Advertisement

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

ফরাসী জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে ছিলেন মূলত ধূমকেতু শিকারী। অনেকগুলো বস্তুকে তিনি এক সময় ধূমকেতু মনে করে তালিকাভূক্ত করলেও পরে জানা যায় এরা ধূমকেতু নয়। তিনি হতাশ হলেন। পরে এদের পেছনে সময় নষ্ট করা থেকে বাঁচতে এদের একটি তালিকা করলেন। তাঁর হতাশা থেকে উৎপন্ন সেই তালিকার জন্যেই বর্তমানে তিনি বিখ্যাত। বর্তমানে এই তালিকায় ১১০ টি বস্তু আছে। তাঁর নামানুসারেই বস্তুগুলোকে বলা হয় মেসিয়ার অবজেক্ট। যেমন অ্যান্ড্রোমিডা গ্যলাক্সিকে বলা হয় মেসিয়ার ৩১ বা সংক্ষেপে এম ৩১।
চার্লে মেসিয়ে 
১৭৩০ সালের এই দিনে (২৬ জুন) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের ১২ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দশম। অল্প বয়সেই তাঁর ৬ জন ভাই-বোন মারা যায়। ১৭৪১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে হারান বাবাকে। অর্থনৈতিক কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও বাসায় বড় ভাই নিজেই তাকে পড়াতে থাকেন। ১৭৪৪ সালের ছয় লেজ বিশিষ্ট ধূমকেতু এবং ১৭৪৮ সালে তাঁর নিজ শহরে দৃশ্যমান সূর্যগ্রহণ তাঁকে জ্যোতির্বিদ্যার দিকে আগ্রহী করে তোলে। শুরু করে আকাশ দেখা। ২১ বছর বয়সে তিনি ফরাসী নৌবাহিনীর মহাকাশ বিভাগে যুক্ত হন।  ১৭৫১ সালে ফরাসী নৌবাহিনীর জ্যোতির্বিদ নিকোলা দেলিসলে তাঁকে তাঁর পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখার পরামর্শ দেন। তাঁর কথা মত, মেসিয়ে সর্বপ্রথম ১৭৫৩ সালে সূর্যের সামনে বুধ গ্রহের উপস্থিতির রেকর্ড রাখেন।
১৭৫৯ সালে তিনি মেরিন অবজারভেটরির প্রধান জ্যোতির্বিদ হন এবং ১৭৭১ সালে নিজেই নৌবাহিনীর অ্যাস্ট্রোনোমার নিযুক্ত হন।

১৭৬৪ সালে তিনি রয়েল সোয়াইটির ফেলো মনোনীত হন, ১৯৬৯ সালে হন রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স এর বিদেশি সদস্য। ১৭৭০ সালে যুক্ত হন ফ্রেঞ্চ একাডেমি অব সায়েন্স এর সাথে।
খুঁজতে গিয়েছিলেন ধূমকেতু, পেয়ে গেলেন আরো বহু কিছু। সময় বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বন্ধু ও সহকারী পিয়েরে মেকেইকে সাথে নিয়ে এগুলোর তালিকা করে ফেললেন। বর্তমানে এই তালিকায় ৩৯টি গ্যালাক্সি, ৭ টি নেবুলা বা নীহারিকা, ৫টি গ্রহ নীহারিকা এবং ৫৫টি তারা স্তবক (Star Cluster) আছে।
১৭৭৪ সালে  প্রথম প্রকাশিত এই তালিকায় ৪৫ টি বস্তুর নাম ছিল। এতে যে শুধু তাঁর আবিষ্কৃত বস্তুই ছিল তা নয়, তার আগের জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষণকৃত বস্তুও এতে ছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রথম প্রকাশিত ৪৫ টি বস্তুর মধ্যে তাঁর নিজের আবিষ্কৃত ছিল মাত্র ১৭টি। ১৭৮০ সাল নাগাদ তালিকাতে বস্তুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০। তালিকার চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৭৮১ সালে। এতে ১০৩ টি বস্তুর তালিকা ছিল। ১৯২১ থেকে ১৯৬৬ সালে এই তালিকায় আরো ৭টি বস্তুকে যুক্ত করলেন। এই বস্তুগুলো মেসিয়ে বা মেকেই চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশ করার পরে পর্যবেক্ষণ করেন বলে নিজেরা যুক্ত করে যেতে পারেননি।
বর্তমানে পেশাদার ও শখের জ্যোতির্বিদরা সমানে এই বস্তুগুলোর নাম ব্যবহার করেন। এই বস্তুগুলোর তুলনামূলক উজ্জ্বলতার কারণে এরা শখের জ্যোতির্বিদদের কাছেও খুব জনপ্রিয় বস্তু।
সবগুলো মেসিয়ার বস্তুর ছবি 

অন্য দিকে ধূমকেতুকেও তিনি ভোলেননি। তিনি ৪০টি নেবুলা ছাড়াও ১৩টি ধূমকেতুও আবিষ্কার করেন।
১৮১৭ সালে, ৮৬ বছর বয়সে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর সম্মানে চাঁদের একটি গর্তের নাম মেসিয়ার এবং একটি গ্রহাণুর নাম ৭৩৫৯ মেসিয়ার রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তাঁর নামের সঠিক উচ্চারণ চার্লে মেসিয়ে যদিও চার্লস মেসিয়ার (ফরাসীঃ Charles Messier) বানানটি অধিক প্রচলিত।

[১] স্পেইস ডট কম
[২] উইকিপিডিয়া
Category: articles

বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬

আজ মার্চের ৯ তারিখ। ১৯৩৪ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন। এখন বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হত ৮২। অবশ্য তিনি মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই ১৯৬৮ সালে পরলোক গমন করেন যান। ১৯৬১ সালের এপ্রিলের ১২ তারিখে তিনি প্রথম নভোচারী হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েন। রাশিয়ার ভোস্টক ১ যানে করে তিনি ৮৯.১ মিনিট ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। তিনি সম্পূর্ণ পৃথিবী একবার ঘুরে আসেন এবং সর্বোচ্চ ২০০ মাইল (৩২৭ কিলোমিটার) পর্যন্ত উপরে উঠেন। ভ্রমণ শুরু থেকে অবতরণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অভিযান শেষ হতে সময় লাগে ১০৮ মিনিট।
প্রথম নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন

মস্কো শহরের পশ্চিমে একটি খামারে তাঁর জন্ম। বাবা ছিলেন একইসাথে রাজমিস্রি, কাঠমিস্রি ও কৃষক। মা ছিলেন গোয়ালিনী। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় তাঁর পরিবার নাৎসি বাহিনীর হাতে নিপীড়নের শিকার হয়। তাঁর দুই বোনকে নির্বাসন দিয়ে পোল্যান্ড পাঠানো হয়। যুদ্ধের পরে অবশ্য তারা পরিবারের সাথে মিলিত হন। গ্যাগারিন পড়াশোনা চালিয়ে যান।
কিশোর বয়সেই গ্যাগারিন বৈমানিক হতে উৎসুক ছিলেন। একবার রাশিয়ার একটি ইওক ফাইটার প্লেন বাধ্য হয়ে গ্যাগারিনের বাড়ির কাছে অবতরণ করে। বিমানের বৈমানিকরা মানুষের কাছে যে পরিমাণ শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন তা তরুণ গ্যাগারিনের উপর গভীর ছাপ ফেলে। তিনিও তাদের মত হবার স্বপ্ন দেখতে থাকলেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি ঢালাইয়ের কাজ শেখা শুরু করেন। পাশাপাশি পড়তে থাকেন সান্ধ্য স্কুলে। ১ বছর পর, ১৯৫১ সালে তিনি ভোকেশনাল ও স্কুলের সেভেন্থ গ্রেড- দুটোই পাস করেন। এরপর ডাক আসে সারাতোভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল স্কুল থেকে। এখানে থাকা অবস্থায়ই তিনি প্রতি সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে স্থানীয় ফ্লায়িং ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন। এখানেই তিনি প্রথমে বাইপ্লেন ও পরে ইয়ক-১৮ ট্রেইনার প্লেন চালানো শিখে ফেলেন।
১৯৫৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম নিজে নিজে বিমান চালান। একই বছর তিনি স্কুল থেকে পাস করে সোভিয়েট আর্মিতে যোগ দেন। পরে চলে আসেন বিমান বাহিনীতে। ভর্তি হন ওরেনবার্গ স্কুল অব এভিয়েশনে।
১৯৫৭ সালে তিনি এই স্কুল থেকে পাস করে স্কুলের মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট ভেলেন্টিনা ইভানোভা গরভাচেভার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে এ দম্পতি ইয়েলিনা ও গ্যালিনা নামে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়।
১৯৫৯ সালে রাশিয়া লুনা ৩ যানের সাহাযে প্রথমবারের মত চাঁদের উল্টো পাশের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। গ্যাগারিন অনুভব করলেন, মানুষের মহাশুন্য ভ্রমণেরও আর বেশি দেরি নেই। ১৯৬০ সালে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর নভোচারী হিসেবে প্রশিক্ষের জন্যে নির্বাচিত অল্প কিছু ব্যক্তির মধ্যে তিনিও স্থান করে নেন। এখানে শারীরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেওয়া হল মন-মানসিকতার প্রশিক্ষণও। গ্যাগারিন তাঁর রসিক মনোভাব, অধ্যবসায় ও নম্রতা দিয়ে বিশেষ নজর কাড়লেন।
১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। রাশিয়ার বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে মহাশূন্যে যাত্রা করল ভোস্টক ১ মহাকাশযান। যানের একমাত্র যাত্রী আর কেউ নন, ইতিহাসের প্রথম নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন।
রুশ ভাষায় ভোস্টক শব্দের অর্থ পূর্ব। পূর্বের তাৎপর্য সূর্যোদয়। অর্থ্যাৎ, মহাকাশ অভিযানের সূর্যোদয় ঘটল।
জাদুঘরে রক্ষিত ভোস্টক ১ মহাকাশযানের ক্যাপসুল

ফিরে এসে তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন সারা বিশ্বে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ খেতাব হিরো অব দা সোভিয়েত ইউনিয়ন পুরস্কারও পেলেন। স্বপ্ন সত্যি হল। বিশ্বজুড়ে সফর করলেন। তবে, তাঁর খ্যাতি যেভাবে নিজের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারতেন তা তিনি করেননি।
১৯৬২ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম ডেপুটি হলেন। ইয়ং কমিউনিস্ট লিগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পদ দেওয়া হল। কিন্তু এটা তার খুশির কারণ হতে পারল না। তাঁর মনে হলে একবার মাত্র মহাকাশ সফরের জন্যে তিনি ট্রেনিং করেননি। কিন্তু জানা যায় অন্যরা সোভিয়েত হিরো হবার সুযোগ হারাবার ভয়ে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করত।
১৯৬৩ সালে মস্কোর বাইরে গড়ে ওঠা কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারের ডেপুটি ট্রেনিং ডিরেকটর মনোনীত হন। পরে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়।
১৯৬৮ সালের ২৭ মার্চ তারিখে একজন সহকর্মীসহ (ভ্লাদিমির সেরিয়োগিন) বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন।

সূত্রঃ
[১] Earthsky
[২] উইকিপিডিয়াঃ Yuri Gagarin
Category: articles

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৪৭৩। আজকের এই তারিখটি হচ্ছে নিকোলাস কোপার্নিকাসের জন্মদিন। তিনি একইসাথে গণিতজ্ঞ হলেও নজর কেড়েছেন কসমোলজিতে বিশেষ অবদান রেখে।
এমন এক সময়ে তাঁর জন্ম যখন মানুষ ভাবত মহাবিশ্বের কেন্দ্রে পৃথিবীর অবস্থান। সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহ এবং নক্ষত্ররা ঘুরছে এর চারদিকে।
পৃথিবী-কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের চিত্র

এই মহা ভুল ধারণা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করল তাঁর বই De revolutionibus orbium coelestium (On the Revolutions of the Celestial Spheres) বা খ-গোলকের ঘূর্ণন যাতে প্রস্তাবনা আসল সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের। ১৫৪৩ সালে  প্রকাশিত বইখানা আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম ভিত্তি।
কয়েক বছর আগে Copernicus’ birthday লিখে গুগলে সার্চ দিলে সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের একটি ডুডল দেখা যেত। ছুটির দিন বা কারো জন্ম দিন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে গুগল ডুডল বানিয়ে থাকে।
নিকোলাস কোপার্নিকাস

তবে সৌরকেন্দ্রিক মডেল প্রথম প্রস্তাবক অবস্য কোপার্নিকাস নন। গ্রিক দার্শনিকদের অনেকেই ভাবতেন এই রকম চিন্তা। ইসলামিক জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতির সাথে সাথেও ধীরে ধীরে পৃথিবীর বেগ নিয়ে ধারণার বিকাশ ঘটে এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে সরানো হয়। তবে গ্রিকদের ক্ষেত্রে অন্য অনেক কিছুর মতই বাগড়া দিয়ে বসেছিলেন এরিস্টটল। তিনি বললেন, ৫৫টি এককেন্দ্রিক এবং স্বচ্ছ গোলক নিয়ে আকাশ গঠিত যেখানে আকাশের বস্তুদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ঐ গোলকের কেন্দ্রে আছে পৃথিবী। পৃথিবী এতে স্থির এবং আবদ্ধ। পৃথিবীকে এই বন্দী দশা থেকে মুক্ত করলেন কোপার্নিকাস।
এখন আমরা জানি সূর্যও কিন্তু মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়। তাহলে কে আছে কেন্দ্রে? নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে। পড়ুনঃ মহাবিশ্বের কেন্দ্র কোথায়?
সূত্রঃ
[১] Earth Sky
[২] উইকিপিডিয়াঃ জিওসেন্ট্রিক মডেল
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্লুটো গ্রহের আবিষ্কারক কে? বামন গ্রহটির আবিষ্কারক আমেরিকান জ্যোতির্বিদ ক্লাইড টমবাউ। আজকের দিনটি তাঁর জন্মের ১১০ জন্মবার্ষিকী।
১৯২৮ সালে পারিবারিক খামারে বাসায় নির্মিত টেলিস্কোপের পাশে দাঁড়িয়ে প্লুটোর আবিষ্কারক ক্লাইড টমবাউ। 

টমবাউ বড় হন ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের একটি কৃষক পরিবারে। তিনিও কাজ করতেন খামারেই। শিলাঝড়ের (Hailstorm) কবলে পড়ে তাঁর পরিবারের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আর্থিক অভাবে পড়ে যান তাঁরা। পড়াশোনার আশা ছেড়ে দিতে হয়ে তাঁকে। কিন্তু জ্যোতির্বিদ হবার আশা কখনো মাটিতে পড়তে দেননি তিনি। জ্যোতির্বিদ্যার জন্যে প্রয়োজনীয় গাণিতিক দক্ষতা নিজে নিজেই হাসিল করলেন। শিখলেন জ্যামিতি এবং ত্রিকোণমিতি। তিনি বলেছেন, 
আপনি কি ভাবতে পারেন, বর্তমান সময়ে একটি কিশোর শুধু মজা পাবার জন্যে ত্রিকোণমিতি শিখতে পারে? আমি তাই করেছি।
বাসায় বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ দেখতেন তিনি। কিছু পরামর্শের আশায় অ্যারিজোনার লয়েল অবজারভেটরিতে নিজের আঁকা মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের ড্রয়িং পাঠালে পরামর্শের বদলে পেয়ে যান চাকরির প্রস্তাব। ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সেখানে তিনি পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করেন।
এখানে তাঁর প্রধান দায়িত্ব ছিল প্ল্যানেট এক্স খুঁজে বের করা। অবজারভেটরির প্রতিষ্ঠতা পারসিভাল লয়েলও গ্রহটিকে খুঁজছিলেন। এর আগে তিনি (লয়েল সাহেব) মঙ্গল গ্রহের খাল আবিষ্কার করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯১৬ সালে লয়েল মারা গেলেও গ্রহটির অনুসন্ধানকার্য চলতে থাকে।
টমবাউ এর দায়িত্বই ছিল লয়েলের কাজটিকে চালু রাখা। এক বছর পর, ১৯৩০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে উদ্দেশ্য সফল হল। ক্লাইড টমবাউ পেয়ে গেলেন প্লুটোকে। কৃতিত্বের জন্যে টমাবাউ স্কলারশিপ পেলেন। পাশাপাশি পেলেন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৯ সালে তিনি ফরমাল শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
কিন্তু জ্যোতির্বিদগণ প্ল্যানেট এক্সকে খুঁজছিলেন কেন? উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে জ্যোতির্বিদরা বিশ্বাস করতেন, কিছু একটা সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসের কক্ষপথে নাক গলাচ্ছে। সেই সময় ইউরেনাসই ছিল সবচেয়ে বহিঃস্থ জানা গ্রহ।বোঝা গেল, ইউরেনাসের বাইরেও কেউ আছে। এর অবস্থানও নির্ণয় করা হল এবং অবশেষে ১৮৪৬ সালে পাওয়া গেল নেপচুন গ্রহ।
আরো পড়ুনঃ নেপচুন আবিষ্কারের কাহিনী

কিন্তু দেখা গেল নেপচুনের কক্ষপথও রহস্যময় আচরণ করছে। ফলে, জ্যোতির্বিদরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলেন, নেপচুনের বাইরেও আরেকটি অজানা গ্রহ আছে। এরই নাম দেওয়া হয় প্ল্যানেট এক্স। একে খুঁজতে গিয়েি বের হয়ে পড়ল প্লুটো। কিন্তু একে পাবার পরে দেখা গেল, নেপচুনের কক্ষপথের রহস্যময়তা ব্যখ্যা করার সাধ্য প্লুটোর নেই। এর ভর তুলনামূলকভাবে অতি সামান্য। পরে এর অন্য ব্যখ্যা পাওয়া গিয়েছিল।
নানা কারণে ২০০৬ সালে প্লুটো গ্রহের খাতা থেকে বাদ পড়ে গেল। পরিচিতি পেল বামন গ্রহ হিসেবে। বর্তমানে আমাদের সৌরজগতে আরো অনেক বস্তুই এই পরিচয় বহন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হোমিয়া, মাকিমাকি, সেরেস ইত্যাদি।
কিন্তু প্ল্যানেট এক্সের কী হল? মজার ব্যাপার হল, ২০১৬ সালের শুরুতে ক্যালটেকের জ্যোতির্বিদরা ঘোষণা দিয়েছেন, প্লুটোর কক্ষপথের বাইরে আরেকটি বড় গ্রহ আছে যার ভর পৃথিবীর ১০ গুণ। ধারণা করা হচ্ছে, নেপচুন থেকে ২০ গুণ দূরে এর কক্ষপথ অবস্থিত এবং সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে ২০ হাজার বছর।

সূত্রঃ
১। Earth Sky
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

যাঁকে আধুনিক কসমোলজির জনক বলে প্রায়শই অভিহিত করা হয়, সেই বিজ্ঞানী এডুইন হাবল এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধ্যানধারণা আমূল পাল্টে দেয়।
বিজ্ঞানী এডুইন হাবল
জন্ম ১৮৮৯ সালে। পেশাগত জীবন শুরু আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু যার মন পড়ে রয়েছে মহাকাশের দূর সীমানায়, তার কি আর আইনের ধারায় মন বসে?  কয়েক বছর পরেই নিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় ডক্টরেট । গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে (Observatory) কাজ করার দাওয়াত পেলেন। কিন্তু তিনি আবার ১ম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকও যে! তাই কাজে যোগ দিতে কিছু দিন দেরি হয়ে গেল। তবে, ফিরে এসেই লেগে গেলেন। এখানেই তিনি বিশ্বের বৃহত্তম দুটি আকাশবীক্ষণ যন্ত্র (Telescope) নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলেন। এগুলো হল যথাক্রমে ৬০ ও ১০০ ইঞ্চির হুকার টেলিস্কোপ।

সৈনিক জীবন বুঝি বড্ড ভালো লেগেছিল!  ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা শুরু হয়ে গেলে ১৯৪২ সালে আবারো মানমন্দির ছেড়ে গেলেন।  পেলেন বীরত্বের প্রতিকও।

মিল্কিওয়ের বাইরে উঁকিঃ
১৯২০ এর দশকেও আকাশে ছড়ানো ছিটানো ছোপ ছোপ আলোকে মনে করা হত নীহারিকা (Nebula)। মনে করা হত এগুলোর অবস্থানও মিল্কিওয়েতেই। আলাদা আলাদা করে NGC 6822, M33 ও এনড্রোমিডা গ্যালাক্সির ছবি নিরীক্ষা করার সময় হাবল এগুলোর প্রতিটির ভেতরে একটি সেফেইড ভেরিয়েবল নামক স্পন্দনশীল (Pulsating) নক্ষত্র (Star) দেখতে পেলেন। হাবল সাহেব হিসেব কষে বের করলেন নক্ষত্রগুলো কত দূরত্বে আছে। এতে করে বের হল নীহারিকাদের  দূরত্বও। দেখা গেল, মিল্কিওয়ে থেকে তাদের দূরত্ব অনেক বেশি দূরে।

মহাকাশবিদরাও বুঝলেন, এই নীহারিকাগুলোও আসলে মিল্কিওয়ের মতই ছায়াপথ (Galaxy)। প্রতিটি ছায়াপথে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন তারকা। আগে যেখানে মিল্কিওয়েকেই 'মহাবিশ্বের সব' মনে করা হত, সেখানে এবার মহাকাশবিজ্ঞানীদের চোখ আরো অনেক দূর প্রসারিত হয়ে গেল। 
প্রায় একই সময়ে হাবল গ্যলাক্সিদের শ্রেণিবিভক্ত করার একটি স্টান্ডার্ড উপায়ও বার করলেন। তিনিই প্রথম পরিষ্কার করে গ্যালাক্সিগুলোকে ৪টি শ্রেণিতে ফেললেন। এগুলো হল, ডিম্বাকৃতির (Elliptical), প্যাঁচানো তথা সর্পিলাকার (Spiral) , Barred Spiral ও অনিয়াতাকার (Irregular) গ্যালাক্সি। হাবল শুরুতে ধারণা করেছিলেন সর্পিল গ্যালাক্সিরা  ডিম্বাকৃতিরগুলো থেকে বিকশিত হয়। এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা জানেন সব গ্যলাক্সিদের আকৃতিই এদের জীবনের শুরুতেই নির্ধারিত হয়।

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বঃ
গ্যালাক্সিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হাবল দেখলেন, ওগুলো স্থির হয়ে বসে নেই। উপরন্তু এরা প্রায় সবাই পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবশ্য এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের সাথে পারস্পরিক মহাকর্ষীয় টানে কাছে আসছে এবং আরো ৫০০ কোটি বছর পরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে।

ফলে জানা গেল, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার বের করা হয় তাকে বলে হাবলের নীতি (Huble's Law)। অবশ্য জর্জ লেমিটরও এর আগে ১৯২৭ সালে এই নীতি প্রস্তাব করেছিলেন। হিসেব করে পাওয়া গেল, মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট হারে প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীর সম্মানে এই হারটিকে বলা হয় হাবল ধ্রুবক (Huble Constant)।

হাবলের এক দশক আগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও সাধারণ আপেক্ষিকতার নীতির মাধ্যমে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ সময়ে তার কোন প্রমাণ না পাওয়া যাওয়াতে তিনি সেই প্রস্তাবের সমীকরণগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু হাবল সেই ধারণা প্রমাণিত করবার পরে আইনস্টাইন মাউন্ট উইলসনে গিয়ে বলেন, ঐ সমীকরণগুলো প্রত্যাহার ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল

অন্যান্য অবদানঃ
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যার জগতেই হাবলের রয়েছে আরো অবদান। পেয়েছেন অসংখ্যা পুরস্কার। কিন্তু মহাবিশ্বের পরিচয় উন্মোচিত করার পরেও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। তাঁর জীবদ্দশায় নোবেল প্রাইজের জন্য  মহাকাশবিদ্যাকে পদার্থবিদ্যার একটি ফিল্ড মনে করা হত। তিনি আজীবন চেষ্টা করে গেছেন যাতে এই ধারণা চেঞ্জ হয়ে জ্যোতির্বিদরাও নোবেলের সুযোগ পান। সুযোগটি তৈরি হল ১৯৫৩ সালে। কিন্তু একই বছর মারা গেলেন তিনিও । যেহেতু নোবেলের ক্ষেত্রে মরণোত্তর (Posthumous) পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা নেই, তাই নোবেলের তালিকায় হাবল আর স্থান পেলেন না।

১৯৫৩ সালে, ৬৩ বছর  বয়সে মারা যান মহাবিশ্বের নব দিগন্ত উন্মোচনকারী এই জ্যোতির্বিদ। মৃত্যুর আগে তিনি পালোমার পর্বতে ২০০ ইঞ্চির হ্যালি টেলিস্কোপের নির্মাণ দেখে গিয়েছিলেনীর১৯৭৬ সালে রুশ BTA-6 টেলিস্কোপ তৈরি আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বৃহত্তম টেলিস্কোপ।

হাবলের জন্মের ১০১ বছর পর ১৯০০ সালে নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে হাবল স্পেইস টেলিস্কোপ বসাল। এই আকাশবীক্ষণ যন্ত্র মহাবিশ্বের হাজার হাজার ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। পৃথিবীর নিখুঁত বয়স নির্ণয়, গ্যালাক্সিদের ক্রমবিকাশ ও মহাবিশ্বকে প্রসারণের জন্য দায়ী ডার্ক এনার্জির আবিষ্কারের ক্ষেত্র প্রভূত  অবদান রয়েছে এই টেলিস্কোপ্টির।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Edwin Hubble

Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...