১.প্রাক-কথা: |
বিশাল এ মহাবিশ্ব |
অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানিসহ
পৃথিবীর মানুষের মধ্যে বৃহত্তর অংশই
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্তে বিশ্বাস করে। জরিপে দেখা যায় চীনে এ বিশ্বাস সবচেয়ে বেশী-৪০%। সব মিলিয়ে বিশ্বাস পুরুষের ২২% আর নারীতে ১৭%। বৈজ্ঞানিক তত্তকথা, সাধারণ জ্ঞান ও ধর্মীয় গ্রন্থরাজি থেকে ধারণা নিয়ে এর পক্ষে- বিপক্ষে প্রচুর মত রয়েছে।
এলিয়েন বা পৃথীবির বাইরের জীব বিষয়ক গবেষণা ও স্টাডিকে বলা হয় exobiology অথবা astrobiology( এ শব্দটি পৃথিবীর ক্ষেত্রেও প্রচলিত)।
২.থাকার সম্ভাবনা যে কারণে: ১৫৪৩ সালে কোপার্নিকাস এরিষ্টটলের বিপক্ষে গিয়ে বলেন পৃথিবী
মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় বরং সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান সাধারণ একটি গ্রহ। হাবলের টেলিস্কোপ প্রথমবারের মত মহাবিশ্বের বিশাল পরিধি মানুষের সামনে নিয়ে আসে। জানা গেল মহাবিশ্বে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন
গ্যালাক্সি বা তারকামণ্ডল।
আমাদের গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র যার মধ্যে আমাদের সূর্যও একটি।
এ বিশাল মহাবিশ্বে সূর্যের মত রয়েছে অসংখ্য
নক্ষত্র। তাদের কোনটিতে আমাদের সৌরব্যবস্থার মত ব্যাবস্থা থাকতেই পারে।
আমাদের তারকামণ্ডল (মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা)
মহবিশ্ব অনেক বড় হবার কারণেই স্টিফেন হকিং এবং কার্ল সেগান এর মতে প্রথিবীর বাইরে প্রাণ থাকার সম্ভাবনাটাও বেশী।
অণুজীবরা যদি পৃথিবীর অভ্যন্তরেই পাথরের ছোট ছোট ছিদ্রে থাকতে পারে তাহলে পৃথিবীর বাইরেও এরকম স্থানে থাকতেই পারে।
অনেকে প্রথিবীর বাইরে প্রাণের প্রমাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যাওয়া UFO(=Un-identified Flying Object=অচেনা উড়ন্ত বস্তু) ’র কথা বলেন। তবে বেশিরভাগ UFO কেই পৃথিবীসৃষ্ট আকাশযান অথবা কোন মহাজাগতিক বস্তু বা দেখার ভুল হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়।
৩.১আমাদের সৈৗরজগতে থাকার সম্ভাবনা: আমাদের সৌরজগত
আমাদের
সৌরজগতে এ সম্ভাবনার দৌড়ে এগিয়ে আছে
শুক্র,
মঙ্গল,
বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা,
শনির উপগ্রহসমূহ যেমন টাইটান ও Enceladus ।
মঙ্গল গ্রহের সম্ভাবনা: মঙ্গল গ্রহ
মঙ্গল গ্রহ আমাদের্ সৌরজগতে অবস্থানের কারণে এতে প্রণের অস্তিত্ত থাকতে পারে বলে অনেক বিজ্ঞানীর দৃঢ়বিশ্বাস। মনে করা হয় একসময় মঙ্গলের বুকে তরল পানি প্রবাহিত হত, ফলে এখনো এর অভ্যন্তরভাগে পানি থাকতে পারে। এছাড়া এর আবহাওয়ায় মিথেন গ্যাস পাওয়া গেছে।
২০০৮ সালের জুলাইয়ে ফিনিক্স মার্স ল্যান্ডার প্রমাণ করে মঙ্গলের মাটির নমুনায় পানির অস্তিত্ত বিদ্যমান। যন্ত্রটির রোবটিক হাতে সংগৃহীত মাটির নমুনায় তাপ দিয়ে প্রাপ্ত বাষ্পে পানিকণা পাওয়া যায়।
ম্যাক্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার থেকে পাঠানো রিপোর্টে প্রমাণ পাওয়া যায় গত ১০ বছরের মধ্যে মঙ্গলে পানি প্রবাহিত হয়েছে। তবে প্রাণ আছে কিনা এ ব্যাপারে এখনও শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়।
শনির উপগ্রহ টাইটান: শনির উপগ্রহসমূহ
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান। নাসার বিজ্ঞানীরা ক্যাসিনীর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বলেন একমাত্র টাইটান্ প্রাণধারণের উপযোগী এবং সেখানে জীবনের উৎপত্তিও হয়েছে।
ইকারাস সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবণ্ধে বলা হয় টাইটানের হাইড্রোজেন গ্যাস গ্রহপৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে হারিয়ে যাচ্ছে, এ থেকে প্রমাণ হয় যে প্রণীরা শ্বাস নিচ্ছে এবং তারা সম্ভবত অক্সিজেনের পরিবর্তে হাইড্রোজেন গ্রহণ করছে।
তবে চলতি বছরের (২০১১) মে মাসে বিজ্ঞানীরা বলেন, ’আমাদের জানামতে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ত থাকার ব্যাপারে শনির উপগ্রহ
Enceladus সবচেয়ে সম্ভাবনাশীল।’
৩.২.সৌরজগতের বাইরের সম্ভাবনা: মিল্কিওয়ে (আমদের ছায়াপথ) ছাড়াও মহাবিশ্বে আরো শতকোটি তারকামণ্ডল বা ছায়াপথ আবিষ্কৃত হয়েছে। সেসব তারকামণ্ডল বা নক্ষত্রমণ্ডলেও পৃথিবীসদৃশ গ্রহ আছে। আমাদের নিকটতম ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা ২০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।হাবল টেলিস্কোপের আল্ট্রা ডিপ ক্যামেরার সাহায্যে ৩০ কোটি আলোকবর্ষের চেয়েও বেশি দূরত্বের আলোকবর্ষও পর্যক্ষেণ করা গেছে। অ্যান্ড্রোমিডায় সূর্য্যের মত কোন নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ বা উপগ্রহ থাকতে পারে যা আমাদের পৃথিবীর মত বাসযোগ্য হতে পারে।
এছাড়া এ বিশাল মহাবিশ্বে সূর্য্যের মত অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে। বসবাসোপযোগী নক্ষত্র থাকতে হলে তাকে নিজস্ব ছায়াপথের বাইরের দিকে থাকতে হবে এবং তার নিজস্ব গতি তার ছায়াপথের আবর্তনের সাথে সর্ম্পকযুক্ত হতে হবে। তবে গামা ও মহাজাগতিক রশ্মির আধিক্য থাকলে তা প্রাণের অস্তিত্তের পথে বাধা হবে। আবার তার গতি নিজস্ব ছায়াপথের আবর্তনের সাথে অসংগতিপূর্ণ হলে তার গ্রহব্যবস্থা কয়েক মিলিয়ন বছরেই মিলিয়ে যাবে।
তবে পানি থাকার সম্ভাবনার কারণে সম্প্রতি আবিষ্কৃত প্রায় পৃথিবীর ভরের সমান গ্রহ গ্লিস ৫৮১ সি, জি এবং ডি এক্ষেত্রে সম্ভাবনাময়ী।
৪.পরোক্ষ প্রমাণ: আর্জেন্টিনার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৭০০ মিটার (১৫হাজার ৪০০ ফুট) উপরে লেক ডায়মান্ট নামক হ্রদে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এ আবিষ্কার থেকে ভিনগ্রহে প্রাণের ব্যাপারে সূত্র পাওয়া যেতে পারে।কেননা হ্রদটির কাছেই রয়েছে মাইপো আগ্নেয়গিরি। এখানে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের প্রকট অভাবেও বেঁচে আছে। এর আগে বিরুপ পারবেশে টিকে থাকা ‘এক্সট্রিমোফিলস’ নামক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু ’পলিএক্সট্রিমোফিলস’ নামক ব্যাকটেরিয়া চরম বৈরি পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। ওই হ্রদে আর্সেনিকের নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ২০ হাজার গুণ বেশি মাত্রা রয়েছে। তাপমাত্রা প্রায়ই শূণ্যের নিচে নামে। কিন্তু অতিরিক্ত লবণক্ততার কারণে বরফ জমাট বাঁধেনা।
এ আবিষ্কার নিঃসন্দেহে ভিনগ্রহের বৈরি পরিবেশেও প্রাণের অস্তিত্তের পক্ষে রায় দেয়।
৫.অভিযান-অনুসন্ধান: ভিনগ্রহের প্রাণের খোঁজে অনুসন্ধান চলতে থাকলেও স্টিফেন হকিং বলছেন ভিনগ্রহে প্রাণীর খোঁজ পেলেও
তাদের সাথে যোগাযোগ করা ঠিক হবেনা । যা হোক এ সতর্কবাণীতো আর মানুষের কৌতূহল দমাতে পারবেনা।
USSR এর কৃত্রিম উপগ্রহ স্ফুটনিকের মাধ্যমে মহাশূন্যে অভিযান শুরু।
গবেষকরা ভিনগ্রহের প্রাণের খোঁজ করছেন পৃথিবীতে বসেই পুরানো নথিপত্র ঘেঁটে। হয়তো অতীতে্ এলিয়েনরা পৃথিবীতে এসেছিল আর তখনকার মানুষ তা দেখে নথিভুক্ত করে রেখেছে। এরিক ভন দানিকেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, দেয়ালচিত্র ও দেয়াল-লিখনে খুঁজে দেখেছেন এলিয়েনদের বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল। তবে অনেকেই এ দলিলগুলোকে প্রমাণ হিসেবে মানতে নারাজ।
পৃথিবীর বাইরে খোঁজার জন্য ফ্রাংক ড্রেক ১৯৬০ সালে SETI(search for extra-terrestial intelligence) প্রতিষ্ঠা করেন। এটা পৃথিবীতে বসেই বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে এলিয়েন অনুসন্ধান করে। ১০টিরও বেশি দেশে এর কার্যক্রম চলছে। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানী ড্রেক
একটি সমীকরণ দেন দেন যা অবশ্য বিজ্ঞানী ফার্মির মতে নিছক হেঁয়ালি।
চিলির আতাকামা মরুভূমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিস্কোপ যার ব্যাস হবে প্রায় ৪২ মিটার।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় একটি বিশাল টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে যা পৃথিবীর মত সম্ভাব্য ৮৬টি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ত খুঁজবে। SETI প্রকল্প বাজেট ঘাটতির কারণে বন্ধ হবার উপক্রম হলে ২০০৭ সালে SETI এর প্রকল্পের অংশ ATA, ইউসি বার্কলে রেডিও অ্যস্ট্রোনমি ল্যাবের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে।
তদুপরি নাসার (NASA=National Aeronautics and Space Administration) বহুমুখি কার্যক্রমতো চলছেই।