Advertisement

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬

মহাজাগতিক সভ্যতার প্রকারভেদ 

আমরাতো বর্তমানে যুগে নিজেদেরকে অনেক উন্নত মনে করি। কিন্তু মহাজাগতিক স্কেলে আসলে আমরা কতটুকু উন্নত? মহাজাগতিক স্কেলে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর সম্প্রদায়ের সভ্যতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এটা হল টাইপ ১, টাইপ ২ এবং টাইপ ৩ সভ্যতা।
টাইপ ১ সভ্যতাকে গ্রহ সভ্যতাও (Planetary civilization) বলা হয়। এই সভ্যতায় প্রাণীরা তাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে গ্রহে আসা সম্পূর্ণ শক্তি ধরে রাখতে ও ব্যবহার করতে পারে।
টাইপ ২ সভ্যতার প্রাণী সম্পূর্ণ নক্ষত্রের শক্তি ব্যবহারে সক্ষম। কল্পনা করা হয় যে এরা নক্ষত্রের চারপাশে একটি ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করে। পুরো নক্ষত্রকে বেষ্টনকারী এই গোলক নক্ষত্রের সব শক্তি শোষণ করে, যা প্রাণীরা কাজে লাগায়।
অন্য দিকে টাইপ ৩ সভ্যতার প্রাণীরা পুরো গ্যালাক্সিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম।
এই তিনটিই হল মূল শ্রেণিবিভাগ। আরো কিছু বাড়তি প্রকারভেদও আছে। তবে সেটা 'আজকের ছবি' বিভাগে প্রকাশের যোগ্য নয়।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Kardashev_scale
Category: articles

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

আকাশের ১৫তম উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা। এর ইংরেজি নাম স্পাইকা (Spica)। চিত্রাকে দেখতে একটিই তারকা মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি অন্তত দুটি তারকার সমন্বিত চিত্র যার উভয়টি সূর্যের চেয়ে বড় এবং উষ্ণ। এরা এক লক্ষ আশি হাজার কিমি. দূরত্বে থেকে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করছে। এই দূরত্ব কিন্তু পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের চেয়ে ঢের ছোট। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি.।

কন্যামণ্ডলীতে চিত্রার অবস্থান 

চিত্রা নক্ষত্র খুঁজে পাবার উপায়
চিত্রা কন্যারাশির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অন্য অনেক নক্ষত্রের মতই চিত্রাকে খুঁজে পেতেও সহায়তা করবে সপ্তর্ষীমণ্ডলী। সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারাভুজ সপ্তর্ষীর চামচের হাতলের শেষ তিনটি নক্ষত্রকে একটি বৃত্তচাপের অংশ মনে করে সামনে বাড়িয়ে দিলে একটি উজ্জ্বল তারা পাওয়া যায়। এটি হচ্ছে রাতের আকাশের ৪র্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী (Arcturus)। এই বৃত্তচাপকে আরেকটু বাড়িয়ে দিলেই পাওয়া যাবে চিত্রা।

সপ্তর্ষী → স্বাতী → চিত্রা 

এপ্রিল মাসে একে সন্ধ্যার কিছু পরেই পূর্ব দিগন্তে উঁঁকি দিতে দেখা যায়। এ সময় একে রাতের অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়। দুই মাস পরে এটি সন্ধ্যার পরে আকাশের চূড়ায় পৌঁছে যায়। আগস্টের শেষের দিকে একে সন্ধ্যার পরে সামান্য সময়ের জন্যে পশ্চিমাকাশে দেখা যায়। এর পরেই এটি ডুবে যায় পশ্চিমে।

বৈশিষ্ট্য


স্পাইকা ২৬২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি ভার্গো মণ্ডলীর (কন্যারাশি) উজ্জ্বলতম তারকা হিসেবে নাম পেয়েছে আলফা ভার্জিনিস। স্পাইকার বাইনারি জগতের দুটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপেও আলাদা করে চেনা যায় না। একটির বদলে দুটি তারার উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল স্পেক্ট্রোস্কোপ বা বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে। বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র আলোর বিভিন্ন রঙকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। এই বাইনারি সিস্টেমের দুটি তারকাই সূর্যের চেয়ে বড় এবং উষ্ণ। এর মধ্যে বড়টি সম্ভবত নীল দানব বা উপদানব (সাব জায়ান্ট) জাতের নক্ষত্র।

এর মধ্যে বড়টির পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ২২, ৪০০ কেলভিন এবং ছোটটির ১৮, ৫০০ কেলভিন। অথচ সূর্যের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা মাত্র ৫৮০০ কেলভিন। এরা একে অপর থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার কিমি. দূরে অবস্থিত এবং যৌথ অভিকর্ষ কেন্দ্রকে মাত্র চার দিনে এক বার ঘুরে আসে।

এদের সমন্বিতভাবে নিঃসৃত আলো সূর্যের আলোর চেয়ে ২২০০ গুণ উজ্জ্বল। অন্য দিকে ব্যাস যথাক্রমে সূর্যের ৭.৮ ও ৪ গুণ। অন্যতম উজ্জ্বল এই নক্ষত্রটি সময় সময় চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়ে। জ্যোতির্বিদরা সন্দেহ করছেন, এটি শুধুই বাইনারি স্টার নয়, সম্ভবত আরো তিনটি তারা নিয়ে আসলে এখানে একটি কুইন্টিপল জগত (পাঁচ তারার সমন্বয়) গড়ে উঠেছে।
দেখা যাক, এই অনুমান সত্য হয় কিনা! 
Category: articles

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আমরা জানি, বাসযোগ্য (Habitable) হতে হলে একটি গ্রহকে সংশ্লিষ্ট নক্ষত্র (যেমন আমাদের ক্ষেত্রে সূর্য) থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত হতে হয়। নক্ষত্র থেকে দূরের এই অঞ্চলটিকে হতে হয় একদম পারফেক্ট- খুব উষ্ণও নয় আবার খুব শীতলও নয়।  প্রশ্ন হতে পারে খোদ গ্যালাক্সির ক্ষেত্রেও কি এমন কোন শর্ত আছে?

গ্রহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাসযোগ্যতার যে শর্ত তা প্রযোজ্য হতে পারে গ্যালাক্সির ক্ষেত্রেও। অর্থ্যাৎ, গ্যালক্সিদের ক্ষেত্রেও এমন একটি অঞ্চল থাকবে যেখান গ্রহরা বেড়ে উঠতে পারবে। কেপলার স্পেইস টেলিস্কোপসহ কিছু মিশন সৌরজগতের বাইরে হাজার হাজার গ্রহের সন্ধান পাচ্ছে। এই বহির্গ্রহদের সংখ্যা এবং অবস্থান চোখে পড়ার মত।
তবে গ্যালাক্সিদের ক্ষেত্রে বাসযোগ্য গ্রহের অঞ্চল থাকার বিষয়টি এখনো বিতর্কের উর্ধ্বে উঠতে পারেনি। জ্যোতির্পদার্থবিদ গুইলিয়েরমো গনজালেজ এর মতে, একটি গ্রহকে ছায়াপথ কেন্দ্র (Galactic center) থেকে এত দূরে থাকতে হবে যাতে এটি ক্ষতিকারক বিকিরণ এড়াতে পারে। আবার এর অবস্থান এত বেশি দূরেও হওয়া চলবে না যাতে এতে যথেষ্ট পরিমাণ ভারী মৌল তৈরি হতে সমস্যা হয়। ফলে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে ৬ হাজার আলোকবর্ষব্যাপী একটি অঞ্চল বাসযোগ্যতার আওতায় পড়ে। এর অবস্থান হয় কেন্দ্র ও প্রান্তের প্রায় মাঝামাঝিতে।
তবে, গ্যালাক্সিতে বাসযোগ্য গ্রহের অবস্থানের নিখুঁৎ সীমানা চিহ্নিত করার মত যথেষ্ট গ্রহ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। অবশ্য, দিন দিন এ সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও তথ্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে।

সূত্রঃ
[১] স্পেইস আনসার
[২] গুলিয়েরমো গনজালেজ
Category: articles
অধিকাংশ অন্যান্য গ্যালাক্সির মতই এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বাস করছে একটি বিশাল ভরযুক্ত ব্ল্যাক হোল। জ্যোতির্বিদদের ধারনা, এটি নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।
শত শত গ্যালাক্সির ভীড়ে এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির ছবি। এরই কেন্দ্রে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে আছে একটি ব্ল্যাক হোল। 
উপরের ছবির সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং বড় গ্যালাক্সিটিই এনজিসি ৪৮৮৯। ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে কোমা গ্যলাক্সি ক্লাস্টারে এর অবস্থান। এর কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটি আগের অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এর ভর সূর্যের ২১ বিলিয়ন (বা ২ হাজার ১০০ কোটি) গুণ।
অন্য দিকে এর ঘটনা দিগন্তের ব্যাস ১৩ হাজার কোটি কিলোমিটার। এই পাল্লাটি সূর্য থেকে নেপচুনের কক্ষপথের দূরত্বের ১৫ গুণ।  ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে একটি ব্ল্যাক হোলের বাইরে সেই অঞ্চল যেখান থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে এর ভেতরের কিছু দেখা সম্ভব হয় না। অন্য দিকে, আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে থাকা সম্ভাব্য ব্ল্যাক হোলখানির ভর সূর্যের ৪০ লাখ গুণ। এর ঘটনা দিগন্তের পাল্লা বুধের কক্ষপথের এক পঞ্চমাংশ মাত্র।
কিন্তু আলোচ্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের রাক্ষুসে আচরণের সমাপ্তি ঘটেছে। এনজিসি ৪৮৮৯ এর খাবার কক্ষে এটি এখন বিশ্রামরত। বর্তমানে এর আশেপাশে নতুন জন্মানো তারকারা শান্তিতে বেড়ে উঠছে এবং একে প্রদক্ষিণও করছে। 
অন্য ব্ল্যাক হোলের মতই এটি বিভিন্ন গ্যালাকটিক বস্তু যেমন গ্যাস, ধূলিকণা ও অন্যান্য ধ্বংশাবশেষ সাবাড় করে করে একটি আক্রেশন ডিস্ক (Accretion disk) গঠন করে। গ্যাস-ধূলিকণার ঘুর্ণায়মান এই চাকতিকে ব্ল্যাক হোলটি তীব্র অভিকর্ষীয় ত্বরণে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। পরিণামে চাকতির তাপমাত্রা উঠে যায় লক্ষ ডিগ্রি পর্যন্ত। এই উত্তপ্ত বস্তু কতৃক নির্গত হয় দানবীয় এবং শক্তিশালী জেট বা ফোয়ারা । 
সক্রিয় থাকায় সময় জ্যোতির্বিদরা ব্ল্যাক হোলটিকে কোয়াসার শ্রেণিতে নাম তালিকাবদ্ধ করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিস্ক মিল্কিওয়ের চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তি নির্গত করত। ডিস্কটি ব্ল্যাক হোলের খাবারের যোগান দিয়ে দিতে দিতে এক পর্যায়ে আশেপাশের সব গ্যালাকটিক বস্তু নিঃশেষ করে ফেলে। ফলে, এটি এখন সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তবু, রহস্যময় কোয়াসাররা মহাবিশ্বের শৈশবকালে কিভাবে গঠিত হয়েছিল তা জানতে ব্ল্যাক হোলটি জ্যোতির্বিদদের গবেষণার কাজে আসবে। 
আলো বেরিয়ে আসতে পারে না বলে ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা না গেলেও পরোক্ষ উপায়ে এর ভর বের করা যায়। এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির চারদিকে প্রদক্ষিণরত নক্ষত্রদের বেগ পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে। এই বেগ থেকেই জানা গেছে ব্ল্যাক হোলটির বিশাল ভরের তথ্য।  


Category: articles

শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

অবলোহিত হচ্ছে এক ধরনের অদৃশ্য তড়িচ্চৌম্বক বিকিরণ। আমরা জানি, দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর, লাল আলোই দৃশ্যমান আলোর সবচেয়ে উচ্চ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অধিকারী। লালের পর থেকেই শুরু হয় অবলোহিতের (Infrared) যাত্রা। ফলে এর পাল্লা শুরু ৭০০ ন্যানোমিটারে। বিস্তৃত ১ মিলিমিটার পর্যন্ত।
তারকার জন্ম 
তারকার মৃত্যু 
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি 

প্রতিক্রিয়ারত গ্যালাক্সি 

সর্পিল গ্যালাক্সি 
সূত্রঃ
১। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)
২। উইকিপিডিয়াঃ দৃশ্যমান বর্ণালী, অবলোহিত আলো  
Category: articles

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

প্রথমে দেখি সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারবে কিনা।
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, আলো তো কোন কণা নয়, তাহলে এটা অভিকর্ষের কাছে ধরা খায় কী করে? অভিকর্ষ তো শুধু ভরের সাথে জড়িত। আলোক কণিকা ফোটনের তো ভরই নেই? ক্যামনে কী?
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ! 
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা 
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি 
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

যাঁকে আধুনিক কসমোলজির জনক বলে প্রায়শই অভিহিত করা হয়, সেই বিজ্ঞানী এডুইন হাবল এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধ্যানধারণা আমূল পাল্টে দেয়।
বিজ্ঞানী এডুইন হাবল
জন্ম ১৮৮৯ সালে। পেশাগত জীবন শুরু আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু যার মন পড়ে রয়েছে মহাকাশের দূর সীমানায়, তার কি আর আইনের ধারায় মন বসে?  কয়েক বছর পরেই নিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় ডক্টরেট । গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে (Observatory) কাজ করার দাওয়াত পেলেন। কিন্তু তিনি আবার ১ম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকও যে! তাই কাজে যোগ দিতে কিছু দিন দেরি হয়ে গেল। তবে, ফিরে এসেই লেগে গেলেন। এখানেই তিনি বিশ্বের বৃহত্তম দুটি আকাশবীক্ষণ যন্ত্র (Telescope) নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলেন। এগুলো হল যথাক্রমে ৬০ ও ১০০ ইঞ্চির হুকার টেলিস্কোপ।

সৈনিক জীবন বুঝি বড্ড ভালো লেগেছিল!  ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা শুরু হয়ে গেলে ১৯৪২ সালে আবারো মানমন্দির ছেড়ে গেলেন।  পেলেন বীরত্বের প্রতিকও।

মিল্কিওয়ের বাইরে উঁকিঃ
১৯২০ এর দশকেও আকাশে ছড়ানো ছিটানো ছোপ ছোপ আলোকে মনে করা হত নীহারিকা (Nebula)। মনে করা হত এগুলোর অবস্থানও মিল্কিওয়েতেই। আলাদা আলাদা করে NGC 6822, M33 ও এনড্রোমিডা গ্যালাক্সির ছবি নিরীক্ষা করার সময় হাবল এগুলোর প্রতিটির ভেতরে একটি সেফেইড ভেরিয়েবল নামক স্পন্দনশীল (Pulsating) নক্ষত্র (Star) দেখতে পেলেন। হাবল সাহেব হিসেব কষে বের করলেন নক্ষত্রগুলো কত দূরত্বে আছে। এতে করে বের হল নীহারিকাদের  দূরত্বও। দেখা গেল, মিল্কিওয়ে থেকে তাদের দূরত্ব অনেক বেশি দূরে।

মহাকাশবিদরাও বুঝলেন, এই নীহারিকাগুলোও আসলে মিল্কিওয়ের মতই ছায়াপথ (Galaxy)। প্রতিটি ছায়াপথে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন তারকা। আগে যেখানে মিল্কিওয়েকেই 'মহাবিশ্বের সব' মনে করা হত, সেখানে এবার মহাকাশবিজ্ঞানীদের চোখ আরো অনেক দূর প্রসারিত হয়ে গেল। 
প্রায় একই সময়ে হাবল গ্যলাক্সিদের শ্রেণিবিভক্ত করার একটি স্টান্ডার্ড উপায়ও বার করলেন। তিনিই প্রথম পরিষ্কার করে গ্যালাক্সিগুলোকে ৪টি শ্রেণিতে ফেললেন। এগুলো হল, ডিম্বাকৃতির (Elliptical), প্যাঁচানো তথা সর্পিলাকার (Spiral) , Barred Spiral ও অনিয়াতাকার (Irregular) গ্যালাক্সি। হাবল শুরুতে ধারণা করেছিলেন সর্পিল গ্যালাক্সিরা  ডিম্বাকৃতিরগুলো থেকে বিকশিত হয়। এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা জানেন সব গ্যলাক্সিদের আকৃতিই এদের জীবনের শুরুতেই নির্ধারিত হয়।

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বঃ
গ্যালাক্সিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হাবল দেখলেন, ওগুলো স্থির হয়ে বসে নেই। উপরন্তু এরা প্রায় সবাই পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবশ্য এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের সাথে পারস্পরিক মহাকর্ষীয় টানে কাছে আসছে এবং আরো ৫০০ কোটি বছর পরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে।

ফলে জানা গেল, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার বের করা হয় তাকে বলে হাবলের নীতি (Huble's Law)। অবশ্য জর্জ লেমিটরও এর আগে ১৯২৭ সালে এই নীতি প্রস্তাব করেছিলেন। হিসেব করে পাওয়া গেল, মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট হারে প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীর সম্মানে এই হারটিকে বলা হয় হাবল ধ্রুবক (Huble Constant)।

হাবলের এক দশক আগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও সাধারণ আপেক্ষিকতার নীতির মাধ্যমে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ সময়ে তার কোন প্রমাণ না পাওয়া যাওয়াতে তিনি সেই প্রস্তাবের সমীকরণগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু হাবল সেই ধারণা প্রমাণিত করবার পরে আইনস্টাইন মাউন্ট উইলসনে গিয়ে বলেন, ঐ সমীকরণগুলো প্রত্যাহার ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল

অন্যান্য অবদানঃ
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যার জগতেই হাবলের রয়েছে আরো অবদান। পেয়েছেন অসংখ্যা পুরস্কার। কিন্তু মহাবিশ্বের পরিচয় উন্মোচিত করার পরেও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। তাঁর জীবদ্দশায় নোবেল প্রাইজের জন্য  মহাকাশবিদ্যাকে পদার্থবিদ্যার একটি ফিল্ড মনে করা হত। তিনি আজীবন চেষ্টা করে গেছেন যাতে এই ধারণা চেঞ্জ হয়ে জ্যোতির্বিদরাও নোবেলের সুযোগ পান। সুযোগটি তৈরি হল ১৯৫৩ সালে। কিন্তু একই বছর মারা গেলেন তিনিও । যেহেতু নোবেলের ক্ষেত্রে মরণোত্তর (Posthumous) পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা নেই, তাই নোবেলের তালিকায় হাবল আর স্থান পেলেন না।

১৯৫৩ সালে, ৬৩ বছর  বয়সে মারা যান মহাবিশ্বের নব দিগন্ত উন্মোচনকারী এই জ্যোতির্বিদ। মৃত্যুর আগে তিনি পালোমার পর্বতে ২০০ ইঞ্চির হ্যালি টেলিস্কোপের নির্মাণ দেখে গিয়েছিলেনীর১৯৭৬ সালে রুশ BTA-6 টেলিস্কোপ তৈরি আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বৃহত্তম টেলিস্কোপ।

হাবলের জন্মের ১০১ বছর পর ১৯০০ সালে নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে হাবল স্পেইস টেলিস্কোপ বসাল। এই আকাশবীক্ষণ যন্ত্র মহাবিশ্বের হাজার হাজার ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। পৃথিবীর নিখুঁত বয়স নির্ণয়, গ্যালাক্সিদের ক্রমবিকাশ ও মহাবিশ্বকে প্রসারণের জন্য দায়ী ডার্ক এনার্জির আবিষ্কারের ক্ষেত্র প্রভূত  অবদান রয়েছে এই টেলিস্কোপ্টির।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Edwin Hubble

Category: articles

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪

মহাবিশ্বের বয়স কত- এই প্রশ্নটি অবশ্যই কৌতূহলোদ্দীপক। আসলে মহাবিশ্বের বয়স গণনা শুরু হয়েছে বিগ ব্যাঙের পর থেকে- যখন সময় গণনা শুরু। তার আগে সময়েরই অস্তিত্ব ছিল না, অন্তত আমাদের কাছে পরিমাপ করার কোন হাতিয়ার নেই।
মহাবিশ্বের বয়সের নকশা
মহাবিশ্বের বয়সের ব্যাপারে সবচেয়ে সুসঙ্গত তথ্য হচ্ছে ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর বা প্রায় ১৪ বিলিয়ন তথা ১৪০০ কোটি বছর। তো কিভাবে মাপা হল মহাবিশ্বের বয়স? এর উপায় আছে দুটি। দুটোরই কৃতিত্ব হাবলের।
প্রথম উপায় হচ্ছে ছায়াপথসমূহের (Galaxy) বেগ ও দূরত্ব পরিমাপের মাধ্যমে। যেহেতু ছায়াপাথসমূহ একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে (কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম ছাড়া), তাহলে আমরা বলতেই পারি, অতীতের কোন এক সময় এরা সবাই যুক্ত ছিল।
বর্তমানে গ্যালাক্সিদের বেগ, পারস্পরিক দূরত্ব ও এর সাথে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার কাজে লাগিয়ে আমরা বের করতে পারি, এই অবস্থানে আসতে তাদের কত সময় লেগেছে। আর এই সময়টাই তো মহাবিশ্বের বয়স! আর এভাবে উত্তরটা পাওয়া গেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর।
মহাবিশ্বের বয়স বের করার আরেকটি উপায় হল, সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর (star clusters) বয়স বের করা। কারণ, মহাবিশ্ব এতে অবস্থিত কোন জ্যোতিষ্কের চেয়ে কম বয়সী হতে পারে না। পারে কি?
আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়েকে প্রদক্ষিণরত বটিকাকার (Globular) নক্ষত্রপুঞ্জগুলো এখন পর্যন্ত আমাদের খুঁজে পাওয়া প্রাচীনতম বস্তু। এসব নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত তারকাগুলোর (Star) ব্যাপক বিশ্লেষণে তাদের বয়স পাওয়া গেছে প্রায়  ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর।
এই দুই মেথডের মিল আমাদেরকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী  করেছে যে আমরা তাহলে মনে হয় মহাবিশ্বের সঠিক বয়স জেনে ফেলেছি!

সূত্রঃ
১. হাবল সাইট
২. স্পেইস ডট কম
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...