পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে উপবৃত্তাকার পথে। জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে। পৃথিবীর কক্ষপথের এ অবস্থানের নামে অনুসূর (perihelion)। এসময় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হয় ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার৷ জুলাই মাসে দূরত্ব থাকে ১৫.২ কোটি কিলোমিটার। এ জায়গার নাম অপসূর (aphelion)।
পৃথিবীর কক্ষপথে অনুসূর ও অপসূর |
আরও পড়ুন
সূর্যের নিকটতম অবস্থানে পৃথিবী
নিরক্ষরেখা কক্ষীয় তলের সাথে সাড়ে ২৩ ডিগ্রি হেলে আছে |
এখানেই একটা মজার ব্যাপার আছে। সূর্য অনুসূরে থাকার সময় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা অপসূরে থাকার সময়ের তাপমাত্রার চেয়ে ২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। অথচ এসময় সূর্যের বেশি কাছে থাকে পৃথিবী।
এর কারণ, মহাদেশ ও মহাসাগরগুলো পৃথিবীজুড়ে সমানভাবে বিন্যস্ত নয়। উত্তর গোলার্ধে ভূমির পরিমাণ বেশি। দক্ষিণে আবার মহাসাগর বেশি। জুন-জুলাই মাসে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। আর এতে করে উত্তর গোলার্ধের ভূমি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মাটি ও বালুর তাপধারণ ক্ষমতা কম। মরুভূমির কথা ভাবুন। দিনের সূর্যে বালু দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাপমাত্রা হয়ে যায় প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের বেলা সে তাপ হারিয়ে যায়। মরুভূমি হয়ে যায় শীতল। তাপমাত্রা নেমে হয়ে যায় দিনের অর্ধেকেরও কম (সেলসিয়াস স্কেলে)।
পৃথিবীর ঋতুচক্র |
অন্যদিকে পানির তাপধারণ ক্ষমতা বেশি। সূর্য ডোবার আগে-পরে তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি হয় না। কয়েক ডিগ্রি এদিক-সেদিক।
এ কারণেই জুলাই মাসে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। আর জানুয়ারি সবচেয়ে শীতল মাস। সেসময় পৃথিবীর জলীয় অংশ সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। আমরা বেশি তাপ পাই। তবে সে বাড়তি তাপ সমুদ্রের পানিতে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এ কারণেই দক্ষিণ গোলার্ধের গরমকাল উত্তরে চেয়ে কম উষ্ণ হয়। অথচ দক্ষিণ গোলার্ধের গরমের সময় পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে (জানুয়ারি)।
আরেকটা মজার ব্যাপার আছে। কেপলারের গ্রহের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে, অপসূর অবস্থানের চেয়ে অনুসূর অবস্থান দিয়ে চলার পৃথিবী কক্ষপথে দ্রুত চলে। এ কারণে উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকাল দক্ষিণের চেয়ে ২-৩ দিন লম্বা হয়। ফলে উত্তরের মহাদেশীয় অঞ্চল গরম হওয়ার জন্য একটু বেশি সময় পায়।
সূত্র