Advertisement

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

কিছুটা ভিন্নমত থাকলেও হ্যালির ধূমকেতুকেই (comet) সবচেয়ে বিখ্যাত ধূমকেতু মনে করা হয়। ৭৫ বছর পর পর এটি পৃথিবীর খুবই কাছে চলে আসে। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে এটি পৃথিবী ঘুরে গেছে। আবার পৃথিবীর আকাশে আসবে ২০৬১ সালে। অর্থ্যাৎ, এটি একটি পর্যাবৃত্ত (Periodic) ধূমকেতু, যা নির্দিষ্ট সময় পর পর ফিরে আসে।

হ্যালির ধূমকেতু 
ইংরেজ জ্যোতির্বিদ এডমান্ড হ্যালির (Edmond Halley) নামানুসারে ধূমকেতুটির এমন নামকরণ। তিনি ১৫৩১, ১৬০৭ ও ১৬৮১ সালে  পৃথিবীর নিকট এলাকায় বিভিন্ন ধূমকেতু আসার প্রতিবেদন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন।  এরপর ১৭০৫ সালে তিনি সিদ্ধান্ত টানেন যে ঐ তিন ধূমকেতু আসলে একই ধূমকেতু। তিনি বলে যান যে ১৭৫৮ সালে একে আবার দেখা যাবে। তাঁর ধারণা সঠিক প্রমাণ করে ধূমকেতুটি আবারও পৃথিবীর আকাশে হাজিরা দেয়। কিন্তু তত দিনে তিনি পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর আয়ুষ্কাল ছিল ১৬৫৬-১৭৪২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নিজ চোখে দেখে না গেলেও তাঁর অনুমান সত্য হওয়ায় বস্তুটার নাম দেওয়া হয়ে গেল তাঁর নামে। 

এটাই একমাত্র ধূমকেতু, যার ফিরে আসার ব্যাপারে পূর্বাভাস হয়েছিল।  এর পর্যাবৃত্ত (Preiodic) প্রত্যাবর্তন থেকে জানা গেল এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণও করছে। আরও জানা গেল সৌর পরিবারে বেশ কিছু ধূমকেতুও আছে।

সর্বশেষ দর্শনঃ

মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে প্রথম বস্তুটাকে দেখা যায় ১৯৮৬ সালে- মানে শেষবার। কয়েকটি মহাকাশযান এর কাছাকাছি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। পৃথিবীকে অতিক্রম করে যাবার সময় উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন টেলিস্কোপ দ্বারা একে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

ইতিহাসে হ্যালির ধূমকেতুঃ
ইউরোপিয়ান স্পেইস এজেন্সির (ESA) মতে সর্বপ্রথম একে দেখা যায় খৃষ্টপূর্ব ২৩৯ সালে।  চীনের মহাকাশ গবেষকরা একে নথিভুক্ত করে। পরে এটি যথাক্রমে ১৬৪ ও ৮৭ খৃষ্টপূর্ব অব্দে আবার ফিরে আসে। ঐ সময় ব্যাবিলনীয়রা এর নথি রাখে।

হ্যালির ধুমকেতুর কক্ষপথ
উইলিয়াম দি কনকারার ১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড আক্রমণ করার ঠিক কিছুক্ষণ আগে একে আবার দেখা যায়। এটাই এর সবচেয়ে বিখ্যাত হাজিরা। বলা হয়ে থাকে, উইলিয়াম মনে করেছিলেন ধূমকেতুটি তার বিজয়বার্তা নিয়ে এসেছে। আগে মনে করা হত ধূমকেতুটি কোনো সু বা দুঃসংবাদ নিয়ে এলো বুঝি! কিন্তু এখন আর কেউ তা মনে করে না।

এডমান্ড হ্যালি ধূমকেতুটিকে চিহ্নিত করার ১০৫ বছর আগে শেক্সপিয়ার তাঁর জুলিয়াস সিজার নাটকে লেখেন,
ভিক্ষুকদের মৃত্যুতে ধূমকেতু আসে না, আকাশ ঝলকে উঠে রাজপুত্রের মৃত্যুতে ।
১৯১০ সালে একে সবচেয়ে স্পষ্ট করে দেখা গেল। ঐ বছর এটি পৃথিবীর মাত্র সোয়া দুই কোটি কিলোমিটার দূরত্ব দিয়ে অতিক্রম করে। এই দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের ১৫ ভাগের মাত্র ১ ভাগ।

মার্কিন সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের জন্ম ১৮৩৫ সালে। ঐ বছরও হ্যালির ধূমকেতু পৃথিবীর আকাশে দেখা যায়। রসিক এই লেখক ১৯০৯ সালে বলেন,
আমি এসেছিলাম ধূমকেতুর সাথে। আগামী বছর আবার ধূমকেতুটি পৃথিবী ঘুরে যাবে, সাথে আমিও হয়ত চলে যাব।
টোয়েন ১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল মারা গেলেন, যার এক দিন আগেই দেখে নিলেন তাঁর জীবনকালে ধূমকেতুটির ২য় ভ্রমণ।

হ্যালির ধুমকেতুর কক্ষপথঃ 


সূত্রঃ
১. স্পেস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Edmond Halley
৩. এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা
Category: articles

বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪

২০ জানুয়ারি, ১৯৯৯। একটি খবর সবাইকে চমকে দিল। প্লুটো এখন আর গ্রহ নয়, একটি বিশাল বরফখণ্ড মাত্র। বিবিসিসহ বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয় এই খবর। কিন্তু প্লুটো আসলে তক্ষুনি তার গ্রহত্ব হারায়নি।
প্লুটো গ্রহ কিনা- এই মান নির্ধারণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (IAU বা  International Astronomical Union) বিভাগ-৩ এর কাঁধে পড়ে।

১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবাউ প্লুটো গ্রহটিকে আবিষ্কারের পর এটি সৌরজগতের নবম গ্রহের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু, বহু দিন ধরেই এটা স্পষ্ট যে প্লুটো অন্যান্য গ্রহের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখতে অক্ষম। এর কক্ষপথ পাশ্ববর্তী গ্রহ নেপচুনকে ছেদ করে গেছে।  বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষের দিকে প্লুটোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে বহিঃস্থ সৌরজগতের নতুন আবিষ্কৃত অনেকগুলো বস্তুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মাইনর প্ল্যানেট গবেষকদের কাছে ব্যাপারটি ছিল ব্যাপক আলোচিত।

পরে নেপচুন গ্রহের বাইরের এলাকার কিছু বস্তুর কক্ষপথ বেশ ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারার পর প্লুটো বিতর্ক আরও চাঙ্গা হল। ওই বস্তু গুলোকে নাম দেওয়া হয় ট্রান্স নেপচুনিয়ান অবজেক্টস বা TNO

IAU এর বিভাগ-৩ TNO এর তালিকায় প্লুটোকে এক নম্বরে রাখার ব্যাপারে চিন্তা করল। তখনও প্লুটোর গ্রহত্ব বজায় থাকল। তবে পরিচয় হল দুটো- গ্রহ এবং টিএনও একইসাথে। তখনও গ্রহের কোন সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা ছিল না। আশা ছিল যদি গ্রহের সংজ্ঞার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছা যায়, তবে সৌরজগতের অনেকগুলো বস্তুকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করা যাবে। অন্যথায় বিতর্কিত বা ঐতিহাসিক পদবী রেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

এই অনৈক্যের সুবাদে প্লুটো আরো কয়েক বছর গ্রহত্বের সাধ নিল। কিন্তু ২০০৩ সালে আবিষ্কৃত হল ইরিস। এর আকার প্লুটোর চেয়ে বড়। প্লুটো আবারও বিতর্কে পড়ে গেল। কফিনে শেষ পেরেকগুলো ঠুকে দিতে ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হল হোমিয়া (Haumea), ২০০৫ সালে মাকিমাকি(Makemake) যারা ভর ও আয়তনে প্লুটোর কাছকাছি । অন্য দিকে ১৮০১ সালে তথা নেপচুন আবিষ্কারের ৪৫ বছর আগে আবিষ্কৃত হয় সেরেস (Ceres)। একে অর্ধ-শতক ধরে গ্রহ বলে মনে করা হত। পরে ফেলা হয় গ্রহাণুদের তালিকায়। এরও ভর ও আয়তন প্লুটোর কাছাকাছি। তাছাড়া, প্লুটোর ভর চাঁদের মাত্র ১৮ শতাংশ! 
এখন তাহলে, প্লুটো যদি গ্রহ হয়, তাহলে এই ইরিস (যে প্লুটোর চেয়েও বড়), হোমিয়া, মাকিমাকি, সেরেস বেচারারা কী দোষ করল? অন্য দিকে, শুধু এরাই নয়, ২০০২ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে অরকাস, স্যালাসিয়া, কৌয়ার, সেডনা ইত্যাদি ৬-৭ টি উল্লেখ্যযোগ্য বস্তু আবিষ্কৃত হল।
প্লুটোর সাথে অন্যান্য বামন গ্রহ ও চাঁদের তুলনা
আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতি এবার গ্রহের সংজ্ঞা নির্ধারণ করল। আরেকটি তালিকা তৈরি করল বামন গ্রহদের নিয়ে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে  ইরিস, হোমিয়া, মাকিমাকি ও সেরেসের সাথে প্লুটোর নাম লেখা হল বামন গ্রহদের (Dwarf Planet) খাতায়।
সংজ্ঞায়  বলা হল, গ্রহ হচ্ছে সেই সব বস্তু যারা
 ক. যথেষ্ট ভারী হওয়ায় নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে গোলাকৃতি পেয়েছে।
 খ. তাপ নিউক্লিয়ার ফিউসন বিক্রিয়া ঘটানোর মত বেশি ভরবিশিষ্ট নয়।
 গ. আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্ল্যানেটেসিমালদের সরাতে পেরেছে। ফলে কক্ষপথের সীমানায় আর কেউ নেউ। 
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
আর বামন গ্রহের সংজ্ঞা হলঃ
সেই সব বস্তু যাদের ভর গ্রহের সমান কিন্তু গ্রহও নয়, উপগ্রহও নয়; সূর্যকে সরাসরি প্রদক্ষিণ করে; নিজস্ব আকৃতি পাবার মত অভিকর্ষের মালিক কিন্তু কক্ষপথকে অন্যান্য বস্তু থেকে আলাদা বা স্বতন্ত্র করতে পারেনি।

প্লুটো যে বামন গ্রহই থাকবে- এই সিধান্ত চূড়ান্ত হলেও কতটা স্থায়ী হতে পারে তা সময়ই বলে দেবে, কারণ এই সিধান্তে সবাই খুশি নয়। কারণটা মূলত ঐতিহাসিক।
সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ Planet; Dwarf_planet;
২. নাসা
Category: articles
ট্রেস -৪
এখন পর্যন্ত জানা মতে, সৌরজগতের বাইরে সবচেয়ে বড় গ্রহটি এক বিস্ময়। তাত্ত্বিকভাবে এর অস্তিত্বই থাকা অসম্ভব। এর নাম দেওয়া হয়েছে ট্রেস -৪ (TrES-4)। এই গ্রহটি বৃহস্পতি গ্রহের ১.৭ গুণ বড়। এর ঘনত্ব অতিমাত্রায় স্বল্প, তাই একে ধোঁয়াটে গ্রহদের (Puffy Planets) কাতারে রাখা হয়েছে। এর ঘনত্ব হল প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে মাত্র দশমিক ২ গ্রাম যা প্রায় তর্নিকাঠের (Balsa wood) ঘনত্বের সমান।উল্লেখ্য, পৃথিবীর ঘনত্ব প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে সাড়ে ৫ গ্রামের ওপরে।
তর্নিকাঠ

তথ্যটি দিলেন অ্যারিজোনার লয়েল মানমন্দিরের (Observatory) গবেষণা প্রদান জর্জি মান্দুশেভ। তিনি আরও বলেন, " গ্রহটির বহিঃস্থ বায়ুমণ্ডলের উপর অভিকর্ষীয় টান নগণ্য হওয়ায় সম্ভবত বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশ ধূমকেতুর লেজের আকার ধারণ করেছে।"
গ্রহটির ভর অনেক, কিন্তু সেই তুলনায় ঘনত্ব খুবই কম। ফলে এক্সোপ্ল্যানেটদের (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) জগতে  এটি এক ব্যতিক্রম গ্রহ। ব্যতিক্রমের মাত্রা এতই বেশি যে বর্তমান থিওরি দিয়ে এর অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।
স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে এটি বেশি বড়।  মান্দুসেভ স্পেস ডট কমকে বলেন, গ্রহটির যা ভর, তাতে এর আকার বৃহস্পতির সমান হওয়া উচিত। অথচ এটি তার দ্বিগুণ। এডওয়ার্ড ডানহাম বলেন, "ট্রেস -৪ একটি তাত্ত্বিক সমস্যা বাঁধিয়েছে। অবশ্য, সমস্যা তৈরি হওয়া ভাল। কারণ, তা সমাধান হলে আমরা নতুন জিনিস জানতে পারি।"
গ্রহটি পৃথিবী থেকে ১৪০০ আলোকবর্ষ দূরে, হারকিউলিস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত।  এর আরেকটি অবাক করা ব্যাপার হল, এই গ্রহ মাত্র সাড়ে তিন দিনে এর তারকাকে (GSC 02620-00648) প্রদক্ষিণ করে ফেলে। অর্থ্যাৎ, এতে সাড়ে তিন দিনে এক বছর হয়ে যায়।
ট্রেস-৪ গ্রহের মাতৃ তারকাও আরেক বিস্ময়। এর বয়স প্রায় সূর্যের সমান হলেও কাজেকর্মে এগিয়ে গেছে অনেক বেশি, হয়েছে বেশি পোক্ত। ভর বেশি হওয়ায় এর বিবর্তন ঘটেছে দ্রুত। মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় এটি সাবজায়ান্টে পরিণত হয়েছে। সাবজায়ান্ট বলা হয় সেই সব তারকা/নক্ষত্রকে যারা হাইড্রোজেন জ্বালানী শেষ করে লোহিত দানবে (Red Giant) পরিণত হবার অপেক্ষায় আছে। অন্য দিকে, আরো ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন বছর পরে আমাদের সূর্য লোহিত দানব হতে পারবে। সেই সময় সূর্য বিস্তৃত হয়ে পৃথিবী সহ নিকটবর্তী গ্রহসমূহকে গ্রাস করে ফেলবে।
ট্রেস-৪ যেহেতু এর মাতৃ তারকার খুব কাছে থেকে ঘুরছে, তাই বেচারার কপাল খারাপ, ভবিষ্যতে মাতৃ তারকার জঠরে চলে যেতে হবে। মান্দুশেভ বলেন, এটা ঘটবে, যখন নক্ষত্রটি আরো প্রায় ১০০ বছর পরে লোহিত দানবে রূপান্তরিত হবে।
ট্রেস-৪ এর মাতৃ তারকা GSC 02620-00648 সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ উজ্জ্বল এবং প্রতি সেকেন্ডে ৩-৪ গুণ বেশি শক্তি নির্গত করে। নিয়মানুযায়ী অপেক্ষাকৃত বড় ও উজ্জ্বলতর নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত গ্যাসীয় গ্রহরা হালকা হয়। কিন্তু এই গ্রহটির আকার এত বিশাল কেন, তা ব্যাখ্যাতীত।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Earth
Category: articles

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীতে বসে থেকে আমরা সৌরজগতের কিয়দাংশই দেখতে পাই। আমরা কী কীইবা আর দেখি? দিনে সূর্যের প্রখর তেজ, রাতের আকাশের কোমল চাঁদ ও আরো কিছু গ্রহ। কিন্তু আমাদের সৌরজগতের চৌহদ্দি অত অল্প নয়। তাহলে, প্রশ্ন দাঁড়ায়, আমাদের সৌরজগত ঠিক কত বড়?

হিসাব দেবার আগে হিসাবের এককটা দেখে নেই। মহাকাশের দূরত্বগুলো এত বিশাল যে আমাদের এসআই একক (SI Unit) মিটার তো দূরের কথা, কিলোমিটারও পাত্তা পায় না। মহাকাশবিদগণ তাই অ্যাস্ট্রোনোমিকেল ইউনিট (astronomical unit বা AU) নামে একটি একক ব্যবহার করেন। এই এককটার মান হচ্ছে পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব বা ১৫ কোটি কিলোমিটারের সমান।

বুধ গ্রহ (Mercury ) সূর্য থেকে মাত্র .৩৯ এইউ (AU) দূরে। আর জুপিটার সূর্যের ৫.৫ এইউ দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। দূরতম গ্রহ নেপচুনের দূরত্ব সূর্য থেকে ৩০.২ এইউ, যা ৪৫০৩ মিলিয়ন কিলোমিটারের সমান। প্লুটোর দূরত্ব ৩৯.২ এইউ। প্লুটো এখন বামন গ্রহ হলেও সৌর পরিবার থেকে তো আর নির্মূল হয়নি!

দ্রুতবেগে ছোটা হাইওয়েগামী গাড়ি (ধরলাম বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১১৫ কিলোমিটার) নিয়ে সূর্য থেকে নেপচুনে যেতে প্রায় ৪৬ হাজার বছর লেগে যাবে।
কিন্তু আমাদের সৌরজগতের দৌড় এখানেই শেষ নয়। গ্রহদের চৌহদ্দি যেখানে শেষ, সৌরজগতের পরিধি তার চেয়েও বহু দূর অবধি বিস্তৃত।

সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী বামন গ্রহ ( dwarf planet) হল এরিস (Eris)। এও কিন্তু সৌরজগতের একটি ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যেই পড়ে আছে। আবার, সৌরজগতের ৩০ এইউ থেকে ৫০ এইউ পর্যন্ত অর্থ্যাৎ সাড়ে ৭ বিলিয়ন অঞ্চল জুড়ে কুইপার বেল্ট (Kuiper belt) বিস্তৃত। এই বেল্টের মধ্যে আছে প্লুটো, ইরিস, মাকিমাকি ও হাউমেয়া বামন গ্রহরা। 
কাইপার বেল্ট

সবে তো শুরু!

আরও দূরে, প্রায় ৫০-২০০ এইউ দূরত্বে দেখা মিলবে প্রান্ত সীমার। এটা হচ্ছে সেই সীমানা, যেখান পর্যন্ত সেকেন্ডে ৪০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে যায় সৌর বায়ু (Solar Wind) এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আন্তঃতারকা পদার্থের সাথে। এই পদার্থগুলো আবার একীভূত হয়ে ধূমকেতুর মত লেজ তৈরি করে যার বিস্তৃতি হয় সূর্য থেকে ২৩০ এইউ পর্যন্ত।

কিন্তু, সৌরজগতের সত্যিকার বিশালতা বোঝা যাবে এর অভিকর্ষের পাল্লা থেকে অর্থাৎ যে দূরত্ব পর্যন্ত কোন বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে।

সৌর পরিবার ও উর্ট ক্লাউড 
সৌরজগতের দূরবর্তী পরিসর হচ্ছে ওর্ট ক্লাউড পর্যন্ত। ওর্ট ক্লাউড হচ্ছে এক গুচ্ছ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হিমেল (Icy) গ্রহের সমষ্টি। এরা ১ লক্ষ এইউ দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এই দূরত্ব ১.৮৭ আলোক বর্ষের সমান। যদিও আমরা ওর্ট ক্লাউডকে সরাসরি দেখি না, মনে করা হয় যেসব লং পিরিয়ড ধূমকেতু (Comet) সৌরজগতের নিকটবর্তী অংশে চলে আসে, তাদের উৎপত্তি এখানে।

সূর্যের অভিকর্ষ নিজের বাড়ি পেরিয়ে ২ আলোক বর্ষব্যাপী বিস্তৃত। এই পাল্লা সূর্য থেকে এর নিকটতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টোরির দূরত্বের প্রায় অর্ধেক। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই অঞ্চলের মধ্যবর্তী যে কোন বস্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ (Revolution) করবে।

আগের সেই গাড়িটার কথা মনে আছে? ঐ গাড়িটার এই দূরত্ব পাড়ি দিতে প্রায় ২ কোটি বছর লাগবে! পৃথিবী থেকে  নিক্ষিপ্ত সর্বাধিক বেগের নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন ( New Horizons)  একই কাজ করতে ৩৭ হাজার বছর সময় নেবে। এর গতি সেকেন্ডে ১৬.২৬ কি.মি বা ঘণ্টায় ৫৮৫৩৬ কি.মি। 

সূত্রঃ
১. www.universetoday.com/104486/how-big-is-our-solar-system/
২. উইকিপিডিয়াঃ Neptune, Eris, Kuiper belt; Oort cloud; New Horizons
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...