Advertisement

সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭

আমরা দেখি, গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রদের আকৃতি হয় গোলাকার (spherical)। অবশ্য মেরু অঞ্চলের দিকে কিছুটা চাপা। দুটো বিষয়ই আমরা আলোচনায় রাখবো। 

আপনাকে এক খণ্ড পাথর দেওয়া হলে একে আপনি ইচ্ছে মতো কেটে যে কোন আকৃতি দিতে পারবেন- ঘনক, পিরামিড বা গোলক ইত্যাদি। নিজের মতো রেখে দিলে এটি আগের মতই থাকবে। গোলকাকার হয়ে যাবে না। কিন্তু ধরুন, ঐ পাথরটির বদলে আপনাকে পৃথিবীর সমান একটা বস্তু দেওয়া হল। একে কেটে কুটে কি আপনি পিরামিড বানাতে পারবেন?

পারবেন না। কারণ, এখন বস্তুটা যথেষ্ট ভারী। এর অভিকর্ষ যথেষ্ট শক্তিশালী। বস্তুর আকার যত বড় হবে, এর অভিকর্ষও তত বড় হবে। পূর্বোক্ত পাথরখণ্ডটিরও অভিকর্ষ (Gravity) আছে। কিন্তু অতি নগণ্য, অকার্যকর।
বিভিন্ন গ্রহ 
মনে করুন, আপনি পৃথিবীর বুকে খুব উঁচু একটা ভবন নির্মাণ করবেন। তাহলে, এর ভিত্তি হতে হবে যথেষ্ট মজবুত। তা না হলে এটা নিজের ভারে তথা পৃথিবীর অভিকর্ষের চাপে ধসে পড়বে। কোনো গ্রহ, উপগ্রহ বা নক্ষত্রে যদি অনেক উঁচু কোন স্থাপনা থাকতো, তবে তা অভিকর্ষের টানে গুঁড়িয়ে যেত। ভাবছেন, তাহলে বুর্জ খলিফার মত সুউচ্চ স্থাপনা টিকে আছে কিভাবে? হ্যাঁ, এর ফাউন্ডেশান বা ভিত্তি যথেষ্ট মজবুত এবং উচ্চতা তত বেশি নয় যত হলে ধসে পড়ত।  পাহাড়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

একটু খেয়াল করুনঃ 
গ্রহ যদি হতো ঘনকের মতো, তার অর্থ হতো এর কোণাগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচু। যেহেতু গ্রহ, নক্ষত্রদের অভিকর্ষ খুব বেশি শক্তিশালী সে কারণে এ কোণাগুলো টিকে থাকতে পারে না, ধসে পড়ে। যে কোনো কিছুই মাথা চাড়া দিতে যাবে, অভিকর্ষ তাকে এক হাত দেখে নিবে। ফলে বস্তুটি চার পাশ থেকেই সমান হতে শুরু করবে।

এখন, সবকিছুই টান-প্রাপ্ত হয় কেন্দ্রের দিকে। ফলে, কেন্দ্রের চারপাশে ভর জড় হয়ে গোলকের (sphere) আকৃতি তৈরি হবে। যথেষ্ট শক্তিশালী ভিত্তি না থাকলে সব উঁচু নিচু স্থাপনা সমতল হয়ে যাবে। এ জন্যেই গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্ররা গোলকাকার। যেসব গ্রহাণুর অভিকর্ষ অপেক্ষাকৃত কম, তারা গোল হতে পারে না। হয় এবড়ো থেবড়ো। যেমন, ছবিতে দেখন ৪ ভেস্টা নামক গ্রহাণুর ছবি।


মহাকাশযান ডন থেকে ৪ ভেস্টার ছবি।
গোলকাকার হবার জন্য সর্বনিম্ন ভর কত হতে হবে?
ব্যাপারটা আসলে শুধু ভরের উপরই নির্ভরশীল নয়। বস্তুটা কী দিয়ে তৈরি তাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোন কোন বস্তুকে অন্য বস্তুর চেয়ে সহজে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভর (mass) কম হলেও চলবে। পাথুরে কোন বস্তুর ক্ষেত্রে গোলাকাকৃতি পাবার জন্য ব্যাস প্রয়োজন ৬০০ কিলোমিটার। কিন্তু বরফ নির্মিত বস্তু হলে ব্যাস ৪০০ কিলোমিটার হলেও যথেষ্ট।

যেমন উপরোক্ত গ্রহাণু  ৪ ভেস্টা হল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহাণু। এর আকার হল দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে যথাক্রমে ৫৭৮ ও ৪৫৮ কিলোমিটার। ১৮০৭ সালে হেনরিখ উইলহেম ওলবার্স।

মেরু অঞ্চলে চেপে যায় কেন?
আমরা জানি গ্রহ, উপগ্রহরা যেমন আমাদের পৃথিবীও মেরু অঞ্চলে একটু চাপা তথা কম ব্যাসার্ধ্য বিশিষ্ট। এর কারণ হল পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করেআবর্তন বেগ দুই মেরু মাঝখান তথা বিষুব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আর মেরুতে কম। ফলে,  ঘূর্ণনের কারণে বিষুব অঞ্চলের দিকে বস্তুটা একটু লম্বা হয়ে যায়।

সূত্রঃ
[1] curious.astro.cornell.edu
[২] spaceanswers
[৩] www.universetoday.com
Category: articles

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

পৃথিবীর মহাকর্ষের কারণে আমরা এর বুক আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারছি। কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে যাবার পথে এই মহাকর্ষই আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়িয়ে পৃথিবীকে অব্যাহতভাবে  প্রদক্ষিণ করার জন্যে কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর তীব্র বেগের প্রয়োজন হয়। যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ঘণ্টায় ১৭,৫০০ মাইল (২৮,২০০ কিমি.) বেগে ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। কিন্তু পৃথিবী থেকে বাইরে যেতে হলে আরও বেশি বেগ লাগবে। সেই বেগের নাম মুক্তি বেগ (Escape velocity)।

আরও পড়ুনঃ
মুক্তি বেগের পরিচয়

এ বেগ অর্জনের জন্যে বিপুল জ্বালানি প্রয়োজন। এ কারণেই অ্যাপোলোর মতো আগের রকেটগুলো উৎক্ষেপেণে ব্যবহৃত স্যাটার্ন ভি রকেট খুব ভারী হতো। চাঁদে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট জ্বালানি দিতে হত এতে। ইলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের আধুনিক রকেট সে তুলনায় ছোট। কিন্তু এদেরকে যেতে হবে আরও অনেক দূর পথ। সুদূর মঙ্গল।

মাস্ক খুশি হতে পারেন যে তাঁকে অন্তত বৃহস্পতি গ্রিহ থেকে রকেট নিক্ষেপ করতে হচ্ছে না। সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহে মুক্তি বেগের মান আলাদা। তবে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে সেটা তুলনামূলক অনেক বেশি। রকেট নিক্ষেপ করতে হলে মুক্তি বেগ লাগবে ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার মাইল (২ লক্ষ ১৭ হাজার কিমি.)। কারণ, গ্রহটির একারই ভর অন্য সব গ্রহের মিলিত ভরের দ্বিগুণ।

নিচের দারূণ অ্যানিমেশনটি থেকে বিভিন্ন গ্রহের মুক্তি বেগের ধারণা পাওয়া যাবে। 

যথাক্রমে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ থেকে রকেট নিক্ষেপে জন্যে প্রয়োজনীয় বেগ। 

খেয়াল করলে দেখবেন, বৃহস্পতির মুক্তিবেগ অন্য গ্রহদের চেয়ে অনেক বেশি। আগেই বলেছি, কেন এটা হচ্ছে। এর ভর বেশি হবার কারণে। 
Category: articles

শনিবার, ৪ মার্চ, ২০১৭

এর আগে একটি নিবন্ধে আমরা দেখেছিলাম, মহাকর্ষ কীভাবে কাল দীর্ঘায়ন ঘটায়। আজ এর গাণিতিক হিসাব দেখব আমরা।

মহাকর্ষীয় কাল দীর্ঘায়ন (Gravitational time dilation) অনুসারে, মহাকর্ষীয় বিভবের মান যেখানে বেশি, সে অঞ্চলের সময় তুলনামূলক আস্তে চলবে। অর্থ্যাৎ, মহাকর্ষের উৎসের তুলনামূলক কাছে সময় ধীরে চলে। যেমন, আপনি ভূপৃষ্ঠের যত কাছে থাকবেন,  পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা যে কারও চেয়ে আপনার সময় তত ধীরে অতিবাহিত হবে।


এ ফলাফলগুলো পাওয়া যায় আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব (General theory of relativity) থেকে। এ তত্ত্বের সমীকরণগুলো অতিমাত্রায় জটিল ও সাধারণের জন্যে দূর্বোধ্য। তবে, কাল দীর্ঘায়নের সমীকরণ সে তুলনায় অনেক সরল। বেগ জনিত কাল দীর্ঘায়নের সূত্রের সাথেও এর বেশ মিল আছে।

মহাকর্ষীয় কাল দীর্ঘায়ন এর সূত্র

এখানে to হচ্ছে কোনো ঘটনার প্রকৃত সময় (Proper time)। দর্শক এবং ঘটনা একই মহাকর্ষীয় বিভবে অবস্থান করলে পরিমাপে এ সময় দেখা যাবে। আর tহচ্ছে যে-কোনো ভর থেকে অসীম দূরত্বে অবস্থান করে মাপা সময়। অর্থ্যাৎ, আমরা ধরে নিচ্ছি tf পরিমাপের জায়গায় আলোচ্য ভরের মহাকর্ষীয় প্রভাব নগণ্য।

G হলো নিউটনের সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক। c হলো শূন্যস্থানে আলোর বেগ।  M হচ্ছে আলোচ্য বস্তুর ভর। আর r হলো বস্তুটা থেকে (মানে এর মহাকর্ষীয় কেন্দ্র থেকে) ঘটনার দূরত্ব।

সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের একটি সূত্র বের হয় সোয়ার্জসাইল্ড সমাধান থেকে। এটাই ব্ল্যাক হোলের সমীকরণ। সূত্র থেকে আপনি পাবেন সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের মান।  M ভরের একটি বস্তুর সবটুকু ভর এ ব্যাসার্ধের ভেতরে অবস্থান করলে বস্তুটির মহাকর্ষ এত শক্তিশালী হবে যে, এর থেকে কোনো কিছুই বেরিয়ে আসতে পারবে না। এমনকি আলোও না।

আরও পড়ুনঃ 
☛ আলো কীভাবে ব্ল্যাক হোলে আটকা পড়ে?

সূত্রটি হলোঃ
সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের সমীকরণ


এখানে rs-ই হলো সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ।
ব্ল্যাক হোলের সীমানায় পৌঁছে সূত্রটি প্রয়োগ করলে আমরা পাই r = rs। ফলে to এর মান হয়ে যাবে শূন্য। তার মানে, বাইরের কোনো দর্শকের কাছে মনে হবে এখানে সময় থেমে আছে। ফলে ব্ল্যাক হোলের সীমানা পেরিয়ে কোনো কিছুকে কখনোই ভেতরে যেতে দেখা যাবে না।

তবে ব্ল্যাক হোলে পড়েই গেলে ব্যাপারটা হয়ে পড়ে আরও উদ্ভট। অবশ্য বাইরে থেকে এ পতন দেখা সম্ভব হবে না। যাই হোক, এক্ষেত্রে বর্গমূলের ভেতরের রাশিটা হবে ঋণাত্মক। মানে, ফল হিসেবে পাওয়া যাবে কাল্পনিক সময়, যার ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত জানা নেই।

সূত্রঃ
১। সাসেক্স ওয়েবসাইট 
Category: articles

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭


স্বছ পদার্থ হচ্ছে সেই বস্তু, যার মধ্য দিয়ে আলো চলাচল করতে পারে। যেমন কাঁচ। এর মধ্য দিয়ে তাকালে বিপরীত পাশের বস্তু দেখা যায় (অবশ্যই যদি না অপর পাশে প্রলেপ দেওয়া থাকে)। চলুন দেখি কেন আমরা কাঁচের মধ্য দিয়ে তাকালে অপর পাশের বস্তু দেখি অথচ কাঠের মধ্য দিয়ে তাকালে দেখি না।

নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন, বেশিরভাগ তরল ও গ্যাসীয় পদার্থই স্বচ্ছ। পানি, রান্না-বান্নার তেল, বায়ূ, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি।

কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের মৌলিক ভিন্নতাই এর কারণ।

কোনো বস্তু যখন কঠিন অবস্থায় থাকে, তখন এর অণুগুলো (Molecule) পরস্পরের সাথে খুব সু-সংগঠিত থাকে, এবং এর ফলে তাদের মধ্যকার বন্ধন খুব শক্তিশালী হয় আর বস্তুটি পায় দৃঢ়তা। বস্তুটি যখন তরল হয়ে যায়, তখন বন্ধন-শক্তি কমে যায় এবং অণুগুলোর সজ্জা বা বিন্যাস কিছুটা বিশৃংখল হয়ে যায়। আর গ্যাসীয় অবস্থায় এ বিন্যাস হয়ে যায় একেবারেই এলোমেলো।

বিন্যস্ত অবস্থা থেকে ক্রমে তরল ও গ্যাসে সজ্জাহীনতাই এদের মধ্য দিয়ে আলো চলাচল করতে পারার মূল কারণ। একটার উপর একটা ইট খাড়া করে যেমন দূর্ভেদ্য দেয়াল নির্মাণ করা যায় তেমনি আলোক তরঙ্গ চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অণুর সুবিন্যস্ততা।

বস্তু সাপেক্ষে আলোক তরঙ্গ প্রতিফলিত বা শোষিত হবে অথবা ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু তরল বা গ্যাসের ক্ষেত্রে অণুগুলো নিজেদের সাথে গাদাগাদি করে লেগে থাকবে না। ফলে তাদের মাঝে ফাঁকা স্থান রয়ে যাবে, যে পথে আলোক তরঙ্গ বের নিজের পথ করে নেবে।

অণুগুলোর অবিন্যস্ততা ( randomness) যত বেশি হবে , আলো তত সহজে বস্তূটিকে পাড়ি দেবে।
যখন একটি ফোটন (Photon) কোন পদার্থের পরমাণুর ইলেক্ট্রনের সংস্পর্শে আসে তখন নিম্ন-ঘটনা ঘটতে পারে-
      ক. ইলেক্ট্রন ফোটনের শক্তি শোষণ করে একে রূপান্তরিত করবে (সাধারণত তাপ শক্তিতে)
      খ. ইলেক্ট্রন ফোটনের শক্তি শোষণ ও সঞ্চয় করে ঔজ্জ্বল্য (Luminescence)  প্রদর্শন করবে।
      গ. ফোটনের শক্তি শোষণ করে পরে প্রতিফলিত করবে
      ঘ. ইলেক্ট্রন ফোটন কে শোষিত করতে পারবে না, ফলে ফোটন বস্তুটি ভেদ করে চলে যাবে।

অবশ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরের সব অপশনের সমন্বয় (Combination) ঘটে।

এবার চলুন দেখি কাঁচ কীভাবে স্বচ্ছ হয়?
সিলিকা বা বালি কাঁচ তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যাবহৃত হয়। এটাকে গলনাঙ্কে পৌঁছানো পর্যন্ত উত্তপ্ত করে তরল বানিয়ে এরপর  ঠণ্ডা করা হয়। ফল দাঁড়ায় এর অণুগুলো তরলের মতই অ-বিন্যস্ত থাকে কিন্তু কঠিন পদার্থের মত শক্ত বন্ধন ও দৃঢ়তা ধরে রাখে।
প্লাস্টিককেও একইভাবে শীতলীকরণের মাধ্যমে স্বচ্ছ বানানো হয়।
Category: articles

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৭


পৃথিবীর পৃষ্ঠে বসিয়ে রাখা একটি রকেট নিয়ে চিন্তা করতে করতেই কাল দীর্ঘায়নে মহাকর্ষের প্রভাব বুঝে ফেলা যায়। আমরা একটু পরেই তা করব। তবে তার আগে কিছু কথা বলে রাখা জরুরী।

অ্যারিস্টটল মনে করতেন, স্থান ও কাল দুটোই পরম। কোনো ঘটনা কোথায় এবং কখন ঘটেছে সে সম্পর্কে সকল পর্যবেক্ষক একমত হবেন। নিউটন এসে পরম স্থানের ধারণাকে বিদায় জানিয়ে দেন। আইনস্টাইন বিদায় দেন পরম সময়কেও। তবে পরম সময়ের কফিনে মাত্র একটি পেরেক ঠুকে তাঁর মন ভরেনি। ১৯০৫ সালে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রকাশ করে বলেছিলেন, আলোর কাছাকাছি বেগে গতিশীল অভিযাত্রীর সময় চলবে তুলনামূলক অনেক ধীরে। ১৯১৫ সালের প্রকাশ করেন আরো যুগান্তকারী একটি তত্ত্ব। এটাই হল মহাকর্ষের সর্বাধুনিক তত্ত্ব। সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব (General theory of relativity)। দেখালেন, কাল দীর্ঘায়ন ঘটায় মহাকর্ষও।

অবশ্য উচ্চ গতির মতো মহাকর্ষও যে কাল দীর্ঘায়ন ঘটাতে সিদ্ধহস্ত সেটা তিনি ১৯০৭ সালে লেখা ও ১৯০৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধেই অনুমান করেন।

দুই আপেক্ষিক তত্ত্বেই একটি করে মৌলিক নীতি মেনে চলা হয়। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বে সেটি হল আপেক্ষিকতার মৌলিক স্বীকার্য। এর বক্তব্য হল,
মুক্তভাবে গতিশীল সকল পর্যবেক্ষকের কাছে বিজ্ঞানের সূত্রগুলো একই থাকবে, বেগ যাই হোক তাতে কিছু আসে যায় না। 
এখানে ত্বরণ সম্পর্কে কিছু বলা হয় না। আর সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের মৌলিক নীতিটি হল,  সমতুল্যতার নীতি (Principle of equivalence)। এই নীতির বক্তব্য হল,
যথেষ্ট ক্ষুদ্র স্থানের অঞ্চলে অবস্থান করে এটা বলা সম্ভব নয় যে আপনি কোনো মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে স্থিরাবস্থায় আছেন, নাকি শূন্য স্থানে সুষম হারের ত্বরণ (বেগ বৃদ্ধি) নিয়ে চলছেন।
এই গুরুগম্ভীর কথা বুঝতে অসুবিধা হলে সমস্যা নেই। বরং চলুন একটি উদাহরণ দেখি।

মনে করুন, আপনি মহাশূন্যের মধ্যে এমন একটি লিফটে আছেন, যেখান মহাকর্ষ অনুপস্থিত। ফলে এখানে উপর বা বা নিচ বলতে কিছু নেই। আপনি মুক্তভাবে ভেসে আছেন। একটু পর লিফটখানা সমত্বরণে চলা শুরু করল। এখন কিন্তু হঠাৎ করে আপনি ওজোন অনুভব করবেন। আপনি লিফটের এক প্রান্তের দিকে একটি টান অনুভব করবেন। এখন এ দিকটিকেই আপনার কাছে মেঝে মনে হবে! আপনি এখন হাত থেকে একটি আপেল ছেড়ে দিলে এটি মেঝের দিকে চলে যাবে। আসলে এখন আপনার মতোই লিফটের ভেতরের সব কিছুর ত্বরণ হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আসলে লিফটটা মোটেই গতিশীল নয়, বরং এটি একটি সুষম মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে স্থির অবস্থায় আছে।

আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন, ট্রেনের ভেতরে বসে যেমন আপনি বলতে পারেন না যে আপনি সম বেগে চলছেন কি না, তেমনি লিফটের ভেতরে বসেও আপনি বুঝতে পারবেন না, আসলে আপনি সুষম ত্বরণে চলছেন, নাকি কোনো সুষম মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের মধ্যে আছেন। আইনস্টাইনের এই চিন্তার ফলাফলই হল সমতুল্যতার নীতি।

সমতুল্যতার নীতি এবং এর ওপরের উদাহরণটি সত্য হলে বস্তুর জড় ভর (Inertial mass) ও মহাকর্ষীয় ভরকে (Gravitational mass) অবশ্যই একই জিনিস হতে হবে। বল প্রয়োগের ফলে কতটুকু ত্বরণ হবে তা নির্ভর করে জড় ভরের ওপর। এই ভর নিয়েই কথাই বলা হয়েছে নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্রে। আর অন্য দিকে মহাকর্ষীয় ভরের কথা আছে নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্রে। আপনি কতটুকু মহাকর্ষীয় বল অনুভব করবেন তা নির্ভর করে এই ভরের ওপর।

আমরা সমতুল্যতার নীতি জানলাম। আইনস্টাইনের যুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এবার একটি থট এক্সপেরিমেন্ট (যে পরীক্ষা বাস্তবে করা যায় না, চিন্তা করে করে বুঝতে হয়) করতে হবে। এটা আমাদেরকে দেখাবে মহাকর্ষ সময়কে কীভাবে প্রভাবিত করে।

মহাশূন্যে অবস্থিত একটি রকেটের কথা চিন্তা করুন। চিন্তার সুবিধার জন্যে মনে করুন রকেটটি এত বড় যে এর শীর্ষ থেকে তলায় আলো পৌঁছতে এক সেকেন্ড লাগে। অর্থ্যাৎ এর দৈর্ঘ্য ১, ৮৬,০০০ মাইল। আরও মনে করুন, রকেটের সিলিং ও মেঝেতে একজন করে দর্শক আছেন। দুজনের কাছেই অবিকল একই রকম একটি করে ঘড়ি আছে যা প্রতি সেকন্ডে একটি করে টিক দেয়।

মনে করুন সিলিং এর দর্শক ঘড়ির টিকের অপেক্ষায় আছেন। টিক পেয়েই তিনি মেঝের দর্শকের দিকে একটি আলোক সঙ্কেত পাঠালেন। পরে ঘড়িটি আবারও টিক (সেকেন্ডের কাঁটায়) দিলে তিনি আরেকটি সঙ্কেত পাঠালেন। এ অবস্থায় প্রতিটি সঙ্কেত এক সেকেন্ড পর মেঝের দর্শকের কাছে পৌঁছায়। সিলিং এর দর্শক এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি সঙ্কেত পাঠালে মেঝের দর্শকও এক সেকন্ডের ব্যবধানে সঙ্কেত দুটি পাবেন।

মহাশূন্যে মুক্তভাবে ভেসে না চলে রকেটখানা যদি পৃথিবীর মহাকর্ষীয় টানের মধ্যে থাকত তাহলে কী ঘটত? নিউটনীয় থিওরি অনুসারে এই ঘটনায় মহাকর্ষের কোনো হাত নেই। সিলিং এর দর্শক এক সেকেন্ডের ব্যবধানে সঙ্কেত পাঠালে মেঝের দর্শকও এক সেকেন্ডের মধ্যেই তা পাবেন। কিন্তু সমতুল্যতার নীতি ভিন্ন কথা বলে। চলুন দেখা যাক, নীতিটি কাজে লাগিয়ে আমরা মহাকর্ষের বদলে সুষম ত্বরণ নিয়ে চিন্তা করে কী পাই। নিজের মহাকর্ষ থিওরি তৈরি করতে আইনস্টাইন সমতুল্যতা নীতিকে যেভাবে কাজে লাগিয়েছেন এটা হল তার একটি উদাহরণ।

তো, এখন তাহলে মনে করুন রকেটটি ত্বরণ নিয়ে চলছে (অর্থ্যাৎ, প্রতি মুহূর্তে এর বেগ বেড়ে যাচ্ছে। আমরা আপাতত ধরে নিচ্ছি এর ত্বরণের মান ক্ষুদ্র, না হলে আবার এটি আলোর বেগের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে!)। রকেটটি উপরের দিকে গতিশীল বলে প্রথম সঙ্কেতটিকে আগের চেয়ে (যখন রকেট স্থির ছিল) কম দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে। কাজেই সঙ্কেতটি এখন এক সেকেন্ড পার হবার আগেই পৌঁছে যাবে তলায়।

রকেটটি যদি নির্দিষ্ট বেগে (ত্বরণহীন) চলত, তাহলে আগে-পরের সব সঙ্কেত এক সেকেন্ড পরপরই পৌঁছত। কিন্তু এখানে ত্বরণ আছে বলে প্রথমে যখন সঙ্কেত পাঠানো হয়েছিল, রকেট এখন তার চেয়ে দ্রুত চলছে। কাজেই দ্বিতীয় সঙ্কেতকে আরও কম দূরত্ব পার হতে হবে। ফলে এটি পৌঁছতেও আরও কম সময় লাগবে। কাজেই মেঝের দর্শক দুই সঙ্কেতের মাঝে সময় ব্যবধান পাবেন এক সেকেন্ডের চেয়ে কম। অথচ সিলিং এর দর্শক তা পাঠিয়েছেন ঠিক এক সেকেন্ড পরে। হয়ে গেল সময়ের গরমিল।

ত্বরণপ্রাপ্ত রকেটের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটা নিশ্চয়ই অদ্ভুত লাগছে না। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, সমতুল্যতার নীতি বলছে, রকেটটি যদি কোনো মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রেও স্থির থাকে তবু একই ঘটনা ঘটবে। অর্থ্যাৎ, রকেটটি যদি ত্বরণপ্রাপ্ত নাও হয় (যেমন ধরুন এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠে উৎক্ষেপণের জন্যে বসিয়ে রাখা আছে) তাহলেও সিলিং এর দর্শক এক সেকেন্ড পর দুটো সঙ্কেত পাঠালে মেঝের দর্শক তা পাবেন এক সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যেই। এবার অদ্ভুৎ লাগছে, তাই না!

হয়ত মাথায় প্রশ্ন আসবে, এর অর্থ তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে- মহাকর্ষ কি সময়কে বিকৃত করছে, নাকি ঘড়িকে অচল করে দিচ্ছে? ধরুন, মেঝের দর্শক উপরে উঠে সিলিং এর দর্শকের সাথে ঘড়ি মিলিয়ে নিলেন। দেখা গেল, দুটো ঘড়ি অবিকল একই রকম। তারা এও নিশ্চিত যে দুজনে এক সেকেন্ড বলতে সমান পরিমাণ সময়কেই বোঝেন। মেঝের দর্শকের ঘড়িতে কোনো ঝামেলা নেই। এটি যেখানেই থাকুক, তা তার স্থানীয় সময়ের প্রবাহ-ই মাপবে।

বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব আমাদের বলছে, ভিন্ন বেগে চলা দর্শকের জন্যে সময় ভিন্ন গতিতে চলে। আর সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব বলছে, একই মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের বিভিন্ন উচ্চতায় সময়ের গতি আলাদা। সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে, মেঝের দর্শক এক সেকেন্ডের চেয়ে কম সময় পেয়েছেন, কারণ পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছে সময় অপেক্ষাকৃত ধীরে চলে। মহাকর্ষ ক্ষেত্র শক্তিশালী হলে এই প্রভাবও হবে বেশি। নিউটনের গতি সূত্রের মাধ্যমে বিদায় নিয়েছিল পরম স্থানের ধারণা। এবার আপেক্ষিক তত্ত্ব পরম সময়কেও বিদায় জানিয়ে দিল।

কাল দীর্ঘায়ন। পাহাড়ের ঘড়ি দ্রুত চলে। 

১৯৬২ সালে এই অনুমান পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। একটি ওয়াটার টাওয়ারের উপরে ও নিচে দুটি অতি সূক্ষ্ম ঘড়ি বসানো হয়। দেখা গেল নিচের ঘড়িটিতে (যেটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের বেশি কাছে আছে) সময় ধীরে চলছে, ঠিক সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব যেমনটি অনুমান করেছিল তেমনই। এই প্রভাব খুব ক্ষুদ্র। সূর্যের পৃষ্ঠে রাখা কোনো ঘড়িও পৃথিবীর পৃষ্ঠের তুলনায় মাত্র এক মিনিট পার্থক্য দেখাবে। কিন্তু পৃথিবীর ওপরের বিভিন্ন উচ্চতায় সময়ের এই ক্ষুদ্র পার্থক্যই বর্তমানে বাস্তব ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্যাটেলাইট থেকে আসা সঙ্কেতের মাধ্যমে আমাদের ন্যাভিগেশন সিস্টেমকে ঠিক রাখার জন্যে এর প্রয়োজন হয়। এই প্রভাব উপেক্ষা করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অবস্থান বের করলে ভুল হয়ে যাবে কয়েক মাইল!

সময়ের প্রবাহের পার্থক্য ধরা পড়ে আমাদের শরীরেও। এমন এক জোড়া যমজের কথা চিন্তা করুন, যাদের একজন বাস করছে পাহাড়ের চূড়ায় এবং আরেকজন সমুদ্র সমতলে। প্রথম জনের বয়স অপরজনের চেয়ে দ্রুত বাড়বে। দুজনে আবার দেখা করলে দেখা যাবে একজনের বয়স আরেকজনের চেয়ে বেশি। এই ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য খুব ক্ষুদ্র হবে হবে। তবে এদের একজন যদি আলোর কাছাকাছি গতিতে মহাকাশযানে করে দীর্ঘ ভ্রমণ করে ফিরে আসে তাহলে দেখা যাবে যমজের চেয়ে তার বয়স অনেক বেশি পরিমাণে কম হচ্ছে।

বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বে পৃথিবী থেকে দূরে গিয়ে অনেক বেশি বেগে ভ্রমণ করে এলে আপনার বয়স অপেক্ষাকৃত কম হবে। আর সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বে আপনি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে দূরে অবস্থান করলে বয়স দ্রুত বাড়বে। একটি প্রভাব আপাত দৃষ্টিতে আরেকটি থেকে উল্টোভাবে কাজ করে। অবশ্য বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব কার্যকর হবার জন্যে আপনাকে রকেটে চড়ে মহাশূন্যেই যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনি যদি পৃথিবীতেই একটি (অ)সম্ভব দ্রুতগামী ট্রেনে চড়েও ভ্রমণ করেন তবু ট্রেনের বাইরে থাকা আপনার বন্ধুর চেয়ে আপনার বয়স কম হবে।
কাল দীর্ঘায়ন। পাহাড়ের তুলনায় ভূমির সময় চলে ধীরে। 

 একে বলা হয় টুইন প্যারাডক্স। তবে মাথার মধ্যে পরম সময়ের ধারণাকে স্থান দিলে তবেই একে প্যারাডক্স (পরস্পর বিরোধী বা আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব ঘটনা) মনে হবে। আপেক্ষিক তত্ত্বে একক পরম সময় বলতে কিছু নেই। বরং প্রত্যেক দর্শক তার নিজের মতো করে সময় মাপেন। এটা মেনে নিলেই আর কোনো প্যারাডক্স থাকে না।

সূত্রঃ
স্টিফেন হকিং ও লিওনার্দ ম্লোদিনোর লেখা ও লেখকের অনূদিত প্রকাশিতব্য বই অ্যা ব্রিফার হিস্টরি অব টাইম অবলম্বনে। বইটি এ বই মেলায় প্রকাশিত হচ্ছে। পড়তে পারছেন অনলাইনেও। 
Category: articles

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

পৃথিবীর বুক থেকে থেকে ওপরের দিকে লাফ দিয়ে আমরা গড়ে দেড় ফুটের কিছু বেশি উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারি। বাতাসে ভেসে থাকতে পারি প্রায় এক সেকেন্ড। কিন্তু সৌরজগতের অন্য গ্রহ বা উপগ্রহে গেলে কেমন লাফাতে পারব আমরা?


এ হিসাব মুহূর্তের মধ্যে করে ফেলতে স্টুয়ার্ট লোয়ে ও ক্রসি নর্থ নামের দুজন জ্যোতির্বিদ দারুণ একটি অনলাইন অ্যাপ বানিয়েছেন। এর নাম দিয়েছেন হাই জাম্প। এখান থেকে বের করা যাবে, এক লাফে কত উচ্চতায় ওঠা যাবে, আর কতক্ষণই বা ভেসে থাকা যাবে। চলুন ঘুরে আসি কিছুক্ষণ।

প্রথমেই পৃথিবী। আহেই বলেছি, সোজা ওপরের দিকে লাফ দিয়ে আমরা গড়ে দেড় ফুট উঠতে পারি। আমি অবশ্য দুই ফুটের কাছাকাছি পারি, চিকন হবার সুবাদে।

পৃথিবীর এক লাফ 
চাঁদে যাওয়া যাক। পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদেই এ পর্যন্ত মানুষ লাফানোর সুযোগ পেয়েছে। চাঁদের মহাকর্ষ পৃথিবীর মাত্র প্রায় সতের শতাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ। ফলে এক লাফে আপনি আরও বেশি উঠতে পারবেন। দশ ফুট! হ্যাঁ, সত্যিই নিজেকে কিছুটা অতিমানব মনে হবে। আর শুন্যে ভেসে থাকতে পারবেন চার সেকেন্ড। বাহ!

মঙ্গলে যাই চলুন। চাঁদের চেয়ে বড় হলেও পৃথিবীর চেয়ে কিন্তু ছোট। মহাকর্ষ পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। উঠতে পারবেন তিন ফুট, আর ভেসে থাকবেন দুই সেকেন্ড। খুব বেশি না, তাই না? চলুন তাহলে একটু শিহরিত হই।

চলে আসুন বামন গ্রহ প্লুটোয়। এর পৃষ্ঠের অভিকর্ষের মান পৃথিবীর এক শ ভাগের ছয় ভাগ। এক লাফে এক্কেবারে ২৫ ফুট। শুন্যে থাকবেন ঝাড়া ৯ থেকে ১০ সেকেন্ড! চাঁদের চেয়েও বেশি। মনে রাখতে হবে, প্লুটো কিন্তু চাঁদের চেয়েও ছোট। এটাও এর গ্রহ থেকে বামন গ্রহ হয়ে যাবার একটা কারণ।

ভাবছেন হয়ত, বৃহস্পতি বা শনি থেকে লাফালে কেমন হয়? আফসোস! সেটা পারবেনই না। এদের কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই, যেখান থেকে আপনি লাফ দেবেন। আর দিতে পারলেও পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম উঠতে পারতেন। তার চেয়ে চলুন, সত্যি সত্যি সুপারম্যান হয়ে যাই।

আসুন শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস-এ। এক লাফে শুন্যে ভেসে থাকবেন ঝাড়া এক মিনিট। পৌঁছবেন ১৪০ ফুট (প্রায় ৪৩ মিটার) ওপরে। বাহ!

এনসেলাডাস উপগ্রহে জাম্প 

একটি ধূমকেতু সফর করে এলে কেমন হয়। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বেছে নিলাম ধূমকেতু ৬৭পি। এর অভিকর্ষ এতই তুচ্ছ যে, নাসার পাঠানো ফিলি ল্যান্ডার এর বুক আঁকড়ে থাকার জন্যে হারপুনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এখান থেকে লাফ দিলে আপনি আর এর বুকে ফিরেই আসবেন না। ছিটকে চলে যাবেন মহাশূন্যে! তার মানে নিছক একটি লাফের বেগ এর বুকের মুক্তিবেগের চেয়েও বেশি।

আরও পড়ুনঃ 
মুক্তি বেগ কাকে বলে? 

আরও জানতে চাইলে নিজেই ঘুরে আসুন এই লিঙ্ক থেকে

সূত্রঃ বিজনেস ইনসাইডার, কসমস বুক 
Category: articles

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

আলডেবারান রাতের আকাশের ১৪তম উজ্জ্বল নক্ষত্র।
একে চেনার ভালো একটি মাস জানুয়ারি। সন্ধ্যা নামলেই পূর্ব দিগন্তের বেশ ওপরে দেখা যাবে একে। তাকাতে হবে প্রায় সোজা পূর্ব দিকে। পরের মাসগুলোতে আস্তে আস্তে ওঠে আসবে মাথার ওপরের দিকে। এপ্রিল মাসের দিকে সন্ধ্যার  পশ্চিম আকাশে চলে আসবে। পরের কয়েক মাস দেখা কঠিন হবে।

আলডেবারানকে নিশ্চিত করে চেনার জন্যে কাজে লাগবে আদম সুরতের (কালপুরুষ) এর তিন তারা। আদম সুরতের মাঝখানের কোমরের তিনটি তারাকে যোগ করে ডান দিকে বাড়িয়ে দিলেই পেয়ে যাবেন নক্ষত্রটি।

আর তিন তারা থেকে যদি বাম দিকে যান, তাহলে পাবেন লুব্ধক। রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র।

আদম সুরত থেকে আলডেবারান
আরও পড়ুনঃ
Category: articles

শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬

মহাকর্ষ তরঙ্গ বইয়ের প্রচ্ছদ

অনলাইনে উইকিপিডিয়া জাতীয় সাইটগুলোর কল্যাণে বই পড়ার অভ্যাস কম। বাংলা বই তো আরও কম পড়া হয়। কিন্তু আব্দুল গাফফার রনি ভাইয়ের লেখা মহাকর্ষ তরঙ্গ বইটি দুই নিঃশ্বাসে (মানে এক বিরতিতে) শেষ করে বুঝলাম, না পড়লে বিশাল মিস হয়ে যেত।

শুরুর দিকে আলোচনা করেছেন, কীভাবে গ্যালিলিও এবং নিউটনদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হল প্রাথমিক মহাকর্ষ তত্ত্ব। এরপর বললেন, ম্যাক্সওয়েল সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীর পরিশ্রমের ফসল তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্বের আবির্ভাবের ব্যাপারে। অতঃপর কীভাবে আইনস্টাইন আগের তত্ত্বগুলো ও নতুন পর্যবেক্ষণের মিশেলে তৈরি করে ফেললেন আপেক্ষিক তত্ত্ব। 

সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে এল মহাকর্ষ তরঙ্গের ইঙ্গিত। 

কিন্তু আইনস্টাইনই সেটা বাতিল করতে চাচ্ছিলেন। পরে বুঝতে পারেন নিজের ভুল।  ১৯৭৪ সালে এই তরঙ্গের পরোক্ষ প্রমাণ হাতে এল। এ জন্যে হালস ও টেলর নোবেল পেলেন ১৯৯৩ সালে। 
কিন্তু প্রত্যক্ষ্য প্রমাণ? তাতে সফল হবার জন্যে অসদুপায় অবলম্বন করলেন জোসেফ ওয়েবার। কিন্তু কিপ থর্ন, ওয়েইস ও ড্রেভার এর প্রতিষ্ঠিত লাইগো ঠিকই ধরে ফেলল এই রহস্যময় তরঙ্গ। 

কিন্তু এত সূক্ষ্ম এই তরঙ্গ কীভাবে ধরা গেল? এটি পেয়েই বা লাভ কী? এ তরঙ্গের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবার বিগ ব্যাঙ ও মহাবিশ্বের গান শুনতে চাচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে? 
এই যুগান্তকারী আবিষ্কারে অবদান আছে সাত বাঙালি বিজ্ঞানীরও। এঁদের দুজন আবার বাংলাদেশি। কারা সেই মহান ব্যক্তি? জানতে হলে পড়ে ফেলুন মহাকর্ষ তরঙ্গ বইটি। 

আস্থা রাখুন, টাকা ও সময় কোনোটিই নষ্ট হবে না। 

লেখক 

বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে সতেরোর বই মেলায়। তবে ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে।
রকমারি ডট কম থেকেও কিনতে পারেন। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি ইতোপূর্বে ব্যাপন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। ]  
ল্যাপটপ চলছে সূর্যের আলোয়। সত্যি বলছি কিন্তু 

প্রশ্নটার উত্তর সোজাসুজি চিন্তা না করে চলুন, খেলার মাঠ থেকে একটা চার বছরের বাচ্চাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ধরে নিয়ে আসি। কেন? কারণ, এখন প্রশ্নটার উত্তর দেবার সময় যখনই আমি মনে করব উত্তর যথেষ্ট হয়েছে, তখনই ও আবার প্রশ্ন করবে, 'কেন?' 
চার বছরের বাচ্চারা এমনইতো করবে। এর ফলে আমরা প্রশ্নটার সঠিক উত্তর পাবো আশা করি। ওর নাম দিলাম বল্টু। সবাই ওকে হাই বলুন! 
অতএব, প্রশ্নটার উত্তরে প্রথমেই বললাম, 'কারণ, আমি ল্যাপটপটা চালু করেছি।'

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ ভালো প্রশ্ন করেছো, বল্টু। আমি এটা চালু করেছি যাতে আমি লেখাটা লিখতে পারি। আর আসলে সত্য কথা হল, আমার ল্যাপটপ সব সময় চালুই থাকে। আমি একে কখনো শাট ডাউন দেই না।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ কারণ আধুনিক ল্যাপটপগুলোকে বন্ধ করতে হয় না। আর আমি এমনিতেই বন্ধ করি না, এটা আমার অলসতা আর ল্যাপটপের প্রতি ভালোবাসা।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ আমি আসলে একটু খামখেয়ালী মানুষ, এলোমেলোভাবে চলিতো। কোনো কিছু গোছগাছ করে রাখি না।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ কারণ আমি এখনো বড়োদের মতো দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন হইনি।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ আমার বয়স এখনো খুব বেশি হয়নি, ২৫ ও ক্রস করেনি।

আরে! হচ্ছেটা কী? আমরাতো প্রশ্নটা থেকে সরে যাচ্ছি। এমন তো হবার কথা ছিল না। বল্টু ঠিকভাবে প্রশ্ন করছে না। 
দেখো, বল্টু, তোমাকে শুধু 'কেন?' 'কেন?' করার জন্যে নিয়ে আসিনি। তোমাকে সঠিক প্রশ্ন করে ব্যাপারটার গভীরে যেতে হবে।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ কারণ আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলো পাঠকদের সামনে ফাঁস করার জন্যে তোমাকে আনিনি। আমাদেরকে সঠিক বিষয়টি পাঠকদেরকে জানাতে হবে।

বল্টুঃ কেন?

না, হচ্ছে না। এই বল্টুকে দিয়ে হবে না। বল্টুকে মায়ের কোলে রেখে এসে আমরা বরং ছয় বছরের আরেকটি বল্টু নিয়ে আসি। চার বছরের বাচ্চারা কেমন হয়, ভুলে বসে আছি। আবার শুরু করি।

আমিঃ ল্যাপটপ চালু আছে কারণ এতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে।

বল্টুঃ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কেন?

আমিঃ কারণ এটা পাওয়ার কর্ডের সাথে যুক্ত আছে, যেটি আবার ওয়াল সকেটের সাথে যুক্ত।

বল্টুঃ ওয়ালের সকেটে বিদ্যুৎ এল কীভাবে?

আমিঃ কারণ এটা ঢাকা শহরের ইলেকট্রিক গ্রিডের সাথে যুক্ত আছে।

বল্টুঃ ঢাকা শহরের গ্রিডে বিদ্যুৎ এল কোথা থেকে?

হুম! ছয় বছরের বল্টুকে দিয়ে কাজ হচ্ছে। এবার তাহলে আমাদেরকে জেনে আসতে হবে মানুষ কীভাবে ইতিহাসের পরিক্রমায় বিদ্যুৎ শক্তিকে হাত করতে পারল। 

এই ইতিহাসকে তিন ভাগে ভাগ করা চলে।
১. অনেক অনেক প্রাচীন যুগে শক্তির ব্যবহার- যখন হাত দিয়ে কষ্ট করে সব কাজ করাব হত।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষেরা আসলেই জানত না যে কীভাবে খুব সহজে কোনো কাজ করে ফেলা যায়।



২। কিছুটা প্রাচীন যুগ- যখন মানুষ প্রকৃতির শক্তিকে সরাসরি ব্যবহার করা শিখল।


একটা সময় এসে মানুষ বুঝতে পারল, তারা প্রকৃতির কিছু শক্তি কাজে লাগিয়ে নিজেদের কষ্ট অনেক কমিয়ে আনতে পারে। এর অন্যতম আদিম উদাহরণ হল আগুণের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন। এটা ঘটেছিল ১ লাখ ২৫ হাজার বছর থেকে ৪ লাখ বছর আগে (একেকজন অবশ্য একেক উত্তর দেবে এর)।

ইদানিং প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ৫ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ বায়ুকল, বাঁধ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাকৃতিক শক্তি থেকে যান্ত্রিক সুবিধা আদায় করত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে স্টিম ইঞ্জিনের মতো অতি আধুনিক (তুলনামূলক) প্রযুক্তির সাহায্যে নৌযান ও লোকোমোটিভ চালনা শুরু হয়।

এগুলো হল প্রাকৃতিক শক্তির সরাসরি ব্যবহার। এদের অসুবিধা ছিল, এদেরকে ব্যবহার করতে হত এর উৎপাদনের স্থান এবং সময়েই। যেমন আগের দিনের বায়ুকল ঘুরত এবং এই ঘূর্ণন বলকে দিয়ে পানি ওঠানো বা শস্য মাড়াইয়ের কাজে লাগানো হত। এমন জিনিসের ব্যবহার কিন্তু আজো ফুরিয়ে যায়নি। একবার ব্ল্যাকআউটের কথাই চিন্তা করুন। আপনার চুলা ও এর উত্তাপ, টয়লেট (যেখানে ফ্ল্যাশ করার জন্যে কাজে লাগে অভিকর্ষ), কাঠের আগুন বা মোমবাতি বা গাড়ি- সবকিছুই প্রকৃতি থেকে সরাসরি শক্তি নিচ্ছে। মাঝখানে আর কিছু নেই।

৩। আধুনিক যুগে শক্তি উৎপাদন- বড়ো মাপে এবং পরোক্ষভাবে।
১০০ আগে বছর মানুষ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে শিখলে বিশ্বে এল যুগান্তকারী পরিবর্তন। ইলেকট্রিক গ্রিডের মাধ্যমে শক্তির সরবরাহ ছড়িয়ে পড়ল দূর দূরান্তে। মানুষের ইতিহাসে হয়ত এটাই সবচেয়ে বড়ো একক মাইলফলক।

শিল্পের প্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত করা, একে বিদ্যুতে পরিণত করা, দূরে পাঠিয়ে দেওয়া এবং পরে আবার সুবিধা মতো যে কোনো শক্তিতে রূপান্তর করা সহজ হয়ে গেল। দেশের এক প্রান্তের উত্তপ্ত কয়লা আরেক প্রান্তের হিমাগারকে শীতল রাখছে। আধুনিক উইন্ডমিল শুধু পানি তুলতে বা শস্য ভাঙতেই কাজে লাগছে না, এ থেকে বিদ্যুতও পাওয়া যাচ্ছে, যা দিয়ে করা যাচ্ছে প্রায় সব কিছু।
আমার যে ল্যাপটপ চলছে, হতে পারে এর বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া গেছে কয়লা পুড়িয়ে, পরমাণু ভেঙে অথবা বাতাস বা নদীর পানির প্রবাহ থেকে। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। এ শক্তিগুলো সবাই আমার কাছে এসে এক হয়ে যায়- আমি যখনই প্লাগ যুক্ত করি, পাই বিদ্যুৎ।
এই দিক থেকে বলা যায় যে, দামের জগতে টাকার যে ভূমিকা, শক্তির জগতে বিদ্যুতের ভূমিকা তাই।
Source: Wait But Why


অতএব, এ কারণেই ঢাকাসহ বিশ্বের বড়ো বড়ো প্রায় সব শহরেই ইলেকট্রিক গ্রিড আছে।

বল্টুঃ ইলেকট্রিক গ্রিডে বিদ্যুৎ আছে কেন?

আমিঃ কারণ ওটা পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে যুক্ত আছে, যা গ্রিডে  বিদ্যুৎ পাঠাচ্ছে।

বল্টুঃ পাওয়ার প্ল্যান্ট বিদ্যুৎ বানায় কীভাবে?

হুম, এখন শক্তির সংরক্ষণশীলতার নীতি বলতে হয়। শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, বরং এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন করা যায় মাত্র। এর অর্থ হল, মানুষ শক্তি তৈরি করতে পারে না, তারা শক্তির প্রচলিত রূপকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারে। অতএব, বিদ্যুৎ তৈরির একমাত্র উপায় হল শক্তির প্রচলিত কোনো উৎসকে বিদ্যুতে রূপান্তর করা।
সাধারণত যে কয়ভাবে পাওয়ার প্ল্যান্ট কাজ করে তা হলঃ

১. এক ধরনের নবায়নযোগ্য এনার্জি প্ল্যান্ট (জলবিদ্যুৎ (Hydroelectric), বায়ু বা সৌর)। এ থেকে বিদ্যুতের সামান্য অংশই পাওয়া যায়। আমেরিকায় ১১% বিদ্যুৎ পাওয়া যায় এটি থেকে।

২। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। এ থেকে পুরো বিশ্বের ২.৮ % বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অবশ্য আমেরিকায় এর ব্যবহার তুলনামূলক অনেক বেশি ২১%।

৩। বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ শক্তির প্রায় ৮০% ই পাওয়া যায় ফসিল ফিউল বা জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা, গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি থেকে। 

এ কারণে, গাণিতিক সম্ভাবনার কথা বললে আমি বলব যে, আমার ল্যাপটপ চালু আছে হয়ত কোনো জীবাশ জ্বালানির কারণে। আপনার ক্ষেত্রেও একই কথা। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন, হয়ত ফসিল ফিউল প্ল্যান্টের কল্যাণেই চলছে আপনার ল্যাপটপ।

বল্টুঃ জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফিউল প্ল্যান্ট কীভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে?

এটা করা হয় জীবাশ্ম জ্বালনি পুড়িয়ে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে অবশ্য কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাসই শুধু কাজে লাগানো হয়। তেল দরকার হয় পরিবহনের কাজে। পাওয়ার প্ল্যান্টে কয়লা বা গ্যাস পুড়িয়ে বিপুল পরিমাণ পানিকে উত্তপ্ত করা হয়। এরপর ফুটন্ত বাষ্পকে পাঠানো হয় টারবাইনে (বড় প্রপেলার), যার ফলে এটি ঘুরতে থাকে। টারবাইনটি তামার তার দ্বারা প্যাঁচানো থাকে এবং একে ঘিরে থাকে চুম্বক। টারবাইন ঘোরার সময় তামার কুণ্ডলীও ঘুরতে থাকে। এর ফলে বিদ্যুতের স্রোত তার বেয়ে প্ল্যান্ট থেকে বেরিয়ে আসে। পোঁছে যায় শহরের ইলেকট্রিক গ্রিডে।

অতএব, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আমার ল্যাপটপ চালু করা হয়েছে।

বল্টুঃ তুমি না বললে, শক্তি তৈরি করা যায় না, শুধু রূপান্তর করা যায়- তাহলে কয়লাকে পুড়িয়ে যে শক্তি পাওয়া গেল তা কোথেকে এল?

বাবুটাতো ভালোই ভোগান্তি দিচ্ছে। ফলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil fuel) আসলে কী?

জীবাশ্ম জ্বালানি হল ত্রিশ থেকে ছত্রিশ কোটি বছর আগের কার্বোনিফেরাস যুগের গাছের ধ্বংসাবশেষ, যে সময় ডাইনোসরদেরও অস্তিত্ব ছিল না। অধিকাংশ গাছই মারা যাবার পরপরই পচে ও ক্ষয় হয়ে গিয়ে এদের ভেতরের শক্তি নির্গত করে দেয়। কার্বোনিফেরাস যুগের অধিকাংশ গাছ, শৈবাল এবং ক্ষুদ্র জীব জলাশয়ে বা সমুদ্রে মারা গিয়েছিল। এরপর এরা তলায় পৌঁছে গিয়ে বালু, কাদা ও অন্যান্য জিনিসের নিচে চাপা পড়ে যায়। এ সময়জুড়ে এরা নিজেদের সাথে বহন করতে থাকে শক্তি। বছরের পর বছর ধরে এই মৃত জিনিসের উপর আরো বেশি বেশি কাদা, বালি, পাথর ইত্যাদি জমতে জমতে তীব্র চাপে এরা গ্যাস, কয়লা ও তেলে পরিণত হয়। যেই শক্তি নিয়ে সেই গাছগুলো মারা গিয়েছিল তা আজো বিদ্যমান রয়েছে— শুধু এর রূপ এখন জীবাশ্ম জ্বালানি রূপে রাসায়নিক শক্তি।

অতএব, সবকিছুর মূলে আছে সেই সময়ের সেই গাছগুলো যা থেকে চলছে বর্তমানের পাওয়ার প্ল্যান্ট।

বল্টুঃ কিন্তু শক্তি বা এনার্জি আসল কোথা থেকে? সেই প্রাচীন গাছগুলোই বা শক্তি পেলো কোথায়?

ঠিক যেভাবে বর্তমানে গাছে শক্তি প্রবেশ করে- সালোকসংশ্লেষণ। ব্যাপারটা খুবই সহজ।

সূর্যের আলো গাছের মধ্যে প্রবেশ করে কার্বন ডাই অক্সাইডকে ভেঙে ফেলে। এর ফলে কার্বন ভেতরে থেকে গিয়ে পদার্থ তৈরি করে এবং অক্সিজেন উপজাত আকারে বেরিয়ে আসে। অণুর এই ভাঙনের সময় গাছ সূর্য থেকে রাসায়নিক শক্তি গ্রহণ করে। এটা গাছের মধ্যেই থেকে যায়। আমরা গাছের গুড়ি পোড়ানোর সময় এই প্রক্রিয়াকেই উল্টো দিকে পরিচালিত করে দেই মাত্র। অক্সিজেন ও কার্বন জায়গা বদল করে। ভেতরের সঞ্চিত সৌরশক্তি আগুনের আকারে বের হয়ে পড়ে। আগুন হল সূর্যের আলো ও উত্তাপ, যা কাঠ থেকে নির্গত হবার আগে বহু দিন যাবত এর মধ্যে সঞ্চিত ছিল।

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর সময় ঠিক এটিই ঘটে। তবে গাছের বদলে জীবাশ্ম জ্বালানিতে সঞ্চিত সৌরশক্তির বয়স ৩০ কোটি বছর হয়ে গেছে। ফলে এ থেকে প্রাপ্ত শক্তিও ত্রিশ কোটি বছরের পুরনো।
অতএব, আমার ল্যাপটপ চলছে ত্রিশ কোটি বছরের পুরনো সৌরশক্তি দিয়ে।

বল্টুঃ আচ্ছা বুঝলাম, প্রাচীন সূর্য থেকে এই শক্তি এসেছে। কিন্তু সেই শক্তিটা আসল কোথা থেকে?

সূর্যের শক্তি আসলে এর কেন্দ্রে চলমান ফিউশন বিক্রিয়ার ফসল। এ পক্রিয়ায় তীব্র চাপের প্রভাবে পরমাণু জোড়া লেগে একটি একক পরমাণু গঠিত হয়। পরিণামে বিমুক্ত হয় প্রচুর পরিমাণ শক্তি। এটা হল নিউক্লিয়ার ফিসান (ভাঙন) বিক্রিয়ার বিপরীত, যেখানে বড় পরিমাণু ভেঙে যায় (নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এভাবে কাজ করে)।
জিনিসটা ঘটে এভাবেঃ

সূর্য যেভাবে কাজ করে

অতএব, নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় সৃষ্ট শক্তির ফলে সূর্যের কেন্দ্রমণ্ডল থেকে ফোটন (আলোক কণা) বেরিয়ে আসে। এই ফোটন সূর্যের পৃষ্ঠে পৌঁছতে এক লক্ষ বছর লাগিয়ে দেয়, কিন্তু তারপর পৃথিবীতে আসতে আর মাত্র আট মিনিট লাগে। এর পরেই গাছ সেটা পায়।

বল্টুঃ আচ্ছা, সেই শক্তি- মানে নিউক্লিয়ার ফিউশন— ওটা এল কোথা থেকে?

সূর্যের কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া শুরু হবার কারণ হচ্ছে এর তীব্র মহাকর্ষ চাপ।

বল্টুঃ মহাকর্ষটা আবার কী?

বল্টু, তুমি এখনো অনেক ছোট। মহাকর্ষ হল বক্র স্থান- কাল। এ বক্রতা তৈরি হয় বস্তুর উপস্থিতিতে। আর সূর্যের মতো বিশাল বস্তুর ক্ষেত্রে এই বক্রতার পরিমাণও বিশাল।

অতএব, ল্যাপটপের পাওয়ার সরবরাহের পেছনে একটি সত্যিকারের উৎস আছে। এটা হল সূর্যের দ্বারা সৃষ্ট স্থান- কালের তীব্র বক্রতা। এর কারণে শুরু হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন এবং তার এক লক্ষ বছর পরে গাছ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সেই শক্তি গ্রহণ করে। সেই শক্তি এরপর মৃত গাছের মধ্যে অবস্থান করে ধীরে ধীরে কয়লার মতো জীবাশ্মে পরিণত হয়। এই কয়লা ৩০ কোটি বছর পরে কোল মাইনাররা বের করে আনে, বয়ে নিয়ে আসা হয় পাওয়ার প্ল্যান্টে। 

একে পুড়িয়ে প্রাচীন সূর্যের মতোই আলো ও উত্তাপ পাওয়া যায়। এই উত্তাপ কাজে লাগিয়ে পানিকে গরম করা হয়, যা তখন স্টিম বা বাষ্পে পরিণত হয়। এটি জেনারেটরের ভেতরে থাকা টারবাইনকে ঘোরায়। এর ফলে শক্তি বের হয়ে বিদ্যুৎ আকারে চলে আসে ইলেকট্রিক গ্রিডে। এটাই পরে লাইন বেয়ে চলে আসে আমার বাসার ওয়ালে। পাওয়ার কর্ড ল্যাপটপে লাগানোর সাথে সাথে এটি চালু হবার শক্তি পায়।

তবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সূর্যের প্রাচীন মহাকর্ষের এই প্রভাব নন-ইলেকট্রিক এনার্জির ক্ষেত্রেও বলা চলে। গাড়ির হুডের নিচেও অবস্থান করছে একটি মিনি পাওয়ার প্ল্যান্ট। এটি তেল থেকে আসা গ্যাসোলিন পুড়িয়ে প্রাচীন সেই শক্তিতে ফিরিয়ে আনছে। এমনকি একটি মোমবাতি বা শক্তির যে কোনো রূপের ক্ষেত্রেই এটি ঘটছে।

একই ঘটনা চলছে আমাদের দেহেও। আমি এটি লিখতে পারছি কেন? কারণ আমার বডিতে আমার খাওয়া খাবারের শক্তি আছে। এই শক্তি আগে ছিল উদ্ভিদ বা প্রাণীতে, যার ফলে আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি সেই সালোকসংশ্লেষণে। তবে এই ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষণ নতুন। এর অর্থ হল, আমার আঙ্গুলের পাওয়া সূর্যের আলো খুব নতুন, সূর্যের কেন্দ্র থেকে আসতে সময়টুকুর কথা বাদ দিলে। যে মহাকর্ষের ফলে সেই ফিউশন শুরু হয়েছিল, তা কিন্তু এক লক্ষ বছরেরই পুরনো।
তো, বল্টু, বুঝলেতো?

বল্টুঃ বুঝলাম। কিন্তু দাঁড়াও, বস্তুর কারণে স্থান- কাল বেঁকে যায় কেন?

সেরেছে! এই ছোকরার হাত থেকে কীভাবে বাঁচি! ঐ চার বছরের বাচ্চাইতো ভালো ছিল।

সূত্রঃ
ওয়েট বাট হোয়াই অবলম্বনে। 
Category: articles

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটা এক ধরনের নক্ষত্র। তবে সাধারণ নক্ষত্রদের চেয়ে আলাদা। এদের ব্যাস মাত্র ২০ কিলোমিটারের মতো। আর ভর সূর্যের প্রায় ১ দশমিক ৪ গুণ। তার মানে অতি সামান্য জায়গায় অনেক বেশি ভর। আপনি যদি নিউট্রন নক্ষত্রের মাত্র এক চা-চামচ পরিমাণ নিয়ে পৃথিবীতে ওজোন করেন, দেখা যাবে ওটাই হয়ে যাচ্ছে একশ কোটি টন!

নিউট্রন স্টার 

বেশি ঘনত্ব ও ছোট্ট সাইজের কারণে এদের মহাকর্ষ হয় অত্যন্ত শক্তিশালী। পৃষ্ঠে মহাকর্ষের তীব্রতা থাকে পৃথিবীর 2 x 1011  গুণ (২ এর পরে ১১টি শূন্য দিলে যে সংখ্যা হবে)। এদের থাকে অতি শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রও। তাও পৃথিবীর চেয়েও ১০ লক্ষ গুণ!

নক্ষত্রদের জীবনের একটি অন্তিম পরিণতি হল এই নিউট্রন স্টার। যেসব ভারী নক্ষত্রের ভর শুরুতে সূর্যের ৪ থেকে ৮ গুণ থাকে, তারাই পরবর্তীতে পরিণত হয় নিউট্রন স্টার-এ। নিউক্লিয়ার জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এদের মধ্যে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণের সময় এদের বাইরের স্তর আলাদা হয়ে যায়। নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চল মহাকর্ষের প্রভাবে গুটিয়ে যায়। এটা এত বেশি সঙ্কুচিত হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রনে পরিণত হয়। ফলে এরা গঠিত হয় শুধুই নিউট্রন দিয়ে! আর নামটি নিউট্রন স্টার হয়েছে সে জন্যেই।

আরো পড়ুনঃ 
 নক্ষত্রের জীবন চক্র 

সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে এরা একাকীও থাকতে পারে, আবার অন্য কোনো তারকার সাথে মিলে বাইনারি স্টার হিসেবে আচরণ করতে পারে (বাইনারি স্টাররা (দুটি নক্ষত্র) একটি নির্দিষ্ট যৌথ ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে)। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, এমন চারটি নিউট্রন নক্ষত্র পাওয়া গেছে যাদের চারপাশে গ্রহ আছে।


পৃথিবীর তুলনায় নিউট্রন নক্ষত্রের সাইজ

নিউট্রন নক্ষত্ররা বাইনারি জগতের সদস্য হলে ভর মাপা সহজ হয়ে যায়। রেডিও ও এক্স-রে  টেলিস্কোপের সাহায্যে অনেকগুলো নিউট্রন স্টারকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এ পর্যবেক্ষণ  থেকেই জানা গেছে, এদের ভর সূর্যের প্রায় ১ দশমিক ৪ গুণ হয়। বাইনারি জগতের দুটো সদ্যসের একটি সম্পর্কে কিছু জানা না থাকলেও অপরটির তথ্য কাজে লাগিয়ে বের করে ফেলা যায়, সেটি আসলে আরেকটি নিউট্রন নক্ষত্র, নাকি ব্ল্যাক হোল

আবর্তনশীল নিউট্রন স্টারদেরকে বলা হয় পালসার

আরো পড়ুন নিয়মিত ধারাবাহিকঃ
 ব্ল্যাক হোলের গভীরে
↠ পালসার কাকে বলে?

সূত্রঃ
১। http://imagine.gsfc.nasa.gov/science/objects/pulsars1.html
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...