সূর্য একটা নক্ষত্র। যার চারপাশে ঘুরছে পৃথিবী নামক গ্রহটা। চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে৷ চলতে চলতে একটা সময় চাঁদ চলে আসে সূর্য ও পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে৷ আড়াল করে সূর্যের আলো। আর তখনই হয় সূর্যগ্রহণ৷ চাঁদ ও সূর্যের আকারে বিশাল ব্যবধান থাকলেও দূরত্বের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয় আকারের তারতম্য। তাই তো চাঁদ আকারে ছোট হয়েও পৃথিবীর আকাশে সূর্যের সমান৷
সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ও চাঁদের কক্ষপথ |
আগেই বলেছি, সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে৷ ফলে চাঁদের আলোকিত অংশও থাকে পৃথিবী থেকে উল্টো দিকে৷ এ জন্যই সূর্যগ্রহণ আসলে হয় অমাবশ্যার সময়। তবে সব অমাবশ্যায় কিন্তু সূর্যগ্রহণ হয় না। কারণ চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের একই সমতলে থাকে না৷ একই রেখা বরাবর চলে এলেই কেবল গ্রহণ হতে পারে৷ আর সেটা আবার পুরো পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। চাঁদের কারণে পৃথিবীর যে অঞ্চলে সূর্যের আলো পৌঁছতে পারে না শুধু সে অঞ্চল থেকেই তা দেখা যাবে৷ কোনো কোনো অঞ্চলে তো ঐ বিশেষ সময়ে রাত থাকবে। ফলে এমনিতেই সূর্য দেখা যাবে না।
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণে পৃথিবী থাকে সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে। আর সূর্যগ্রহণে চাঁদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে। |
সূর্যগ্রহণ তিন রকম আছে। পূর্ণগ্রাস, বলয় ও আংশিক৷ চাঁদ সূর্যের আলোকে পুরোপুরি ঢেকে দিলে হয় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ৷ এ সময় চাঁদের ছায়ার কেন্দ্রে (প্রচ্ছায়া) থাকা পৃথিবীর মানুষেরা পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখেন। আকাশ হয়ে যায় অন্ধকার। গোধূলির সময়ের মতো৷ আবহাওয়া ভাল হলে এ সময় পূর্ণগ্রাস অঞ্চলের মানুষের সূর্যের করোনা বা সৌরমুকুট দেখতে পাবেন। এটা হলো সূর্যের বহিস্থ বায়ুমণ্ডল৷ এমনিতে সূর্যের উজ্জ্বল অংশের জন্য এটা দৃষ্টির আড়ালে থাকে৷
চাঁদ কক্ষপথের অপভূ অবস্থান বা এর কাছাকাছি জায়গায় থাকা অবস্থায় সূর্যগ্রহণ হলে সেটা হয় বলয়গ্রাস৷ চাঁদ এ সময় পৃথিবী থেকে দূরে থাকায় আকার অপেক্ষাকৃত ছোট থাকে৷ ফলে পৃথিবীর আকাশে চাঁদের আপেক্ষিক আকার সূর্যের চেয়ে কম হয়। ফলে চাঁদের ছায়ায় সূর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে না। চাঁদের চারপাশ ঘিরে দেখা যায় বলয়৷
তিন রকম সূর্যগ্রহণ |
অন্যদিকে আংশিক গ্রহণ হয় যখন সূর্য, চাঁদ আর পৃথিবী সরলরেখায় থাকে না৷ চাঁদ সূর্যের একটা অংশকেই শুধু ঢেকে দেয়৷ সূর্যকে তখন ক্রিসেন্ট বা অর্ধচন্দ্রের মতো লাগে৷ আংশিক গ্রহণ কিন্তু বলয় বা পূর্ণগ্রাস থেকেও হতে পারে৷ এই দুই গ্রহণের সময় প্রচ্ছায়া অঞ্চলের বাইরের মানুষ দেখবে আংশিক গ্রহণ৷
সাবধান!
সূর্যগ্রহণ ভুলেও খালি চোখে দেখবেন না। দেখতে হলে লাগবে বিশেষ চশমা অথবা নির্দিষ্ট কৌশল। তবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় সামান্য সময়ের জন্য খালি চোখেও নিরাপদে গ্রহণ দেখা যাবে৷
সূর্যগ্রহণ জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণারও দূর্লভ এক সুযোগ৷ ১৯১৯ সালে এমন এক সূর্যগ্রহণের সময়ই প্রমাণ হয় আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিকতা৷ সূর্য চাঁদের আড়ালে ঢেকে যাওয়ার সূর্যের পেছনে থাকা হায়াডিজ নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে বেঁকে আসা আলো ধরা পড়ে অনুসন্ধানী দলের টেলিস্কোপের চোখে। মিলে যায় আইনস্টাইনের পূর্বানুমান৷
সূত্র: নাসা সোলার সিস্টেম