Advertisement

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সূর্যের চেয়ে বহু গুণ ভারী একটি বিশাল নক্ষত্র বা তারকা যখন নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে গুটিয়ে গিয়ে সিঙ্গুলারিটি গঠন করে, ফলে আলোও ঐ বস্তু থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না, তখন তাকে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহবর বলে।
অন্তত, এটা আমরা এত দিন তাই মনে করতাম।
এখন, একজন বিজ্ঞানী দাবী করলেন, গণিতের হিসাব অনুযায়ী ব্ল্যক হোলদের বাস্তবে অস্তিত্ত্ব থাকা অসম্ভব। তাঁর মতে, তারকাদের পক্ষে গুটিয়ে গিয়ে সিঙ্গুলারিটি গঠন করা সম্ভব নয়। এই মত, অধ্যাপিকা লরা মারসিনি হাউটনের।
এই মত সত্যি হলে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগের তত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
চ্যাপেল হিলের আর্টস অ্যান্ড সায়েন্টিস্টস কলেজে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার এই অধ্যাপক গবেষণাটি পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, একটি তারকা মারা যাবার সময় (জীবনের সমাপ্তিতে পৌঁছায়) হকিং বিকিরণ নিঃসরণ করে যার পূর্বানুমান করেন ড. স্টিফেন হকিং। ড. মারসিনির মতে, এই সময় তারকাটি বিশাল পরিমাণ ভরও হারায়, আর তার পরিমাণ এতই বেশি যে এর পক্ষে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়া অসম্ভব। জীবনের শেষের দিকে তারকাটি ফুলে উঠে ও বিস্ফোরিত হয়।ফলে, কখোনই সিঙ্গুলারিটি তৈরি হওয়া সম্ভব নয়, আর না ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon) যেখান থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বাইরে আসতে পারে না বলে মনে করা হয়।
তিনি বলেন, "আমি এখনও হতভম্ব হয়ে আছি। গত ৫০ বছর ধরে আমরা সমস্যাটি পর্যালোচনা করছি। আমার মনে হয় এই সমাধান আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করার খোরাক যোগাবে।"
ব্ল্যাক হোল আছে কি নেই- এ ব্যাপারে পরীক্ষামূলক প্রমাণ হয়তো এক সময় বাস্তব প্রমাণ পেশ করবে। কিন্তু আপাতত গণিতে কোন ভুল নেই, মত এই অধ্যাপিকার।
আরও বড় ব্যাপার হল, এই গবেষণা বিগ ব্যাং তত্ত্বকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা, প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে একটি অতি নিবিড়, অতি উষ্ণ ক্ষুদ্র কণিকা থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি যা উৎপত্তির পর থেকে সম্প্রসারিত হয়ে আসছে।
মহাবিশ্বের দুটি অন্যতম মৌলিক নীতিকে একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় ব্ল্যাক হোলদেরকে খুবই অদ্ভুত মনে করা হয়।
হকিং বিকিরণ

উদাহরণস্বরূপ, আইন্সটাইনের অভিকর্ষ তত্ত্ব ব্ল্যাক হোলের ভবিষ্যদ্বাণী করে, অন্য দিকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের কথা হচ্ছে কখোনই মহাবিশ্ব থেকে তথ্য হারিয়ে যেতে পারে না। অথচ ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত সে কাজটিই করে।
এই দুই তত্ত্বের মীমাংসা এখনও হয়নি। ফলে এটা একটি প্যারাডক্সে রূপ নিয়েছে যাকে নাম দেওয়া হয়েছে ব্ল্যাক হোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স অর্থাৎ কিভাবে কোন তথ্য বা বস্তু ব্ল্যাক হোলে হারিয়ে যেতে পারে?
অধ্যাপক মারসিনির এই সমাধান হয়তো দুই মৌলিক তত্ত্বকে সন্ধি করিয়ে দেবে।
বছরের শুরুর দিকে প্রফেসর স্টিফেন হকিংও বলেছিলেন, "ব্ল্যাক হোল বলতে কিছু নেই, আছে গ্রে হোল বা ধূসর গহবর"।
সূত্রঃ ডেইলিমেইল
Category: articles

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্য। পৃথিবীর তুলনায় সূর্য অনেক বিশাল। ১০৯টা পৃথিবীকে পাশাপাশি রেখে দিলে সূর্যের ব্যাসের সমান হবে। আর সূর্যের আয়তনের সমান স্থান পূরণ করতে হলে পৃথিবীর মত প্রায় ৯ লাখ গ্রহ লাগবে! সূর্যের একার ভর সৌরজগতের ৯৯.৮৬ শতাংশ ভরের জন্য দায়ী! 


 
কিন্তু নক্ষত্রের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিলে আমাদের সূর্য হয়ে যায় সাদামাটা এক তারা। হ্যাঁ, অনেক তারকার চেয়ে সূর্য বড়, কিন্তু বহু তারকার চেয়েই আবার ছোট।

সূর্যের তুলনায় বিটলজুস কত বিশাল দেখুন। এ তো সবে শুরু। আছে আরও বিশাল বিশাল তারাও।

হাইপারজায়ান্ট তারাদের অনেকেই এত বিশাল যে এরা আমাদের সমগ্র সৌরজগতকে গিলে ফেলতে পারে। যেমন ধরা যাক ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের (VY Canis Majoris) কথা। একে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দিলে পরিধি শনি গ্রহকেও ছাড়িয়ে যেত। 

ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিস সূর্যের স্থানে থাকলে পৃথিবী ও মঙ্গল দুটোই এর উত্তপ্ত প্লাজমায় ঝলসে যেত। গ্রহদ্বয়ের অবস্থান তো থাকতো সৌর পৃষ্ঠের অনেক ভেতরে। বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হত। তাই এই দুষ্ট দূরে আছে বলে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারি! ও হ্যাঁ,  দূরত্ব আমাদের থেকে ৩ হাজার ৮৪০ আলোকবর্ষ দূরে। 

সূর্যের চেয়ে বড় বড় তারকারা

আমাদের সূর্যের পরিধি ২৭ লাখ মাইল বা ৪৩ লাখ কি. মি। মানে, সূর্যের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরে আসতে এতটুকু পথ পাড়ি দিতে হবে। আর এই দানব ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের পরিধি ১৯০ কোটি মাইল বা ৩০০ কোটি কিলোমিটার। ব্যাসার্ধ গড়ে সূর্যের প্রায় ১,৪২০ গুণ। 

মনে করুন কোনো ভাবে এতে এই দানবের পরিধি বরাবর আমরা ঘুরে আসব। এ পর্যন্ত মানুষের বানানো সবচেয়ে দ্রুতগামী যান পার্কার সোলার প্রোব। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫,৮৬,৮০০ কিলোমিটার। এমন যানে চড়ে ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে ২১১ দিন লাগবে। যেখানে সূর্যকে ঘুরে আসতে লাগবে মাত্র ৭ ঘণ্টা। 
 
তবু ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসও তারকাদের রাজা নয়। এনএমএল সিগনি (NML Cygni) তার চেয়ে বড় দানব। এর ব্যাসার্ধ সূর্যের ১,৬৪০ গুণ, আর ভর ২৫-৪০ সৌর ভরের সমান। তবু এখানেই শেষ নয়। আরেকটি বড় তারার নাম ইউওয়াই স্কুটি ( UY Scuti)। এর ব্যাসার্ধ ১,৭০৮ সৌর ব্যাসার্ধের সমান। এটাকে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দিলে বৃহস্পতির গ্রহ পর্যন্ত এর আলোকমণ্ডলের (Photosphere) পেটে চলে যাবে। এটা আছে আমাদের থেকে ৭,৮০০ আলোক বর্ষ দূরে।

সবচেয়ে বড় দুই তারার তুলনামূলক আকার 

এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আকারের তারার নাম স্টিফেনসন ২-১৮। অন্য নাম  স্টিফেনসন ২ ডিএফকে ১। সূর্যের তুলনায় ২১৫০ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৯ হাজার আলোকবর্ষ। 

এ তো গেল সাইজ বা আকারের হিসাবে বড় তারার গল্প। সূর্যের চেয়ে বহুগুণ ভারী নক্ষত্রের কথাও জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। এই যেমন আর১৩৯ এ তারাটা। ভর সূর্যের ৯৫ গুণ বেশি। দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১,৬৩,০০০ আলোকবর্ষ। তবে এর চেয়ে ভারী তারা আছে ভূরুভূরি। এইচডি ১৫৫৫৮ তারা তো সূর্যের ১৫২ গুণ ভারী। আর এখন পর্যন্ত জানা মতে সবচেয়ে ভারী নক্ষত্রের নাম বিএটি ৯৯-৯৮। ভর সূর্যের ২২৬ গুণ। দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১,৬৫,০০০ আলোকবর্ষ। 

সূর্যের চেয়ে বেশি ভারী তারা আবার জীবনের শেষ ভাগে অনেক ছোট হয়ে যায়। এই যেমন ব্ল্যাকহোল ও নিউট্রন তারা। জীবনের শেষভাগে ব্ল্যাকহোল তো বিন্দু বা রেখার মতো হয়ে যায়। আর নিউট্রন তারা হয় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। জ্বালানি ফুরিয়ে গুটিয়ে যাবার সময় তৈরি নিউট্রন আরও ছোট হতে বাধা দেয়। ফলে তারাটা ব্ল্যাকহোল হতে পারে না। চওড়ায় হয় মাত্র ১২ মাইলের মতো। ঘন এ তারা থেকে একটি চিনির দানার সমান পদার্থ নিলে তার ভরই হবে একশো কোটি টন। 

 
সূত্র
১. http://en.wikipedia.org/wiki/VY_Canis_Majoris
২. http://en.wikipedia.org/wiki/NML_Cygni
৩. http://en.wikipedia.org/wiki/Quadrillion
৪. http://www.fromquarkstoquasars.com
৫. http://en.wikipedia.org/wiki/UY_Scuti
Category: articles

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মহাবিশ্বের কোন কেন্দ্র নেই!
কসমোলজির আদর্শ থিওরি অনুযায়ী  ১৪ শত কোটি বছর আগে একটি বৃহৎ বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু। তার পর থেকেই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু তবু প্রসারণের নেই কোন কেন্দ্র। সব দিকে একই রকম দেখতে। বিগ ব্যাঙকে সাধারণ কোন বিস্ফোরণ মনে করা ঠিক হবে না। মহাবিশ্ব কোন কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়ছে না। বরং, সমগ্র মহাবিশ্বই প্রসারিত হচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি, মহাবিশ্ব সব দিকেই সমানভাবে প্রসারিত হচ্ছে।


১৯২৯ সালে এডুইন হাবল বলেন, তিনি আমাদের থেকে বিভিন্ন দূরত্বের গ্যালাক্সিদের বেগ মেপেছেন, আর তারা যতই দূরে যাছে ততই তাদের বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে মনে হতে পারে, আমরা তাহলে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্ব যদি হাবলের সূত্রানুযায়ী সুষমভাবে সম্প্রসারিত হয়, তাহলে যে কোন জায়গাকেই এই রকম কেন্দ্র মনে হবে।
আমরা যদি একটি গ্যালাক্সিকে (নাম দিলাম খ) প্রতি সেকেন্ডে ১০, ০০০ কি.মি. বেগে দূরে সরে যেতে দেখি তাহলে গ্যালাক্সি খ এর একজন এলিয়েন আমাদের গ্যালাক্সি 'ক' কে একই বেগে বিপরীত দিকে যেতে দেখবে। যদি 'খ' গ্যালাক্সির দিকেই আরেকটি গ্যালাক্সি 'গ' থাকে, তাকে আমরা সেকেন্ডে ২০, ০০০ কি.মি. বেগে সরে যেতে দেখবো। 'খ' গ্যালাক্সির এলিয়েন 'গ' কে ১০, ০০০ কি.মি/সে. বেগে সরতে দেখবে।
কোন গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সির বেগ কেমন দেখাবে তার সারণী দেখুন। 
              ক           খ           গ
ক থেকে         0 km/s    10,000 km/s   20,000 km/s
খ থেকে   -10,000 km/s         0 km/s   10,000 km/s
 
তাহলে, 'খ' গ্যালাক্সিতে থাকা এলিয়েনও নিজেকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র মনে করবে।
বেলুনের উদাহরণঃ
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ বোঝার জন্য স্থানকে একটি সম্প্রসারণশীল বেলুনের সাথে তুলনা করা হয়। আর্থার এডিংটন ১৯৩৩ সালে তাঁর বই দি এক্সপানডিং ইউনিভার্স (The Expanding Universe) বইয়ে এই উপমা দেন। ফ্রেড হয়েল তাঁর জনপ্রিয় বই দি নেচার অব দি ইউনিভার্স (The Nature of the Universe) বইয়ের ১৯৬০ এর সংস্করণেও একই উপমা প্রয়োগ করেন। হয়েল লেখেন, "আমার গণিতশাস্রের বাইরের বন্ধুরা আমাকে প্রায়ই বলে, মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ তারা বুঝতে পারছে না। গণিতের অত শত হিসেব বাদ দিয়ে আমি বেলুনের উপমা দেই যার পৃষ্ঠে আছে অনেকগুলো বিন্দু। বেলুনটা যদি ফেটে যায়, তবে এই বিন্দুগুলো  পরস্পর থেকে দূরে সরতে থাকবে। ঠিক এভাবেই গ্যালাক্সিরাও দূরে সরে।
বেলুনের উপমাটা আসলেই দারুণ, কিন্তু একে সঠিকভাবে বুঝতে হবে। নইলে এটা আরো বিভ্রান্তির জন্ম দেবে। হয়েল বলেন, "অনেকভাবে এই উপমা ভুল দিকে নিয়ে যেতে পারে"। মনে রাখতে হবে, ত্রিমাত্রিক (Three Dimensional) স্থানকে (Space) বেলুনের দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠের সাথে তুলনা করতে হবে। এখানে পৃষ্ট সুষম (Homogenous)  এবং কোন বিন্দুকে কেন্দ্র বিবেচনা করা যাবে না। বেলুনের নিজের কেন্দ্রের অবস্থান পৃষ্ঠে নয়, তাই একে মহাবিশ্বের কেন্দ্রও মনে করা যাবে না। এবার আপনি বেলুনের রেডিয়াল ডিরেকশনকে সময় মনে করতে পারেন।
হয়েলের প্রস্তাবনা ছিল এ রকম। কিন্তু এটাও কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
পৃষ্ঠের বিন্দুগুলোকে মহাবিশ্বের অংশ মনে না করলেই আরো ভালো হয়। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে গাউস আবিষ্কার করেন, স্থানের বৈশিষ্ট্য যেমন বক্রতাকে স্বকীয় রাশিমালা দ্বারাই প্রকাশ করা যায় যে রাশিগুলো কোথায় বক্রতা ঘটছে তা বিবেচনা ছাড়াই পরিমাপ করা যায়। তাহলে, 'স্থান' এর বাইরে অন্য কোন মাত্রার (Dimension) উপস্থিতি না থাকলেও স্থান বাঁকতে পারে। তিনটা পাহাড়ের মাথার মধ্যবর্তী বিশাল ত্রিভুজের কোণ (Angle) মাপার মাধ্যমে গাউস 'স্থান' (Space) এর বক্রতাও মাপার চেষ্টা করেছিলেন।
বেলুনের উপমা ভাববার সময় মাথায় রাখতে হবে-
* বেলুনের দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠ ত্রিমাত্রিক স্থানের অনুরূপ।
* যে ত্রিমাত্রিক স্থানে বেলুন আবদ্ধ আছে তা অন্য কোন উচ্চ-মাত্রিক ফিজিকেল (Physical) স্থানের অনুরূপ নয়।
* 'বেলুনের কেন্দ্র' ফিজিকেল কোন অর্থ বহন করবে না।
* মহাবিশ্বের আকার সসীম হতে পারে যা বেলুনের পৃষ্ঠের মতই প্রসারিত হচ্ছে, আবার অসীমও হতে পারে।
* প্রসারণশীল বেলুনের মতই গ্যালাক্সিরা প্রসারিত হচ্ছে, কিন্তু গ্যালাক্সি নিজে প্রসারিত হচ্ছে না। কারণ তার নিজস্ব অভিকর্ষ।
(চলবে)
আরও পড়ুনঃ গ্যালাক্সিরা প্রসারণের সময় কিভাবে আলোর বেগকে পরাজিত করে? 
সূত্রঃ
http://math.ucr.edu/home

Category: articles

সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এনজিসি ৬৮৭২ (NGC 6872) গ্যালাক্সি পৃথিবী থেকে ২১২ মিলিয়ন (বা ২১.২ কোটি) আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। একে IC 4970 গ্যালাক্সির সাথে প্যাভো (Pavo) নক্ষত্রপুঞ্জে দেখা যায়। এর আকৃতি অনেকটা সেকশন চিহ্নের (§) মত।
১৯৯৯ সালে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন মানমন্দির (ESO) একে খুঁজে পায়। এর অপর নাম কনডর ছায়াপথ (Condor Galaxy)।

প্রথম দর্শনে, একে অন্য সর্পিল ছায়াপথের মতই মনে হবে। আসলেও তাই-কিন্তু আকার বাদ দিয়ে। এনজিসি ৬৮৭২ এর আকার বিস্ময়কর রকম বিশাল। এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত এই গ্যালাক্সিটিই বৃহত্তম সর্পিল গ্যালাক্সি। সার্বিকভাবে সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি অবশ্য আইসি ১১০১।
এই মহাজাগতিক দৈত্যের প্রশস্ততা ৫ লাখ ২২ হাজার আলোক বর্ষ যা আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপাথের পাঁচ গুণ। এটি মিল্কিওয়ে অ্যান্ড্রোমিডা (আমাদের নিকটত গ্যালাক্সি) কে হজম করার পরও পেট ভরবে না।
এটা এত বিশাল হল কেন? সায়েন্স ফিকশনে যেমন দেখা যায় বাতিকগ্রস্থ বিজ্ঞানীর আকার বড় করার ওষুধ খেয়ে  মাকড়সা, মাছ ইত্যাদি মানুষের চেয়ে বিশাল হয়ে যায়- তেমন কোন ঘটনা নাকি!
হিসেব করে দেখা গেছে, কোটি কোটি বছর আগে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি আইসি ৪৯৭০ (IC_4970) এই এনজিসি ৬৮৭২ এর কাছাকাছি আসে। ঐ সময় এরা সংঘর্ষ এড়াবার মত যথেষ্ট দূরত্বে ছিল, কিন্তু দু'জন দু'জনার অভিকর্ষীয় টানে আটকা পড়ে। ফলে, দু'জন সন্ধি করে বিশাল এই দানবীয় রূপ পরিগ্রহ করে। উইকিপিডিয়ার আর্টিকেলে তাই গ্যালাক্সিদ্বয় একই পৃষ্ঠায় ঠাঁই পেয়েছে।
কিন্তু যেই অভিকর্ষীয় বল ছায়াপথ দুটোকে একত্র করেছে, তাই হবে এদের মৃত্যুর কারণ। হ্যাঁ, গ্যালাক্সিদের প্রাণ নেই, মরতে পারে না, কিন্তু এপোড় - ওপোড় তো হয়ে যেতে পারে।  এনজিসি ৬৮৭২ এর ভাগ্যে তাই ঘটতে যাচ্ছে। আইসি ৪৯৭০ এর টানে এর অন্যতম ভারী একটি বাহু আলাদা হয়ে গিয়ে একে বামন ছায়াপথে রূপ দিতে যাচ্ছে।
অতএব, বেশি দিন সম্ভবত এনজিসি ৬৮৭২ এর পক্ষে বৃহত্তম সর্পিল গ্যালাক্সি (Spiral Galaxy) হবার রেকর্ড ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর পরে একই রকম কিছু একটা আমাদের গ্যালাক্সিতেও ঘটে যাচ্ছে। হাবল পরিমাপের একটি বিশ্লেষণীতে দেখা গেছে মিল্কিওয়ে অ্যান্ড্রোমিডার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। তাহলে, ভবিষ্যতে এমনও হতে পারে আমরাই হয়ে যেতে পারি বৃহত্তম স্পাইরাল গ্যালাক্সির অংশ।
কিন্তু হায়, যদি কিয়ামত হবার আগে তা ঘটার সুযোগ হয়ও, আমরা সেই আনন্দ উদযাপন করার সুযোগ পাব না! (আপনি কি ৪ শ' কোটি বছর বেঁচে থাকবেন?)
সূত্রঃ
১. http://www.jpl.nasa.gov/news/news.php?release=2013-016
২. http://en.wikipedia.org/wiki/NGC_6872_and_IC_4970
Category: articles

রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

২০১৩ সালের শুরুর দিকে মহাকশবিজ্ঞানীরা এক গুচ্ছ সক্রিয় ছায়াপথীয় অন্তর্বস্তু আবিষ্কার করেন যার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ৪ শ' কোটি আলোক বর্ষব্যাপী বিস্তৃত। এখানে, সক্রিয় বলতে সেই সব কৃষ্ণগহবরদের বোঝানো হচ্ছে যারা তাদের সীমানায় অবস্থিত অঞ্চলকে গ্রাস করে চলেছে।
ছবিঃ নাসা

এই কাঠামোটি হচ্ছে বিশাল কোয়াসার গুচ্ছ বা এলকিউজি ( large quasar group ) বা LQG। এর আকৃতি নিতান্তই বিশাল। আমাদের আবাস গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের আড়াআড়ি দূরত্ব ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। আমাদের পাশ্ববর্তী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda)  আমাদের থেকে ২৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে আর ওর আকার মিল্কিওয়ের প্রায় আড়াই গুণ (২ লাখ ৬০ হাজার আলোকবর্ষ তার ব্যাস)। তার অর্থ এই এলকিউজি খুব সহজেই অ্যান্ড্রোমিডা, মিল্কিওয়ে ও এদের মাঝখানে যা আছে সবকিছুকে হজম করে ফেলতে পারে।
আরেকভাবে তুলনা করা যাক! পৃথিবীর বয়স ৪ শ" কোটি বছরের কিছুটা বেশি। তাহলে এলকিউজিটির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আলো যতক্ষণে পৌঁছবে, ততক্ষণে পৃথিবী তৈরি হয়েছে, শীতল হয়েছে, এতে জীবনের উদ্ভব ঘটেছে, ডাইনোসররা আবির্ভূত হয়ে বিলুপ্তও হয়ে গেছে, মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, সভ্যতা গড়ে তুলেছে, আমি এই লেখাটি লিখেছি, আপনি পড়েছেন। সোজা কথায়, পৃথিবীর সমগ্র ইতিহাসের সমান সময়ে কিছু আলোক কণা এই দানবীয় কাঠামোর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে পৌঁছায়।
বেতার তরঙ্গের উৎস ও অতি উজ্জ্বল বস্তু কোয়াসারদের সর্বোচ্চ গুচ্ছ ৬০ কোটি আলোক বর্ষ বিস্তৃত। নতুন আবিষ্কৃত LQG ৭৩ টি কোয়াসার নিয়ে গঠিত। ৪০০ কোটি আলোক বর্ষের সমান প্রশস্ততা নিয়ে এটি অন্য কোয়াসার গুচ্ছদের লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।
এই LQG টি এত বিশাল যে এ আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বকে ইউটার্ন করিয়ে দিতে পারে। সাধারণ আপেক্ষিকতাকে বড় মাপের বস্তুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে অনেকগুলো সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক (Cosmological) তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ও মৌলিক হচ্ছে কসমোলোজিক্যাল নীতি। এই নীতির অবিচ্ছেদ্য বক্তব্য হচ্ছে, যথেষ্ট বড় দূরত্বের বস্তু পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে মহাবিশ্বে পছন্দনীয় কোন দিক বা অবস্থান নেই।
সোজা কথায়, মহাবিশ্বকে যে দিক থেকেই পর্যবেক্ষণ করা হোক না কেন, দেখতে একই রকম লাগবে। অর্থাৎ এটা একটা মৌলিক সমজাতীয়তা (Homogeneity)।
 সূত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Large_quasar_group
২.  http://www.fromquarkstoquasars.com
Category: articles

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমরা সবাই জানি, ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহবর মহিবিশ্বের সবচেয়ে ভারী বস্তু।  (না জানলে এখন তো জানেন!) তারা পুরো নক্ষত্রমণ্ডলকে গিলে ফেলতে পারে। এখন, মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলই শুধু নেই, আছে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যকহোলও (Super-massive Black holes)। বাংলায় একে বলা যাক মহা ভারী কৃষ্ণগহবর

ব্ল্যাকহোল ও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের পার্থক্য হল একজন সাধারণ মানুষের সাথে অতিমানবের (Superman) পার্থক্যের মত। সাধারণ মানুষও অনেক সময় অসাধারণ কাজ করে ফেলে, আর সুপারম্যান! সব সময় সুপার!
মহা ভারী ব্ল্যাকহোলরাই মহাবিশ্বের বৃহত্তম কৃষ্ণগহবর। সাধারণ কৃষগহবর যেখানে শত শত বা হাজার হাজার নক্ষত্রকে, এমনকি পুরো তারকামণ্ডলকে হুমকিতে ফেলতে পারে, সেখানে মহা ভারী ব্ল্যাকহোলর সমগ্র ছায়াপথকে (Galaxy) কে গ্রাস করে ফেলতে পারে। এদেরকেই সাধারণত ছায়াপথের কেন্দ্রে দেখা যায়। এদের ভর বিলিয়ন বিলিয়ন সৌর ভরের সমপরিমাণ হতে পারে।
এদের ভর এত বেশি যা চিন্তা করতে গেলে মাথা কেমন কেমন করে ওঠবে! বৃহত্তমদের মধ্যে বৃহত্তম ব্ল্যাকহোল হবার রেকর্ড এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে এনজিসি ১২৭৭ ( NGC 1277) নামক ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ব্ল্যাকহোল । এনজিসি ১২৭৭ হচ্ছে একটি লেন্টিকুলার গ্যালাক্সি। লেন্টিকুলার গ্যালাক্সিদের আকৃতি হচ্ছে উপবৃত্তাকার ও স্পাইরাল এই দুই আকৃতির মাঝামাঝি প্রকৃতির। পারসিউস( Perseus) নক্ষত্রপুঞ্জে (Constellation) এনজিসি ১২৭৭ এর অবস্থান। এর দূরত্ব আমাদের বাড়ি মানে মিল্কিওয়ে ছায়াপথ থেকে ২২ কোটি আলোকবর্ষ।
এই এনজিসি ১২৭৭ গ্যলাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত বৃহত্তম ভারী ব্ল্যাকহোলটি তার গ্যালাক্সির স্ফীত অংশের ৫৯ ভাগ ভরের জন্য দায়ী। হিসেব করে এই কৃষ্ণদানবের ভর পাওয়া গেছে গেছে ১৭ বিলিয়ন সৌর ভরের সমান। [সূত্র- ২] জেনে রাখুন এক সৌর ভর মানে আমাদের সূর্যের ভরই হচ্ছে 2×1030  কেজি। [ ১ বিলিয়ন মানে ১০০ কোটি] তাহলে ভাবুন ব্যাটা কত বিশাল ভারী!
এখন পর্যন্ত এর চেয়ে ভারী ব্ল্যাকহোলের সন্ধান মেলেনি। আক্ষরিক অর্থেই এই দানব নিজের আবাসকে (মানে ছা্যাপথকে) গিলে ফেলছে। এনজিসি ১২৭৭ ছায়াপথে কোটি কোটি তারকা ও তার দশগুণ গ্রহ ও অন্যান্য পাথুরে বস্তু আছে। এতকিছু থাকতে একটা মাত্র বস্তু ১৪% ভর ধরে রেখেছে। কি মহা দানবরে বাবা! অথচ অন্যান্য নিরীহ (!) ব্ল্যাকহোলরা তার ছায়াপথের মাত্র ০.১ ভাগ ভর ধারণ করে।
এর এই বিশালতার কারণে অন্যান্য ব্ল্যাকহোলও এর কাছে নিতান্তই তুচ্ছ। এই দানবকে সৌরজগতে নিয়ে আসা হলে সব গ্রহ সে তার পেটে চালান করে দিত। আমাদের সৌরজগতের নেপচুন গ্রহের কক্ষপথের চেয়ে কৃষ্ণগহবরটি ১১ গুণ প্রশস্ত, তার ঘটনা দিগন্তকে বিবেচনাই না রেখে হিসেব করেই। (ঘটনা দিগন্ত বা Event Horizon হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের যেই সীমা যেখান থেকে আলোও আসতে পারে না)

সূত্রঃ
১.  http://www.fromquarkstoquasars.com/the-4-largest-objects-in-the-known-universe/
২. http://www.nature.com/nature/journal/v491/n7426/full/nature11592.html
৩. http://en.wikipedia.org/wiki/NGC_1277
Category: articles

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪

আইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ব বলছে আলোর বেগ (3×108 m/s) ই সর্বোচ্চ, কোন কিছুই এই বেগ অতিক্রম করতে পারে না। কিন্তু এটাও ঠিক গ্যালাক্সিরা আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে দূরে প্রসারিত হচ্ছে। তাহলে? চলুন দেখা যাক---!! 

আলোর বেগের কাছাকাছি যেতে হলে প্রয়োজন অনেক বেশি এনার্জি। মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের সর্বোচ্চ গতির রেকর্ড হচ্ছে ঘন্টায় প্রায় ৪০ হাজার কি.মি.। এটা হল অ্যাপোলো-১০ এর গতি। 
মহাবিশ্বের সব শক্তি ব্যবহার করে ফেললেও আলোর সমান বেগ অর্জন সম্ভব নয়। আমরা জানি, বিগ ব্যাঙের পর থেকেই ডার্ক এনার্জির প্রভাবে মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। ছায়াপথসমূহ একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সেগুলো ছাড়া যারা নিজেদের মধ্যকার মহাকর্ষীয় টানে আবদ্ধ। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও প্রতিবেশি অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি নিজেদের থেকে দূরে না সরে পারস্পরিক মহাকর্ষীয় ভালোবাসায় দিন দিন কাছে আসছে।
আমাদের থেকে যে গ্যালাক্সি যত দূরে দেখা যায় তারা তত বেশি বেগে দূরে প্রসারিত হচ্ছে। ফলে এটা সম্ভব হয়ে যাচ্ছে যে তাদের কেউ কেউ অনেক দূরে হওয়ায় বেগ বাড়তে বাড়তে আলোর বেগকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় সেই সব গ্যালাক্সি থেকে আলো কখোনই আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছবে না।
এ অবস্থায় ঐ গ্যালাক্সি থেকে আসা পৃথিবীতে পৌঁছানো সর্বশেষ ফোটনটি দেখা যাবার পরই গ্যালাক্সিটি দৃষ্টিসীমা থেকে হারিয়ে যাবে।
এখানে এখন আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আলোর পরম বেগ বিষয়ক আইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ব লংঘন হচ্ছে। কিন্তু না। প্রকৃতপক্ষে গ্যালাক্সিরা নিজেরা খুব বেশি জায়গা (Space) অতিক্রম করছে না। বরং Space বা স্থান নিজেই প্রসারিত হচ্ছে যার কারণে সাথে সাথে গ্যালাক্সিরাও প্রসারিত হচ্ছে। 
খানে মাথায় রাখতে হবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মানে মহাবিশ্বের আয়তনের প্রসারন। অর্থ্যাৎ Space বা স্থান প্রসারিত হচ্ছে। অতএব গ্যালাক্সিরা নিজেরা দূরে সরছে না বরং তারা যেই ‘স্থান’-এ আছে সেটাই প্রসারিত হচ্ছে।
মনে করুন একটি পুকুরের কেন্দ্র থেকে সব দিকেই মাছ আছে। এখন কোন এক শক্তির বলে (মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে যেটা ডার্ক এনার্জি) পুকুর প্রসারিত হয়ে পরিধি কেন্দ্র থেকে ক্রমাগত দূরে চলে যাচ্ছে। এই প্রসারণ পানির প্রবাহজনিত বেগ নয়। এখন এর প্রভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাছেরাও নিজেদের থেকে দূরে সরে যাবে।
অথবা ধরুণ, একটি ফূটবল অজানা কারণে আপনাতেই বড় হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এর পরিধিতে আগে থেকেই থাকা পিঁপড়ারাও নিজেদের থেকে দূরে সরবে।
মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে পানি বা ফুটবলের স্থলে প্রসারিত হচ্ছে ফাঁকা স্থান যা প্রসারিত হতে হতে এর ভেতরকার সবকিছুকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
আলোর বেগ যেহেতু এই প্রসারনশীল মহাবিশ্বের একটি বৈশিষ্ট্য তাই সে মহাবিশ্বের কোন বস্তুর জন্য প্রযোজ্য হলেও মহাবিশ্বের নিজের জন্য প্রযোজ্য হবে না। অর্থ্যাৎ  মহাবিশ্ব নিজে আলোর চেয়ে বেশি বেগ পেতে পারে।

আরো তিন ট্রিলিয়ন বছর পর পৃথিবীর দিগন্ত থেকে সব গ্যালাক্সির দৃশ্য মুছে যাবে। তখন পৃথিবীর কোন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের কস্মোলজিস্ট জানবেনই না যে মহাবিশ্ব এত বিশাল। 
সূত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_vehicle_speed_records
২. http://www.universetoday.com/13808/how-can-galaxies-recede-faster-than-the-speed-of-light/
Category: articles

বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

১.প্রাক-কথা: 
বিশাল এ মহাবিশ্ব

অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানিসহ পৃথিবীর মানুষের মধ্যে বৃহত্তর অংশই পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্তে বিশ্বাস করে। জরিপে দেখা যায় চীনে এ বিশ্বাস সবচেয়ে বেশী-৪০%। সব মিলিয়ে বিশ্বাস পুরুষের ২২% আর নারীতে ১৭%। বৈজ্ঞানিক তত্তকথা, সাধারণ জ্ঞান ও ধর্মীয় গ্রন্থরাজি থেকে ধারণা নিয়ে এর পক্ষে- বিপক্ষে প্রচুর মত রয়েছে।
এলিয়েন বা পৃথীবির বাইরের জীব বিষয়ক গবেষণা ও স্টাডিকে বলা হয় exobiology অথবা astrobiology( এ শব্দটি পৃথিবীর ক্ষেত্রেও প্রচলিত)।

২.থাকার সম্ভাবনা যে কারণে: ১৫৪৩ সালে কোপার্নিকাস এরিষ্টটলের বিপক্ষে গিয়ে বলেন পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় বরং সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান সাধারণ একটি গ্রহ। হাবলের টেলিস্কোপ প্রথমবারের মত মহাবিশ্বের বিশাল পরিধি মানুষের সামনে নিয়ে আসে। জানা গেল মহাবিশ্বে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি বা তারকামণ্ডল।

আমাদের গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র যার মধ্যে আমাদের সূর্যও একটি।
এ বিশাল মহাবিশ্বে সূর্যের মত রয়েছে অসংখ্য নক্ষত্র। তাদের কোনটিতে আমাদের সৌরব্যবস্থার মত ব্যাবস্থা থাকতেই পারে।


আমাদের তারকামণ্ডল (মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা)

মহবিশ্ব অনেক বড় হবার কারণেই স্টিফেন হকিং এবং কার্ল সেগান এর মতে প্রথিবীর বাইরে প্রাণ থাকার সম্ভাবনাটাও বেশী।
অণুজীবরা যদি পৃথিবীর অভ্যন্তরেই পাথরের ছোট ছোট ছিদ্রে থাকতে পারে তাহলে পৃথিবীর বাইরেও এরকম স্থানে থাকতেই পারে।
অনেকে প্রথিবীর বাইরে প্রাণের প্রমাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যাওয়া UFO(=Un-identified Flying Object=অচেনা উড়ন্ত বস্তু) ’র কথা বলেন। তবে বেশিরভাগ UFO কেই পৃথিবীসৃষ্ট আকাশযান অথবা কোন মহাজাগতিক বস্তু বা দেখার ভুল হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়।

৩.১আমাদের সৈৗরজগতে থাকার সম্ভাবনা:

আমাদের সৌরজগত

আমাদের সৌরজগতে এ সম্ভাবনার দৌড়ে এগিয়ে আছে শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা, শনির উপগ্রহসমূহ যেমন টাইটান ও Enceladus ।

মঙ্গল গ্রহের সম্ভাবনা:


মঙ্গল গ্রহ

মঙ্গল গ্রহ আমাদের্ সৌরজগতে অবস্থানের কারণে এতে প্রণের অস্তিত্ত থাকতে পারে বলে অনেক বিজ্ঞানীর দৃঢ়বিশ্বাস। মনে করা হয় একসময় মঙ্গলের বুকে তরল পানি প্রবাহিত হত, ফলে এখনো এর অভ্যন্তরভাগে পানি থাকতে পারে। এছাড়া এর আবহাওয়ায় মিথেন গ্যাস পাওয়া গেছে।
২০০৮ সালের জুলাইয়ে ফিনিক্স মার্স ল্যান্ডার প্রমাণ করে মঙ্গলের মাটির নমুনায় পানির অস্তিত্ত বিদ্যমান। যন্ত্রটির রোবটিক হাতে সংগৃহীত মাটির নমুনায় তাপ দিয়ে প্রাপ্ত বাষ্পে পানিকণা পাওয়া যায়।
ম্যাক্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার থেকে পাঠানো রিপোর্টে প্রমাণ পাওয়া যায় গত ১০ বছরের মধ্যে মঙ্গলে পানি প্রবাহিত হয়েছে। তবে প্রাণ আছে কিনা এ ব্যাপারে এখনও শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়।

শনির উপগ্রহ টাইটান:


শনির উপগ্রহসমূহ

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান। নাসার বিজ্ঞানীরা ক্যাসিনীর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে বলেন একমাত্র টাইটান্ প্রাণধারণের উপযোগী এবং সেখানে জীবনের উৎপত্তিও হয়েছে।
ইকারাস সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবণ্ধে বলা হয় টাইটানের হাইড্রোজেন গ্যাস গ্রহপৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে হারিয়ে যাচ্ছে, এ থেকে প্রমাণ হয় যে প্রণীরা শ্বাস নিচ্ছে এবং তারা সম্ভবত অক্সিজেনের পরিবর্তে হাইড্রোজেন গ্রহণ করছে।

তবে চলতি বছরের (২০১১) মে মাসে বিজ্ঞানীরা বলেন, ’আমাদের জানামতে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ত থাকার ব্যাপারে শনির উপগ্রহ Enceladus সবচেয়ে সম্ভাবনাশীল।’

৩.২.সৌরজগতের বাইরের সম্ভাবনা:


মিল্কিওয়ে (আমদের ছায়াপথ) ছাড়াও মহাবিশ্বে আরো শতকোটি তারকামণ্ডল বা ছায়াপথ আবিষ্কৃত হয়েছে। সেসব তারকামণ্ডল বা নক্ষত্রমণ্ডলেও পৃথিবীসদৃশ গ্রহ আছে। আমাদের নিকটতম ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা ২০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।হাবল টেলিস্কোপের আল্ট্রা ডিপ ক্যামেরার সাহায্যে ৩০ কোটি আলোকবর্ষের চেয়েও বেশি দূরত্বের আলোকবর্ষও পর্যক্ষেণ করা গেছে। অ্যান্ড্রোমিডায় সূর্য্যের মত কোন নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ বা উপগ্রহ থাকতে পারে যা আমাদের পৃথিবীর মত বাসযোগ্য হতে পারে।
এছাড়া এ বিশাল মহাবিশ্বে সূর্য্যের মত অসংখ্য নক্ষত্র রয়েছে। বসবাসোপযোগী নক্ষত্র থাকতে হলে তাকে নিজস্ব ছায়াপথের বাইরের দিকে থাকতে হবে এবং তার নিজস্ব গতি তার ছায়াপথের আবর্তনের সাথে সর্ম্পকযুক্ত হতে হবে। তবে গামা ও মহাজাগতিক রশ্মির আধিক্য থাকলে তা প্রাণের অস্তিত্তের পথে বাধা হবে। আবার তার গতি নিজস্ব ছায়াপথের আবর্তনের সাথে অসংগতিপূর্ণ হলে তার গ্রহব্যবস্থা কয়েক মিলিয়ন বছরেই মিলিয়ে যাবে।

তবে পানি থাকার সম্ভাবনার কারণে সম্প্রতি আবিষ্কৃত প্রায় পৃথিবীর ভরের সমান গ্রহ গ্লিস ৫৮১ সি, জি এবং ডি এক্ষেত্রে সম্ভাবনাময়ী।

৪.পরোক্ষ প্রমাণ:
আর্জেন্টিনার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৭০০ মিটার (১৫হাজার ৪০০ ফুট) উপরে লেক ডায়মান্ট নামক হ্রদে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এ আবিষ্কার থেকে ভিনগ্রহে প্রাণের ব্যাপারে সূত্র পাওয়া যেতে পারে।কেননা হ্রদটির কাছেই রয়েছে মাইপো আগ্নেয়গিরি। এখানে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের প্রকট অভাবেও বেঁচে আছে। এর আগে বিরুপ পারবেশে টিকে থাকা ‘এক্সট্রিমোফিলস’ নামক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু ’পলিএক্সট্রিমোফিলস’ নামক ব্যাকটেরিয়া চরম বৈরি পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। ওই হ্রদে আর্সেনিকের নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ২০ হাজার গুণ বেশি মাত্রা রয়েছে। তাপমাত্রা প্রায়ই শূণ্যের নিচে নামে। কিন্তু অতিরিক্ত লবণক্ততার কারণে বরফ জমাট বাঁধেনা।
এ আবিষ্কার নিঃসন্দেহে ভিনগ্রহের বৈরি পরিবেশেও প্রাণের অস্তিত্তের পক্ষে রায় দেয়।

৫.অভিযান-অনুসন্ধান:

ভিনগ্রহের প্রাণের খোঁজে অনুসন্ধান চলতে থাকলেও স্টিফেন হকিং বলছেন ভিনগ্রহে প্রাণীর খোঁজ পেলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা ঠিক হবেনা । যা হোক এ সতর্কবাণীতো আর মানুষের কৌতূহল দমাতে পারবেনা।
USSR এর কৃত্রিম উপগ্রহ স্ফুটনিকের মাধ্যমে মহাশূন্যে অভিযান শুরু।
গবেষকরা ভিনগ্রহের প্রাণের খোঁজ করছেন পৃথিবীতে বসেই পুরানো নথিপত্র ঘেঁটে। হয়তো অতীতে্ এলিয়েনরা পৃথিবীতে এসেছিল আর তখনকার মানুষ তা দেখে নথিভুক্ত করে রেখেছে। এরিক ভন দানিকেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, দেয়ালচিত্র ও দেয়াল-লিখনে খুঁজে দেখেছেন এলিয়েনদের বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল। তবে অনেকেই এ দলিলগুলোকে প্রমাণ হিসেবে মানতে নারাজ।

পৃথিবীর বাইরে খোঁজার জন্য ফ্রাংক ড্রেক ১৯৬০ সালে SETI(search for extra-terrestial intelligence) প্রতিষ্ঠা করেন। এটা পৃথিবীতে বসেই বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে এলিয়েন অনুসন্ধান করে। ১০টিরও বেশি দেশে এর কার্যক্রম চলছে। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানী ড্রেক একটি সমীকরণ দেন দেন যা অবশ্য বিজ্ঞানী ফার্মির মতে নিছক হেঁয়ালি।
চিলির আতাকামা মরুভূমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিস্কোপ যার ব্যাস হবে প্রায় ৪২ মিটার।



সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় একটি বিশাল টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে যা পৃথিবীর মত সম্ভাব্য ৮৬টি গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ত খুঁজবে। SETI প্রকল্প বাজেট ঘাটতির কারণে বন্ধ হবার উপক্রম হলে ২০০৭ সালে SETI এর প্রকল্পের অংশ ATA, ইউসি বার্কলে রেডিও অ্যস্ট্রোনমি ল্যাবের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে।
তদুপরি নাসার (NASA=National Aeronautics and Space Administration) বহুমুখি কার্যক্রমতো চলছেই।
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...