Advertisement

বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

গ্রহ-নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে ঘূর্ণন আছে দুই রকম। একটি হলো নিজের অক্ষের সাপেক্ষে। এর কেতাবি নাম আবর্তন (rotation)। যেমন পৃথিবীর নিজ অক্ষের সাপেক্ষে একবার ঘূর্ণনে এক দিন হয়। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই ঘূর্ণনকে তাই আহ্নিক গতিও (Diurnal motion) বলে। আর অন্য কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে যে ঘূর্ণন তার নাম প্রদক্ষিণ (revolution)। যেমন পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এক বার ঘুরে এলে হয় এক দিন।

আরও পড়ুন
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

আমরা এর আগে বলেছিলাম, সূর্য আমাদের মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে। বেগ ঘণ্টায় ৮ লক্ষ কিলোমিটার বা ৫ লক্ষ মাইল। এত বড় বেগেও পুরো ছায়াপথকে ঘুরে আসতে সূর্যের সময় লাগে প্রায় ২৫ কোটি বছর।

আরও পড়ুন
☛ মিল্কিওয়েকে ঘিরে সূর্যের গতি

তাহলে বোঝা গেল, সূর্য প্রদক্ষিণ করছে। তাহলে আবর্তনও কি করছে? আসলে বলতে গেলে সব মহাজাগতিক বস্তুই আবর্তিত হচ্ছে। তবে সূর্যের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু গোলমেলে। কেন? পৃথিবীর কথা একটু চিন্তা করুন। প্রায় ২৪ ঘণ্টায় পুরো পৃথিবী ১ বার নিজ অক্ষেরে চারপাশে ঘুরে আসে। চাই সেটা মেরু অঞ্চল হোক বা বা উত্তর ও দক্ষিণ দুই মেরুর মাঝামাঝিতে থাকা বিষুব অঞ্চলই হোক। সবখানেই ২৪ ঘণ্টায় হয় একটি ঘুর্ণন। একটি বল হাতে নিয়েও যদি একবার ঘুরিয়ে নেন, এর যে কোনো জায়গাই পূর্ণ একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করবে একই সাথে।

সমস্যা হলো সূর্য পৃথিবী বা বলের মতো কঠিন পদার্থ নয়। গঠিত উত্তপ্ত আয়নিত গ্যাসীয় প্লাজমা পদার্থ দিয়ে। ফলে বিষুব অঞ্চলে একটি পূর্ণ আবর্তন হয় ২৪.৪৭ দিনে। কিন্তু বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকলে এই বেগ কমে আসে। মেরু এলাকায় সময় লাগে ৩৮ দিন। সব মিলিয়ে গড় আবর্তন সময় ২৭ দিন।

সৌরজগতের বৃহস্পতি ও শনি গ্রহও অনেকটা সূর্যের মতো। এরা হলো গ্যাস দানব। ফলে এদের ঘূর্ণনেও দেখা যায় সূর্যের মতো একই রকম বিভিন্নতা।

বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যের আবর্তন বেগ 

আরও পড়ুনঃ
☛ বৃহস্পতি কেন নক্ষত্র নয়? 

এই ঘূর্ণের খবর আমরা কীভাবে জানলাম? উত্তর হলো সৌরদাগ (sun spot)। দেখা গেছে, সূর্যের বিশেষ বিশেষ দাগগুলো উল্লেখিত সময় পর একই অবস্থানে ফিরে আসে। ঘূর্ণন নিয়ে আরেকটি মজার ঘটনাও আছে। পৃষ্ঠের ওপরে যেমন ঘূর্ণনের বিভেদ আছে, তেমনি ঘূর্ণনের বিভেদ আছে সূর্যের ভেতরের অঞ্চলেও।

সূর্যের পৃষ্ঠের ঠিক ভেতরের এলাকা, কোর বা কেন্দ্রমণ্ডল ও বিকিরণ অঞ্চল একত্রে একটি কঠিন বস্তুর মতো ঘোরে। অন্য দিকে বাইরের স্তর, পরিচলন অঞ্চল ও আলোকমণ্ডল (photosphere) ঘোরে আবার ভিন্ন বেগে।
সূর্যের বিভিন্ন অঞ্চল।
বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন। 
সূত্রঃ
২। উইকিপিডিয়া 
Category: articles

রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের এই মহাবিশ্ব মূলত তিন ধরণের উপাদান নিয়ে গঠিত। একটি হচ্ছে সাধারণ পদার্থ, যা দিয়ে আমরা তৈরি। টেলিস্কোপের সাহায্যে নির্ণয় করা মহাবিশ্বের সকল দৃশ্যমান বস্তু বিভিন্ন মহাজাগতিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও রয়েছে ডার্ক ম্যাটার। মহাবিশ্বের মোট মহাকর্ষ বলের  প্রায় ৮৫ শতাংশের উৎস হল এই ডার্ক ম্যাটার। তবে এটার উৎপত্তি সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। আরেকটি উপাদানের নাম ডার্ক এনার্জি। ধারণা করা হয়, ডার্ক এনার্জির কারণেই মহাবিশ্ব মহাকর্ষ বলকে উপেক্ষা করে ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে।
মহাবিশ্বের মোট ভরের বণ্টন

উপরে বর্ণিত প্রতিটি উপাদানই মহাশুন্যের স্থানকালকে বাঁকিয়ে দেয়। ঠিক যেমন আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বে বর্ণিত ছিল। এই তিনটি উপাদানের ফলে মহাশুন্যে সৃষ্ট স্থানকালের বক্রতাকে যোগ করলে দেখা যায়, মহাবিশ্ব প্রায় সমতল আকৃতির (Flat Curvature)।

মহাবিশ্বের মোট ভরস-শক্তির বণ্টন

তবে গবেষকদের মতানুসারে সমতল ছাড়াও মহাবিশ্বের আরও অনেক আকৃতি থাকতে পারত। মহাবিশ্বের ঋণাত্মক বক্রতা (Negative Curvature) থাকতে পারত। সেক্ষেত্রে ঋণাত্মক বক্রতাবিশিষ্ট মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ হত ধনাত্মক। আবার মহাবিশ্ব গোলক আকৃতির বা ধনাত্মক বক্রতাসম্পন্ন (positive curvature) হলে এর নীট শক্তির পরিমাণ দাঁড়াত ঋণাত্মক।
মহাবিশ্বের সম্ভাব্য তিন আকৃতি

বিষয়টি আরও ভালভাবে বোঝার জন্য আমরা মহাবিশ্বের কোন ঘূর্ণায়মান বস্তুর কক্ষপথের শক্তির কথা চিন্তা করতে পারি। কক্ষপথে ঘূর্ণনরত কোন মহাজাগতিক বস্তু যে বস্তুকে ঘিরে আবর্তন করে তার সাথে মহাকর্ষ বল দ্বারা আবদ্ধ থাকে। এই আবদ্ধ কক্ষপথের মহাকর্ষ বল ঋণাত্মক। তখন ঘূর্ণায়মান বস্তুটির কক্ষপথ অনেকটাই বৃত্তাকার থাকে। যদি আমরা  ঘূর্ণনরত বস্তুটিকে শক্তি প্রদান করি, তবে এর বেগ বেড়ে যাবে। ফলে এর উপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব কিছুটা কমবে। যার কারণে এর কক্ষপথের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে এবং এর আকৃতি বৃত্তাকার থেকে ধীরে ধীরে উপবৃত্তাকার হতে থাকবে।

যত বেশি শক্তি প্রদান করা হবে, উপবৃত্তাকার কক্ষপথের দৈর্ঘ্য ততই বাড়তে থাকে। এভাবে শক্তি বাড়াতে থাকলে দেখা যাবে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি প্রদানের ফলে ঘূর্ণায়মান বস্তুটি এত বেশি বেগ অর্জন করে ফেলে যার কারণে সেটি আর মহাকর্ষের টানে কক্ষপথে ফিরে আসে না। প্রকৃতপক্ষে বস্তুটি অসীম মহাবিশ্বে মুক্ত হয়ে যাবে। কক্ষপথ থেকে মুক্ত হবার মুহূর্তে ঘূর্ণায়মান বস্তু এবং যে বস্তুটিকে কেন্দ্র করে সেটি ঘুরছিল তাদের মোট মহাকর্ষীয় শক্তির পরিমাণ হবে শুন্য। তখন ঘূর্ণনরত বস্তুটির চলার পথের আকৃতি হবে প্যারাবলা বা পরাবৃত্ত (parabola)।

বিভিন্ন আকৃতির কক্ষপথ

ঘূর্ণনরত বস্তুটিকে আরও শক্তি প্রদান করলে সেটি মহাকাশে অসীম বিস্তৃতিতে চলতে থাকবে। তখন এর মহাকর্ষীয় শক্তি হবে ধনাত্মক। সে সময়ে বস্তুটির আবক্র পথের আকৃতি হবে হাইপারবোলা বা পরাবৃত্ত।

আমরা এই আকারগুলো বাড়িতে হরহামেশাই দেখতে পাই।  একটি টর্চলাইট বা ফ্ল্যাশলাইটের কথা আলোচনা করা যাক। এটি থেকে নিঃসরিত আলোকরশ্মি যখন কোন দেয়াল বা বস্তুর উপর পড়ে তখন আলোকরশ্মিগুলো কণিকের বিভিন্ন আকৃতি গঠন করে। যদি টর্চলাইটকে একেবারে সোজাসুজিভাবে রেখে দেয়ালে আলো ফেলা হয়,তখন আলোকরশ্মি দেয়ালে বৃত্ত তৈরি করবে।
বৃত্তাকার আলো  
টর্চলাইট থেকে দেয়ালে কিছুটা তির্যকভাবে আলো ফেললে আলো যে গঠন দেখাবে,সেটা হবে উপবৃত্ত।
(নীচের ছবি)
উপবৃত্তাকার আলো 
টর্চলাইটকে দেয়ালের সাথে সমান্তরালে রাখলে দেয়ালে যে আলোকরেখার অবয়ব দেখা যায়, সেটা হবে পরাবৃত্ত। (নীচের ছবি)
পরাবৃত্তাকার আলো 

টর্চলাইটটিকে সমান্তরালে রেখে কিছুটা তির্যকভাবে দেয়ালে আলোকরশ্মি ফেললে দেয়ালে যে আলোকচিত্র দেখা যাবে, সেটাকেই বলে হাইপারবোলা বা অধিবৃত্ত (বাসায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন)।

অধিবৃত্তাকার আলো 
সুতরাং কণিকের এই বিভিন্ন অংশ কক্ষপথ এবং কক্ষপথ সম্পর্কিত বস্তুদ্বয়ের শক্তির সাথে জড়িত। যদি কক্ষপথের  প্যারাবোলা আকৃতির মত মহাশুন্য সমতল  হয়, তাহলে পুরো মহাবিশ্বের সর্বমোট নীট শক্তির পরিমাণ হবে শুন্য।

মহাবিশ্বের আকৃতি যদি সমতল না হয়ে অন্য কিছু (ধনাত্মক বক্রতা বা ঋণাত্মক বক্রতা বিশিষ্ট) হত, তবে এর সর্বমোট শক্তির পরিমাণ হয় ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক হত। কিন্তু মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ বাস্তবিকঅর্থে শুন্য।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে,মহাবিশ্বের আকৃতি সমতল হওয়া আমাদের জন্য ভালো নাকি খারাপ? আসলে সমতল মহাবিশ্বের ধারণার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান মিলেছে। সমতল মহাবিশ্বের তত্ত্ব থেকে বোঝা যায়, শুন্য থেকেই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। কারণ শুন্যের মোট শক্তি শুন্য। ধনাত্মক বা ঋণাত্মক কোন শক্তির কারণে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলে তা অনেক বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নের জন্ম দিত। যেমন, সেই শক্তির উৎস কী? যদি কিছু পরিমাণ নীট শক্তি মহাবিশ্বে অবশিষ্ট থাকত, তবে সেটি কতটুকু? কেন অতটুকু শক্তি থাকবে? কেন তার বেশি বা কম নয় ?
কিন্তু মহাবিশ্বের আকৃতি সমতল হওয়ার কারণে বিজ্ঞানীদের কখনোই এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে হয়নি।

সূত্রঃ
১। https://www.youtube.com/watch?v=i4UpvpHNGpM
২। https://www.youtube.com/watch?v=veU6hK3jMH4
৩। http://curious.astro.cornell.edu/about-us/103-the-universe/cosmology-and-the-big-bang/geometry-of-space-time/600-why-is-the-universe-flat-and-not-spherical-advanced
৪। https://blogs.scientificamerican.com/degrees-of-freedom/httpblogsscientificamericancomdegrees-of-freedom20110725what-do-you-mean-the-universe-is-flat-part-i/
৫। https://en.wikipedia.org/wiki/Shape_of_the_universe
Category: articles

রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

দুই উপগ্রহসহ হাউমেয়া 
সৌরজগতের পাঁচ বামন গ্রহের অন্যতম হাউমেয়া। কক্ষপথ সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুনেরও বাইরে। ২০০৪ সালে জ্যোতির্বিদ মাইক ব্রাউনের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধানী দল হাউমেয়াকে খুঁজে বের করেন। তবে এটি বামন গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ভর প্লুটোর তিন ভাগের এক ভাগ ও পৃথিবীর ১৪০০ ভাগের এক ভাগ। সূর্যকে ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ২৮৪ বছর। এখন পর্যন্ত এর দুটো উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। বামন গ্রহটিতে এক দিন হয় মাত্র চার ঘণ্টায় । কারণ হলো দ্রুত আবর্তন। ১০০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি চওড়া সৌরজগতের অন্য যে কোনো বস্তুর চেয়ে এটি দ্রুত ঘুরে।

সূত্রঃ নাসা সোলার সিস্টেম 
Category: articles

শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭


এখন পর্যন্ত জানা মতে বামন গ্রহ প্লুটোর উপগ্রহ আছে পাঁচটি। এদের মধ্যে হাইড্রার কক্ষপথ সবচেয়ে দূরে। আবিষ্কৃত হয় ২০০৫ সালে। একই বছর আবিষ্কৃত হয় আরেক উপগ্রহ নিক্স। ২০১৫ সালে নিউ হরাইজনস যান প্লুটোর পাশ দিয়ে যাবার সময় হাইড্রাকেও দেখে যায়। তবে এটি আবিষ্কৃত হয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে। গ্রিক রূপকথার নয় মাথাওয়ালা সাপ হাইড্রার নাম অনুসারে এর এ নাম রাখা হয়। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

 ১৯২৮ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানী পল ডিরাক প্রথম বলেছিলেন, ইলেকট্রনের চার্জ ধনাত্মক-ঋণাত্মক দুটোই হতে পারে। আর ধনাত্মক চার্জধারী (e$^+$) এই ইলেকট্রনেরই নাম পজিট্রন। অন্য নাম অ্যান্টিইলেক্ট্রন। প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯২৯ সালে।
ইলেকট্রন ও তার প্রতিকণা পজিট্রন

ভর ইলেক্ট্রনের ভরের সমান।  একে বিটা প্লাস ($\beta^+$) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নির্গত হয় তেজ্বস্ক্রিয় ক্ষয়ের ফলে । আবার কখনও কখনও ফোটন বা একক তরঙ্গের আলো কোন ধাতব পরমানুর সাথে সংঘর্ষ করলেও এটি নির্গত হতে পারে। একটি প্রোটন ভেঙ্গে সধারণত একটি পজিট্রন একটি নিউট্রন ও কিছু শক্তি নির্গত হয়। পজিট্রন এর সাথে সংঘর্ষে প্রায় ১০২৪ কিলোইলেকট্রনভোল্ট শক্তি উৎপন্ন হয়।

পজিট্রন প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুভাবেই উৎপন্ন হয়। মজার ব্যপার হলো, এটি প্রত্যেক মানুষের শরীর থেকেও নির্গত হয়! প্রাকৃতিক উৎস হলো মানব শরীরের পটাসিয়াম-৪০ আইসোটোপ। এ আইসোটোপ মানব দেহের সবচেয়ে প্রাচীন। জেনে অবাক হবেন যে ৭০ কেজির একজন মানব শরীরে প্রতিদিন ৪০০০টি পজিট্রন পটাসিয়াম-৪০ আইসোটোপ থেকে উৎপন্ন হয়। এছাড়াও কলার থেকেও পাওয়া যায় কিছু পজিট্রন।

পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে ইলেকট্রন ও পজিট্রন তৈরি

কৃত্রিমভাবে ফ্লোরিন-১৮, অক্সিজেন-১৮, কার্বন-১৪, নাইট্রজেন-১৬ ও আরও কিছু পরমাণু আইসোটোপ তৈরী করে তা থেকে প্রাপ্ত পজিট্রন মানব দেহের কিছু রোগ নির্ণয়ে ব্যবহার হয়। অতিরিক্ত পজিট্রন (প্রায়-১০০০০০টি বা এর বেশী) কিন্তু মানব শরীর ও বিভিন্ন জীবের জন্য হুমকি স্বরুপ। যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আরও পড়ুনঃ 
☛ পারমাণবিক কণারা চার্জ ও ভর পেল কোথায়?
Category: articles

বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৭

আজ ৮ নভেম্বর। 
১৬৫৬ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজ জ্যোতির্বিদ এডমান্ড হ্যালি। 

হ্যালির ধূমকেতুর কক্ষপথ হিসাব করার জন্যে তিনি সবচেয়ে বিখ্যাত। বলাই বাহুল্য ধূমকেতুটির নামকরণ তাঁর নামেই হয়েছে। একই সাথে তিনি ছিলেন গণিত, ভূ-পদার্থ, আবহাওয়া ও পদার্থবিদ। 

এডমান্ড হ্যালি

জন্ম ৩৬১ বছর আগে। ইংল্যান্ডের লন্ডনের কাছের একটি গ্রামে। বাবা সাবানের ব্যবসা করে ধনী হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হ্যালির ঝোঁক ছিল গণিতের দিকে। শুরুতে অধ্যয়ন করেন সেন্ট পলস স্কুলে। ১৬৭৩ সালে চলে আসেন অক্সফোর্ডের কুইনস কলেজে। ছাত্র থাকা অবস্থাতেই তিনি সৌরজগত ও সৌরদাগ (sunspot) নিয়ে পেপার প্রকাশ করেন। 

সপ্তদশ শতকটি উদীয়মান বিজ্ঞানীদের জন্যে ইংল্যান্ড ছিল খুব অনুকূল জায়গা। লন্ডনের রয়েল সোসাইটি এ শতকেই (১৬৬০) প্রতিষ্ঠিত হয়। হ্যালি তখন ছোট্ট এক শিশু। বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা এখানে মিলিত হতেন প্রতি হপ্তায়। জন ফ্ল্যামস্টিড ছিলেন প্রথম অ্যাস্ট্রোনোমার রয়েল। 

১৬৭৩ সালে কুইনস কলেজে এসে ফ্ল্যামস্টিডের সাথে সাক্ষাৎ হয় হ্যালির। বিভিন্ন সময়ে ফ্ল্যামস্টিডের সাথে দেখা করে তিনি জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। 

এ সময় ফ্ল্যামস্টিড একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলেন। উত্তর আকাশের তারাগুলোর একটি তালিকা চাই। তবে খালি চোখে নয়। এত দিনে টেলিস্কোপ চলে এসেছে। হ্যালি ভাবলেন, আমিও একই কাজ করব। তবে উত্তরের বদলে দক্ষিণের আকাশ নিয়ে। 

১৬৭৬ সালের নভেম্বরে তিনি দক্ষিণে যাত্রা করলেন। চুকিয়ে আসলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠটিও। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি জাহাজে চেপে চলে এলেন সেন্ট হেলেনা দ্বীপে। দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে। সবচেয়ে কাছের ভূখণ্ড রিও ডি জেনিরো থেকে আড়াই হাজার মাইল পুবে। বাবার অঢেল টাকা থাকায় ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হল না। 

খারাপ আবহাওয়ার কারোণে কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছিল। কিন্তু তবুও তিনি কিন্তু খালি হাতে ঘরে ফেরেননি। ১৬৭৮ সালে ফিরে আসার সময় তাঁর কাছে ছিল ৩৪১ টি তারার তথ্য। পর্যবেক্ষণ করেন বুধ গ্রহের দুর্লভ একটি অতিক্রমণও (transit)। 

তাঁর প্রকাশিত নক্ষত্রের এই ক্যটালগ ছিল একটি বড় সাফল্য। এই ধরনের কাজ এটাই প্রথম। দক্ষিণের নক্ষত্রগুলোকে এর আগে কেউ টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করেনি। জানতে চেষ্টা করেনি তাদের অবস্থান। জ্যোতির্বিদ হিসেবে এটাই হ্যালির প্রথম সাফল্য। একই বছর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। নির্বাচিত হন রয়েল সোসাইটির ফেলো। 

১৬৮৪ সালে আসেন কেমব্রিজে। দেখা হয় নিউটনের সাথে। নিউটন ও রবার্ট হুকসহ রয়েল সোসাইটির কয়েকজন বিজ্ঞানী তখন গ্রহদের গতির ব্যাখ্যা খুঁজছিলেন। হ্যালিও যোগ দিলেন এই দলে। মজার ব্যাপার হল, অন্য সবার চেয়ে তাঁর বয়স কম। জানার চেষ্টা চলছে কীভাবে ও কেন গ্রহরা সূর্যের চারদিকে ঘোরে। সবাই চাচ্ছিলেন অন্যদের আগে কীভাবে সমাধান বের করে ফেলা যায়। দরকার এমন একটি মডেল যার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যাবে যে কেন গ্রহরা সূর্য থেকে দূরে ছিটকে যায় না, বা সোজা সূর্যের দিকে চলে যায় না। 

হ্যালি ও হুক এর একটি সমাধান পেলেন। তাঁরা একটি বলের প্রস্তাব করলেন, যেটি একটি গ্রহকে সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে ধরে রাখবে। এই বল দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতে কমবে। এই নিয়মকেই এখন আমরা বিপরীত বর্গীয় সূত্র (inverse-square law) হিসেবে জানি। 

হ্যালি ও হুক ঠিক পথেই ছিলেন। কিন্তু তাঁরা এর একটি তত্ত্বীয় রূপ তত্ত্ব দাঁড় করাতে ব্যর্থ হলেন, যা দিয়ে পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করা যাবে। হ্যালি গেলেন নিউটনের কাছে। তাঁর মতামত তুলে ধরলেন। এও বললেন, যে তিনি বিষয়টি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নিউটন হ্যালির কাছ থেকে অনুপ্রেরণ নিলেন। এর জের ধরেই প্রকাশিত হল তাঁর ম্যাথমেটিক্যাল প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল ফিলোসফি, সংক্ষেপে যার নাম প্রিন্সিপিয়া। 

রয়েল সোসাইটি এই প্রবন্ধের সম্পাদনার ভার দিলেন হ্যালিকেই। এর কৃতিত্ব নিয়ে নিউটন ও হুকের দ্বন্দ হ্যালি খুব কৌশলে সমাধান করেন। তিনি এর প্রুফ দেখেন ও লাতিন ভাষায় এর ভূমিকা লিখে দেন। 

হ্যালি আবহাওয়া বিদ্যায়ও অবদান রাখনে। ১৬৮৬ সালে তিনি একটি বিশ্ব মানচিত্র তৈরি করেন। এতে ছিল বিপুল পরিমাণ তথ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বায়ুগুলো সম্পর্কে এই মানচিত্রে তথ্য ছিল। মনে করা হয়, এটাই আবহাওয়াবিদ্যার প্রথম প্রকাশিত মানচিত্র। 

দুই একটি বিষয়ে অবদান রেখে হ্যালির যেন মন ভরছিল না।  তিনি কাজ করতে লাগলেন বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে। মৃত্যুর হারের সাথে বয়সের সম্পর্ক নিয়েও তিনি কাজ করেন। তাঁর এই অবদান পরে জীবন বিমার জন্যে কাজে লাগে। 

১৭০৪ সালে অক্সফোর্ডে জ্যামিতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর প্রকাশ করেন ধূমকেতু নিয়ে গ্রন্থ- আ সিনোপসিস ইন অ্যাস্ট্রোনমি অফ কমেটস। এতে তিনি ২৪ টি ধূমকেতুর কক্ষপথের বিবুরণ লেখেন। ১৩৩৭ থেকে ১৬৯৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছিল এই ধূমকেতুগুলো। 

এদের মধ্যে তিনটি ধূমকেতু তাঁর খুব নজর কাড়ে। এগুলো দেখা গিয়েছিল যথাক্রমে ১৫৩১, ১৬০৭ ও ১৬৮২ সালে। তিনি বললেন, এগুলোর মধ্যে এত বেশি মিল দেখা যাচ্ছে যে এরা আসলে একই ধূমকেতু না হয়েই যায় না। আর ফিরে আসে ৭৬ বছর পর পর। এটা ছিল যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত। তিনি পূর্বাভাস দিলেন, ধূমকেতুটি আবার ফিরে আসবে। সালটি হল ১৭৫৮। তিনি বললেন, 
১৪৫৬ সালে... পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে একটি ধূমকেতুকে দেখা গিয়েছিল। অতএব, আমার সিদ্ধান্ত হল, ১৭৫৮ সালে এটি আবারও ফিরে আসবে। 
হ্যালির ধূমকেতু 
১৭২০ সালে হ্যালি ফ্ল্যামস্টিডের স্থলাভিষিক্ত হন। নিয়োগ পান দ্বিতীয় অ্যাস্ট্রোনোমার রয়েল হিসেবে।

তিনি ৮৫ বছর বেঁচে ছিলেন। মারা যান ১৭৪২ সালে। তাঁর পূর্বাভাসকৃত ধূমকেতু ঠিকই পরে দেখা যায়। তবে ১৭৫৮'র বদলে ১৭৫৯। কারণ, ওটা ঠিক ৭৬ বছর ফেরে না। একটু এদিক-ওদিক হয়। সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে, আবার ২০৬১ সালে দেখা যাবার কথা রয়েছে। তত দিনে বেঁচে থাকলেও আপনি বুড়ো হয়ে যাবেন। 

হ্যালির ধূমকেতু একবার দেখার পর ভাগ্যক্রমে আবারও দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে যাবেন। 


আরো পড়ুনঃ

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/today-in-science-edmond-halley-nov-8-1656
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Edmond_Halley
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Royal_Society
৪। 
Category: articles

সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭

আমরা দেখি, গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রদের আকৃতি হয় গোলাকার (spherical)। অবশ্য মেরু অঞ্চলের দিকে কিছুটা চাপা। দুটো বিষয়ই আমরা আলোচনায় রাখবো। 

আপনাকে এক খণ্ড পাথর দেওয়া হলে একে আপনি ইচ্ছে মতো কেটে যে কোন আকৃতি দিতে পারবেন- ঘনক, পিরামিড বা গোলক ইত্যাদি। নিজের মতো রেখে দিলে এটি আগের মতই থাকবে। গোলকাকার হয়ে যাবে না। কিন্তু ধরুন, ঐ পাথরটির বদলে আপনাকে পৃথিবীর সমান একটা বস্তু দেওয়া হল। একে কেটে কুটে কি আপনি পিরামিড বানাতে পারবেন?

পারবেন না। কারণ, এখন বস্তুটা যথেষ্ট ভারী। এর অভিকর্ষ যথেষ্ট শক্তিশালী। বস্তুর আকার যত বড় হবে, এর অভিকর্ষও তত বড় হবে। পূর্বোক্ত পাথরখণ্ডটিরও অভিকর্ষ (Gravity) আছে। কিন্তু অতি নগণ্য, অকার্যকর।
বিভিন্ন গ্রহ 
মনে করুন, আপনি পৃথিবীর বুকে খুব উঁচু একটা ভবন নির্মাণ করবেন। তাহলে, এর ভিত্তি হতে হবে যথেষ্ট মজবুত। তা না হলে এটা নিজের ভারে তথা পৃথিবীর অভিকর্ষের চাপে ধসে পড়বে। কোনো গ্রহ, উপগ্রহ বা নক্ষত্রে যদি অনেক উঁচু কোন স্থাপনা থাকতো, তবে তা অভিকর্ষের টানে গুঁড়িয়ে যেত। ভাবছেন, তাহলে বুর্জ খলিফার মত সুউচ্চ স্থাপনা টিকে আছে কিভাবে? হ্যাঁ, এর ফাউন্ডেশান বা ভিত্তি যথেষ্ট মজবুত এবং উচ্চতা তত বেশি নয় যত হলে ধসে পড়ত।  পাহাড়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

একটু খেয়াল করুনঃ 
গ্রহ যদি হতো ঘনকের মতো, তার অর্থ হতো এর কোণাগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু। যেহেতু গ্রহ, নক্ষত্রদের অভিকর্ষ খুব বেশি শক্তিশালী সে কারণে এ কোণাগুলো টিকে থাকতে পারে না, ধসে পড়ে। যে কোনো কিছুই মাথা চাড়া দিতে যাবে, অভিকর্ষ তাকে এক হাত দেখে নিবে। ফলে বস্তুটি চার পাশ থেকেই সমান হতে শুরু করবে।

এখন, সবকিছুই টান-প্রাপ্ত হয় কেন্দ্রের দিকে। ফলে, কেন্দ্রের চারপাশে ভর জড় হয়ে গোলকের (sphere) আকৃতি তৈরি হবে। যথেষ্ট শক্তিশালী ভিত্তি না থাকলে সব উঁচু নিচু স্থাপনা সমতল হয়ে যাবে। এ জন্যেই গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্ররা গোলকাকার। যেসব গ্রহাণুর অভিকর্ষ অপেক্ষাকৃত কম, তারা গোল হতে পারে না। হয় এবড়ো থেবড়ো। যেমন, ছবিতে দেখন ৪ ভেস্টা নামক গ্রহাণুর ছবি।


মহাকাশযান ডন থেকে ৪ ভেস্টার ছবি।
গোলকাকার হবার জন্য সর্বনিম্ন ভর কত হতে হবে?
ব্যাপারটা আসলে শুধু ভরের উপরই নির্ভরশীল নয়। বস্তুটা কী দিয়ে তৈরি তাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোন কোন বস্তুকে অন্য বস্তুর চেয়ে সহজে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভর (mass) কম হলেও চলবে। পাথুরে কোন বস্তুর ক্ষেত্রে গোলাকাকৃতি পাবার জন্য ব্যাস প্রয়োজন ৬০০ কিলোমিটার। কিন্তু বরফ নির্মিত বস্তু হলে ব্যাস ৪০০ কিলোমিটার হলেও যথেষ্ট।

যেমন উপরোক্ত গ্রহাণু  ৪ ভেস্টা হল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহাণু। এর আকার হল দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে যথাক্রমে ৫৭৮ ও ৪৫৮ কিলোমিটার। ১৮০৭ সালে হেনরিখ উইলহেম ওলবার্স।

মেরু অঞ্চলে চেপে যায় কেন?
আমরা জানি গ্রহ, উপগ্রহরা যেমন আমাদের পৃথিবীও মেরু অঞ্চলে একটু চাপা তথা কম ব্যাসার্ধ্য বিশিষ্ট। এর কারণ হল পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করেআবর্তন বেগ দুই মেরু মাঝখান তথা বিষুব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আর মেরুতে কম। ফলে,  ঘূর্ণনের কারণে বিষুব অঞ্চলের দিকে বস্তুটা একটু লম্বা হয়ে যায়।

সূত্রঃ
[1] curious.astro.cornell.edu
[২] spaceanswers
[৩] www.universetoday.com
Category: articles

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

পরমাণুর মাঝে যে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব আছে, তা আমরা জানতে পারি বিশ শতকের শুরুর দিকে। এই নিউক্লিয়াস কী দিয়ে গঠিত? কোন কোন কণা আছে এর মাঝে? কণাগুলো কীভাবে এর মাঝে আছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে বিশ শতকের প্রায় অর্ধেকটাই পার হয়ে যায়। অবশেষে যা জানা যায় তা হলো, নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন নামক দুই ধরণের কণা একত্রে আবদ্ধ থাকে। একটি নিউক্লিয়াসে যত সংখ্যক প্রোটনই থাকুক না কেন, তারা যদি একত্রে থাকে তবে সেটা অবশ্যই কোনো না কোনো বলের কারণেই একত্রে আছে।

এই কণাগুলো যে বলের সাহায্যে আবদ্ধ থাকে, সেই বলকে বলা হয় সবল নিউক্লীয় বল। এই বল স্বল্প পাল্লার, অত্যাধিক শক্তিশালী ও আকর্ষণধর্মী। কেননা কুলম্ব সাহেবের স্থির বৈদ্যুতিক সমধর্মী চার্জের পরস্পর বিকর্ষণ করার সূত্র হতে আমরা জানি দুটো প্রোটন খুব নিকটে থাকলে প্রচণ্ড বিকর্ষণ করার কথা। কিন্তু তারা সেটা না করে বরং প্রচণ্ড আকর্ষণের সহিত নিউক্লিয়াসের মাঝে থাকে। আর এই আকর্ষণধর্মী বলটির নামই হলো সবল নিউক্লীয় বল।

সবল নিউক্লীয় বলের সাথে সাথে আরও আছে দুর্বল নিউক্লীয় বল। এই বল আবার কোনো আকর্ষণ-বিকর্ষণে জড়িত থাকে না। এর কাজ হল নিউক্লিয়াসের তেজস্ক্রিয় ভাঙন ঘটানো তথা নিউক্লিয়াস থেকে বিটা রশ্মি ক্ষয় করা। দূর্বল নিউক্লীয় বলকে তাই বল না বলে দুর্বল নিউক্লীয় মিথষ্ক্রিয়া বলাটা বেশি উত্তম। এই দুর্বল নিউক্লীয় মিথস্ক্রিয়া পদার্থবিদ্যার CP-প্রতিসাম্য লঙ্ঘন করে। প্রতিসাম্য হলো পদার্থবিদ্যার একটা কারসাজি। CP-প্রতিসাম্য হলো চার্জ ও প্যারিটি নামক দুই প্রতিসাম্যর মিশ্র প্রতিসাম্য। এর বক্তব্য হলো, একটি কণাকে এর প্রতিকণার সাথে অদল-বদল করলেও পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলোর কোনো নড়চড় হবে না। এ অংশের নাম সি প্রতিসাম্য (C symmetry)। আর পি প্রতিসাম্যে মানে, কণাকে এর দর্পণ রূপের সাথে অদল-বদল করলেও সূত্র একই রকম থাকবে।

প্রতিসাম্য বিশ্লেষণ করে কণিকা-প্রতিকণিকা সম্পর্ক, প্রকৃতির নিয়ম ইত্যাদি স্পষ্ট হওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো দুর্বল নিউক্লীয় বল CP-প্রতিসাম্যকে লঙ্ঘন করলেও সবল নিউক্লিয় বল CP-প্রতিসাম্যকে তেমন একটা লঙ্ঘন করে না। তত্ত্বীয়ভাবে এটা খুবই ব্যতিক্রমী ও ব্যাখ্যাহীন একটা ঘটনা। কণা-পদার্থবিদ্যার ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় সবল CP সমস্যা।

এই সবল CP সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিছু বিজ্ঞানী ধারণা করেছেন, অ্যাক্সিয়ন নামক একটি ক্ষেত্র আছে। সবল নিউক্লিয় বলের ক্ষেত্রে CP-প্রতিসাম্য লঙ্ঘনের জন্য দায়ী প্রভাবকগুলোকে এই অ্যাক্সিয়ন ক্ষেত্র নিস্ক্রিয় করে ফেলে। ফলে সবল নিউক্লিয় বল CP-প্রতিসাম্যকে লঙ্ঘন করতে পারে না। ১৯৭৭ সালে বিজ্ঞানী রবার্তো দানিয়েল ও হেলেন কুইন গাণিতিকভাবে দেখান, এই অ্যাক্সিয়ন ক্ষেত্র কীভাবে সবল CP সমস্যা সমাধান করতে পারে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী ওয়াইনবার্গ দেখান যে, এই কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের অস্তিত্ব থাকলে একটি কোয়ান্টা তথা ক্ষেত্রকণাও থাকবে, যার নাম তিনি দেন অ্যাক্সিয়ন কণা। ভবিষ্যদ্বাণীর পর থেকেই গত ৪০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিভিন্নিভাবে এই কণার অনুসন্ধান করছেন। তবুও এখন পর্যন্ত এই কণার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এই কণার একটি ধর্ম হলো - তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাঝে অ্যাক্সিয়ন কণা মুহূর্তের মাঝে ভেঙে গিয়ে ফোটন কণার জন্ম দিবে। এই কণাটির ভর অনেক অনেক কম। দশমিকের পর ৪০ টি শূন্য দিয়ে একটি ১ বসালে যত কেজি হয়, একটি কণার ভর প্রায় তত। কণাটির কোনো চার্জ নেই। তাই একে শনাক্ত করাও দুরূহ কাজ বটে।

তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে (নীচের যুগ্ম পুরু রেখা) অ্যাক্সিয়ন কণা থেকে (উপরের বামপাশের ভাঙা ভাঙা রেখা) ফোটন কণা উৎপত্তির (উপরের ডানপাশের বক্ররেখা) ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম।

জ্যোতিপদার্থবিদ্যার অন্যতম রহস্য ডার্ক ম্যাটারের সম্ভাব্য কারণ হিসেবেও অ্যাক্সিয়নকে দায়ী করা হয়। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে ডার্ক ম্যাটারের কারণ হবে WIMP (Weakly Interacting Massive Particle বা দুর্বল মিথষ্ক্রিয়ায় অংশ নেওয়া ভারী কণা) জাতীয় কোনো কণা, অ্যাক্সিয়ন নয়।

অ্যাক্সিয়ন শণাক্তকরণ অনেক কঠিন হলেও শক্তিশালী তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রে নিয়ে এসে ফোটন কণায় পরিণত করে এই কণার খোঁজ করার জন্য কাজ চলছে। ইউরোপের নিউক্লীয় গবেষণা সংস্থা সার্নও ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের প্রস্তাবিত রূপ।


অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ল্যাবে এই কণাকে নিয়ে গবেষণা হলেও গত বছরের শুরুতে এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) একদল গবেষক শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা নতুন এক পদ্ধতিতে অ্যাক্সিয়ন কণার অনুসন্ধান শুরু করছেন। বেশ কয়েকটি গবেষণা দাবী করেছে ইতোমধ্যেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে এই কণা। যদিও এখনও তা সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

যদি অ্যাক্সিয়ন কণা পাওয়া সম্ভব হয়, তবে কণা-পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির একটি তথা সবল CP সমস্যা অতি দ্রুতই সমাধান করা যাবে। তাই যতদিন অ্যাক্সিয়ন কণা ধরা না দেয়, ততদিন কণা-পদার্থবিদরা না হয় আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষনকেন্দ্র ও এমআইটি-র সেই গবেষক দলের দিকেই তাকিয়ে থাকুক।

১। সি,পি ও টি প্রতিসাম্য - ম্যাট স্ট্রসলার।
২। আন্তর্জাতিক অ্যাক্সিয়ন পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ওয়েবসাইট
১। উইকিপিডিয়াঃ Axion,  CP violation এবং Weakly interacting massive particles
Category: articles

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

পৃথিবীর মহাকর্ষের কারণে আমরা এর বুক আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারছি। কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে যাবার পথে এই মহাকর্ষই আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়িয়ে পৃথিবীকে অব্যাহতভাবে  প্রদক্ষিণ করার জন্যে কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর তীব্র বেগের প্রয়োজন হয়। যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ঘণ্টায় ১৭,৫০০ মাইল (২৮,২০০ কিমি.) বেগে ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। কিন্তু পৃথিবী থেকে বাইরে যেতে হলে আরও বেশি বেগ লাগবে। সেই বেগের নাম মুক্তি বেগ (Escape velocity)।

আরও পড়ুনঃ
মুক্তি বেগের পরিচয়

এ বেগ অর্জনের জন্যে বিপুল জ্বালানি প্রয়োজন। এ কারণেই অ্যাপোলোর মতো আগের রকেটগুলো উৎক্ষেপেণে ব্যবহৃত স্যাটার্ন ভি রকেট খুব ভারী হতো। চাঁদে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট জ্বালানি দিতে হত এতে। ইলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের আধুনিক রকেট সে তুলনায় ছোট। কিন্তু এদেরকে যেতে হবে আরও অনেক দূর পথ। সুদূর মঙ্গল।

মাস্ক খুশি হতে পারেন যে তাঁকে অন্তত বৃহস্পতি গ্রিহ থেকে রকেট নিক্ষেপ করতে হচ্ছে না। সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহে মুক্তি বেগের মান আলাদা। তবে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে সেটা তুলনামূলক অনেক বেশি। রকেট নিক্ষেপ করতে হলে মুক্তি বেগ লাগবে ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার মাইল (২ লক্ষ ১৭ হাজার কিমি.)। কারণ, গ্রহটির একারই ভর অন্য সব গ্রহের মিলিত ভরের দ্বিগুণ।

নিচের দারূণ অ্যানিমেশনটি থেকে বিভিন্ন গ্রহের মুক্তি বেগের ধারণা পাওয়া যাবে। 

যথাক্রমে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ থেকে রকেট নিক্ষেপে জন্যে প্রয়োজনীয় বেগ। 

খেয়াল করলে দেখবেন, বৃহস্পতির মুক্তিবেগ অন্য গ্রহদের চেয়ে অনেক বেশি। আগেই বলেছি, কেন এটা হচ্ছে। এর ভর বেশি হবার কারণে। 
Category: articles

শনিবার, ৪ মার্চ, ২০১৭

এর আগে একটি নিবন্ধে আমরা দেখেছিলাম, মহাকর্ষ কীভাবে কাল দীর্ঘায়ন ঘটায়। আজ এর গাণিতিক হিসাব দেখব আমরা।

মহাকর্ষীয় কাল দীর্ঘায়ন (Gravitational time dilation) অনুসারে, মহাকর্ষীয় বিভবের মান যেখানে বেশি, সে অঞ্চলের সময় তুলনামূলক আস্তে চলবে। অর্থ্যাৎ, মহাকর্ষের উৎসের তুলনামূলক কাছে সময় ধীরে চলে। যেমন, আপনি ভূপৃষ্ঠের যত কাছে থাকবেন,  পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা যে কারও চেয়ে আপনার সময় তত ধীরে অতিবাহিত হবে।


এ ফলাফলগুলো পাওয়া যায় আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব (General theory of relativity) থেকে। এ তত্ত্বের সমীকরণগুলো অতিমাত্রায় জটিল ও সাধারণের জন্যে দূর্বোধ্য। তবে, কাল দীর্ঘায়নের সমীকরণ সে তুলনায় অনেক সরল। বেগ জনিত কাল দীর্ঘায়নের সূত্রের সাথেও এর বেশ মিল আছে।

মহাকর্ষীয় কাল দীর্ঘায়ন এর সূত্র

এখানে to হচ্ছে কোনো ঘটনার প্রকৃত সময় (Proper time)। দর্শক এবং ঘটনা একই মহাকর্ষীয় বিভবে অবস্থান করলে পরিমাপে এ সময় দেখা যাবে। আর tহচ্ছে যে-কোনো ভর থেকে অসীম দূরত্বে অবস্থান করে মাপা সময়। অর্থ্যাৎ, আমরা ধরে নিচ্ছি tf পরিমাপের জায়গায় আলোচ্য ভরের মহাকর্ষীয় প্রভাব নগণ্য।

G হলো নিউটনের সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক। c হলো শূন্যস্থানে আলোর বেগ।  M হচ্ছে আলোচ্য বস্তুর ভর। আর r হলো বস্তুটা থেকে (মানে এর মহাকর্ষীয় কেন্দ্র থেকে) ঘটনার দূরত্ব।

সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের একটি সূত্র বের হয় সোয়ার্জসাইল্ড সমাধান থেকে। এটাই ব্ল্যাক হোলের সমীকরণ। সূত্র থেকে আপনি পাবেন সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের মান।  M ভরের একটি বস্তুর সবটুকু ভর এ ব্যাসার্ধের ভেতরে অবস্থান করলে বস্তুটির মহাকর্ষ এত শক্তিশালী হবে যে, এর থেকে কোনো কিছুই বেরিয়ে আসতে পারবে না। এমনকি আলোও না।

আরও পড়ুনঃ 
☛ আলো কীভাবে ব্ল্যাক হোলে আটকা পড়ে?

সূত্রটি হলোঃ
সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের সমীকরণ


এখানে rs-ই হলো সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ।
ব্ল্যাক হোলের সীমানায় পৌঁছে সূত্রটি প্রয়োগ করলে আমরা পাই r = rs। ফলে to এর মান হয়ে যাবে শূন্য। তার মানে, বাইরের কোনো দর্শকের কাছে মনে হবে এখানে সময় থেমে আছে। ফলে ব্ল্যাক হোলের সীমানা পেরিয়ে কোনো কিছুকে কখনোই ভেতরে যেতে দেখা যাবে না।

তবে ব্ল্যাক হোলে পড়েই গেলে ব্যাপারটা হয়ে পড়ে আরও উদ্ভট। অবশ্য বাইরে থেকে এ পতন দেখা সম্ভব হবে না। যাই হোক, এক্ষেত্রে বর্গমূলের ভেতরের রাশিটা হবে ঋণাত্মক। মানে, ফল হিসেবে পাওয়া যাবে কাল্পনিক সময়, যার ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত জানা নেই।

সূত্রঃ
১। সাসেক্স ওয়েবসাইট 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি।

১৯৫৬ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন বিখ্যাত ভারতীয় ও বাঙালি জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তাপীয় আয়নীকরণ তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি বিজ্ঞানজগতে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও তাকে সাহা আয়নীকরণ সমীকরণ –এর জনক বলা হয়। তাঁর আবিষ্কৃত এই সমীকরণ নক্ষত্রের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি ব্যাখ্যায় ব্যাবহৃত হয়।

জ্যোতির্পদার্থবিদ মেঘনাদ সাহা 

মেঘনাদ সাহার জন্ম ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার কাছে শ্যাওড়াতলী গ্রামে। তখন ঢাকা শহর ব্রিটিশদের শাসনাধীন ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। গরীব ঘরে জন্ম তার। বাবা জগন্নাথ সাহা ছিলেন মুদি দোকানদার। ছেলেবেলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ঝুটা কাজের বিনিময়ে থেকে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। অর্থাভাবে বহু প্রতিকূলতার মাঝে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে স্কুল শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং পরে ঢাকা কলেজে অধ্যয়ন করেন।  কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বোস ও জে এন মুখার্জির সহপাঠী ছিলেন।  আর আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন তাঁর শিক্ষক।

তিনি পদার্থের তাপীয় আয়নীকরণ বিষয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিলেন। এই গবেষণার ফলস্বরূপ তিনি একটি সমীকরণ প্রদান করেন। এটিই সাহা সমীকরণ নামে পরিচিত। তারকাসমূহের বর্ণালি সম্পর্কিত গবেষণার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কোনো তারার অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিমাপ করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সাহা সমীকরণ প্রয়োগ করে কোনো তারকা বা নক্ষত্র গঠনকারী বিভিন্ন উপাদানসমূহের আয়নিত অবস্থা সম্পর্কে তারা অবগত হন।  সৌররশ্মির ওজন ও চাপ নির্ণয়ে সাহা একটি যন্ত্রও তৈরি করেছিলেন। এছাড়াও হ্যালির ধূমকেতু নিয়ে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীদের মাঝে তিনি ছিলেন অন্যতম।

এক পরমানুক গ্যাসীয় পদার্থের জন্য সাহা সমীকরণ

শিক্ষাঙ্গনেও ছিল তার সরব উপস্থিতি। ১৯২৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত সাহা এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হিসেবে মনোনীত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯২৭ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হন। সাহা ১৯৩৪ সালে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের ২১ তম অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেছিলেন।

ভারতবর্ষে বিজ্ঞানশিক্ষা ও বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ভারতের বিভিন্ন স্থানে তিনি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ গড়ে তোলেন। এছাড়াও ১৯৪৯ সালে কলকাতায় ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স প্রতিষ্ঠাতেও তার অসামান্য অবদান ছিল। পরবর্তীতে তার সম্মানার্থে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় “সাহা ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স”।

সাহা Science and Culture নামে  একটি পত্রিকাও চালু করেন ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়াও তার নেতৃত্বে বেশ কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক সংগঠন গড়ে ওঠে।  এগুলোর মাঝে ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স (১৯৩০), দ্যা ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি (১৯৩৪) ও ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা কালটিভেশন অব সায়েন্স (১৯৪৪ ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতের নদী পরিকল্পনার প্রধান স্থপতি ও দামোদর উপত্যকা প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন।

এত সাফল্যের পরেও মেঘনাদ সাহার জীবনে কিছুটা অতৃপ্তি ছিল। তিনি যে কখনও নোবেল পুরষ্কার লাভ করতে পারেননি! তবে তিনি বেশ কয়েকবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে তিনি ডি এম বোস এবং শিশির কুমার মিত্র কর্তৃক পদার্থবিদ্যায় ১৯৩০ সালের নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। নোবেল কমিটি সাহার কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানায়।  তারা তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফলকে “গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ” হিসেবে আখ্যায়িত করলেও এটাকে “আবিষ্কার” হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অসম্মতি প্রকাশ করে। ফলে সেবার তিনি নোবেল পুরষ্কার অর্জনে ব্যার্থ হন। এরপর ১৯৩৭ এবং ১৯৪০ সালে কম্পটন ও ১৯৩৯, ১৯৫১ ও ১৯৫৩ সালে শিশির কুমার মিত্র পুনরায় নোবেলের জন্য মেঘনাদ সাহাকে মনোনীত করেন। তবে নোবেল কমিটি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় প্রতিবারই তাকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল।

বিজ্ঞানজগতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি অধরা থাকলেও সমস্ত বাঙ্গালির গর্ব মেঘনাদ সাহা তৎকালীন খ্যাতনামা সকল বিজ্ঞানীর প্রশংসা পেয়েছিলেন। তাঁর সম্পর্কে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইন বলেন,
Dr. M.N. Saha has won an honored name in the whole scientific world     

সূত্রঃ
১। উইকিপিডিয়াঃ Meghnad Saha
২। উইকিপিডিয়াঃ মেঘনাদ সাহা 

Category: articles

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ এর অনূদিত বই অ্যা ব্রিফার হিস্ট্রি অব টাইম।
বইটি স্টিফেন হকিং এর লেখা 'কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস' বইটির আপডেট। এ বইটিতে হকিংকে সহায়তা করেছেন লিওনার্ড ম্লোডিনো।

বইটির প্রচ্ছদের অংশ বিশেষ 

আলোচিত হয়েছে মহাবিশ্বের অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে। পাশাপাশি রয়েছে আপেক্ষিক তত্ত্ব, ব্ল্যাক হোল, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ও টাইম ট্র্যাভেল নিয়ে আলোচনা। শেষের দিকে রয়েছে বর্তমান সময়ের আলোচিত স্ট্রিং থিওরি নিয়ে কিছু আলোচনা।

এর আগে লেখা অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইমের সাথে এর পার্থক্য নিয়ে শোনা যাক মূল লেখকদের মুখেঃ

এ বইটির নাম অ্যা ব্রিফার হিস্ট্রি অব টাইম (A Briefer History of Time), যার অর্থ আগের বইটির সাথে এর পার্থক্য মাত্র দুটো অক্ষরের। A Brief History of Time (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) বইটি ২৩৭ সপ্তাহ ধরে সানডে টাইমস বেস্ট-সেলার বইয়ের তালিকায় ছিল। ...

বইটিতে আধুনিক পদার্থবিদ্যার অন্যতম জটিল কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
A Brief History of Time প্রকাশিত হবার পর বহু মতামত আসে।। বইটির একটি নতুন সংস্করণ বের করার অনুরোধ আসত খুব নিয়মিত। পাঠকদের প্রত্যাশা ছিল- এতে আগের বইটির বিষয়গুলোই থাকবে, তবে তা হবে আরো স্পষ্ট ও সহজবোধ্যভাবে। কিন্তু অনেকের মতামত ছিল আবার আরেকটু বেশি জানার পক্ষে, যা কলেজ পর্যায়ের, কসমোলজির কোর্সের সমান মানের হবে। এ বইটি লেখার পেছনে এই উদ্দেশ্যগুলোই কাজ করেছে।
...
বইটিতে আমরা আগের বইয়ের বিষয়গুলো অক্ষুণ্ণ রেখে প্রয়োজন অনুসারে কিছু কথা যোগ করেছি। কিন্তু আবার এর পরিসর ও সহজবোধ্যতার দিকেও চোখ রেখেছি। আমরা আগের বইয়ের কিছু বিষয় বাদ দিয়েছি বলে আসলেই একে আগের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বলা চলে । আসলে তা করতে গিয়ে
বইটির প্রধান ও মূল বিষয়কেই আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এই সুযোগে আমরা বইটিকে আপডেটও করেছি এবং এতে নতুন তাত্ত্বিক ও পর্যবেক্ষণমূলক ফলাফল যুক্ত করেছি। যেমন পদার্থবিদ্যার সকল বলের একটি পূর্ণাংগ তত্ত্ব অনুসন্ধানের পথে সাম্প্রতিক অগ্রগতি এতে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে এতে স্ট্রিং থিওরির অগ্রগতি আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে ডুয়ালিটি বা দ্বৈততা তথা আপাত দৃষ্টিতে দেখতে আলাদা মনে হওয়া বিভিন্ন তত্ত্বের সাদৃশ্য নিয়ে।

এতে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার (COBE) এবং হাবল স্পেইস টেলিস্কোপের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল যুক্ত করা হয়েছে।
(বইয়ের ভূমিকা থেকে)

বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকা ১২ নং প্যাভিলিয়নে অন্বেষা প্রকাশন এর স্টলে। দাম রাখা হয়েছে ২০০ টাকা।

বইয়ের পুরো আবরণ

ইতোমধ্যেই অন্বেষার বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বইটি।

বিজ্ঞান পত্রিকার সৌজন্যে অনলাইনেও পড়তে পারেন।

হার্ড কপির পাঠকরা কিনতে পারবেন রকমারি ডট কম থেকেও। অর্ডার করুন এখান থেকে

লেখক পরিচিতি 
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি।

১৮৯৮ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত সুইস জ্যোতির্বিদ ফ্রিটজ জুইকি।  তাত্ত্বিক ও পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্যে তিনি বিখ্যাত। বিশেষ করে সুপারনোভার  নামকরণ ও এদের নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি অবদান রাখেন, যার ফলে পরবর্তীতে মহাবিশ্বের বয়স ও সাইজ পরিমাপ করা সহজ হয়ে যায়।


ফ্রিট্‌জ জুইকি

জুইকির জন্ম বুলগেরিয়ার ভারনা শহরে। বুলগেরিয়াতে জন্মালেও তার বাবা মা দুজনই ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরক। ৩ ভাই বোনের মাঝে তিনিই ছিলেন সবার বড়। ১৯০৪ সালে মাত্র ৬ বছর বয়সে তাকে তার পৈত্রিক নিবাস সুইজারল্যান্ডের গ্ল্যারাসে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি  দাদা দাদির কাছে বড় হতে থাকেন।  প্রথমে পড়াশোনা শুরু করেনবাণিজ্য বিভাগ নিয়ে। পরবর্তীতে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এর ফলশ্রুতিতে তিনি সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউটে গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

১৯২৫ সালে সুইজারল্যান্ড ছেড়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। রকিফেলার ফাউন্ডেশন থেকে ইন্টারন্যাশনাল ফেলোশিপ অর্জনের ফলে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (ক্যালটেক) বিখ্যাত বিজ্ঞানী রবার্ট মিলিকনের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। মহাবিশ্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মহাজাগতিক তত্ত্ব নিয়ে  গবেষণা করতে থাকেন। জুইকি সাধারণত একাকী থাকতেই পছন্দ করতেন। এমনকি গবেষণার সময় সমস্ত গাণিতিক হিসাব নিকাশ করতেন নিজে নিজেই।

১৯৪২ সালে তিনি ক্যালটেকের জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও তিনি ১৯৪৩ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত অ্যারোজেট ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের গবেষক দলের পরিচালক বা পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় তিনি মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরি ও পালোমার অবজারভেটরি নামক জ্যোতির্বিদ্যার দুইটি বিখ্যাত গবেষণাগারেও কাজ করেন। তিনি বেশ কিছু জেট ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন। এদের মধ্যে আন্ডারওয়াটার জেট, ইনভার্টেড হাইড্রো পালস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সনাতন পদ্ধতির এই জেটইঞ্জিনগুলোর আবিষ্কারের ফলে তিনি ৫০টি পেটেন্ট লাভ করেছিলেন।

বিজ্ঞানী হিসেবে জুইকি প্রথমে আয়নিক ক্রিস্টাল ও তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তবে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে করা অনুসন্ধানই তাকে বিখ্যাত করে তোলে।
১৯৩৪ সালে তিনি ও তাঁর সহযোগী গবেষক ওয়াল্টার বাডে সর্বপ্রথম সুপারনোভা শব্দটি ব্যাবহার করেছিলেন। একটি সাধারণ তারকা নিউট্রন তারকাতে রূপান্তরিত হবার মধ্যবর্তী অবস্থাকে তাঁরা সুপারনোভা বলে অভিহিত করেন। তাঁরা সুপারনোভাকে কসমিক রে বা মহাজাগতিক রশ্মির উৎস হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। এই ধারণাটিই মহাবিশ্বের আকার এবং বয়সের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল।

আরও পড়ুন
 নিউট্রন তারকা কাকে বলে?

এই স্বীকার্য প্রমানের জন্য জুইকি  সুপারনোভার খোঁজ চালাতে থাকেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় সর্বমোট ১২০টি সুপারনোভার সন্ধান পেয়েছিলেন। এছাড়াও ১৯৩৫ সালে তিনি ও বাডে মিলিতভাবে মাউন্টেন টপ অবজারভেটরিতে প্রথম স্মিট (Schmidt) টেলিস্কোপ ব্যাবহার করেছিলেন।

১৯৩৭ সালে জুইকি পূর্বে আবিষ্কৃত আইনস্টাইন ইফেক্টের মাধ্যমে অনুমান করেন, গ্যালাক্সিগুলো মহাকর্ষীয় লেন্স হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। তবে আইনস্টাইন ইফেক্ট আবিষ্কার করা হলেও বিজ্ঞানীরা এটি সম্পর্কে তখন পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলেন না। পরবর্তীতে “টুইন কোয়াসার” পর্যবেক্ষণের দ্বারা তারা আইনস্টাইন ইফেক্টের সত্যতা খুঁজে পান।

১৯৩৩ সালে কোমা গ্যালাক্সি ক্লাস্টার নিয়ে গবেষণা কালে তিনিই সর্বপ্রথম অদৃশ্যমান বস্তুর অস্তিত্ব নিরূপণে ভিরিয়াল উপপাদ্য (বলবিদ্যার একটি বিশেষ সূত্র) প্রয়োগ করেছিলেন। তিনি সেই অদৃশ্য বস্তুর নাম দিয়েছিলেন Dunkle Materie। একেই বর্তমানে আমরা ডার্ক ম্যাটার বলে চিনি। তিনি ক্লাস্টারের মাঝে থাকা গ্যালাক্সিগুলোর মহাকর্ষীয় ভর পরিমাপ করেন এবং দেখেন এই ভরের মান গ্যালাক্সিগুলোর ঔজ্জ্বল্য অনুসারে অনুমিত ভরের চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ বেশি। এর অর্থ দাঁড়ায়, মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থানই ডার্কম্যাটার দ্বারা পূর্ণ। বর্তমানে দৃশ্যমান ও আলোকিত পদার্থসমূহের ভরের মান বৃহৎ বিবেচনা করে হিসাব করার ফলে এই ফলাফলের কিছুটা এদিক-ওদিক হয়েছে। তবে তার এই ধারণাটি এখন পর্যন্ত সঠিক বলেই গৃহীত হয়।

জুইকির আবিষ্কৃত গ্যালাক্সি আইজুইকি১৮এ। ছবিটি হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা। 


নিউট্রন স্টার আবিষ্কারের পর জুইকি নিউক্লিয়ার গব্লিনের  ধারণা প্রদান করেছিলেন। তার প্রস্তাবনা অনুসারে, গব্লিন একটি তারার মাঝে বিক্ষিপ্ত ভাবে চলাচল করতে পারে। তবে তারাটির অপেক্ষাকৃত কম ঘনত্বের অঞ্চলে পৌঁছানো মাত্রই এটি বিস্ফোরিত হয়। নক্ষত্রের বিস্তারন সহ উদ্গীরনজাত বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যায় তাঁর এই অনুমান যথেষ্ট কাজে লেগেছিল। এছাড়াও তিনি কৃত্রিম উল্কাপিণ্ড তৈরি করতে সমর্থ হন।

মহাকাশ গবেষণায় অভূতপূর্ব অবদানের স্বীকৃতিসরূপ তার নামে একটি গ্রহাণু (১৮০৩ জুইকি) ও চন্দ্রপৃষ্ঠের একটি বড় গর্তের (জুইকি) নামকরণ করা হয়। এছাড়াও ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় রকেট পরিচালনায় অসামান্য অবদান রাখায় তাকে ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম প্রদান করা হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে তাকে ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এমিরেটাস অধ্যাপক বানানো হয়। ১৯৭২ সালে তাকে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির পক্ষ থেকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়েছিল। জ্যোতির্বিদদের জন্য এটিকেই সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিজ্ঞানী হিসেবে জুইকি সকলক্ষেত্রে সফলতার স্বাদ পেলেও পারিবারিক জীবন ততটা মসৃণ ছিল না।  ১৯৩২ সালের এপ্রিলে তিনি এগবার্ট গেটস নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী সিনেটরের কন্যা ডোরোথি ভারনান গেটসকে বিয়ে করেন। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের চাচাতো ভাই নিকোলাস রুজভেল্ট এগবার্টের আরেক মেয়ে তিরজাহ গেটসকে বিয়ে করেছিলেন। ফলে বিবাহসূত্রে জুইকি আর নিকোলাসের মাঝে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। অপরদিকে ডোরোথিকে বিয়ে করায় তিনি বেশ ভালো অর্থ উপঢৌকন হিসেবে লাভ করেন। ১৯৩০ সালের দিকে আর্থিক মন্দার সময় পালোমার অবজারভেটরির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনি এই অর্থ ব্যয় করেন।

তবে ১৯৪১ সালে ডোরোথি ও জুইকি তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানেন এবং আপোষের মাধ্যমে পরস্পর আলাদা হয়ে যান। ১৯৪৭ সালে সুইজারল্যান্ডে অবস্থানকালে জুইকি অ্যানা মারগারিটা যার্চার নামক এক মহিলাকে পুনরায় বিবাহ করেন। পরবর্তীতে জুইকি ৩ কন্যা সন্তানের বাবা হন। তার সন্তানদের নাম ছিল মারগারিট, ফ্রাঞ্জিস্কা ও বারবারিনা।

সুইজারল্যান্ডের গ্ল্যারাসে জুইকির নামে একটি জাদুঘর (জুইকি মিউজিয়াম) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে তার বিভিন্ন গবেষনাপত্র ও বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর এই প্রথিতযশা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ১৯৭৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ৭৫ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনা শহরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সুইজারল্যান্ডের মলিসে তাকে সমাহিত করা হয়।

সূত্র
১।  উইকিপিডিয়া
২।  ফেমাস অ্যাস্ট্রোনোমারস ডট অরগ
Category: articles

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭


স্বছ পদার্থ হচ্ছে সেই বস্তু, যার মধ্য দিয়ে আলো চলাচল করতে পারে। যেমন কাঁচ। এর মধ্য দিয়ে তাকালে বিপরীত পাশের বস্তু দেখা যায় (অবশ্যই যদি না অপর পাশে প্রলেপ দেওয়া থাকে)। চলুন দেখি কেন আমরা কাঁচের মধ্য দিয়ে তাকালে অপর পাশের বস্তু দেখি অথচ কাঠের মধ্য দিয়ে তাকালে দেখি না।

নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন, বেশিরভাগ তরল ও গ্যাসীয় পদার্থই স্বচ্ছ। পানি, রান্না-বান্নার তেল, বায়ূ, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি।

কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের মৌলিক ভিন্নতাই এর কারণ।

কোনো বস্তু যখন কঠিন অবস্থায় থাকে, তখন এর অণুগুলো (Molecule) পরস্পরের সাথে খুব সু-সংগঠিত থাকে, এবং এর ফলে তাদের মধ্যকার বন্ধন খুব শক্তিশালী হয় আর বস্তুটি পায় দৃঢ়তা। বস্তুটি যখন তরল হয়ে যায়, তখন বন্ধন-শক্তি কমে যায় এবং অণুগুলোর সজ্জা বা বিন্যাস কিছুটা বিশৃংখল হয়ে যায়। আর গ্যাসীয় অবস্থায় এ বিন্যাস হয়ে যায় একেবারেই এলোমেলো।

বিন্যস্ত অবস্থা থেকে ক্রমে তরল ও গ্যাসে সজ্জাহীনতাই এদের মধ্য দিয়ে আলো চলাচল করতে পারার মূল কারণ। একটার উপর একটা ইট খাড়া করে যেমন দূর্ভেদ্য দেয়াল নির্মাণ করা যায় তেমনি আলোক তরঙ্গ চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অণুর সুবিন্যস্ততা।

বস্তু সাপেক্ষে আলোক তরঙ্গ প্রতিফলিত বা শোষিত হবে অথবা ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু তরল বা গ্যাসের ক্ষেত্রে অণুগুলো নিজেদের সাথে গাদাগাদি করে লেগে থাকবে না। ফলে তাদের মাঝে ফাঁকা স্থান রয়ে যাবে, যে পথে আলোক তরঙ্গ বের নিজের পথ করে নেবে।

অণুগুলোর অবিন্যস্ততা ( randomness) যত বেশি হবে , আলো তত সহজে বস্তূটিকে পাড়ি দেবে।
যখন একটি ফোটন (Photon) কোন পদার্থের পরমাণুর ইলেক্ট্রনের সংস্পর্শে আসে তখন নিম্ন-ঘটনা ঘটতে পারে-
      ক. ইলেক্ট্রন ফোটনের শক্তি শোষণ করে একে রূপান্তরিত করবে (সাধারণত তাপ শক্তিতে)
      খ. ইলেক্ট্রন ফোটনের শক্তি শোষণ ও সঞ্চয় করে ঔজ্জ্বল্য (Luminescence)  প্রদর্শন করবে।
      গ. ফোটনের শক্তি শোষণ করে পরে প্রতিফলিত করবে
      ঘ. ইলেক্ট্রন ফোটন কে শোষিত করতে পারবে না, ফলে ফোটন বস্তুটি ভেদ করে চলে যাবে।

অবশ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরের সব অপশনের সমন্বয় (Combination) ঘটে।

এবার চলুন দেখি কাঁচ কীভাবে স্বচ্ছ হয়?
সিলিকা বা বালি কাঁচ তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যাবহৃত হয়। এটাকে গলনাঙ্কে পৌঁছানো পর্যন্ত উত্তপ্ত করে তরল বানিয়ে এরপর  ঠণ্ডা করা হয়। ফল দাঁড়ায় এর অণুগুলো তরলের মতই অ-বিন্যস্ত থাকে কিন্তু কঠিন পদার্থের মত শক্ত বন্ধন ও দৃঢ়তা ধরে রাখে।
প্লাস্টিককেও একইভাবে শীতলীকরণের মাধ্যমে স্বচ্ছ বানানো হয়।
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...