Advertisement

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ ঢাকার আকাশে এত কম তারা দেখা যায় কেন? গ্রামেতো অনেক অনেক তারা দেখা যায়।
[উত্তম কুমার]

উত্তরঃ
রাতের আকাশে খালি চোখে আমরা একবারে দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই। খালি চোখে দৃশ্যমান সব তারার সংখ্যা যোগ করলে হয় ৯০৯৬ টি তারা। হিসাব দুটো কেন? কারণ হচ্ছে রাতের আকাশের অর্ধেক অংশ সব সময় পৃথিবীর উল্টো পাশে থাকে যা আমরা দেখতে পাই না। সময় যেতে যেতে তা পূব আকাশে দৃশ্যমান হতে থাকে। আবার একই সাথে দক্ষিণ ও উত্তর গোলার্ধের সব তারা দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
☛ খালি চোখে আমরা কত তারা দেখি?

কিন্তু উপরে বলা এত এত তারা দেখা যাবে চাঁদহীন, অন্ধকার এবং নির্বিঘ্ন আকাশে। এ জন্যে গ্রামে গেলে দেখা যায় রাতের আকাশ তারায় তারায় ভরপুর। কিন্তু শহরে এলেই তারারা উধাও, হাতে গোণা অল্প কিছু তারা দেখা যায়। এই সংখ্যা এক হাজারেও পৌঁছায় না। অধিকাংশ সময়ই থাকে কয়েকশোর কাছাকাছি। কিন্তু কেন? ঢাকা বা অন্যান্য শহরের আকাশে এত কম তারা কেন?
এর প্রধান কারণ হল শহরের আলোক দূষণ। কৃত্রিম আলোর কারণে প্রাকৃতিক আলো বা দৃশ্য ঝাপসা হয়ে পড়াকে বলা হয় আলোক দূষণ বা লাইট পোলিউশান (light pollution)।
তারার আলোরা শহরের কৃত্রিম আলোর কাছে হেরে যায়

ঢাকার আকাশে কম তারা থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে এর বায়ু দুষণ। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার আকাশে প্রতি দিন ৫০ টন সিসা নির্গত হয়।
আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের বায়ুতে প্রতি বছর ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম১০) মিশছে ৫৮ হাজার ৫২৪ টন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার ধুলো-ময়লা, কারখানার নির্গত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর পদার্থ। পাশাপাশি ২০ হাজার ৮১৯ টন অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) তথা লোহা, সিসা, জিংক ইত্যাদির বিষাক্ত জৈব মিশছে বাতাসে। এছাড়া প্রতি বছর ৬০ হাজার ২১৬ টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ১৪ হাজার ৮৬২ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও ৫৩ হাজার ৪৫ টন কার্বন মিশছে ঢাকার বায়ুতে।
বিস্তারিত দেখুন তিন নং সূত্রে।

রাতের আকাশের তারার সংখ্যা কেমন হবে তা দিনের আকাশের রং দেখেও আন্দাজ করা যায়। যদি আকাশ খুব নীল হয়, তাহলে অনেক অনেক তারা দেখা যাবে। কিন্তু দিনের আকাশ যদি হয় হালকা নীল, ধূসর, সাদা, বাদামী বা কমলা রঙের, তাহলেই সমস্যা। এ কথা প্রযোজ্য বায়ু দুষণের ক্ষেত্রে। বায়ু দুষণ না থাকলেও আলোক দুষণ রাতের আকাশে বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেই। তবে বৃষ্টি হলে তার পরপর যখন আকাশ মেঘমুক্ত হয়, সেই সময় আকাশ শহরেও অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন রকম কারণে ঢাকায় রাতের আকাশের দিকে তাকালে কোণায় কোণায় কিছু উজ্জ্বল তারা, তারামণ্ডলী যেমন আদম সুরত, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, কিছু তারাভুজ যেমন সামার ট্রায়াঙ্গেল ইত্যাদি দেখা যায়। আরো অনুজ্জ্বল বস্তুরা থাকে চোখের আড়ালে।
আরো পড়ুনঃ 
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সূত্রঃ
১। http://www.bangladeshenvironment.com/index.php/polution-s/air-polution/291-air-pollution-in-dhaka-city
২। https://www.quora.com/Why-do-we-see-less-stars-in-the-skies-these-days
৩। বণিক বার্তা
Category: articles

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ছোট বেলায় বইয়ে পড়তাম, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়। শুনে ভাবতাম চাঁদের মধ্যে একটি স্টোর রুম আছে যেখানে চাঁদ দিনের বেলায় সূর্যের আলো জমা করে রাখে। আর রাতে সেই আলো দিয়ে চাঁদ পৃথিবীকে আলোকিত করে।
ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ জ্ঞানের প্রথম অংশ ঠিক ছিল, কিন্তু নিজের ভাবনা ছিল ভুল। তবে বইয়ের ভাষাকেও একটু দোষারোপ করতেই হয়। চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়- এভাবে বলার দরকার কী? এটা শুনলেই একটু একটু মনে হয়, হ্যাঁ, আলো জমা করে রাখা হয়।
সূর্যের আলোর মাধ্যমে পৃথিবী ও চাঁদ দুজনেই একে অপরকে আলোকিত করে

মূল কথায় আসি। বইয়ে আসলে বলা উচিৎ ছিল, চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফিলত করে পৃথিবীকে আলোকিত করে।  অর্থ্যাৎ, চাঁদ আসলে বিশাল বড় এক দর্পণ। অবশ্যই সাইজেই বড়ো, দর্পণ হিসেবে চাঁদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এর পৃষ্ঠ খুব এবড়োথেবড়ো এবং ধূসর কালো।
চাঁদের পৃষ্ঠের এবড়োথেবড়ো ছবি

চাঁদ সূর্যের মাত্র ১২ ভাগ আলো প্রতিফলিত করতে পারে। তাছাড়া চাঁদ যেটুকু আলো প্রতিফলিত করে তার সবটুকু আমরা পাই না। এটা নির্ভর করে চাঁদ এর কক্ষপথের কোন জায়গায় আছে তার উপর।
পৃথিবী ঘুরছে সুর্যের চারদিকে, আর চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে
চাঁদের প্রথম ও শেষ চতুর্থকের সময় এর অর্ধেক অংশ আলোকিত হয়, কিন্তু এ সময়ের চাঁদ উজ্জ্বলতায় পূর্ণিমার চাঁদের মাত্র ৮ ভাগ। দুই চতুর্থকের সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দৃশ্যমান অংশের অর্ধেক দেখা যায়। এ সময় চাঁদ যথাক্রমে মধ্য রাতে উদিত হয় বা অস্ত যায়।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য
প্রতি মাসের বিভিন্ন সময় চাঁদকে বিভিন্ন নক্ষত্রের আশেপাশে দেখা যায়। যেমন চিত্রা, আলডেবারান ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
চাঁদ নিয়ে লেখা সব নিবন্ধঃ এখানে
সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/75891/why-does-the-moon-shine/
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

টেলিস্কোপের মাধ্যমে রাতের আকাশের সৌন্দর্য চলে আসে হাতের নাগালে। কিন্তু টেলিস্কোপ কেনার আগে একটু বুদ্ধি খাটানো দরকার। না হলে দেখা যাবে, টেলিস্কোপ রাতের আকাশের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেকেই আবার এত উচ্চ কনফিগারেশনের টেলিস্কোপ কিনে ফেলেন যার কোন প্রয়োজনই নেই, অথবা যা বিগিনারদের জন্যে উপযুক্ত নয়। তাহলে কী করলে ভালো হয়? চলুন দেখা যাক।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য 

আমরা জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রাতের আকাশের দারুণ দারুণ ছবি দেখি। মনে রাখতে হবে এই ছবিগুলো সাধারণ টেলিস্কোপে তোলা নয়। এসব ছবি তোলা হয় উচ্চ ক্ষমতার টেলিস্কোপ, ক্যামেরার দীর্ঘ সময়ের এক্সপোজার বা স্পেইস টেলিস্কোপ দিয়ে। এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে আকাশের বস্তুদের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য চলে আসে চোখের খুব কাছে। অনেক সময় কোনো কোনো ছবি একাধিক ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
তাই বলে হতাশ হবার কোনো প্রয়োজন নেই। ছোট্ট একখান টেলিস্কোপ আপনার চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করতে সক্ষম। আপনার টেলিস্কোপের প্রথম লক্ষ্যই হবে চাঁদ। এটিতো রাতের আকাশের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল বস্তু। এমনকি ৩০ পাওয়ারের (৩০ পাওয়ারের অর্থ বস্তুটাকে ৩০ গুণ কাছে থেকে দেখলে যেমন দেখা যেত তেমন দেখা) একটি টেলিস্কোপ আপনাকে চাঁদের কালো অঞ্চল, উঁচু- নিচু অঞ্চল এবং এর শত শত খাদও দেখিয়ে দেবে। আরও বেশি শক্তির টেলিস্কোপ হলে চাঁদের পুরোটাই টেলিস্কোপের আইপিসে (যেখানে চোখ রাখা হয়) এঁটে যাবে। দেখা যাবে এটি ক্রমশ দৃষ্টি থেকে সরে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এটি পশ্চিমে সরে যাচ্ছে বলে। এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনার মনে হবে, আপনি আর এ জগতে নেই। মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন একজন নভোচারী  হিসেবে!
২০ থেকে ৩০ পাওয়ারের টেলিস্কোপ আপনার সামনে গ্রহদেরকেও দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলবে। কিন্তু পাওয়ার যদি হয় ৪০, আপনি চাঁদের মতো বুধশুক্র গ্রহেরও দশা (বড়ো- ছোট হওয়া) দেখতে পাবেন। দেখবেন মঙ্গলের লাল রঙের ছড়াছড়ি, বৃহস্পতির প্রধান চারটি উপগ্রহ যা গ্যালিলিও সবার আগে দেখেছিলেন, শনির বলয় ও উপগ্রহ টাইটান, তারার মতো দেখতে ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ। আরও দেখবেন (অন্ধকার আকাশ হলে ভালো হয়) ডাবল স্টার, নক্ষত্র গুচ্ছ, নেবুলা, প্রায় আড়াই লাখ দূরের অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ইত্যাদি।
এখন বাস্তবতা হল, এই জিনিসগুলো দেখার জন্যে আপনি যদি মুখিয়ে থাকেন, তাহলে টেলিস্কোপ কেনার আগে অন্তত একটিবার একটি বাইনোকুলার বা দুরবিন কেনার কথা ভাবুন। শুনতে হাস্যকর লাগলেও পেশাদার ও অপেশাদার দুই ধরনের জ্যোতির্বিদদেরই পরামর্শ এটাই। আপনি যদি একজন পোড়-খাওয়া আকাশ পর্যবেক্ষককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে উত্তর পাবেন এ রকম,
প্রথমে কিছু দিন খালি চোখে আকাশ দেখুন, এরপর একটি বাইনোকুলার কিনুন।
বাইনোকুলার কিনতেঃ
অনেকেই বাইনোকুলারকে একেবারেই অবহেলা করেন। কিন্তু সত্যি বলতে, অনেকগুলো কাজের জন্যে বাইনোকুলারই হচ্ছে সেরা ডিভাইস। একটি ৭ পাওয়ারের বাইনোকুলার দামেও স্বস্তা, বহন করতেও ঝামেলা কম। আরেকটু পাওয়ার বাড়িয়ে নিলেই এটি আপনাকে সাধারণ টেলিস্কোপের চেয়ে ভালো সেবা দিবে। আমার নিজের ২০ পাওয়ারের দুরবিন দিয়ে চাঁদের স্পষ্ট দৃশ্যসহ খালি চোখের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি তারা দেখি। অন্যদের মতোই বাইনোকুলারে চোখ রেখে রাতের আকাশ দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ না হয়ে পারিনি।
অনেকেই ৭ x ৫০ দুরবিন বেশি ব্যবহার করেন। এখানে ৭ হচ্ছে এর পাওয়ার। বস্তুটিকে ৭ গুণ কাছ থেকে দেখলে যেমন দেখা যেতে এটা দিয়ে তাই বোঝায়। আর ৫০ হচ্ছে এর অভিলক্ষ্যের ব্যাস।
ছবিতে দেখুনঃ-
দুরবিনের হিসাব বুঝতে হলে এর আইপিস ও অভিলক্ষ্য চিনতে হবে
টেলিস্কোপে ও বাইনোকুলার নিয়ে আরও নিবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন এইএই লিঙ্কে। 
Category: articles

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য-পিপাসুরা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। কিন্তু খালি চোখে আমরা ঠিক কতগুলো তারা দেখতে পাই? প্রশ্নটির উত্তর এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব নয়। এটা নির্ভর করে আপনার বয়স, চোখের ক্ষমতা, এলাকা, ঋতু, আবহাওয়া, চাঁদ থাকা না থাকা ইত্যাদিসহ অনেকগুলো বিষয়ের উপর। কিন্তু তবুও একটা উত্তর যদি শুনতেই হই তবে সংখ্যাটা হবে কয়েক হাজার। গল্প- উপন্যাসের বইতে যে লাখ লাখ তারার কথা থাকে তা নিছকই বাড়াবাড়ি।
আমেরিকার টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের কাছে আকাশের দৃশ্য
আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।
চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি।

মহাবিশ্বে মোট কত তারা আছে জানেন? তা কেউ জানে না। কারণ সত্যিকারের মহাবিশ্ব কত বড়ো তাই আমরা জানি না। তবে আমরা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কথা বলতে পারি, অর্থ্যাৎ মহাবিশ্বের প্রায় চৌদ্দশো কোটি বছরের প্রসারণে এর যত দূর পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা। আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা অন্তত ১০ হাজার কোটি গ্যালাক্সি দেখতে পাই। প্রতি গ্যালাক্সিতেই গড়ে আবার ১০ হাজার কোটি তারকা থাকে। তাহলে শুধু আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যেই কত কত তারা ভাবুনতো একবার! ১ এর পরে অন্তত ২২টা শূন্য দিলে যা হয় ততগুলো!
এর মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই আছে প্রায় চারশো বিলিয়ন বা চল্লিশ হাজার কোটি তারা। আমরা খালি চোখে যাদেরকে দেখি তারা সব এখানকারই তারকা।
যেসব তারার আপাত উজ্জ্বলতা (+৬) অথবা (+৬.৫) এর নিচে আমরা শুধু তাদেরকেই খালি চোখে দেখি। আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হওয়া তারার কম উজ্জ্বলতা বোঝায়।
সর্বোচ্চ (+৬.৫) মাত্রার তারা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই
আরও পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরা সবাই হয় উত্তর নয়ত দক্ষিণ গোলার্ধে বাস করি। বাংলাদেশে থাকায় আমরা আছি উত্তর গোলার্ধে। এখন উভয় গোলার্ধ থেকে দেখা তারার সংখ্যা কিন্তু সমান হবে না। এমনকি একই গোলার্ধেও অক্ষাংশের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যাবে আকাশের তারার সংখ্যা। অন্য দিকে, আপনি যখন রাতে আকাশের দিকে তাকালেন তখনওতো প্রায় অর্ধেক তারা রয়ে গেছে পৃথিবীর উল্টো পাশের আকাশে। আর সূর্য সব সময় কিছু না কিছু তারাকে ঢেকে রাখে। এরাই হল রাশিচক্রের তারা। এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে এদেরকে দেখা যায় না। তাই তারা গুনতে হলে কয়েক মাস এ জন্যেও অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রাশিচক্র কাকে বলে?

তাহলে আসলে কত তারা দেখা যায়। ঠিক আছে, আপনি যদি মাসের পর মাস সময় নিয়ে দুই গোলার্ধ ঘুরে এসে চাঁদহীন আকাশের তারাগুলো গুনতে পারেন, তবে সব মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার তারা খালি চোখে দেখবেন। আগেই বলেছি, আমরা খালি চোখে সর্বোচ্চ ৬.৫ মাত্রার নক্ষত্র দেখতে পাই। ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ডরিট হফলেইট এই সীমা পর্যন্ত তারগুলো গুনে ফেলেছেন। সংখ্যাটি হয়েছে ৯০৯৬।
এটা হচ্ছে সর্বমোট সংখ্যা। এবার দুই গোলার্ধ ভাগ করে দিলে ভাগে পড়বে গড়ে ৪৫৪৮টি তারা। সব সময় আবার আকাশের এক অংশ আমাদের উল্টো পাশে থাকে। তাই আবার দুই দিয়ে ভাগ দিলে পাব ২২৭৪ টি তারা। এ জন্যেই আমরা বলি খালি চোখে আমরা একবারে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই।
আরও পড়ুনঃ উজ্জ্বল তারাদের গল্প
এখানে প্রধান ২০টি তারকা খুঁজে বের করার উপায় ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বলা আছে।

কিন্তু সাথে একখানা দুরবিন রাখুন। এই সংখ্যা লাফ দিয়ে উঠে যাবে ২ লাখে! আপনি দেখবেন ৯ মাত্রার তারাগুলোও। ১৩ মাত্রার তারা দেখাতে সক্ষম এমন টেলিস্কোপ হাতে পেলে আপনি দেড় কোটি পর্যন্ত তারা দেখতে পাবেন। দারুণ, তাই না!

সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/102630/how-many-stars-are-there-in-the-universe/
২। http://www.skyandtelescope.com/astronomy-resources/how-many-stars-night-sky-09172014/
Category: articles

সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬

রাতের আকাশে চোখ নিক্ষেপ করলেই হাজার হাজার তারার আলো আমাদের চোখে ধরা দেয়। হাজার হাজার বলা অবশ্য ভুল। মেঘহীন পরিষ্কার রাতের আকাশে বড়জোর ২ থেকে আড়াই হাজার তারা দেখা যায়। আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।

চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি। যাই হোক, আমরা দেখতে চাই নক্ষত্রদের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল।


আমরা নিশ্চয়ই জানি, রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হল লুব্ধক। এরপরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে সুহাইল, আলফা সেন্টোরি, স্বাতী, ভেগা ইত্যাদি। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে প্রাথমিক কিছু বিষয় জেনে রাখলে সুবিধা হবে।

তারা ও গ্রহের পার্থক্য কী?
সাধারণত রাতের আকাশে আমরা যা দেখি চাঁদ ছাড়া তাদের বাকী সবাইকে আমরা তারা বলি। কিন্তু এসব বস্তুদের মধ্যে ‘তারা’ যেমন আছে, তার পাশাপাশি আছে গ্রহ, বিভিন্ন সময় থাকতে পারে ধূমকেতু বা উল্কা। আবার থাকতে পারে কৃত্রিম জিনিসও। বিমানের কথা না হয় বাদই দিলাম। রাতের আকাশে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকেই কিছু দিন পরপর আন্তার্জাতিক মহাকাশ স্টেশন দেখা যায়।

তাহলে তারা কারা? তারার পরিচয় সঠিকভাবে দিতে হলে বলতে হবে তারকা বা নক্ষত্র। পৃথিবী বা অন্য গ্রহদের মত তারকাদের কিন্তু কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না। এদের জীবনের প্রাথমিক ভাগে অভ্যন্তরভাগে তাপ নিউক্লিয় সংযোজন (ফিউশন) বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরামভাবে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে আমাদের সূর্যসহ অন্যান্য তারকারা আলো ও তাপ উৎপন্ন করে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই রয়েছে ১০০ বিলিয়ন থেকে ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। এদের সবার আবার  আমাদের সূর্যের মত গ্রহব্যাবস্থা নেই অবশ্য। মহাবিশ্বের প্রায় ৫০% নক্ষত্রই বাইনারি স্টার সিস্টেমের সদস্য। এক্ষেত্রে দুটি নক্ষত্র একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তাহলে বলা যায় এরা একে অপরের গ্রহ?

না। অন্য কারো চারদিকে ঘুরলেই গ্রহ হয়ে যায় না। গ্রহদের নিজস্ব আলো তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এরা কোন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। আমরা রাতের আকাশে খালি চোখে পাঁচটি গ্রহ দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি এরা সবাই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধকের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল।

আমাদেরকে আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে- সেটা হচ্ছে রাতের আকাশের বস্তুদের আপাত উজ্জ্বলতা বা অ্যাপারেন্ট ম্যাগনিটিউড (Apparent magnitude)। একটি বস্তুকে পৃথিবী থেকে দেখতে কতটা উজ্জ্বল লাগে সেটাই হচ্ছে তার আপাত উজ্জ্বলতার পরিমাপ। এটা বস্তুর প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি থেকে আলাদা জিনিস। কারণ, বাস্তবে বেশি দীপ্তিমান হলে দূরত্বসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবী কোন তারকাকে অন্য তারকার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল মনে হতেই পারে। যেমন রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক কিন্তু সবেচেয়ে বেশি দীপ্তিমান ৫০টি তারকার মধ্যেও নেই। তারকার উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা হয় লগারিদম স্কেলে। উজ্জ্বলতার মান যত বেশি হয় তার উজ্জ্বলতা হয় তত কম।

আরও পড়ুন
» আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

আরেকটি বিষয় জেনে রাখি। আকাশের বুকে তারকাদের ঠিকানা। আপনারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা সম্পর্কে জানেন। পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষ বা বিষুব রেখা (Equator)। এখন আকাশকে মাথার উপরে একটি গম্বুজের মত কল্পনা করুন। যদিও আসলে তারাগুলো পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত তবু রাতের আকাশে এদেরকে এরকম কোন কল্পিত গবম্বুজে ছাঁটানো লাইটের মতই মনে হয়। এটা ধরে নিলে তারাদেরকে অবস্থান নির্ঢারণ করাও সহজ হয়ে যায়। তাহলে আকাশকে গম্বুজ কল্পনা করলেন। আমরা বোঝার জন্যে যাকে গম্বুজ কল্পনা করলাম তার সঠিক নাম খ-গোলক (Celestial Spehere)। এবার বিষুব রেখার উপরে খ-গোলকের মধ্যে একটি রেখা কল্পনা করুন। একে বলা হয় খ-বিষুব।

খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তারাদের অবস্থান অনেকটা পৃথিবীর অক্ষাংশের মতই বের করা হয়। তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা উত্তর ও দক্ষিণের জন্যে মানের আগে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ কথাটা যোগ করি। যেমন বাংলাদেশে অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। কিন্তু খ-গোলকের ক্ষেত্রে উত্তরে হলে এর আগে + চিহ্ন এবং দক্ষিণে মাইনাস চিহ্ন (-) বসানো হয়। আর এর আনুষ্ঠানিক নাম ডেক্লাইনেশন (Declination) বা বাংলায় বিষুব লম্ব।

অন্য দিকে পূর্ব পশ্চিমের অবস্থান নির্ণয়ের জন্যে দ্রাঘিমার মত একটি বিষয় আছে। এর নাম বিষবাংশ (Right ascension)। তবে এতে একটু ঝামেলা আছে এবং বোঝা একটু কষ্টকর। এর কারণ পৃথিবী নিজের অক্ষের সাপেক্ষে আবর্তন করার কারণে আমাদের সাপেক্ষে দ্রাঘিমা অপরিবর্তিত থাকলে খ-গোলক কিন্তু এই আবর্তনের জন্যেই আমাদের সাপেক্ষে ঘুরতে থাকে। তাই এই বিষয়টি আপাতত আলোচনা করলাম না। তাতে আমাদের আপাতত খুব বেশি অসুবিধাও হবে না, যদি আমরা আর একটি কনসেপ্ট বুঝে নেই।

আরো পড়ুন
» বিষুব লম্ব কাকে বলে?

এটি হল তারামণ্ডলী। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ আকাশের কাছাকাছি অবস্থানের কিছু তারকাদের একত্রে কোন প্রাণী বা কাল্পনিক চরিত্রের কথা কল্পনা করত। ১৯৩০ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি এই চিহ্নিত অঞ্চলগুলোকে কিছুটা পরিমার্জন ও পরিববর্ধন করে পুরো খ-গোলককে মোট ৮৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেকটি তারাই এই ৮৮টির কোনটিতে পড়েছে। বিখ্যাত কিছু তারামণ্ডলী (Constellation) হল আদম সুরত বা কালপুরুষ, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, বকমণ্ডলী ইত্যাদি।

তারামণ্ডলী অ তারাভুজের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। তারামণ্ডলী ছারাও অনেক সময় কিছু তারাকে একত্র করে কিছু প্রাণী বা জ্যামিতি চিত্র কল্পনা করা হয়। এরা হল তারাভুজ। যথাস্থানে আমরা এর প্রয়োগ দেখবো।
কোন তারা কোন তারামণ্ডলীতে অবস্থিত এর অবস্থান বের করা আর কঠিন হয় না এবং পাশাপাশি এর বিষুব লম্ব জানলে আরো নিখুঁততভাবে এর অবস্থান জানা যায়। পুরোটা নিখুঁৎ হতে হলে বিষবাংশ না জানলেও হয়। জানলে সুবিধা হয় অবশ্যই।

বিরক্তি এসে যাচ্ছে, না! , তারাদের গল্প শোনানোর লোভ দেখিয়ে এসব কী প্যাঁচাল পাতানো হচ্ছে। ঠিক আছে, এবার আমরা এক এক করে দেখছি-

থুক্কু! আরো দুয়েকটি লাইন না বললেই নয়। বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। ফলে, আমাদের মাথার উপরে খ-গোলকের +২৩ বিষুব লম্ব অবস্থিত। তাহলে আমরা যেসব তারাকে ঠিক মাথার উপরে দেখবো বুঝতে হবে এরা খ-বিষুব থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। আর খ-বিষুব পুরো খ-গোলককে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ- এই দুই অংশ বিভক্ত করেছে।

পুরো আকাশ গোলক ৩৬০ ডিগ্রি। আমরা একসাথে আকাশের অর্ধেক তথা ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পারি। ফলে দুই খ-মেরুর মাঝখানে কৌণিক দূরত্ব ১৮০ দূরত্ব। আমরা উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত হলেও বিষুব রেখার ২৩ ডিগ্রি উত্তরে থাকায় আমরা উত্তর মেরুর দক্ষিণেও ২৩ ডিগ্রি দক্ষিণের তারাও দেখবো। আর দক্ষিণে দেখবো ৯০-২৩ বা প্রায় ৬৭ ডিগ্রির মত। তবে দিগন্তের কাছাকাছি অবস্থানের তারারা নানা কারণে আমাদের চোখে আসতে বাধা পায়। এর মূল কারণ ঘর-বাড়ি বা দূরবর্তী শহরের আলো। অর্থ্যাৎ বলতে চাইছি, আমরা উত্তর গোলার্ধে আছি বলে আমাদের দেখা সব তারকা উত্তর গোলার্ধেই অবস্থিত- এমনটি ভাবা ঠিক হবে না।
এবার সত্যি বলছি,  উজ্জ্বল তারাদের আলো আর পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখবো না।

১। লুব্ধক (Sirius):
নীল এই নক্ষত্রটিই রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল। এটি মূলত দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে থাকলেও সহজেই বাংলাদেশের দক্ষিণ আকাশে দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস একে দেখার সেরা সময়। বিখ্যাত তারামণ্ডলী কালপুরুষ বা আদম সুরতের সাথে থাকে বলে একে খুঁজে বের করাও দারুণ সহজ। একে খুঁজে পেতে হলে আদম সুরতের (Orion) কোমরের দিকে অবস্থিত তিনটি তারকায় গঠিত ওরিনয়ন’স বেল্ট থেকে বরাবর পেছেনে যেতে হবে। সামনে পড়া উজ্জ্বল তারাটিই নির্ঘাত লুব্ধক। এর অবস্থান ক্যানিস ম্যাজর (Canis Major) তারামণ্ডলীতে।
আদম সুরত ও লুব্ধক

আপাত উজ্জ্বলতাঃ  -১.৪৬
বিষুব লম্বঃ – ১৭ ডিগ্রি (এই পরিমাপের ক্ষেত্রে ডিগ্রির ভগ্নাংশকে বাদ দিয়েছি)
দূরত্বঃ ৮.৬৯ আলোকবর্ষ (আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব। নিচের সব ক্ষেত্রেই দূরত্বের এই এককটি ব্যবহার করবো আমরা)

২। সুহাইল (Canopus):
এর অপর নাম অগস্ত্য বা ক্যানোপাস। তারাটির অবস্থান খুব বেশি দক্ষিণে (বিষুব লম্ব মাইনাস ৫২) হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে একে দেখা সহজ। শহর থেকে অবশ্য একটু কঠিন। তবে গ্রামের পরিষ্কার আকাশে একে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। একে খুঁজে পাবার উপায় হল আদম সুরতে রাইজেল ও লুব্ধক তারা দুটিকে যোগ করে লুব্ধক থেকে নিচের দিকে একটি লম্ব আঁকতে হবে। লুব্ধক থেকে রিগেলের প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব পাওয়া যাবে ক্যানোপাসকে।
২য় উজ্জ্বল নক্ষত্র সুহাইল

আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.৬২
বিষুব লম্বঃ -৫২ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩০৯ আলোকবর্ষ

৩। আলফা সেন্টোরিঃ
এটিও দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। আলফা সেন্টোরি সিস্টেমের নক্ষত্রটি এর সঙ্গী প্রক্সিমা সেন্টোরির চেয়ে উজ্জ্বল। অথচ প্রক্সিমা সেন্টোরি সূর্যের (এবং সেই কারণে পৃথিবীরও) নিকটতম নক্ষত্র হওয়া সত্ত্বেও খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। এই নক্ষত্রকে শহর থেকে (বাংলাদেশের) দেখা প্রায় অসম্ভব। গ্রামে গেলে দেখা সম্ভব যদি নির্বিঘ্ন দিগন্ত থাকে, যেহেতু বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ দিকে সর্বোচ্চ মাইনাস ৬৭ বিষুব লম্বের তারা দেখা সম্ভব (থিওরিটিক্যালি) এবং এর বিষুব লম্ব মাইনাস ৬০ ডিগ্রি। কিন্তু দেখা যাবে খুবই সামান্য সময়ের জন্যে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.২৮
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪.৩২

৪। স্বাতী (Arcturus):
উজ্জ্বল তারাদের মধ্যেই এটিই প্রথম যার অবস্থান আকাশের উত্তর গোলার্ধে। লাল দেখতে তারাটি খালী চোখে দৃশ্যমান লোহিত দানবদের মধ্যে অন্যতম । একে খুব সহজেই পাওয়া যায় সপ্তর্ষীমন্ডলীর সাহায্যে। সপ্তর্ষীর চামচ বা পেয়ালার আকৃতির অংশের লেজকে পেছন দিকে বাড়িয়ে এগোতে থাকলে প্রাপ্ত লাল বস্তুটিই স্বাতী। আরো সামনে গেলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা (Spica) যার রোল নং হচ্ছে ১৫।
সপ্তর্ষীমোণ্ডলীর মাধ্যমে স্বাতী ও চিত্রা নক্ষত্র খুঁজে পাবার উপায়

আপাত উজ্জ্বলতাঃ মাইনাস ০.০৫
বিষুব লম্বঃ +১৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৬.৭২

৫। অভিজিৎ (Vega):
৫ম উজ্জ্বল নক্ষত্রটিরও অবস্থান উত্তর গোলার্ধে। ফলে বাংলাদেশ থেকে একেও দেখা খুবই সহজ। অন্য দিকে এটি আবার বিখ্যাত তারাভুজ (Asterism) সামার ট্রায়াঙ্গেল এরও উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। এই তারাভুজের অপর দুটি নক্ষত্র হচ্ছে শ্রবণা (Altair) ও পুচ্ছ (Deneb)। গ্রীষ্মকাল শুরু হলেই এই তারাগুলো রাতের আকাশে হাজিরা দেওয়া শুরু করে। এমনকি শীতের শুরুতেও এদেরকে দেখা যায়। তবে এ সময় এরা থাকে পশ্চিমাকাশে- ডুবু ডুবু।



এর আপাত উজ্জজ্বলতা ০.৩।
দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫.০৪ আলোকবর্ষ। অবস্থান খ-গোলকের +৩৮ ডিগ্রিতে।

৬। ক্যাপেলা (Capella):
রাতের আকাশের সবচেয়ে বিখ্যাত তারাভুজ উইন্টার সার্কেল বা উইন্টার হেক্সগনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হওয়ায় একে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। উইন্টার সার্কেল হচ্ছে আকাশের ৬টি খুব উজ্জ্বল তারাদের নিয়ে তৈরি একটি তারাভুজ। এর তারাগুলো হল যথাক্রমে লুব্ধক, প্রভাস, ক্যাপেলা, পোলাক্স, আলডেবারান ও রাইজেল। উজ্জ্বলতায় এদের ক্রম যথাক্রমে ১, ৮, ৬, ১৭, ১৪ ও ৭।

উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনে ক্যাপেলাসহ অন্যান্য নক্ষত্ররা 

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.০৮
বিষুব লম্বঃ +৪৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪২.৮

৭। রাইজেল (Rigel):
আদম সুরতের বাম পায়ে এর অবস্থান। চিনে নিতে অসুবিধা হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। অন্য দিকে ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি, এটি উইন্টার সার্কেলেরও অন্যতম নক্ষত্র। আদম সুরত বা কালপুরুষের (Orion) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। উপরের ছবিতে খেয়াল করুন, ওরিয়ন’স বেল্টের এক পাশে রাইজেল এবং আরেক পাশে বিটলজুস অবস্থিত। তবে এটি খ-বিষুবের দক্ষিণে অবস্থিত। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ থেকে দেখতে বিন্দুমাত্রও অসুবিধা নেই।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.১৮
বিষুব লম্বঃ -৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৮৬৩

৮। প্রভাস (Procyon)
এর অপর নাম সরমা। এটিও উইন্টার সার্কেলের অন্যতম নক্ষত্র। শখের জ্যোতির্বিদদের আরেকটি সহজ শিকার। লুব্ধক ও রাইজেলকে উইন্টার সার্কেলের বৃত্তচাপের অংশ মনে করে লুব্ধক থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে গেলেই দেখা মিলবে প্রভাসের। [উপরের চিত্র দেখুন]
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪০
বিষুব লম্বঃ +৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১১.৪৬

৯। আর্দ্রা (Betelgeuse):
আদম সুরতের মধ্যে থাকা একটি লাল নক্ষত্র।  রাতের আকাশে চোখে পড় অন্যতম লোহিত দানব (Red giant)। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খুব প্রিয় তারকা। কারণ, এটি যে কোন মুহূর্তে আতশবাজির মত ফেটে উঠবে। কারণ রেড জায়ান্ট দশায় থাকা তারকারা সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে সমগ্র গ্যালাক্সিকে উজ্জ্বল করে তোলে। চিনে নিতে উপরের ছবি দেখুন। আগেই বলেছি ওরিয়নের বেল্ট থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে থাকে বিটলজুস। তবে এটি একটি বিষম তারা। এর মানে হল, এটি সময় সময় উজ্জ্বলতার পরিবর্তন করে। তাই অনেক সময় এর রোল নং ৯ এর বদলে ১০ হয়ে যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ +৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪৯৮

১০। আখেরনার (Acherner):
এটি খুব বেশি দক্ষিণে অবস্থিত। তবু বাংলাদেশ থেকে দেখা অসম্ভব নয়। কিন্তু শহর থেকে দেখা একটু কঠিন। আদম সুরতের ডান পাশ থেকে নদীর মত দেখতে ইরিডেনাস বা যামীমন্ডলীর যাত্রা শুরু। এর একেবারে প্রান্তে আখেরনারের অবস্থান।
 



আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ -৫৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৩৯

১১। হেডার (Hadar):
আমাদের উত্তর গোলার্ধের জন্যে এটি দেখা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এটি সেন্টোরাস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। আর এই তারামণ্ডলীটি সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। আমরা ২৩ ডিগ্রিতে থাকায় বুঝতেই পারছেন একে দেখার জন্যে কেমন বেকায়দায় আছি আমরা। একে দেখার মত নির্বিঘ্ন দিগন্ত পাওয়া হবে সোনার হরিণ পাবার মত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৬১
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৯২

১২। শ্রবণা (Altair):
আগেই বলেছি  সামার ট্রায়াঙ্গেলের অন্যতম নক্ষত্র এটি। ফলে শীত কাল আসতে থাকলে এটি আস্তে আস্তে পশ্চিমে যেতে থাকে। এক সময় আর রাতের আকাশে একে দেখা যায় না। আবার দেখায় যায় গ্রীষ্মের শুরুতে। তবে যাদের ভোরে ওঠার অভ্যাস আছে তারা এপ্রিলেই ভোরের পূব আকাশে একে দেখতে পারেন। একে খুঁজে নিন পূর্বের অভিজিতের মত সামার ট্রায়াঙ্গেলে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৬
বিষুব লম্বঃ +৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৬.৭৩

১৩। অ্যাক্রাক্স (Acrux):
বাংলাদেশ থেকে একে দেখার আশা করা অনুচিত। এটি ক্রাক্স তারামণ্ডলীতে অবস্থিত যেটি ২০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের উত্তরে দেখা যায় না। তাই একে নিয়ে আপাতর বেশি মাথা ঘামাতে চাই না।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৭
বিষুব লম্বঃ -৬৩ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩২২

১৪। আলডেবারান (Aldebaran):
আরেকটি বিখ্যাত লোহিত দানব। আদম সুরতের মাধ্যমে একেও খুব সহজেই খুঁকে নেওয়া যায়। আদমের বেল্ট থেকে প্রায় সোজা ডানে গেলেই একে পাওয়া যাবে। আর বাঁইয়ে গেলে? লুব্ধক। আগেই দেখেছি আমরা। এটিও উইন্টার সার্কেলের সদস্য। এটি বৃষমণ্ডলীর উজ্জ্বলতম তারা।
আদম সুরতের মাধ্যমে আলডেবারান নক্ষত্র খুঁজে পাওয়া যায়
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৮৭
বিষুব লম্বঃ +১৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৬৬.৬৪

১৫। চিত্রা (Spica):
সপ্তর্ষীর চামচ থেকে লেজ বরাবর বৃত্তচাপ এঁকে প্রথমে স্বাতী (রোল নং ৪) এবং আরো সামনে গিয়ে পাওয়া যাবে চিত্রাকে। এটি আবার রাশিচক্রের সদস্য কন্যামণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে কক্ষপথে ঘোরার সময় ১২ মাসের বিভিন্ন সময় আকাশে বিভিন্ন তারা দেখা যায়। আর পৃথিবীর এই গতির কারণে খ-গোলকে সূর্যের একটি কাল্পনিক চলন পথ তৈরি হয় যাকে ইক্লিপ্টিক বা সূর্যপথ বলে। এই অঞ্চলে থাকা তারামণ্ডলীগুলোকে রাশিচক্র বলে। তাই বলে কিন্তু আমরা জ্যোতির্বিদ্যা ছেড়ে জ্যোতিষবিদ্যায় চলে যাইনি। ওদের করা রাশিচক্রে হিসাব সম্পূর্ণ ভুল ও অবৈজ্ঞানিক। তাদের মতে রাশিচক্রের তারামণ্ডলী ১২ টি, কিন্তু এর আসল সংখ্যা হবে ১৩।

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৯৮
বিষুব লম্বঃ -১১ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫০

১৬। জ্যোষ্ঠা (Antares):
কাঁকড়াবিছার মত দেখতে তারামণ্ডলী বৃশ্চিকের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। এই তারামণ্ডলীটি সব সময় আদম সুরতের উল্টো দিকে থাকে। আদম সুরত ডুবলে এর উদয় ঘটে। বৃশ্চিকের বুক বরাবর তারাটির অবস্থান। এটি কিছুটা দক্ষিণে হলেও সহজেই বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান।
বৃশ্চিক মণ্ডলী 
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.০৫
বিষুব লম্বঃ -২৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৫৫৪

১৭। পুনর্বসু (Pollux):
মিথুন মণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনের (শীতের ষড়ভুজ) একটি শীর্ষে এটি বসে আছে বলে একে চেনাও দারুণ সহজ কাজ। তবে এর সাথেই এর জমজ তারা ক্যাস্টরও বসে আছে। আগের উইন্টার সার্কীলের ছবিটি দেখুন। যে তারাটির অবস্থান প্রভাসের দিকে সেটি হচ্ছে পোলাক্স, আর যেটি ক্যাপেলার দিকে আছে  সেটি হচ্ছে ক্যাস্টর। ‘ক্যা-ক্যা’ দিয়ে মনে রাখা যেতে পারে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ +২৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৩.৭৮

১৮। মৎস্যমুখ (Fomalhaut):
একে বলা হয় নিঃসঙ্গ তারা। এর কারণ এর আশেপাশে কোন উজ্জ্বল তারা নেই। বছরের শেষের মাসগুলোতে দক্ষিণ আকাশে একে দেখা যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ -২৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫.১৩

১৯। পুচ্ছ (Deneb):
এর আগেও এর কথা বলেছি। অভিজিৎ ও শ্রবণার সাথে মিলে এটি গড়ে তুলেছে সামার ট্রায়াঙ্গেল। এটি আবার বিখ্যাত তারামণ্ডলী বকমণ্ডলীতে অবস্থিত। প্রথম আবিষ্কৃত ব্ল্যাক হোল সিগ্নাস এক্স-১ এই বকমণ্ডলীর দিকে অবস্থিত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ +৪৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৪১২

২০। মিমোসা (Mimosa):
এটিও দক্ষিণে অবস্থিত। ফলে বাংলাদেশের জন্য এটি সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এটি আবার বিষম তারা। এর গড় উজ্জ্বলতা ১.২৫ হলেও এটি ১.২৩ থেকে ১.৩১ এর মধ্যে উঠা-নামা করে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৭৯
রাতের আকাশের অসংখ্যা উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে মাত্র ২০টি নিয়ে আমরা আলাপ করলাম। অন্য কোম সময় বাকি তারাদের গল্প করার সুযোগের আশা রেখে আজকে বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।

সূত্রঃ
[১] https://en.wikipedia.org/wiki/Apparent_magnitude
[২] http://www.ianridpath.com/brightest.htm
[৩] এই লিঙ্কে ৩০০টি সেরা উজ্জ্বল নক্ষত্রের তালিকা পাওয়া যাবে 
Category: articles

রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬

রাতের আকাশের তারাসহ বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের জন্যে বিষুবলম্বের সাথে পরিচয় থাকা দরকার। আপনারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা সম্পর্কে জানেন। পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষ রেখা বা বিষুব রেখা (Equator)। বিষুব রেখার সমান্তরালে উত্তরে বা দক্ষিণে যে রেখাগুলো কল্পনা করা হয় সেগুলোই হল অক্ষাংশ রেখা। এই রেখার উপরের কোনো বিন্দুর নাম অক্ষাংশ (Latitude)। দ্রাঘিমা বলা হয় উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যাওয়া রেখাগুলোর উপরের অবস্থানকে। বিষুবলম্ব বুঝতে হলে অন্তত অক্ষাংশ বোঝা প্রয়োজন।

পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা

বাংলাদেশের অক্ষাংশ
বাংলাদেশ বা এর পাশ্ববর্তী অঞ্চল থেকে তারা চিনতে বিষুবলম্ব সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিষুব রেখা থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। ফলে এর অক্ষাংশ হল ২৩ ডিগ্রি উত্তর। ঠিক এই জায়গা দিয়েই দুটি ক্রান্তীয় রেখার একটি কর্কটক্রান্তি (Tropic of cancer) রেখা চলে গেছে পূর্ব- পশ্চিমে।
পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে

এবার মূল আলোচনায় আসি।

আমাদের আকাশকে মাথার উপরে একটি গম্বুজের মত কল্পনা করুন। যদিও আসলে তারাগুলো পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত তবু রাতের আকাশে এদেরকে এরকম কোন কল্পিত গম্বুজে ছাঁটানো লাইটের মতই মনে হয়। এটা ধরে নিলে তারাদেরকে অবস্থান নির্ধারণ করাও সহজ হয়ে যায়। তাহলে আকাশকে গম্বুজ কল্পনা করলেন। আমরা বোঝার জন্যে যাকে গম্বুজ কল্পনা করলাম তার সঠিক নাম খ-গোলক (Celestial Spehere)। এবার বিষুব রেখার ঠিক বরাবর উপরে খ-গোলকের মধ্যে একটি রেখা কল্পনা করুন। একে বলা হয় খ-বিষুব।

আকাশের নামকরণ 

খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তারাদের অবস্থান পৃথিবীর অক্ষাংশের মতোই বের করা হয়। তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা উত্তর ও দক্ষিণের জন্যে মানের আগে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ কথাটা যোগ করি। যেমন বাংলাদেশে অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। কিন্তু খ-গোলকের ক্ষেত্রে উত্তরে হলে এর আগে + চিহ্ন এবং দক্ষিণে মাইনাস চিহ্ন (-) বসানো হয়। এই অবস্থানগুলোর নামই হল বিষুবলম্ব (Declination)।

কোনো তারার বিষুবলম্ব (+২৩) ডিগ্রি হলে এটি বাংলাদেশে আমাদের ঠিক মাথার উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাবে। যেমন, রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর বিষুবলম্ব (+১৯) ডিগ্রি। তাই এটি পূর্ব দিকে উঠার পরে এক সময় আমাদের মাথার উপরে চলে আসে। পরে আবার চলে যায় পশ্চিম দিকে।

আবার রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র লুব্ধকের বিষুবলম্ব হল (-১৬) ডিগ্রি। ফলে কখনো আমাদের মাথার উপর আসে না, দক্ষিণ দিক দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে চলে যায়। আবার ধ্রুবতারা বিষুবলম্ব প্রায় (+৯০) ডিগ্রি। তাই উত্তর মেরুতে গেলে এটি ঠিক মাথার উপর থাকবে।

আরো পড়ুন
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
তারামণ্ডলীর পরিচয়
☛ তারা পরিচিতিঃ এ সপ্তাহের তারা 
Category: articles

বুধবার, ৪ মে, ২০১৬

স্বাতী (Arcturs) আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র। বর্তমান মে মাসটি একে খুঁজে পাবার অন্যতম সেরা সময়। সন্ধ্যার একটু পরেই পূর্ব আকাশে হাজির হচ্ছে এখন। বাংলাদশের অবস্থান থেকে দেখতে রাতের আকাশে এটি উদিত হয় প্রায় সোজা পূর্ব দিকে। তার অর্থ, উদিত হবার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর উঠে আসে প্রায় ঠিক মাথার উপর।

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারানকশা সপ্তর্ষীর হাতল স্বাতীকে চিনিয়ে দেয়


 

স্বাতী চেনার উপায়
আকাশের অন্যতম সহজলব্ধ একটি তারামণ্ডলী হল সপ্তর্ষীমণ্ডলী। এর সাতটি তারায় গঠিত তারানকশা সপ্তর্ষী দেখতে চামচের মত। চামচের হাতলের দিকের তারাগুলোকে বৃত্তচাপের মত করে বাইরের দিকে প্রসারিত করে দিলেই পাওয়া যায় উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী। চাপকে আরেকটু প্রসারিত করলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা।

বিশাল এই নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে ৩৬.৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আপাত উজ্জ্বলতা মাইনাস ০.০৫। 

বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন

Category: articles

সোমবার, ২ মে, ২০১৬

গ্রহ দেখার আরেকটি দারুণ মাস ২০১৬ সালের মে। এ মাসে সবচেয়ে দারুণ দেখাবে বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনিকে। দেখা যাক, কে কখন, কোথায় থাকবে।
বৃহস্পতিঃ
সন্ধ্যার পরপরই এটি পূর্ব আকাশ থেকে হাজির মাথার উপর। মাসের যে সময়টুকু চাঁদ থাকবে না তাতে বৃহস্পতিই রাতের আকাশের সেরা উজ্জ্বল বস্তু। আগামী মাসগুলোতেও এটি এর পারফরম্যান্স ধরে রাখবে। গত মাসের মতই লুব্ধকের সাথে এর উজ্জ্বলতার প্রতিযোগিতা হবে। অনেকে ভুল করে একে লুব্ধকও মনে করতে পারেন। তবে লুব্ধক এর চেয়েও বেশি পশ্চিমে (এবং মূলত কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমে) থাকায় বিভ্রান্তি কাটানো সহজ। লুব্ধক আকাশের সেরা উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেও সময় সময় গ্রহদের কাছে একে হার মানতে হয়।
মাস গড়াতে গড়াতে আরেকটি গ্রহ মঙ্গলও বৃহস্পতির সাথে টক্কর লাগাবে। তবে এর লাল রঙ এর কারণে একে চিনতে অসুবিধা হবে না।

মঙ্গলঃ
এ মাসের ২য় সেরা উজ্জ্বল গ্রহ এটি। মাসের শুরুতে উজ্জ্বলতার দৌড়ে বৃহস্পতির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও দিন গড়াবার সাথে সাথে এর উজ্জ্বলতা বেড়ে বৃহস্পতির খুব কাছাকাছি হয়ে যাবে। গত ২ বছরের মধ্যে এটি আমাদের জন্যে মঙ্গল গ্রহ দেখার সেরা সময়। মাসের শেষের দিকে এটি এপ্রিল মাসের তুলনায় ৪ গুণ উজ্জ্বল হবে। বুধ ছাড়া অন্য যে কোন গ্রহের চেয়ে মঙ্গল সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বলতার পরিবর্তন ঘটায়। এটি এর উজ্জ্বলতম অবস্থায় অনুজ্জ্বল অবস্থা থেকে ৮০ গুণ পর্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে!
রাতের আকাশে মঙ্গল গ্রহ 


ইদানিং মঙ্গল উজ্জ্বল হচ্ছে কেন?
মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবীর ঠিক বাইরে। সূর্যের চারদিকে পৃথিবী তাই মঙ্গলের চেয়ে দ্রুত ঘোরে। গত দুই বছর ধরে আমরা মঙ্গলের আগে আগে সূর্যের চারদিকে ছুটছি। এ মাসের শেষ দিকে আমরা চলে যাচ্ছি মঙ্গল ও সূর্যের মাঝে। এই ঘটনাকে বলা হয় প্রতিযোগ (Opposition)। এ সময় সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাবার পরেই পূব আকাশে দেখা মিলবে মঙ্গলের। মাসের শুরুতে অবশ্য মঙ্গল উদিত হবে রাত ৯টার দিকে।

রাতের আকাশে গ্রহদের এলোমেলো ছোটাছুটি এদেরকে নক্ষত্রদের থেকে আলাদা করে চিনতে ভূমিকা রেখেছে। নক্ষত্রদের সাপেক্ষে এরা কখনো পূর্ব দিকে, আবার কখনো পশ্চিমে ছোটে। 


 ভিডিওঃ ২০১৬ সালের বিভিন্ন মাসে মঙ্গলের ছোটাছুটি 

লাল গ্রহটি নিজে একাই রাতের আকাশকে উজ্জ্বল করছে না। এর পাশেই আছে আরেকটি সুন্দর গ্রহ শনি। আপাতত দুজনের দূরত্ব অবশ্য বাড়ছে, কিন্তু আছে বৃশ্চিক মণ্ডলীতেই।

শনিঃ
মঙ্গল ও শনি দুই গ্রহই আরেকটি উজ্জ্বল বস্তুর কাছে আছে। এটি হচ্ছে আকাশের আকাশের ১৬শ উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্যেষ্ঠা (Antares)। এত উজ্জ্বল হয়েও বেচারা দুই গ্রহের কাছে ফেল! আপাতত রাত ৯ থেকে ১০টার মধ্যে এটি শনি উদিত হলেও মঙ্গলের মতই আস্তে আস্তে এই সময় কাছে আসছে। জুনের ৩ তারিখে এটিও প্রতিযোগ অবস্থানে আসবে। এই সময় এও সূর্যাস্তের পরে পূর্ব আকাশে হাজিরা দেবে। আগস্টের ২৪ তারিখে মঙ্গল ও শনি খুবই কাছাকাছি থাকবে।

বুধঃ
মে মাসের ৯ তারিখে বুধ সন্ধ্যার আকাশ থেকে ভোরের আকাশে চলে যাচ্ছে। ফলে, এই সময় এটি সূর্যের খুব নিকটে থাকে বলে একে দেখা প্রায় অসম্ভব। বুধ অন্তঃগ্রহ এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ হওয়ায় খুব দ্রুত ভোরের আকাশ ও সন্ধ্যার আকাশে আসতে যেতে থাকে।

শুক্রঃ
রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম গ্রহটি এ মাসেও নিস্তেজ। ফলে রাতের আকাশের রাজত্ব বৃহস্পতির হাতে। এটি এ মাসে (পৃথিবীর আকাশে) সূর্যের নিকটতর হতে হতে সূর্যের আভায় হারিয়ে যাবে। জুনের ৬ তারিখে এটি সূর্যের ঠিক পেছনে চলে যাবে। কারণ, এ সময় কক্ষপথে এটি অবস্থান নেবে পৃথিবীর উল্টো পাশে। এ সময় এটি ধীরে ধীরে ভোরের পূবাকাশ থেকে সন্ধ্যার পশ্চিমাকাশের দিকে আসবে।
শুক্র গ্রহের সূর্যকে অতিক্রমের মুহূর্ত 

Category: articles

শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৬

এই এপ্রিলের আকাশের সবেচেয়ে দর্শনীয় বস্তু গ্রহ রাজ বৃহস্পতি। ইদানিং এটি সন্ধ্যার পরপর এটি আকাশে হাজির হয়। অন্য গ্রহদের অবস্থাও এ মাসে বেশ ভালো। কিন্তু উজ্জ্বলতম গ্রহ শুক্রই এ মাসে দেখা যাবে না। তবু সামগ্রিক বিচারে গ্রহ দেখার জন্য এ মাসটি বছরের অন্যতম সেরা মাস। 
বৃহস্পতিঃ
এ মাসে উজ্জ্বলতায় সবার শীর্ষে বৃহস্পতি। সন্ধ্যার পরেই এটি আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধকের সাথে উজ্জ্বলতার টক্কর লাগায়। টক্করে বিজয়ী বৃহস্পতিই। পরাজয় মেনে নিয়ে লুব্ধক অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পরেই হারিয়ে যায় পশ্চিম দিগন্তে। কিন্তু বৃহস্পতি প্রায় সারা রাত রাতের আকাশে রাজত্ব করে পশ্চিম দিগন্তে ডুব দেবে ভোরের দিকে। আগামী মাসগুলোতেও এটি নিজের পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখবে।
লুব্ধক ও বৃহস্পতিকে কি করে চেনা যাবে? 
লুব্ধক বছরের এ সময় থাকে দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে। অন্য দিকে বৃহস্পতি সন্ধ্যার পরে পূর্ব দিকে ভেসে ওঠে। আদম সুরতের মাধ্যমে লুব্ধককে চিনে নেওয়া যেতে পারে।
আদম সুরতের মাঝের তিনটি তারা যোগ করে বাম দিকে বাড়িয়ে দিলেও পাওয়া যায় লুব্ধক
বর্তমানে বৃহস্পতির অবস্থান রাশিচক্রের সিংহ মণ্ডলীর কাছে
মঙ্গল গ্রহঃ
এ মাসে মঙ্গল বৃহস্পতির মত এতটা উজ্জ্বল নয়। তবে, আগামী দিনগুলোতে মঙ্গল ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকবে, আর বৃহস্পতি ধীরে ধীরে অনুজ্জ্বল হবে। এমনকি এ মাসেই মঙ্গল স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ উজ্জ্বল হবে। কেন? কারণ কোন গ্রহ যখন সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময় পূর্ব দিকে উদিত হয়, তখন এটি এর সেরা ঔজ্জ্বল্য প্রদর্শন করে। এ কারণেই বৃহস্পতি এখন উজ্জ্বল এবং সেই কারণেই মঙ্গল দ্রুত উজ্জ্বলতা বাড়াচ্ছে। 
মে মাসের শেষের দিকে এটি উজ্জ্বলতায় চারগুণ হয়ে যাবে। ঐ সময় সূর্য পশ্চিমে হারিয়ে গেলে এটি পূর্ব দিগন্তে দেখা দেবে। এ মাসে অবশ্য এটি দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে হাজির হয় ১১টার দিকে। মাসের শেষের দিকে উঠবে ৯ টার দিকে। এর পাশেই আছে আরেকটি গ্রহ শনি। 
দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে মঙ্গল ও শনি গ্রহ
শনি গ্রহঃ
এ মাসের আরেকটি উজ্জ্বল বস্তু। অবশ্য বৃহস্পতি ও মঙ্গলের চেয়ে এটি মৃদু। মঙ্গলের মতই বৃশ্চিক মণ্ডলীর কাছাকাছিতে এর অবস্থান। মাসের শুরুতে রাত ১টা এবং মাসের শেষে ১০ টার দিকে পূর্ব দিগন্তে হাজির হবে। 

বুধ গ্রহঃ
বুধ সব সময় সূর্যের আশেপাশে থাকে। এ মাসে সব তারিখেই এটি সূর্যের পরে অস্ত যাবে। অবশ্য দিগন্তের কাছাকাছি থাকায় বিশেষত শহর অনগচল থেকে একে চিনে নেওয়া একটু কষ্টকর। তবে মাসের ৮ তারিখে চাঁদ একে চিনতে সাহায্য করবে। 

শুক্র (শুকতারা):
আমাদের অনেকেরই আকাশের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু শুকতারা। কিন্তু দূর্ভাগ্যের কথা এটিও বুধের মত সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকে। ফলে একে সন্ধ্যায় বা ভোরেই শুধু দেখা যায়। এই মাসে এটি সূর্যের এত কাছে যে একে দেখা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আফসোস! 
ভোরের আকাশ থেকে সন্ধ্যার আকাশে পাড়ি দেবার প্রাক্কালে জুনের ৬ তারিখে এটি একেবারে সূর্যের পেছনে থাকবে। 

সূত্রঃ Earth Sky
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...