধ্যমে তাদের আকাশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

বুধ গ্রহের আকাশঃ
বুধ গ্রহের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে সূর্যের আলোকে বিক্ষিপ্ত করার মতও কেউ নেই। দিনের বেলায়ও তাই কালো মহাকাশ চোখে পড়বে। সাথে থাকবে কিছু বিন্দু বিন্দু তারার আলো। তবে সূর্যের উপস্থিতির কারণে একটি বিন্দু হবে বেশ বড়। পৃথিবী থেকে দেখার তুলনায় সূর্যের আকার হয় গড়ে আড়াই গুণ এবং উজ্জ্বলতা হয় ৬ গুণ পর্যন্ত।
পৃথিবীর রাতের আকাশের মত বুধের রাতের আকাশকে কোন চাঁদ জ্যোৎস্নাপ্লাবিত করতে পারে না। কারণ বুধের কোন উপগ্রহই নেই। এখানে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু শুক্র। পৃথিবীর চেয়ে বুধের আকাশে শুক্রকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। বুধ গ্রহে এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭.৭ বা মাইনাস ৭.৭) যেখানে পৃথিবীতে এই মান (-৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতার মান যত কম হয়, বস্তু তত উজ্জ্বল হয়। যেমন চাঁদের আপাত উজ্জ্বলতা (-১২.৭) এবং সূর্যের (-২৭)।
বুধ থেকে আমাদের পৃথিবী এবং চাঁদও ভালো মত চোখে পড়ে। আপাত উজ্জ্বলতা যথাক্রমে (-৫) ও (-১.২)। পৃথিবীতে যেমন দেখা যায়, তেমনি বুধ থেকে বাকি গ্রহদেরও দেখায় যায়, তবে অনেকটা অনুজ্জ্বল।

আরো পড়ুনঃ
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

পৃথিবীর উত্তর মেরু বরাবর যেমন ধ্রুবতারার অবস্থান তেমনি বুধ গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে একটি ধ্রুব তারা আছে। এর নাম আলফা পিকটোরিস। কখনও কখনও বুধ গ্রহে একই দিনে দুইবার সূর্যোদয় দেখা যায়। কেন তা আমরা অন্য কোন সময় ব্যাখ্যা করব।

শুক্র গ্রহের আকাশঃ 
পৃথিবীর আকাশে শুক্র (শুকতারা) খুবই জনপ্রিয় বস্তু। কিন্তু এর নিজের আকাশ খুবই নিষ্প্রভ। দিনের বেলায়ও সূর্য দেখা যায় না। রাতেও তারারা মিটিমিটি করে না। এর কারণ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডের উপস্থিতি। সোভিয়েত মহাকাশযান ভেনেরার মতে শুক্র গ্রহের আকাশ দেখতে কমলা রঙের। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে আবর্তন করে বলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূবে। এটিই আবার সেই অদ্ভুত গ্রহ যাতে বছরের চেয়ে দিন বড়।
আরো পড়ুনঃ 
অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্রহটির বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে উপরে উঠলে চাঁদ, পৃথিবী এবং বুধ গ্রহকে বেশ ভালো উজ্জ্বল দেখা যায়।

চাঁদের আকাশঃ
চিত্রঃ ১৯৬৮ সালে চাঁদের কক্ষপথ থেকে তোলা পৃথিবীর ঐতিহাসিক ছবি

চাঁদেরও কোন বায়ুমণ্ডল নেই। তাই এর আকাশ দেখতে কালো। তবে দিনের বেলায় সূর্য খুব উজ্জ্বল থাকার কারণে তারাদেরকে দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে সূর্যের আলোর দিককে কোনভাবে ঢেকে রাখলে তারা দেখা সম্ভব। এর কারণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। আমরা জানি, আলোর উৎসের আশাপাশের বস্তু আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে আলোকে হাত দিয়ে আড়াল করে রাখলে আলোক উৎসের পাশের বস্তু সহজেই দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে সূর্যের দিককে হাত দিয়ে ঢেকে রাখলেও তারা দেখা যাবে না। কারণ বায়ুমণ্ডলের কারসাজিতে আলো সব দিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সূর্যকে দেখতে যেমন লাগে, চাঁদ থেকেও তেমনই লাগে। কিছুটা বেশি উজ্জ্বল এবং সাদা রঙের- যেহেতু বায়ুমণ্ডল অনুপস্থিত।

চাঁদ থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে? খুশির খবর হচ্ছে, চাঁদের আকাশের সবচেয়ে দর্শনীয় বস্তু কিন্তু পৃথিবীই। পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় লাগে, চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তার চার গুণ মনে হয়। পৃথিবীর আকাশে যেমন চাঁদ বড় ছোট হয়, তেমনি চাঁদ থেকে দেখতে পৃথিবীও বড় ছোট হয়। কারণ দুজনেই সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। তবে পৃথিবীতে যখন চাঁদের পূর্ণিমা, চাঁদে তখন পৃথিবীর অমাবশ্যা। একইভাবে চাঁদের অমাবশ্যার সময় পৃথিবী চাঁদকে দেয় জ্যোৎস্না শোভিত রাত। তার মানে জ্যোৎস্না চাঁদের একক সম্পত্তি নয়। সুযোগ দিলেও পৃথিবীও তার দান ফিরিয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 
পূর্ণিমা হয় কখন, কীভাবে?
চিত্রঃ চাঁদে পৃথিবির উদয় ঘটছে। একে আমরা নাম দিতে পারি ‘ভূদোয়’। ইংরেজিতে বলে আর্থরাইজ

আমরা জানি, চাঁদ নিজের অক্ষের চারদিকে এক বার ঘুরতে যে সময় নেয় তাতে পৃথিবীকে এক বার ঘুরে আসে। ফলে আমরা পৃথিবী থেকে সব সময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই দেখতে পাই। সর্বোচ্চ অবশ্য ৫৮% পর্যন্ত দেখা যায়। এর অনিবার্য কারণ হিসেবে চাঁদেরও শুধু পৃথিবীর নিকট পৃষ্ঠ থেকেই পৃথিবীকে দেখা যায়। অন্য পাশ থেকে দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদকি আবর্তন করে?

পৃথিবীতে বসে আমরা চন্দ্রগ্রহণ দেখি, যখন সূর্যের আলোতে তৈরি পৃথিবীর ছায়া চাঁদের গায়ে গিয়ে পড়ে। এই সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে। এই সময় চাঁদে ঠিক কী ঘটে? একটু ভাবলেই বোঝা যায়, এই সময় চাঁদ থেকে কেউ পৃথিবীর কারণে সূর্যকে দেখতে পাবে না। তার মানে চাঁদে তখন হবে সূর্যগ্রহণ। মজার ব্যাপার, তাই না! চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তুলনামূলক অনেক বড় দেখায় বলে সূর্যগ্রহণের সময়ের দৈর্ঘ্যও হবে লম্বা।

চিত্রঃ পৃথিবীতে চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে।

পৃথিবীতে যখন সূর্যগ্রহণ হবে তখন তাহলে চাঁদে কেমন দেখাবে? এটা তেমন দারুণ কিছু হবে না। কারণ পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ থাকে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে। ফলে এ সময় চাঁদ সূর্যের আলোকে বাধা দিয়ে পৃথিবীর উপর ছায়া ফেলতে চেষ্টা করবে। এ কারণে পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণ হবে ঠিকই। কিন্তু চাঁদের আকাশ থেকে দেখলে পৃথিবী যেহেতু চার গুণ বড় তাই চাঁদের আকাশের পৃথিবী খুব একটা ঢাকা পড়বে না। একটি গলফ বল ১৫ ফুট দূরে সূর্যের আলোর যেমন ছায়া ফেলবে, তেমন প্রতিক্রিয়াই শুধু চাঁদ তৈরি করতে পারবে। তবু এক কথায় বলা চলে, যখনি পৃথিবীতে কোন ধরনের গ্রহণ (Eclipse) ঘটে, তখন চাঁদেও একটি গ্রহণ হয়ে থাকে।
চিত্রঃ নাসার অ্যাপলো ১৭ মিশন কমান্ডার ইউজিন সারনান চাঁদকে পেছনে রেখে পোজ দিচ্ছেন। চাঁদে যাওয়া মোট ১২ ব্যক্তির মধ্যে তিনি সবার শেষে ফিরেছেন। 


মঙ্গল গ্রহের আকাশঃ
মঙ্গল গ্রহের একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল আছে, তবে তা প্রচুর ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। এতে করে আলো অনেক বেশি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। দিনের বেলায় আকাশ খুব উজ্জ্বল থাকে। কোন তারা দেখায় যায় না। মঙ্গলের আকাশের সঠিক রঙ জানা একটু কষ্টকর। তবে আগে যতটা মনে হত, মঙ্গলের আকাশ ততটা গোলাপী নয়। এর রঙ কমলা থেকে লালের কাছাকাছি। মঙ্গলের আকাশে সূর্যকে পৃথিবীর আকাশের তুলনায় ছোট দেখা যায়। এটাইতো হওয়া উচিত, তাই না? কারণ মঙ্গলতো পৃথিবী থেকেও সূর্যের দূরে।
মঙ্গলের দুটো ছোট্ট চাঁদ (উপগ্রহ) আছে- ফোবোস ও ডিমোস। ফোবোসকে সূর্যের অর্ধেকের চেয়ে ছোট দেখায়। আর ডিমোসকে লাগে একেবারে প্রায় বিন্দুর মত। সত্যিকারের সূর্যগ্রহণ বলতে যা বোঝায় তা এই চাঁদরা মঙ্গলের আকাশে তৈরি করতে পারে না। বরং সূর্য ও মঙ্গলের সাথে একই রেখায় এলে এদেরকে সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে গ্রহণ না বলে বলা হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)।
মঙ্গল থেকে পৃথিবীকে দেখতে ডাবল স্টারের মত লাগে। এর কারণ পৃথিবীর সাথে চাঁদের উপস্থিতি। পৃথিবী ও চাঁদের সর্বোচ্চ আপাত উজ্জ্বলতা হয় যথাক্রমে (-২.৫) ও (+০.৯)। তবে শুক্র গ্রহকে আরেকটু উজ্জ্বল দেখায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হয় (-৩.২) পর্যন্ত। মনে আছে নিশ্চয়ই, আপাত উজ্জ্বলতার মান কম হলে বস্তু হয় অপেক্ষাকৃত বেশি উজ্জ্বল। আর আগে মাইনাস চিহ্ন দিয়ে দিলে বড় সংখ্যার মান হয়ে যায় ছোট। তবে মঙ্গলের চাঁদগুলো থেকে মঙ্গলকে বিশাল বড় দেখায়। পূর্ণিমার চাঁদের সময় চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি ফোবোস ও ডিমোস থেকে মঙ্গলকে যথাক্রমে তার ৬৪০০ ও ১০০০ গুণ বড় দেখায়!

মঙ্গলের পরে সৌরজগতে আছে গ্রহাণুপুঞ্জ। আপাতত এদের নিয়ে বলার মত বিশেষ কিছু নেই। তাই আমরা চলে যাচ্ছি বৃহস্পতি গ্রহে। তবে এতক্ষণ যাদের কথা বললাম- চাঁদ অথবা মঙ্গল বা অন্য গ্রহরা; এদের উপর আমরা অবতরণ করতে পারব (শুক্রের ভয়াবহ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে মারা পড়ব যদিও)। কিন্তু বাকি গ্রহরা হল গ্যাস দানব (Gas giant) অথবা তুষার দানব (ice giant)। সাধারণত এদের কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না যেখানে আমরা কখনও অবতরণের চিন্তা করতে পারি।

বৃহস্পতির আকাশঃ
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের ভেতর থেকে কখনও কোনভাবে ছবি তোলা হয়নি। তবে মনে করা হয় এর আকাশও পৃথিবীর আকাশের মতই নীল, তবে বেশ অনুজ্জ্বল। এতে সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা ২৭ গুণ কম। আমরা এখন জানি, শনি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গ্রহের বলয় আছে, তা খুবই সরু অবশ্য। বৃহস্পতির এই বলয় এর বিষুব অঞ্চল থেকে দেখা সম্ভব। বায়ুমণ্ডলের আরও নিচের দিকের এলাকা বিভিন্ন মেঘ ও রঙের কুয়াশায় পরিপূর্ণ। ফলে এদিকে সূর্যের আলো আসতে বাধা পায়। পৃথিবীর তুলনায় এখানে সূর্যকে চারভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট দেখায়।
সূর্যের পরে বৃহস্পতির আকাশে উজ্জ্বল বস্তুরা হল এর প্রধান চারটি চাঁদ। এরা হল আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো। গ্যালিলিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে এদের নাম গ্যালিলীয় চাঁদ। এর মধ্যে আয়ো আমাদের চাঁদের চেয়ে বড় দেখায়। তবে কিছুটা কম উজ্জ্বল। কিন্তু আবার কোন মাতৃ গ্রহ থেকে দেখা এর চাঁদদের মধ্যে আয়োকেই সবচেয়ে বড় দেখায়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড। এটি আয়ো ও ইউরোপার কাছাকাছি মানের উজ্জ্বল। তবে দেখতে আয়োর চেয়ে ছোট- অর্ধেক। তবে ইউরোপার চেয়ে অবশ্য দ্বিগুণ দেখায়। ক্যালিস্টো এদের মধ্যে সবচেয়ে দূরে। ফলে এটি দেখতে আয়োর চারভাগের এক ভাগের মত। আমাদের চাঁদের মত এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বৈশিষ্ট্য (যেমন এবড়োথেবড়ো পৃষ্ঠ) চোখে পড়ে না।
চিত্রঃ বৃহস্পতির আকাশে আয়ো এবং ইউরোপা

এরা আমাদের চাঁদের মতই সূর্যগ্রহণ ঘটাতে সক্ষম। বরং আমাদের চাঁদের চেয়ে এরা এই কাজটি বেশিই করে। এর কারণ হচ্ছে বৃহস্পতির কক্ষীয় নতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক অল্প।
অ্যামালথিয়া ছাড়া এর ভেতরের দিকের বাকি উপগ্রহদেরকে দেখতে তারার মত দেখায়। অ্যামালথিয়া মাঝে মাঝে বড় হয়ে প্রায় ক্যালিস্টোর সমান হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতির আকাশে এরা সবাই যে কোনো তারার চেয়েও উজ্জ্বল থাকে। আরও দূরের উপগ্রহদের মধ্যে হিমালিয়া ছাড়া কাউকে দেখা যায় না।
এবার আসি বৃহস্পতির উপগ্রহদের আকাশে। এদের সংখ্যা আপাতত ৬৭। কারোই বলার মত বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে আকাশ হয় কালো। এদের আকাশে বৃহস্পতিকে অসাধারণ দেখায়। অভ্যন্তরীণ উপগ্রহদের এর সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ আয়োতে বৃহস্পতিকে আমরা চাঁদকে যেমন দেখি তার ৩৮ গুণ বড় দেখায়!  সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ মেটিস। এখানে বৃহস্পতিকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের ১৩০ গুণ! মেটিসে বৃহস্পতি সূর্যের আলোর ৪% পর্যন্ত উজ্জ্বলতা প্রতিফলিত করতে পারে। বলে রাখা ভাল, আমাদের চাঁদ পৃথিবীর আকাশে সূর্যের চেয়ে ৪০০ গুণ অনুজ্জ্বল।

শনি গ্রহের আকাশঃ 
আগেই বলেছি শনি গ্রহেরও কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই। এর বায়ুমণ্ডলের উপুরের দিকে থেকে আকাশ সম্ভবত নীল দেখাবে। তবে আরও নিচের দিকে আকাশের রঙ দেখাবে হলুদাভ। শুধুমাত্র অনুসূর (সূর্যের নিকটতম) অবস্থানে থাকার সময় এর উত্তর গোলার্ধ সূর্যকে দেখার সুযোগ পায়। এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ থেকে এর বলয় দেখা যায় ভালোভাবেই।
অনুসূর বনাম অপসূর

শনির উপগ্রহরা রাতের আকাশকে খুব বেশি সুন্দর করে তুলতে পারে না, যদিও এখন পর্যন্ত এর ৬২ টি উপগ্রহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান। এটি শনির আকাশে আমাদের চাঁদের অর্ধেকের মত লাগে। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭)। তবে দূরত্ব বেশি হবার কারণে টাইটান শনির সবচেয়ে অনুজ্জ্বল চাঁদ। এর চেয়েও উজ্জ্বল দেখায় মাইমাস, এনচেলাডাস, টেথিস, ডায়োনে ও রিয়া। বাইরের দিকের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র ফোবেকে দেখা যায়।
আমাদের চাঁদের মতই শনির ভেতরের দিকের চাঁদেরাও শনিকে একবার ঘুরে আসতে যে সময় নেয় ততক্ষণে শনি নিজের অক্ষের উপর আবর্তন শেষ করে। ফলে এদের এক পৃষ্ঠ থেকেই শুধু শনিকে দেখা সম্ভব। তবে ভেতরের দিকের চাঁদ্গুলোতে শনি একটি দেখার মত জিনিস বটে! শনির উপগ্রহ প্যানে শনিকে আমাদের চাঁদে চেয়ে ১০৪ গুণ বড় দেখায়। তবে শনির উপগ্রহগুলো থেকে এর বলয় খুব ভালোভাবে দেখা যায় না। এর কারণ এরা শনির বলয়ের সাথে একই সমতলে অবস্থান করছে। অন্য দিকে বলয়ের পুরুত্বও কিন্তু খুব বেশি না।
সৌরজগতের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র শনির উপগ্রহ টাইটানেরই পুরু বায়ুমণ্ডল আছে। এর পৃষ্ঠ থেকে আকাশকে দেখতে বাদামী বা গাঢ় কমলা রঙের দেখায়। টাইটান সূর্যের আলো পায় পৃথিবীর ৩০০০ ভাগের এক অংশ। ফলে দিনের বেলায় এর আকাশ দেখায় পৃথিবীর গোধূলির মত। পৃথিবী ছাড়া পুরো মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত জানা মতে শুধু টাইটানেই রংধনু তৈরি হতে পারে। শনিকে দেখা যায় শুধু বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের দিকেই।
অন্য দিকে এনসেলাডাস উপগ্রহে শনিকে তুলনামূলক অনেক অনেক ভালো দেখা যায়। আমাদের চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি তার তুলনায় এখান থেকে শনিকে ৬০ গুণ বড় দেখা যায়। তবে আমাদের চাঁদের মতই এর মাত্র এক পৃষ্ঠ থেকেই শনিকে দেখা সম্ভব। এর আকাশে শনিকে বড়- ছোট হতেও দেখা যায়। এখান থেকে শনির আরও কিছু উপগ্রহকেও দেখা যায়। এর মধ্যে মাইমাসকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের সমান।
চিত্রঃ শিল্পির হাতের তুলিতে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের আকাশ

শনির দক্ষিণ মেরু বরাবর আকাশে আমাদের ধ্রুবতারার মত একটি তারা আছে। এর নাম ডেল্টা অক্টানটিস।

ইউরেনাস গ্রহের আকাশঃ
এই গ্রহটির আকাশ খুব সম্ভব হালকা নীল। এর হালকা বলয় পৃষ্ঠ থেকে দেখা যাওয়ার কথা নয়। ইউরেনাসের দক্ষিণ ও উত্তর দুই মেরুতেই একটি করে মেরু তারা (Pole star) বা ধ্রুবতারা আছে। এরা হল যথাক্রমে ১৫ ওরাইওনিস ও সাবিক। দুটোই আমাদের উত্তর মেরুর ধ্রুবতারার চেয়ে অনুজ্জ্বল।
এর পৃষ্ঠ থেকে কোন উপগ্রহকেই আমাদের চাঁদের মত বড় দেখা যায় না, যদিও এখন পর্যন্ত এরা সংখ্যায় ২৭। তবে এরা সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় দারুণ একটি দৃশ্য ঠিকই তৈরি হয়।

নেপচুনের আকাশঃ
নেপচুন সৌরজগতের সর্বশেষ গ্রহ। অনেকটা ইউরেনাসের মত এর আকাশ। তবে এটি হালকার বদলে উজ্জ্বল নীল। এরও বলয় আছে। তবে তা খুবই সরু হওয়াতে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে দেখা যায় না। সূর্যের পরে এর আকাশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু উপগ্রহ ট্রাইটন। একে আমাদের চাঁদের চেয়ে সামান্য ছোট দেখায়। আরেকটি চাঁদ প্রোটিয়াস দেখতে আমাদের চাঁদের অর্ধেক। নেপচুনের সবচেয়ে বড় চাঁদ হল ট্রাইটন। এর হালকা বায়ুমণ্ডল আছে। তবু আকাশ কালোই দেখায়। এর আকাশে নেপচুনকে এক জায়গায় স্থির দেখায়। কেন অনুমান করেনতো? এতক্ষণের আলোচনা থেকেই বুঝে ফেলার কথা।

প্লুটোর আকাশঃ
চিত্রঃ প্লুটোর আকাশে সূর্য (উপরে ডানে) ও উপগ্রহ শ্যারন

প্লুটো এখন আর গ্রহ নয় বরং বামন গ্রহ (Dwarf planet)। প্লুটো সূর্য থেকে পৃথিবীর তুলনায় ১৩০ গুণ দূরে। তবু এখানে সূর্য মোটামুটি ভালোই উজ্জ্বল। এখানে আমাদের চাঁদের চেয়ে সূর্যের উজ্জ্বলতা ১৫০ থেকে ৪৫০ গুণ। এর বায়ুমণ্ডলে আছে নাইট্রোজেন, মিথেন ও কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস। প্লুটো এর বৃহত্তম উপগ্রহ শ্যারনের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আটক। এ কারণে এরা সব সময়ে একে অপরের দিকে মুখ করে থাকে।

সৌরজগতের বাইরের আকাশঃ 
বহির্গ্রহ মানে সৌরজগতের বাইরের গ্রহ। ৬৫ থেকে ৮০ আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যন্ত সূর্যকে খালি চোখে দেখা যাবে। মাত্র ২৭ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত একটি নক্ষত্রে নাম বিটা কোমি বেরানেসিজ। আমাদের আকাশে এটি খুব অনুজ্জ্বল। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র জগৎ আলফা সেন্টোরি (প্রক্সিমা সেন্টোরি নক্ষত্রও একই বাইনারি জগতের অংশ)। এই অঞ্চল থেকে সূর্যকে দেখা যাবে ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলীতে। উজ্জ্বলতা হয় আমাদের রাতের আকাশের ৬ষ্ঠ উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্যাপেলার মত।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Extraterrestrial_skies#Mercury
২। https://www.quora.com/The-sky-is-blue-on-earth-What-color-is-the-sky-on-other-planets-in-our-solar-system
৩। http://www.answers.com/Q/What_color_is_the_sky_on_the_planet_Mercury
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_nearest_stars_and_brown_dwarfs
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...