Advertisement

বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬

দুইটি গ্রহের উজ্জ্বলতা এ মাসে চোখে পড়ার মতো। শুক্র বৃহস্পতি। দুই জন আকাশের দুই প্রান্তে আলো ছড়াচ্ছে। শুক্র পশ্চিম আকাশে, আর বৃহস্পতি পুবাকাশে। শুক্র আছে সন্ধ্যার আকাশে, আর বৃহস্পতি ভোরে। নভেম্বরের শুরুতে আরও দুই গ্রহ- মঙ্গল ও শনি ক্রমেই চলে আসছে শুক্রের দিকে। বিস্তারিত জেনে নিই।

ফটোঃ Predrag Agatonovic

শুক্রঃ 
শুক্রকেই আমরা সন্ধ্যাতার বলি। ভোরের আকাশে থাকার সময় একেই আমরা বলি শুকতারা। তবে আপাতত এটি আছে শুধু সন্ধ্যার আকাশেই। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তু এটি। উজ্জ্বল যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও।

আরও পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প

এ মাসে শুক্র ক্রমেই দিগন্তের উপরে উঠতে থাকবে। অর্থ্যাৎ, সন্ধ্যার একই সময়ে তাকালে একে তুলনামূলকভাবে দিগন্তের উপরে দেখা যাবে। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় দুই ঘণ্টা পরেই অস্ত গেলেও মাসের শেষে অস্ত যাবে প্রায় তিন ঘণ্টা পর।

সন্ধ্যার আকাশে শুক্র ও অন্যান্য গ্রহ 
মঙ্গলঃ
মে, জুন মাসে মঙ্গল ছিল গ্রহদের মধ্যে সেরা। কিন্তু এখন এক দিকে নিজেই তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে। আবার শুক্রও ফিরে এসেছে সদর্পে। দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে তাকালে শুক্র থেকে কিছুটা ওপরে চোখে পড়বে লাল এই গ্রহটিকে। পুরো মাসই রাতের প্রায় ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এটি থাকবে পশ্চিমের আকাশে। আগামী বছর জুলাই মাসে মঙ্গল সন্ধ্যার আকাশ থেকে চলে আসবে ভোরের পুবাকাশে।

শনিঃ
আমরা খালি চোখে দেখতে পারি এমন বস্তুদের মধ্যে শনি সবচেয়ে দূরের জিনিস। গ্রহটি এ মাসে ক্রমেই দিগন্তের দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। মাসের শেষ দিকে এটি সূর্যাস্তের প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই ডুবে যাবে।

বৃহস্পতিঃ
কিছু দিন সূর্যের আভায় চাপা পড়ে গত মাসে বৃহস্পতি ভোরের আকাশে হাজির হয়েছিল। ভোরের দিকে পুবাকাশে তাকালেই দেখা যাবে। ঐ দিকের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তুটিই এটি। ভুল হওয়া তাই এক প্রকার অসম্ভব। মাসের শুরুতে সূর্যোদয়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে উদিত হলেও মাসের শেষ দিকে উদিত হবে চার ঘণ্টা আগে।

বুধকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। এটি আমাদের সাথে সব সময় লুকোচরি খেলতে থাকে। অক্টোবরের ২৭ তারিখে এটি সন্ধ্যার আকাশে ফিরে এসেছিল। কিন্তু এ মাসের পুরোটাই সূর্যের আলো একে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এটি সব সময় সূর্যের কাছাকাছি সময়ে উদয় অস্ত ঘটায় বলেই এ অবস্থা।


সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/astronomy-essentials/visible-planets-tonight-mars-jupiter-venus-saturn-mercury
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনের অক্টোবর সংখ্যায় প্রচ্ছদ হয়েছিল।] 


নাম ট্যাবির নক্ষত্র। এ রকম রহস্যময় কোনো নক্ষত্রের সাথে জ্যোতির্বিদদের আগে কোনো রকম পরিচয় ছিল না। নক্ষত্রটি সময় সময় অস্বাভাবিক হারে উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে। এর পেছনে কেউ দায়ী করছেন বড়ো কোন গ্রহকে, কেউ বলছেন এক ঝাঁক ধূমকেতুর কথা। কেউ আবার এক ধাপ সামনে গিয়ে দোষ চাপাচ্ছেন এলিয়েনদের হাতে। সত্যিকারের ঘটনা এখনো এক রহস্য। ইদানিং নিয়মিত খবর হচ্ছে নক্ষত্রটি। 

এর পেছনে আঠার মতো লেগে থাকা এবং বহুলভাবে প্রচার ও পর্যবেক্ষণ শুরু করতে ভূমিকায় রাখায় জ্যোতির্বিদি তাবেথা বয়াজিয়ানের নাম অনুসারে একে ট্যাবির নক্ষত্র (Tabby’s Star) বলে ডাকা হচ্ছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নক্ষত্রটির অদ্ভুত আচরণ নিয়ে কথা বলেন টেড টক- এ। অপূর্ব সেই লেকচারে তিনি কী বলেছিলেন তার সারসংক্ষেপ জেনে নিলেই অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে। চলুন, শুনে আসি। 

“অসাধারণ দাবীর পক্ষে অসাধারণ প্রমাণ থাকতে হয়। একজন জ্যোতির্বিদ হিসেবে সর্বশেষ উপায় হিসেবে এলিয়েন তত্ত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া আমার কাজ ও দায়িত্ব। এখন আমি এ সম্পর্কে একটি ঘটনা বলতে চাই। গল্পটির বিষবস্তুর হল নাসার অভিযান, কিছু সাধারণ মানুষ এবং আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে রহস্যময় নক্ষত্র। 

আরো দেখুনঃ
নক্ষত্রের পরিচয়

২০০৯ সালে নাসার কেপলার মিশনের মাধ্যমে ঘটনার শুরু। কেপলারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমাদের সৌরজগতের বাইরে গ্রহের খোঁজ করা। মহাকাশের একটি বিশেষ দিকে১ নজর রেখে এটি তা করতে থাকে। এবং এই বিশেষ দিকটিতে এটি এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার নক্ষত্রের উপর অবিরত নজর রাখে। প্রতি ৩০ মিনিটে সংগ্রহ করতে থাকে তথ্য। এটি খোঁজ করছিল অতিক্রমণ (transit)নামক ঘটনাটির। আমাদের চোখের সামনে একটি গ্রহ যখন একটি নক্ষত্রের উপর দিয়ে অতিক্রম করে চলে যায়, তখন তাকে আমরা বলি গ্রহটির অতিক্রমণ। এটি ঘটার সময় নক্ষত্রের সামান্য পরিমাণ আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। 
চিত্রঃ গ্রহদের অতিক্রমণের সময়ের প্রতিক্রিয়া

অতএব, নাসা কেপলারের সবগুলো উপাত্ত থেকে অতিক্রমণ খুঁজে বের করার জন্যে আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করে। প্রথমবার উপাত্ত প্রকাশ করা হলে ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদদের মাথায় একটি মজার চিন্তা ঘুরপাক খায়। কেমন হবে যদি কম্পিউটার কিছু জিনিস মিস করে ফেলে?   
ফলে আমরা একটি দলগত প্রকল্প হাতে নিলাম। ‘প্ল্যানেট হান্টারস’ বা ‘গ্রহ শিকারি’ নামের এই প্রোজেক্টের সবাই মেতে উঠলেন উপাত্ত নিয়ে। নকশা খুঁজে বের করার ব্যাপারে মানব মস্তিষ্কের ক্ষমতা অসাধারণ। অনেক সময় এই ক্ষমতার কাছে হার মানে কম্পিউটারও । কিন্তু এই প্রকল্পটি চারদিক থেকে সন্দেহের শিকার হয়। আমার সহকর্মী ও প্ল্যানেট হান্টারস প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা ডেবরা ফিশার বলেন, ঐ সময় লোকেরা বলছিল, ‘আপনারা উন্মাদ। কম্পিউটার কোনো সঙ্কেত মিস করবে- এটা একেবারে অসম্ভব।‘ ফলে মানুষের সাথে যন্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। একটি গ্রহ পেয়ে গেলেও তা হবে দারুণ ব্যাপার। চার বছর আগে আমি যখন এই দলে যোগ দেই, তত দিনে একের বেশি পাওয়া হয়ে গেছে। আর আজকে তিন লাখ বিজ্ঞানপ্রেমীর সহায়তায় আমরা ডজন ডজন গ্রহ খুঁজে পেয়েছি। এরই একটি হল আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে রহস্যময় নক্ষত্র।

একটি গ্রহ যখন কোনো নক্ষত্রকে অতিক্রমণ করে, তখন নক্ষত্রের কিছু আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই অতিক্রমণের দৈর্ঘ্য থেকে বস্তুটির সাইজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বৃহস্পতির কথাই ধরুন। গ্রহরা বৃহস্পতির চেয়ে খুব একটা বড়ো হয় না। বৃহস্পতি কোনো নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা এক শতাংশ কমাতে পারবে। অন্য দিকে, পৃথিবী বৃহস্পতির চেয়ে এগারো গুণ ছোট। এত ছোট সঙ্কেত উপাত্তের মধ্যে চোখে পড়ে না বললেই চলে।

আমাদের রহস্যের কাছে ফিরে আসি। কয়েক বছর ধরে উপাত্তের ভেতর গ্রহ শিকারীরা অতিক্রমণের খোঁজ করছিলেন। তারা একটি নক্ষত্র থেকে রহস্যময় সঙ্কেত দেখতে পেলেন। নক্ষত্রটির নাম কেআইসি ৮৪৬২৮৫২। ২০০৯ সালের মে মাসে তারা একে প্রথম দেখেন। বিভিন্ন ফোরামে শুরু হয় আলাপ- আলোচনা।

তারা বললেন, বৃহস্পতির মতো কোনো বস্তু নক্ষত্রের আলোতে এমন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তারা আরো বললেন, বস্তুটি অবশ্যই বিশাল হবে। সাধারণত একটি অতিক্রমণ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়, কিন্তু এটি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকল।

তারা আরো বললেন, গ্রহদের অতিক্রমণের সময় যেমন দেখা যায় তার সাথে এর মিল নেই। এটা দেখে মনে হল যে নক্ষত্রের আলো যে জিনিসে বাধা পাচ্ছে সেটা গ্রহদের মতো গোল নয়। এরপর আরো ক’বার এটা ঘটল। এরপর চুপচাপ থাকল কয়েক বছর।

এরপর ২০১১ সালের মার্চে আবার আমরা এটা দেখলাম। এবার নক্ষত্রের আলো একেবারে ১৫ শতাংশ ঢাকা পড়ে গেল। গ্রহদের তুলনায় এই পরিমাণ কিন্তু অনেক বেশি, গ্রহরাতো মাত্র এক শতাংশ ঢেকে রাখতে পারে। এছাড়াও ঘটানাটি অপ্রতিসম। এক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত আলো- আঁধারির খেলা দেখিয়ে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এরপর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটল না। এরপর আবার ঘটতে থাকলে অদ্ভুত সব কাণ্ড। নক্ষত্রের আলো বাধা পড়তে লাগল। এটা এবার স্থায়ী হল প্রায় একশো দিন। তত দিনে কেপলার মিশনের সমাপ্তির দিন এসে গেছে। এবারের আলোর বাধাগুলো বিভিন্ন রূপ নিল। কোনোটা খুব তীক্ষ্ণ, কোনোটা আবার বেশ চওড়া। এদের স্থায়িত্বও আলাদা আলাদা। কোনোটি এক বা দুই দিন টিকে থাকল, কোনোটা টিকে থাকল এক সপ্তাহেরও বেশি। সব মিলিয়ে এবারে নক্ষত্রের আলোর বাধার পরিমাণ দাঁড়াল ২০ শতাংশের বেশি। এর অর্থ হল, নক্ষত্রটির আলোকে যেই ঢেকে রাখছে তার ক্ষেত্রফল আমাদের পৃথিবীর চেয়ে ১০০০ গুণ বড়ো হবে।

এটা বড়ো একটি ঘটনা। অনুসন্ধানী দল এটা দেখার পর বিজ্ঞানীদের দেখালে তারা এতে উৎসাহী না হয়ে পারলেন না। বিজ্ঞানীরা প্রথমে এটা দেখে ভাবলেন, ‘এ আর এমন কী, নিশ্চয় উপাত্তে কোনো গণ্ডগোল আছে’। কিন্তু তীক্ষ্ণ চোখে দেখার পরেও উপাত্তে ভুল পাওয়া গেল না। ফলে মেনে নিতে হল, সত্যিই মহাকাশের কোনো কিছু নক্ষত্রের আলোকে ছড়াতে দিচ্ছে না। ফলে এ অবস্থায় নক্ষত্রটি সম্পর্কে আমরা সাধ্যমতো জানার চেষ্টা করলাম, যাতে কোনো সমাধান পাওয়া যায় কি না তা দেখা যায়। অনুসন্ধানী দলও লেগে রইল একই কাজে।

কেউ বললেন, এমনতো হতে পারে যে নক্ষত্রটি খুব নতুন এবং এটি যে ঘূর্ণায়মান মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো এর চারপাশে বিদ্যমান আছে। অন্য কেউ বলল, নক্ষত্রটি থেকে ইতোমধ্যেই গ্রহের জন্ম হয়েছে এবং এরকম দুটি গ্রহের সংঘর্ষ হয়েছে, যেমনিভাবে পৃথিবী ও চাঁদ সৃষ্টির সময় সংঘর্ষ হয়েছিল। এই দুটি তত্ত্বই উপাত্তের কিছু অংশের ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু সমস্যা হল, নক্ষত্রটি যে নতুন- এমন কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না। নক্ষত্রটি নতুন হলে এর আলোর উত্তাপ পাওয়া যেকোনো বস্তু জ্বলে উঠত, আর যদি গ্রহদের সংঘর্ষ হত, তবে অনেক ধূলিকণা দেখা যেত।

এর ফলে আরেকজন বললেন, হতে পারে যে অনেকগুলো ধূমকেতুর সমাবেশ খুব বেশি বাঁকা কক্ষপথে নক্ষত্রটির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, এটা আমাদের পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যায়। এই তত্ত্বটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। এক্ষেত্রে আমাদের চোখের সামনে শত শত ধূমকেতু থাকতে হবে। এবং এরা হল শুধু তারাই যারা আমাদের ও নক্ষত্রটির মাঝে এসে পড়বে। ফলে প্রকৃত সংখ্যা হবে অযুত অযুত ধূমকেতু। তবে সবগুলো ধারণার মধ্যেই এটিই সেরা। ফলে আমরা এটা মেনে নিয়ে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করলাম।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আমি যখন গবেষণাপত্রটি লিখছিলাম সেই সময়েই আমার দেখা হল সহকর্মী জেসন রাইটের সাথে। সেও কেপলারের উপাত্ত নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখছিল। ওর বক্তব্য হল, কেপলারের সূক্ষ্ম নজরের মাধ্যমে নক্ষত্রটির চারপাশে এলিয়েনদের স্থাপনা পাওয়া যাবে। কিন্তু পাওয়া গেল না। আমি তাকে আমাদের অনুসন্ধানী দলের পাওয়া অদ্ভুত তথ্যগুলো দেখালে ও বলল, ‘উফ, ট্যাবি। আমাকে আবার নতুন করে লিখতে হবে’।

তবে প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দুর্বল হয়ে পড়লে আমরা উৎসাহী হয়ে পড়লাম। আমরা পথ খুঁজতে লাগলাম কীভাবে এলিয়েন ব্যাখ্যা বাদ দেওয়া যায়। ফলে আমরা এসইটিআই( Search for Extraterrestrial Intelligence) এর আমাদের একজন সহকর্মীকে এর দিকে মনোযোগ দিতে রাজি করালাম। গ্রিন ব্যাংক পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নক্ষত্রটিকে দেখার প্রস্তাব পেশ করলাম আমরা।

কয়েক মাস পর এই কথা চলে গেল প্রেসের কানে। শুধু এই একটি নক্ষত্র নিয়ে দশ হাজার নিবন্ধ লেখা হয়ে গেল।

এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন, ট্যাবি, তাহলে কি এর পেছনে সত্যিই এলিয়েন দায়ী? আচ্ছা, এমন একটি সভ্যতার কথা কল্পনা করুন যারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। এই ক্ষেত্রে এরা নিজেদের গ্রহের সব শক্তি ব্যবহার করে শেষ করে ফেলবে। তাহলে এখন এরা শক্তি পাবে কোথায়? আমাদের সূর্যের মতো তাদের গ্রহও কিন্তু একটি নক্ষত্রকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এখন তারা যদি এই নক্ষত্র থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে তবে শক্তির চাহিদা মিটে যায়। অতএব তারা বিশাল স্থাপনা তৈরি করবে। দৈত্যাকার সোলার প্যানেলের সাইজের এই বিশাল কাঠামোগুলোকে বলা হয় ডাইসন বলয় (Dyson Sphere)।

চিত্রঃ  শিল্পীদের উর্বর কল্পনায় ডাইসন বলয়ের নানান রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে।


ব্যাপারটাকে এভাবে দেখা যায়। চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান হল ১ মিলিয়নের (১০ লাখ) চার ভাগের এক ভাগ। আর সবচেয়ে সহজ হিসাব অনুসারে এই ডাইসন বলয়দের সাইজ এর ১০০ গুণ। এটা বেশ বড়ো বটে। এখন মনে করুন এমন কিছু একটা একটি নক্ষত্রকে ঘিরে আছে। এমন জিনিসের পক্ষে উপাত্তের মধ্যে ব্যতিক্রম ও অস্বাভাবিক কিছু নিয়ে আসা খুবই সম্ভব।

কিন্তু আবার মাথায় রাখতে হবে যে এলিয়েনদের এই বিশাল স্থাপনাকেও কিন্তু পদার্থবিদ্যার সূত্র মানতে হবে। যে কোনো কিছুই অনেক বেশি শক্তি ব্যবহার করতে চাইবে তাকে ফলশ্রুতিতে অনেক বেশি তাপ সৃষ্টি মেনে নিতেই হবে। কিন্তু এমন কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তবে আবার হতেই পারে যে বিকিরণ পৃথিবীর দিকে ঘটছে না।

আরেকটি ধারণাও আছে, আর এটি খুব প্রিয়ও বটে! আমরা হয়ত মহাকাশের একটি মহাযুদ্ধের সাক্ষী হয়েছি, যেখানে একটি গ্রহকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও অনেক ধূলিকণার সৃষ্টি হবার কথা। তবে আমরা যদি এলিয়েনদের অস্তিত্ব স্বীকার করেই নেই, তাহলে এটাই বা মেনে নিতে বাধা কোথায় যে তারা সব ধূলিকণা সাফ করে ফেলেছে!

চিত্রঃ নক্ষত্রের এলাকায় কোন মহাযুদ্ধ চলছে নাতো!

হুম! কল্পনার ঘোড়া বেশ দ্রুতবেগেই চলছে!

আসলে আমরা এমন এক অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, যাতে আমাদের অজানা কোন প্রাকৃতিক ব্যাখ্যাও থাকতে পারে, আবার থাকতে পারে অজানা কোনো প্রক্রিয়ায় এলিয়েনের হাতও। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে অবশ্য আমি প্রাকৃতিকই ব্যাখ্যার পক্ষেই থাকব। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝবেন না। এলিয়েন পেলে আমিও কারো চেয়ে কোন অংশে কম খুশি হব না। বাস্তবতা এ দুটোর যেটাই হোক, তা যে মজার হবে তাতে একদম সন্দেহ নেই।

এখন সামনে কী হবে? আমাদেরকে এর প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। তবে আমাদের মতো পেশাদার জ্যোতির্বিদদের হাতে হাতিয়ার কমই আছে। অন্য দিকে, কেপলার আছে অন্য একটি মিশনে। 
তবে খুশির খবর হল, স্বেচ্ছাসেবীদের দলগত অনুসন্ধান থেমে নেই। নিজস্ব ব্যাকইয়ার্ড টেলিস্কোপ দিয়ে শখের জ্যোতির্বিদরা একে পর্যবেক্ষণ করছেন। কী ঘটবে তা চিন্তা করে আমি খুব পুলকিত বোধ করছি।

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল, কম্পিউটার কখনোই এই নক্ষত্রটিকে খুঁজে পেত না। এটিতো এমন কিছু খুঁজছিলই না। আমরা যদি এমন আরেকটি নক্ষত্র খুঁজে পাই তবে কেমন হবে? আর না পেলেই বা কেমন হবে?  
[দর্শকের হাত তালির মাধ্যমে শেষ হয় টেড টকের আলোচনা]

সামনে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে জ্যোতির্বিদ তাবেথা বয়াজিয়ান খুব উৎসুক ছিলেন। আলোচনাটি ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। এত দিনে সত্যিই দারুণ আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে।

আগস্টের ৩ তারিখে দুজন জ্যোতির্বিদ আরো কিছু প্রমাণ যোগ করে দেখিয়েছেন যে নক্ষত্রটি আসলেই বড়ো অদ্ভুত। নাসার কেপলার স্পেইস টেলিস্কোপ থেকে সংগৃহীত উপাত্ত নিয়ে বেনজামিন মনটেট ও জোশুয়া সাইমন তাদের গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা যাচ্ছে যে নক্ষত্রটি অস্বাভাবিক হারে উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে।

এ বছরের শুরুতে লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ব্রেডলি শেফারও একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। এখানে তিনি অতীতের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখান যে গত এক শতাব্দী ধরেই নক্ষত্রটিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদী অনুজ্জ্বলতা প্রদর্শন করেছে। তাঁর মতে এর অর্থ হল, এলিয়েনরা বিশাল কোনো স্থাপনা গড়ে তুলছে।

তখন তাঁর কথাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া হলেও এখন সেটার পক্ষেই প্রমাণ শক্ত হল। এখন দেখা যাচ্ছে যে ২০০৯ সালের পর থেকে নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা ১০০০ দিনের জন্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে গেছে। এই হার শেফারের সময়ের হারের প্রায় দ্বিগুণ।

ফলে রহস্য ঘনীভূতই হচ্ছে। দেখা যাক, সামনে কী ঘটে? 

নোট-১:
নক্ষত্রটি কোথায় আছে? 

রাতের আকাশের সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা বুঝতে পারবেন এটি আকাশের কোন দিকে আছে। এর অবস্থান হল আকাশের সিগনাস বা বকমণ্ডলীতে। পুরো আকাশের সার্বিক অঞ্চলকে যে ৮৮টি তারামণ্ডলীতে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হল সিগনাস। বর্তমান সময়ে এই মণ্ডলীটি খুব সহজেই দেখা যায়। সন্ধ্যা নামলেই চলে আসে প্রায় মাথার উপরে। সেপ্টেম্বর মাসে রাত নয়টার দিকে তারামণ্ডলী মাথার উপর থাকে। অক্টোবর, নভেম্বর মাসের দিকে থাকে পশ্চিম আকাশে।

আরো পড়ুনঃ
তারামণ্ডলী কাকে বলে?

এর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ডেনেব বা পুচ্ছ কাছাকাছি অবস্থিত অপর দুটি নক্ষত্র- শ্রবণা ও অভিজিতের সাথে মিলে একটি ত্রিভুজ গঠন করেছে, যার নাম সামার ট্রায়াঙ্গেল। মণ্ডলীর চারটি প্রধান উজ্জ্বল তারাকে নর্দার্ন ক্রস বলেও ডাকা হয়।

ট্যাবির নক্ষত্র 

মণ্ডলীর দুটো উজ্জ্বল তারা- ডেনেব ও ডেল্টা সিগনির প্রায় মাঝে আমাদের রহস্যময় তারাটি অবস্থিত। তবে একে খালি চোখে দেখা যাবে না। সর্বোচ্চ +৬ আপাত উজ্জ্বলতার নক্ষত্রকে খালি চোখে দেখা যায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হল +১১.৭। উল্লেখ্য, আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হলে বুঝতে হবে নক্ষত্রটি তত কম উজ্জ্বল। সূর্যের আপাত উজ্জ্বলতা হল নেগেটিভ ২৭, চাঁদের নেগেটিভ ১২, শুক্র গ্রহের নেগেটিভ ৪ ইত্যাদি। ফলে একখান ভালো মানের টেলিস্কোপ যোগাড় করতে পারলে নক্ষত্রটির পেছনে আপনিও নজরদারী চালাতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ 
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/?s=tabby
২। http://earthsky.org/space/tabbys-star-more-weirdness
৩। http://www.ted.com/talks/tabetha_boyajian_the_most_mysterious_star_in_the_universe/transcript?language=en#t-364057
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/KIC_8462852
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬

আমরা এতদিন জানতাম, মহাবিশ্বের নিপুণ কাঠামো টিকে আছে চারটি মৌলিক বলের কল্যাণে। এরা হল মহাকর্ষ, তড়িচ্চুম্বকীয় এবং সবল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল। 


কিন্তু গত এপ্রিলে হাঙ্গেরির এক দল পদার্থবিদ সর্বপ্রথম সম্ভাব্য নতুন আরেকটি (পঞ্চম) মৌলিক বলের প্রমাণ পান। এই বলটির মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা মহাবিশ্বের অনেকগুলো রহস্যের সমাধান হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার রহস্যের সমাধানেরও ইঙ্গিত। ব্যপারটি ইদানিং আবারও আলোচনায় এল।  

গত ১৪ আগস্ট ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইরভাইন) একটি দল একই মতের পক্ষ নিয়ে একটি গবেষণা- পত্র প্রকাশ করেন। তাঁরা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে সেই ফলাফলগুলো বিচার করে দেখলেন যে সত্যিই নতুন একটি বলের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে। প্রধান গবেষক জোনাথন ফেং বলেন,
সত্য হয়ে থাকলে এটা হবে একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার। আরো পরীক্ষার মাধ্যমে যদি এর সত্যতা পাওয়া যায় তবে পঞ্চম বলের এই আবিষ্কার মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা আমূল পাল্টে দেবে। মৌলিক বলদের একীভবন ও ডার্ক ম্যাটার গবেষণার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা থাকবে। 
বিষয়টি প্রথম হাঙ্গেরিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এর এক দল গবেষকের নজরে আসে। তাঁরা উচ্চ-শক্তির প্রোটন রশ্মিকে লিথিয়াম- ৭ এর দিকে নিক্ষেপ করে ধ্বংসাবশেষের সাথে খুবই হালকা একটি অতিপারমাণবিক কণিকার দেখতে পান।  তাঁরা এটাকে তখন একটি নতুন ধরনের বোসন কণিকা মনে করেছিলেন। এটা ছিল ইলেকট্রনের চেয়ে মাত্র ৩০ গুণ ভারী। কণাপদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেলে এর কোনো পূর্বাভাস ছিল না। মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে এখন পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড মডেলের এক গুচ্ছ সমীকরণই সবচেয়ে মোক্ষম ভূমিকা পালন করছে।

আরো পড়ুনঃ
স্ট্যান্ডার্ড মডেলের পরিচয়

স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে, প্রত্যেকটি মৌলিক বলেরই নিজ নিজ বোসন কণিকা রয়েছে। সবল বলের বাহক হচ্ছে গ্লুওন, তড়িচ্চুম্বকীয় বলকে বহন করে আলোক কণা বা ফোটন এবং W ও Z বোসন করে দুর্বল নিউক্লিয় বল বহনের কাজ। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড মডেলের দুর্বলতা হল, আমরা এখনো মহাকর্ষের জন্যে কোনো বোসন কণিকা খুঁজে পাইনি। তবে অনুমান করা হচ্ছে মহাকর্ষের ক্ষেত্রে বল বহনের কাজটি করবে গ্র্যাভিটন নামক কণাটি। একে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ডার্ক ম্যাটারের ব্যাখ্যা দিতেও ব্যর্থ স্ট্যান্ডার্ড মডেল।

হাঙ্গেরির দলটি প্রথমে মনে করেছিলেন, এই কণিকাটি হয়ত কোনো ধরনের ডার্ক ফোটন হবে। ডার্ক ম্যাটারের ক্রিয়া বহনকারী কল্পিত কণিকাকে বলা হয় ডার্ক ফোটন। তাঁদের গবেষণা প্রকাশের পর থেকেই বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ফেং বলেন,
উনারা দাবি করতে পারেননি যে এটা নতুন একটি মৌলিক বলের ফলে হয়েছে। তাঁদের মতে এই বাড়তি জিনিসটি ছিল একটি নতুন কণিকার প্রতিক্রিয়া, কিন্তু তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন না যে এটা কি বস্তুকণা (matter particle) ছিল নাকি বলবাহী (force-carrying) কণা ছিল।

বিষয়টি আরো বিস্তারিত জানতে ফেং তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে প্রাথমিক উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করেন। পরীক্ষা করে দেখেন এই সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরীক্ষাগুলোও। এরপরই শক্তিশালী তাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেল যে এই নতুন প্রতিক্রিয়ার পেছনে বস্তুকণা বা ডার্ক ফোটন- কারোরই হাত নেই। বরং তাঁদের হিসাব- নিকাশ থেকে দেখা গেল যে এটা প্রকৃতির পঞ্চম বলের নিজস্ব বোসন হতে পারে। ডার্ক ম্যাটারসহ মহাবিশ্বের রহস্যময় নানান কিছুর ব্যাখ্যা এর মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে।

কাল্পনিক নতুন এই বোসনকে আপাতত বলা হচ্ছে প্রোটোফোবিক এক্স। এর বিস্ময়কর দিক হল, এটি শুধু ইলেকট্রন এবং নিউট্রনের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, তাও খুবই স্বল্প পাল্লায়, যার ফলে একে শনাক্ত করা খুবই কঠিন ছিল।

আরেক গবেষক টিমোথি টেইট বলেন,
এর আগে এই একই বৈশিষ্ট্যধারী কোনো বোসন কণিকা পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েনি। একে আমরা কখনো কখনো এক্স বোসন বলে থাকি, যেখানে এক্স অর্থ হল ‘অজানা’।‘

এই গবেষণাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে মাসে। তখন এটি প্রকাশিত হয় প্রি-প্রিন্ট সাইট arXiv.org এ। কিন্তু এখন এর পিয়ার রিভিউ সম্পন্ন হবার পর এটি ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস এর মতো জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

তাহলে এখন পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত তা হল, আমরা একটি বিস্ময়কর কণা পেলাম, যাকে স্ট্যান্ডার্ড মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। তাত্ত্বিক হিসবা- নিকাশ বলছে এটি প্রকৃতির পঞ্চম মৌলিক বলের বাহক হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু এ বিষয়ে পরীক্ষামূলক প্রমাণ এখনো যথেষ্ট হয়নি। তবে সারা বিশ্বের গবেষকরা এর পেছনে লেগেছেন, যার ফলে আশা করা হচ্ছে এক বছরের মধ্যেই রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

ফেং বলেন,
কণিকাটি খুব হালকা হবার কারণে এর প্রতিক্রিয়াও খুব দুর্বল। তবে সারা বিশ্বে গবেষকদের অনেকগুলো দল ছোট ছোট পরীক্ষাগারে কাজ করছেন। প্রাথমিক সেই ইঙ্গিতের কারণে সবাই এখন অন্তত এটুকু জানেন যে কোথায় খুঁজতে হবে।

কণিকাটি ভারী না হলেও প্রায় অর্ধ শতাব্দী যাবত এমন হালকা কণিকা তৈরি করার মতো প্রযুক্তি বিজ্ঞানীদের হাতে আছে।

কী হবে যদি সত্যিই পাওয়া যায় এই পঞ্চম বল?  আমরা এখনো সেটা থেকে বেশ দূরে আছি। তবে ফেং বলছেন যে বলটি তড়িচ্চুম্বকীয় এবং দুর্বল ও সবল নিউক্লিয় বলের সাথে যুক্ত হয়ে একটি সুপার ফান্ডামেন্টাল বল গঠন করতে পারে- যে বলটি এর নিজস্ব কণা ও বলের মাধ্যমে ডার্ক সেক্টরে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।

তিনি আরো বলেন,
হতে পারে এই দুটি সেকটর অজানা কোনো উপায়ে একে অপরের সাথে সম্পর্ক রেখে চলছে।

হাঙ্গেরির এই পরীক্ষার ফলে হয়ত আমরা এই ডার্ক সেক্টরের বলকেই প্রোটোফোবিক বল হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। অন্য দিকে আবার ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি বোঝার জন্যে পরিচালিত গবেষণার সাথেও এই ফলাফলের মিল রয়েছে। স্টার ওয়ারস মুভি সিরিজের দি ফোর্স এর অন্ধকার (ডার্ক) ও আলোকীয় অংশের সাথেও মিল আছে এর।

পুনশ্চ-১: এখন পর্যন্ত জানা মৌলিক বলসমূহ

চারটি মৌলিক বল ও তাদের কাজের ক্ষেত্র

প্রথম হল মহাকর্ষ। নিউটনের পর আইনস্টাইন তাঁর সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যমে মহাকর্ষের উন্নত রুপ প্রদান করেন ১৯১৫ সালে। তত্ত্বটি প্রযোজ্য মহাবিশ্বের বড়ো স্কেলের কাঠামোর ক্ষেত্রে। এখানে মহাকর্ষকে তুলে ধরা হয়েছে স্থান- কালের বক্রতা হিসেবে।

দ্বিতীয় প্রকার মৌলিক বল হল তড়িচ্চুম্বকীয় বল। বৈদ্যুতিক চার্জধারী কণারা এই বলের মাধ্যমে কাজ করে। অণু ও পরমাণুর জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে এই বল।

তৃতীয় মৌলিক বল সবল নিউক্লিয় বলের (সংক্ষেপে শুধু সবল বল) কাজ হল পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠনকারী কণাগুলোকে একত্রে ধরে রাখা। আর তেজস্ক্রিয় বিকিরণের জন্যে দায়ী হল চতুর্থ মৌলিক বল দুর্বল নিউক্লিয় বল।

ম্যাক্সওয়েল, ফ্যারাডে ও ওয়েরেস্টেডদের হাত ধরে ১৮৩০ এর দশকে তড়িৎ ও চুম্বক বলকে একীভূত করা সম্ভব হয়। ১৮৬৪ সালে ম্যাক্সওয়েল বল দুটির সমন্বিত ক্ষেত্র তত্ত্ব (ফিল্ড থিওরি) প্রকাশ করেন। ম্যাক্সওয়েল দেখেছিলেন তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ সব সময় একটি নির্দিষ্ট বেগে চলে। সেই বেগটি হয়ে দাঁড়াল আলোর বেগে সমান। আলোর বেগ ধ্রুব কেন তা তখন মাথায় না ঢুকলেও সেই ধ্রুবতা কাজে লাগিয়েই ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন স্থান- কালকে একত্র করে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব তৈরি করেন। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব সন্ধি করলেও সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব এখনো অন্য বলদের সাথে একমত হয়নি। ভাইল, কালুজা এবং স্বয়ং আইনস্টাইন নিজেও এর পেছনে সময় দিয়ে গেছেন, কিন্তু সফলতার মুখ মেলেনি এখনো।

অন্য দিকে ১৯৬০ এর দশকে শেলডন গ্যাশো, আব্দুস সালাম ও স্টিভেন উইনবার্গের হাত ধরে তড়িচ্চুম্বকীয় এবং দুর্বল নিউক্লিয় বলকে একত্র করার থিওরি পাওয়া যায়। ১৯৭৩ সালে আসে তাঁদের মতের পক্ষে পরীক্ষামূলক প্রমাণ। সমন্বিত তত্ত্বটিকে এখন ইলেকট্রৈউইক থিওরি বলা হচ্ছে।  ১৯৭৯ সালে তাঁরা এ জন্যে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম সার্নের গবেষণাগারে ডাব্লিও এবং জেড বোসন তৈরি করা সম্ভব হয়।

ইলেকট্রোউইক থিওরিকে সবল বলের সাথে একই সাথে ব্যাখ্যা করার জন্যে গ্ল্যাশো ও জর্জি প্রথম একটি গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরি দেন। পরে সালাম ও জোগেশ পাটিও একই রকম মডেল দাঁড় করান। তৈরি হয় এরকম আরও নানান মডেল। তবে এসব মডেলের পরীক্ষামূলক প্রমাণ পেতে খুব উচ্চ শক্তির পরীক্ষার প্রয়োজন বলে তা এখনো সম্ভব হয়নি।

কিন্তু মহাকর্ষ এখনো অন্যদের সাথে সন্ধি করার কোনো রকম মানসিকতা দেখাচ্ছে না। এ অবস্থায় আরেকটি বল পাওয়া গেলে থিওরি অব এবরিথিং প্রস্তুত করতে খাটুনি একটু বাড়বে বৈকি। অবশ্য আগেই আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি যে একে অন্যদের সাথে মিলিয়ে নেওয়া মহাকর্ষের মতো কঠিন হবে না। 

পুনশ্চ-২: নতুন মৌলিক বলটি সম্পর্কে এখনই শতভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। অনেক সময়ই এমন হয় যে তথ্য-উপাত্তকে ঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে না পারার অভাবে ভুল জিনিসকে প্রমাণিত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। যেমন কিছু দিন আগেই গুঞ্জন উঠেছিল যে নতুন একটি মৌলিক কণিকা খুঁজে পাওয়া গেছে। আগস্টের শুরুতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সার্ন অফিসিয়ালি জানিয়ে দিয়েছে, তথ্যটা সঠিক নয়। আপাতত কোনো মৌলিক বল পাওয়া যায়নি।

২০১১ সালে সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে সার্নের গবেষণাগারে দুই দুইবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়, আলোর চেয়ে বেশি বেগ পাওয়া গেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের সন্দেহ যায়নি। পরে ২০১২ সালের মার্চে এসে দেখা যায়, পরীক্ষায় ভুল ছিল।

তবে মৌলিক বল খুঁজে পাবার এ ব্যাপারটি সেরকম নয় বলেই মনে হয়। অন্তত এর ভাবসাব দেখে তাই মনে হচ্ছে। কারণ এটি প্রতিষ্ঠিত কোনো কিছুর সরাসরি বিরুদ্ধে যাচ্ছে না। তাই আমরা চেয়ে থাকি নতুন কিছুর আশায়। 

লেখাটি ইতোপূর্বে জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সংখ্যায় প্রচ্ছদ নিবন্ধ হিসেবে ছাপা হয়েছিল। 

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/physicists-confirm-a-possible-5th-force
২। http://www.sciencealert.com/new-study-confirms-physicists-might-have-spotted-a-fifth-force-of-nature
৩। http://www.sciencealert.com/physicists-think-they-might-have-just-detected-a-fifth-force-of-nature
৪। http://arxiv.org/abs/1608.03591 
৫। https://en.wikipedia.org/wiki/Unified_field_theory#History

Category: articles

সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ২৪ অক্টোবর। 
 ১৯৪৬ সালের এই দিনে প্রথম বারের মতো মহাকাশ থেকে তোলা হয় পৃথিবীর ছবি। সেটি ৭০ বছর আগের কথা। ভি- ২ রকেটে চেপে একটি মুভি ক্যামেরা এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পাদন করে।


৭০ বছর আগের চিত্রটি এক বার কল্পনা করুনতো। কেউ জানে না, বহিস্থ মহাকাশ থেকে কেমন দেখায় পৃথিবীকে। এ অবস্থায় যদি চোখের সামনে এমন একটি ছবি ভেসে আসে, কেমন অনুভূতিটাই না হবে!

মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবি

এ অনুভূতি তৈরির কাজটিই করলেনযুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর এক দল সৈন্য ও বিজ্ঞানী। নিউ মেক্সিকোর মরুভূমি থেকে তাঁরা মহাকাশে নিক্ষেপ করলেন ভি- ২ রকেট। সাথে দিয়ে দিলেন একটি ৩৭ মিলিমিটারের মোশন পিকচার ক্যামেরা।

রকেটটি ৬৫ মাইল (১০৫ কিলোমিটার) উঁচুতে সাব অরবিটাল উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে।

ছবি তোলার পর পৃথিবীতে এসে ধাক্কা খেয়ে নষ্ট হয়ে যায় ক্যামেরাটি। কিন্তু বেঁচে যায় ফিল্ম, আর সেই সাথে বহু আরাধ্য ছবিটিও।

এয়ার আ্যন্ড স্পেস ম্যাগাজিনের মতে,



প্রতি দেড় সেকেন্ডে একটি করে ছবি তুলতে তুলতে ক্যামেরাটি রকেটের সাথে সাথে ওপরে উঠতে থাকে। কয়েক মিনিট পরেই এটি আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে। এ সময় এর বেগ ছিল সেকেন্ডে ৫০০ ফুট। ক্যামেরাটি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে স্টিল ক্যাসেটের মধ্যে রক্ষিত ফিল্মটি ঠিকই বেঁচে যায়।





ফ্রেড রালির বয়স তখন ঊনিশ। ফিল্ম উদ্ধারকারী দলের সদস্য ছিলেন তিনিও। ক্যাসেটটিকে অক্ষত অবস্থায় দেখে বিজ্ঞানীদের কী অনুভূতি হয়েছিল তার বর্ণ্না দেন তিনি এভাবে,
ওরা ছিলেন আনন্দে উচ্ছসিত। বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছিলেন তাঁরা। 

১৯৪৬ সালের আগে সর্বোচ্চ ১৩.৭ মাইল উপর ঠেকে পৃথিবীর ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। সেটি ১৯৩৫ সালের ঘটনা। কাজটি করা হয়েছিল এক্স্প্লোরার ২ বেলুনের মাধ্যমে। পৃথিবীর পৃষ্ঠের বক্রতা বুঝতে পারার জন্যে এই উচ্চতা থেকে তোলাই ছবিই ছিল যথেষ্ট। ভি- ২ ক্যামেরা পৌঁছে এর পাঁচ গুণেরও বেশি উচ্চতায়।


ক্যামেরাটির নির্মাতা ক্লাইড হলিডে বলেন,
ভি- ২ এর ছবিগুলো থেকে আম্রা প্রথম বারের জানতে পারলাম, অন্য গ্রহ থেকে আসা দর্শকরা পৃথিবীকে কেমন দেখবে। 
একটি বিষয় কিন্তু গুলিয়ে ফেলবেন না। এই রকেট কিন্তু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরেনি। এটি সোজা ওপরের ওঠে আবার নিচে নেমে এসেছে। প্রথম বারের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারার কৃতিত্ব হল স্পুটনিক ১ এর।

আরও পড়ুনঃ

ইতিহাসে এই দিনঃ মহাশূন্যে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ

১৯৪৬ সালের পরে আরও বশি উচ্চতা থেকে ছবী তোলাটা একটা ট্রেন্ড হয়ে যায়। ছয় মাস পরেই তোলা হয় আরেকটি ছবি। ১৯৪৭ সালের মার্চে তোলা ছবিটি নেওয়া হয়েছিল ১০১ মাইল উপর থেকে।


১৯৪৭ সালে মার্চে তোলা ছবি, ১০১ মাইল উপর থেকে। 

সূত্রঃ 
১। আর্থ স্কাই ডট অর্গ
Category: articles

বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ১৯ অক্টোবর।
১৯১০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন উপমহাদেশীয়- মার্কিন জ্যোতির্পদার্থবিদ সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর।

তিনি নক্ষত্রের বিবর্তন ও তাত্ত্বিক কাঠামো নিয়ে গবেষণার জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। ভারী নক্ষত্রদের জীবনের শেষের দিকের অবস্থা নিয়ে তিনি বিশেষভাবে কাজ করেছেন. হিসাব করে বের করেছেন চন্দ্রশেখর সীমা (Chandrasekhar limit)। এই সীমা হচ্ছে শ্বেত বামন নক্ষত্রদের সর্বোচ্চ ভরের পরিমাপ। ১৯৮৩ সালে বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফাউলারের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বহু তাত্ত্বিক বিষয়ে অবদান রাখলেও তাঁর নোবেল পেতে ভূমিকা রেখেছে তাঁর প্রাথমিক জীবনের কাজগুলোই।
চন্দ্রশেখর 
পুরো নাম পদ্ম বিভূষণ সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর। ১৯১০ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে লাহোরের (বর্তমান পাকিস্তান) একটি তামিল হিন্দু পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন ইন্ডিয়ান রেলওয়ের হিসাবরক্ষক। পাশাপাশি ছিলেন ভায়োলিন ও মিউজিকোলজিস্ট। মাও ছিলেন শিক্ষিতা মহিলা। বলা হয় তাঁর মা-ই প্রথম জীবনে তাঁর মধ্যে জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করেন। অন্য দিকে তাঁর চাচা চন্দ্রশেখর ভেংকট রমনও ছিলেন বিখ্যাত পদার্থবিদ, যিনি আলোর বিক্ষেপণ ও রমন ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্যে ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

প্রাথমিক জীবনে চন্দ্রশেখর বাসায় বসেই পড়াশোনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে মাদ্রাজের কাছে হিন্দু হাই স্কুলে ভর্তি হন। এখানে ১৯২২ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত কাটিয়ে দেন। গুণধর চাচার পথ অনুসরন করে এরপরে চলে আসেন মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে। এখানে কাটান ১৯২৫ থেকে ১৯৩০ সালা নাগাদ। ১৯৩০ সালে অর্জন করেন বিএসসি ডিগ্রি। একাডেমিক সাফল্যের কল্যাণে ভারতীয় সরকারের বৃত্তি নিয়ে চলে যান ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হন ট্রিনিটি কলেজে। এখানে র‍্যালফ ফাউলারের রিসার্স সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আরেক ক্যামব্রিজ প্রফেসর পল ডিরাকের পরামর্শে এক বছর কাটিয়ে আসেন কোপেনহেগেনে। এখানে তিনি ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স প্রতিষ্ঠানে নিলস বোরের সাথে কাজ করার সুযোগ পান।

১৯৩৩ সালেই ক্যামব্রিজ থেকে পিএইচডি পেয়ে যান। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ট্রিনিটি কলেজে প্রাইজ ফেলোশিপ পদে নির্বাচিত থাকেন। এ সময়েই তাঁর সাথে পরিচয় হয় জ্যোতির্পদার্থবিদ স্যার আর্থার এডিংটন ও আর্থার মিলনের সাথে। ১৯৩৬ সালে বিয়ে করেন ললিতা দোরাইস্বামীকে। মৃত্যু পর্যন্ত তাঁরা এক সঙ্গেই কাটিয়ে দেন।

সবচেয়ে বড়ো সাফল্যটি সম্ভবত চন্দ্রশেখর তাঁর প্রথম জীবনেই পেয়ে যান। তখন তিনি ট্রিনিটি কলেজের তরুণ ফেলো। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি 'চন্দ্রশেখর লিমিট' সম্পর্কে অনেকগুলো পেপার প্রকাশ করেন। কাজ শুরু করেন তাঁর গুরু র‍্যালফ ফাউলারের করা কাজ থেকে। ইলেকট্রন ডিজেনারেসি প্রেসারের কারণে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ ভরের অঘূর্ণনশীল বস্তু মহাকর্ষের কারণে গুটিয়ে যাওয়া থেকে নিস্তার পেতে পারে তা তিনি হিসাব করেন। এই সীমাই হচ্ছে শ্বেত বামন নক্ষত্রের সর্বোচ্চ ভর। অন্য কথায়, এটিই হচ্ছে সর্বোচ্চ ভর, যা অতিক্রম করে গেলে একটি নক্ষত্র শ্বেত বামন না হয়ে সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে নিউট্রন স্টার বা ব্ল্যাক হোল হয়ে যাবে। তিনি হিসাব করে এই ভর পেলেন ১.৪৪ সৌর ভরের সমান (সূর্যের ভরের ১.৪৪ গুণ)।

তিনি প্রথম তাঁর চন্দ্রশেখর সীমা প্রকাশ করলে আর্থার এডিংটন এর তীব্র বিরোধীতা করেন। আইনস্টাইনও মানতে অস্বীকার করলেন যে চন্দ্রশেখরের প্রাপ্ত ফলাফলের কারণে কোনো নক্ষত্র গুটিয়ে একটি বিন্দুর সমান (ব্ল্যাক হোল) হয়ে যেতে পারে। ইউরোপের কোনো প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীই চন্দ্রশেখরের কথা আমলে নিলেন না। এর প্রধান কারণ, এডিংটনের মতো বিজ্ঞানী যে মতের বিরোধীতা করেছেন তা মেনে নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি কিঞ্চিত হতাশ হলেন। এও বুঝলেন, কোনো ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী পোস্ট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ।

তাই ১৯৩৭ সালে যখন আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহকারী অধ্যাপক পদের প্রস্তাব পেলেন, আর অপেক্ষা করলেন না। ক্যামব্রিজ ত্যাগ করে পাড়ি জমালেন আমেরিকায়। পুরো ক্যারিয়ার কাটিয়ে দেন এখানেই- পুরো ৫৮ বছর। ১৯৪২ সালে হন সহযোগী অধ্যাপক, ১৯৪৪ সালে পূর্ণ অধ্যাপক। ১৯৪৭ সালে তাঁকে থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস প্রফেসর বানানো হয়। ১৯৮৫ সালে হন এমেরিটাস প্রফেসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েরকিস পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে তিনি কিছু কাজ করেন। নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড স্পেইস ল্যাবেও করেন কিছু কাজ। এই ল্যাবটি ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মেরিল্যান্ডের ব্যালিস্টিক রিসার্চ ল্যাবে কাজ করেন। ১৯৫৩ সালে আমেরিকার নিয়মিত নাগরিক হন।

চন্দ্রশেখরের জীবনকে কিছু সুনির্দিষ্ট পর্বে ভাগ করা যায়। এর প্রতিটি পর্বে তিনি একটি বই বা মনোগ্রাফ লিখেছেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত গবেষণা করেন নক্ষত্রের গঠন নিয়ে। বিষেশভাবে কাজ করেন শ্বেত বামন (White dwarf) নক্ষত্রদের নিয়ে। এই গবেষণাকে কেন্দ্র করেই ১৯৩৯ সালে লিখেন অ্যান ইনট্রোডাকশন টু দি স্টাডি অব স্টেলার স্ট্রাকচার বইটি।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত মেতেছিলেন নক্ষত্রের ডাইন্যামিক্স বা গতিবিদ্যা (Stellar dynamics) নিয়ে। ১৯৪২ সালে প্রকাশিত হয় বই প্রিনসিপালস অব স্টেলার ডাইন্যামিক্স। এরপর নজর দেন বিকিরণগত স্থানান্তরের দিকে (Radiative transfer)। ১৯৪৩ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত কাজ করেন হাইড্রোজেনের ঋণাত্মক আয়নের কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে। ১৯৫০ সালে লিখেন আরেকটি বই, রেডিয়েটিভ ট্রান্সফার
১৯৫০ থেকে ১৯৬১ সাল নাগাদ কাজ করেন হাইড্রোডাইন্যামিক ও হাইড্রোম্যাগনেটিক স্টেবিলিটি নিয়ে। এ শিরোনামেই ১৯৬১ সালে বইও প্রকাশ করেন। ১৯৬০ এর দশকে কাজ করেন ইলিপসয়ডাল ফিগারের সাম্যবস্থা নিয়ে। উপবৃত্তের (Ellipse) ত্রিমাত্রিক অবস্থাকে ইলিপসয়েড বলে। এ নিয়ে প্রকাশিত তাঁর বইটি হল ইলিপসয়ডাল ফিগারস অব ইকুলিব্রিয়াম। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে।তিনি সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়েও কাজ করেছেন।
১৯৭১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন ব্ল্যাক হোলের গাণিতিক তত্ত্ব নিয়ে। ১৯৮৩ সালে এ নিয়েও বই লিখেন। আগের মতোই গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে বইয়ের নামের দারুণ মিল, দি ম্যাথমেটিক্যাল থিওরি অব ব্ল্যাক হোলস। আশির দশকের শেষের দিকে কাজ করেন মহাকর্ষ তরঙ্গের উপরিপাতন নিয়ে।
আরো পড়ুনঃ
☛ ব্ল্যাক হোলের গভীরে
☛ মহাকর্ষ তরঙ্গঃ কী, কীভাবে?

১৯৪৪ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এর সম্মানসূচক সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
সারা জীবনে অনেকগুলো প্রাইজ ও পদক পেয়েছেন তিনি। ১৯৫২ সালে পান ব্রুস মেডাল। ১৯৫৩ সালে পান রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোয়াসিটির গোল্ড মেডাল। ১৯৬৭ সালে তাঁকে সম্মানীত করা হয় ন্যাশনাল মেডাল অব সায়েন্স দিয়ে। ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭১ সালে হেনরি ড্রেপার এবং ১৯৮৪ সালে কোপলে মেডাল অব রয়েল সোসাইটি পদক লাভ করেন।
১৯৮৩ সালে পান ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ। তিনি নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করলেও একটু মন খারাপ করেন। এর কারণ হল, অবদান হিসেবে শুধু তাঁর প্রথম জীবনের কিছু কাজকেই বিবেচনা করা হয়েছে। নক্ষত্রের বিবর্তন ও গঠন প্রক্রিয়ার ভৌত প্রসেস নিয়ে তাত্ত্বিক গবেষণাকে তাঁর অবদান হিসেবে দেখানো হয়েছিল। তাঁর কাছে মনে হয়েছিল, এতে করে তাঁর বাকি সব গবেষণাকে খাটো করা হয়েছে। আসলেও তাই মনে হবার কথা।
১৯৯৫ সালের ২১ আগস্ট তারিখে তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যার কাছে হার মেনে পরলোকে পাড়ি জমান। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৪ বছর। তখনো তাঁর স্ত্রী বেঁচে ছিলেন, যিনি ১০২ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন।
-০-
পরিভাষাঃ
মনোগ্রাফঃ একটি বিশেষায়িত বিষয় বা তার একটি অংশ নিয়ে গবেষণার বিস্তারিত লিখিত রূপ।

সূত্রঃ
১। http://www.physicsoftheuniverse.com/scientists_chandrasekhar.html
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Subrahmanyan_Chandrasekhar
Category: articles

রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

একটি নক্ষত্র মৃত্যুমুখে পতিত হবার পরের একটি দশা হল রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব (Red giant) অবস্থা। আরও কয়েকশো কোটি বছর পর আমাদের সূর্যও এই দশায় পৌঁছবে। এ সময় এটি প্রসারিত হয়ে কয়েকটি গ্রহকে গিলে ফেলবে। পৃথিবী এর সেই থাবা থেকে বাঁচবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে না বাঁচলেও সেটা যেহেতু কয়েকশো কোটি বছর পরের ঘটনা, তাই আপাতত দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

প্রসারণশীল লোহিত দানব তারকারা নিকটে অবস্থিত বেশি কিছু গ্রহকে (যদি থাকে) গিলে খেতে পারে। সূর্যও গিলে ফেলবে বুধ ও শুক্র গ্রহকে। পৃথিবীর পরিণতি অনিশ্চিত। 
আরো পড়ুন
☛ নক্ষত্রের পরিচয়

লোহিত দানব তৈরিঃ

বর্তমানে মহাবিশ্বের অধিকাংশ নক্ষত্র প্রধান ধারা (main sequence stars) দশায় আছে। এরা নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি করছে। এদের ভর হতে পারে সূর্যের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে আট গুন পর্যন্ত। এই দশায় থাকা অবস্থায় এতে দুটো বিপরীতধর্মী চাপ কাজ করে। একটি হল মহাকর্ষের চাপ, যেটা কাজ করে ভেতরের দিকে ও নক্ষত্রকে গুটিয়ে ফেলতে চায়। আরেকটি হল ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে বাইরের দিকে ক্রিয়াশীল চাপ। প্রধান তারার নক্ষত্রে এই দুই চাপ একে অপরকে ঠেকিয়ে রাখে। কিন্তু হাইড্রোজেন ফুরিয়ে গেলে ফিউশন যায় শেষ হয়ে। এ সময় নক্ষত্রটি গুটিয়ে ঠিকই ছোট হয়ে যেতে থাকে।

গুটিয়ে সঙ্কুচিত হবার ফলে এর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এক সময় হিলিয়ামের ফিউশন ঘটে তৈরি হয় কার্বন। হিলিয়ামের ফিউশন ক্রমানুসারেও ঘটতে পারে, আবার সেটা ঘটতে পারে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমেও। এই ফিউশনের সময় প্রস্তুত শক্তির প্রভাবে নক্ষত্রটি এর প্রাথমিক আকার থেকে বহু গুন পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে যায়।

লোহিত দানব তারাদের ব্যাস (এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব) দশ থেকে একশো কোটি পর্যন্ত হতে পারে (মাইলের হিসাবে এই পরিমাণ হল ৬.২ কোটি থেকে প্রায় ৬২ কোটি)। এ সময় এরা সূর্যের বর্তমান আকারের একশো থেকে এক হাজার গুন পর্যন্ত বড় হতে পারে। এর শক্তি অনেক বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে থাকে বলে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে যায়। নেমে আসে ২, ২০০ থেকে ৩, ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বর্তমানে সূর্যের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা এর দ্বিগুণের চেয়ে খানিকটা বেশি। তাপমাত্রার এই পরিবর্তনের ফলে নক্ষত্রটির আলোর বিকিরণ বর্ণালীর লাল অংশে চলে আসে। এর ফলেই এদের নাম হয়েছে লোহিত দানব। আকার বড় হয়ে যায় বলেই দানব বিশেষণ পাওয়া। অবশ্য নামে লোহিত হলেও অনেক সময় এদের মধ্যে কিছুটা কমলা রঙের ছটা থাকে।

অপূর্ব সুন্দর এই নেবুলার অবস্থান বিটলজুস নক্ষত্রের  চারপাশে। 


আরো পড়ুন
☛ সূর্যের তাপমাত্রা কত? 

রেড জায়ান্ট অবস্থায় তারকারা টিকে থাকে কয়েক হাজার থেকে একশো কোটি বছর পর্যন্ত। এক সময় এর কেন্দ্রের হিলিয়াম যায় ফুরিয়ে। ফলে ফিউশনও যায় থেমে। এটি আবারও সঙ্কুচিত হতে থাকে। হিলিয়ামের নতুন খোলস কেন্দ্রে পৌঁছা পর্যন্ত এই সঙ্কোচন চলতে থাকে। হিলিয়াম জ্বলে উঠলে নক্ষত্রের বাইরের স্তর বিস্ফোরিত হয়ে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও ধূলির মেঘ তৈরি হয়।

কেন্দ্র আরও বেশি গুটিয়ে যেতে থাকে। সূর্যের মতো ছোট নক্ষত্রদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে শ্বেত বামন (white dwarf) হিসেবে। আরো বেশি ভরের নক্ষত্রদের সঙ্কোচন চলতেই থাকে। এক সময় এরা সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাইরের অংশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

সূত্র
১।http://www.space.com/22471-red-giant-stars.html
Category: articles

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

গ্রহদের সম্পর্কে মৌলিক কিছু কথা জেনে নিই এ মাসে।  আমাদের সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আট হলেও আমরা খালি চোখে দেখতে পাই পাঁচটিকে। এরা হল বুধ, শুক্র (একেই আমরা আদর করে শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা বলে ডাকি অনেক সময়), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সব সময় এদের পাঁচজনকে একত্রে দেখা যায় না। গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ এদের সবাইকে এক সাথে (একই রাতে) দেখা গিয়েছিল।

Photo Credit:  Predrag Agatonovic


শুক্র গ্রহঃ

এ মাসে গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে শুক্র (সন্ধ্যাতারা), মঙ্গল ও শনিকে। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই এটি হাজির হয়ে যাবে পশ্চিম আকাশে, সোজা পশ্চিম থেকে সামান্য দক্ষিণে। দৃষ্টিশক্তি খুব ভালো হলে একে সূর্য পুরোপুরি ডোবার আগেই দেখবে। মাসের শুরুতে এটি সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টা দিগন্তের উপরে থাকবে। সুখবর হল, দিন গড়াতে গড়াতে এ সময়ের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তার মানে তখন একে দেখতে পাবেন বেশি সময় ধরে।

আজকের আকাশঃ চাঁদ ও শুক্র গ্রহ
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোলা ছবি। ক্রেডিটঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ।
 
 
মঙ্গল ও শনি গ্রহঃ

শুক্র থেকে সামান্য বাঁয়ে ঘুরুন। দক্ষিণ- পশ্চিম আকাশে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে আরো দুটি উজ্জ্বল গ্রহ। এরা হল মঙ্গল ও শনি। মাসের ছয় তারিখে চাঁদ থাকবে শনির একটু উপরে। পরের দিন চাঁদ চলে আসবে শনি ও মঙ্গলের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে। মাসের শুরুতে শনি অস্ত যাবে সূর্যের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে। মাস পেরোতে পেরোতে এ সময় দ্রুত কমতে থাকবে। মাসের শেষে এটি সন্ধ্যার পরে দিগন্তের উপরে থাকবে এক ঘণ্টারও কম সময়।
তবে মঙ্গলকে দেখতে পাবেন আরো বেশি সময় ধরে। এটি প্রায় পুরো মাস জুড়েই সন্ধ্যার পরে চার ঘণ্টার মতো সময় পর্যন্ত আকাশে থাকবে। আগেই বলেছি, দূরবর্তী তারাদের সাপেক্ষে গ্রহরা কখনও পশ্চিমে আবার কখনোবা পূর্ব দিকে চলে। কয়েক রাত ধরে মঙ্গলের উপর চোখ রাখলেই বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবেন। এই মঙ্গলের ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি সবচেয়ে সহজে চোখে পড়ে। এমনকি মূলত মঙ্গলের চলাচল লক্ষ্য করেই জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহে যে উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন তার ভিত্তিতেই জোহানেস কেপলার গ্রহদের গতি সূত্র বানিয়েছিলেন।


D:\articles\biggan chinta\sky-this-month\Oct 16\planets-oct-16-2.PNG
অক্টোবর মাসের চার গ্রহ এক সাথে


বুধ ও বৃহস্পতিঃ
অপর দুই গ্রহ বুধ ও বৃহস্পতির জন্যে এ মাসে তেমন কোনো সুখবর নেই। বুধকে মাসের শুরুতে ভোরের পূর্ব আকাশে কিছুক্ষণের জন্যে দেখা গেলেও দ্রুত সেটি সূর্যের আভার কাছে হারিয়ে যাবে। শেষ দিকে আর দেখাই যাবে না। বৃহস্পতিকে মাসের শুরুতে দেখাই যাবে না। তবে মাসের শেষের দিকে এটি সূর্যের এক ঘণ্টারও বেশি আগেই পূর্ব দিগন্তে হাজির হবে। ক্রমশ এ সময় বাড়তেই থাকবে। শুক্রের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু হল বৃহস্পতি। উজ্জ্বল গ্রহদের মধ্যে একেই একটানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেখা যায়। আগামী মাসগুলোতে এটি ক্রমশ দ্রুত উদিত হতে থাকবে। নভেম্বরের শুরুতেই এটি সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা আগে উঠবে। ফলে আপাতত অনুজ্জ্বল হলেও বৃহস্পতির ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।

Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ৪ অক্টোবর
১৯৫৯ সালের এই দিনে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মহাশূন্যে পাঠায় স্পুটনিক ১ নামের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। অনেক মহাকাশ ইতিহাসবিদের মতে প্রকৃতপক্ষে এই দিনেই সূচনা ঘটে মহাশূন্য যুগের।

 
জাদুঘরে রক্ষিত স্পুটনিক ১ এর একটি নকল

এটি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার (১৮ হাজার মাইল) বেগে। অর্থ্যাৎ, পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগত প্রায় ৯৬ মিনিট। এটি ২১ দিন পর্যন্ত সঙ্কেত পাঠানো অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত ২৬ অক্টোবর তারিখে এর ব্যাটারির শক্তি ফুরিয়ে গেলে শেষ হয় সঙ্কেত পাঠানোর কাজ। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি কক্ষপথ থেকে ছিটকে গিয়ে প্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। কক্ষপথে তিন মাস থাকার সময় এটি ৭ কোটি কিলোমিটার পথ চলাচল করেছিল।

ধাতুর প্রলেপ দেওয়া গোলকীয় যানটির ব্যাস ছিল ২৩ ইঞ্চি বা ৫৮ সেন্টিমিটার। ভর ছিল ৮৩.৬ কেজি। বেতার সঙ্কেত পাঠানোর জন্যে এতে ছিল চারটি রেডিও অ্যান্টেনা। এই সঙ্কেত পৃথিবী থেকে ধরা যেত। খালি চোখে একে দেখা যেতে পুরো পৃথিবী থেকে। একে প্রেরণের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমেরিকার শুরু হয় স্পেস রেস বা মহাশূ্ন্য প্রতিযোগিতা। দুই দেশের ঠাণ্ডা যুদ্ধের অন্যতম অংশ জুড়ে ছিল এই রেসও।

তবে উপগ্রহটি যে শুধু ইতিহাসই সৃষ্টি করেছে তা কিন্তু নয়, এটি বিজ্ঞানীদেরকে অনেক গুরুত্বপুর্ণ তথ্যও সরবরাহ করে।  কক্ষপথে এর চলাচলের পথের প্রকৃতি থেকে উর্ধ্বস্থ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব জানা সম্ভব হয়। পাওয়া যায় আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কেও তথ্য।

স্পুটনিকের জবাবে মার্কিনিরা পৃথিবীকে কিছু করে দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সাফল্য পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। পরের বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিন তারাও এক্সপ্লোরার ১ নামক তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নিক্ষেপ করে মহাশূন্যে।

তবে রুশরা তার আগেই- স্পুটনিক ১ এর ৩২ দিন পরেই স্পুটনিক ২ কেও পাঠিয়ে দেয় মহাশূন্যে। এবং এতে একটি ছিল প্রাণীও! এটিই ছিল লাইকা নামের সেই কুকুরটি।

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/this-date-in-science-launch-of-sputnik-october-4-1957
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_2
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_1
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Explorer_1
৫। http://history.nasa.gov/sputnik/
Category: articles

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বৃহস্পতিকে আরেকটু হলেই গ্রহ না বলে নক্ষত্র বলা যেত। কেননা একটি নক্ষত্রের জীবন চক্রের অধিকাংশ সময় ধরেই মূল উপাদান হিসেবে থাকে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। আমাদের সূর্যের  কথাই ধরুন। এতে হাইড্রোজেনের পরিমাণ ৭৫ ভাগ এবং হিলিয়াম আছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর এদিকে সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো গ্রহ, গ্রহ রাজ বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান কিন্তু এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামই।

এর ফলে একে কেউ ছোটখাটো নক্ষত্র বলে ভেবে ভুল করে বসলে মাফ করে দেওয়াই উচিত। তবে গ্রহদের মধ্যে এর ভর সবচেয়ে বেশি হলেও সেটা নক্ষত্রের মতো আচরণ করার মতো যথেষ্ট নয়। ফলে, এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানিয়ে নিজস্ব আলো তৈরি করতে পারছে না।

আর পড়ুনঃ 
☛ নক্ষত্রের পরিচয়
☛ গ্রহ কাকে বলে? 


বৃহস্পতির পৃষ্ঠঃ
বৃহস্পতি (Jupiter) হল সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে অন্যতম গ্যাস জায়ান্ট। এটা বলে এতটুকু ভুলও করা হয় না আসলে। আপনি যদি প্যারাশ্যুটে ভর করে বৃহস্পতির পৃষ্ঠে অবতরণ করার ধান্দায় থাকেন, তবে সে আশা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। গ্রহটিতে কোনো শক্ত পৃষ্ট নেই। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ৯০ ভাগ হল হাইড্রোজেন। বাকি দশ ভাগের প্রায় পুরোটাই হিলিয়াম দিয়ে ভর্তি। পাশাপাশি অন্য কিছু গ্যাসও আছে এতে।

এই গ্যাসগুলো ক্রমানুসারে একটির উপর একটি স্তর স্তরে সজ্জিত আছে। গ্রহটিতে শক্ত পৃষ্ঠ নেই বলে এর যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর চাপের সমান সেই অঞ্চলকে পৃষ্ঠ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই বিন্দুতে গ্রহটির অভিকর্ষ পৃথিবীর প্রায় আড়াই গুণ।

এই পৃষ্ঠে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করা একেবারেই অবাস্তব। কেননা এই অঞ্চলও আসলে গ্যাসেরই আরেকটি স্তর। কোনো যান বা নভোচারী এতে অবতরণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে গ্যাসের মেঘ পাড়ি দিয়ে শেষ পরিণতি হবে গ্রহটির একেবারে কেন্দ্রমণ্ডলে।

বৃহস্পতির কেন্দ্রেঃ
বৃহস্পতির কেন্দ্র সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। বিজ্ঞানীদের ধারণা ঘন কেন্দ্রমণ্ডলের চারপাশে হয়তবা ধাতব হাইড্রোজেন থাকতে পারে। এর উপরের থাকতে পারে আণবিক হাইড্রোজেনের আরেকটি স্তর। গ্রহটির কেন্দ্রমণ্ডল কতটা শক্ত সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। কেন্দ্রভাগের আনুমানিক তাপমাত্রা ৩৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১৯৯০ এর দশকের আগে বৃহস্পতির কেন্দ্রমণ্ডল নিয়ে আলোচনাই শুরু হয়নি। সেই সময় মহাকর্ষীয় চলাচল থেকে দেখা যায় গ্রহটির কেন্দ্রের ভর পৃথিবীর ভরের ১২ থেকে ৪৫ গুণ হতে পারে। তবে আবার অতীতে এর শক্ত কেন্দ্রমণ্ডল ছিল- এ কথা থেকে কিন্তু প্রমাণ হয় না যে এখনো তা টিকে আছে। সম্প্রতি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এর কেন্দ্রমণ্ডল খুব সম্ভব গলে যাচ্ছে।

বৃহস্পতির উপাদান 

নক্ষত্রের মতো হলেও ঠিক নক্ষত্র নয়ঃ
সূর্যের মতোই বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান হল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। কিন্তু এতে এই উপাদানগুলোর ঘাটতি থাকায় সূর্যের মতো ফিউশান বিক্রিয়া শুরু হতে পারেনি। তা হতে হলে একে বর্তমানের তুলনায় আরো ৭৫ থেকে ৮০ গুণ বেশি ভারী হতে হত। সৌরজগতের বাকি সবগুলোর ভরও যদি একে দিয়ে দেওয়া হয়, তবু এর ঘাটতি পূরণ হবে না। কিন্তু তবু বাকি সবগুলো গ্রহের ভর যোগ করলেও বৃহস্পতির একার ভর হবে তার আড়াই গুণ।

আরো পড়ুনঃ
এক নজরে সূর্য 
এক নজরে বৃহস্পতি

সূত্রঃ
১। http://www.space.com/18388-what-is-jupiter-made-of.html
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sun#Composition
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর। ১৯০১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইতালীয় পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি।

তিনি তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যা- এই দুটোতেই সমানে অবদান রেখে গেছেন। বর্তমান যুগে যেখানে একের অধিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা কঠিন, তাতে তাঁর এই অবদান তাঁকে একটু বিশেষভাবে নজরে আনার জন্যে যথেষ্ট। নিউক্লীয় চুল্লির (nuclear reactor) উন্নতি সাধনের জন্যে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এছাড়াও তিনি মাথা কাজে খাটিয়েছেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, কণা পদার্থবিদ্যা ও পরিসংখ্যান বলবিদ্যায়ও। ১৯৩৮ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি 

১৯০১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি ইতালির রোম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলবার্তো ফার্মি ছিলেন দেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিদর্শক। ছোট বেলায় যোগ দেন স্থানীয় গ্রামার স্কুলে। অল্প বয়স থেকেই গণিতের প্রতি অনুভব করতেন তীব্র ভালোবাসা। এতে ঘি ঢেলে দেন তাঁর পিতার এক সহকর্মী। ১৯১৮ সালেই ইতালির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এসএনএস থেকে ফেলোশিপ লাভ করেন। এটি বর্তমানেও ইতালির এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২২ সালে এখান থেকে পদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে বের হন।

এর অল্প কয় দিন পরেই, ১৯২৩ সালে ইতালীয় সরকারের পক্ষ থেকে বৃত্তি অর্জন করেন। কয়েক মাস সময় কাটান আরেক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ম্যাক্স বর্ন এর সাথে। ১৯২৪ সালে রকফেলার ফেলোশিপ নিয়ে চলে আসে লেইডেন (হল্যান্ড)। কাজ করেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল এহরেনফেস্ট এর সঙ্গে। সে বছরই আবার ফিরে আসেন ইতালিতে, যোগ দেন ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক পদার্থবিদ্যা ও বলবিদ্যার প্রভাষক হিসেবে।

১৯২৬ সালে তিনি পরিসংখ্যানের একটি সূত্র আবিষ্কার করেন, যা বর্তমানে 'ফার্মি পরিসংখ্যান' নামে পরিচিত। যেসব কণিকা পাউলির বর্জন নীতি (Pauli's exclusion principle) মেনে চলে তাদের জন্যে প্রযোজ্য তাঁর এই সূত্র। তাঁর নাম থেকেই বর্তমানে এই কণিকাদের নাম হয়েছে ফার্মিয়ন। এরা হল বোসন কণিকাদের বিপরীত, যারা মেনে চলে বোস- আইনস্টাইন পরিসংখ্যান।

পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯২৭ সালে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক মনোনীত হন। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই পদটি ধরে রাখেন তিনি। সে বছরই নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন, আর ইতালির একনায়ক মুসোলিনির হাত থেকে বাঁচতে রোম ছেড়ে চলে আসেন আমেরিকা।

রোমে থাকার সময় তড়িৎগতিবিদ্যার বিভিন্ন সমস্যা ও বর্ণালী বিষয়ক তাত্ত্বিক গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বহিঃস্থ ইলেকট্রনদের ছেড়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নজর দিয়েই পেয়ে গেলেন বিশেষ কিছু। ১৯৩৪ সালে বিটা ক্ষয় তত্ত্বের উন্নতি সাধন করলেন। এর মাধ্যমে পূর্বের বিকিরণ তত্ত্বের সাথে পাউলির নিউট্রিনোর ধারণার সেতুবন্ধন ঘটল। ১৯৩৪ সালে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পর তিনি দেখান যে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করে যে কোনো নিউক্লিয়াসকে অন্য নিউক্লিয়াসে রূপান্তরিত করা যায়। এই ধারণার উপর ভর করেই একই বছর আবিষ্কৃত হয় ধীর নিউট্রন, যার ফলে পরে আবিষ্কৃত হয় নিউক্লিয়ার ফিসান বা ভাঙন (যেখানে একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে দুই বা তার অধিক নিউক্লিয়াস তৈরি হয়)। সে সময় পর্যন্ত পর্যায় সারণিতে যে মৌলগুলো ছিল তার বাইরেও মৌল তৈরি সম্ভব হয় এর ফলেই।

১৯৩৮ সালের দিকে তিনিই ছিলেন নিউট্রন সম্পর্কে সবচেয়ে বড় বিশেষজ্ঞ। আমেরিকা ফিরে এসেও তিনি এই বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। এখানে এসে যোগ দেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে।

১৯৩৯ সালে হান ও স্ট্রাসম্যান ফিসান প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। এটা থেকে তাঁর মাথায় আসে কীভাবে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চেইন বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া পরিচালনা করা যায়। পরমাণু বোমা তৈরির সময় বিভিন্ন সমস্যা সমধানেও তিনি কাজ করেন। তিনি ছিলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টের এক দল পদার্থবিদের অন্যতম নেতা, যেখানে নিউক্লীয় শক্তি ও পরমাণু বোমা নিয়ে কাজ হচ্ছিল। এসব অবদানের জন্যে তাঁকে নিউক্লীয় যুগ ও পরমাণু বোমার স্থপতি বলা হয়।

১৯৪৪ সালে তিনি আমেরিকার নাগরকিত্ব লাভ করেন। যুদ্ধের পর (১৯৪৬ সালে) শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। ১৯৫৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এখানেই থাকেন। এখানে তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল উচ্চ- শক্তির পদার্থবিদ্যা। এছাড়াও তিনি পাইওন- নিউক্লিয়ন গবেষণায়ও নেতৃত্ব প্রদান করেন।

জীবনের শেষের দিনগুলো ব্যয় করেন মহাজাগতিক রশ্মির রহস্যময় উৎস নিয়ে। প্রস্তুত করেন একটি তত্ত্ব।

সব মিলিয়ে তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যার উপর অনেকগুলো গবেষণাপত্র লেখেন তিনি। প্রভাষক হিসেবে তাঁর চাহিদা সব সময়ই ছিল বেশি। মিশিগান, স্ট্যানফোর্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি বিভিন্ন কোর্স নিতেন।

১৯২৮ সালে তিনি লরাকে বিয়ে করেন। তাঁদের গিওলিও নামে একটি ছেলে ও নেলা নাম্নী একটি মেয়ে ছিল। হাঁটাহাঁটি, পাহাড়ে চড়া ও শীতকালের বিভিন খেলাধুলা ছিল তাঁর অবসরের প্রিয় কাজের মধ্যে অন্যতম।
১৯৫৪ সালের ২৮ নভেম্বর তারিখে তিনি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান পরপারের উদ্দেশ্যে।

তথ্য সূত্রঃ
১। http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1938/fermi-bio.html
২। http://www.famousscientists.org/enrico-fermi/

Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...