Advertisement

শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৯২ সালের এই দিন গ্যালিলিও মহাকাশযান দ্বিতীয়বারের মতো পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যায়। 


বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আয়োর পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে গ্যালিলিও যান

কোনো মহাকাশযান  উড়তে উড়তে কোনো বস্তুর পাশ দয়ে উড়ে যাওয়ার নাম ফ্লাইবাই। ফ্লাইবাই অন্তত দুটি কারণে হতে পারে। এক, বস্তুটিকে কাছ থেকে দেখা। দুই, শক্তি অর্জন করে গতি বৃদ্ধি ও দিক পরিবর্তন। মহাকাশযানদের ক্ষেত্রে এই দ্বিতীয় কাজটি খুব কমন ব্যাপার। উড়তে উড়তে মহাকাশযান সাময়িক সময়ের জন্য কোনো বস্তুর (সাধারণত গ্রহ) মহাকর্ষক্ষেত্রে প্রবেশ করে। বস্তুটি থেকে কিছু শক্তি সংগ্রহ করে বাড়িয়ে নেয় নিজের গতি। প্রয়োজন অনুসারে পাল্টে নেয় দিক। এগুলো আগেই প্রোগ্রাম করা থাকে। 


গ্যালিলিও যানটি নাসার পাঠানো। উদ্দেশ্য ছিল বৃহস্পতি ও এর উপগ্রহদের এবং গ্রহাণু গ্যাসপ্রা ও আইডা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। ১৯৮৯ সালের ১৮ অক্টোবর এটি মহাকাশের উদ্দেশ্যে ছুটে যায়। বৃহস্পতিতে পৌঁছে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। এর আগেই এটি শুক্র ও পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যায়। প্রথম মহাকাশযান হিসেবে এটি পৃথিবীর বাইরের দিকে কোনো গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। এছাড়াও প্রথম যান হিসেবে গ্রহাণুকে প্রদক্ষিণ করে ও ছবি তোলে। 





২০০৩ সালে যানটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হয়। বৃহস্পতির মহাকর্ষ ভেদ করে বেরিয়ে আসার মতো জ্বালানি অবশিষ্ট ছিল না বলেই এমন সিদ্ধান্ত। 


সূত্র

https://solarsystem.nasa.gov/missions/galileo/overview 

https://en.wikipedia.org/wiki/Flyby_(spaceflight)

https://en.wikipedia.org/wiki/Galileo_(spacecraft)


Category: articles

রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩

মহাকাশের বস্তুদের দূরত্ব নির্ণয় জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম বড় একটি সমস্যা। আকাশের দিকে খালি চোখে তাকিয়েই তো আর তারাদের দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। এ কারণেই প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা ভাবতেন, আকাশের সবগুলো তারা পৃথিবী থেকে একই পরিমাণ দূরত্বে একটি গোলকীয় পৃষ্ঠে বসানো আছে। 

নক্ষত্রের দূরত্বের মাপার ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে টেলিস্কোপ- তাও নিকটবর্তী নক্ষত্রদের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। পদ্ধতিটির নাম প্যারালাক্স বা লম্বন (Parallax)। নক্ষত্রের দূরত্বের একক পারসেক এসেছে এ শব্দটা থেকেই। এক পারসেক = ৩.২৬ আলোকবর্ষ। 


প্যারালাক্স বুঝতে হলে হাতের সামনে একটি আঙ্গুল ধরুন। এক চোখ বন্ধ করে এর দিকে তাকান। এবার আরেক চোখ খুলে এই চোখ বন্ধ করে আঙ্গুলের দিকে তাকান। কী ঘটছে? ব্যাকগ্রাউন্ডের সাপেক্ষে আঙ্গুলের অবস্থান বদলে যাচ্ছে। অবস্থানের এই বিচ্যুতির কৌণিক হিসাবকেই প্যারালাক্স বলে। আঙ্গুলের বদলে আরো দূরের কোন বস্তুর ক্ষেত্রে একই পরীক্ষা চালালে দেখা যাবে যে দুই চোখের দেখা অবস্থানের পার্থক্য তথা প্যারালাক্সের মান কমে যাচ্ছে।

প্যারালাক্স। পর্যবেক্ষণের স্থান পাল্টালে পাল্টে যায় বস্তুর অবস্থান। 

এখন, নক্ষত্রদের দূরত্ব নির্ণয়ের জন্যে আমরা এই প্যারালাক্স পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারি। কিন্তু উপরে যেমন বললাম, বস্তুর দূরত্ব বেশি হলে কৌণিক বিচ্যুতিও কম হবে। নক্ষত্রের দূরত্ব বের করার জন্যে পৃথিবীর দুইটি আলাদা জায়গা থেকে একে দেখে নিয়ে ত্রিকোণমিতি কাজে লাগিয়ে দূরত্ব বের করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পৃথিবীর আলাদা জায়গা দুটি দুই চোখের মত কাজ করবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নক্ষত্ররা পৃথিবী থেকে এত বেশি দূরে যে এদের প্যারালাক্সের মান হয় খুবই সামান্য। ফলে খুব ভাল মান পাওয়া যায় না।
 
এ সমস্যার সমাধানের জন্যেও পথ বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী বছরে এক বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ফলে সূর্যের চারদিকের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবী ৬ মাস পর পর বিপরীত বিন্দুতে পৌঁছায়। এই দুই বিপরীত অবস্থান থেকে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী নক্ষত্রের প্যারালাক্সের ভালো মান পাওয়া যায়।
যেমন চিত্রে দেখা যাচ্ছে জুন ও ডিসেম্বর মাসে পৃথিবী কক্ষপথের ঠিক বিপরীত প্রান্তদ্বয়ে থাকে। এই দুই বিন্দুতে কোন নক্ষত্র যে কোণ তৈরি করবে তার অর্ধেকই হল প্যারালাক্স (চিত্রে কোন p)।



এই পদ্ধতিটিও শুধু কাজ করবে পৃথিবী থেকে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী তারকাদের ক্ষেত্রে। আরো দূরের তারকা বা অন্য কোন বস্তুদের ক্ষেত্রে প্যারালাক্সের মান অনেক কমে যাবে বিধায় ভাল হিসাব পাওয়া যাবে না। 

পারালাক্স পদ্ধতি দিয়ে পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ আলোকবর্ষ দূরের তারার দূরত্ব মাপা যায়। আরও দূরের তারার দূরত্ব মাপার সরাসরি কোনো উপায় নেই। তবে নক্ষত্রের রঙ ও উজ্জ্বলতার সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে দূরত্ব জানা যায়। রং থেকে জানা যায় প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি। নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে আসতে আসতে সে উজ্জ্বলতা নিয়ম মেনে কমে। সে নিয়মটা হলো বিপরীত বর্গীয় সূত্র। আর এটা থেকেই জানা যায় নক্ষত্রের দূরত্ব। ছায়াপথের দূরত্ব মাপতেও প্রায় একই ধরনের ধারণা ব্যবহার করা হয়। সৌরজগতের গ্রহ বা সূর্য তো আরও অনেক কাছে। ফলে প্যারালাক্স দিয়েই এদের দূরত্ব বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যায়। 
 
১। http://www.astronomy.ohio-state.edu/~pogge/Ast162/Unit1/Images/parallax.png
২। http://curious.astro.cornell.edu/the-universe/79-stars-and-star-clusters/distances/359-how-can-i-measure-the-distance-of-a-star-beginner
৩। https://science.howstuffworks.com/question224.htm
৪। https://www.sciencefocus.com/space/how-do-we-calculate-distances-to-other-galaxies
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩

সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে বড় বস্তু। যেমন ভারী, তেমনি তার বিশাল অবয়ব৷ সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯.৮৬ ভাগ ভরই সূর্যের একার৷ আর আকার? ১০৯টা পৃথিবীকে পাশাপাশি বসালে সূর্যের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত যাওয়া যাবে৷ মানে ব্যাস পৃথিবীর ১০৯ গুণ। 


১০৯টা পৃথিবীকে একটার পর একটা বসিয়ে দিলে সূর্যের সমান চওড়া হবে। 

তবে ফুটবলের মতো প্রায় গোলাকার সূর্যের পেটের ভেতরে বসিয়ে দেওয়া যাবে ১৩ লক্ষ সূর্য৷ এটাই প্রচলিত কথা। সংখ্যাটায় একটু গোলমাল আছে অবশ্য। এ সংখ্যা পাওয়া গেছে সূর্যের আয়তনকে পৃথিবীর আয়তন দিয়ে ভাগ করে। সেটাকেই স্বাভাবিক মনে হয়। তবে এটা সঠিক হত যদি পৃথিবীকে গলিয়ে সূর্যের পেটে ভরে রাখা যেতে। কিন্তু পৃথিবী শক্ত ও কঠিন পদার্থে তৈরি। পৃথিবীকে সূর্যের ভেতরে বসাতে গেলে এখানে-সেখানে ফাঁকা জায়গায় থেকে যাবে। পুরো আয়তন ভর্তি করা যাবে না। ফলে, সবমিলিয়ে সূর্যের ভেতরে জায়গা পাবে নয় ৯ লাখ ৩২ হাজার পৃথিবী। 


সৌরজগত কত বড়?


গোলাকার সূর্যের পেটের ভেতর রাখা যাবে প্রায় ৯ লাখের বেশি পৃথিবী 

সূর্যের আকার প্রায় পুরোপুরি গোলাকার৷ মেরু ও বিষুব অঞ্চলের ব্যবধান মাত্র ১০ কিলোমিটার বা ৬.২ মাইল৷ গড় ব্যাসার্ধ ৪,৩২,৪৫০ মাইল (৬,৯৬,০০০ কিলোমিটার)৷ ব্যাস ৮,৬৪,৯৩৮ মাইল বা ১৩,৯২,০০০ কিলোমিটার৷ তবে সূর্য আকারে চাঁদ ও পৃথিবীর তুলনায় বিশাল হলেও পৃথিবীর আকাশে চাঁদ ও সূর্যকে সমান দেখায়। এর কারণ, সূর্য চাঁদের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ বড়। আবার, পৃথিবী থেকে দূরত্বও ৪০০ গুণ। ফলে পৃথিবীর আকাশে এ দুই বস্তুকে সাধারণত সমান দেখা যায়। তবে সবসময় নয়।  


চাঁদ-সূর্য সমান কেন? 


ভরও দারুণ বিশাল। তিন লাখ ত্রিশ হাজার পৃথিবী একত্র করলে সূর্যের সমান ভর পাওয়া যাবে৷ তবে ভর কিন্তু কমে যাচ্ছে ক্রমশ৷ পরিমাণে সেটা বিশাল হলেও মূল ভরের তুলনায় নগণ্য৷ সৌরবায়ুর সময় সূর্য সেকেন্ডে ১৫ লাখ টন ভর হারায়৷ অভ্যন্তরে চলা ফিউশন বিক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত ভর থেকে আলো ও তাপশক্তি তৈরি হচ্ছে৷ এভাবে প্রতি সেকেন্ডে খরচ হচ্ছে ৪০ লাখ টন পদার্থ৷ সব মিলিয়ে সূর্য তার ৪৫০ কোটি বছরের জীবনে ভর হারিয়েছে পৃথিবীর ভরের ১০০ গুণ পদার্থ৷ দেখতে বিশাল লাগলেও এটা সূর্যের ভরের মাত্র ০.০৫ ভাগ। অন্য কথায় দশ হাজার ভাগের ৫ ভাগ৷ সারা জীবনে সূর্য  এক হাজার ভাগের মাত্র ৭ ভাগ ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করবে৷ 


তবে সূর্যের বাহাদুরি শুধু সৌরজগতেই। পৃথিবী বা সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর তুলনায় প্রকাণ্ড হলেও সূর্য আসলে সাদামাটা এক তারা৷ রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা বিটলজুস৷ কালপুরুষ তারামণ্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বল এ তারা সূর্যের প্রায় ৭০০ গুণ বড় ও ১৪,০০০ গুণ উজ্জ্বল৷ বিটলজুসকে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে ভাল দেখা যায়৷ তবে এমন তারাও আছে যার তুলনায় বিটলজুসও নস্যি! 


লুব্ধক, কালপুরুষ ও বিটলজুস


সূর্যের তুলনায় বিটলজুস কত বিশাল দেখুন। এ তো সবে শুরু। আছে আরও বিশাল বিশাল তারাও।

বিটলজুস তো সূর্যের ৭০০ গুণ বড়। মিউ সিফিয়াই তারা প্রায় এক হাজার গুণ বড় (৯৭২)। সূর্যের চেয়ে এক হাজার গুণ বা আরও বড় প্রায় ১০০ তারা আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ভিওয়াই ক্যানিস মেজোরিস তো ১৪২৯ গুণ বড়। ইউওয়াই স্কুটি ১৭০৮ গুণ। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আকারের তারার নাম স্টিফেনসন ২-১৮। অন্য নাম স্টিফেনসন ২ ডিএফকে ১। সূর্যের তুলনায় ২১৫০ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৯ হাজার আলোকবর্ষ। 


বড় বড় নক্ষত্রের গল্প


সূর্যের চেয়ে বড় বড় তারকারা

তবে আবার সূর্যের চেয়ে ছোট তারাও আছে। এমন তারাও আছে, যাদের ভর সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ। তবে সূর্যের চেয়ে বেশি ভারী তারা আবার জীবনের শেষ ভাগে অনেক ছোট হয়ে যায়। এই যেমন ব্ল্যাকহোল ও নিউট্রন তারা। জীবনের শেষভাগে ব্ল্যাকহোল তো বিন্দু বা রেখার মতো হয়ে যায়। আর নিউট্রন তারা হয় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। জ্বালানি ফুরিয়ে গুটিয়ে যাবার সময় তৈরি নিউট্রন আরও ছোট হতে বাধা দেয়। ফলে তারাটা ব্ল্যাকহোল হতে পারে না। চওড়ায় হয় মাত্র ১২ মাইলের মতো। ঘন এ তারা থেকে একটি চিনির দানার সমান পদার্থ নিলে তার ভরই হবে একশো কোটি টন। 


ব্ল্যাকহোলের জন্ম হয় কীভাবে?


এখন সূর্যের আকার প্রায় ধ্রুব থাকলে আরও প্রায় ৫০০ কোটি সূর্য বড় হয়ে যাবে৷ ততদিনে হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হওয়ায় বন্ধ হবে হিলিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া৷ ফলে ভেতরের অংশ গুটিয়ে একটা সময় লোহিত দানব ও পরে শ্বেত বামন তারায় পরিণত হবে৷ ওদিকে বাইরের অংশে তখনও চলমান ফিউশনের বহির্মুখী চাপে প্রসারিত হয়ে অনেকদূর বিস্তৃত হবে৷ বর্তমান আকার থেকে ২০০ গুণ বড়৷ বুধ ও শুক্রের কক্ষপথ চলে যাবে সূর্যের পেটের ভেতর। এবং সম্ভবত পৃথিবীও। 


সূর্য কীভাবে জ্বলে?


লোহিত দানব তারার গল্প


সূত্র: স্পেস ডট কম, স্লুহ ডট কম, নাসা, আর্থস্কাই, আইএফএল সায়েন্স, ওউক্ল্যাশন

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

টকটকে লাল লোহিত দানব তারা৷ তবে জন্ম নিয়েই সাথে সাথে লোহিত দানব হয়ে যায় না৷ জন্মের সময় বিশাল ভরের তারা নিজের ভরে চুপসে যেতে চায়৷ শক্তিশালী মহাকর্ষ তারার হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের গ্যাসীয় মেঘকে গুটিয়ে ফেলতে থাকে৷ এ থেকেই জোড়া লাগতে শুরু করে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস। শুরু হয় ফিউশনের মাধ্যমে হিলিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া৷ এভাবেই তৈরি হয় আলো ও তাপ৷ এ বিক্রিয়া তৈরি করে বহির্মুখী চাপ৷ আর তাতেই মহাকর্ষ ও ফিউশন ভাপের টানাটানিতে একটি তারা ভারসাম্যে থাকে৷ তারার এ দশাকে বলে প্রধান ক্রম। 


রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব তারা

সূর্য কীভাবে জ্বলে?


নক্ষত্রের জন্ম


তবে এটা তো আর চিরদিন চলা সম্ভব নয়। প্রায় ৭৫ ভাগ হাইড্রোজেন নিয়ে তারার জন্ম। একটা সময় কোর বা কেন্দ্রভাগের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যায়৷ তারা যত ভারী, তত দ্রুত ফুরোয় তার জ্বালানি৷ কারণ মহাকর্ষ শক্তিশালী হওয়ায় ফিউশন চলে দ্রুত গতিতে। ফলে ভর বেশি হলেও ভারী তারার জ্বালানি আগে শেষ হয়। সবচেয়ে ভারী তারারা তো সুপারনোভা হওয়ার আগে মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর জ্বলে। যেখানে সূর্যের মতো গড়পড়তা তারাদের ফিউশন চলে প্রায় এক হাজার কোটি বছর ধরে। জ্বালানি শেষ হলেই তারার ভারসাম্যও শেষ৷ কোর বা কেন্দ্রভাগ আবার গুটোতে থাকে৷ তবে কোরের চারপাশের খোলসে থাকা প্লাজমা পদার্থ উত্তপ্ত হয়ে হয়ে নিজেই ফিউশন শুরু করে৷ 


খোলসের এ ফিউশনের ফলে তৈরি বাড়তি তাপ তারার বাইরের অংশকে নাটকীয়ভাবে প্রসারিত করে দেয়৷ তারার পৃষ্ঠ আগের চেয়ে কয়েকশো গুণ বড় হয়ে যায়৷ সূর্যও এসময় প্রায় ২০০ গুণ বড় হয়ে যাবে৷ তারার শক্তি এ সময় বড় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয়ে পড়ে৷ ফলে তাপমাত্রা কমে আসে৷ তাতে তার রং বদলে সাদা বা হলুদ থেকে লাল হয়৷ তৈরি হয় রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব৷ তাপমাত্রা নেমে আসে ৫ হাজার কেলভিনে৷ আগে যেখানে ছিল ৬ থেকে ৩০ হাজার কেলভিন৷ তবে সত্যি বলতে, রেড জায়ান্টরা আসলে দেখতে কমলা। লাল হতে হলে তাপমাত্রা হতে হবে আরও কম। চার হাজার কেলভিনের নিচে। 


নক্ষত্রের বিবর্তন

ব্যাপারটা রাতারাতি ঘটে যায় না। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে কোটি কোটি বছর৷ প্রধান ক্রম দশা শেষে সব তারা কিন্তু লোহিত দানব হবে না৷ জন্মের সময় ভর সূর্যের ৮০ ভাগ থেকে ৮ গুণ পর্যন্ত হলেই কেবল তারা লোহিত দানব হতে পারে৷ আরও বড় হলে তারা জ্বালানি ফুরিয়ে হয় রেড সুপারজায়ান্ট বা অতিদানব৷ পরে ঘটায় সুপারনোভা বিস্ফোরণ৷ রেড জায়ান্টরা সাধারণত বিস্ফোরণ ঘটায় না। তবে পাশে কোনো শ্বেত বামন তারা থাকলে সেটা লোহিত দানবের জ্বালানি চুরি করে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে৷ এর নাম নোভা বিস্ফোরণ৷ 


নোভার গল্প 


তারা রেড জায়ান্ট দশায় থাকে প্রায় একশ বছর৷ সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারাদের কোর হবে শ্বেত বামন৷ আর কেন্দ্রের তাপ ও চাপে বাইরের অংশ নিক্ষিপ্ত হয় মহাশূন্যে। এই নিক্ষিপ্ত অংশের নাম গ্রহ নীহারিকা (planetary nebula)। যদিও গ্রহের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ হাইড্রোজেন পরবর্তী হিলিয়াম ও আরও ভারী পদার্থের ফিউশনে তৈরি কার্বন ও অন্যান্য পদার্থ থাকে এ নীহারিকায়৷ এ নীহারিকা আশেপাশের পদার্থের সাথে একীভূত হতে পারে৷ হতে পারে নতুন নক্ষত্র ও গ্রহ তৈরির উপাদান। তবে বেশিদিন এরা টিকে থাকে না। কয়েক হাজার বছর থেকে শুরু করে এক লাখ বছরের কাছাকাছি পর্যন্ত চলতে পারে জীবন। তারপর মিলিয়ে যায় আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে। 


আরও প্রায় পাঁচশো কোটি বছর সূর্য লোহিত দানব হবে। বর্তমান রাতের আকাশের পরিচিত অনেক তারাই বর্তমানে এ দশায় আছে৷ স্বাতী, ক্যাপেলা, অ্যালডেবারান, জ্যেষ্ঠা (antares) এদের মধ্যে অন্যতম।  স্বাতী তো উত্তর গোলার্ধের রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷ সমগ্র রাতের আকাশে চতুর্থ উজ্জ্বল৷ ক্যাপেলা উজ্জ্বলতায় ষষ্ঠ৷ আর অ্যালডেবারান চতুর্দশ৷ আর অ্যান্টারিজ পনেরতম। এরা লোহিত দানব হয়েও রেড সুপাজায়ান্ট লোহিত অতিদানবদের চেয়েও পৃথিবীর আকাশে বেশি উজ্জ্বল। কারণ একটাই–দূরত্ব। 


যেমন উজ্জ্বলতায় স্বাতী চতুর্থ আর বিটলজুস নবম। স্বাতী পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৬ আলোকবর্ষ দূরে৷ অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি সূর্যের ১৭০ গুণ৷ ওদিকে লোহিত অতিদানব তারা বিটলজুসের দীপ্তি সূর্যের প্রায় এক লক্ষ গুণ (বিভিন্ন হিসাবে কম-বেশি আছে)। তবুও পৃথিবীর আকাশে বিটলজুস কম উজ্জ্বল। এর দূরত্ব যে ৫৪৮ আলোকবর্ষ!


সূত্র: এসা ওয়ার্ডব্যাংক: রেড জায়ান্ট, প্ল্যানেটারি নেবুলা, সক্রেটিক ডট অর্গ, আর্থস্কাই, ইউটা ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি

Category: articles

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সূর্যগ্রহণের ছবি

সূর্য একটা নক্ষত্র। যার চারপাশে ঘুরছে পৃথিবী নামক গ্রহটা। চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে৷ চলতে চলতে একটা সময় চাঁদ চলে আসে সূর্য ও পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে৷ আড়াল করে সূর্যের আলো। আর তখনই হয় সূর্যগ্রহণ৷ চাঁদ ও সূর্যের আকারে বিশাল ব্যবধান থাকলেও দূরত্বের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয় আকারের তারতম্য। তাই তো চাঁদ আকারে ছোট হয়েও পৃথিবীর আকাশে সূর্যের সমান৷ 

সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ও চাঁদের কক্ষপথ


আগেই বলেছি, সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে৷ ফলে চাঁদের আলোকিত অংশও থাকে পৃথিবী থেকে উল্টো দিকে৷ এ জন্যই সূর্যগ্রহণ আসলে হয় অমাবশ্যার সময়। তবে সব অমাবশ্যায় কিন্তু সূর্যগ্রহণ হয় না। কারণ চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের একই সমতলে থাকে না৷ একই রেখা বরাবর চলে এলেই কেবল গ্রহণ হতে পারে৷ আর সেটা আবার পুরো পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। চাঁদের কারণে পৃথিবীর যে অঞ্চলে সূর্যের আলো পৌঁছতে পারে না শুধু সে অঞ্চল থেকেই তা দেখা যাবে৷ কোনো কোনো অঞ্চলে তো ঐ বিশেষ সময়ে রাত থাকবে। ফলে এমনিতেই সূর্য দেখা যাবে না। 

সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণে পৃথিবী থাকে সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে। আর সূর্যগ্রহণে চাঁদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে। 


সূর্যগ্রহণ তিন রকম আছে। পূর্ণগ্রাস, বলয় ও আংশিক৷ চাঁদ সূর্যের আলোকে পুরোপুরি ঢেকে দিলে হয় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ৷ এ সময় চাঁদের ছায়ার কেন্দ্রে (প্রচ্ছায়া) থাকা পৃথিবীর মানুষেরা পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখেন। আকাশ হয়ে যায় অন্ধকার। গোধূলির সময়ের মতো৷ আবহাওয়া ভাল হলে এ সময় পূর্ণগ্রাস অঞ্চলের মানুষের সূর্যের করোনা বা সৌরমুকুট দেখতে পাবেন। এটা হলো সূর্যের বহিস্থ বায়ুমণ্ডল৷ এমনিতে সূর্যের উজ্জ্বল অংশের জন্য এটা দৃষ্টির আড়ালে থাকে৷ 

চাঁদ কক্ষপথের অপভূ অবস্থান বা এর কাছাকাছি জায়গায় থাকা অবস্থায় সূর্যগ্রহণ হলে সেটা হয় বলয়গ্রাস৷ চাঁদ এ সময় পৃথিবী থেকে দূরে থাকায় আকার অপেক্ষাকৃত ছোট থাকে৷  ফলে পৃথিবীর আকাশে চাঁদের আপেক্ষিক আকার সূর্যের চেয়ে কম হয়। ফলে চাঁদের ছায়ায় সূর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে না। চাঁদের চারপাশ ঘিরে দেখা যায় বলয়৷ 

তিন রকম সূর্যগ্রহণ

অন্যদিকে আংশিক গ্রহণ হয় যখন সূর্য, চাঁদ আর পৃথিবী সরলরেখায় থাকে না৷ চাঁদ সূর্যের একটা অংশকেই শুধু ঢেকে দেয়৷ সূর্যকে তখন ক্রিসেন্ট বা অর্ধচন্দ্রের মতো লাগে৷ আংশিক গ্রহণ কিন্তু বলয় বা পূর্ণগ্রাস থেকেও হতে পারে৷ এই দুই গ্রহণের সময় প্রচ্ছায়া অঞ্চলের বাইরের মানুষ দেখবে আংশিক গ্রহণ৷ 

সাবধান!
সূর্যগ্রহণ ভুলেও খালি চোখে দেখবেন না। দেখতে হলে লাগবে বিশেষ চশমা অথবা নির্দিষ্ট কৌশল। তবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় সামান্য সময়ের জন্য খালি চোখেও নিরাপদে গ্রহণ দেখা যাবে৷

 
সূর্যগ্রহণ জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণারও দূর্লভ এক সুযোগ৷ ১৯১৯ সালে এমন এক সূর্যগ্রহণের সময়ই প্রমাণ হয় আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিকতা৷ সূর্য চাঁদের আড়ালে ঢেকে যাওয়ার সূর্যের পেছনে থাকা হায়াডিজ নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে বেঁকে আসা আলো ধরা পড়ে অনুসন্ধানী দলের টেলিস্কোপের চোখে। মিলে যায় আইনস্টাইনের পূর্বানুমান৷ 

Category: articles
বামন গ্রহদের পরিচয়। বড় করে দেখতে ক্লিক করুন। 


টেক্সট 

বামন গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ভরের কারণে আকৃতি গ্রহদের মতোই প্রায় গোলাকার। তবে আকারে গ্রহদের চেয়ে ছোট। সূর্য ছাড়া অন্য কোনো বস্তুর চারপাশে ঘোরে  না। তবে নিজের কক্ষপথে অন্য বস্তু চলে আসতে পারে। সৌরজগতে শত শত বামন গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে অবশ্য পাঁচটি বহুল পরিচিত। 


সেরেস

আকার: ৫৮৪ মাইল চওড়া 

অবস্থান: গ্রহাণুবেষ্টনী 

আবিষ্কার: ১৮০১ সাল 

বিশেষ তথ্য: গ্রহাণুবেষ্টনীর সবচেয়ে বড় গ্রহাণু 


প্লুটো

আকার: ১৪৭৩ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্টের কাছে 

আবিষ্কার: ১৯৩০ 

চাঁদ/উপগ্রহ: শ্যারন, নিক্স, হাইড্রা, স্টিক্স, কারবারোস 

বিশেষ তথ্য: একদিন সমান পৃথিবীর ৬.৪ দিন


মাকিমাকি

আকার: ৮৯০ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্ট 

আবিষ্কার: ২০০৫ 

চাঁদ: এমকে২ 

বিশেষ তথ্য: কাইপার বেল্টের দ্বিতীয় উজ্জ্বল বস্তু 


হাউমেয়া 

আকার: ১১৯৫ x ৬১৫ মাইল (ডিম্বাকার) 

অবস্থান: কাইপার বেল্ট

আবিষ্কার: ২০০৪ 

চাঁদ: হিয়াকা, হামাকা 

বিশেষ তথ্য: নেপচুনের বাইরের বস্তুর মধ্যে এখন পর্যন্ত এরই কেবল বলয় আছে বলে জানা গেছে।  


এরিস

আকার: ১৪৪৫ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্টের বাইরের অংশ

আবিষ্কার: ২০০৩ 

বিশেষ তথ্য: আবিষ্কারের মাধ্যমে প্লুটোর গ্রহত্ব নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় 


সূত্র: স্পেস ডট কম
Category: articles

শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

চাঁদ ও সূর্য। পৃথিবীর আকাশকে সুন্দর করে তোলার পেছনে যাদের জুড়ি মেলা ভার। আকারে দুই বস্তুতে ব্যাপক পার্থক্য। সূর্য চাঁদের তুলনায় বিশাল। তাও পৃথিবীর আকাশে দুটো বস্তুকে সমান দেখায়। কিন্তু কেন? 


পৃথিবী থেকে দূরত্ব ও আকার - এই দুই মানের ভারসাম্যে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর আকাশে সমান। 

সূর্য বিশাল এক বস্তু। ১৩ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার চওড়া৷ মাইলের হিসাবে ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার৷ দূরত্বও আবার বিশাল। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল৷ 


অপরদিকে চাঁদের ব্যাস ২১৫৯ মাইল বা ৩৪৭৫ কিলোমিটার৷ মানে চাঁদ সূর্যের চারশ ভাগের একভাগ মাত্র চওড়া৷ আর পৃথিবীর থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার বা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ মাইল। 


সূর্য পৃথিবী থেকে কত দূরে?


চাঁদ পৃথিবী থেকে কত দূরে? 


এ হিসাবগুলোতে দারুণ মজার একটা ব্যাপার আছে৷ পৃথিবী থেকে চাঁদের তুলনায় সূর্যের দূরত্ব ৪০০ গুণ৷ আবার সূর্যের আকার চাঁদের ৪০০ গুণ। ফলে চাঁদের তুলনায় সূর্যের বিশালতা আমাদের চোখে হারিয়ে যায় দূরত্বের কারণে৷ ঠিক এভাবেই দূরের উজ্জ্বল নক্ষত্র কাছের অনুজ্জ্বল নক্ষত্রের আলোর কাছে হেরে যায়৷


নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা


চাঁদ ও সূর্য দুটোরই আকার পৃথিবীর আকাশে ০.৫ ডিগ্রি৷ তবে সবসময় আকার সমান থাকে না। পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। চাঁদের পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথের নিকটতম অবস্থানের নাম অনুভূ। আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানের নাম অপভূ৷  একইভাবে সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথও উপবৃত্তাকার৷ কাছের ও দূরের অবস্থানের নামগুলো অনুসূর ও অপসূর৷ জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে। 


খালি হাতে আকাশ মাপুন


জ্যোতির্বিদ্যায় কোণের পরিমাপ


এসব কারণে সময় সময় চাঁদ ও সূর্যকে পৃথিবীর আকাশে বড় ও ছোট দেখায়৷ তবে চাঁদ পৃথিবীর বেশি কাছে বলেই আকারের তারতম্য বেশি ফুটে ওঠে৷ আমরা দেখি মাইক্রোমুন ও সুপারমুন৷ 


তবে চাঁদ ক্রমেই পৃথিবী থেকে দূরে সরছে। ২৫০ কোটি বছর ধরেই চলছে এ কাজ। প্রতি বছর সরছে প্রায় ৩.৮ সেন্টিমিটার করে৷ দূর অতীতে তাই  সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীর আকাশে সমান ছিল না। চাঁদ ছিল বড়৷ বর্তমানে আমরা ভাগ্যবান। এই সময়টায় দুটোই সমান। ধীরে ধীরে চাঁদ আরও ছোট হবে৷ 


আবার এই চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর আকাশে সমান বলেই আমরা নানানসময় দেখি সূর্যচন্দ্রগ্রহণ৷ সেটা হতে হলে তিন বস্তুকে অবশ্য একই রেখায় আসতে হয়। সাইজ মিলে গেলে দেখি পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ৷ সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ দূরে থাকলে (অপভূ) দেখা যায় বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ৷ চাঁদের চারপাশ ঘিরে এ সময় দেখা যায় সূর্যের বৃত্তাকার আলোকরেখা৷ 


সূর্যগ্রহণ কেমন হবে তা নির্ভর করে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের ওপর। 


অন্য গ্রহেও কি এমন? আকাশে কি চাঁদ (গ্রহের উপগ্রহ) ও সূর্যের সাইজ সমান? এই যেমন মঙ্গল গ্রহ। এর দুই চাঁদ ডিমোস ও ফোবোস দুটোই সূর্যের চেয়ে অনেক ছোট৷ পৃথিবীর চেয়েও মঙ্গল থেকে সূর্য বেশি দূরে৷ মঙ্গলের আকাশে তাই এর চাঁদদের ছোট হওয়ার কারণ তাই চাঁদদেরই ছোট সাইজ৷ 

সূত্র: স্পেস ডট কম, সায়েন্স নোটস

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অমূল্য এক সম্পদ। একের পর দূর আকাশের দারুণ সব ছবি নিচ্ছে যন্ত্রটা৷ ফুটিয়ে তুলছে মহাবিশ্বের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য৷


বলয় নীহারিকার ছবি। সূত্র: স্পেস ডট কম

মহাবিশ্বের এমন এক বস্তুর নাম রিং নেবুলা বা বলয় নীহারিকা৷ আমাদের থেকে ২২০০ আলোকবর্ষ দূরে এর বাড়ি৷ এক মৃতপ্রায় নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ৷ উজ্জ্বল বলয়ের মতো দেখতে বলেই নামটা এমন৷ এ বলয়ে আছে প্রায় বিশ হাজার আণবিক হাইড্রোজেন গ্যাসের স্বতন্ত্র খণ্ড৷ যার একেকটিই পৃথিবীর সমান ভারী৷

জেমস ওয়েব তার কাজের শুরুতেই ছবি তুলেছিল দক্ষিণ বলয় নেবুলারও৷ নাম কাছাকাছি হলেও বস্তুদুটি আলাদা৷ তবে দুটোই গ্রহ নীহারিকা। ইংরেজিতে প্ল্যানেটারি নেবুলা৷ যদিও গ্রহের সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই৷ এই নীহারিকা গড়ে ওঠে হয় ভারী মৃত নক্ষত্রের মৃত্যুর আগে ছুঁড়ে দেওয়া বিস্ফোরিত গ্যাস ও ধূলিকণা দিয়ে৷

Category: articles

বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

আজ ২৩ আগস্ট। ১৯৬৬ সালের এই দিন চাঁদের কক্ষপথ থেকে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর ছবি তোলা হয়। যা একইসাথে অন্য মহাজাগতিক বস্তু থেকেও প্রথম তোলা ছবি। ছবিটি তোলে নাসার মহাকাশযান লুনার অরবিটার ১।


চাঁদ থেকে পৃথিবীর প্রথম ছবি। 


যানটা ছিল নাসার লুনার অরবিটার প্রোগ্রামের প্রথম অভিযান৷ যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো যানের মধ্যে এটাই প্রথম চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে৷ প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের মসৃণ পৃষ্ঠের ছবি তোলা৷ যাতে পরবর্তী সার্ভেয়ার ও অ্যাপোলো অভিযানের যানগুলো নিরাপদে অবতরণ করতে পারে৷ চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় ঐ বছরই আগস্টের ১০ তারিখে। নাম থেকে বোঝা যাচ্ছে যানটা অরবিটার। মানে কক্ষপথে ঘুরবে৷ আগস্টের ২৫ তারিখে এটা কক্ষপথের নিকটবিন্দুতে পৌঁছে৷ তার আগেই তোলে বিখ্যাত ছবিটা৷

অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ। যানটা এর ৫৭৭তম প্রদক্ষিণের সময় চাঁদের উল্টো পাশে আছড়ে পড়ে৷ কাজটা পরিকল্পিতই ছিল। কারণে ততদিনে লুনার অরবিটার ২ যান পাঠানোর পরিকল্পনা হয়ে গেছে৷ এর সাথে যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতেই পূর্বসূরিকে অকেজো করা হয়৷

সূত্র: উইকিপিডিয়া: লুনার অরবিটার
Category: articles

মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩

রাতের আকাশের দ্বাদশ উজ্জ্বল তারা। আগস্ট মাস দেখার সেরা সময়৷ রাত নয়টার দিকে প্রায় মাথার উপর জ্বলজ্বল করে তারাটা৷ পাশেই আছে আরও দুটি উজ্জ্বল তারা অভিজিৎপুচ্ছ। তিনটি তারা মিলে একত্রে নাম সামার ট্রায়াঙ্গল৷ শ্রবণার অবস্থান ঈগলমণ্ডলে৷ রূপকথার কাল্পনিক ঈগলের বুকে এর অবস্থান৷


সমার ট্রায়াংগেল ও শ্রবণা তারা। 





পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৬.৮ আলোকবর্ষ৷ মানে পৃথিবীর অন্যতম নিকট প্রতিবেশী এক তারা। বর্তমানে প্রধান ক্রম দশায় আছে৷ সূর্যের মতো হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাচ্ছে৷ আলটেয়ার বা শ্রবণার দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে।


সূর্য কীভাবে জ্বলে?

তারাটা প্রচণ্ড জোরে ঘোরে। নিজের অক্ষের ওপর ঘুরে আসতে এর মাত্র দশ ঘণ্টা লাগে৷ যেখানে সূর্যের লাগে প্রায় ২৭ দিন। আর পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা৷ মানে পৃথিবী একবার ঘুরতে ঘুরতে তারাটা ঘোরে দুইবারের বেশি৷ দ্রুত ঘূর্ণনের কারণে শ্রবণার মেরু অঞ্চল চেপে গেছে৷ বিষুব অঞ্চলে ফুলে উঠেছে৷ এ ধরনের আকৃতিকে বলে অবলেট স্ফেরয়েড (oblate spheroid)৷ এসব আকৃতিতে মেরু অঞ্চল চেপে থাকে। বিষুব এলাকার ব্যাসার্ধ মেরু এলাকার চেয়ে বেশি হয়। শ্রবণার ক্ষেত্রে তা বিশ ভাগেরও বেশি৷ অন্যদিকে মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ হলে নাম হয় প্রোলেট স্ফেরয়েড (prolate spheroid)।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তারাটার বিষমতা। বিষম তারার অভাব নেই আকাশে। এসব তারার উজ্জ্বলতা কিছুদিন পরপর কমে-বাড়ে৷ তবে শ্রবণা এখানেও একটু ব্যতিক্রম৷ অন্যদের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন ঘটে মোটামুটি নিয়মিত৷ সেখানে শ্রবণার উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের হার আছে নয় নয়টা৷ খালি চোখে অবশ্য সে তারতম্য বোঝা যাবে না৷ এ বিষমতার সাথে সম্ভবত এর ঘূর্ণনের সম্পর্ক আছে৷ শ্রবণা একটি ডেল্টা স্কুটি ধরনের বিষম তারা৷

শ্রবণার আভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি সূর্যের দশ গুণ। সূর্যের জায়গায় এ তারাটা থাকলে পৃথিবী বাসের অযোগ্য হত৷ ভর সূর্যের ১.৮ গুণ। চওড়াও প্রায় দ্বিগুণ৷ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬৬২৬ থেকে ৮৮২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ বয়স দশ কোটি বছর। যেখানে সূর্যের বয়স পাঁচশ কোটি বছর৷ টেলিস্কোপে এর তিনটি অনুজ্জ্বল সঙ্গী তারা দেখা যায়৷ অল্প কিছু তারারই করা ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। শ্রবণা তার অন্যতম। এদের মধ্যে আরও আছে জ্যেষ্ঠা, রেগুলাস, মাইরা ইত্যাদি৷

ঈগলমণ্ডল ও শ্রবণা তারা। মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এটা।

আগস্টের রাতের আকাশ শ্রবণা দেখার সেরা সময়৷ আপাত উজ্জ্বলতা +০.৭৬। ফলে মেঘমুক্ত রাতের আকাশে খালি চোখে সহজেই দেখা যাবে৷ সামার ট্রায়াঙ্গলের তিন তারার মধ্যে শ্রবণা সবার পরে উদিত হয়। এই ত্রিভুজের উপর দিয়েই চলে গেছে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার দৃশ্যমান বাহুটা৷ দেখতে আসলেও নদীর মতো। নদীর দুই তীরে আছে অভিজিৎ ও শ্রবণা৷ পেটের মধ্যে আছে ত্রিভুজের অপর তারা পুচ্ছ৷ শ্রবণার দুই পাশে আছে দুটি অনুজ্জ্বল তারা৷ অভিজিতের বিষুবলম্ব +৩৮, আর শ্রবণার +৮। মানে অভিজিতের চেয়ে শ্রবণা আছে দক্ষিণে। বাংলাদেশ থেকে দেখতে দুটো তারাই সোজা উপর থেকে ১৫ ডিগ্রি করে দূর দিয়ে চলে। অভিজিত উত্তরে আর শ্রবণা দক্ষিণে৷ কারণ বাংলাদেশের সোজা উপরের আকাশের বিষুবলম্ব +২৩৷ মিলিয়ে নিন। কী দারুণ!


তারা চিনতে বিষুবলম্ব


নক্ষত্রটার বৈজ্ঞানিক নাম আলফা অ্যাকুইলি৷ আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির দেওয়া নাম আলটেয়ার (Altair)৷ শব্দটা এসেছে আরবি নাম আল নিসর আল তাইর থেকে। অর্থ উড়ন্ত ঈগল।

Category: articles

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

সত্যিই কি ভিনগ্রহে প্রাণ আছে? আর তারাই পাঠিয়েছিল ১৯৭৭ সালের বেতার সঙ্কেত? সেটা নিশ্চিত করে বলার কোনো জো নেই৷ তবু ব্যাপারটা যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক৷


ওয়াও সিগনালের তীব্রতার মান 6EQUJ5


১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইহো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগ ইয়ার টেলিস্কোপে ধরা পড়ল বিস্ময়কর এক বেতার সঙ্কেত৷ সঙ্কেত প্রাপ্তির কয়েকদিন পোর জ্যোতির্বিদ জেরি এহম্যান সঙ্কেতটার ব্যতিক্রমী আচরণ খেয়াল করেন। লিপিবদ্ধ সঙ্কেতের পাশে লেখেন WOW! এ থেকেই নাম ওয়াও সিগনাল।

এটি 6EQUJ5 সঙ্কেত হিসেবে পরিচিত। অনেকে এটাকেই একটা বার্তা বা কথামাল মনে করেন। বাস্তবে এটা নিছক সময়ের সাথে সঙ্কেতের তীব্রতার পরিবর্তনের মান। তবুও ব্যতিক্রমী এ সঙ্কেতকে অনেকেই ভিনগ্রহের বার্তা ভাবতে পছন্দ করেন। রহস্যময় এ সঙ্কেত আসে স্যাজিটেরিয়াস বা ধনুমণ্ডল থেকে। যেদিকে আছে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্র৷

ওয়াও সিগনালের উৎস স্যাজিটেরিয়াস বা ধনুমণ্ডল



২০১৭ সালে একদল গবেষক বলেন, রহস্যময় এ সঙ্কেত তৈরি হয়েছে সম্ভবত ধূমকেতুর কারণে৷ এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণার নেতৃত্ব দেন সেন্ট পিটার্সবাগ কলেজের অধ্যাপক অ্যান্টোনিও প্যারিস৷ তিনি ও তাঁর দল দেখেন, ১৯৭৭ সালের ঐ সময়টিতে আকাশের নির্দিষ্ট দিক দিয়ে অতিক্রম করছিল দুটি ধূমকেতু৷ খটমটে নামগুলো ২৬৬পি/ক্রিস্টেনসন ও পি/২০০৮ ওয়াইটু৷ গবেষকদের ধারণা ধূমকেতুদের কোনোটির হাইড্রোজেন মেঘ থেকে এসেছে বেতার তরঙ্গ৷ ওয়াও সিগনাল। পরে আর এমন সিগনাল না পাওয়ার ব্যাখ্যাও এ তত্ত্ব থেকে মেলে৷ ধূমকেতু ঐ অঞ্চল ছেড়ে অন্য দিকে চলে গেছে৷

গবেষক দল এখানেই থেমে থাকেননি৷ ধূমকেতু ২৬৬পি/ক্রিস্টেনসন এই জায়গায় আবার যাওয়ার সময় আবারও সঙ্কেত পাওয়ার আশায় বসে থাকেন তাঁরা৷ তাঁদের হিসাবে দেখা গেল, ধূমকেতুটা স্যাজিটেরিয়াসের কাছে আসার পরে আবারও ওয়াও সিগনালের মতো সঙ্কেত পাওয়া গেছে৷ তবে ১৯৭৭ সালের সিগনালটার তীব্রতা বেশি ছিল৷ প্যারিসদের ব্যাখ্যা আছে তার পেছনেও৷ তাদের ১০ মিটারের রেডিও টেলিস্কোপটা বিগ ইয়ারের (৫২.৫ মিটার) চেয়ে বেজায় ছোট। আবার নিকট সৌরজগতে এলে ধূমকেতু ভর হারায়। ফলে ৪০ বছর আগের (১৯৭৭-২০১৭) ধূমকেতুর ভরও বেশি ছিল৷ তবে প্যারিসরা নিশ্চিত করে দাবি করেননি যে ওয়াও সিগনালের জন্য ধূমকেতুই দায়ী৷

পরবর্তীতে জ্যোতির্বিদরা ধূমকেতুর দায়ী হবার বিষয়টি উড়িয়ে দেন। ধূমকেতুর পক্ষে এমন সঙ্কেত তৈরি আসলে সম্ভব নয়। আসলে এর গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা আজও মেলেনি। তারাদের মিটিমিটি জ্বলাকেও কেউ দায়ী করেছিলেন। তবে এরও পক্ষে প্রমাণ মেলেনি। একই ধরনের সঙ্কেত আবার পাওয়ার চেষ্টা এহম্যান করেছিলেন বহুদিন ধরে। কিন্তু বৃথাই চেষ্টা। ২০১২ সালে অ্যারেসিবো মানমন্দির থেকে ওয়াও সিগনালের একটি জবাব পাঠানো হয়। এতে ছিল দশ হাজারটি টুইটার মেসেজ। 

সূত্র 
Category: articles

সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

আকাশের উজ্জ্বল তারারা তৈরি করে দারুণ দারুণ নকশা৷ ৮৮টি তারামণ্ডলের একটি ধনুমণ্ডল। এটা রাশিচক্রের অন্যতম মণ্ডল। পরিচিত ধনুরাশি হিসেবে। মণ্ডলের উজ্জ্বল তারাগুলোকে দেখতে চায়ের পট বা টিপটের মতো লাগে৷ রাশিচক্রের এ মণ্ডলে সূর্য অবস্থান করে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি৷


ধনুমণ্ডলের টিপট তারানকশা


তারামণ্ডল বনাম তারানকশা


আগস্ট মাস একে দেখার সেরা সময়। এ সময় রাত নয়টার দিকে ধনুমণ্ডল দক্ষিণ আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে থাকে। বিষুবলম্ব -২৫ ডিগ্রি। ফলে মূলত দক্ষিণ আকাশে হলেও উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ এলাকা থেকেও দেখা যাবে। সর্বোচ্চ ৫৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে দেখতে পাবেন একে৷

আমাদের হোম গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্র এ মণ্ডলের পশ্চিম অংশের দিকে আছে৷ এ কারণেই আকাশের এ দিকটায় প্রচুর নক্ষত্রপুঞ্জ ও নীহারিকা আছে৷ টিপটের কয়েক ডিগ্রি উত্তর দিক দিয়ে চলে গেছে সূর্যপথ৷ যে কাল্পনিক পথে পৃথিবীর আকাশে সূর্য চলাচল করে৷ ধনুর ইংরেজি স্যাজিটেরিয়াস শব্দটা এসেছে ল্যাটিন থেকে। অর্থ তীরন্দাজ৷

সূর্য কখন কোথায় থাকে?

পুরো মণ্ডলকে বিভিন্ন কালচারে সেভাবেই চিত্রায়িত করা হয়েছে৷ ছবি। গ্রিক রূপকথায় স্যাজিটেরিয়াসকে অর্ধমানব, অর্ধঘোড়া হিসেবে কল্পনা করা হয়৷ কল্পিত এ জন্তুর অন্য নাম সেন্টোর। কল্পিত চিত্রে তীরন্দাজ তীর ধনু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ মণ্ডলের তীরটা চলে গেছে পাশের বৃশ্চিকমণ্ডলের বিছার বুক বরাবর৷ সেন্টোর থেকে নাম পেয়েছে আকাশের আরও একটি তারামণ্ডল। সেন্টোরাস নামের মণ্ডলটার অবস্থান আরও অনেকটা দক্ষিণে।

ধনুমণ্ডলের কল্পিত সেন্টোর। অর্ধ-মানব ও অর্ধ-ঘোড়া। 


সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এপসাইলন স্যাজিটেরাই৷ ডাকনাম কোস অস্ট্রালিস। যার অর্থ ধনুর দক্ষিণাংশ৷ দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারার নাম নানকি৷ বেয়ার পদবী সিগমা স্যাজিটেরাই৷ এ মণ্ডলেই আছে দূর আকাশে বিখ্যাত অনেক বস্তু৷ লেগুন নেবুলা, ওমেগা নেবুলা, রেড স্পাইডার ও ট্রিফিড নেবুলা - বিখ্যাত এই নীহারিকাদের পাওয়া যাবে এখানেই৷

ধনুমণ্ডলের তারাচিত্র

মহাকাশযান নিউ হরাইজনস এর গতিপথ বর্তমানে এই মণ্ডলের সামনে৷ বিখ্যাত বেতার সঙ্কেত ওয়াও! সিগনাল এসেছে এ মণ্ডল থেকেই৷ রহস্যময় যে সঙ্কেতকে অনেকে ভিনগ্রহের বাসিন্দার বার্তা মনে করতে পছন্দ করেন৷
Category: articles

শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩

নেবুলা বা নীহারিকা হলো আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ, যাতে থাকে গ্যাস ও ধূলিকণা৷ গ্যাসের মধ্যে মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম৷ লেগুন নেবুলাটা আছে স্যাজিটেরিয়াস বা ধনুমণ্ডলে। বছরের এ সময়ে (আগস্ট) মণ্ডলটা খুব ভাল দেখা যায়৷ পাঁচ হাজার আলোকবর্ষ দূরের এ নীহারিকাটা খালি চোখে খুবই অস্পষ্ট। তবে সাধারণ দুরবিনেই ভেসে ওঠে এর সুন্দর চেহারা৷


লেগুন নেবুলা

আগস্ট মাসে নয়টার দিকে আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে থাকবে। জুলাই। মাসে মধ্যরাতে৷ আর সেপ্টেম্বরে সন্ধ্যায়ই। নেবুলাটার বৈজ্ঞানিক নাম মেসিয়ার ৮ বা এনজিসি ৬৫২৩।

লেগুন নেবুলার দেখা মিলবে টিপত তারানকশার পাশে। ছবি: Earthsky


Category: articles

রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

রাতের আকাশের পঞ্চম উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে দ্বিতীয় উজ্জ্বল। স্বাতীর পরেই সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷ লাইরা বা বীণামণ্ডলে এর অবস্থান। স্বাভাবিকভাবেই মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাও এটিই৷ সূর্য থেকে দূরত্ব মাত্র ২৫ আলোকবর্ষ। 

রাতের আকাশে অভিজিৎ নক্ষত্র। আগস্ট মাসে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। রাত নয়টার দিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় মাথার ওপর। 

জ্যোতির্বিদরা অভিজিৎ নক্ষত্র নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন৷ এ কারণে সূর্যের পর একে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারাও বলেন অনেকে৷ সূর্যের পরে বর্ণালীর ছবি তোলা তারাও অভিজিৎ৷ প্যারালাক্স বা লম্বন পদ্ধতিতে দূরত্ব মাপা অন্যতম প্রথম তারাও এটি৷ খৃষ্টপূর্ব ১২,০০০ সালে তারাটি ছিল মেরু বা ধ্রুবতারা৷ আবারও হবে ১৩,৭২৭ বছর পরে৷ কারণ আর কিছুই নয়। পৃথিবীর মেরুরু আবর্তন৷ ঘুরন্ত লাটিমের মতো পৃথিবীও ঘুরতে ঘুরতে অক্ষ পাল্টায়৷ 





অভিজিৎ নক্ষত্রের বয়স সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ মজার ব্যাপার হলো এর জীবনকাল বাকিও আছে সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ এর কারণ অভিজিৎ সূর্যের ২.১ গুণ ভারী৷ ভারী নক্ষত্রদের জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এ কারণেই সূর্যের চেয়ে আগে প্রধান ক্রম দশা পার করবে অভিজিৎ৷ সবমিলিয়ে প্রধান ক্রম দশা প্রায় একশ কোটি বছর৷  তারাটা সেকেন্ডে ২৩৬ কিলোমিটার বেগে নিজের অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। ১২.৫ ঘণ্টায় একবার পুরোটা সম্পূর্ণ ঘোরা হয়ে যায়৷ এ কারণে  স্বাভাবিকভাবেই বিষুব অঞ্চল অনেকটা ফোলা। অভিজিৎ বিষম তারা। মানে উজ্জ্বলতা সবসময় এক থাকে না। 

সামার ট্রায়াঙ্গল তারানকশার অন্যতম তারা অভিজিৎ


বৈজ্ঞানিক নাম আলফা লাইরি৷ সাধারণত মণ্ডলের উজ্জ্বলতম তারার নাম হয় আলফা। সে হিসেবেই এই নাম৷ ইংরেজি নাম ভেগা (Vega)। শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ ওয়াকি থেকে৷ যার অর্থ পড়ন্ত বা অবতরণকারী (ঈগল)৷ ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি তারাটার নাম ভেগা রাখে৷ বাংলা নামটি এসেছে ভগবত পুরাণ থেকে। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, নক্ষত্রদের মধ্যে তিনি হলেন অভিজিৎ৷ 


উত্তর গোলার্ধের আকাশে সহজেই দেখা যায়। দেখার সবচেয়ে ভাল সময় জুলাই-আগস্ট। আগস্টে রাত নয়টার দিকে প্রায় ঠিক মাথার ওপর থাকে তারাটা৷ সুপরিচিত তারানকশা সামার ট্রায়াঙ্গলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা অভিজিৎ৷ তিন তারা মিলে তৈরি করেছে একটি সমকোণ৷ আর সমকোণের শীর্ষেই আছে অভিজিৎ৷ পশ্চিম-উত্তর দিকে একটু গেলেই পাওয়া যাবে সপ্তর্ষি৷ একটু চেষ্টাতেই তাই অভিজিৎকে চিনে নেওয়া যাবে৷ আবার সপ্তর্ষি দিয়েও সহজেই একে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ অভিজিতের বিষুব লম্ব +৩৮.৭৮। ফলে বাংলাদেশ থেকে দেখলে মাথার সোজা উপর থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রি উত্তর দিয়ে তারাটা রাতের আকাশে পশ্চিমে যেতে থাকে। দক্ষিণে সর্বোচ্চ ৫১ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা সম্ভব। তার দক্ষিণে গেলে আর দেখা যাবে না একে। অ্যান্টার্কটিকা বা এমনকি চিলি থেকেও তারাটা দেখা যাবে না। 



সপ্তর্ষি ও ধ্রুবতারা দিয়ে অভিজিৎ খুঁজে নিতে পারেন

Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...