Advertisement

বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫


২০১৫ সালের জুলাই মাস দুটি পূর্ণিমা (full moon) পাচ্ছে। এই ঘটনা কিন্তু অহরহ ঘটে না। অধিকাংশ ইংরেজি মাসই একটিই মাত্র পূর্ণিমা পায়। সত্যি বলতে, প্রতি দুইকি তিন বছরের মধ্যে একবার এই ঘটনা ঘটে। আর এই ক্ষেত্রে  ২য় পূর্ণিমাটিকে বলা হয় ব্লু মুন (Blue Moon)।
এই মাসের প্রথম পূর্ণিমাটি ঘটতে যাচ্ছে ২ তারিখ। বাংলাদেশ সময় ৮টা বেজে ২০ মিনিটে।
এই মাসে আরেকটি পূর্ণিমা হবে জুলাইয়ের ৩১ তারিখে। তার মানে সেটিই হচ্ছে ব্লু মুন, অন্তত নামের দিক দিয়ে, সে দেখতে যেমনই হোক না কেন।

একই মাসে আবার দুটি পূর্ণিমা পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। ঐ বছর ফেব্রুয়ারিতে কোন পূর্ণিমাই হবে না। মার্চেই আবার হবে দুটো।

কারণ, ফেব্রুয়ারি বাদ দিলে অন্য সব মাসই ৩০ বা ৩১ দিনের। আর দুটি পূর্ণ চন্দ্র তথা পূর্ণিমার মাঝখানে ব্যাবধান থাকে ২৯.৩ দিন থেকে ২৯.৮ দিনের। ফলে, কোন মাসের একটি পূর্ণিমা যদি মাসের একেবারে শুরুতেই ঘটে যায়, তাহলেই ব্লু মুন পাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়।

ফলে, ফেব্রুয়ারিই একমাত্র মাস যাতে কোনোভাবেই দুটি পুর্ণিমার সুযোগ তৈরি হবে না। আবার, এটাই একমাত্র মাস যাতে অনেক সময় একটি পূর্ণিমাও নাও হতে পারে। যেমন দেখুন ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে একটিও পূর্ণ চন্দ্র নেই। একই ঘটনা ঘটবে আবার ২০৩৭ সালে। তার অর্থ ঐ দুটি বছর দুটি করে ব্লু মুন পাওয়া যাবে। মানে একই বছরে এমন দুটি মাস পাওয়া যাবে যাতে দুটি করে পূর্ণিমা সংঘটিত হবে।
জানতে চান পূর্ণিমা কিভাবে ঘটে?
সূত্রঃ Earth Sky
Category: articles

বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

গত মাসের মত এ মাসেও চলুন জেনে নিই কোন গ্রহের কী খবর। এ মাসে কোন গ্রহ কোথায় চোখে পড়বে এবং ধীরে ধীরে ওরা কোন দিকে যাবে এবং কিছু দিন পর ওদেরকে কোথায় পাওয়া যাবে, এসব জানাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।
বৃহস্পতি ও শনিঃ
এই মাসে যেহেতু এই দুই উজ্জ্বল গ্রহ সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে এসেছে, তাই একত্রেই উল্লেখ করলাম। পৃথিবীর রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু এবং সার্বিকভাবে ৩য় উজ্জ্বল বস্তু (সূর্য ও চন্দ্রের পরে) গ্রহ শুক্রের অবস্থান জুনের শেষ ও জুলাইয়ের শুরুর দিনগুলোতে বৃহস্পতির একেবারে কাছাকাছি। তবে সবচেয়ে নিকটে অবস্থান জুনের ৩০ ও জুলাইয়ের ১ তারিখে। এই দুইটি দিনে এরা এতই কাছাকাছি থাকে যে পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের ব্যাস যতটুকু মনে হয় এদের আপাত দূরত্ব তার চেয়ে কম। ২০১৬ সালের ২৭ আগস্টের আগে এরা আর এতটা নিকটবর্তী হবে না।
কিন্তু পশ্চিম আকাশের সৌন্দর্য্য জুলাইয়ের ১ তারিখেই শেষ হচ্ছে না। বছরের এই সময়গুলোতে শুক্র এমনিতেই বেশি উজ্জ্বল। কিন্তু এই মাসের ৯-১০ তারিখের দিকে এটি এর সর্বোচ্চ ঔজ্জ্বল্য প্রদর্শন করবে।
মাসের শুরুর দিকে মধ্য-উত্তর অক্ষাংশে সন্ধ্যার পর শুক্র আকাশে থাকবে ৩ ঘণ্টার কাছাকাছি। মাসের শেষের দিকে এই সময়টি হয়ে যাবে মাত্র ১ ঘণ্টা। আগস্টের মাঝামাঝিতে এটি আমাদের সন্ধ্যার আকাশকে বিদায় জানাবে।
শুক্রের মতো বৃহস্পতিও আগস্টে চলে যাবে ভোরের আকাশে। ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবরে এরা ভোরের আকাশে আবার খুবই নিকটাবস্থানে আসবে। ঐ একই দিনে আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। এই দুই গ্রহের সাথে যোগ দিবে মঙ্গল। ২০২১ সালের আগে এই তিন গ্রহ আর এত কাছে আসবে না।

মাসের ১৭-১৮ তারিখে গ্রহ দুইটি চাঁদ এবং সিংহ মণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র রেগুলাসের সাথে জড়সড় হয়ে থাকবে। ফলে ঐ দিনের পশ্চিম আকাশ অল্প একটু জায়গায় অনেকগুলো উজ্জ্বল বস্তু পেয়ে ধন্য হবে।

বৃহস্পতি গ্রহ হওয়ায় এর নিজস্ব আলো না থাকলেও এটি রাতের আকাশে যতক্ষণ থাকে উজ্জ্বলতায় হার মানিয়ে দেয় নক্ষত্রদেরও।

মঙ্গলঃ
জুনের ১৪ তারিখে মঙ্গল পাড়ি দিয়েছিল ভোরের আকাশে। আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের আগে গ্রহটিকে চোখের লেন্স দিয়ে দিয়ে ধরতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

শনিঃ
বছরের এই সময়টি আসলে সত্যি বলতে এই গ্রহটির রাজত্বই চলে রাতের আকাশে। বৃশ্চিক মণ্ডলীর (Scorpius) মাথার সামনে এটি উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠে সন্ধ্যার পরপরই। থাকেও প্রায় সারা রাত। জুলাইয়ের ২৪, ২৫ ও ২৬ তারিখে গ্রহটি বৃশ্চিকের উজ্জ্বলতম ও রাতের আকাশের ১৬ তম উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্যেষ্ঠা (Antares) এবং চাঁদের সাথে মিলেমিশে থাকবে।

বুধঃ
বুধ সূর্যের নিকটতম গ্রহ। গত মাসের মত এ মাসেও গ্রহটি উত্তর গোলার্ধের মানুষের খালি চোখে দেখা যাবে না। জুলাইয়ের ২৩ তারিখ পর্যন্ত এটি ভোরের আকাশে অতঃপর পাড়ি দেবে সন্ধ্যার আকাশে।
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

 রাতের আকাশে যখন পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের পুরোটাকে আলোকিত মনে হয় তাকেই আমরা বলি পূর্ণিমা, পূর্ণ চন্দ্র বা ফুল মুন (full moon)। কিন্তু কিভাবে ঘটে পূর্ণিমা?

পৃথিবীর আবর্তনের জন্যে চন্দ্র, সূর্য ও রাতের নক্ষত্রদের পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে দেখা যায়। চাঁদের ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে এটি আবার পৃথিবীকে কেন্দ্র করেও ঘুরছে। ফলে অন্য গ্রহ নক্ষত্রদের চেয়ে প্রতি দিনের রাতের এর অবস্থান পরিবর্তন হয় তুলনামূলক অনেক বেশি। 
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে করতে একটা সময় চন্দ্র, পৃথিবী ও সূর্যের সাথে একই রেখায় আসে। আর এই কল্পিত রেখার মাঝখানে যখন পৃথিবী থাকে, তখনই পশ্চিম দিক থেকে আসা সূর্যের আলো সোজাভাবে পূর্ব দিকে থাকা চাঁদের উপর গিয়ে পড়ে। ফলে, পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের পুরোভাগ আলোকিত হয়ে থালার মতো দেখা যায়।
এ সময় চাঁদ দিগন্তের খানিকটা মাত্র উপরে থাকে। সূর্য যখন দিগন্ত থেকে আরো বেশি নিচে নেমে যায়, তখন পূর্ব দিকে চাঁদও দিগন্তের আরো  উপরে উঠে আসে। এভাবে সারা রাত চলে ভোরের যখন সূর্যোদয় ঘটে চাঁদ তখন পশ্চিম দিগন্ত দিয়ে অস্ত যায়।

সহজ ভাষায় এটাই হলো পূর্ণিমা হবার কারণ। কিন্তু প্রশ্ন করা যায়, সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময়ওতো চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই রেখায় থাকে। তাহলে প্রতিটা পূর্ণিমাতেই কেন চন্দ্রগ্রহণ হয় না?
এটা ঠিক যে, চন্দ্রগ্রহণ একমাত্র পূর্ণিমার সময়েই ঘটতে পারে। আবার সূর্যগ্রহণও হতে পারে যখন এই তিন বস্তু একই রেখায় থাকে। তখন অবশ্য তিনজনের মধ্যে মাঝখানে থাকতে হবে চাঁদকে।

প্রতি  পূর্ণিমাতেই চন্দ্রগ্রহণ না হবার কারণ হচ্ছে, পৃথিবী থেকে দেখতে দিগন্তের উপরে-নিচে হিসেব করলে আমরা চাঁদ ও সূর্যকে পৃথিবীর সাথে একই রেখায় দেখবো। কিন্তু চাঁদ ঐ সময়টিতে তথা পূর্ণিমার সময় একটু উত্তরে বা দক্ষিণে থাকতে পারে। এটাই ঘটে অধিকাংশ সময়।
কিন্তু যখনই উত্তর-দক্ষিণে না থেকে বরাবরে অবস্থান করে তখনই পূর্ণিমা পরিণত হয় চন্দ্রগ্রহণে।

অনেক সময় একই মাসে দুটি পূর্ণিমা ঘটে যেতে পারে। বিস্তারিত জানতে দেখুন এই পোস্ট।
Category: articles

বুধবার, ৩ জুন, ২০১৫

উল্লেখ্য, সৌরজগতের আটটি গ্রহের মাত্র ৫ টি খালি চোখেই ভালো দেখা যায়। বাকি ২টি দেখা যায় না। আরেকটি? আরে, আরেকটিতো পৃথিবীই। এর মধ্যে শুক্র, বৃহস্পতি ও শনিকে বেশ সহজেই দেখা যায়।
আচ্ছা, একে একেই দেখি।
শুক্রঃ শুক্রকে প্রতি সন্ধ্যায়ই চোখে পড়ে পশ্চিমাকাশে। তবে বছরের এ সময় সন্ধ্যার পর প্রায় ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত দিগন্তের উপরে থাকে। সূর্য ও চন্দ্রের পরেই কিন্তু আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। এটা অবশ্য বলা হচ্ছে পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রকৃত উজ্জ্বলতা অবশ্যই ভিন্ন।
জুনের ৬ তারিখে এই গ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। ঐ দিন পশ্চিমাকাশে পৃথিবী, শুক্র ও সূর্যের অন্তর্গত কোণ তথা দ্রাঘণ  (elongation) হবে সর্বোচ্চ। পুরো জুন জুড়েই সন্ধ্যার পরে সন্ধ্যাতারাটি লাইটহাউসের মতো সূর্যের আলো প্রতিফলন করতে থাকবে। জুনের ১৮ ও ১৯ তারিখের আগে ও পরে কয়েকদিন রমজানের নতুন চাঁদকে দেখা যাবে শুক্র গ্রহের আশেপাশেই।

বৃহস্পতিঃ
সন্ধ্যার পর ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত রাতের আকাশের উজ্জ্বলতায় শুক্রের একক রাজত্বের পতনের পর উত্তরাধিকার লাভ করবে বৃহস্পতি। গ্রহরাজ এতখানিই উজ্জ্বল যে একে ভুলক্রমে শুক্র ছাড়া অন্য কিছু মনে করে ফেলার কোন কারণই নেই।
বছরের শুরুতে বৃহস্পতি আকাশে শুক্রের বিপরীত প্রান্তে থাকলেও জুনে এসে এটি সন্ধ্যার পরে অবস্থান করে শুক্রের মতোই পশ্চিমাকাশে, শুক্রের একটু উপরে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জুনের শেষ দিক থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এই দুই উজ্জ্বল গ্রহ থাকবে নিকটতম দূরত্বে।
পৃথিবীর আকাশে বৃহস্পতির উজ্জ্বলতা যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও বেশি। তবে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতার রাজত্বের সময়কাল কমে গেছে গ্রহটির। কিছু দিন আগে রাতের অনেকাংশ ধরে সূর্যালোক প্রতিফলিত করলেও এই মাসের শুরুর দিকে এটি দিগন্তের উপরে থাকবে শুক্র ডুবে যাবার পর ১ থেকে ২ ঘণ্টা। জুনের শেষ দিকে দুই গ্রহ এতই কাছাকাছি থাকবে যে অস্ত যাবে প্রায় একই সময়ে।
মধ্যে-উত্তর গোলার্ধে মাসের প্রথম দিকে গ্রহটি আকাশে থাকবে সাড়ে ৩ ঘণ্টা আর মাসের শেষের দিকে থাকবে আড়াই ঘণ্টা।
খালি চোখে বৃহস্পতির কোন উপগ্রহ চোখে পড়বে না। তবে দুরবিনের সহায়তায় চারটি উপগ্রহ- আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টোকে চোখে পড়বে। এই চারটি গ্রহকে আবিষ্কারের বদৌলতে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর নাম অনুসারে গ্যালিলিয়ান উপগ্রহ বলা হয়।
জুনের বিশ তারিখে চাঁদ বৃহস্পতিকে অতিক্রম করে আরো পূবে চলে আসবে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি ঠিক তার পরদিনই পেরিয়ে আসবে সিংহরাশির (Leo Constellation) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র রেগুলাসকে।
শনিঃ
রাত নামার পরই সোনালী গ্রহ শনির রাজত্ব শুরু হবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে। থাকে প্রায় ভোর পর্যন্ত। সারা রাত পশ্চিমে ঘোড়া দৌড়িয়ে ভোরের দিকে হাজির হয় দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে। জুনের ১ ও ২ তারিখে গ্রহটি পূর্ণ চাঁদ ও জ্যেষ্ঠা (Antares) তারকার খুবই কাছাকাছি ছিল।
শনির কোন উপগ্রহই বাইনুকুলার দিয়েও চোখে পড়ে না, প্রয়োজন হবে ছোট্ট একখান টেলিস্কোপের। কারণ! শনিতো বৃহস্পতির চেয়ে দূরে থাকে।

মঙ্গলঃ
অনেক দিন ধরেই মঙ্গল গ্রহটি নিজেকে গোধূলির আলোয় লুকিয়ে রাখছে। ফলে, প্রতি মাসে দুই এক দিন ছাড়া একে দেখা সম্ভব ছিল না। জুনের ১৪ তারিখে এটি হাজির হবে ভোরের আকাশে। এ মাসেও লাল গ্রহটি দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বুধঃ
সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহটি উত্তর-গোলার্ধ থেকে ভালো চোখে পড়বে না। তবে, দক্ষিণ গোলার্ধের লোকেরা জুনের ১০ তারিখের দিকে একে ভোরের আকাশে দেখবেন। মধ্য-উত্তর গোলার্ধ থেকে গ্রহটিকে জুনের ২২ বা ২৩ তারিখে দেখা যাবে। যাদের বাইনোকুলার আছে, পূবাকশে একটু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে পারেন।
জুলাইর ২৩ তারিখ নাগাদ বুধ ভোরের আকাশেই থাকবে। এর পরে এটি হাজির হবে সন্ধ্যার আকাশে।

উল্লেখ্য, রাতের আকাশে যাই দেখি তাদেরকেই আমরা 'তারা' বললেও এই পাঁচখান কিন্তু গ্রহ। এদের নিজস্ব আলো নেই। এরা চাঁদের মতোই সূর্যের আলোকেই আমাদের দিকে ফিরিয়ে দেয়।
 সূত্রঃ
১। earthsky
Category: articles

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

রাতের আকাশে তারা দেখে পথ নির্ণয় করতে পারার মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে। এই আনন্দের ভাগীদার হতে চাইলে আপনাকে চিনতে সপ্তর্ষীমণ্ডলী। আপনি হয়তো মনে করছেন, সন্ধ্যাতারা তথা শুক্রগ্রহকেতো চিনিই। ওটা যেহেতু পশ্চিম দিকে থাকে তাই আর কিছু জানার কী দরকার?
কিন্তু ভাই! সন্ধ্যাতারা সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টার পরই আপনাকে হতাশ করে দিয়ে দিগন্তের ওপারে হারিয়ে যাবে। তখন? এমন কাউকে দরকার যে তখনও আকাশে থাকবে। তাহলে, আপনার আশা পূরণ করতে পারে সপ্তর্ষীমণ্ডল। কারণ এর মাধ্যমে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন সব সময় উত্তর দিকে মুখ করে রাখা ধ্রুব তারা।  এটি হচ্ছে একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। তারামণ্ডলী হচ্ছে আকাশের একেকটি এলাকা যেখানে অনেকগুলো তারকা মিলে বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর আকৃতি তৈরি করেছে। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে একেকটি তারামণ্ডলীর বিভিন্ন অবস্থান পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে।
যাই হোক, আর্সা ম্যাজর বা সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারকাগুলোর মিলিত চিত্র দেখতে একটি ভালুকের মত। এতে মোট তারকা আছে অন্তত ৭২০টি। এদের মধ্যে গ্রহ আছে ২১টি তারকার। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার নাম এলিওথ (Alioth) বা এপসাইলন আরসি ম্যাজোরিস। ভয় নেই, আমাদের এতগুলো তারকা কাজে লাগবে না।
কাজে লাগবে সাতটি তারকা। এগুলো বেশ উজ্জ্বল। আকৃতি হচ্ছে পেয়ালার মত। এজন্যেই এদেরকে আমেরিকায় বলা হয় বিগ ডিপার (Big Dipper) বা বড় পেয়ালা। দেখতে আবার অনেকটা লাঙলের মতোও হওয়ায় ইউরোপে একে বলা হয় লাঙল (Plough)। আর, সাতটি তারকা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এবং এর মূল তারামণ্ডলীতে এগুলো অপেক্ষাকৃত সহজে দৃশ্যমান ও উজ্জ্বল হবার কারণে বাংলায় মণ্ডলীটির নামই হয়েছে এই সাতটি তারকার নামে-সপ্তর্ষীমণ্ডলী। শুনে মনে হয় এই তারামণ্ডলীতে যেন তারকাই আছে ৭টি। নিচে দেখুন সম্পূর্ণ তারামণ্ডলী।
ভালুকের লেজসহ পেছন দিকে ৭টি তারকার উপর ফোকাস করুন। এরাই হলো বিগ ডিপার।

এই সাতটি তারকা খুঁজে পেলেই আপনি পেয়ে যাবেন ধ্রুবতারাকে। বিগ ডিপার ও এর মাধ্যমে ধ্রুব তারাকে খুঁজে পাবার প্রাথমিক উপায় বলেছিলাম আগের পোস্টে।  কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় এক জায়গায়। ওখানে বিগ ডিপারের ছবি যেমন দেওয়া আছে, এটা সব সময় এরকম থাকে না। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে তারকাগুলো অবস্থান পরিবর্তন করে।
চার ভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। গ্রীষ্মকাল (Summer) তথা উন, জুলাই ও আগস্ট মাসে এটি থাকে উত্তর-পশ্চিম দিগন্তে। পরের ঋতু তথা শরৎকালের (Autumn বা Fall) তিনটি মাস তথা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে এটি নেমে আসে উত্তর দিগন্তের নিম্নাংশে। শীতকালের পরের তিন মাসের জন্যে এটি অবস্থান করে উত্তর-পূর্ব দিগন্তে। বসন্তকালের তিন মাস তথা মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এর অবস্থান উত্তর দিগন্তের উচ্চাংশে। শরৎকালে যেখানে ছিল তার বিপরীতে উপরের দিকে। নিচে বিভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান দেখানো হল।
জুন, জুলাই, আগস্ট (গ্রীষ্মাকালে) সপ্তর্ষীমণ্ডলী 
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে সপ্তর্ষীমণ্ডলী  
ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সপ্তর্ষীমণ্ডল
মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে 

বলাই বাহুল্য, প্রত্যেক ঋতুর শেষ দিকে এর আকৃতি চিত্রের চেয়ে একটি ভিন্ন হবে। কিন্তু আকৃতি যেমনই থাকুক, এর চামচ বা পেয়ালার একেবারে সাম্নের দুটি তারকাকে যোগ করে বর্ধিত করে ৬গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যাবে ধ্রুবতারা। তারামণ্ডলীটির অবস্থান সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায় -
আকাশের তারাদের বর্তমানে আমরা যে আকৃতি দেখি, সময়ের সাথে সাথে বদলে যাবে সেই চিত্র। যেমন দেখুন ১ লাখ বছর আগে বিগ ডিপারের চিত্র কেমন ছিল এবনহ ১ লাখ বছর পরে কেমন হবে।

সূত্রঃ
[১] আর্সা ম্যাজর- উইকিপিডিয়া
[২] আর্থ স্কাই 
Category: articles

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলেই আমরা অনেক সময় দিক হারিয়ে ফেলি। যে দিককে পশ্চিম মনে হচ্ছিল, একটু পরই দেখা যায় তার উল্টো দিকে কোন মসজিদের মুখ। কিন্তু যদি আশেপাশে যদি মসজিদ না থাকে? নেই কম্পাসও! কম্পাস থাকলেও কম্পাসের উপর চোখ বুঁজে ভরসা করা যায় না। কম্পাস দ্বারা একেবারে নিখুঁত উত্তর জানতে হলে কম্পাসের কাঁটা দেখে আরো কিছু হিসাব নিকাশ করতে হয়।
তাহলে দিক নির্ণয় করবেন কীভাবে? আকাশে তারকা আছে না? প্রাচীন কালের মানুষ দূরের পথ কিংবা সাগর যাত্রায় অনায়াসে দিক নির্ণয় করতেন তারকা দেখে।
সন্ধ্যার পরপরই আকাশে দেখা যায় তারাদের আধিপত্য। এদের সবাই অবশ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় 'তারকা' তথা নক্ষত্র (Star) নয়। রাতের আকাশের প্রধান দুটি উজ্জ্বল তারা- যথাক্রমে শুক্র ও বৃহস্পতি তো আমাদের সৌরজগতেরই গ্রহ। যাই হোক, সন্ধ্যায় উদিত হবার পর, প্রায় সব তারাই পশ্চিম দিকে চলতে থাকে। এরা যদিও মূলত পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে না, তবু পৃথিবীর আবর্তনের (rotation) কারণে এ রকম মনে হয়।
খেয়াল করুন, বলেছি 'প্রায় সব তারকাই পশ্চিমে যেতে থাকে'। কিন্তু একটি তারকা আছে যে সর্বদা উত্তর মেরুর উপর বসে থাকে, নড়ে চড়ে না। বরং দেখে মনে হয়, আকাশের সব তারকাই যেন ওকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এই তারকার নাম ধ্রুবতারা। ইংরেজিতে বলে পোলারিস (Polaris) বা মেরু তারা (Pole Star)। উত্তরে থাকে বলে একে আবার নর্থ স্টার (North Star) ও বলে।

সময় বাঁচাতে চাইলে শর্টকাটে পড়ে নিনঃ
» তারার সন্ধানেঃ ধ্রুবতারা 

এই তারকা যেহেতু ঠিক উত্তর দিকে থাকে, তাই একে বের করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে! এর দিকে তাকিয়ে থাকা মানে আপনার ডানে পূর্ব, বাঁয়ে পশ্চিম আর পেছনে দক্ষিণ। যদি মনে হয়ে থাকে, ধ্রুবতারা চিনে নেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ, তবে ভুল ধারণায় আছেন। চলুন, দেখে নেই।
ধাপ-১: সপ্তর্ষিমণ্ডলী খুঁজে বের করুন 
সপ্তর্ষীমণ্ডলী (Ursa Major) মূলত একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। এর মধ্যে প্রধান সাতটি তারকা একটি চামচের মত আকৃতি তৈরি করেছে। এই সাতটি তারকাকে উত্তর আমেরিকায় বলে বিগ ডিপার (The Big Dipper) আর ইউরোপে বলে লাঙল (Plough)। এই সাতটি তারকা খুঁজে পাওয়া মোটামুটি বেশ সহজ। সাতটি তারকার ৩টি মিলে চামচের বাঁট আর বাকি চারটি তৈরি করেছে মাথা। ছবিতে দেখুন।। প্রথম ছবিতে খুঁজে নেবার চেষ্টা করে ২য় ছবি থেকে মিলিয়ে নিন।

আরো পড়ুনঃ
» সপ্তর্ষীমণ্ডলী খুজে পাবার উপায়



ধাপ-২: ধ্রুবতারার দিকে একটি রেখা টানুন
বিগ ডিপারের একেবারে সামনের দুটি তারকাকে মনে মনে যোগ করে বর্ধিত করুন। রেখাটিকে টেনে লম্বা করে নাক বরাবর সোজা প্রথম যে উজ্জ্বল তারকা পাবেন- সেটিই হলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত ধ্রুবতারা। বিগ ডিপারের সামনের দুই  তারকা মিলে যে দৈর্ঘ্য হয় (লাল দাগ টেনে দেখানো হল), ধ্রুব তারার দূরত্ব তার ছয় গুণ।


আরো দেখুনঃ দিক নির্ণয়ে হাত ঘড়ি

ধাপ-৩: মিলিয়ে নিন
সন্দেহ লাগছে? আকাশে এত তারার মাঝে সন্দেহ দানা বাঁধতেই পারে- আসলেই এটা ধ্রুবতারা কিনা। আসলে ধ্রুবতারাকে আমরা বড় চামচ বিগ ডিপার দিয়ে চিনলেও এটা কিন্তু বিগ ডিপারের অংশ নয়। চামচ আছে আরেকটি। তার নাম ছোটি চামচ বা আসল নাম লিটল ডিপার (Little Dipper)। এটি অবস্থিত অন্য আরেকটি তারামণ্ডলী লঘুসপ্তর্ষী তে। বড় চামচের মত ছোত চামচও সাতটি তারায় গঠিত। অবস্থান বড় ভাইয়ের মাথার উপরে। এর বাঁটের একেবারে প্রান্তভাগের তারকাটিই হচ্ছে ধ্রুবতারা।

সূত্রঃ
[১] জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা- উইকিপিডিয়া
[২] How to find 'Polaris' - the North Star
[৩] ভিডিও 
 [৪] ভিডিও
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...